মনের মানুষ পর্ব-১২+১৩

0
400

#মনের_মানুষ❤️
#দ্বাদশ_পর্ব❤️
#কলমে_সাঁঝবাতি 🌸

“এবার তুমি খুশি তো শ্রেয়া?আমার লাইফটাকে হেল বানিয়ে তুমি নিশ্চই শান্তি পেয়েছো?”

“ওহ কাম ওন ঋষি!একদম নাটক করবে না…..তোমার গার্লফ্রেন্ড যদি তোমায় ইমোশনাল ব্ল্যাকমেল করার জন্য হটাৎ করেই সুইসাইড করে বসে সেটা তাহলে আমার দোষ?”

“আহেলি নিজের শখ মেটাতে সুইসাইড করেনি শ্রেয়া….আমার দেওয়া আঘাত সহ্য করতে না পেরে এমনটা করেছে।আর এসব হয়েছে তোমার জন্য।হ্যাঁ শুধুমাত্র তোমার জন্য।”

“তাই নাকি ঋষি?খুব সাহস বেড়েছে দেখছি তোমার….যাবো নাকি মিডিয়ার কাছে?ফাঁস করবো তোমার ভিডিও ক্লিপ?সকলেরই জানা উচিত….যুবনেতা ঋষভের কুকীর্তির কথা।”

“শ্রেয়া তুমি কেনো করলে আমার সাথে এরকম?আমি কি দোষ করেছি?বারবার তুমি কেনো আমার জীবনটা তছনছ করে দাও?”

“আহা রে!কাঁদছো কেনো?গার্লফ্রেন্ডের জন্য খুব কষ্ট হচ্ছে বুঝি?”

“শাট আপ!তুমি এই মুহূর্তে আমার চোখের সামনে থেকে বেরিয়ে যাও…..নাহলে আমি কিন্তু উল্টোপাল্টা একটা কিছু করে ফেলবো”

“আচ্ছা তাই নাকি?শোনো ঋষি….তোমার সাথে আমিও থাকতে চাই না।আমার ইচ্ছেটা পূরণ করে দিও তাহলেই হবে।আর বেশিকিছু চাই না আমার।তারপর তোমার গার্লফ্রেন্ডকে নিয়ে যা খুশি করো।”

“তুমি এতো লোভী ভাবতেও আমার ঘেন্না হয় শ্রেয়া….সামান্য একটু ক্ষমতার লোভে তুমি এতটা নিচে নামলে?আমার জীবনটা নষ্ট করে দেওয়ার কোনো অনুশোচনা তো দেখছি না তোমার চোখে।”

“খামোখা অনুশোচনা থাকবে কেনো?এখন সকলেই স্বার্থপর….নিজের স্বার্থের জন্য যদি নিচে নামতে হয় তাই নামবো।সৎ থেকে কোনো লাভ হয় কি?এইই যে তুমি দলের প্রতি এতটাই নিষ্ঠাবান একজন কর্মী যে দলের ইমেজ খারাপ হবে ভেবে এতো বড়ো স্যাক্রিফাইস করলে।বাহঃ…..মানতেই হবে তোমার রক্তে রাজনীতি।”

“শ্রেয়া তুমি এই মুহূর্তে এখান থেকে বেরিয়ে যাও…..তোমার উদ্দেশ্য তো সফল হয়েছে তাই না?আহেলি দূরে গেছে আর আমার লাইফটাও তছনছ হয়ে গেছে।এখন আর কি চাও তুমি?”

ঋষভ এর কথায় শ্রেয়া হেসে বেরিয়ে গেলো।ঋষভ নিজের চেয়ারে ধপ করে বসে দুহাতে মাথা চেপে ধরলো।

ঋষভ যখন বাড়ি ফিরলো তখন রাত সাড়ে দশটা বাজে…..প্রতিদিনের মতোই ওর মা ওর জন্য অপেক্ষা করছিলো।মাকে ডাইনিংয়ে বসে থাকতে দেখে ঋষভ সেদিকে এগিয়ে গেলো….ধীর গলায় বললো,,,

“আমার জন্য বেকার কেনো বসেছিলে মা?আমি খাবো না….”

“আমি তোমায় খেতে দেওয়ার জন্য বসে নেই ঋষভ।তোমায় কতগুলো প্রশ্ন করার আছে,তার উত্তরটা আমায় দিলেই হলো।কদিন ধরে তো তোমার সাথে দেখাই হচ্ছে না….কখন বাড়ি ঢুকছো আর কখন বেরিয়ে যাচ্ছো তা জানতে পারছি না।”

“কিছু বলার থাকলে প্লিস বলো।আমি ভীষণ টায়ার্ড….”

“তুমি সামান্য টায়ার্ড আর ওদিকে একটা মেয়ে পাঁচ-পাঁচটা দিন মৃত্যুর সাথে লড়াই করেছে,আজ মেয়েটাকে ডিসচার্জ করেছে।তুমি একবারও মেয়েটার কাছে গিয়ে দাঁড়ালে না কেনো?”

“মা তুমি ভালো করেই জানো সামনে ইলেকশন।আমার পক্ষে কোনোভাবে টাইম ম্যানেজ করে যাওয়া পসিবল নয়।”

ঋষভ এর কথা শেষ হওয়ার আগেই ওর মা ঋষভ এর গালে সপাটে চর মারলেন…..তারপর ক্রুদ্ধ গলায় বললেন,,,
“এই চড়টা আমি যদি আরো অনেক আগে মারতাম তাহলে হয়তো আহেলির আজ এমন অবস্থা হতো না,আমি ভালো করেই বুঝতে পারছি আহেলির এই অবস্থার জন্য একমাত্র তুমি দায়ী।”

“মা….”

‘ভুল করেও আর আমায় মা বলে ডাকবে না ঋষভ….তোমার মত কুলাঙ্গার সন্তানের মা হওয়ার কোনো ইচ্ছাই আমার নেই।যে মেয়েটা তোমায় এতো ভালোবাসলো তার ভালোবাসার এই প্রতিদান দিলে তুমি?ছিঃ ঋষভ!আজ তোমার জন্য আমি আহেলির বাবা-মায়ের চোখের দিকে তাকাতে অব্দি পারিনি।আজ তোমায় উত্তর দিতে হবে ঋষভ….কেনো তুমি এমন করলে?কি এমন ঘটলো যে মেয়েটা এরকম একটা পথ বেছে নিলো?”

“মা আমার সত্যিই এখন কথা বলতে ভালো লাগছে না।আর কেউ যদি খামখেয়ালি করে নিজের জীবন দিতে চায় সেখানে আমার কিছুই করার নেই।আমার ভালো লাগছে না,আমি ঘরে যাচ্ছি….”

🌸🌸🌸🌸

আজ তিনদিন হলো আহেলি বাড়ি ফিরেছে…কিন্তু এই তিনদিনের একটা দিনেও আহেলি ঋষভ কে আসতে দেখলো না।মানুষটা আসলে কোন ধাতু দিয়ে তৈরি?কবে এতটা নিচে নামলো?সেই কবে থেকে তো আহেলি চেনে ঋষভ কে…..সেতো এমন ছিলো না।তবে এমন কি হলো…যে এতটা পাল্টে গেলো মানুষটা।আহেলির চোখের সামনে আবারো ভেসে উঠলো সেদিনের দৃশ্য….কিভাবে ঋষভ আর মেয়েটা!!!

আহেলির ভাবনা থামলো ফোনের শব্দে…..টেবিল থেকে ফোনটা হাতে নিয়ে দেখলো,প্রান্তিকের কল।প্রান্তিকের নামটা দেখতেই আহেলির মুখে হাসি ফুটে উঠলো।

“কেমন আছেন আহেলি?”

-“ভালোই।তা হটাৎ ফোন?”

-“আপনার তো ব্রেকআপ হয়ে গেছে তাই আমি ট্রাই করে দেখছি আমার হিল্লে হয় কিনা।”

কথাটা বলেই হেসে উঠলো প্রান্তিক।সাথে আহেলি নিজেও হাসলো…..কিছুক্ষন পর প্রান্তিক হাসি থামিয়ে বললো,,,

-“আহেলি আমি কিন্তু সত্যিই এরকম কোনো উদ্দেশ্য নিয়ে আপনাকে কল করিনি,আমি একজন ডক্টর সাথে আপনার পরিচিত।সেই সুবাদে আপনার খোঁজ নিতে ফোনটা করা।আর আমি একজন বন্ধু শুধুমাত্র একজন বন্ধু হিসাবে আপনার সাথে যোগাযোগটা রাখতে চাই।তবে এর কোনো অন্য মানে বের করবেন না।”

-“ইটস ওকে প্রান্তিক…..এতো এক্সপ্লেনেশন দেওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই।আপনার মতো মানুষের সাথে কথা বললে মনটা ভালো থাকে তাই যোগাযোগ রাখাই যায়।”

-“তাই নাকি?তো আপনার যাতে মন ভালো থাকে তার জন্য আমার সাথে যোগাযোগ রাখবেন?আজব স্বার্থপর মানুষ তো আপনি।”

-“স্বার্থপর আর আমি?ভালো বলেছেন।”

-“আহেলি আপনি এই রবিবার ফাঁকা আছেন?”

-“আমার তেমন কোনো গুরুত্বপূর্ন কাজ থাকে না…..কিন্তু আমার ফাঁকা সময়ের সাথে আপনার কি সম্পর্ক?”

-অনেক রকম সম্পর্ক আছে।তো ওইদিন ঠিক সকাল সাড়ে সাতটায় রেডি থাকবেন।আমি আপনার বাড়ি থেকে আপনাকে পিক করে নেবো।”

-“পিক করবেন মানে?কোথায় যাওয়ার কথা বলছেন?”

-“ওটা নাহয় সারপ্রাইস থাকলো…ভরসা রাখতে পারেন আমার ওপর।”

-“আমি বুঝতে পারছি না প্রান্তিক,আপনি হটাৎ আমায় নিয়ে কোথায় যেতে চাইছেন?”

-“রবিবার বলবো।ডক্টর ছাড়াও আমি ভালো ট্যুর গাইড….আর তার পরিচয় আপনি শান্তিনিকেতনে পেয়েছেন।তাই বেশি ভাববেন না।সেদিন হসপিটালে কথা দিয়েছিলাম….আপনার এই সময়ে আপনি আমায় সবসময় একজন বন্ধু হিসাবে পাশে পাবেন।সেই কথা রাখার সুযোগটা দিলেই হলো আমায়”

-“আচ্ছা তাই হবে….দেখি কি সারপ্রাইস পাই রবিবার।”

অবশেষে কয়েকটা দিন কেটে যাওয়ার পর এসে উপস্থিত হলো রবিবার…..এই কেটে যাওয়া দিনগুলোতে আহেলি নিজেকে অনেকটাই সামলে নিয়েছে।কিছু না বলার সত্বেও আহেলির বাবা মা বুঝে নিয়েছে যে এই কান্ডের পেছনে কোনো না কোনোভাবে ঋষভ জড়িয়ে আছে।ঋষভ এরথেকে চরম আঘাত পেয়েই আহেলি এমন একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলো যার প্রমান ওই ভাঙা ফটোফ্রেম আর ঋষভ এর অনুপস্থিতি।ঋষভ এর মা আবারো একদিন আহেলির সাথে দেখা করতে আসলে আহেলির বাবা মা জানিয়ে দেন ওনাদের সাথে আর কোনো সম্পর্ক রাখতে চান না।ঋষভ এর মাও কথা না বাড়িয়ে নীরবে মেনে নিয়েছেন এই সিদ্ধান্ত।

বাড়ি থেকে বেরিয়ে বড়ো রাস্তার সামনে দাঁড়িয়েছিলো আহেলি……বাবা মাকে বলেই আহেলি বাড়ি থেকে বেরিয়েছে।সাতটা চল্লিশে আহেলির সামনে একটা গাড়ি এসে থামলো…..গাড়ির দরজা খুলে প্রান্তিক কে বেরোতে দেখে হাসি ফুটে উঠলো আহেলির মুখে।আহেলির সামনে এসে প্রান্তিক দাঁড়িয়ে বললো,,,

“সরি ফর লেট কিন্তু আপনার বন্ধুদের পিক করতে গিয়েই লেট হয়েছে।”

প্রান্তিকের কথা শুনে আহেলি ভ্রূ কুঁচকে তাকাতেই ব্যাকসিটের জানলা খুলে অনুশ্রী বললো,,,,

এইই যে আমরা।আমরাও আছি কিন্তু…

তোরাও যাবি নাকি?বাহঃ তাহলে তো দারুন ব্যাপার….কিন্তু সৌমিলি নেই?

না ভাই।ও নেই কিন্তু তুই এবার ভেতরে এসে বোস।

সপ্তকের কথায় আহেলি সম্মতি জানিয়ে ব্যাকসিটের দরজা খুলে অনুশ্রীর পাশে বসলো।প্রান্তিক নিজেও গিয়ে বসলো ড্রাইভিং সিটে….আর ওর পাশে সপ্তক বসে।পেছনে রিয়া,অনুশ্রী আর আহেলি…..

তোরা এখানে?তোদের কি প্রান্তিক আসতে বলেছে?

আজ্ঞে হ্যাঁ ম্যাডাম…..আপনার তো মন ভালো নেই তাই প্রান্তিকদা আমাদের সকলকে নিয়ে ঘুরতে যাওয়ার প্ল্যান করেছে।

অনুশ্রীর কথায় আহেলি বেশ অবাক হলো।শুধুমাত্র ওর মনখারাপ তাই জন্য প্রান্তিক এসব করলো?সেদিন ছেলেটাকে ফিরিয়ে দেওয়ার পরেও আহেলির জন্য এতটা ভেবেছে?
❤️❤️❤️

আপনি ভীষণ অবাক হয়েছেন তাই না আহেলি?ভাবছেন হটাৎ আপনার মন ভালো করার জন্য আমি এতকিছু কেনো করলাম!আপনি তো জানেন আহেলি আমি আপনাকে ভালোবাসি…..হ্যাঁ আমি এখনো বলছি আমি আপনাকে ভালোবাসি কিন্তু আমি ভালোবাসি মানে আপনাকেও ভালোবাসতে হবে এমন কোনো মানে নেই…..সেদিন আপনি আমাকে ফিরিয়ে দিয়ে একজন আদর্শ প্রেমিকার দায়িত্ব পালন করেছিলেন কিন্তু আপনার ভালোবাসার মানুষ তার মর্যাদা রাখতে পারেন নি।জানেন আপনাকে ওইভাবে নিস্প্রান ভাবে দেখে আমার কি অবস্থা হয়েছিলো….আপনি শান্তিনিকেতন থেকে ফিরে আসার পরের ট্রেনে আমিও হুট করে ফিরে আসি।কেনো জানি না ওখানে থাকার কোনো ইচ্ছাই আর ছিলো না….আমি চেয়েছিলাম আরো একবার আমাদের দেখা হোক কিন্তু সেটা এভাবে চাই নি।আমার খুব কষ্ট হয়েছিলো আপনার যন্ত্রণাময় চেহারাটা দেখে তাই তো তখনই ঠিক করেছিলাম,যেভাবে হোক এই মুখে আমি হাসি ফুটিয়েই ছাড়বো।আমি আপনার থেকে আজকেও ভালোবাসা চাই না আহেলি….কারণ আমি জানি আপনার পক্ষে এতো সহজে কাউকে জীবনে জায়গা দেওয়া সহজ নয়।তাইতো আপনার বন্ধু হিসাবে থাকতে চাই।এতেই আম খুশি……

আহেলির অবাক হওয়া মুখটা দেখে মনেমনে কথাগুলো ভাবলো প্রান্তিক।সপ্তক কিছু একটা বলছে যেটা প্রান্তিক মন দিয়ে শোনে নি তাও হেসে মাথা নাড়িয়ে সায় দিলো।একবার আয়না দিয়ে আহেলির মুখটা দেখে আবারো ড্রাইভিংয়ে মন দিলো।

চলবে…….

#মনের_মানুষ❤️
#ত্রয়োদশ_পর্ব❤️
#কলমে_সাঁঝবাতি🌸

ওরে গৃহবাসী…..
খোল দ্বার খোল।লাগলো যে দোল।
স্থলে জলে বনতলে লাগলো যে দোল।
দ্বার খোল দ্বার খোল।

রবীন্দ্র সঙ্গীতের সাথে কয়েকটা বাচ্ছা তাল মিলিয়ে নেচে চলেছে…..আহেলি মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছে সেদিকেই।শুধু আহেলি একা নয় সাথে সকলেই আছে।কলকাতা থেকে বেশ অনেকটা দূরে এসেছে ওরা।ওরা যেখানে এসেছে জায়গাটা নদী তীরবর্তী অঞ্চল।একটা গ্রাম…..যেখানে কয়েকঘর জেলে বসবাস করে।এখানে প্রান্তিকদের মেডিক্যাল ক্যাম্প আছে আজ…..প্রান্তিক ক্যাম্পে নিজের কাজ করে চলেছে আর আহেলি ও বাকিদের নদীর পাশে থাকা একটা রাধা-কৃষ্ণের মন্দিরে বসতে বলেছে।

আহেলি শান্তিনিকেতন থেকে ফিরে আসার কিছুদিন পরেই ছিলো দোল উৎসব…কিন্তু তখন আহেলি হসপিটালে ছিলো।এখানে মন্দিরে দোলের দিন উৎসব হয় না…..বরং আরো কয়েকটা দিন পরে উৎসব হয়।এটাই এখানকার নিয়ম….এই গ্রামের সকলে প্রথমে রাধা-কৃষ্ণের মন্দিরে পুজো দেয় আর তারপর মেতে ওঠে রঙের উৎসবে!

মন্দির প্রাঙ্গণে চলছে দোল খেলা…..ছোটো থেকে বড়ো সকলেই যোগ দিয়েছে অনুষ্ঠানে।বাচ্ছারা নিজেদের মতোই রঙ নিয়ে খেলছে সাথে নাচ করছে……আহেলি আর বাকি সকলে বেশ খুশি এরকম একটা জায়গায় আসতে পেরে।প্রান্তিক এর ক্যাম্প বেশ কিছুটা দূরে…..ও বলেছে,ওর কাজ শেষ হলেই এখানে চলে আসবে।

“কি রে আহু?এবার ভালো লাগছে?”

অনুশ্রীর প্রশ্নে হালকা হেসে আহেলি মাথা নাড়িয়ে বললো,,,,
“সত্যিই খুব ভালো লাগছে……আমরা যেমন ছোটবেলায় রঙ খেলতাম ঠিক তেমন এরাও খেলছে তাই না?”

“সত্যিই তাই রে…..প্রান্তিক দা কিন্তু দারুন মানুষ।ও তো আমাদের নিজে থেকেই কল করে বললো একটা জায়গায় যাবে।আমরাও রাজি হলাম…..কিন্তু ব্যাপারটা বুঝলাম না।হটাৎ তোর জন্য প্রান্তিকদা এতটা ভাবছে কেনো?”

“তুই ঠিক কি বলতে চাইছিস অনু?”

“যেটা তুই বুঝেছিস…..আমি তো ভাবতেও পারছি না ঋষভদা তোকে চিট করতে পারে।”

“আমরা অনেককিছুই ভাবতে পারিনা তাও সেটা হয়…..আগের বছরের দোলের কথাটা মনে পরলেই শুধু একটা কথা মাথায় আসছে।”

“কি রে আহেলি?,কোন কথা?

“আগেরবছর দোলের দিন ঋষিদা বাড়িতেই ছিলো….আমি জানিস তো ওর ঘরে গিয়ে জোর করে ওকে রঙ মাখিয়েছিলাম।ঘরের মেঝেতে রঙ পরে যাওয়ায় সেকি রাগ…..কতকি বললো আমায়।আমিও ছলছল চোখে বেরিয়ে আসতে যাবো তখনই আমার একটা হাত ধরে টানলো…..সবসময় গম্ভীর থাকা মানুষটা হালকা হেসে বললো,,,,

“রাগ করলি আহেলি?তুই তো জানিস আমার ঘর নোংরা করলে আমার কেমন রাগ হয়,তোর যদি এতই রঙ দেওয়ার ইচ্ছা ছিলো বাইরে নিয়ে যেতিস আমায়….এভাবে কেউ ঘরে রঙ ছিটিয়ে দেয়?”

ঋষভের কথায় আহেলি ঠোঁট উল্টে বললো,,,,

“খুব ভুল হয়েছে আমার….আর কোনোদিন তোমার রঙ মাখাতে আসবো না।এটাই প্রথম আর শেষবার….আর কোনদিন রঙ দেবো না তোমায়।”

আহেলির রাগ আর অভিমানে ফোলা মুখটা ঋষভ নিজের দুহাতের মধ্যে নিয়ে নরম গলায় বললো,,,,

“আচ্ছা সরি।ভুল হয়েছে আমার…..এরপর আমার ঘরে এসে যা খুশি করবি তুই।কোনোদিন তোকে কিচ্ছু বলবো না…..কিন্তু আমায় রঙ দিবি না মানে কি হ্যাঁ?আমায় রঙ দেওয়ার আর কে আছে বল?তুই না থাকলে তো আমার পুরো জীবনটাই বেরঙীন হয়ে যাবে তাই এই কথাটা আর কোনদিন বলবি না।”

ঋষভ এর কথায় আহেলি নিজেকে ছাড়াবার চেষ্টা করে বললো,,,,

“অনেক হয়েছে….বকে আর এখন সাফাই দিতে হবে না।এখন ছাড়ো তো আমায়,দেখি মামনি কি রান্না করলো।আজ আমি এখানেই তো থাকবো।”

“এতো সহজে তো ছাড়া পাবে না তুমি,আমার ঘরে আর মনে রঙ দিয়ে অন্যায় করেছো আর তার জন্য শাস্তি পেতে হবে।”

ঋষভ এর কথায় আহেলি অবাক হয়ে তাকাতেই ঋষভ আঙুলের দ্বারা আহেলির কপালের ওপর জড়ো হওয়া ছোট্ট এলোমেলো চুলগুলো সরিয়ে দিলো সযত্নে…….লাল,গোলাপি আর নীল রঙে মাখামাখি মুখটার দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থাকার পর ঋষভ আহেলির ললাটে ভালোবাসার পরশ একে দিতেই আহেলি চোখ বন্ধ করে নিলো আবেশে।ভালোবাসার প্রথম স্পর্শ এর উষ্ণতাএকেবারেই অজানা আহেলির কাছে…এরইমাঝে আহেলির গালের সাথে ঋষভ নিজের গাল ঠেকিয়ে কানের কাছে মুখটা নিয়ে গিয়ে ধীর গলায় বললো,,,

“হ্যাপি হোলি……তুই জানিস তোকে এভাবে দেখে আমি কেমন হয়ে যাচ্ছি?তুই প্লিস বাড়ি ফিরে যা……আমি তোকে স্বীকৃতি দিয়ে তবেই গভীরভাবে ছুঁতে চাই,ততদিন যে আমাদের দুজনকেই অপেক্ষা করতে হবে।একদম আমার কাছাকাছি আসবি না।বুঝলি?”

ঋষভ এর হাতের বাঁধন আলগা হতেই আহেলি তৎক্ষনাৎ ঘর থেকে বেরিয়ে যায়।আহেলির যাওয়ার দিকে তাকিয়ে ঋষভ মৃদু হাসে।

অনুশ্রী কে ঘটনাটা বলতে গিয়ে যেনো আহেলির চোখের সামনে দৃশ্যটা ভেসে উঠেছিলো।পুরোনো কথা মাথায় আসতেই চোখ থেকে টপটপ করে জল গড়িয়ে পরতে লাগলো আহেলির।

“আহু কাঁদছিস কেনো?আচ্ছা কি দরকার পুরোনো কথা ভাবার?যত আগের কথা ভাববি ততই ওই শয়তানের জন্য আরো কষ্ট পাবি…..প্র্যাকটিক্যাল হো।যা হওয়ার হয়ে গেছে…..প্রান্তিকদা আমাদের সকলকে এমন সুন্দর একটা জায়গায় আনলো আর তুই এভাবে মন খারাপ করে থাকবি?তাহলে আর আসার কি মানে?

অনুশ্রীর প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে আহেলি বললো,,,,

“অনু তুই একবার ভেবে বল তো,যে মানুষটা তোর সাথে এরকম করে মিশবে তাকে কিভাবে অবিশ্বাস করবি তুই?আমার কিন্তু কখনো মনেহয়নি ঋষিদা কারোর রিপ্লেসমেন্ট হিসাবে আমায় ইউস করছে।”

“তুই এখনো কোন মুখে ঋষভ দার কথা বলছিস আহু?ও তোকে ঠকিয়েছে তাও নিজের এক্স এরসাথে।কথা বললে বা যোগাযোগ রাখলেও জানতাম….ওরা দুজন তোর অনুপস্থিতি তে মাত্র কদিনের আলাপে ফিজিক্যাল রিলেশনে জড়িয়ে গেছে।এরপরেও তুই ওই প্রতারককে বিশ্বাস করছিস?এবার অন্তত এই অন্ধ প্রেমের জ্বাল থেকে বেরিয়ে আয়,পারলে ঋষভ কে ভোলার চেষ্টা কর।তোর জন্য বেটার হবে সেটা।”

“আমি পারছি না অনু….তুই যতটা সহজে কথা বলছিস ততটা সহজ নয় এটা।এতো সহজে একজনের কথা মনে থেকে মোছা যায় না।আমি ঋষভদা কে অনেকদিন আগে থেকে ভালোবাসি…..কিকরে ভুলে যাবো?তুই আমায় একটা উপায় বল অনু।আমি সত্যিই চাই ভুলতে..

“কি গল্প হচ্ছে দুই বন্ধুতে?আর দুজনেরই গাল ফাঁকা কেনো?রঙ খেলবে না?”

প্রান্তিককে সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে অনুশ্রী হেসে বললো,,,,

“আর তুমি?হয়ে গেছে ক্যাম্প?”

“হ্যাঁ….আমারটা হয়ে গেছে।আমি তৎক্ষনাৎ এখানে চলে এলাম।”

“আচ্ছা আপনি এই জায়গাটা সমন্ধে জানতে পারলেন কিকরে?”

“শান্তিনিকেতন থেকে হুট করে ফেরায় ওখানের বসন্ত উৎসবে তো থাকা হলো না….এদিকে আমার ফটোশ্যুট হয়নি।তাই গুগুল করে দেখছিলাম এরকম কোনো জায়গা আছে কিনা।তখনই জানলাম এই গ্রামের কথা…..যেখানে দোলের কয়েকদিন পর রঙ খেলা হয়।আর ভাগ্যক্রমে জানলাম এখানে আমাদের হসপিটাল থেকে আজ মেডিক্যাল ক্যাম্প হবে।আমার আজ আসার কথা ছিলো না…..কিন্তু যে ডক্টর আসবে বলেছিলো তাকে আসতে না দিয়ে আমি নিজেই এলাম আর ভাবলাম যাচ্ছি যখন আপনাদের সাথে আনি।”

“ওহ!তার মানে নিজের ফটোশ্যুট এরজন্য আসা?আমাদের মন ভালো করার কথাটা বাহানা মাত্র….”

আহেলির কথায় ঋষভ হেসে বললো,,,,

“দারুন গেস করতে পারেন তো আপনি।ঠিকই ধরেছেন….আমি নিজের জন্যই এসেছি”

প্রান্তিকের কথায় আহেলি মুখটা অন্যদিকে ঘোরাতেই প্রান্তিক নিঃশব্দে হাসলো।ক্যামেরার লেন্স বাচ্ছাদের ওপর তাক করে মনেমনে ভাবলো,,,,

“আমি সত্যিই নিজের জন্য এসেছি আহেলি…..আমার এই চোখদুটো যে আপনাকেই বারবার দেখতে চায় তাই তো এখানে আসা।মনের মানুষকে একপলক চোখের দেখায় যে এতটা শান্তি পাওয়া যায় তা আপনাকে না ভালোবাসলে জানতেই পারতাম না।”

চলবে……