মনের মানুষ পর্ব-০৫

0
415

#মনের_মানুষ❤️
#পঞ্চম_পর্ব❤️
#কলমে_সাঁঝবাতি🌸

একটা ফাঁকা রাস্তায় ঋষভ এর গাড়িটা দাঁড়িয়ে….বাইরে ঝিরঝির করে বৃষ্টি পরছে!!একবার হাত ঘড়ির দিকে তাকিয়ে ঋষভ সিটে মাথাটা হেলিয়ে দিলো!রবিবার দিনটা ছুটির দিন হিসেবেই বরাদ্দ ঋষভের কাছে কিন্তু আজকে না চাইতেও বেরোতে হয়েছে ঋষভ কে…..কাল থেকে আহেলির ফোনটা এখনো অব্দি সুইচ অফ!ও নাকি যেকদিন বাইরে থাকবে সেকদিন ফোন সুইচ অফ করেই রাখবে!তবে আজ ঋষভ এই রাস্তায় দাঁড়িয়ে অন্য কারণে……হঠাৎই গাড়ির বাঁদিকের জানালার সামনে একজনকে দেখে ঋষভ হালকা হাসলো!শ্রেয়া আজ আবার হটাৎ করেই শাড়ি পরেছে কেনো?!ঋষভ এরসাথে দেখা করতে আসার জন্য?!

গাড়ির দরজা খুলে ভেতরে এসে বসলো শ্রেয়া!মেয়েটা ওর থেকে একবছরের ছোটো…..একমাথা কোকড়ানো চুল,ফর্সা ত্বক আর ঠোঁটের নিচে তিল!এককথায় শ্রেয়ার মুখটা বড্ড মায়াবী…..একদিন এই রূপেই পাগল হয়েছিলো ঋষভ তবে আজ সেসব পুরোনো!

আমি ভাবিনি পাপুলার পলিটিক্যাল পার্সন ঋষভ এতো সহজেই রাজি হয়ে যাবে দেখা করার জন্য!!

শ্রেয়া আমার হাতে বেশি সময় নেই!যা বলার আছে তাড়াতাড়ি বলো……

আমি জানি তোমার ভীষণ তাড়া!কিন্তু আমায় কথাগুলো যে আজ বলতেই হবে!!

শ্রেয়া আমি কিন্তু পুরোনো কোনো কথা শুনতে চাই না…..যা হওয়ার তা অনেকদিন আগেই শেষ হয়ে গেছে!আমি আমার জীবনে এগিয়ে গেছি আশা রাখছি তুমিও ভালো আছো…..

বাব্বা!!সবেমাত্র তো আমি বললাম গাড়িতে তোমার হাবভাব বলে দিচ্ছে আমি এক্ষুনি গাড়ি থেকে নেমে গেলে বেশি খুশি হব!

ব্যাপারটা তা নয় শ্রেয়া!আমি চাই না কেউ এসব জানতে পেরে সেটা নিয়ে নিউস তৈরি করুক…..আমি দলের হয়ে অনেক খেটে এবছর প্রথম টিকিটটা হাতে পেয়েছি!আমি চাই না সেটা হারাতে!

আমি জানতাম তুমি পারবে ঋষভ…..তোমার প্রতি এই আস্থা আমার প্রথম থেকেই ছিলো!

শ্রেয়ার কথায় বাঁকা হাসলো ঋষভ!!ব্যাঙ্গাত্মক গলায় বললো,,,
তাই নাকি?!আমি যদিও এই প্রথম জানলাম যে তুমি আমায় ভরসা করতে……কলেজে ক্লাস না করে সারাদিন রাজনীতি নিয়ে মেতে থাকা বাউন্ডুলে ছেলেটাকে কি না বলেছো!আজ আবার সেই তুমিই বলছো যে আমায় ভরসা করতে!লাইক সিরিয়াসলি?!

আম সরি ঋষভ!!জানিনা কি হয়েছিলো আমার ওইসময়…..আসলে ওই ইন্দ্র আমায় যা বোঝাতো তাই বুঝতাম!আর ওটাই আমার জীবনের ভুল ছিলো!!

প্লিস স্টপ দিস ননসেন্স!!আমি এতগুলো বছর পর তোমার আর ইন্দ্রের গল্প শুনবো বলে এখানে আসিনি!কাল এতবার করে রিকোয়েস্ট করলে তাই রাজি হলাম….ইউ নো হোয়াট শ্রেয়া আমি আমার ফিয়ন্সেকেও খুব একটা টাইম দিতে পারিনা!সে যদি জানতে পারে তার অনুপস্থিতিতে একটা অন্য মেয়ের সাথে দেখা করেছি আবার সেই মেয়ে যার সাথে আমার কলেজ লাইফে প্রেম ছিলো…..ব্যাপারটা কোনদিকে যাবে বুঝতেই পারছো?!

তোমার ফিয়ন্সে মানে?!বিয়ে করছো নাকি?!এরেঞ্জ ম্যারেজ?!

নাহ!!লাভম্যারেজ…..এমন অবাক হওয়ার মতো কিছু হয়নি শ্রেয়া!তোমার সাথে ব্রেকআপ হওয়ার পর যে আর কারোর সাথে মুভওন করতে পারবো না এমনটা তো নয় তাই না?!

তাহলে যে কথায় কথায় তুমি বলতে শ্রেয়া আমি তোমায় ভীষণ ভালোবাসি!আমি তোমায় ছাড়া আমার জীবনে আর কাউকে জায়গা দেবো না সে যদি বিচ্ছেদ হয় তারপরেও!!

বিচ্ছেদটা যদি বিচ্ছেদ হয় তবেই না কথাটা রাখবো!তুমি আমায় ডিচ করেছিলে শ্রেয়া…..কলেজে আমাদের দুবছরের সম্পর্ক ভুলে তোমার বেস্টফ্রেন্ড ইন্দ্রের সাথে লুকিয়ে সম্পর্ক রাখছিলে!বিষয়টা আমি যখন জানতে পারলাম তখন তোমার তো বলার কিছুই ছিলো না….

আমি জানি আমি ভুল করেছি ঋষভ!!আসলে তোমার ওই বাউন্ডুলে স্বভাব আর পড়াশোনায় না মনোযোগ দেওয়া আমার মনে ভয় ধরিয়ে দিয়েছিলো….আমি ভেবেছিলাম তোমার সাথে ভবিষ্যতে আমি কিভাবে থাকবো!

এক্সজেকলি!!তুমি আমায় নিষ্কর্মা ভেবে তোমারই বেস্টফ্রেণ্ডের সাথে রিলেশন তৈরি করলে…..বাহঃ!কিন্তু দেখো শ্রেয়া আজ আমি আমার সেই স্বপ্নপূরন করেছি…..দলে একটা জায়গা পেয়েছি সাথে বাবার ব্যবসাটা সামলাচ্ছি!!আমার ভবিষ্যৎ কিন্তু সিকিউর…..তোমার খবর বলো?!বিয়ে করোনি ইন্দ্রকে?!

ঋষভ এর কথায় শ্রেয়া কাঁদতে শুরু করলো!!বেশ করুন গলায় বললো,,,,,

সবই ঠিকঠাক ছিলো…..ইন্দ্র বলতো ও সেটেল হলেই আমরা বিয়ে করবো!সেই কলেজ লাইফ থেকে আজ অব্দি আমাদের সম্পর্ক অথচ ইন্দ্র সেটা কাউকে জানাতে দেয়নি!!আমার তো বিয়ের বয়স হয়েছে তাই বাড়ি থেকে চাপ দিচ্ছে বিয়ের জন্য…..কথাটা আমি ঋষভ কে জানাতেই ও বললো ওর নাকি এখনো সময় লাগবে!কিন্তু আমি ওর এক বন্ধুর থেকে জানালাম অলরেডি পারিবারিক ভাবে ইন্দ্রের বিয়ে ঠিক হয়েছে একজনের সাথে!!আমি ভাবিনি ইন্দ্র আমায় এভাবে ঠকাবে……

রিভেঞ্জ অফ নেচার কথাটার মানে জানো নিশ্চই শ্রেয়া?!সেটাই হয়েছে তোমার সাথে…..এবার এখানে আমার কি করণীয়?!

ঋষভ!!ঋষভ আমি জানি আমি ভুল করেছি….কিন্তু ভুলটা তো শুধরে নেওয়া যায় তাই না?!আমরা পারিনা আবার সবটা নতুন করে শুরু করতে?!একটা সেকেন্ড চান্স তো আমি পেতেই পারি!!

শ্রেয়ার কথায় ঋষভ স্টিয়ারিংয়ে হাত ঠুকে রাগী গলায় বললো,,,,

ব্যাস অনেক বলে নিয়েছো!!এখানেই থেমে যাও……কি মনে করো তুমি?!ভালোবাসা এতটাই সহজ?!যখন খুশি তুমি ছেড়ে যাবে আবার অনেকদিন পর ফিরে এসে বলবে ভুল হয়ে গেছে ফিরিয়ে নাও!!আর আমিও তোমায় হাসিমুখে মেনে নেবো!লাইক সিরিয়াসলি শ্রেয়া?!এগুলো গল্পে মানায়…..অনেকগুলো বছর কেটে গেছে!!তোমার প্রতি আমার কোনো অনুভূতি নেই শ্রেয়া সেটা সেদিনই শেষ হয়েছে যেদিন আমি তোমায় ইন্দ্রের সাথে দেখেছি!!আমি একজনকে ভালোবাসি……আর সে হলো আহেলি!!আমাদের বিয়েটাও খুব তাড়াতাড়ি হবে!একবার ইলেকশন হয়ে যাক…..তারপরেই!কিন্তু তুমি এরমধ্যে কোথাও নেই!!আজকের এই শ্রেয়া আমার কাছে একজন সম্পূর্ন অচেনা মানুষ!আমি যদি জানতাম তুমি এসব বলতে আমায় ডেকেছো আমি আসতাম না!!নাও ইউ মে গো…..

ঋষভ!!

আমি যা বলার বলেই দিয়েছি!ভবিষ্যতে আর আমার সাথে কন্ট্যাক্ট করবে না!

শ্রেয়া বেশ রাগ নিয়েই গাড়ি থেকে নামলো!!তৎক্ষনাৎ কালো পিচের রাস্তা দিয়ে ঋষভের গাড়িটা দ্রুত বেরিয়ে গেলো……শ্রেয়া পায়ের কাছে পরে থাকা ছোট্ট পাথরের টুকরোটাকে পা দিয়ে দূরে সরিয়ে একটা ব্যর্থ বিরক্তিসূচক শব্দ করলো!
*******

শান্তিনিকেতন জায়গাটা যে সত্যিই মানুষের মনে কতটা শান্তি এনে দিতে পারে তা আজ প্রথম অনুভব করলো আহেলি…..প্রকৃতির মাঝে নিজেকে বিলীন করে দেওয়ার জন্য শান্তিনিকেতন পারফেক্ট জায়গা!!একটা তিনতলা রিসোর্টে আছে আহেলিরা…..চারপাশটা সবুজ গাছপালায় ঘেরা!

কাল রাত্রে ফেরার পর সকলে রেস্ট নিয়েছে…..আজ থেকে ঘোরাঘুরি শুরু হবে!!বেশ সক্কাল সক্কাল উঠে আহেলি বারান্দায় দাঁড়িয়ে বাইরের দৃশ্য উপভোগ করছিলো…..সকলেই রেডি হচ্ছে এই মুহূর্তে!আহেলি নিজে তৈরি হয়ে নিয়েছে!!হঠাৎই আহেলির মনেহলো ওকে কেউ দেখছে তৎক্ষনাৎ পাশে তাকাতে কাউকেই দেখতে পেলো না!!ওদিকে অনুশ্রী ওর নাম ধরে ডাকতে শুরু করেছে!!

রিসোর্টের বাইরে বেরোতেই আহেলি দেখলো সেই ছেলেটা মানে প্রান্তিক গলায় ক্যামেরা আর কাঁধে একটা ব্যাগ নিয়ে গেটের সামনে দাঁড়িয়ে…..সকলে পেছনে আছে!!আহেলি গেটের সামনে আসতেই প্রান্তিক ঠোঁটে হাসি ফুটিয়ে বললো,,,,,

গুডমর্নিং মিস কুম্ভকর্ণ!!কুম্ভকর্ণের ফিমেল ভার্সনটা কি জানা নেই তাই আপাতত মেল ভার্সনে ডাকি!!

প্রান্তিকের কথায় আহেলি রাগী গলায় বললো,,,,

আবার আপনি শুরু করেছেন?!হোয়াট ডু ইউ মিন বাই কুম্ভকর্ণ?!

কাল দু-দুটো ঘন্টা আমার পাশে নাক ডেকে ঘুমালেন আর আমি বললেই দোষ?!আমি এই প্রথম কোনো মেয়েকে নাক ডাকতে শুনেছি…..উফফ দারুন এক্সপিরিয়েন্স হয়েছে আমার!!

আহেলি রাগে কিছু বলতে গিয়েও থেমে গেলো কারণ ততক্ষনে বাকিরা উপস্থিত হয়েছে…..অনুশ্রীর দাদার বেস্টফ্রেন্ড প্রান্তিক!হটাৎ করেই দেখা হয়েছে ওদের সাথে!প্রান্তিক এই রিসোর্টেই আছে…অনুশ্রী প্রান্তিককে দেখেই বললো ওদের সাথে ঘুরতে!!আহেলি ইশারায় বারন করলেও শুনলো না অনুশ্রী…….সকলে মিলে একসাথে ঘুরলে নাকি ভালোই লাগবে!!

ঘোরার জন্য আগে থেকেই সব ঠিক করা ছিলো….শুধু সাথে নতুন করে প্রান্তিক যোগ দিলো!!সকলে মিলে গাড়িতে উঠবে ঠিক তখনই অনুশ্রী আহেলির কাছে এসে বললো,,,,

ঋষভদা আমার নাম্বারে কল করেছিলো!!তোকে ফোন ওন করে রাখতে বলেছে!!আর না করলে নাকি…..

বলেই ঠোঁট টিপে হাসলো অনুশ্রী!!যদিও এতে বেশ অবাক আহেলি!!ঋষভ নিজে থেকে কথা বলতে চায়?!ওর সমস্ত ব্যস্ততা কাটিয়ে সময় আছে আহেলির জন্য?!

চলবে……