#মনের_পিঞ্জরে
#Ariyana_Nur
#Part_10
কলেজ মাঠের এক কোনে পাকা বেঞ্চের উপর বসে বসে মনের সুখে পা ঝুলাচ্ছে ইশরা।ঝড়ের গতিতে লিপি ইশরার সামনে এসে বসে হাপাতে লাগলো।
ইশরা লিপির দিকে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে বলল….
—ঐ ছেমরি কি হইছে তোর? হাপানী রুগীর মত এমন করতাছোস কেন?
লিপি ব্যাগ থেকে পানি বের করে ঢকঢক করে খেয়ে বলল…
—ইরু তুই এটা কোন কাজ করলি?তুই কিন্তু কাজটা একটুও ভালো করোস নাই।
ইশরা সন্দেহর চোখে লিপি দিকে তাকিয়ে বলল…..
—কি করছি আমি?কিসের কথা কইতাছোস তুই?
লিপি রাগ দেখিয়ে বলল…..
—তুমি জানো না আমি কিসের কথা বলতাছি?
—ঢং না করে বলতো।কি হয়েছে?
লিপি গাল ফুলিয়ে বলল……
—তুই তখন কেন ক্লাশ থেকে এসে পরলি?জানিস তুই ক্লাশ থেকে বের হবার পর স্যার অনেক রেগে গিয়েছিলো।আমি স্যারের চেহারা দেখেই বুঝতে পেরেছি।
(ঠিক ধরেছেন আপনারা ইশরার নতুন টিচার আর কেউ নয় বরং জিদান।জিদানকে দেখার পর ইশরা এক ঘোরের মধ্যে চলে গিয়েছিল।লিপির ধাক্কায় ঘোর কাটতেই ইশরা দেড়ি না করে ক্লাশ থেকে চুপচাপ বের হয়ে গেছে।ইশরা নিজের চোখের জল কাউকে দেখাতে চায় নি।তাইতো সে নিজের চোখের জল লুকাতে ক্লাশরুম থেকে বের হয়ে সোজা ওয়াসরুমে গিয়ে চোখে,মুখে পানি দিয়ে নিজেকে সাভাবিক করতে মাঠে বসে শরীরে হাওয়া লাগাচ্ছে।)
লিপির কথা সুনে ইশরা স্বাভাবিক ভাবেই বলল….
—তো……
ইশরার এই খাপ ছাড়া কথায় লিপি রেগে বলল…..
—তো মানে কি হ্যা তো মানে কি?তুই কি ভয় পাচ্ছিস না?একটুও কি তোর ভয় করছে না?যদি স্যার তোর নামে কমপ্লেইন করে।তোকে যদি কলেজ থেকে বের করে দেয়?
—তো……
—আবার তো। আমার ভয়ে হাত পা কাপছে আর তুই তো তো করছিস।
ইশরা লিপির মাথায় গাট্টা মেরে বলল….
—এই টিকটিকির আত্না নিয়ে চলিস কিভাবে তুই?গাধী এইটুকু কারনে কেউ কলেজ থেকে বের করে দেয় না।
লিপি মাথা ঢলতে ঢলতে বলল…..
—তা না হয় দেয় না।কিন্তু তুই কেন ক্লাশ থেকে বের হলি?স্যার তো তোকে খারাপ ভাবলো বল।আর বড় কথা তখন স্যারের দিকে ওমন ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে ছিলি কেন?খুব তো আমাকে কথা সুনিয়েছিলি?এখন কি হল হ্যা।কিরে স্যারকে দেকে কুছকুছ হুয়া?(হালকা ধাক্কা দিয়ে)
—তেমন কিছুই না।
—তাহলে কেমন কিছু।বল…বল…..
—ম্যাম….আপনাকে ইশান স্যার ডাকছে।
ইশরা কিছু বলার আগেই একজন পিয়ন এসে কথাটা বলল।
ইশরাঃআমাকে ডাকছে?
পিয়নঃজ্বি ম্যাম।আপনাকেই ডাকছে এবং এখনি যেতে বলেছে।
ইশরাঃঠিক আছে।আপনি যান আমি আসছি।
ইশরা মনে মনে বলল……
—আজ প্রথম বার এই ইশান স্যার আমাকে ঠিক টাইমে ডেকেছে।তা না হলে এই মহিলার প্রশ্নের উওর দিতে দিতে আমি বুড়ি হয়ে যেতাম।
💦💦💦💦💦💦
ইশরা, ইশান স্যারের রুমের সামনে দাড়িয়ে আছে।ইশান স্যার এর বাবা কলেজের চেয়ারম্যান।সেই সুবিধার্থে স্যার নিজের জন্য আলাদা এক রুম বরাদ্দ করে রেখেছেন।তার আবার জন্ম থেকেই এক খারাপ স্বভাব আছে,সবার সাথে তেমন মিসতে পারে না।যাদের সাথে মিসবে তাদের সাথে একেবারে ফ্রি।ছোট,বড় তখন আর দেখবে না।আর যাদের সাথে মিসতে না পারবে তারা বোম মেরেও তার পেট থেকে কথা বের করতে পারে না।
ইশরা দরজায় নক করে বলল…..
—মে আই কাম ইন স্যার।
ইশান স্যারঃকাম ইন।
ইশরা ভিতরে ঢুকতেই ইশান স্যার বলল…….
—তো মিসেস খান কি খবর আপনার?
ইশরা, ইশান স্যার এর দিকে চোখ রাঙিয়ে তাকাতেই ইশান স্যার বলল…..
—আরে মিসেস খান দাড়িয়ে আছেন কেন?বসুন প্লিজ।তা কি অর্ডার দিব?কি খাবেন বলুন।
ইশরা দাতে দাত চেপে বলল……
—আপাতত তোর মন্ডু।
ইশানঃদেখুন মিসেস খান এটা কলেজ আর আমি আপনার স্যার।তাই তুই,তোকারি বন্ধ করুন।আমাকে সম্মান দিয়ে কথা বলুন।
ইশরাঃতোর সম্মানের খেতায় আগুন।তোরে তো এখন আমার কাচা চাবাইয়া খাইতে মন চাইতাছে।
ইশানঃআজ আমার মিষ্টি বোনটা এমন রাগলো কেন?কি হয়েছে তার?
(থামুন থামুন। গাড়ি ফুল স্পিডে চালিয়ে ইশানকে নিয়ে বেশি কিছু ভাবতে হবে না।ইশান হল ইশিতা বেগম এর একমাত্র ছেলে ইশান মাহমুদ।ইশান এর সাথে ইশরা,ইশফার ভাইবোনের সম্পর্কের সাথে টম এন্ড জেরির সম্পর্ক)
ইশরা রেগে বলল…..
—একদম আমার সাথে মিষ্টি সুরে কথা বলতে আসবি না।আর তখন থিকা কি মিসেস খান মিসেস খান শুরু করছোস।আমার কি বিয়া হইয়া গেছে তুই মিসেস লাগাইতাছোস।(রেগে)
—তোর দেখি এতো দিনেও কোন পরিবর্তন হয়নি।সেই আগের বেয়াদব বেয়াদবী আছিস।স্যার দের সাথে কিভাবে কথা বলতে হয় তা এখনো শিখিস নি?
কথাগুলো বলতে বলতে জিদান ইশরার সামনে এসে দাড়াল।ইশরা চোখ রাঙিয়ে ইশানের দিকে তাকিয়ে আছে।ইশান ভ্রু কুচকে বলল…….
—এমনে তাকিয়ে আছিস কেন?আমি কি কিছু বলেছি নাকি?যে বলেছে তাকে কিছু না বলে আমার দিকে এভাবে তাকিয়ে আছিস।
ইশরা দাতে দাত চেপে বলল…….
—তুই কি জন্য আমারে এখানে ডাকছোস তাড়াতাড়ি বল।আমার ক্লাশ আছে।
জিদানঃতুই তো দেখি আগের থেকেও বেশি বেয়াদব হয়ে গেছিস।এতোগুলো কথা বলার পরেও আবার তুই তোকারি করছিস।শিক্ষকে সম্মান দিয়ে কথা বল।আর কি বললি,তোর ক্লাশ আছে।তুই যে কি ক্লাশ করবি তা আমাদের ভালো করেই জানা আছে।
ইশরাঃসরি স্যার।আমি আপনার কথা রাখতে পারলাম না।আমি আমার বড় ভাইয়ের সাথে কথা বলছি।তাকে আমি তুই বলি তুমি বলি অথবা আপনি বলি।যা খুশি তাই বলতে পারি।সেখানে আপনার নাক না গলালেও হবে। আমি আবার আমার কাছের মানুষদের তুই,তোকারি করতেই পছন্দ করি।সেটা তারা ভালো করেই জানে। আর তাছাড়া আমি এখন ক্লাশে নেই।ক্লাশে থাকলে আমি ওকে ঠিকই সম্মান দিয়ে কথা বলতাম।আপনাকে সেটা কষ্ট করে বলতে হবে না।
জিদানঃইশান তোর কাছের মানুষ তাহলে আমি কি?
ইশরাঃআপনি আমার নতুন টিচার।আমার স্যার।
জিদান এতোক্ষন ধরে ইশরার দিকেই তাকিয়ে ছিল।ইশরার চোখ পুরো লাল হয়ে গেছে।ইশরার কথাগুলো কেমন যেন কাপাকাপা শোনা যাচ্ছে।ইশরা যে নিজের কান্না আটকিয়ে এভাবে কথা বলছে তা জিদান ভালোই বুঝতে পারল।
জিদান ইশরার কাধে হাত রেখে বলল……
—আমার ইশু এতো অভিমানী কবের থেকে হল?সে তার জিদ ভাইয়ার সাথেও ফরমালিটি পূরণ করে কথা বলছে?
ইশরা ঝাড়া দিয়ে জিদানের হাত সরিয়ে দিয়ে রাগি গলায় বলল….
—শিক্ষক শিক্ষকের মত থাকবেন।গায়ে হাত দিতে আসবেন না।দ্বিতীয় বার গায়ে হাত দেবার চেষ্টা করলে আমি ভুলে যাব আপনি আমার শিক্ষক।
কথাগুলো বলে ইশরা ডানে বামে না তাকিয়ে রুম থেকে বের হয়ে গেল।
জিদান আর ইশান অবাক চোখে ইশরার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইল।
জিদান মনে মনে বলল…….
—তোর সব অভিমান আমি ভাঙবো। তাতে যতই আমার কাঠ-খড় পোড়াতে হোক না কেন।
(জিদান পারবে তো ইশরার মান-অভিমান ভাঙাতে)
#চলবে,
#মনের_পিঞ্জরে
#Ariyana_Nur
#Part_11
কারো সাথে “সম্পর্ক” টিকিয়ে রাখার জন্য উভয় পক্ষের লোককে সেই সম্পর্কের মূল্য দিতে হয় সম্মান করতে হয়।যদি একজন হ্যারফ্যার করে তাহলে সেই সম্পর্ক টেনেটুনে কিছুদুর এগিয়ে যাওয়ার পর মাঝ পথে তার সুতো ছিড়ে যায়।
আর এই সম্পর্কটা যদি সৃষ্টি হয় বিবাহের মধ্যমে,তাহলে তো কোন কথাই নেই।স্বামী,স্ত্রী দুজনকেই দুজনের পরিপূরক হতে হবে।একে অপরকে সম্মান করতে হবে।নিজেদের বৈবাহিক সম্পর্কের বন্ধন মজবুত করার জন্য একে অপরের কাছে খোলাসা করে সব কিছু সেয়ার করতে হবে।একে অপরের ঢাল হয়ে সব সময় পাশে থাকতে হবে।সেখানে যেন অবহেনা নামক কোন কিছুর কোন অসিস্ত না থাকে।
জানালার শিক ধরে উদাস মনে পাশের খালি মাঠের দিকে তাকিয়ে রয়েছে হাফসা বেগম।তাদের বাড়ির সামনেই এই বিশাল মাঠ।যেখানে আগে প্রতিদিন বিকেলে বাচ্চারা খেলাধুলা করতো।কিন্তু কয়েক বছর ধরে তার স্বামী আওলাদ খান সেটা দখলে নেবার পর থেকে কেউ সেখানে খেলা তো দুর মাঠের মাঝপথ দিয়েও কেউ হেটে যেতে পারে না।সবাইকে মাঠের পাশ দিয়ে যে রাস্তা আছে সেখান দিয়ে যেতে হয়।
হাফসা বেগম মাঠের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে হঠাৎ করে তাসিল্য হেসে বিরবির করে বলল……
—পরের হক মেরে খাবি খা এবার বেশি করে।এখন শস্যর জায়গায় ঘাস খা।তাতে যদি তোর মাথায় কোন সুবুদ্ধি আসে।
হাফসা বেগম এই কথাগুলো আর কাউকে না বরং নিজের স্বামী আওলাদ এর উদ্দেশ্যেই বলেছে।আওলাদ খান জোর করে মাঠ নিজের দখলে নেবার পর প্রতিবছর নানা রকম শস্য মাঠে বপন করে।এবং তা দ্বারা লাভবান হন।এবারো তার বিপরীত করেননি।প্রতিবার মাঠের কিছু যায়গা খালি রেখে শস্য চাষ করলেও এবার পুরো মাঠে নানান ধরনের শস্য বোপন করেছেন।কথায় আছে না জুলুম কারীর জুমুল আল্লাহ্ সহ্য করেন না।ঠিক তেমনি হয়েছে আওলাদ খানের উপর।সে মাঠের কাজে যাদের দিয়ে দিন-মজুর খাটিয়েছে।তারা তাদের পারিশ্রম নিতে আসলে তাদের কিছু টাকা দিয়ে তাড়িয়ে দিয়েছে।তারাও আওলাদ খানের মুখের উপর দিয়ে কিছু বলার সাহস পায়নি।তাই তারা না চাওয়া সর্তেও মুখ বুজে সব সহ্য করেছে।
কেননা তারা জানে আওলাদ খানকে কিছু বলা আর নিজের বিপদ নিজে ডেকে আনা একি কথা।
কিছুদিন পর শস্য কিছুটা বড় হলে শস্য পোকার হাত থেকে রক্ষা করতে কিটনাশক ঔষধ স্পে জাতীয় মেশিন এর মাধ্যমে শস্যর মধ্যে দেওয়া হয়।(ফসলের ক্ষেতে যেই স্পে মেশিনটা দিয়ে ঔষধ দেয় আমি তার নাম জানি না।কারো মেশিনটার নাম জানা থাকলে আমাকে নামটা জানালে খুশি হব।)কিন্তু সেখানে ভুলে আওলাদ খানই কিটনাশক ঔষধ এর জায়গায় এন্ডিল দিয়ে দেন।শস্যর মধ্যে দেবার জন্য।আর বাকিটা ইতিহাস।
হাফসা বেগম মনে মনে ভাবে,মানুষটাকে আমি আজও কেন চিনতে পারলাম না।এতো টাকা থাকতেও কেনই বা মানুষটা এমন টাকার পিছনে ছুটে।আমার জীবনের সব থেকে বড় ভুল সিদ্ধান্ত কি এটাই ছিল মানুষটার সাথে মানিয়ে নিয়ে জীবনের শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করার সিধান্ত নেয়া?
হাফসা বেগম আর আওলাদ খান এর বিয়েটা পারিবারিক ভাবেই হয়েছে।প্রথমদিকে আওলাদ খান আর হাফসা বেগম এর সম্পর্ক মোটামুটি ভালোই চলছিলো।জিদান হওয়ার পর তাদের সম্পর্কে যতটুকু ফাটল ছিলো তাও ঘুচে গিয়েছিল।কিন্তু কয়েক বছর পর থেকে আগে যতটুকু তাদের সম্পর্কে ফাটল ছিলো তার থেকেও দ্বিগুন সম্পর্কে ফাটল সৃষ্টি হল।কিছু হলেই আওলাদ খান হাফসা বেগমের সাথে বকা,ঝকা করে।কয়েকবার তো গায়েও হাত তুলেছে।কিন্তু পরবর্তীতে আর তার শশুর এর জন্য গায়ে হাত তুলতে পারে নি।
হাফসা বেগম সবকিছু জিদান এর মুখের দিকে তাকিয়ে মুখ বুজে সহ্য করে গেছেন।তখন কার বাঙালি মেয়েদের তো এক কথাই ছিল,যাই হয়ে যাক না কেন স্বামীর সংসার করেই যাব।লাল শাড়ি পড়ে স্বামীর ঘড়ে ঢুকেছি সাদা শাড়িতে স্বামীর ঘড় থেকে বের হব।আর সেটা হবে কাফনের কাপড়।সব কিছু মুখ বুজে সহ্য করে মানিয়ে নিতে নিতেই হাফসা বেগম আজ এই পযর্ন্ত এসেছে।
আমাদের এই আধুনিক যুগেও কিছু মেয়ে আছে যারা হাফসা বেগম এর মত এক কথাই বলে, যাই হয়ে যাক না কেন,গলে,মরে,পচে স্বামীর ঘড়েই কাটাবো।তারা হয়তো পরিস্থিতির স্বীকার হয়ে কিংবা পরিবারের জন্য এই সিদ্ধান্ত নেয়। অথবা লোকের কথা থেকে বাচতে।কেননা কোন মেয়ে স্বামীর ঘড় থেকে চলে আসলেই সবাই আগে মেয়েদের দিকে আঙুল তুলে বলে,মেয়েটাই ভালো না।স্বামীর সংসার করতে পারলো না।এমনকি যা না হয় তাও তেল মসলা মিলিয়ে বলতে শুরু করে।মেয়েটার কারো সাথে সম্পর্ক আছে,এটা সেটা ইত্যাদি ইত্যাদি।
এসব কথা এই অধুনিক যুগে শহরে শোনা না গেলেও আমাদের গ্রাম অঞ্চলগুলোতে কিন্তু ঠিকই শোনা যায়।যুগ আধুনিক হয়েছে কিন্তু আমাদের এই আধুনিক যুগের কিছু মানুষ তাদের চিন্তা-ধারা সেই আগের মতই রেখেছেন।তারা মানুষকে সান্ত্বনা দেবার মাঝেও তাদের কষ্টকে আরো জাগিয়ে তুলে।
আমাদের সবাইকে আমাদের চিন্তা-ধারা বদলাতে হবে।কারো সম্পর্কে কিছু মতব্য করার আগে আগে আমাদের সঠিক খবর জানতে হবে।তা না করে কোন মন্তব্য না করাই শ্রেয়।
(যাই হোক অনেক কথা বললাম।কথার মধ্যে যদি ভুলক্রটি থেকে থাকে তাহলে ছোট বোন হিসেবে ভুলগুলোকে ক্ষমা করে দিবেন।)
—আম্মা ভাইজান ফোন করছে।
কাজের মেয়ে মিতুর ডাক সুনে ভাবনার জগত থেকে বেড়িয়ে আসলেন হাফসা বেগম।
মিতুর থেকে ফোন নিয়ে হ্যালো বলতেই অপর পাশ থেকে ভেসে আসলো……
—কেমন আছো মা?
— আলহামদুলিল্লাহ্।তুই কেমন আছিস বাবা?
— আলহামদুলিল্লাহ্ ভালো।তোমার শরীর সুস্থ আছে তো?ঠিকমত ঔষধ খাচ্ছ তো?
হাফসা বেগম মুচকি হেসে বলল…..
—হ্যা বাবা খাচ্ছি।তুই ঠিক আছিস তো।
মনে মনে বলল…….
—ঔষুধ কিনে দিবে তাও আবার তোর বাবা?তার টাকা শেষ হয়ে যাবে না।তার কাছে তো ডাঃ রোগ ছাড়াই এমনিতেই বেশি বেশি ঔষধ লিখে দেয়।
হাফসা বেগম জিদানের সাথে কিছুক্ষন কথা বলার পর ফোন রেখে দিল।ছেলের সাথে কথা বলেই তার মনে যে এতোক্ষন উদাস ভাব ছিলো তা মুহূর্তেই ভালো হয়ে গেলো।
💦💦💦💦💦💦
ইশফা আয়নার সামনে দাড়িয়ে মাথায় বেনী করছে।ইশরা পিছনে দাড়িয়ে চোখ রাঙিয়ে ইশফার দিকে তাকিয়ে রয়েছে।ইশফা আয়নায় ইশরার চেহারা দেখেই বুঝে গেছে সে যে রেগে আছে।আর ইশরা কেন রেগে আছে তা ইশফার অজানা নয়।
ইশরা কোমরে এক হাত দিয়ে চিবিয়ে চিবিয়ে বলল……
—তুই সব জানতি তাই না?
ইশফা আপন মনে বেনী করতে করতে বলল……
—কি আমি সব জানতাম?কিসের কথা বলছিস তুই?
ইশরা রেগে ইশফার হাত থেকে বেনী ছাড়িয়ে নিয়ে পুরো বেনী খুলে দিয়ে রাগি গলায় বলল….
—ঢং করো ঢং।সব জেনেও না জানার ভান করে আইন্না ভাত খাও।
ইশফা, ইশরার চুল টেনে বলল……
—শয়তান,বান্দর,কুত্তা,বিলাই তুই আমার বেনী খুললি কেন?
ইশরা ইশফার হাত থেকে চুল ছাড়িয়ে বলল…..
—করেছি বেশ করেছি।তুই সব জানার পরেও কেন আমারে জানাস নাই।
—থাবরা চিনোস শয়তান ছেমড়ি।কি হইছে না কইয়াই এক গান শুরু করছোস?কি জানাই নাই তোরে?
—তুই আমাকে জি…..
কথাটা বলতে গিয়ে ইশরা থেমে গেল।
ইশফা ভ্রু কুচকে বলল…….
—আমি তোকে জি…..কি?
ইশরা মাথা নিচু করে বলল…….
—তুই জানিস আমি নামটা নিতে চাচ্ছি না।এই নামটা ৪বছর আগেই আমার জীবন থেকে মুছে গেছে।তুই সব জেনেও নতুন করে কেন এসবের মধ্যে আমাকে জরাচ্ছিস ইফু?আমি তাই বুঝতে পরছি না।
ইশফা,ইশরার কাধে হাত রেখে নরম সুরে বলল….
—তুই সবাইকে বোকা বানাতে পারলেও আমাকে পারবিনা ইরু।ভুলে যাস না তোর থেকে আমি বেশি তোকে বুঝি।তোর বলা,না বলা সব কথাই আমার অজানা নয়।যা হয়েছে তাতে তো ভাইয়ার কোন দোষ ছিল না।তাহলে কেন তুই ভাইয়াকে দোষারোপ করছিস?ভাইয়া কেন অপরের ভুলের জন্য কষ্ট পাবে?
ইশরা ছলছল চোখে ইশফার দিকে তাকিয়ে বলল…..
—আমি এসব কথা শুনতে চাই না ইফু।যার জন্য আমি,আমার বাবা,মাকে এতো কথা সুনতে হয়েছে তাকে তো আমি কখনো………
এতোটুকু বলে ইশরা থেমে গেল।চোখের জল গড়িয়ে পরার আগেই ওরনা দিয়ে চোখ মুছে বলল…..
—এ নিয়ে আর কোন কথা সুনতে চাই না।
কথাটা বলে দেড়ি না করেই ওয়াসরুমে চলে গেলো।
ইশফা হতাস হয়ে একটা দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলল।সে ঢের বুঝতে পেরেছে তার পাগলী বোনটা বড্ড অভিমান করেছে।যার অভিমান ভাঙাতে গেলে তার ভাইয়ের রফা-দফা হয়ে যাবে।
(ইশরা_জিদান এর সাথে অভিমান করার কারণ আস্তে আস্তে জানানো হবে)
💦💦💦💦💦💦
ইশফা ক্লাশরুমে বসে নোট লিখছে।রিধি,তুশি এখনও ভার্সিটিতে আসেনি।ইশফা আজ একটু তাড়াতাড়িই চলে এসেছে।ক্লাশ শুরুর এখনো অনেক সময় বাকি।তাই একা একা অযথা বসে সময় নষ্ট না করে ইশফা সময়টাকে কাজে লাগাচ্ছে।
—এই যে পিচ্ছি কেমন আছো?
কথাটা সুনে ইশফা ফট করে মাথা উঠিয়ে তাকাতেই দেখে নিরব হাসি মুখে সামনে দাড়িয়ে আছে।
ইশফা লিখায় এতোই ব্যস্ত ছিলো যে,আশেপাশে কি হচ্ছিলো কোন খবর ছিলো না।
ইশফা দাড়িয়ে বলল…..
— আলহামদুলিল্লাহ্ ভালো।আপনি?
কথা বলার সাথে সাথে ইশফা পুরো ক্লাশরুমে একবার চোখ বুলিয়ে নিল।ক্লাশে হাতে গনা কয়েকজন আছে।আর সবাই ইশফার দিকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে।
ইশফা ছোট ছোট চোখ করে নিরবের দিকে তাকিয়ে বলল……
—কিছু বলবেন ভাইয়া?
নিরব মাথা চুলকিয়ে মুচকি হেসে বলল……
—তোমার সাথে কিছু কথা ছিল।
—জ্বি বলুন।
—এখানে না।যদি একটু ক্লাশ থেকে বের হতে।
ইশফা কিছুক্ষন দ্বিধা-দ্বন্দ করে খাতা কলম ব্যাগ এর মধ্যে রেখে বলল….
—চলুন।
💦💦💦💦💦💦
ইশফা নিরবের পিছু পিছু অডিটোরিয়াম রুমে গেল।নিরবের জায়গায় অন্য কেউ হলে ইশফা কখনো তার সাথে যেত না।এই কয়দিনে ইশফা নিরবকে ভালোমত চিনতে না পারলেও এতোটুকু চিনেছে যে,নিরব ছেলে হিসেবে খারাপ না।আর তাছাড়া ইশফা,রিধিকে ক্লাশে ঢুকতে দেখেই নিবরের সাথে যাবার জন্য রাজি হয়েছে।ইশফা একা হলে কখনোই রাজি হত না।
অডিটোরিয়ামে রুমে ঢুকেই ইশফার মাথা গরম হয়ে গেল।কেননা সান অডিটোরিয়াম রুমে ফুল এটিটিউড নিয়ে বসে ফোনে গুতাচ্ছে।ইশফা বুঝে না এই পোলায় এতো এটিটিউড কই পায়।যখনি দেখে খুল এটিটিউড নিয়ে থাকে।
নিরব সানকে ডাক দিতেই সান ফোনের দিকে তাকিয়ে বলল…..
—এসেছিস?
নিরব চোখ রাঙিয়ে সানের দিকে তাকালো।মনে মনে সানকে গালি দিয়ে বিরবির করে বলল….
—শালা ভাবটা নিতাছে কি?মনে হয় এখানে কি হইতাছে সে জানেই না।তুই যে শালা ভাবীর দিকেই ফোনের বাহানা দিয়া বাকা চোখে তাকাইতাছিলি তা আমার জানা আছে।
সান ফোন পকেটে রেখে নিরবের দিকে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে বলল……
—কিছু বললি তুই?
নিরব হাসার চেষ্টা করে বলল…..
—না ভাইজান আপনারে কি কিছু বলতে পারি বলেন।
সান নিরবের দিকে চোখ রাগিয়ে তাকিয়ে পাশ থেকে একটা শর্পিং ব্যাগ হাতে নিয়ে ইশফার সামনে গিয়ে ব্যাগটা ইশফার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলল……
—এটা তোমার?
ইশফা এক পলক শপিং ব্যাগের দিকে তাকিয়ে সাভাবিক ভাবে বলল……
—কিসের জন্য।
সানঃসেদিন তোমার গিফট টা আমি রেখেছি আজ তুমি আমার টা নেবে।তাহলেই হিসাব বরাবর।
সানের কথা শেষ হতেই ইশফা কিছু বলার আগেই রিধি ফোড়ন কেটে দাত কেলিয়ে হেসে বলল…..
—সেদিন তো ইফু আপনাকে ছোট বোন হিসেবে গিফট দিয়েছিলো।তা আজ আপনি কি হিসেবে ওকে গিফট দিচ্ছেন?বড় ভাই হিসেবে ভাইয়া?
(আহারে রিধি তো বড় ভাই বলে বেচারা সানের মনটাই চুরমার করে দিল।)
#চলবে,