মন গহীনের গল্প পর্ব-৭+৮

0
700

#মন_গহীনের_গল্প
পর্ব-৭
#রূবাইবা_মেহউইশ
__________________
বৃষ্টি বাদলের রাতে হাসপাতালে ডাক্তারের খোঁজে কাইয়ূমকে বিরক্ত হয়ে ঘুরতে হচ্ছে। তার জীবনে যত গ্রহ আছে তার মধ্যে বিপদজনক গ্রহের নাম ‘রিশাদ’। প্রতি রাতেই তার একটা ফোনকল বরাদ্দ থাকে কাইয়ূমের ফোনে৷ যখনই সে একটু আয়েশ করতে চায় তখনি সেই ফোন কল শনির দশা হয়ে সামনে দাঁড়ায়। আজও তাই ; বৃষ্টির রাত , ডিউটিও আজ দিনে ছিলো৷ আবহাওয়ার সাথে মুড চেঞ্জ হয়ে গেছে। এই শীতল আবহাওয়ায় বউয়ের উষ্ণ আদরের বিকল্প আর কিছুই নেই। কিন্তু কাইয়ূমের চার আঙ্গুল কপালে এত সুখ কই! মন যখন আদর আদর করছে রিশাদ তখন কল দিয়েই ঠিকানা দিলো। যত শিগ্রই সম্ভব সেখানে পৌঁছে একজন রোগী হাসপাতালে নিতে হবে। ‘শালা তোর কি কর্মচারী কম আছে?নাকি কাইয়ূম এম্বুলেন্স? কাইয়ূমকেই কেন লাগবে!’ মনে মনে এ কথা বললেও মুখে বলতে পারে নি সে। রিশাদের কথামতো ঠিকানায় গিয়ে ইভানকে হাসপাতালে নিয়ে এলো। মেহউইশের মা সঙ্গে যেতে চাইলেও তাকে নিতে নিষেধ করেছে রিশাদ। আর কালকের মধ্যেই মেহউইশের নামে দেওয়া বাড়িটিতে পৌঁছে দিতে বলা হয়েছে তাদের। আর সে বাড়ির ঠিকানা কেউ যেন না জানে। এমনকি মাইমুনাও না। চোখে বেঁধে নিয়ে যাবে তাদের।

নিঃশ্বাসে ঝরছে তপ্ত দুঃখ
দু চোখের পাতায় অনাকাঙ্ক্ষিত যাতনা,,

কয়েক ফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে পড়লো মেহউইশের চোখের কোণ বেয়ে। সর্বস্ব কি এভাবেই হারায় একটা মেয়ে! রিশাদের দেহ সুখের ভেলায় চড়ে ভেসেছে অনেকক্ষণ এখন প্রশান্তির ঘুম দরকার তার। মেহউইশকে এখনও বুকের নিচে জড়িয়ে রেখেছে পাখির ছানার মত করে। অথচ মেহউইশ নিথর চাপা পড়ে আছে দানবের বুকে পিষ্ট হয়ে। গা ঘিনঘিন করছে তার। দেহের প্রতিটি অঙ্গ জ্বলে পুড়ে যাচ্ছে। এ কেমন জ্বালা! স্বামীর স্পর্শ এতোটা ঘৃন্যও হয় বুঝি কোন নারীর কাছে? নাকি তার মনে ইভানের ছায়া রিশাদকে এতোটা ঘৃণিত করে দিচ্ছে তার নজরে! দলা পাকিয়ে কান্নারা আটকে রইলো গলায়। ফুপিয়ে ফুপিয়ে কান্না এবার দমক নিয়ে বেরিয়ে আসতে চাইছে ভেতর থেকে। শরীর কেঁপে কেঁপে উঠছে যা টের পাচ্ছে রিশাদ। কিন্তু এই মূহুর্তে সিমপ্যাথি দেওয়ার কোন ইচ্ছেই তার নেই। নগদ দেনমোহরে বিয়ে করা বউ তার। স্ত্রীর থেকে যতটুকু প্রাপ্য ছিলো স্বামী হিসেবে ততটুকু নিয়েছে এতে কান্নার কি আছে! যত্তসব ন্যাকামি! এমনটাই মনে হচ্ছে রিশাদের। সে ধমকে উঠলো কান্না বন্ধ করতে। উপায়ান্তর না পেয়ে মেহউইশ দাঁতে ঠোঁট চেপে কান্না আটকাতে চেষ্টা করলো। এটা এক দৈত্যপুরী। এখানে কেউ কাউকে বোঝে না, বুঝতে চায় না। বিয়ে তো হয়েই গেছে৷ আজ না হয় কাল মেহউইশ রিশাদকে মেনে নিতো তার আগে একটু তো সময় দিতে! এমন জোরজবরদস্তি করে কি সে অন্যায় করেনি? নাকি স্বামী চাইলেই জোর করতে পারে স্ত্রীকে হোক সেটা দৈহিক কোন ব্যপার কিংবা সাংসারিক৷ আর দৈহিক মিলনটাতে তো শুধু দেহের নয় মনেরও সায় লাগে এটা কেন বুঝলো না রিশাদ। মেহউইশ না হয় বেশি পড়াশোনা করেনি৷ কিন্তু রিশাদ! সে তো অনেক পড়াশোনা করেছে রাইমা বলেছিলো।শিক্ষিত মানুষ কেন এমন অশিক্ষিতের মত আচরণ করবে!

কাকডাকা ভোরে এসির ঠান্ডায় ভীষণ শীত শীত লাগছে রিশাদের। ঘুম ভেঙে গেছে এই ঠান্ডায় তাই আধখোলা চোখেই বিছানায় তার বামপাশে তাকালো৷ মেহউইশ নেই ; এত সকালে সে কোথায় গেল! আধখোলা চোখ এবার পুরোপুরি খুলে ফেলেছে তখনি দেখা গেল বাইরে থেকে ঘরে আসছে মেহউইশ। তার কোলে নির্জন খেলছে, খিলখিল করে হাসছে।সকালটা ঝলমল করে উঠলো রিশাদের চোখের সামনে। মেহউইশকে সে ঠিকঠাক খেয়াল করেছে কালই। হঠাৎ মনে হলো মেয়েটা একেবারে ছোটও নয়। নির্জনকে নিয়ে যেভাবে হাঁটছে দেখে বোঝার উপায় নেই নির্জনের মা সে নয়। কিন্তু মেয়েটা থাকবে তো! সুযোগ পেলে পালিয়ে যাবে না তো? নাহ, পালিয়ে আর যাবেই বা কোথায়? এক চিলতে হাসি রিশাদের ঠোঁটের কোণ ঘেঁষে ভেসে উঠলো।শহর জুড়েই রিশাদ রায়হানের রাজত্ব। নীলিমাও তো পালিয়েছিলো কতটুকু পেরেছে যেতে? আহ্! সোনালি রোদমাখা মিষ্টি সকালটা নীলিমার নামেই তিক্ত হয়ে গেল রিশাদের। তারপরই মনে পড়লো আরেক তিক্ত ব্যক্তির কথা। ‘ইভান’ একে এবার দেখতে হবে। আড়মোড়া ভেঙে বিছানা ছাড়লো রিশাদ। মেহউইশ দেখেও দেখলো না যেন তাকে । নির্জনকে তার ছোট্ট পালঙ্কে শুইয়ে বিছানাটাকে গুছিয়ে নিলো সে। এত ভোরে উঠে জেগে থাকার অভ্যেস তার ছিলো না কখনও। মায়ের কত বকুনি খেয়ে ফজরটা আদায় করেই আবার শুয়ে পড়তো। কিন্তু আজ আর তেমন হচ্ছে না। মন খারাপ করেই সে তার মত করে কাজ করছে। আজও হয়তো খবর পাবে না মা,ভাইয়ের।

সকালের নাশতায় ডাইনিংয়ে মেহউইশ আর রিশাদ ছাড়া কেউ ছিলো না। একজন মেইড খাবার সার্ভ করতে আসলে রিশাদ তাকে পাঠিয়ে দিলো। মেহউইশকে বলল সে যেন সার্ভ করে, মেহউইশও তাই করলো। নির্জন এখন রিশাদের কোলে। বাচ্চাটাও কেমন যেন বাপের কোল কেমন করে যেন টের পায়। কি আয়েশে বাপের বুকে চুপচাপ ঘুমায় আর মেহউইশের কোলে আসলেই কেমন নাক,মুখ ঘঁষে, হাত পা ছোঁড়ে। কি খোঁজে সে তার কাছে এমন করে? মেহউইশের গায়ে তো মা মা ঘ্রাণটাও নেই।

নাশতার জন্য রিশাদ রুটি খাবে বলেছিলো। মেইডও তাই দিয়ে গেল। প্লেটে রুটি সার্ভ করলো মেহউইশ মাত্র দুটো আর এক বাটিতে একটু সবজি দিলো। খাবারের পরিমাণ দেখে ভ্রু যুগল বাঁকিয়ে জানতে চাইলো ‘এটুকু খাবার জন্য!’

মেহউইশ জবাব দিলো, ‘আপনার।’

‘দুইটা রুটিতে কি হবে?’

অবাক হয়ে তাকালো মেহউইশ।সে বুঝতে পারেনি রিশাদের ঠিক কি পরিমাণ খাবার লাগতে পারে। বাড়িতে সে সবসময় এক অথবা দেড়টা পরোটা খেতো। মাকেও দেখেনি দুটোর বেশি খেতে। মিহাদ তো একটাই খায় কোনরকমে। রিশাদের দিকে ভয়ে ভয়ে তাকাতেই দেখলো সে হাসছে। তারমানে ভয়ের কোন কারণ নেই।

‘আমি রুটি পাঁচ থেকে আটটা খাই। আগে অবশ্য দশ থেকে পনেরোটা খেতাম।তখন জিমে যাওয়া হত রেগুলার। অফিস জয়েন করার পর আর এসবে সময় পাই নি। তখন থেকে খাওয়ার পরিমাণটাও কমে গেল। আবার শরীরটাও কেমন লুস….. কথাগুলো বলতে বলতে থেমে গেল রিশাদ। মেহউইশ কেমন হা করে তাকিয়ে আছে তার দিকে। কি এমন বলেছে সে যার জন্য এমন জংলীদের মত তাকাতে হবে! আর মেহউইশ ভাবছে এটা কি সত্যিই কোন দৈত্য, দানব? কই ইভানও তো বলে সে জিমে গেছে কখনও তো দেখিনি এত এত খাবার খেতে।

হাসপাতালে বসে বসে কাইয়ূমের পা বোধহীন হয়ে গেছে। রাত থেকে একটু ঘুমানোর জো নেই। প্রতি ঘন্টায় নার্সরা এসে এসে জ্বালিয়ে গেছে রোগীর কোন রিয়াক্ট হয়েছিলো কিনা, ঘুম থেকে জেগেছিলো কিনা! অসহ্যকর এক যন্ত্রণা এই রিশাদ। রিশাদকে দেওয়ার জন্য দুনিয়ার সব থেকে জঘন্যতম গালিটাই মুখে আসে কাইয়ূমের। কিন্তু এতে করে যথাযথ শান্তি মেলে না তার। সকালের নাশতা করে আবার বসেছে ইভানের বেডের পাশে তখনি রিশাদ উপস্থিত হয় সেখানে। ঠোঁট কুঁচকে আছে তার সাথে কপালটাও। বিরক্তি যেন সবসময়কার মত বাসা বেঁধেছে তার ওই সুকুমার মুখটাতে।

‘এখন কি অবস্থা এর?’ ইভানের দিকে ইশারা করে প্রশ্ন করলো রিশাদ।

‘স্যার, বিপদ কেটে গেছে। ডাক্তার বলেছে বিকেলের মধ্যে চলে যেতে পারবে। তবে রক্ত প্রচুর গেছে খাওয়াতে হবে খুব ওই আনার,দুধ,,,’

কাইয়ূম কথা শেষ করার আগেই রিশাদ তাকে থামিয়ে দিলো। পকেট থেকে কিছু টাকা বের করে কাইয়ূমকে দিলো।’

-তুমি নাস্তা করে চলে যাও। আর হ্যাঁ বিকেলে আরেকবার আসবে এবং কিছু কাজ করবে। সে কাজের খবর যেন কেউ না জানে আর না এই ছেলের খবর।’

কাইয়ূম টাকা নিয়ে সত্যিই চুপচাপ চলে গেল। তার আপাতত থানায় গিয়ে ঘুম দেওয়া ছাড়া কোন কাজ নেই। আবার সন্ধ্যা আসলে কি কাজ বলবে কে জানে! রিশাদের কাজ মানেই আলাদারকম এক প্যারা।

কাইয়ূম চলে যেতেই রিশাদ আবার ডাক্তারকে খুঁজলো যে ইভানের ট্রিটমেন্ট করছে। নার্স জানালো রাতের ডাক্তার সকালেই চলে গেছে। এখন অন্য কেউ চেক আপ করবে সম্ভবত মহিলা কোন ডাক্তার। রিশাদ অপেক্ষা করলো সেই ডাক্তারের এবং ভীষনরকম এক চমকও পেল। সেই ডাক্তার তারই প্রাক্তন স্ত্রী নীলিমার আত্মীয়া। রিশাদ মেয়েটিকে আগেও কয়েকবার দেখেছিলো৷মেয়েটিও অবাক রিশাদকে দেখে তবে লজ্জিতই বেশি অবাকের চেয়ে৷ নীলিমা যা করেছে তা সত্যিই লজ্জাজনক তার পরিবারের কাছে আর মেয়েটিও হয়তো আত্মীয় বলেই লজ্জা পাচ্ছে। মেয়েটির চোখ,মুখে সংকোচ বুঝতে পেরে রিশাদই আগে কথা বলল, কেমন আছেন?’

জ্বী ভালো, আপনি?

আলহামদুলিল্লাহ খুবই ভালো আছি।

আপনার ছেলেটা?

খারাপ থাকার কথা নাকি?

না, না ভুল বুঝবেন না প্লিজ।

‘আচ্ছা! ভুল বুঝছি না। আমার ছেলে ভালো আছে তার মায়ের কাছে।’ এ কথায় যেন চমকালো মেয়েটা।

নীলিমা!

নাতো, নীলিমা আবার কে? আমার স্ত্রী মেহউইশ রায়হান। যাই হোক পরিবার পরিচিতির জন্য আসিনি আমি। এখানে আমার এক রোগী আছে তার সম্পর্কে জানার ছিলো কি অবস্থা এখন?

জ্বী! কি নাম রোগীর?

ইভান।

ওহ, একটু আগেই আমি তার রিপোর্ট চেক করেছি। হাতের একটা শিরা কেটেছে। ভোররাতে নাকি অপারেশন হয়ে গেছে। ভাগ্য ভালো আরো একটা শিরায় আচর লেগেছে কাটেনি৷

‘আর কতক্ষণ হাসপাতালে রাখতে হবে তাকে?’

‘কতক্ষণ না বলুন ক’দিন। দু তিনদিন রাখা জরুরি। নির্দিষ্ট সময়ে চেকআপ চলবে আর ড্রেসিং এরও ব্যপার আছে তৃতীয়দিন।’ মেয়েটা বলে থামতেই রিশাদ ধপ করে সামনে থাকা চেয়ারটায় বসে পড়লো। সে চাইছে যত দ্রুত সম্ভব ইভানকে শহর ছাড়া করতে৷ সে বসা থেকে উঠে ডাক্তারের কেবিন ছেড়ে রিসেপশনে গেল। খুব শিগ্রই সে টাকা ঢেলে ইভানকে সরিয়ে নিলো হাসপাতাল থেকে আর ডাক্তার হিসেবে নীলিমার সেই কাজিনকেই রাখা হলো। হাসপাতাল কতৃপক্ষ টাকার পরিমাণেই সব রিশাদের মনমতো করে দিলো৷ দুপুর গড়াতেই ইভানের পরিবারও খবর জানলো তারাও রিশাদের ঠিক করা জায়গায় গিয়ে ইভানকে দেখতে পেল। আপাতত রিশাদের এক ভাবনা দূর হলো বিকেলে কাইয়ূমকে তার কাজ বুঝিয়ে ইভান রিলেটেড দ্বিতীয় কাজটিও শেষ করবে। তারপরই মোটামুটি রিলাক্স হওয়ার মত একটা সুযোগ পাবে। তার মধ্যেই একটা ট্যুর মুড ফ্রেশ করবে সাথে মেহউইশের পরিবর্তন। ভাবনা গুলো যে দিকে মোড় নিচ্ছে কাজগুলোও সেভাবে এগুলেই হবে।

নতুন নতুন কাপড়ের ভীড়ে মেহউইশ বুঝে উঠতে পারছে না কোন জামাগুলো বাড়িতে পরবে! এত এত কাপড় কি একসাথে সব বাসায় পড়া সম্ভব? এখন না হয় চারটা রেখে বাকিগুলো তুলে রাখবে। কোথাও বেড়াতে গেলে পরা যাবে৷ সন্ধ্যা সন্ধ্যা হয়ে এসেছে বাইরে৷ এখন কাপড় গুছিয়ে আগে নির্জনকে খাওয়াতে হবে। খাওয়ার সময় হয়ে গেছে তার তাই দ্রুত হাত চালাচ্ছিলো কাপড় গুছাতে। তখনি কানে এলো রিশাদের কথা যা সে নির্জনের সাথে বলছে৷

‘ আমরা আজকে বেড়াতে যাবো তাই না বাবা? তুমি কোন ড্রেসটা পরবে বলো তো?’ রিশাদ এমন করে কথাগুলো বলছিলো যেন সে নিজেই তিন চার বছর বয়সী কোন বাচ্চা । মেহউইশের সে কথা কানে আসতেই হাসি পেয়েছে। আবার ভাবছে এইটুকুনি তো পুঁচকো এর আবার কোন ড্রেস? হুহ

‘এ্যাই মেবিশ, সুন্দর করে সেজেগুজে তৈরি হও তো। আমরা এখন বেড়াতে যাবো।’ রিশাদ এমন করে কথা বলছে যেন তার আর মেহউইশের সম্পর্কটা কতোটা স্বাভাবিক। মেহউইশ এ নিয়ে অবাক নয় সে অসহ্যবোধ করছে তার নামকে এমন বিকৃত করার কারণে। মেহউইশের অর্থই পাল্টে দিচ্ছে এই লোক। কিন্তু কিছু বলারও সাহস হয় না। নিজের কি এক নাম তার নামকে এমন বিকৃত করলে কেমন লাগবে! রিশাদ, রশিদ, রশি! ধ্যাৎ, এই শয়তানের দাদার তো নামও বিকৃত করা যায় না। রিশাদের নামের ব্যঙ্গ করতে না পেরে খুব যেন মনঃক্ষুন্ন হলো মেহউইশের । তার মুখের বিষন্নতা দেখে রিশাদ এসে তার কাঁধ ছুঁলো।

‘ কি হলো! বললাম না বেড়াতে যাবো তৈরি হও। কথা কি একবার বললে কানে যায় না?’ শেষের বাক্য বলার সময় রিশাদের চেহারা কঠিন হয়ে এলো হঠাৎ করেই। মেহউইশ ভয় পেল সে দ্রুত ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখা কাপড় থেকে একটা উঠিয়ে বাথরুমের দিকে যাচ্ছিলো। রিশাদ বাঁধা দিলো এবং একটা শাড়ি কিনেছিলো কাল সেটা পরতে বলল। এখানে আর কথা বলার জো নেই ভেবে মেহউইশ সেই শাড়ির পুরো সেট উঠিয়ে বাথরুমে ঢুকলো। শাড়ি পরা হয়ে গেলে আর বাথরুম থেকে বের হতে পারলো না সে৷ এ কেমন ব্লাউজ! স্লিভলেস পোশাক সে জীবনে পরেনি আর এ শাড়ি তো, ছিহ! মেহউইশ বাথরুমে যাওয়ার পরই রিশাদ আয়াকে ডেকেছিলো নির্জনকে তৈরি করতে। নির্জনকে তৈরি করে আয়া নিচে নিয়ে যেতেই রিশাদও তৈরি হয়েছে। চুল পরিপাটি করতে করতে হাতের ঘড়ির দিকে তাকালো। এক ঘন্টারও বেশি হলো মেহউইশ বাথরুমে ঢুকেছে। এতক্ষণ সে করছে ওখানে? চিন্তা হলো নাকি ভয় কে জানে শুধু মনে হলো মেয়েটা পালানোর সুযোগ না পেয়ে বাথরুমে সুইসাইড করলো নাতো!

‘এ্যাই মেয়ে দরজা খোল। বাইরে এসো।’ রিশাদের ডাকে সাড়া দিলো না মেহউইশ। রিশাদ দরজায় ঠক ঠক করে শব্দ করলো তবুও নিঃশব্দ ওপাশ। এবার ভয়ই শুরু হলো রিশাদের যেন সে অস্থির হয়ে ডাকতে লাগলো।

মেবিশ, এ্যাই মেবিশ! এতক্ষণ ধরে বাথরুমে কি করো? দরজা খোল জলদি। এ্যাই মেয়ে, হোয়াই ডোন্ট ইউ কাম আউট ড্যাম! ওপেন দ্য ডোর ফাস্ট। দরজা খোল বলছি কি হলো শুনতে পাও না? ভয় থেকে এবার রাগ চড়াও হলো আর তখনি মনে পড়লো বাথরুমের দরজারও চাবি আছে। ভেতর থেকে লক হয়ে গেলে ওটা ওই চাবির মাধ্যমে খোলা সম্ভব । চট করেই চাবি নিয়ে বাথরুমের দরজা খুলল রিশাদ ততক্ষণে রাইমা আর অন্য কাজের লোকেরাও চিৎকার শুনে দোতলায় উঠে এসেছে। কিন্তু কেউ ঘরে ঢোকার সাহস করেনি। বাথরুমের দরজা খুলেই রিশাদের রাগের গতি দ্বিগুণ হারে বেড়ে গেল। চুপচাপ শাড়ি পেঁচিয়ে দাঁড়িয়ে আছে মেহউইশ। কোথাও কোন সুইসাইড করার মত সরঞ্জাম চোখে পড়লো না রিশাদের। বিষম ক্রোধে প্রশ্ন করলো, ‘এত যে ডাকলাম জবাব দিস নি কেন?’

মেহউইশ নিরুত্তর তাই রিশাদ আবারও প্রশ্ন করলো, ‘তৈরি তো হয়েছিসই তবুও বের হচ্ছিলি না কেন?’ ধমকে উঠলো রিশাদ। এবার আর ভয়ে চুপ থাকতে না পেরেই বলল, ‘ব্লাউজে স্লিভ নেই আমি এমন কাপড় পরতে পারি না।’ কাঁপা আর ভাঙা ভাঙা উচ্চারণে মেহউইশ কথাটা বলতেই রাগে রিশাদ মেহউইশের সামনে দাঁড়িয়ে এক হাত পেছনে নিলো। মেহউইশের পিঠের ওপর থাকা ব্লাউজের কাপড়টা খুব জোরে টেনে ছিঁড়ে সে সোজা বাথরুমে থেকে বেরিয়ে গেল। আর মেহউইশ তো রিশাদের কাজে ভয় ভুলে অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো।

চলবে

#মন_গহীনের_গল্প
পর্ব-৮
#রূবাইবা_মেহউইশ
__________________
জড়সড় হয়ে বসে আছে মেহউইশ রিশাদের পাশে৷ তার কোলে নির্জন ঘুমুচ্ছে। রিশাদ ড্রাইভ করছে রাগে তার মুখ এখনও থমথমে। চোয়াল শক্ত হয়ে যেন মুখের ভেতর দাঁতগুলো ভেঙে চুরমার করে দিচ্ছে। বাড়ি থেকে প্রায় কুঁড়ি মিনিটের রাস্তা অতিক্রম করতেই গাড়ি বাঁক নিলো মেইন রোড ছেড়ে৷ কৌতূহল তো অনেক হচ্ছে কিন্তু জিজ্ঞেস করার সাহস হচ্ছে না তারা যাচ্ছে কোথায়। একটা গলি পেরিয়ে সুন্দর একটি গেইটের সামনে এসে হর্ন দিতেইভেতর থেকে দাড়োয়ান গেইট খুলে দিলো। গাড়ি ভেতরে গিয়ে থামতেই নির্জন জেগে গেল৷ মেহউইশ আশ্চর্য হলো, এতটুকু বাচ্চাও কি টের পেল গাড়ি থেমেছে! রিশাদ আগে নামলো তারপর অপর পাশের গেইট খুলে মেহউইশের কোল থেকে নির্জনকে নিয়ে নিলো৷ মেহউইশ গাড়ি থেকে নেমে শাড়িটা একটু ঠিক করে নিলো। কোথায় এসেছে, কার বাড়িতে তা জানে না৷মেহউইশ খুব ভালো করে খেয়াল করলো বাড়িটা একতলা আর দারুণ। সামনেই গাড়ি বারান্দা এবং দু’পাশে কিছু ফুলগাছ লাগানো। বাড়ির পেছন দিক থেকে দু তিনটা নারকেল গাছের পাতা চোখে পড়ছে। হয়তো গাছ আছে পেছনে। সামনের লনটুকু আবার ছোট ছোট সবুজ ঘাসভর্তি। এত গোছানো বাড়ি মেহউইশ খুব কমই দেখেছে। প্রথমবার সে রিশাদদের বাড়ি দেখলো অত বড় আর অত সাজসজ্জায় ভরপুর৷ আর এই বাড়িটা ওই বাড়ির তুলনায় অনেক ছোট কিন্তু সাজানো। রিশাদ নির্জনকে নিয়ে এগিয়ে যেতে যেতে একজন লোক বেরিয়ে এলো ভেতর থেকে। হাতে কিছু যন্ত্রপাতি আর একটা ব্যাগ। বোঝা গেল লোকটা কোন মিস্ত্রি হবে কিছু ঠিক করেছে।রিশাদকে দেখেই লেকটা সালাম দিলো।

-কলিংবেল লাগানো হয়ে গেছে?

-জ্বি স্যার।

ভেতরের ঘরের কি কি যেন বাকি ছিলো?

স্যার, সবকিছু কাল রাতেই আমি দুজন ছেলেকে নিয়ে এসেছিলাম সব ঠিক করা হয়েছে।

-তোমার টাকা পয়সা ক্লিয়ার না?

‘জ্বি স্যার’ বলতেই রিশাদ চলে গেলো ভেতরে। মেহউইশের মনে হলো এই বাড়িটা হয়তো রিশাদেরই আর আজ এখানে আসবে বলেই সব ঠিকঠাক করিয়েছে। সদর দরজার সামনে দাঁড়িয়ে রিশাদ ডাকলো, ‘ মেবিশ! পায়ে কি সমস্যা?’

-‘কোন সমস্যা নেই ‘ ভয়ে ভয়ে উত্তর দিলো মেহউইশ।

‘তো এমন পিঁপড়া সেজে হাঁটা হচ্ছে কি জন্য শুনি?’ ব্যঙ্গাত্বক সুরেই বলল রিশাদ তারপরই কলিং বেল টিপলো।ওপাশ থেকে মাইমুনা দরজা খুললেন। রিশাদ কোন কথা না বলেই ভেতরে চলে গেল আর মা মেয়ে দুজনেই দুজনকে দেখে বিষ্মিত। মাইমুনা ভাবেনি রিশাদ আজ মেহউইশকে আনবে। আর মেহউইশ ভাবছে মায়ের সাথে রাগ করা উচিত কিনা। অভিমান তো তার আগেই হয়েছিলো এবার কি রাগটাও হচ্ছে কিনা সে বুঝতে পারছে না। পরিস্থিতি তাদের বাকহীন করে দিয়েছে। মাইমুনা ছলছল চোখে মেহউইশের দিকে এগিয়ে এলে মেহউইশ পাশ কাটিয়ে ভেতরে চলে গেল। অভিমানে মায়ের দিকে তাকানোটাও কষ্টকর মনে হলো।

মিহাদ খুব একটা খুশি হলো না রিশাদকে দেখে। মাইমুনার হাত পা চলছে না কোন এক অজানা ভয়ে । নিয়মানুসারে বিয়ের দ্বিতীয় দিনই মেয়ে আর জামাইকে আনতে হয় মেয়ের বাড়িতে। কিন্তু রিশাদ যেভাবে বিয়ে করেছে তাতে কোন প্রকারই নিয়ম মানা হয়নি। জোরজবরদস্তির এক বিয়ে এটা যার মূল্য হয়তো কারো কাছেই নেই। রিশাদের নিজের কাছেও নেই। নিজ স্বার্থ উদ্ধারের জন্য মানুষের অসহাত্বকে কাজে লাগানোটা কখনোই মহৎ কাজ হতে পারে না আর তার ফলও কখনও উত্তম হয় না।আর এই নিয়মনীতিহীন বিয়ে নিয়ে আলাদাভাবে কিছু করারও স্বাদ হলো না মাইমুনার। মেয়ে এসেছে তা ভেবে কিছু আলাদা না করলেও পেটের চাহিদা পূরণে রান্না করতেই হবে তাই তিনি রান্নাঘরে ঢুকলেন। এখানেও রিশাদের রাজত্ব।রান্নাঘর ভর্তি রান্নার সামগ্রী,বাজার সদাই সবই রিশাদ পাঠিয়েছিলো লোক দিয়ে। কৃত্রিম হাসির ফোয়ারা ঠোঁটে এনে রান্নার প্রস্তুতি নিতে লাগলেন তিনি।

মেহউইশ এক পলকে বসারঘরটা দেখে নিলো। তাদের আগে দু কামরার ফ্ল্যাটে কোন আলাদা করে বসার ঘর ছিলো না। সরু একটু জায়গা যা দু ঘর, বাথরুম আর ছোটো রান্নঘরটায় ঢোকার দরজার জন্য ছিলো। এছাড়া বারান্দা কিংবা বসার ঘরের জায়গা ছিলোই না। আর এই বসার ঘরটা ওই দু ঘরের সমান৷ আর দরজা দেখে মনে হচ্ছে এখানে তিনটা বেডরুমও আছে একটা রান্নাঘর আরেকটা বাথরুম৷ তারমানে এই লোক আমাকে কিনেছে বিয়ের নাম করে! চোখ পড়লো সোফার ওপর। এখানে দারুণ সোফাসেটও আছে। সেখানেই বসে আছে রিশাদ আর তার কোলে নির্জন। মনের যত বিতৃষ্ণা মূহুর্তেই গিয়ে জমা হলো ওই ছোট্ট কোমল মুখটির ওপর। গত দুদিনে প্রচণ্ড মায়া লাগতো এই ভেবে, বেচারা মা থাকতেও মা হারা। কোটি কোটি টাকার উত্তরাধিকারী হয়েও এ বয়সে তার মায়ের স্নেহের অভাব। মায়ের বুকে লুকিয়ে উষ্ণ,মোলায়েম স্পর্শ পাওয়ার জায়গায় বাবার শক্ত,কঠিন বুকে থাকতে হচ্ছে । বড্ড খারাপ লেগেছিলো বাচ্চাটার জন্য এখন সেই খারাপ লাগা রাগে পরিণত হচ্ছে । শুধুমাত্র এই বাচ্চার মায়ের অভাব ঘোচাতেই রিশাদ তাকে জোর করে বিয়ে করেছে।

‘ওখানে দাঁড়িয়ে কি করছো? ঘর চেক করো খালি কোনটা আছে নির্জন ঘুমিয়ে পড়বে।’

রিশাদের কথায় ঘোর কাটে মেহউইশের। সে দৃষ্টি সরিয়ে নেয় নির্জনের উপর থেকে। তিনটা ঘরের প্রথমে যে ঘরে ঢোকে সে ঘরে বসে আছে মিহাদ। মেহউইশ ঘরে ঢুকেই মিহাদ বলে ডাকলো। হাতের মুঠোয় ছোট্ট একটা কৌটা তার। মেহউইশের ডাকে কৌটোটা দ্রুত পকেটে ঢুকিয়ে বোনের দিকে তাকালো। এই প্রথম একসাথে তিনদিন পর দেখলো দু’ ভাই বোন দুজনকে৷ বুঝোার বয়স হওয়ার পর তারা কখনো কোথাও দূরে যায়নি কেউ কাউকে রেখে। মেহউইশ নার্সিং এ ঢোকার পর কখনও কখনও হাসপাতালে নির্দিষ্ট সময়ের বাইরেও কাজ করেছে কিন্তু তখনও তাদের দেখা হয়েছে। মিহাদ তার জন্য খাবার নিয়ে যেত হাসপাতালে কিন্তু এবার সবটা অন্যরকম৷ ডুকরে কেঁদে উঠলো মিহাদ । মেহউইশ দু পা এগিয়ে ভাইকে জড়িয়ে ধরলো। নিজেও কান্না করে দিলো এবার। কিছুসময় কান্নার মাঝে কাটলো এরপর মিহাদই প্রথমে কথা বলল, ‘ ইভান ভাইয়া তোমার খোঁজ করছিলো।’

‘ইভান এসেছিলো এখানে?’

‘সে খবর না হয় আমি দিচ্ছি? আপাতত আমার ছেলের জন্য বিছানা ঠিক করে কৃতার্থ হবো বেগম সাহেবা।’ দরজায় দাঁড়িয়ে ব্যঙ্গ করেই বলল রিশাদ। মেহউইশ নিজের চোখমুখ মুছে বের হলো মিহাদের ঘর থেকে আর তার পাশের ঘরটাতে বিছানা ঠিক করলো। সমস্যায় পড়লো এখানে ছোট ছোট বালিশ নেই যা নির্জনের মাথা রাখার জন্য উপযোগী হবে। রিশাদ নিজেও বুঝলো ভুল হয়েছে এভাবে চলে আসা। মেহউইশ পুরো ঘরে এদিক ওদিক তাকিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল৷ মেজাজ খারাপ হলো রিশাদের, কোথায় একটা বালিশের ব্যবস্থা করাবে তা না! দু মিনিট পর আবার ফিরে এলো মেহউইশ হাতে তার গোল করে ওড়না পেঁচিয়ে রাখা।

কি এটা!

বালিশ।

ফাইজলামি করা হচ্ছে আমার সাথে?

মোটেই না। মা এটাকে পেঁচিয়ে দিয়েছে। এভাবেও নাকি বাচ্চাদের শোয়ানো যায়। মাথার সাইজও নাকি ঠিক থাকে এতে করে বাচ্চাদের।

মেহউইশের কথাটা এবার সত্যিই ফাইজলামি মনে হলো রিশাদের । মাথার সাইজ ঠিক হবে এই পেঁচানো কাপড়ে ঘুমিয়ে! তাহলে ডাক্তাররাই বলে দিতো বাচ্চাকে এভাবে শোয়াতে। যত্তসব লো ক্লাস ধ্যান,ধারণা। বিড়বিড় করতে লাগলো রিশাদ ততক্ষণে মেহউইশ বিছানার মাঝখানে পেঁচিয়ে রাখা ওড়নাটা রেখে দিলো। রিশাদের কোল থেকে নির্জনকে নিয়ে সেখানেই শুইয়ে দুটো বালিশে নির্জনের দু পাশে ঘেরা দিলো। যেন দু পাশে দুটো দেয়াল তুলে দেওয়া হয়েছে তাকে নিরাপদে রাখতে। গাড়িতে কাপড়ের ব্যাগ রয়েছে দুটো৷ একটা নির্জনের প্রয়োজনীয় সকল জিনিস অন্যটাতে রিশাদের। মেহউইশের কোন কিছু নিয়ে আসেনি। রিশাদ ইচ্ছে করেই দেয়নি কিছু নিতে। অযথা সময় নষ্ট করবে এমনিতেই এই মেয়ে যা কচ্ছপের গতিতে চলে! তার বাড়িতে নিশ্চয়ই কাপড়চোপড় আছে নিজের সেগুলোই পড়তে পারবে৷ রিশাদ টের পাচ্ছে তার রাগ এখন যথেষ্ট নিয়ন্ত্রণে। তাই এই ঠিক মুডেই থাকতে চায় বলে মেহউইশকে সুন্দর করে বলল, ‘গাড়িতে পেছনের সিটে আমাদের ব্যাগ আছে নিয়ে আসো তো জলদি। আমি ফ্রেশ হবো।’ মেহউইশ বোকার মত তাকিয়ে রইলো রিশাদের দিকে। ব্যাগ বলতে রিশাদ যা বোঝাচ্ছে তা মেহউইশের জন্য মোটেও ব্যাগ নয় সে দুটো ট্রলি ব্যাগ। আর ওই দুটোর মধ্যে ছোট যেটা সেটা নির্জনের আর তার ওজন মেহউইশ উঠাতে গেলে কাত হয়ে পড়বে। আর বলে কিনা রিশাদেরটাও আনতে!

কি হলো? হা করে আছো কেন! যাও জলদি আনো।

‘জ্বি’ বলেই মেহউইশ বেরিয়ে গেল। রিশাদ আসার সময় ভি নেক টি শার্টের ওপর একটা ব্লেজার চাপিয়ে চলে এসেছিলো। এখন ব্লেজারটা খুলে বিছানার ওপর রেখে প্যান্টের পকেটে হাত দিলো গাড়ির চাবি বের করতে। তখন খেয়াল হলো চাবি ছাড়া মেহউইশ গাড়ি খু্লবে কি করে! ধ্যাৎ বলে নিজের ওপরই বিরক্তি প্রকাশ করে সেও বের হলো ঘর থেকে। গাড়ির কাছে গিয়ে চারপাশে তাকালো, মেহউইশ নেই সেখানে। হঠাৎ চোখে পড়লো গেইটের সামনে দাড়োয়ানও নেই। কেন যেন তার একটু সন্দেহ হলো। গাড়ি না খুলে সে গেইটের দিকে এগোলো। গেইট পেরিয়ে রাস্তায় তাকাতেই চিত্ত জ্বলে উঠল। যা সে চাইছিলো না তাই হলো। তীক্ষ্ণ নজরে রাস্তার দিকে তাকিয়ে নিজেকে সতর্ক করতে লাগলো, ‘নো রিশাদ নো।’

রগচটা মানুষ যতোটাই চেষ্টা করুক না কেন উত্তেজনা তাদের অতো সহজে ছাড় দেয় না। রিশাদের ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। রাস্তার বিপরীত পাশের ব্যক্তিকে দেখতেই মাথায় খুন চড়ে বসলো। মেহউইশের নজরও গেইটে পড়ায় সে দেখতে পেল রিশাদকে। ভয়ে তারও অন্তরাত্মা কেঁপে উঠেছে রিশাদের চোখ, মুখের কাঠিন্যতা টের পেতেই। সাঁই করে সামনে দিয়ে একটা মাইক্রো চলে যেতেই রিশাদ দ্রুতবেগে রাস্তা পার হলো এবং তৎক্ষনাৎ মেহউইশের সামনে থাকা ব্যক্তিটির গলা চেপে ধরলো।

চলবে