মনের মানুষ পর্ব-৩+৪

0
482

#মনের_মানুষ❤️
#তৃতীয়_পর্ব❤️
#কলমে_সাঁঝবাতি🌸

আহেলি আর কারোর সাথে তেমন কথাই বললো না….সারাক্ষণ চুপচাপ স্থবিরের মতো বসেই রইলো!!ওর ঋষিদার জীবনে যে অন্য কারোর আগমন হয়েছে এ কথাটা ভাবতেই সবচেয়ে বেশি অবাক হচ্ছে…..যে মানুষটা ওকে নিয়ে সারাজীবন একসাথে চলার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলো সেই আজ ওকে দূরে ঠেলে আরেকজনকে আপন করে নিয়েছে!!

নাহ এভাবে চুপ করে থাকলে তো চলবে না!!এর উত্তরটা ঋষভ কে দিতেই হবে……আহেলির সাথে যদি সম্পর্ক না রাখতে চায় তাহলে সেটা মুখে বলছে না কেনো?!

শপিং মল থেকে বাড়ি ফিরে আহেলি কি করবে কিছুতেই সিদ্ধান্ত নিতে পারছিলো না…সারাটাদিন এভাবেই কেটে গেলো!নানান ভাবনার দোলাচলে…..সন্ধ্যের সময় আহেলি নিজে থেকেই ঋষভের ফোনের নাম্বার ডায়াল করলো!!একবার বেজে কেটে যাওয়ার পর দ্বিতীয়বার কল করতে রিসিভ হলো!রিসিভ করা মাত্রই ঋষভ বললো,,,

হটাৎ কল করছিস যে?!কিছু বলবি?!……

কাল একবার দেখা করার জন্য সময় হবে তোমার?!

দেখা করতে হবে মানে?!কি বলবি সেটা ফোনেই বল…..

ফোনে বলার মতো হলে নিশ্চই বলেই দিতাম!!তোমার টাইম হবে কি বলো!!

কাল সকালে মিটিং আছে কয়েকটা আর তারপর বেরোতে হবে একটু!!সেভাবে দেখতে গেলে সময় হবেই না!!

কি আশ্চর্য তাই না!!তুমি দুনিয়ার সবকিছুর জন্য সময় বের করতে পারো অথচ আমার সাথে কথা বলার জন্য তোমার কাছে সময় নেই!!

আমি একজায়গায় আছি আহেলি!যা বলার তাড়াতাড়ি বল….ভালো লাগছে না আমার!!ক্লান্ত আমি কিছুটা!!

হুমমম!!কাল তোমায় আমার সাথে অন্তত পাঁচমিনিটের জন্য দেখা করতেই হবে…..এবার তুমি বলো কখন দেখা করবে?!

ওকে ফাইন!!কাল আমি যাওয়ার সময় তোকে বাড়ি থেকে পিক করে নেবো….গাড়িতে বসেই যা বলার বলিস!!এগারোটার পর তোর কোচিং থাকে তো?!

হ্যাঁ!!

তাহলে ওখানে তোকে ড্রপ করে দেবো আমি!!এখন রাখলাম!!

আহেলি কোনো উত্তর দেওয়ার আগেই ঋষভ কল কেটে দিলো!!ফোনটা বিছানায় রেখে নিজেও শরীরটা এলিয়ে দিলো আহেলি……এতটা ব্যস্ততা!যে কথা বলার সময়টুকু অব্দি নেই!!
*******

আহেলি কাঁধে ব্যাগ ঝুলিয়ে দরজার সামনে আসতেই….উমা দেবী জলের বোতলটা হাতে ধরিয়ে দিয়ে বললেন,,,

আজ কি ঋষির সঙ্গে কোথাও যাবি নাকি তুই?!গেটের সামনে ওর গাড়ি দাঁড়িয়ে…..

কোথাও যাবো না!!কোচিংয়ে ছেড়ে দেবে…..

আচ্ছা!!বলছি কাল যে ঋষিকে গিফটগুলো দিলি পছন্দ হয়েছে ওর?!কি বললো?!

খুব পছন্দ হয়েছে!!আমি এলাম…..তুমি সাবধানে থেকো!

গেটের সামনে সাদা গাড়িটা দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে হালকা হাসলো আহেলি……গাড়ির সামনে দাঁড়াতেই ভিতর থেকে ঋষভ ইশারায় উঠে আসতে বললো!!আহেলিও তৎক্ষনাৎ দরজা খুলে বসে পরলো গাড়িতে…..সিটবেল্ট লাগানোর কথা বলে গাড়ি স্টার্ট দিলো ঋষভ!!

বেশ খানিকক্ষন দুজনই চুপচাপ এগিয়ে যাচ্ছিলো…..নীরবতা ভেঙে ঋষভ বললো,,,

এভাবে চুপ থাকার জন্য কি কাল দেখা করার কথা বলেছিলিস?!

আহেলি ছোট্ট একটা নিশ্বাস ফেলে গাড়ির সিটে হেলান দিলো…..ধীর গলায় বললো,,,

তুমি কি আমাদের এই সম্পর্কটা রাখতে চাও না ঋষিদা?!

আহেলির কথায় ঋষভ হঠাৎই ব্রেক কষে গাড়ি থামিয়ে দিলো……ভ্রূ কুঁচকে আহেলির দিকে তাকিয়ে গম্ভীর গলায় বললো,,,

কি বলছিস তুই?!

ঠিকই বলছি ঋষিদা!!আমি জানি তুমি মুখ ফুটে বলতে পারছো না…..হয়তো ভাবছো এতগুলো দিনের সম্পর্ক কিভাবে শেষ করবে?!তবে কাউকে ঠকানোর চেয়ে তার থেকে দূরে চলে যাওয়াই ভালো……আমিও একটা মানুষ!আমারও অনুভূতি আছে….আর সেগুলো দিনের পর দিন তুমি অবহেলা করে যাচ্ছো!!আগে ভাবতাম তুমি ব্যস্ত…..তাই হয়তো আমায় সময় দিতে পারো না!কিন্তু মানুষটা তো একমাত্র আমার যেমনি হোক সে শুধু আমায় ভালোবাসে!!কিন্তু না…..আসলে আমার প্রতি আর কোনো অনুভূতি নেই তোমার!!তুমি জানো কাল আমি নিজের হাতে তোমার জন্য চিংড়ির মালাইকারি বানিয়ে নিয়ে গিয়েছিলাম……কিন্তু তুমি সেটা ছুঁয়েও দেখলে না!!আমি কত আনন্দ করে গিফটগুলো নিয়ে গিয়েছিলাম তোমার জন্য সেটাও তুমি একপাশে অবহেলায় সরিয়ে দিলে!!কি বলে বাড়ি থেকে বেরোলে?!তুমি নাকি জনসভায় যাবে……তুমি তো কোনোদিন মিথ্যে কথা বলো না তাহলে কাল কেনো বললে?!আমাদের তেমনভাবে কথাও হয়না…..দেখা হওয়ার কথা বাদ দিলাম!!কিন্তু তার কারণ যে একটা মেয়ে এটা ভাবতে পারিনি!!

ঋষভ এতক্ষন চুপচাপ শুনছিলো সবটা……রাগে চোয়াল শক্ত করে স্টিয়ারিং চেপে ধরে বসেছিলো!আহেলি কথা শেষ করতেই ওরদিকে রক্তচক্ষু নিয়ে তাকালো……কথা বলতে বলতে আহেলির চোখ দিয়ে টপটপ করে জল পরেই যাচ্ছে!!

ঋষভ হঠাৎই আহেলির একটা হাত শক্ত করে চেপে ধরে ওরদিকে টেনে এনে রাগী গলায় বললো,,,,
অনেকক্ষণ ধরে অনেক বাজে কথা বলে যাচ্ছিস তুই….আমি মিথ্যে বলি?!বল তুই আমি কি মিথ্যে বলেছি?!কোন মেয়ের সাথে আমার সম্পর্ক?!

কাল তুমি জনসভায় যাওয়ার নাম ফুডপ্লাজায় বসেছিলে একটা মেয়ের সাথে….আমি নিজের চোখে দেখেছি!!বলো?!যাওনি তুমি?!

আহেলির কথায় ঋষভ এবার হাসলো!!ঋষভের মুখে হাসি দেখে আহেলি সরুচোখে তাকালো…..এরকম সময়ে হাসার কোনো মানে আছে?!আহেলি রাগে মুখটা ঘুরিয়ে নিতেই গাড়িতে স্টার্ট দিলো ঋষভ……আহেলি নিজের হাতটা ছাড়িয়ে নিতে চাইতেই সেটা আরো শক্ত করে ধরলো ঋষভ!!

আমি তোকে সবসময় বলি আর যাই করিস আহেলি!!আমায় কোনোদিন ভুল বুঝিস না….হয়তো আমি আর বাকি সব প্রেমিকদের মতো সময় দিতে পারিনা কিন্তু মানুষটা তোরই!!তোর করা রান্না আর গিফ্ট আমি কতটা অবহেলা করেছি সেটা বরং মায়ের থেকে জেনে নিস…..আর রইলো বাকি কালকে ফুডপ্লাজায় খাওয়ার কথা?!তুই ভালো করেই জানিস আমি কিরকম…..ওই মেয়েটার নাম দিশা!!আমার বন্ধুর গার্লফ্রেন্ড…..কাল বাধ্য হয়েই ওর সাথে ফুডপ্লাজায় গেছিলাম!!আমি তোকে অনেকবার বুঝিয়েছি যে তোর আর আমার সম্পর্কটা কোনোদিন বাকিদের সাথে তুলনা করবি না!!সেটা তো তুই করলিই সাথে আবার আমায় অবিশ্বাস…..ব্যাপারটা বেশ ভালোই!!

বলে গাড়ি থামলো ঋষভ…..আহেলি অবাক হয়ে তাকাতেই ঋষভ বললো,,,
তোর কোচিং এসে গেছে….

জানলা দিয়ে একবার বাইরেটা দেখে আহেলি কিছু বলতে যাবে তার আগেই ঋষভ বললো,,,,

আমার ইম্পর্টেন্ট একটা মিটিং আছে….দেরি হচ্ছে!!

আহেলি গাড়ির দরজা খুলে বেরোতেই গাড়িটা আহেলির সামনে থেকে অদৃশ্য হলো মিনিটের মধ্যেই……

চলবে…….

#মনের_মানুষ❤️
#চতুর্থ_পর্ব❤️
#কলমে_সাঁঝবাতি🌸

হাওরা স্টেশন থেকে বেশ কিছুটা দূরে ড্রাইভার টাক্সিটা থামিয়ে দিলো….ট্যাক্সি থেমে যাওয়ায় আহেলি জানলা দিয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে ভ্রূ কুঁচকে বললো,,,,
থামলেন কেনো?!

এখানেই নেমে যান!!

এখানে নেমে যাবো মানে?!আরেকটু না গেলে আমি মোটেই নামবো না!!

আহেলির কথায় ট্যাক্সি ড্রাইভার পেছনে তাকিয়ে বিরক্তি ভরা গলায় বললো,,,

দেখতেই তো পাচ্ছেন দিদি সামনে কেমন জ্যাম!!এসব পেরিয়ে আবার যেতে হবে?!তারচেয়ে বরং আপনি নেমে হাঁটতে হাঁটতে এগিয়ে যান…..তাড়াতাড়ি পৌঁছাতে পারবেন!

আহেলির রাগ হলেও কিছু প্রকাশ করলো না!সিটের পাশে থাকা লাগেজটা নিয়ে দরজা খুলে নামলো…..তারপর জানলার সামনে গিয়ে টাকাটা এগিয়ে দিলো!!

আহেলি টাকা দিয়ে নিচু হয়ে লাগেজের হ্যান্ডেলটা টেনে বের করে উঠে দাঁড়াতে যাবে এমন সময় কারোর সাথে একটা ধাক্কা লাগলো…..মাথা তুলে আহেলি দেখলো একটা ছেলে ওরদিকে ভ্রূ কুঁচকে তাকিয়ে আছে…..আর রাস্তার মধ্যে একটা কালো সানগ্লাস পরে আছে যদিও ভাঙা অবস্থায়!!আহেলি নরম গলায় বললো,,,

সরি!!আমি খেয়াল করিনি একদম!!

ছেলেটা ততক্ষনে নিচু হয়ে সানগ্লাসটা কুড়িয়ে নিয়ে তীক্ষ্ণ চোখে পর্যবেক্ষন করছে!এমনভাবে ভেঙেছে যে দ্বিতীয়বার সেটা আর পরা যাবে না!!ছেলেটা এবার আহেলির সামনে সানগ্লাসটা ধরে বললো,,,,

এটা কি করলেন আপনি?!দেখে চলতে পারেন না?!

বললাম তো সরি!!আমি নিচু হয়েছিলাম তো তাই খেয়াল করিনি…..

আপনার এই সরি আমার সানগ্লাস জুড়ে দিতে পারবে তো?!আর খেয়াল করিনি কি?!ওঠার সময় আগে দেখবেন না?!

ছেলেটার কথায় বেশ রাগ হলো আহেলির…..সরুচোখে তাকিয়ে বললো,,,,

আপনিও কি দেখে হাটছিলেন?!দোষ আপনারও আছে…..

হ্যাঁ!!আমারই তো দোষ…..আমার এতো সাধের সানগ্লাস তো আমি ইচ্ছে করেই ভেঙেছি তাই না?!ইসস পুরো সাড়ে সাতশো টাকা বাঁশ…..ভালো লাগে না!!

আহেলি লাগেজ টেনে চলে আসার সময় শুনতে পেলো ছেলেটার বিলাপ!!ফোঁস করে একটা নিশ্বাস ছেড়ে মনেমনে ভাবলো,,,,
এই ভর সন্ধ্যেবেলা সাউথের সিনেমার ভিলেনের মতো সানগ্লাস পরে থাকলে এমনি হয়!!

নির্দিষ্ট প্লাটফর্মে আগে থেকেই দাঁড়িয়ে ছিলো সৌমি,রিয়া,সপ্তক আর অনুশ্রী…..আহেলি ওদের সামনে দাঁড়াতেই সৌমি বললো,,,,,

বাপরে!!!এলি তুই শেষ অব্দি?!আমি তো ভাবলাম আজ তোকে ছাড়াই যেতে হবে!!কি করছিলিস এতক্ষন ধরে?!তিনদিন থাকবি না বলে ঋষভদার সাথে বুঝি…..

বলেই ভ্রূ নাচিয়ে ঠোঁট চেপে হাসলো সৌমি!!সৌমির কথায় অনুশ্রী বললো,,,,

একদম ফালতু ইয়ার্কি করবি না এখন…..ট্রেন এবার ঢুকলো বলে!!তোরা সকলে ব্যাগপত্র নিয়ে রেডি থাকিস….বেশিক্ষনের তো জার্নি নয় তবে এনজয়বেল হবে!

ইয়েস!!ফাইনালি আমরা পাঁচজন যাচ্ছি…..আয় ভাই সকলে মিলে কয়েকটা সেলফি নিই!!

সপ্তকের কথায় সকলেই সম্মতি জানালো!!ফোন বের করে সবাই মিলে বেশ কয়েকটা সেলফি তুলে নিলো…..এরমধ্যেই হুইসেল দিয়ে ট্রেন প্রবেশ করলে প্ল্যাটফর্মে!!বেশিক্ষনের যাত্রা না হওয়ায় স্লিপার ক্লাস বুক করেনি……টিকিট মিলিয়ে নির্দিষ্ট বগিতে উঠে ওরা সকলে সিট খুঁজতে লাগলো!!

টিকিটগুলো একসাথে কাটলেও পাশাপাশি পরেনি….যে দুটো পাশাপাশি সিট ছিলো সেখানে সপ্তক গিয়ে বসলো রিয়াকে নিয়ে!!সকলে মিলে এটা নিয়ে হাসি-ঠাট্টা করতে শুরু করলে সপ্তক জানালো এটা নাকি ওদের লাভ-জার্নি যেটা এনজয় করতে হয়!!

বাকি থেকে গেলো অনুশ্রী,সৌমি আর আহেলি…..এরমধ্যে একজায়গায় পাশাপাশি না পরলেও ম্যানেজ করে নেওয়া গেলো দুটো সিট কিন্তু বাকি একটা সিট একদম একদিকে পরেছে!!সৌমি আগেই বলে দিলো ও কোনোভাবে একা বসতে পারবে না এদিকে অনুশ্রী চাইছে একটু আহেলির সাথে বসতে যাতে ওরসাথে কথা বলে ওর মন ভালো রাখা যায়!!কিন্তু তা আর হলো না……বাকি থেকে যাওয়া একটা সিটে গিয়ে বসলো আহেলি!!

গল্প-গুজবের মধ্যেই ট্রেন ছাড়ার সময় চলে এলো….আহেলি আগেই এসে লাগেজ রেখে গিয়েছিলো এবার নিজে এসে বসলো!!ধীরে ধীরে রাত নেমে আসছে শহরের বুকে…..সাথে বাড়ছে সকলের বাড়ি ফেরার তাগিদ!ট্রেন ছাড়তেই ধীরে ধীরে প্ল্যাটফর্ম অদৃশ্য হয়ে এলো…..সিটে মাথা হেলিয়ে দিয়ে আহেলি চোখ বন্ধ করলো!!আজকাল ঋষভের সাথে স্বাভাবিক কথা অব্দি হয় না…….রিয়া আর সপ্তকের সম্পর্কটা দেখলে কেমন যেনো নিজের ভাগ্যের ওপরে হাসি পায়!!ব্যস্ততার মধ্যে দু-একবার ফোন করে খোঁজ নেওয়া,রাত্রিবেলা কিছুটা সময় নিজেদের কথা বলা এগুলো সবই ঋষভের কাছে বাচ্ছামি……অল্প বয়সে নাকি সকলে ওরকম করে কিন্তু আহেলি যে ওরকম বাচ্ছামি ভরা সম্পর্ক চেয়েছিলো!!

ট্রেন ছাড়ায় মাকে কল করে জানালো আহেলি…..এরপর ফোনটা সুইচ অফ করে ব্যাগে রেখে জানলা দিয়ে বাইরের দিকে তাকালো!!যদিও আহেলির সিট জানলার ধারে নয় বরং মাঝখানে!কিন্তু ফাঁকা পেয়ে আহেলি আপাতত জানলার পাশেই বসেছে!!

তীব্র হাওয়ায় বিনুনি থেকে কয়েকটা চুল এসে মুখে পরছে আহেলির……একের পর এক গাছপালা উল্টোদিকে ছুটে চলেছে!

একই!!আপনি আমার সিটে বসেছেন কেনো?!

হঠাৎই আহেলি জানলার দিক থেকে মুখ সরিয়ে সামনে তাকালো সাথে অবাক হলো!!তখনকার সেই ছেলেটা পিঠে ব্যাগ নিয়ে দাঁড়িয়ে……আহেলির চোখের সামনে হাত নাড়িয়ে ছেলেটা বললো,,,,

হ্যালো ম্যাডাম!!বলছি আপনি যেখানে বসে আছেন সেটা আমার সিট….কাইন্ডলি নিজের জায়গায় বসুন!!

কোনো কথা না বলে আহেলি নিজের সিটে এসে বসলো!!ছেলেটাও ব্যাগটা বাঙ্কে রেখে বসে পরলো সিটে……একহাতে মাথার চুলগুলো ঠিক করে বললো,,,,

নাহয় আমি আসিনি তাই বলে এখানেই বসে পড়বেন?!আপনি কি আমায় টার্গেট করে এসেছেন?!প্রথমে সানগ্লাস ভাঙলেন আর এখন সিট দখল…….

ছেলেটার কথায় আহেলি রাগে কিছু বলতে যাবে এমন সময় অনুশ্রী এসে দাঁড়ালো ওর সামনে!!একটা মিনারেল ওয়াটার আর কেকের প্যাকেট এগিয়ে দিয়ে বললো,,,,

তোর কোনো অসুবিধা হচ্ছে না তো?!সৌমি তো একা থাকতেও চাইছে না……এগুলো এখন ধর!!আমি মাঝেমধ্যে আসবো….এমনিও জাস্ট আড়াই ঘন্টার ব্যাপার!!দশটার আগে পৌঁছে যাবো…..

এবারও আহেলি কিছু বলতে পারলো না কারন তার আগেই ওর পাশে বসে থাকা ছেলেটা একটু অবাক করা গলায় বললো,,,,,

অনু!!তুই এখানে?!…..কোথায় যাচ্ছিস?!

ছেলেটার কথায় এবার অনুশ্রী তাকালো সেদিকে!!প্রথমে অবাক দৃষ্টিতে তাকালো তারপর একগাল হেসে উচ্ছাসিত গলায় বললো,,,,,

প্রান্তিকদা তুমি?!শান্তিনিকেতন যাচ্ছো নাকি?!

🌸🌸🌸🌸🌸

কাল রবিবার তাই ওইদিন বাড়ি থাকে ঋষভ……এ সপ্তায় সবকাজ প্রায় মিটেই গেছে!!কাল দিনটার মধ্যে কিছুটা সময় আহেলির সাথে কাটানো যায়!!কিন্তু ঋষভ যতবার আহেলি কে কল করেছে ততবার ফোনটা সুইচ অফ বলছে!!অবাক হলেও একটা কাজ নিয়ে তখন ব্যস্ত থাকায় আর বিষয়টাই ওতো পাত্তা দিলো না!!

রাত্রে খেতে বসে ঋষভ মাকে বললো,,,,,

আহেলি আজ এসেছিলো নাকি?!

সে তো কাল এসে দেখা করে গেছে!!মামনি কি আনবো তোমার জন্য,শাল নাকি শাড়ি,ঘর সাজাবার জন্য কিছু চাই কিনা……এসবই বলে যাচ্ছিলো!!

তোমার জন্য আবার কোথা থেকে কি আনবে?!

সেকিরে তুই এটাও ভুলে গেছিস!!আজ রাত্রের ট্রেনে বান্ধবীদের সাথে শান্তিনিকেতন যাচ্ছে আহেলি….ফিরবে তিনদিন পর!!তোর মাথায় এতো কাজ যে এটাও ভুলে গেলি?!

মায়ের মুখে কথাটা শুনে অবাক হয়ে যায় ঋষভ…..ও ভুলবে কিকরে যেখানে ও জানেই না আহেলি শান্তিনিকেতন যাচ্ছে!!যাহোক করে খাওয়া শেষ করে ঋষভ নিজের ঘরে এসে কল করলো আহেলি কে……সেই একই কথা সুইচ অফ!!সোশ্যাল মিডিয়ায় যেতেই একটা ছবিতে চোখ আটকে গেলো ঋষভের…..আহেলি কে ট্যাগ করে ছবি পোস্ট করেছে ওর বন্ধু সপ্তক!!সকলে ট্রলি হাতে নিয়ে প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়ে হাসিমুখে ছবি তুলেছে!!!

হঠাৎই আহেলির ওপর রাগ হচ্ছে ঋষভ এর….মেয়েটা একবারও ওকে জানিয়ে যাওয়ার প্রয়োজন মনে করলো না?!আগে তো যা হতো তাই বলতো……হঠাৎই ঋষভ এর দৃষ্টি গেলো দেওয়ালে টাঙানো একটা পেন্টিঙের দিকে!তৎক্ষনাৎ আজ বিকেলের কথাটা মনে পরলো!!কি দরকার ছিলো এতগুলো বছর পর শ্রেয়ার মুখোমুখি হওয়ার?!ওতো আহেলি কে ভালোবাসে…..আহেলি ওর বর্তমান তবে বারবার কেনো শ্রেয়ার মুখটা মনে পড়ছে ঋষভ এর?!

চলবে……..