মনের গহিনে পর্ব-২+৩

0
426

#মনের_গহিনে (২) ও (৩)
Sarika Islam(mim)

কালো চকচকে গাড়ি একটা বিশাল গেটের ভিতর দিয়ে ঢুকলো।গাড়ির জানালা নিয়ে বাহিরে দেখতে লাগলাম সামনে কিছু অশংক জায়গার মধ্যে গার্ডেন করা খুব সুন্দর করে সাজানো।হয়তো ইয়াদের আম্মা খুবিই সৌখিন প্রকৃতির মানুষ তাই এত সুন্দর করে গোছালো বাহিরের পরিবেশ।
গাড়ি থেমে নামার সময় ইয়াদ এক হাত বারিয়ে দিল ঘোমটার কারনে ঠিকঠাক ভবে কিছু দেখতেও পারছিনা হাটতে তো অনেক কষ্ট।অনেকক্ষন ধরেই ইয়াদ হাত বারিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।আমার হাত তার হাতের উপর রাখতেও কেমন জেন লাগছে।
-হাতটা বাড়াও।

তার মোটা কন্ঠের আওয়াজে ঘোমটার ভিতর দিয়েই মাথা উচু করে তাকালাম।চিকন ফ্রেমের একটা চশমা পরা গালে খোচাখোচা দাড়ি সাদা শেরওয়ানিতে অদ্ভুত সুন্দর লাগছে।যেন এই চশমা এই দাড়ি শুধু মাত্রই তার জন্য সৃষ্টি করা।নিজের অজান্তেই এইসব খেয়াল গুলো হচ্ছে।পরক্ষনেই নিজেকে সংযুক্ত রেখে কাপা কাপা হাতটি তার দিকে এগিয়ে দিলাম।সে হাতটি শক্ত করে ধরে নিচে নামালো।
বিশাল গেটটির ভিতর দিয়ে প্রবেশ করলাম।কিছুটা এগিয়ে যেতেই সবাই বসে আছে কেউ কেউ দাঁড়িয়েও আছে।ইয়াদের আম্মা এখন আমার শ্বাশুড়ি মা তিনি আমার সামনে এসে দাড়ালেন।আমার বুক অতিদ্রুত ঢিপঢিপ করছে এক্ষুনি আমার সব শেষ আমাকে এখনি ঘাড়ে ধরে বের করে দিবে।

সুহানা বেগম (ইয়াদের আম্মা)ফারাহর সামনে দাড়িয়ে মিষ্টি একখানা হাসি দিয়ে বলল,
-নীলা মা এখন তো ঘোমটা উঠাতে পারো?বাড়িতো চলেই এসেছি!!

পিছন থেকে এক্সাইটেড হয়ে ইয়াদের একমাত্র ছোট বোন সোনিয়া বলল,
-হুম ভাবী এখন তো উঠাতে পারো।পুরো বিয়েতে তোমার মুখখানা দর্শন করা হয়নি।

সবার এমন জোরাজুরিতে বাধ্য হয়ে ঘোমটা তুলতে হলো না হলে তো আর উপায় নেই।আর একটু পরে হলেও তো তারা জানতো না হয় এখনি জানুক।তাদের সাথে করা আমার ছলনা।
ঘোমটা তুলে মাথা নিচু করে দারিয়ে আছি।ভয়ে চোখ দিয়ে আপনা আপনি পানি ঝরতে শুরু করলো।তাদের রিয়েকশন কি হবে চোখ তুলে তাকিয়ে দেখার সাধ্যটুকু নেই!

সুহানা বেগম নীলার পরিবর্তে তার ছোট বোন ফারাহকে বধুরুপে দেখে অতি পরিমানে চমকে উঠলো।সে তার চোখ কে মোটেও বিশ্বাস করতে পারছে না।
-ফারাহ??তুমি??

সুহানা আন্টির করা প্রশ্নে আমার চোখ দিয়ে আরো কয়েক পরিমাণ দ্রুত বেগে জল পরতে লাগলো।এখনি কি আমার গালে কষে একটা পরবে নাকি?না জানি কি হবে আমার পরবর্তী দিনগুলো না জানি আজিই বা কি হবে?

সুহানা বেগম বলা কথায় সবাই বধুরুপে ফারাহর দিকে আশ্চর্য দৃষ্টিতে তাকালো।সবাই প্রচুর অবাক হলো ফারাহর পাশে ইয়াদও পাশ ফিরে তার দিকে তাকালো।ইয়াদ এমনটা মোটেও আশা করেনি তার নীলার পরিবর্তে এই ফারাহ চলে এলো কীভাবে?ইয়াদের মুখ দিয়ে যেন কোন শব্দ বের হচ্ছে না গলায় আটকে গেছে সব কথা।
সুহানা সহ পরিবারের সবাই অবাকের সপ্তম পর্যায়ে।ফারাহ বাহু শ*ক্ত করে ধরে ঝাকিয়ে সুহানা বেগম বললেন,
-নীলা কোথায় ফারাহ?তুমি কেন তার পরিবর্তে?

আমি কি উত্তর দিব এখন?আপু কোথায়?তাদের বিয়ে ছেড়ে চলে গেছে নিজের স্বপ্নের উদ্দেশ্যে?এইটা বললে কি আদো বিশ্বাস করবে তারা?আমার কান্না যেন থামছেই না বেড়েই চলছে বেড়েই চলছে।সুহানা আন্টি আরো চেপে ধরলো আমার বাহু দুটো।হাত যেন এখনি ভেংগে যাবে।কান্নায় ভেজা আখিতুলে তার দিকে তাকালাম এই চোখের অগ্নি আমার দেখার সাধ্য নেই।আমি তার চোখের দিকে তাকিয়েও তাকাতে পারলাম না।কোন মুখে তার সাথে চোখাচোখি হবো?আমি যা করেছি তার জন্য শত মারলে শত বকলেও তার কাছে কম পরবে।

সুহানা বেগমকে রাসেল শেখ(ইয়াদের আব্বা)ফারাহর থেকে ছুটালো।খুব শ*ক্ত করে ধরেছিলেন তিনি রাগের বশে।যা ফারাহর ভয়ার্থ আর ব্যাথার্থ চেহারা দেখেই বুঝতে পেরেছিলেন।সুহানা বেগম ছাড়িয়ে নেওয়াতে যেন আরো রেগে গেলেন।রাসেল শেখ স্ত্রীকে ফারাহর থেকে কিছুটা দূরে নিয়ে দার করালো।নিযে ফারাহর সামনে এসে নিচু স্বরে জিজ্ঞেস করলো,
-ফারাহ মা তুমি কেন এইখানে?

ফারাহ কান্নারত কন্ঠে কিছু বলতে যাবে পেছন থেকে হুংকার দিয়ে উঠে সুহানা বেগম।
-এত মিষ্টি করে কেন কথা বলছো?এক ঘা দিয়ে বের করো এই বেয়াদপ মেয়েকে।

রাসেল শেখ স্ত্রীর দিকে রাগান্বিত চোখে তাকালো।সুহানা বেগম আর কিছু বললেন না।পুনরায় ফারাহর দিকে তাকিয়ে বললেন,
-বলো?কিছু জিজ্ঞেস করেছি আমি?

আমার কান্নারত কন্ঠে কিছুটা কেপে কেপে বললাম,
-আ,আংকে,,ল,,আ,,আপু বিয়ের,,, আসর থেকে চলে,,, গিয়েছিল,,এ,,একটা চিরকুট রেখেছিল,,যে,,খানে লিখা ছিল যেন আমি বিয়ে করি!!

সুহানা বেগম এইবার অতিমাত্রায় রেগে গেলাম।ফারাহর মুখের সামনে দাঁড়িয়ে উচু গলায় বললেন,
-এর জন্য তুমি বিয়ে করে নেবে তোমার বোনের স্বামীর সাথে?

আমি মুহুর্তেই মাথা না রুপে ঝাকিয়ে তুলে তাকালাম।এত্ত বড় অপবাদ আমি মেনে নেব না।হেচকি স্বরুপ বললাম,
-আমি করতে চাইনি।

সুহানা বেগম এক চিলতে হেসে বললেন,
-ওওও তাহলে নিশ্চিত তোমার আম্মু বলেছে তাই করেছ।হ্যা তাতো বলবেই এক মেয়ে চলে গিয়েছে এত বড়লোক হাত ছাড়া হয়ে যাবে না তাই ছোট মেয়েকে গুচিয়ে দিয়েছে।

আন্টির এরুপ কথা একদমিই আশার বাহিরে ছিল।তাকে দেখতে অনেকটা ভদ্র সভ্য মহিলা লাগতো আসলে সে ভিতরে এমন তা কে জানতো।আসলে এমন আচরণ টাই স্বাভাবিক আমি যা করেছি এমনটাই করা উচিত।আম্মুর উপর মিথ্যে অপবাদ বরাবরই আমার না পছন্দের মধ্যে একটি।ভেজা আঁখি জোরায় আন্টির দিকে তাকালাম,
-নাহ আন্টি আমার আম্মু এইসব জানেন না।

সুহানা বেগম জোরে একটি ধমক দিল।আমার পুরো আত্মা কেপে উঠলো।আমার পরান চলে যাওয়ার উপক্রম।
-চুপ ধোকাবাজি করে আবার তর্ক করছো?এক্ষুন তোমার আম্মাকে ফোন করে বলছি আমাদের সাথে ধোকাবাজি তাকে বুঝাবো এখন।

আন্টি আম্মুকে ফোন লাগাতেই আন্টির সামনে গিয়ে হাত জোর করে বিনতির সুরে বললাম,
-দয়া করে আন্টি আমার আম্মুকে ফোন করবেন না মরে যাবে সে এই শোক নিতে পারবে না।

আন্টি আমাকে এক ঝাটকায় দূরে ফেলে দিয়ে বলল,
-ধোকাবাজি করার আগে ভাবা উচিত ছিল।

হঠাৎ ইয়াদ ফারাহর হাত ধরে গটগট করে সামনে হাটা ধরলো উপস্থিত সবাই চমকে তাকালো।ইয়াদ কি করছে?করতে চাইছেই টা বা কি?সুহানা বেগম ছেলের পথের সামনে এসে দাড়ালো,
-তুমি কোথায় যাচ্ছো এই ধোকাবাজ মেয়েটাকে নিয়ে?

সুহানা আন্টির বলা প্রত্যেক টা কথা পুরো কাটার মতো বিধছে আমার গায়ে।গা রি রি করছে কিন্তু আমি এক অসহায় প্রানী কিচ্ছু করা আমার দারা সম্ভব নয়।ইয়াদ শান্ত চাহনিতে আন্টির দিকে তাকিয়ে নরম গলায় বলল,
-আমার রুমে।

সুহানা আন্টি মোটেও এই কথা যেন প্রত্যাশা করেননি।উত্তেজিত হয়ে বললেন,
-তুই এইসব কি বলছিস ইয়াদ?এই মেয়েকে এক্ষুনি ঘার ধরে বের কর।তুই না পারলে আমি করি।

বলেই আমার হাত ধরে নিয়ে যেতে চাইলে আটকে গেল।কারন অপর পাশেও ইয়াদ ঘুরে ধরেই আছে হাত।সুহানা আন্টি রাগের বশে হাত ছেরে স্থান ত্যাগ করলো।উপস্থিত সবাই এক এক করে উঠে যেতে লাগলো।ইয়াদ আমার হাত ধরেই সিড়ি বেয়ে উপরে গেল।নিজের রুমে গিয়ে দরজা আটলে দিল।
পুরো রুম সাজানো খাটের উপরে আর নিচে ফুলের সমারহ।হাল্কা সেডের আলো জালানো বেশ লাগছে ঘরটাকে দেখতে।ইয়াদ সাইডে সুইচড শব্দ করে অন করলো।আমি ফুলসজ্জা দেখতে দেখতে ভুলেই গিয়েছিলাম কোথায় দাঁড়িয়ে আছি।ইয়াদের দিকে মাথা ঘুরে তাকালাম আমার দিকে শান্ত দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো। শেরওয়ানির উপরের কয়েক বোতাম খুলল এসির ট্রেম্পারেচার বাড়িয়ে দিয়ে বিছানায় বসলো পিছনে দুই হাত দিয়ে মাথা পিছনে কিছুটা নুয়ে।আমার হাত পা অসম্ভব রকমের কাপছে এতক্ষন কান্না করেছি এখন আবার এত্ত ঠান্ডা লাগছে অনেকটা জমে যাওয়ার উপক্রম।

কিছুক্ষন পর ইয়াদ উঠে আমার কাছে আসলো। ইয়াদকে এমন আমার দিকে এগুতে দেখে শরির আরো কয়েক গুন দ্রুত গতিতে কাপছে।ইয়াদ আমার এমন কাপাকাপি হয়তো লক্ষ্য করতে পেরেছেন।বিছানা থেকে রিমোটটা নিয়ে কমালো এসির ট্রেম্পার।আমি লেহেঙ্গার ওড়না দিয়ে কোন রকম নিজের শরিরকে ঢেকেছি।ইয়াদ কাছে এসে বলল,
-কেন করলে এমন ধোকাবাজি?

ইয়াদও আমাকে ধোকাবাজ বানিয়ে দিল?আমি কি পরিস্থিতিতে বিয়েটা করেছি কেউ শুনতে চাইছে না আমার কাছ থেকে।আমাকে কেউ সাফাই দেওয়ার সময়ই দিল না।কাদো কাদো চাহনিতে ইয়াদের চোখে চোখ রেখে বললাম,
-আমি সত্যিই ইচ্ছে করে করিনি।আমি এমটা করতে চাইনি।
-তাহলে একটা বার আমাকে বলতে?আন্টিকে বলতে?আমাদের জানাতে?

ইয়াদ কাছে আসতে আসতে বলতে লাগলো।আমার মনের মধ্যে ভয় ঝেকে বসলো এখনিকি মেরে দিবে?আমার কপালে মার পরবে এখন?আমি একটু একটু করে পিছাতে লাগলাম।ইয়াদ বেশ কিছুটা সামনে এসে থেমে দারালো।
-আমি তোমার থেকে সবটা জানতে চাই ফারাহ?

আমার কাছে ইয়াদকে সবটা বলা ছাড়া আর কোনই বা উপায়ন্তর নেই।বাধ্য মেয়ের মতো শুরু থেকে শেষ টা বললাম কান্না করতে করতে।ইয়াদ আমার কথা শুনে দু কদম পিছিয়ে গেল।হয়তো শকড হয়েছে আমরা যেমনটা হয়েছিলাম।আমি ইয়াদের কাছে গিয়ে কান্নারত কন্ঠে বললাম,
-সত্যি এই সবটাতে আমার আম্মুর কোন ভুল নেই তাকে কিচ্ছু বলবেন না!!

হাত জোর করে অনুরোধ স্বরুপ বললাম।ইয়াদ ঘুরে দাড়ালো আমার থেকে।
-একদিন হলেও জানবে।আগে জানাই ভালো।

বলে গটগট করে ওয়াশ্রুমে চলে গেল।আমি ধপ করে মেঝেতে পরে কান্না করতে লাগলাম।নীলাপুর অপরাধ এখন পুরো পরিবারের ভোগ করতে হবে।নীলাপু কেন এমনটা করলে তুমি?কেন?

————-

নীলা বেগম মেয়ের বিদায় দিয়ে বেশ ক্লান্ত হয়ে পরেছেন।নিজের রুমে গিয়ে আরাম করছেন তুর্য আম্মুকে ওষুধ আর পানি দিল।নীলা বেগম পানিটুকু খেয়ে বিছানায় পা এলিয়ে দিয়ে বললেন,
-কিরে তুর্য ফারাহকে পুরো অনুষ্ঠানে দেখলাম না যে?মেয়েটাই তো সবসময় ওষুধ গুলো দেয়?

তুর্য এখন কি বলবে?কিন্তু আম্মুকে তো সবটা বলতেই হবে।যদি তাদের থেকে জানে কষ্টের মাত্রা হয়তো দ্বিগুণ হবে এখন সে বললে হয়তো কম শকডে পরবে।তুর্য তাই ভেবে মায়ের পায়ের কাছে বসলো।মাথা নিচু করে বারংবার কিছু বলার চেষ্টা চালাচ্ছে কিন্তু সাহসে কুলাচ্ছে না।নীলা বেগম ছেলের এমন কর্মকাণ্ড দেখে বললেন,
-কিরে তুর্য কি হয়েছে?
-আম্মু তোমাকে কিছু বলার ছিল!
-তা বল!

তুর্য কিছু বলতে যাবে তার আগেই নীলা বেগমের ফোনের রিং বেজে উঠলো।বেড সাইড টেবিল থেকে হাতে ফোন নিল।বেয়াইনসাবের নাম্বার দেখে চিন্তিত হলো এতরাতে তার কল?সেইখানে সব ঠিকাছে?ভ্রু কুচকে ফোন রিসিভ করলো।সালাম দিয়ে কৌশল বিনিময় করার আগে অপর পাশ থেকে সুহানা বেগম কর্কশ গলায় বললেন,
-এক মেয়ে পালিয়েছে বিধায় আরেক মেয়েকে গুচিয়েছেন আমাদের কাছে?

বিয়ের দিনই এমন আজগুবি কথা নীলা বেগম ঠিক বুঝতে উঠতে পারেননি।ভ্রু কুচকে পা ভাজ করে বসলো।
-মানে?কি বলছেন আপনি এইসব?
-আপনি কি কিছুই জানেন না নাকি না জানার ভান করছেন?

নীলা বেগম কথা আগামাথা কিছুই বুঝতে পারছে না।বিছানা ছেড়ে উঠে দাড়ালো তুর্য আম্মাকে হঠাৎ বিছানা ছেড়ে দারাতে সেও সাথে সাথে দাড়ালো।নীলা বেগম আবারো প্রশ্ন করলো,
-বেয়াইনসাব একটু খুলে বলবেন দয়া করে কি হয়েছে?

অপর প্রান্ত থেকে সুহানা বেগম তাচ্ছিল্য স্বরুপ বলল,
-এখন তো কিছুই বুঝবেন না জানেন না।নীলার পরিবর্তে ফারাহকে বিদায় দিয়েছেন তাতো জানেন নাকি?

চলবে,
(ভুল ত্রুটিগুলো ক্ষমার চোখে দেখবেন।বানান যথেষ্ট শোধরানো।ভুল হলে ধরিয়ে দিবেন। গল্পের জগৎ অর্থাৎ কাল্পনিক জগৎ দয়া করে বাস্তবতার সাথে মিক্স করবেন না।😊)

#মনের_গহিনে (৩)
Sarika Islam(mim)

সুহানা বেগমের কথায় নিশি বেগম অবাক হয়ে গেল।আদো কি সত্যি বলছে সুহানা নাকি?নিশি বেগম নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছেন না।সব কথা গলা পর্যন্ত আটকে গেছে বের হতে চাইছে না।সুহানা বেগম কর্কশ গলায় বললেন,
-সব কিছুই আপনাদের ষড়যন্ত্র ছিল।

নিশি বেগম কাপা কাপা কন্ঠে কিছু বলতে যাবেন তার আগেই খট করে ফোন কেটে দিলেন।সুহানা বেগম প্রচুর পরিমানে রাগান্বিত আছেন তা তার কথায় বেশ বুঝতে পেরেছেন।নিশি বেগম সুহানার কথাকে যেন বিশ্বাস করতে পারছেন না বিদায় দিল নীলাকে ফারাহ কিভাবে হয়ে গেল?নিশি বেগম দৌড়ে ফারাহর রুমের দিকে ছুট লাগালো।মায়ের এমন দ্রুত রুম ত্যাগ করাতে তুর্য বেশ ঘাবরে গেল যা ভয় পাচ্ছিলো তাই বুঝি হলো!!
নিশি বেগম ফারাহর রুমে প্রবেশ করলো সেখানে ফারাহর দাদী আর বড় চাচা ছিলেন কথা বলছিলেন।বড় চাচা এখুনি বিদায় নিবে তার আম্মার সাথে দেখা করতে এসেছিল।নিশি বেগমকে হুড়মুড়িয়ে রুমে প্রবেশ করতে দেখে তাদের দৃষ্টি নিশির উপর আটকালো।নিশি বেগম হাপিয়ে উঠলো এমনিই শরিরটা ভালো যাচ্ছে না তারপর এত্ত দ্রুত পায়ে এসেছে।ফারাহর দাদী নিশিকে দেখে বিছানা ছেরে দারালো,
-কি হয়েছে নিশি?
-মা ফারাহ কই?

আটকে আটকে এলো কথাগুলো।দাদী নিশির কাছে দাঁড়িয়ে নিশিকে ধরে বলল,
-ভেবেছিলাম তোর সাথে।কেন কোথায় ও?

নিশি বেগম এইবার পুরো শিওর সুহানা বেগম যা বলছিলেন ঠিক বলেছেন।ফারাহ আসলেই এত্ত বড় একটা পদক্ষেপ নিতে পারলো?নিশি বেগম এইটা কোন মতেই মেনে নিতে পারছে না।

——————–

ফারাহ বিছানার নিচে বসে হাতের উপর মাথা দিয়ে হেচকি তুলছে এতক্ষন কান্না করার ফল স্বরুপ।ইয়াদ ওয়াশ্রুম থেকে বেরিয়ে টাওয়াল দিয়ে মুখ মুছতে মুছতে ফারাহকে নিচে বসে থাকতে দেখলো।টাওয়ালটা সাইডে সোফায় ছুড়ে মেরে ফারাহর কাছে গিয়ে দারালো।

মাথা নিচু করে হেচকি তুলছিলাম আর আম্মুর কথা ভাবছিলাম।জানলে না জানি কি রিয়েকশন হবে!!হঠাৎ চোখের সামনে বড়বড় দুটো পা দেখতে পেলাম।মাথা তুলে উপরে তাকালাম ইয়াদ চশমার ভিতর দিয়ে তাকিয়ে আছেন।আমি তড়িঘড়ি করে উঠতে নিলাম ঠিকভাবে দাড়াতেও পারলাম না নিজের পরিহিত লেহেঙ্গার সাথে হোচট খেয়ে পরে যেতে নিলাম।ভয়ে চোখ খিচে বন্ধ করে মৃদু চিৎকার করলাম।নিজেকে শুন্যে পেয়ে কপালের ভাজ কিছুটা কমলো।পিটপিট করে চোখ খুলে তাকালাম ইয়াদের বলিষ্ঠ বাহুতে আবদ্ধ আমি।
ইয়াদ ঠিকভাবে দার করালো ফারাহকে ফারাহর থেকে ডিস্টেন্স বজিয়ে কিছুটা দূরে গিয়ে চোখের চশমাটা মধ্যমা আংগুল দিয়ে কিছুটা দূরে ঠেলে বলল,
-যাও ফ্রেশ হয়ে আসো।

আমি মোটেও আশা করিনি ইয়াদ এত সুন্দর ভাবে এমন কিছু বলবে।আমি তো অন্য কিছু সাজিয়ে রেখেছিলাম আমার ছোট মস্তিষ্কে।কিন্তু তার কিচ্ছুই হলো না।ইয়াদের দিকে তাকিয়ে ভয়ার্থ গলায় বললাম,
-আ,,আমার তো কিছুই নেই এইখানে।কি পরবো?

ইয়াদ ফারাহর কথায় এদিক সেদিক তাকালো। অত:পর নিজের আলমারি থেকে একটা কালো টি-শার্ট আর একটা টাউজার ফারাহর সামনে ধরলো,
-এইগুলো এখন পড় কাল শপিং করিয়ে দিব।

আমি বরাবরই তার করা প্রত্যেকটা কাজে অবাক হচ্ছি।কই আমাকে লাঞ্চিত করে বাড়ি থেকে তাড়াবে বরং আমাকে আদর যত্ন করে সব কিছু দিচ্ছে।আমি কি কোন স্বপ্নে আছি? ইয়াদ এত্ত ভালো একটা ছেলে আমি আগে জানতাম না।মনে মনে ইয়াদের নানান প্রশংসা করে ওয়াশ্রুমে গেলাম।
কিছুক্ষন পর বের হয়ে দেখলাম ইয়াদ সোফায় কাথা গায়ে শুয়ে আছে।আর আমার জন্য বিছানা ছেড়েছে।মনে মনে খুশি হলাম তার করা কাজে কিন্তু এইটা মোটেও ঠিক কাজ করেননি উনি এইটা করার তার মোটেও প্রয়োজন হয়নি।তার কাছে গিয়ে তাকে ডাক দেওয়ার জন্য হাত বারাতেই তার ঘুমোন্ত মুখশ্রী দেখে আটকে গেলাম।যদিও চোখের উপর হাত রাখার কারনে পুরো চেহারা দেখা যাচ্ছে না তারপরও বেশ লাগছে।আকাশি রঙের টি-শার্ট আর টাউজার পরে নিশ্চিন্তে ঘুমুচ্ছে।আমিও বিছানার এক কোনে গুটিসুটি মেরে ইয়াদের দিকে তাকিয়ে শুয়ে পরলাম।

সকালে,,,

খুব জোরে জোরে দরজা পেটাচ্ছে কেউ।ঘুমের মধ্যে হঠাৎ কেপে ধরাম করে উঠে বসলাম।ইয়াদ আমার দিকে তাকিয়ে দরজা খুলল আমি এক দৃষ্টিতে বাহিরে তাকিয়ে আছি কোন দিকে যেন হুশিই নেই আমার।
ইয়াদের আম্মা দরজা খোলায় ইয়াদকে সাইড করে গড়গড় করে রুমে প্রবেশ করলেন।ফারাহ এলোমেলো ভাবে বসেছিল হঠাৎ ঘুম ভেংগে যাওয়ায়।সুহানা বেগমকে কাছে আসতে দেখেই নিজেকে ঠিক করলো গায়ে কাথা জড়িয়ে ধরলো।সুহানা বেগম ফারাহর এমন ভাবগতি দেখে ঠুনকো চোখে তাকালো।ঠেস মেরে বলল,
-এত্ত পর্যন্ত ঘুমানো নতুন বউয়ের শোভা পায় না।যেভাবেই হোক যেহেতু এই বাড়ির বউ হয়েছ তাহলে নিয়ম মেনে চলতে হবে।

আমি সুহানা আন্টির কথা মাথা ঝাকালাম আমি রাজী।নিচে আসতে বলে সে পুনরায় গটগট করে চলে গেল।ইয়াদ শুধু দরজার সামনে দাঁড়িয়ে কাহিনি দেখলো।আমি উঠে দারালাম এইটা কি ছিল?আমাকে মেনেও নিল?আমিতো ভেবেছিলাম এই বাড়িতে আমার ঠাই নেই?ডিভোর্স করিয়ে দিবে কিন্তু হলো না।

ইয়াদ ড্রেসিংটেবিলের আয়নায় নিযের চুল ঠিক করতে করতে বলল,
-আম্মা যেহেতু ডেকেছে তাড়াতাড়িই পৌছাতে হবে নাহলে তো,,,

ইয়াদের বলা কথায় আমার কালকের সেই স্মৃতি নাড়া দিয়ে উঠলো।সে রাগলে অনেক ভয়ংকর হয়ে যায় না বাবা এখন যলদিই যাই।ছুট লাগালাম ওয়াশ্রুমের দিকে।
ইয়াদ ফারাহর কান্ড দেখে তার অগোচরে হাল্কা হাসলো।

————-

জিন্স কোমর অব্দি টপস চুলগুলো স্ট্রিট করে ছাড়া মিডিয়াম সাইজের হিল পরা।একটা বড় গেটের সামনে দাঁড়িয়ে আছে নীলা সাথে একটা লোক।নীলা কপালের সামনে হাত দিয়ে বলল,
-এত্ত রোদের মধ্যে এইখানে দার করিয়ে রেখেছো কেন তুমি?

পাশে থাকা ব্যাক্তিটি পকেট থেকে রুমাল বের করে কপালে জমে থাকা বিন্দু বিন্দু ঘাম মুছে বলল,
-আজ হবে না নীলা।

নীলা বেশ রেগে গেল।রেগে পাশ ফিরে লোকটির দিকে অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো।রাগান্বিত কন্ঠে বলল,
-কাল থেকে ঘুরাচ্ছো তুমি অয়ন।অডিশন কাল বলে এনেছ আজ অব্দি কিছুই করতে পারলে না তুমি!!

অয়ন খানিকটা ভীত চোখে তাকালো নীলার দিকে।নীলার হাত ধরে বলল,
-আমি কাল টেক্সটে বলবো কবে শিওর বলছি।

নীলা এক ঝাটকায় হাত সরিয়ে দিল অয়নের।
-আমি আমার বিয়ের আসর থেকে পালিয়েছি শুধুমাত্র এই অডিশনের জন্য তুমি জানো কত বড় একটা রিস্কি কাজ করেছি আমি।আর তুমি আমার সাথে মজা করছো?

নীলা আর কোন কথা না শুনে সেখান থেকে চলে এলো।

———
ইয়াদ ওয়াশ্রুমের দরজা টোকা দিল ফারাহ দরজা খানিকটা ফাক করলো।ইয়াদ শুধু হাত বাড়িয়ে একটা শাড়ি এগিয়ে দিল।ফারাহ হাতে শাড়ি নিয়ে দরজা আটকে দিল।

নীল রঙের শাড়ি দেখে আমার ভিষণ ভালোলাগলো।ব্লাউজ পরলাম পুরো ফিটিং হয়েছে কার মাপের কে জানে।গায়ে অর্ধেক শাড়ি পেচিয়ে দরজা খানিকটা ফাকা করলাম ইয়াদ আছে কিনা দেখার জন্য।হয়তো ইয়াদ নেই তাই রুমে প্রবেশ করলাম শাড়ি হাতে নিয়ে।ব্লাউজ আর পেটিকোট পরে।আয়নার সামনে সেই কখন থেকে শাড়ি পরার প্রচেষ্টায় আছি কিন্তু বরাবরই প্রত্যেক বার আমি ব্যর্থ হচ্ছি।হঠাৎ দরজা খুলে কেউ প্রবেশ করলো ওইপাশে তাকাতেই ইয়াদকে দেখলাম সাথে সাথেই শাড়ি দিয়ে যেমন তেমন করে শরির ঢাকলাম।

ইয়াদ রুমে ফিরেছে ফোন নিতে রুমে প্রবেশ করে ভাবতেও পারেনি ফারাহকে এইভাবে দেখবে।সাথে সাথে মুখ ঘুড়িয়ে ভুল স্বরুপ ক্ষমা চাইলো,
-সরি সরি আম সো সরি।আমি আসলে জানতাম না তুমি এইভাবে বের হবে আম সো সরি।

মুখ ঘুড়িয়েই সাইড কাটিয়ে বেড সাইড টেবিল থেকে ফোন তুলে বাহিরে গিয়ে দরজা আটকে দিল।আমি শাড়ি গা থেকে সরিয়ে বড় একটা নিঃশ্বাস টানলাম।আবার রুমে কেউ নক করলো সাথে সাথে শাড়ি ধরলাম আর ধীর গলায় জিজ্ঞেস করলাম কে অপর পাশ থেকে মিষ্টি কন্ঠে একটি মেয়ে বলল,
-ভাবী আমি সোনিয়া।আসবো?
-হুম হুম আসো।

সোনিয়া ভিতরে প্রবেশ করে দরজা আটকে দিল।আমার কাছে এসে হা হয়ে কিছুক্ষন তাকিয়ে রইলো।আমি অসহায় বান্দী কিছুই বুঝলাম না এইভাবে তাকিয়ে থাকার মানে কি?হুট করেই ফিক করে হেসে উঠলো দাত কেলিয়ে।আমার মুখশ্রী আরো অসহায় হয়ে গেল আজ শাড়ি পরতে পারিনা বিধায় খিল্লি উড়ানো হচ্ছে আমার।
সোনিয়া আমার কাছে এসে বলল,
-ভাবী সত্যি তুমি শাড়ি পড়তে পারো না?

আমি ঠোঁট উল্টে শাড়ির দিকে অসহানিয় ভাবে চেয়ে বললাম,
-নাহ।সব সময় নীলাপু নাহয় আম্মু পরিয়ে দেয়।

হঠায় নীলাপু বলায় সোনিয়ার হাসি মিলিয়ে গেল।চুপসে গেল পুরো আমার হাত থেকে শাড়ি নিয়ে পরাতে লাগলো।এতক্ষনের চঞ্চলতা হাসি যেন মুহুর্তেই মলিন রুপ ধারন করলো।আমি নিম্ন গলায় বললাম,
-তুমি কিভাবে জানলে আমি শাড়ি নিয়ে সংকটে আছি?

সোনিয়া একখানা হাসি দিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বলল,
-তোমার বর মানে আমার ভাইয়া আমাকে গিয়ে বলল তুমি নাকি শাড়ি সংকটে আছো।এসে দেখি সত্যি সত্যি তাই।

ইয়াদের প্রতি খানিকটা রাগ হলাম আমি সংকটে আছি আর সে?আবার খুশিও হলাম মনের এক কোনে ভালোলাগা কাজ করলো সে আমার জন্য চিন্তা করে কিছুটা হলেও তাই তো সোনিয়াকে ডেকে পাঠালো।

নিচে গেলাম সুহানার আন্টি আংকেল আরো কিছু আত্মিয় নাস্তা করছিলেন আমাকে এমন শাড়িতে দেখে তারা হা করে তাকিয়ে রইলো খাবার ছেড়ে ব্যাপারটা আমি মোটেও বুঝে উঠতে পারছিলাম না।সুহানা আন্টি সবার দৃষ্টি অনুসরন করে আমার দিকে তাকালো।আমাকে দেখে গম্ভীর কণ্ঠে বলল,
-সেই কখন ডেকেছি এখন সময় হলো?

আমি মুখ খুলে কিছু বলতে যাবো তার আগেই সোনিয়া এক গাল হেসে বলল,
-আরে ভাবী শাড়ি পরতে পারছিল না তাই আমি সাহায্য করেছিলাম এর জন্য লেট হয়ে গেছে।

সুহানা বেগম মেয়ের মুখ থেকে শুনে হয়তো বিশ্বাস করলেন।ফারাহ যাই বলতো তা সে কখনোই বিশ্বাস করতে পারতো হয়ত।সুহানা বেগম পুনরায় মুখে খাবার পুরে গম্ভীর কণ্ঠে বললেন,
-আজ দুপুরের রান্না তুমিই সারবে।

আমি হ্যা সুচক মাথা নাড়লাম।রাসেল আংকেল খাবার শেষ করে অফিসের জন্য বিদায় নিল।ইয়াদ এক মনে নাস্তা করছে আর কোন দিকে যেন তার খেয়াল নেই।পাশের চেয়ারে বসে থাকা এক আন্টি তাচ্ছিল্য রুপে বলল,
-এখনো ঘার ধরে বের করলি না সুহানা এমন মেয়েকে?আমি থাকলে এতক্ষনে ওর অস্তিত্ব ও খুজে পেতিনা।

আমার খুব খারাপ লাগলো আন্টির এইরুপ কথায় কিন্তু কিছু বললাম না মাথা নিচু করে দাড়িয়েই আছি।ইয়াদ খালার কথা শুনে মাথা তুলে তাকালো তার আম্মা কোন উওর করলো না সেও কিছু বলল না।ফারাহর দিকে তাকিয়ে দেখলো ফারাহ মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে।
-ফারাহ বসো নাস্তা করো।

ইয়াদের পাশের চেয়ার টেনে ফারাহকে বসতে বলল।ফারাহ মাথা তুলে ইয়াদের দিকে তাকিয়ে যেতে নিলে ফারাহর ভাই তুর্য ফোন করলো।হাতে ফোন নিয়ে সবার উদ্দেশ্য বলল,
-একটু আসছি।

ফারাহ কিছুটা দূরে গিয়ে রিসিভ করলো।অপর পাশ থেকে তুর্য যা বলল ফারাহর মাথায় আকাশ ভেংগে পরলো।সে এমন কিছুরই আশা করে রেখেছিল তা সত্যিতে পরিনত হয়েছে।

চলবে,,