মনের গহিনে পর্ব-০৪

0
373

#মনের_গহিনে (৪)
sarika Islam(mim)

ফারাহর তুর্য এহেন কথা শুনে স্টাচুর ন্যায় দাঁড়িয়ে রইলো।কিছুক্ষন পর ফোন রেখে বাহিরের দিকে অগ্রসারিত হলো।টেবিলে বসা সবাই অবাক হয়ে ফারাহর দিকে তাকিয়ে রইলো হঠাৎ এমন বাহিরের দিকে ছুট লাগালো কেন ফারাহ?

সদর দরজার বাহিরের কদম ফেলতেই কেউ পেছন থেকে আমার হাত ধরলো।ঘুরে তাকাতেই দেখলাম সুহানা আন্টি আমার হাত শক্ত করে ধরে কঠিন দৃষ্টি নিক্ষেপ করে তাকিয়ে আছেন।আমি তাড়াহুড়োতে ভুলেই গিয়েছিলাম আমি এখন শ্বশুর বাড়িতে অবস্থান করছি।সুহানা আন্টি কঠিন গলায় বললেন,
-এত সাত সকালে কোথায় যাওয়া হচ্ছে?

আমি কেদেই ফেললাম আর নিজেকে সংযুক্ত রাখা আমার দ্বারা হচ্ছে না।আমার কান্না দেখে সুহানা আন্টি আমার দিকে ভ্রু কুচকে তাকালেন।ইয়াদ তার আম্মার পাশে এসে দাড়ালেন ব্যাপারটা জানার জন্য।আমি কান্নারত কন্ঠে বললাম,
-আন্টি দয়া করে আমাকে যেতে দিন।আমার আম্মু হসপিটালে ভর্তি।

সুহানা বেগম মুখ ফিরিয়ে খোচা মেরে বললেন,
-মেয়ে যেমন আচরণ করেছে তার মধ্যে তো হসপিটালাইজড থাকাটা অস্বাভাবিক নয়।
-আন্টি দয়া করুন আমার উপর আমাকে একটু যেতে দিন।

অনুনয়ের স্বরে কথা গুলো বললাম।আর কান্না তো থামার নামই নেই অনবরত চোখ দিয়ে গলগল করে পানি পরতেই রইলো।
ইয়াদ সুহানা বেগমের কবল থেকে ফারাহর হাত ছাড়িয়ে তার দিকে তাকিয়ে বলল,
-যাওয়ার অনুমতি দিন আম্মা!

সুহানা বেগম কিছু না বলেই স্থান ত্যাগ করলো।ইয়াদ ফারাহর হাত ধরে বেরিয়ে গেল।গাড়িতে বসে রওনা করলো হাস্পাতালের উদ্দেশ্য।

গাড়ির মধ্যে বসে কান্না করেই যাচ্ছি করেই যাচ্ছি থামার যেন নামিই নেই।ইয়াদ আমার দিকে একটা টিস্যু এগিয়ে দিল আমি টিস্যু হাতে নিয়েও কান্না করে যাচ্ছি।আম্মুকে নিয়ে যে ভয়ে ছিলাম অবশেষে তাই হলো সেই হাস্পাতালের বেডে তো যেতেই হলো।
ইয়াদ ড্রাইভ করছে আর একটু একটু করে ফারাহর দিকে তাকাচ্ছে।মেয়েটা কান্না করেই যাচ্ছে থামার নাম নিশানা কিছুই নেই।এত্ত কান্না কিভাবে পারে করতে মেয়েটা?ইয়াদ ফারাহর দিকে এক পলক তাকিয়ে সামনে তাকালো,
-এত্ত কান্না কীভাবে করো তুমি?

আচমকা ইয়াদের মুখ থেকে কিছু শুনে তার দিকে ফিরে তাকালাম।হেচকি তুলতে তুলতে বললাম,
-এভাবেই!

নাক টানতে অনেক ক্রন্দন করার ফল।ইয়াদ মেকি হেসে আমার দিকে তাকিয়ে বলল,
– চোখের ভিতর সমুদ্র নিয়ে ঘুরো?

আমি ইয়াদের কথার মানে না বুঝতে পেরে তার দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালাম।ইয়াদ এক গাল হেসে সামনে তাকালো।ছেলেটার গালে টোলও পরে?ছেলেদের গালে বুঝি টোল পরলে এত্ত সুন্দর লাগে?আমার কান্না ভুলে ইয়াদের টোল পরা গালের দিকে এক নয়নে তাকিয়ে রইলাম।বরাবরই টোল পরা গাল আমার পছন্দের মধ্যে অন্যতম একটি।
ইয়াদ ব্রেক কষলো হঠাৎ ব্রেক কষায় সামনে ঝুকে যেতে নিলে ইয়াদ কপালে হাত দেয়।আমি যলদিই নিজেকে সামলে উঠে বসি।
-ধ্যায়ান কোথায় থাকে?

আমি কোন জবাব দিলাম না।ইয়াদের দিকে তাকিয়ে রইলাম।
-এসে পরেছি নামো।

বাহিরে তাকিয়ে দেখি আসলেই এসে পরেছি।ইয়াদকে দেখতে দেখতে কখন যে এসেছি খেয়ালিই ছিল না।গাড়ি থেকে নেমে ভিতরে গেলাম ভাইয়া বাহিরে দাঁড়িয়ে ছিল মেডিসিন বিভাগে।আমাকে দেখে আমার কাছে এলো আমি ভাইয়াকে দেখা মাত্রই আবার কান্নায় ভেংগে পরলাম।
-ভাইয়া আম্মু?

তুর্য বোনকে বলবে নাকি এত্ত ভিরের মাঝে মেডিসিন নিবে কিছুই বুঝতে পারছে না।ফারাহর সাথে ইয়াদও এসে দাড়ালো।ইয়াদকে দেখে ফারাহ তুর্য উভয়ই তার দিকে তাকালো।ফারাহ তারা দিচ্ছে আম্মুর কাছে যাবে তুর্য ঠিকভাবে কৌশল বিনিময় ও করতে পারলো না বোনের স্বামীর সাথে।
-মিনিয় দুয়েক দারা আমি এক্ষুনি মেডিসিন নিয়ে আসছি।

তুর্য মেডিসিন বিভাগে যেতে নিলে ইয়াদ আটকে দেয়।
-আমাকে দাও আমি নিয়ে আসি তুমি বরং ফারাহকে আন্টির কাছে নিয়ে যাও।
-তিন তলা রুম নাম্বার 304,

ইয়াদকে ঠিকানা দিয়ে তুর্য বোনকে নিয়ে আম্মুর কাছে গেল।
দরজা খুলে ভিতরে প্রবেশ করলাম আম্মু বেডে একদম চিত হয়ে শুয়ে আছে।বাম হাতে স্যালাইন লাগানো চোখ বন্ধ করে আছে।পাশে দাদী আর বড় চাচাকে দেখা যাচ্ছে।আমি আম্মুর পাশে বসে আম্মুর হাত ধরতেই আম্মু জেগে উঠে।আমাকে দেখে উত্তেজিত হয়ে উঠলো।
-তুর্য ফারাহ,,,,ফারাহ এইখানে কেন?ও,,ওকে যেতে বল,,,

শ্বাস নিতে প্রব্লেম হচ্ছে।আমি কান্না জড়িত কন্ঠে আম্মুকে শান্ত করার বৃথা চেষ্টা করলাম।অবশেষে আম্মু কিছুটা ঠান্ডা হলো।
-কেন করলি এত্ত বড় সর্বনাশ ফারাহ?

চোখ বেয়ে জল গড়িয়ে পরলো আম্মুর।আম্মুর চোখের কোনে জলটুকু মুছে দিয়ে বললাম,
-আর যে কোন উপায় ছিল না!
-আমাকে বলতি আমি সবটা সামলে নিতাম।কিন্তু তুই এইটা মোটেও ঠিক করিসনি ফারাহ।

দাদী কাছে এসে বলল,
-ফারাহ আদো কি সব সত্যি?

আমি মাথা ঝুকিয়ে হ্যা সুচক মাথা নাড়ালাম।চাচা আর দাদী স্তব্ধ হয়ে গেল।কোন কথায় বলল না আর।আম্মু বলল,
-তুর্যও বিষয়টি জানতো?

আমি ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে মাথা নাড়ালাম হ্যা ভাইয়া জানতো।আম্মু তুর্য ভাইয়ার দিকে রাগান্বিত চোখে তাকালো।
-তুর্য তুই আমার মেয়েটাকে এতটুকু বয়সে পার করে দিলি?একটা বার আটকানো জরুরি মনে করিসনি?

তুর্য অনুতপ্তের স্বরে মাথা নিচু করে বলল,
-আম্মু তোমার কন্ডিশন ভেবে বলেছিলাম।
-আমার কন্ডিশন এখন খুব ভালো দেখাচ্ছে তাই না?

দরজায় টোকা পরলো সবাই সেদিকে চোখ দিল।ইয়াদ দাঁড়িয়ে আছে হাতে মেডিসিনের প্যাকেট নিয়ে।সবাই চুপ হয়ে গেল ইয়াদ সালাম দিয়ে ভিতরে প্রবেশ করলো।চোখের চশমাটা হাল্কা উপরে তুলে নিশি বেগমের সংগে কৌশল বিনিময় করলো।
-ভালো আছেন আন্টি?

নিশি বেগম ফারাহর করা কান্ডে প্রচুর লজ্জিত। ইয়াদের দিকে ঠিকভাবে তাকাতেও লজ্জা লাগছে।
-ভালো আর থাকলাম কোথায়!বাবা আমাকে ক্ষমা করো তুমি?

ইয়াদ টুল টেনে নিশি বেগমের কাছে বসে তার হাত নিজের হাতের মুঠোয় আবদ্ধ করে বলল,
-আন্টি আপনি মুরুব্বি হয়ে ক্ষমা চাইবেন না দয়া করা।আমার কাছে জিনিসটা অনেক না পছন্দের।আর যা হয়েছে হয়তো আল্লাহ ভাগ্যে এইভাবেই লিখেছিল।
-আমি সত্যিই খুব লজ্জিত ফারাহর করা কান্ডে।
-ফারাহ যেটা করেছে অনেক বড় ভুল করেছে।কিন্তু যা হওয়ার হয়েছে আপনিও মেনে নিন।

নিশি বেগম খুবিই খুশি হলেন ইয়াদের মতো একটা ছেলে তার মেয়ের জামাই হওয়াতে।খুবিই ভালো স্বভাবের একটি ছেলে।
ইয়াদ উঠে দাড়ালো এখন সে চলে যাবে।ফারাহর দিকে তাকিয়ে বলল,
-বাসায় চলে যেও!

ফারাহ ইয়াদের দিকে ভয়ার্থ চেহারায় তাকালো।একা বাড়ি ফিরলে যদি সুহানা আন্টি কিছু করে বসে?ইয়াদ ফারাহর মুখশ্রী দেখে বলল,
-অপেক্ষা করো আমি এসে নিয়ে যাবো।

আমি মাথা ঝাকালাম ইয়াদের কথায়।এখন একটু শান্তির নিঃশ্বাস নিতে পারলাম একা একা আমার খুবিই ভয় করে সুহানা আন্টিকে ফেস করতে।ইয়াদ থাকলে কিছুটা সাহস থাকে।ইয়াদ সবার থেকে বিদায় নিয়ে চলে গেল।

————-

এক হাতে জামা কাপরের ব্যাগ আরেক হাতে সাইড ব্যাগ নিয়ে নীলা নিজেরদের বাড়ির গেটের সামনে দাঁড়িয়ে আছে।বাহিরে এত বড় একটা তালা ঝুলছে সেই কখন থেকে দাঁড়িয়ে আছে কাউকে ফোন করার সাহসটুকু জোগাতে পারছে না।নিশি বেগম কি নীলাকে বের করে দিবে?যদি আর ঘরে আশ্র‍য় না দেয় তখন?নানান ধরনের বাজে খেয়াল নীলাকে তাড়া দিয়ে বেড়াচ্ছে।অবশেষে উপায় না পেয়ে ফারাহকে ফোন করলো।

আম্মুর সাথে বসে কথায় মাতোয়ারা ছিলাম তখনি ফোনে কল আসলো।ফোনের স্ক্রিনে নীলাপুর নাম দেখে একবার আম্মুর দিকে তাকালাম একবার স্ক্রীনের দিকে।আম্মু হয়ত আমার চেহারার ভাবভঙ্গি দেখে কিছু বুঝতে পেরেছেন।আমাকে জিজ্ঞেস করলো,
-কে?
-নীলাপু,

ভাংগা কন্ঠে বললাম।আম্মু যেন প্রচুর পরিমানের রাগান্বিত হয়ে গেল।কিছুটা ক্ষেপে বলল,
-তুলবি না ওই বেইমানটার ফোন। ওর কাছে ওর স্বপ্নই বড় আমরা কিছুই না?

ফোন কেটে গেল।আমি আম্মুর হাত ধরে আম্মুকে বুঝানো স্বরুপ বললাম,
-আপু যা করেছে তার বাচ্চামো ভেবে ক্ষমা করে দাও।আমরাই তো আপুর আপন আমরাই যদি এইভাবে তাকে দূরে ঠেলে দেই তাহলে তার কি হবে?

নিশি বেগম ফারাহর বলা কথায় কিছুটা রেগে বলল,
-তুই কেন সবসময় নীলাকে সাপোর্ট করিস?দেখলিতো কি করলো তোর সাথে?

এক গাল হেসে আম্মুর দিকে তাকিয়ে বললাম,
-থাকনা ক্ষমা করে দাও।

নিশি বেগম ফারাহর কথায় মুখ ঘুরিয়ে নিলেন।আবারো রিং করলো ফারাহর ফোন ফারাহ ফোন তুলে কানে ধরলো।
-হ্যালো নীলাপু!কেমন আছো?
-ভালো না এখন বল কোথায় আছিস?বাড়িতে তালা কেন?
-হাস্পাতালে আছি আম্মু ভর্তি।

নীলা উত্তেজিত হয়ে গেল।
-সেকি কেন?কি হয়েছে?
-কি আর বাকি রেখেছো হওয়ার?
-কথা শুনাচ্ছিস আমায়?
-হসপিটালে আসলে আসো।

বলেই ফোন রেখে দিলাম।সব করবে নিজে কিছু বললেও কথা শুনানো হয়ে যায় হুহ।

————-

কেবিনে বসে কাচের গ্লাসের বাহিরের পরিবেশ উপভোগ করছে আর চা খেতে ব্যাস্ত ইয়াদ।কেবিনে নক করে কেউ ভিতরে প্রবেশ করলো ইয়াদ চেয়ার ঘুরে তার দিকে ফিরলো।লোকটি চেয়ারে বসে ইয়াদের দিকে তাকিয়ে বলল,
-এমন দেখাচ্ছে কেন?

ইয়াদ চায়ের কাপটা ডেস্কে রেখে বলল,
-কেমন?
-কেমন যেন খুব বেশি চিন্তিত?
-তুই কিভাবে বুঝে যাস রাহাত?

রাহাত মেকি হাসলো।
-তাই তো বেস্ট বাডি।
-আসলেই।
-তো কি নিয়ে চিন্তিত?নিশ্চয়ই ফারাহকে নিয়ে?
-হুম।বিয়ে করতে চেয়েছিলাম নীলাকে হলো ফারাহর সাথে।কিন্তু এর মধ্যে তো ফারাহর কোন দোষ নেই যা করেছে নীলা কিন্তু বেচারি,,,,,

রাহাত এক ভ্রু উঠিয়ে সামান্য হাত তালি দিয়ে বলল,
-বাহ ইয়াদের কারো জন্য খারাপ লাগছে?

ইয়াদ অবাক নয়নে রাহাতের দিকে তাকালো।আদো কি খারাপ লাগছে?

চলবে,,,
(ভুল ত্রুটিগুলো ক্ষমার চোখে দেখবেন।)