মনের পিঞ্জরে পর্ব-২+৩

0
1185

#মনের_পিঞ্জরে
#Ariyana_Nur
#Part_02_03

ওয়াসরুমে সাওয়ারের নিচে দাড়িয়ে রয়েছে ইশফা।রাগে তার ফর্সা মুখটা পুরো লাল হয়ে রয়েছে।নিজের রাগ কমানোর জন‍্য এক হাতের নখ আরেক হাতের বিভিন্ন জায়গায় চেপে ধরছে।সে সব জায়গায় পানি লাগার কারনে জ্বলে যাচ্ছে।কিন্তু সেদিকে তার খেয়াল নেই।সে তার রাগ কমানোর জ‍ন‍্য হাতের বিভিন্ন জায়গায় ক্ষত করেই যাচ্ছে। তারপরেও যেন তার রাগ কমছে না।

তখন ক্লাশরুমে তার মুখ চেপে ধরার কয়েক সেকেন্ডের মধ‍্যে তার হাতে একটা টিস‍্যু আর একটা চিরকুট ধরিয়ে দিয়ে লোকটা তাকে ছেড়ে দিয়ে চলে যায়।ছাড়া পেতেই ইশফা দ্রুত ক্লাশ রুম থেকে বের হয় যায়।ক্লাশ রুম থেকে বের হয়ে আশেপাশে তাকিয়ে কাউকে দেখতে পায় না।ইশফা ভ্রু কুচকে হাতের চিরকুট আর টিস‍্যুটার দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে চিরকুটটা খুলতেই দেখতে পায় সেখানে সুন্দর করে লিখা…..

“সব সময় শুনে এসেছি মেয়েদের কাজল কালো চোখে নাকি ছেলেরা হাড়িয়ে যায়।কিন্তু আমি তো তোমার কাজল ছাড়া ঐ চোখেই হাড়িয়ে গেছি।টিস‍্যু দিয়ে সুন্দর করে চোখ মুছে নাও।খবরদার আর যেন তোমার ঐ চোখে পানি না দেখি।তাহলে কিন্তু আমার চাইতে খারাপ কেউ হবে না।বাঘীনীকে বাঘীনী রুপেই মানায় ছিদ কাদুনে রুপে নয়।”

লিখাট পড়েই ইশফা রাগে চিরকুট আর টিস‍্যু টুকরো করে মোচরিয়ে ফেলে দিয়ে চলে যায়।

এক ঘন্টার মত সাওয়ার নিয়ে ইশফা ওয়াসরুম থেকে বের হয়ে বেডে শরীর বিছিয়ে দিতেই তার ফোনটা বেজে উঠল।ফোনের স্কিনে “মি”লেখাটা দেখে রিসিভ করে ফোন কানে ধরতেই অপর পাস থেকে ভেসে আসে….

—হাই বেবি….কি অবস্থা?কেমন কাটলো প্রথম দিন?

ইশফা গম্ভীর গলায় বলল….

—ভালো।

ইশফার গম্ভীর গলার কথা শুনে অপর পাশ থেকে চিন্তিত শুরে ভেসে আসে…..

—কি হয়েছে তোমার?কথা এমন শোনা যাচ্ছে কেন?নিশ্চই কোন ঝামেলা করেছো তা না?

—মাথা ধরেছে।পরে কথা বলি ঘুমোব।

—ওকে টেক কেয়ার।আল্লাহ হাফেজ।

—আল্লাহ হাফেজ।

কথা শেষ করেই ইশফা ঘুমের দেশে পাড়ি দেবার জন‍্য চোখ বন্ধ করে শুয়ে রইল।

💦💦💦💦💦

ড্রয়িংরুম জুড়ে পানির পাত্র হাতে নিয়ে সান এর পিছু পিছু ছুটছে সিনথিয়া।সিনথিয়া সানের পিছু পিছু ছুটছে আর চেচিয়ে বলছে….

—ভাইয়া থাম বলছি।ভালো হবে না কিন্তু।

সান ছুটতে ছুটতে বলল…..

—মাথা খারাপ না পেট খারাপ। আমি তোর হাতে ধরা দিব।তুই ডাইনী যে একবার আমাকে ধরতে পারলে কি করবি তা আমার জানা আছে।

—বজ্জাত পোলা তুই কি ছেড়ে দেবার কাজ করেছিস যে তোকে ছেড়ে দিব।ইচ্ছে তো করছে তোর চুল ছিড়তে।

—আগে আমাকে ধর তার পর না হয় চুল ছিড়িস।

দু’ভাই বোনের ঝগড়া শুনে মিসেস শিকদার রান্না ঘর থেকে হাতে খুনতি নিয়ে এসে কোমরে হাত দিয়ে রাগি গলায় বলল….

—চুপচাপ দাড়াও তোমরা।যদি কেউ ছোটাছুটি কর তাহলে খবর আছে।

মায়ের ধমক খেয়ে দু’জন ভদ্র বাচ্চার মত দাড়িয়ে রইল।

মা দুজনের দিকে রাগি চোখে তাকিয়ে বলল….

—কি হয়েছে তোমাদের?এমন বাদরের মত ছোটাছুটি করছো কেন?

মায়ের কথা শুনে সিনথিয়া ন‍্যাকা কান্না করে হাতের পানির পাত্র টা দেখিয়ে বলল….

—দেখ আম্মু ভাই আমার সব মেকাপ পানিতে গুলিয়ে নষ্ট করে ফেলেছে।

মা গম্ভীর হয়ে বলল….

—সান তুমি এগুলো নষ্ট করেছো?

সানঃআম্মু সেদিন নিউজে দেখলাম এই সব আটা ময়দা মাখার কারনে স্কিন নষ্ট হয়ে গেছে অনেকের।মুখের মধ‍্যে বড় বড় পিম্পল উঠেছে।শুধু পিম্পল না বড় বড় ফোসকাও পরেছে।পুরো মুখ নষ্ট হয়ে গেছে।ও যেই হাড়ে এই আটা ময়দা মেখে ডাইনী সাজে কোন দিন যেন ওর মুখও নষ্ট হয়ে যায়।তাই এগুলো নষ্ট করেছি।ফেলে দিলে তো এই ফকন্নী কুড়িয়ে এনে সেগুলো মুখে মাখবে তাই পানি তে গুলিয়েছি।ভালো করেছিনা আম্মু।(দাত কেলিয়ে হেসে)

সিনসিয়াঃআম্মু ভাই মিথ‍্যে বলছে ভাই আমাকে একটা পেন্টিং একে দিতে বলেছিল না করেছি দেখে ও এমন করেছে।আম্মু জানো ভাই আমাকে দিয়ে……

আর কিছু বলার আগেই সান সিনথিয়ার মুখ চেপে ধরে দাতে দাত চেপে ফিসফিস করে বলল……

—আমার ডাইনী সরি হুর পরি বোন আমার।আমি কালকেই তোকে শপিংয়ে নিয়ে যাবো।তোর মেকআপের যা যা লাগবে সব কিনে নিস।এগুলো তো ডেট এক্সফেল হয়ে গেছিলো তাই তো নষ্ট করেছি।তা না হলে কি আমি এমন করতাম বল।

মিসেস শিকদারঃএই সান তুমি ওর মুখ চেপে ধরেছো কেন?কি বলছিলো ও?

সান সিনথিয়ার মুখ থেকে হাত সরিয়ে বলল….

—কিছু না আম্মু।তুমি তো জানোই এই পাগলে সারাদিন কিছু না কিছু বলতেই থাকে।

সান এর কথা মনে হয় না মিসেস শিকদারের পছন্দ হল।তাই সে সিনথিয়ার দিকে প্রশ্ন বোধক দৃষ্টিতে তাকাতেই সিনথিয়া সানের দিকে চোখ রাঙিয়ে তাকিয়ে মেকি হেসে বলল….

—কিছু না আম্মু।আমাদের ভাই বোনদের ব‍্যপার আমাদের উপর ছেড়ে দাও।

মিসেস শিকদার দুজনের দিকে চোখ রাঙিয়ে তাকিয়ে নিজের কাজে চলে গেলো।কেননা সে তাদের ছেলেমেয়ের ভালো মত চিনে।একবার যখন বলেছে কিছু না তাহলে বোম ফাটালেও তাদের পেট থেকে কথা বের হবে না।

মিসেস শিকদার চলে যেতেই সিনথিয়া দাত বের করে হেসে বলল….

—তা কাল কখন নিয়ে যাবে শপিং এ ভাই?

সান ভ্রু কুচকে তাকিয়ে সিনথিয়ার দিকে আগাতে নিলেই সিনথিয়া ভৌ দৌড়।সান ও সিনথিয়ার পিছু পিছু ছুটতে লাগলো।

সান সিনথিয়া দৌড়াতে থাক ততক্ষনে আমরা তার পরিচয় জেনে নেই।

সানজান শিকদার।ডাক নাম সান।শিকদার গ্রুপ অফ ইন্ডাস্ট্রির ভবিষ্যত CEO।শিকদার বাড়ির বড় ছেলে।বাড়িতে বাবা,মা,বোন আর দাদুকে নিয়েই তাদের সুখি পরিবার।সান এর দুইটি রুপ।সান কাছের মানুষদের সাথে খুব ফ্রি।দুষ্টুমি, ফাজলামি তে সবাইকে মাতিয়ে রাখে।যদিও রাগটা নাকের ডোগায় থাকে।কাছের মানুষ ছাড়া সবাই সানকে গম্ভীর, রাগি, বদমেজাজী হিসেবে চিনে।কিন্তু তাতে সানের কোন মাথা ব‍্যথা নেই।সে তার দু’রুপকেই পছন্দ করে।ভার্সিটির কারো সাহস নেই সান এর উপর দিয়ে কথা বলার।সান পড়াশুনার সাথে সাথে বাবার ব‍্যিজনেসেও সাহায্য করে।

💦💦💦💦💦

ইশফার ঘুমের মধ‍্যে চোখের মধ‍্যে র্তীব আলো লাগার কারনে ঘুম ছুটে গেল।ইশফা চোখ খিচে বন্ধ করে ঘুমঘুম কন্ঠে বলল…

—আব্বু…লাইট অফ করো।চোখে লাগছে তো।

ইশফার বাবা ইশফার মাথার সামনে বসে মাথায় হাত বুলিয়ে বলল….

—তা তো হচ্ছে না মামুনি।এখন তো তোমাকে উঠতে হবে।

ইশফা বাবার কোলে মাথা রেখে বলল….

—উহু….এখন উঠবো না।আরেকটু ঘুমোব। আব্বু প্লিজ লাইট অফ করো।(অদুরে কন্ঠে)

—যতই আদর দেখাও না কেন মামুনি কাজ হবে না।তুমি স্কুল থেকে এসে না খেয়েই ঘুমিয়ে রয়েছো।তা কি আমি জানি না মনে করেছো।

—ওফ আব্বু তুমি আমাকে রাগানোর জন‍্য আবার স্কুল বলছো।সো স‍্যেড আব্বু। আমি রাগছি না।আর একটু ঘুমাই তার পরে এক সাথে রাতের খাবার খাব।

—আরেকটু ঘুমালে রাতের খাবার না একসাথে সকালের নাস্তা খেতে পারবে।কটা বাজে সেই খেয়াল আছে তোমার?

—কটা বাজে?৫টা নাকি ৬টা?

—সাড়ে ১০টা বাজে।

ইশফা লাফ দিয়ে উঠে বলল…..

—কিহহহ…..সাড়ে ১০টা।আল্লাহ আব্বু আমাকে আগে ডাক দাও নি কেন?আমার না রান্নার কথা ছিল।

ইশফার বাবা মুচকি হেসে বলল……

—পাগলি মেয়ে।ফ্রেস হয়ে খেতে আয়।

ইশফা গাল ফুলিয়ে বলল….

—এটা ঠিক না আব্বু।এতোদিন তুমি রান্না করে খেতে একা ছিলে বিধায় এখন তো আমি আছি।তুমি আমাকে কেন আগে ডেকে দিলে না?

ইশফার বাবা ইশফার মাথায় হাত বুলিয়ে বলল….

—আমার একটু ইচ্ছে হল আমার মাকে রান্না করে খাওয়াতে।তাই ডাকি নি।এখন তাড়াতাড়ি আয় তোর পছন্দের খাবার রান্না করেছি।

ইশফা খুশি হলে বলল….

—সত‍্যি।আমি এখনি ফ্রেস হয়ে আসছি।কিন্তু কাল থেকে কিন্তু আমি রান্না করবো।মনে থাকে যেন।(শাসনের সুরে)

ইশফার বাবা ইশফার গাল টেনে বলল……

—পাগলি মা আমায়।তাড়াতাড়ি আয়।

কথাটা বলে সে রুম থেকে বের হয়ে গেলো।
ইশফা মুচকি হেসে ওয়াসরুমের দিকে পা বাড়ালো।

💦💦💦💦💦

মাঝ রাতে ঘুম ভেঙে যাবার পর বহু চেস্টা করেও ঘুমের দেশে পাড়ি দিতে পারে নি ইশরা।তাই চুপিচুপি রুম থেকে বেরিয়ে চোরের মত পা ফেলে ছাদে চলে আসে।ছাদের এক কোনে দেয়ালের সাথে হেলান দিয়ে আকাশের ঐ অর্ধেক ওঠা চাদ টার দিকে তাকিয়ে রইল।চাদের দিকে তাকিয়ে কিছু ভাবতে ভাবতে মুহূর্তের মধ‍্যে মনের মধ‍্যে জমা হল এক রাশ অভিমান।তার সাথে চোখ দিয়ে বেড়িয়ে এল লোনা জল।চাদের দিকে তাকিয়ে অভিমানের সুরে বিরবির করে বলল…..

—দেখেছো চাদ তুমিও একা আজ আমিও একা।আচ্ছা বলতে পারো কেন সব সময় কাছের মানুষগুলো আমাকে একা করে রেখে যায়?আমি কি অনেক পচা?আমি না হয় একটু বেশিই দুষ্টুমি করি তাই বলে কি তারা আমাকে এভাবে কষ্ট দিবে?তাদের কি একটুও কষ্ট হয় না আমার জন‍্য?

💦💦💦💦💦💦

ইশফা রিকশা জন‍্য অনেকক্ষন দাড়িয়ে থাকার কারনে ভার্সিটিতে পৌচ্ছাতে একটু দেড়ি হয়ে গেলো।তাড়াহুড়ো করে ক্লাশের দিকে পা বাড়াতে লাগলো।ইশফা ক্লাশে পৌচ্ছাবার আগেই কয়েকজন ইশফার সামনে এসে পথ আটকে দাড়ালো।ইশফা পাশ কেটে চলে যেতে নিলেই…..

#চলবে,

(ভুলক্রটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।গল্প কেমন হচ্ছে জানাতে ভুলবেন না।গল্প কি চলবে নাকি চাট্টি বাট্টি গোল করে পালাবে?বাই দা রাস্তা চালের বস্তা ইশফাকে চিরকুটটা কে দিল?আর সামনেই বা কে পরল🤔ধন‍্যবাদ)

#মনের_পিঞ্জরে
#Ariyana_Nur
#Part_03

ইশফা রিকশার জন‍্য অনেকক্ষন দাড়িয়ে থাকার কারনে ভার্সিটিতে পৌচ্ছাতে একটু দেড়ি হয়ে গেলো।তাড়াহুড়ো করে ক্লাশের দিকে পা বাড়াতে লাগলো।ইশফা ক্লাশে পৌচ্ছাবার আগেই কয়েকজন ইশফার সামনে এসে পথ আটকে দাড়ালো।ইশফা পাশ কেটে চলে যেতে নিলেই একজন ইশফার ব‍্যাগ ধরে বলল….

—কই যাস?আমাদের কে কি চোখে পরে না ?

ইশফা তাদের দিকে ভালো মত খেয়াল করে তাকাতেই তাদের চিনতে অসুবিধে হল না।তারা আর কেউ না কালকের সিনিয়র আপুগুলো।তাদের দেখেই ইশফার মাথা গরম হয়ে গেলো।তার পরেও নিজের রাগটাকে দমিয়ে সুন্দর করে বলল….

—আপুরা আমার ক্লাশ আছে।

তাদের থেকে একজন মেয়ে বলল…..

—বইয়ের ক্লাশ পরে করিস আগে আমরা তোর ক্লাশ নিয়ে নেই।

আরেক জন মেয়ে বলল…..

—প‍্যাচাল বন্ধ।আগে বল কালকে যে সান জানুর কাছে তোরে দিয়া একটা চিঠি পাঠিয়েছি সেটা তাকে দিস নি কেন?

ইশফাঃ আমি তো ঐ ভাইয়াকে চিরকুটটা দেবার আগেই তার বন্ধুরা সেটা নিয়ে নিয়েছে।

—হুম তারা চিঠি নিয়েছে কিন্তু তাতে কিছু লিখা ছিলো না।আমি যেই চিঠিটা দিয়েছিলাম সেটা কই?

ইশফা এবার কোন কথা না বলে চুপ করে দাড়িয়ে রইল।ইশফাকে চুপ করে থাকতে দেখে মেয়েগুলো ওর সাথে ধমকা ধমকি করতে লাগলো।তার পরেও ও কোন উওর দিচ্ছে না।

—এখানে কি হচ্ছে?

পিছন থেকে নিরবের কথা শুনে মেয়েগুলোর থেকে একজন মেয়ে বলল….

—নিরব তুই তোর কাজে যা।আমাদের কাজে নাক গলাতে আসিস না।

নিরব হাত ভাজ করে দাড়িয়ে বলল….

—বাহ্ সাহস তো দেখছি বেশি বেড়েছে তোদের?কাল তাহলে তোরাই এই মেয়েটাকে সান এর কাছে চিরকুট দিয়ে পাঠিয়েছিলি?

প্রথম মেয়েটা বিরক্ত হয়ে বলল….

—হা পাঠিয়েছি তাতে তোর কি? তুই তোর কাজে যা।আমাদেরকে আমাদের কাজ করতে দে।

নিরবঃআমার কিছুই না।সান তো তোদেরকেই খুজছে। যাই গিয়ে খবরটা দিয়ে আসি।তোরাই সে যারা কালকে এই মেয়েটাকে সান এর কাছে চিরকুট দিয়ে পাঠিয়েছিস।

সান এর নাম শুনতেই মেয়েরা একে অপরের মুখের দিকে তাকিয়ে চলে গেলো।মেয়েগুলো চলে যেতেই ইশফা ক্লাশের দিকে পা বাড়াতে নিলেই নিরব বলল….

—এই যে পিচ্ছি।আমি তোমাকে ওদের কাছ থেকে বাচালাম আর তুমি ধন‍্যবাদ না দিয়েই চলে যাচ্ছো।

ইশফা ঘুড়ে দাড়াতেই নিরব মুচকি হেসে হাত বাড়িয়ে বলল….

—হাই আমি নিরব।সান এর বন্ধু।এখানে কোন সমস‍্যা হলে আমাকে বলবে আমি স্লভ করে দিব।

ইশফা নিরবের হাতের দিকে তাকিয়ে বিরবির করে বলল….

—সান কা চামচা।

নিরব শুনতে না পেরে বলল….

—সরি….

—আমার দেড়ি হচ্ছে।
কথাটা বরে ইশফা আর দেড়ি না করে ক্লাশের দিকে পা বাড়ালো।

💦💦💦💦💦💦

ক্লাশে ঢুকে ইশফা মুখের থেকে হিজাব সরিয়ে একটা বড় নিশ্বাস ছাড়লো।ইশফা বোরখার সাথে সব সময় হিজাব তো পড়বেই সাথে হিজাব দিয়ে সুন্দর করে মুখ ঢেকে রাখবে।তার আবার বোরখার সাথে হিজাব পড়ে মুখ খুলে রাখা পছন্দ না।স‍্যার এখনো ক্লাশে আসে নি।ক্লাশ শুরুর আরো ৫মিনিট বাকি আছে।হঠাৎ একটা মেয়ে হুড়মুড় করে ক্লাশে ঢুকে ইশফার পাশে এসে বসে পরল।এদিন ওদিক একবার তাকিয়ে ইশফার দিকে হাত বাড়িয়ে বলল….

—হাই….আমি রিধি।

ইশফা মুচকি হেসে হাত মিলিয়ে বলল….

—আমি ইশফা।

—তুমি কি এখানে নতুন?

ইশফা মাথা ন‍েড়ে হ‍্যা বলতেই রিধি বলল….

—জানো আমিও না নতুন।একা একা কি আর ভালো লাগে বল।আমার হাড়ামী বন্ধুগুলোকে কত করে বললাম এখানে ভর্তি হতে কিন্তু ওরা শুনলোই না আমার কথা।ওদের রাজি না করাতে পেরে আমিও পরে ঠিক করেছিলাম ওদের সাথে ভর্তি হব।কিন্তু বাবার চাপে এখানেই ভর্তি হলাম।আচ্ছা বাদ দাও সে সব কথা তুমি কি আমার ফ্রেন্ড হবে?(হাত বাড়িয়ে)

ইশফা মুচকি হেসে হাত মিলাতেই রিধি বলল….

—থ‍্যাক্স আল্লাহ্।কারো কান পচানোর ব‍্যবস্থা করে দিলে।আমি কিন্তু প্রচুর কথা বলি তুই কিন্তু কিছু বলতে পারবি না।আর শোন কোন তুমি,আপনি চলবে না।বন্ধুদের মধ‍্যে তুই বেটার।

ইশরা মুচকি হেসে বলল….

—ওকে।

আর কিছু বলার আগেই স‍্যার চলে আসলো।ইশফা ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে স‍্যার ঠিক টাইমেই চলে এসেছে।ইশফা এক পলক রিধির দিকে তাকিয়ে মনে মনে বলল….

—ইয়া আল্লাহ্ পাচ মিনিটেই এতো কথা বললো মেয়েটা বাকি সময়ে কি করে আল্লাহ্ মালুম।

💦💦💦💦💦💦

ইশরা কলেজে যাবার জন‍্য তাড়াহুড়ো করে রেডি হচ্ছে আর চিৎকার করে বলছে…..

—ও মা….
তাড়াতাড়ি আমার ব‍্যাগ গুছিয়ে দাও আমার দেড়ি হয়ে যাচ্ছে।

ইশরার মা এতোক্ষন ইশরার দরজার সামনেই দাড়ানো ছিল।ইশরা নিজের কাজে ব‍্যস্ত থাকায় তাকে দেখতে পায় নি।ইশরার কথা শেষ হতেই ইশরার মা বলল…..

—এখন ব‍্যাগ গোছানোর কথা বলছো কেন?একটু আগে যখন ডেকে গেলাম তখন তো আমাকে ঝাড়ি দিয়ে পাঠিয়ে দিলে।আমার মাথা ধরেছে আমাকে ডাকবেনা বললে।এতো তাড়াতাড়ি মাথা ঠিক হয়ে গেলো?

ইশরা মায়ের দিকে এক পলক তাকিয়ে নিজের কাজ করতে করতে বলল…..

—আম্মা জান।আমার মাথা ঠিক হওয়ার মেডিসিন ফোন করে আমার মাথা ঠিক করে দিছে।

মা রুমে এসে ব‍্যাগ গুছিয়ে দিতে দিতে বলল….

—তোকে নিয়ে আর পারি না।একটু কিছু হলেই কান্না করে সব ভাসিয়ে ফেলবে।গাল ফুলিয়ে বসে থাকবে।এতো বড় মেয়ে হয়ে গেছে এখনো ব‍্যাগ গোছাতে পারে না।তাকে নাকি এখনো আমার ব‍্যাগ গুছিয়ে দিতে হবে।

ইশরা রেডি হয়ে মায়ের হাত থেকে ব‍্যাগ নিয়ে মাকে একটা আদর দিয়ে বলল…..

—আসছি।

—আসছি মানে।আরে নাস্তা তো করে যা।

ইশরা তাড়াহুড়ো করে যেতে যেতে বলল….

—কেন্টিন থেকে খেয়ে নিব।

💦💦💦💦💦💦

জিদানের মা জিদানের রুমে এসে ছেলেকে বিশাল বড় ব‍্যাগ প‍্যাক করতে দেখে চিন্তিত সুরে বলল….

—কি ব‍্যপার বাবা কোথাও যাচ্ছো তুমি?সকাল সকাল এতো বড় ব‍্যাগ গোছাচ্ছো কেন?

জিদান ব‍্যাগ প‍্যাক করতে করতেই বলল…..

—হুম যাচ্ছি।এখানে বসে থেকে কি করবো।আমার এক বন্ধুর সাথে যোগাযোগ করে জব ঠিক করেছি।

জিদানের মা হালকা চেচিয়ে বলল….

—কি তুমি চাকরী করবে?তোমার বাবার এতো টাকা পয়সা আর তুমি করবে চাকরী?

—বাহিরে পড়াশুনা করতে পাঠিয়েছিলে কি ঘড়ে বসে থাকার জন‍্য?

—তাই বলে…..

জিদান মাকে পুরো কথা শেষ করতে না দিয়ে বলল…..

—তাড়াতাড়ি খেতে দাও মা।দেড়ি হলে বাস ধরতে অসুবিধে হবে।

মা করুন চোখে তাকিয়ে বলল…..

—না গেলে হয় না।

জিদান হাতের কাজ রেখে এক হাতে মাকে জড়িয়ে ধরে বলল…..

—খুব তাড়াতাড়ি চলে আসবো।কিছু অসম্পূর্ণ কাজ সম্পূর্ণ করেই চলে আসবো।

জিদানের মা জিদানের দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে বলল….

—কি কাজ?তুমি কোন কাজের কথা বলছো?

জিদান কথা ঘুড়িয়ে বলল…..

—কিছু না।মা তাড়াতাড়ি খেতে দাও তো। আমার দেড়ি হয়ে যাচ্ছে।

ছেলের ব‍্যস্ততা দেখে জিদানের মা বলল…..

—ঠিক আছে।তুমি তাড়াতাড়ি আসো।আমি খাবার দিচ্ছি।
কথাটা বলেই তিনি চলে গেলেন।

মা চলে যেতেই জিদান একটা র্দীঘ নিশ্বাস ফেলে কাজে লেগে গেল।

💦💦💦💦💦💦

ইশফা,রিধি,তুশি অফ টাইমে মাঠের এক কোনে বসে গল্প করছে।তুশি ইশফার বেস্ট ফ্রেন্ড।তারা এক সাথেই এই ভার্সিটিতে এডমিশন নিয়েছে।তুশি খুব ঘুম কুমারী মেয়ে।ঘুমের জন‍্য কালকে ভার্সিটিতে আসতে পারেনি।আর আজকেও ঘুমের জন‍্য ক্লাশে পৌচ্ছাতে দেড়ি হয়ে গেছে।অফ টাইম শেষ হয়ে যাওয়ায় তারা তাদের গল্প সেখানেই ইতি টেনে ক্লাশের দিকে পা বাড়ালো। তুশির হাতের কোল্ড ড্রিংকস ইশফার হাতে ধরিয়ে দিয়ে সে নানান ভাবে সেলফি নিতে ব‍্যস্ত।ইশফা ত‍াড়া দিয়ে বলল….

—পরে সেলফি নেবার অনেক টাইম পাবি এখন তাড়াতাড়ি ক্লাশে চল।

তুশি তার পরেও তার সেলফি নিতে ব‍্যস্ত।সে জায়গায় জায়গায় দাড়িয়ে দাড়িয়ে বিভিন্ন ভাবে সেলফি নিচ্ছে।

ইশফা বিরক্ত হয়ে বলল….

—ঐ আর কতো সেলফি নিবি।ক্লাশের দেড়ি হচ্ছে তো।

—হয়ে গেছে।যাস্ট এক মিনিট।

—তোর এক মিনিটে তোর কাছে রাখ। এক সেকেন্ড সময় বেশি লাগলে এই কোল্ড ড্রিংকস তোর মাথায় ঢালুম।

তুশি আসে পাশে তাকিয়ে দেখে বলল….

—কি ভাবে ঢালবে।তুমি ঢালার আগেই আমি ছু মন্তর হয়ে যাবো।

—দেখবি কিভাবে?

কথাটা বলার সাথে সাথেই ইশফা তুশির দিকে কোল্ড ড্রিংকস ছুড়ে মারতেই তুশি সরে গেল।আর তা লাগলো সানের গায়ে। হুট করেই যে তাদের সামনে সান আর নিরবের আগমন ঘটবে তা ইশফা ভাবতেও পারে নি।

সান শার্ট ঝেড়ে ইশফার দিকে তাকিয়ে রাগি গলায় বলল…..

—ইউ স্টুপিট কি করলে এটা?

ইশফা একবার তুশির দিকে রাগি চোখে তাকিয়ে মিনমিনে গলায় বলল….

—আমি ইচ্ছে করে করি নি।আমি তো ওকে…..আর সামনে আপনি চলে আসলেন।

সান ইশফার দিকে একবার রাগি চোখে তাকিয়ে শার্ট ঝাড়তে ঝাড়তে কোন কথা না বলে চলে গেলো।

💦💦💦💦💦💦

সান,নিরব মাঠের এক কোনে দাড়িয়ে কিছু একটা নিয়ে আলোচনা করছে।ঝড়ের গতিতে ইশফা সান, নিরবের সামনে এসে দাড়ালো।তুশি আর রিধি ইশফা থেকে একটু দূরে দাড়িয়ে আছে।নিরব ইশফাকে দেখে মুখের মধ‍্যে লম্বা একটা হাসি ঝুলিয়ে বলল…..

—আরে পিচ্ছি যে।কিছু বলবে।

ইশফা নিরবের কথার কোন উওর না দিয়ে এক কান্ড ঘটিয়ে ফেলল।ব‍্যাগ থেকে ইন এর বোতল বের করে সান এর শার্টে ছুড়ে মারল।তার এই কাজে নিরব,রিধি হা করে ওর দিকে তাকিয়ে রইল।ইশফা যে এমন একটা কান্ড ঘটিয়ে ফেলবে তা কেউ ভাবতেও পারে নি।

সান রেগে ইশফার দিকে তাকিয়ে বলল….

—ইউ ইডিয়েট কি করলে এটা তুমি?

ইশফাঃশার্ট যখন কিনে দিতে হবে তাহলে একটু নষ্ট হওয়াতে কেন কিনে দিব।তাই বেশি করে নষ্ট করে দিলাম।কালকে আপনার শার্ট পেয়ে যাবেন।

কথাটা বলেই ইশফা গটগট করে সেখান থেকে চলে গেলো।

ইশফা চলে যেতেই নিবর বলল……

—এই পিচ্ছির কথা তো কিছুই আমার মাথায় ঢুকছে না।

সান নিরবের দিকে রাগি চোখে তাকাতেই নিরব শুকনো ঢোক গিলে বলল…..

—না মানে তখন তো তুই ওকে কিছু বলিস নি।তাহলে হঠাৎ এসে এমন কান্ড করল কেন?কেউ কি ওকে কিছু বলেছে?

#চলবে।