মনের পিঞ্জরে পর্ব-০৪

0
989

#মনের_পিঞ্জরে
#Ariyana_Nur
#Part_04

সান ভার্সিটি থেকে রেগে বাড়িতে চলে এসেছে।‍বাড়িতে ঢুকেই দেখে সিনথিয়া আর তার দাদু মিলে ডিজে গান ছেড়ে নাচ করছে।দাদুর নাচ বলতে সোফায় বসে সে হাত পা নাড়াচ্ছে।সান রেগে গিয়ে গান বন্ধ করে দিল।গান বন্ধ হওয়াতে সিনথিয়ার নাচ থেমে গেলো।সানকে পাশে দাড়িয়ে থাকতে দেখে তার আর বুঝতে বাকি রইল না গান কে বন্ধ করেছে।সিনথিয়া বিরক্ত হয়ে বলল….

—উফ্ ভাই গান কেন বন্ধ করলে?নাচার একটা মুড চলে এসেছিলো।মুডটাই খারাপ করে দিলে।

সান সিনথিয়াকে এক রাম ধমক দিয়ে বলল….

—সারাদিন তো শুধু বাদরের মত ফালাফালি করিস।পড়ালেখা নেই?যা পড়তে বস।

কথাটা বলেই সান গটগট করে রুমে চলে গিয়ে ঠাস করে দরজা লাগিয়ে দিল।

দাদু সানের যাওয়ার দিকে সন্দেহর চোখে তাকিয়ে বলল….

—এর আবার কি হল?এমন গরম হয়ে আছে কেন?

সিনথিয়া ভেংচি কেটে বলল…

—কি আর হবে দেখো গিয়ে নিশ্চই কোন ঝামেলা করে এসেছে।নিজে সারাদিন ঘুরে বেরায় আর আমাকে বলে পড়তে বসতে।আমার মত মাসুম একটা মেয়ের উপর হুকুম চালাস না দেখিস তোর কপালে একটা জল্লাদ বউ জুটবে।মিলিয়ে নিস আমার কথা।

দাদু সিনথিয়ার কথা শুনে হাসতে হাসতে বলল…..

—জল্লাদ বউ জুটলে তো তোরি সমস‍্যা।তোরি তো চুল ছিড়বে।

—মোটেও না।আমার ভাবী আমার চুল ছিড়বে না।আমাকে খুব আদর করবে।ভাবী আসলে আমি আর ভাবি মিলে ওর চুল ছিড়বো।হনুমান একটা সব সময় আমাকে বকে।

💦💦💦💦💦💦

ইশফা রুম জুড়ে পায়চারী করছে আর “মি” দিয়ে সেভ করা নাম্বারটাতে বার বার কল করছে।কিন্তু যাকে ফোন দিচ্ছে তার ফোন ধরার কোন নাম গন্ধ নেই।ইশফার রাগে মাথা ফেটে যাচ্ছে।হাতের ফোন টা বিছানায় ছুড়ে মেড়ে বিছানার এক কোনে মাথা চেপে বসে রইল।

ইশফার এমন হুট করে রেগে যাওয়া আর এমন অদ্ভুত কান্ড করার কারণ হল এলি।ইশফার রাগ বরাবরই একটু বেশি।কেউ তাকে কিছু বললে সে তাকে ছেড়ে দেয় না।ইশফার ক্লাশ শেষে করিডোর দিয়ে যাবার সময় এলি ইশফার সামনে এসে দাড়ায়।সান এর গায়ে তখন কোল্ড ড্রিংকস লাগার কারনে ইশফাকে যা না তাই শুনিয়ে দেয়।ইশফা প্রথমে চুপ করে থাকলেও এলি যখন শার্ট নিয়ে খোটা দেয় আর তার ফ‍্যেমিলিকে নিয়ে বাজে কথা বলে তখন সেও দু’কথা শুনিয়ে দেয়। এলিকে কথা শুনিয়ে যাওয়ার সময় সামনে সান কে দেখতেই তার রাগটা আরো বেড়ে যায়।তাই তো রাগ ঝাড়তে তখন এমন একটা কান্ড করেছে।

ইশফা মাথা চেপে কিছুক্ষণ বসে থাকার পর তার ফোনটা বেজে উঠল। ফোন বাজতেই এক হাত মাথা থেকে সরিয়ে ফোনের দিকে তাকালো।ফোনের স্ত্রিনে “মি” লিখাটা দেখে ইচ্ছে মত ঝাড়ি দেবার প্রস্তুতি নিয়ে ফোন রিসিভ করতেই ভেসে এল…..

—সরি সরি সরি আসলে আমি ওয়াসরুমে ছিলাম।তাই ফোন ধরতে পারিনি।প্লিজ রাগ করো না বেবি…..

ইশফা রেগে কটমট করে বলল…..

—খবরদার আমাকে ও সব ভেবি,টেক্সি বলে ডাকবে না।

—ঠিক আছে ঐ সব ভেবি,টেক্সি বলবো না।জানু তো বলতে পারবো।তাই না জানু…..

—আমি এখন ফাজলামোর মুডে নেই।

—তা কোন মুডে আছো তুমি?

—দেখো ফাজলামি পরে করো।আগে বল কাজ হয়েছে?শার্ট কিনেছো?

—না যাবো এখন কিনতে।শার্টের সাইজ বল আর কালার বল।

ইশফা শুকনো ঢোক গিলে বলল…..

—কালার আর সাইজ?

—তা ছাড়া কিনবো কি ভাবে?

ইশফা একটু ভেবে বলল….

—কালারটা অফ হোয়াইট কালার হবে মনে হয়?

—অফ হোয়াইট নাকি ময়লা হোয়াইট শার্ট পরে আসার কারনে অফ হোয়াইট মনে হয়েছে কোনটা?(হাসতে হাসতে)

ইশফা হালকা চেচিয়ে বলল…..

—তুমি….

অপর পাশ থেকে হাসতে হাসতে বলল…..

—ওকে অফ হোয়াইট কালার আর সাইজ?

—আমি কি করে সাইজ বলবো?

—তা আমি কি জানি?সব সময় বলি মাথাটা একটু ঠান্ডা রাখতে।না তা করবে কেন।পারে শুধু মাথা গরম করে চলতে।

—তুমি আমাকে বকছো।লাগবে না তোমার শার্ট কেনা।

—আসছে শার্ট কেনা লাগবে না বলতে।এখন রাগ না দেখিয়ে সাইজ বল।

—আরে আমি কি করে বলবো?তুমি মাপ দেখে একটা কিনে নিও।

—বললেই হল।মাপ দেখে একটা কিনে নিও।আমি তো তাকে দেখিও নি।সে দেখতে আমাদের চেনা জানা দেখতে কারো মত হবে কিনা ভেবে বল।

ইশফা কিছুক্ষন ভেবে আনমনে বলল…..

—ভাইয়ার মত।

কথাটা বলতে না বলতেই অপর পাশ থেকে আর কোন কথা না বলে লাইন কেটে দিল।ইশফা অপর পাশ থেকে কথার আওয়াজ না পেয়ে ফোন হাতে নিয়ে ফোনের দিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘ নিশ্বাস ছাড়লো।

💦💦💦💦💦💦

ইশফা ভার্সিটিতে আসার পর থেকে সান কে খুজে যাচ্ছে।কিন্তু কোথাও তাকে পাচ্ছে না।রিধি হাপাতে হাপাতে ইশফার সামনে এসে বলল…..

—ইশু কখন থেকে ডাকছি শুনতে পারছিস না।আর এদিক ওদিক তাকিয়ে কাকে খুজছিস?

ইশফা এদিক ওদিক তাকিয়ে বলল….

—মিঃবাদর আর তার চেলাদের।

রিধি হালকা চেচিয়ে বলল….

—হোয়াট? কে বাদর?কার কথা বলছিস তুই ইশু?

—এই ইশু বলা বন্ধ কর।ইশু আমা….পুরো নাম ধরে ডাক অথবা অন‍্য নামে ডাক।

—আচ্ছা ঠিক আছে তা ডাকবো।এবার বল তুই কার কথা বলছিস?

—কেন আবার ঐ সান না ফান এর কথা।বাদরের মত লাফাতে লাফাতেই তো সামনে আসলো।তাই তো কোল্ড ড্রিংকস তার উপর পরলো।

—সব দোষ এখন তার তুমি কিছুই করোনি।

পিছন থেকে কথাটা বলে তুশি ইশফার সামনে এসে দাড়ালো।

ইশফা তুশির দিকে চোখ রাঙিয়ে তাকিয়ে বলল….

—আসতে এতো দেড়ি হল কেন?আগে না আসতে বলছি।

তুশি বড় করে একটা হাই দিয়ে বলল….

—তোর জন‍্য আমার সাধের ঘুম হারাম কইরা আইছি ছেড়ি শুকরিয়া আদায় কর।

ইশফাঃপ‍্যাচাল বন্ধ কইরা আগে ঐ বাদরেরে খোজ।

রিধিঃআরে ভাইয়া তো তোর জন‍্য অডিটোরিয়াম রুমে বসে আছে।আমি এই মাত্র দেখে আসলাম।

ইশফা রিধির দিকে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে বলল….

—কোন ভাইয়া?আর তোর ভাইয়া আমার জন‍্য বইসা থাকবো কেন?

ইশফার কথা শুনে রিধি আমতা আমতা করতে লাগলো।ফট করে তুশি বলল…..

—ঢং কোন ভাইয়া জিগ্যেস করছে।তুমি জানো না কোন ভাইয়া?তুই যার কথা বলছিস রিধি তার কথাই বলছে।আজকে তো তুই তারে শার্ট গিফরোট করবি অন্তরে অন্তরস্থল থিকে তাই সে অধিক আগ্রহে তোমার অপেক্ষায় বসে আছে বালিকা।

ইশফা একবার তুশির দিকে চোখ রাঙিয়ে তাকিয়ে রিধিকে বলল….

—চল রিধি।এই তার ছিড়া মেন্টেলের আমাদের সাথে আশার দরকার নাই।

তুশি আরেকটা হাই দিয়ে বলল….

—যা যা তোরাই যা।আমি বরং ক্লাশে বইসা একটু ঘুমাইয়া নেই।

ইশফা তুশির পিঠে এক তাল ফালাতেই তুশি হালকা চেচিয়ে বলল…..

—ঐ ছেমড়ি তোর সমস‍্যা কি?মারোস ক‍্যান?

ইশফা কিছু না বলে তুশির দিকে রাগি চোখে তাকিয়ে সামনের দিকে হাটা ধরল।

💦💦💦💦💦💦

সান অডিটোরিয়াম রুমে বসে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিচ্ছে।ইশফা,রিধি,তুশি বাহিরে দাড়িয়ে আছে।ইশফা এতোক্ষন সাহস দেখালেও এখন কেন যেন সান এর সামনে যাওয়ার সাহস পাচ্ছে না।ইশফা তুশির হাতে শপিং ব‍্যাগটা ধরিয়ে দিয়ে বলল…..

—যা এটা দিয়ে আয়।আমি এখানেই আছি।

তুশি সাথে সাথে শপিং ব‍্যাগটা ইশফার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলল…..

—আকাম করছেন নিজে,নিজেই যান।আমি পারতাম না।

ইশফা তুশির দিকে রাগি চোখে তাকিয়ে রিধির দিকে তাকাতেই রিধি হাত জোড় করে বলল…..

—মাপও চাই দোয়াও চাই।আমি ঐ সিংহের গুহায় যাবো না।তারে দেখলেই আমার ভয় করে।কেমন করে তাকায়।আমি পারবো না।

ইশফা রাগ দেখিয়ে বলল….

—তোদের যেতে হবে না।আমিই যাবো।সব কয়টা ভীতু।

তুশিঃতুমি যখন এতো সাহসী তাহলে তুমিই যাও।আমগো কও ক‍্যান।

ইশফা রাগি গলায় বলল…..

—যাচ্ছিই তো।তোর বলতে হবে না।

ইশফা গুটিগুটি পায়ে সান এর সামনে গিয়ে শপিং ব‍্যাগটা সামনে ধরে বলল…..

—এটা আপনার।

💦💦💦💦💦💦

আওলাদ খান (জিদানের বাবা )চেয়ারে বসে রাগি চোখে তাকিয়ে আছেন হাফসা বেগমের দিকে(জিদানের মা)।স্ত্রীর মুখে ছেলের ব‍্যপারে সব কথা শোনার পর থেকেই সে রেগে আছে।স্বামীকে এমন রেগে তাকিয়ে থাকতে দেখে হাফসা বেগম ভয়ে গুটিয়ে রয়েছেন।আওলাদ খান গম্ভীর গলায় বলল….

—ছেলে কবে বাড়ি থেকে বের হয়েছে?

হাফসা বেগম কাপা কাপা গলায় বলল….

—কালকে।

কথাটা শোনার সাথে সাথেই আওলাদ খান সামনের চেয়ারে লাথি দিয়ে চেচিয়ে বললেন…..

—ও কালকে বাড়ি থেকে বেড়িয়েছে আর আজ তুমি আমাকে বলছো?কেন গিয়েছে ও?কি নেই আমার?টাকা-পয়সা কোনটার তো অভাব নেই।তাহলে কেন ও আরেক জনের দুয়ারে ভিক্ষা করতে গেছে?কার জন‍্য আমি এতো খাটছি?কার সুখের কথা ভেবে আমি এতো কিছু করছি?কি নেই আমার, বল কিসের অভাব এখানে?

—সুখ।সুখের অভাব এখানে।টাকা-পয়সা থাকলেই তো আর হয় না।সুখটা তো লাগবে।টাকা-পয়সা ইট,পাথরের বড় দালান থাকলেও এখানে সুখ নেই।

কথাগুলো মনে মনে বলে চোখের পানি ছেড়ে দিলেন হাফসা বেগম।চোখের পানি ফালানো ছাড়া সে আর কিছুই করতে পারবে না।

#চলবে,