মন গহীনে পর্ব-১৬

0
441

#মন_গহীনে

#পর্বঃ১৬

#দোলন_আফরোজ

খাটের উপর বসে আছে তিথী। কোনো নড়চড় নাই, মনে হচ্ছে মানুষ না, কোনো পাথর বসে আছে। তার পাশেই বসে আছে হিয়া। হাজার টা কথা বলছে হিয়া, তার কোনো উত্তর ই দিচ্ছে না সে, চোখ দিয়ে পানিও পড়ছে না। শুধু ভাবছে ওর বাবা মা কিভাবে ওর সাথে এটা করতে পারলো। কোনো দিন ও আর ওদের মুখ দেখবে না সে, আর না কাব্য কে কখনো মেনে নিবে। যার জন্য তার সুন্দর হাসিখুশি জীবন টা পদে পদে নরক যন্ত্রণা ভোগ করেছে, লোকের বাঁকা চোখে তাকানো দেখেছে, তাকে দেখলেই লোকেরা নিজেদের মধ্যে কানাঘুষা শুরু করেছে কোনো দিন ও সে তাকে ক্ষমা করবে না।
কিছুক্ষণ আগে ঘটে যাওয়া ঘটনা টা তার পুরো জীবন পালটে দিয়েছে নিমিষেই। চোখ দুটো বন্ধ করে ভাবতে থাকে সেই অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা গুলো।

তখন কাব্য ঘর থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর সে বার বার করে বলেছে আমি কিছুতেই ওই ভিলেন টা কে বিয়ে করবো না, আর না ক্ষমা করতে পারবো ওকে কোনো দিন। আমি শুধু এতোদিন চুপ করে ছিলাম আপুটির কথা ভেবে, এখন তো আর সেই চিন্তা নেই। আপুটির তো বিয়ে হয়ে গেছে, ওই ভিলেন টা চাইলেও আর কিছু করতে পারবে না।
আমি কোনো দিন করবো না ওকে বিয়ে।
তানিয়া বেগম শাহানারা বেগম অনেক বুঝিয়েছে, কোনো কাজ হয়নি। তখন শাহানারা বেগম ছুটে যান ছেলের কাছে।

একটু বুঝার চেষ্টা কর বাবা, একটু সময় দে তিথীকে। সে কিছুতেই বিয়ে করতে রাজি হচ্ছে না।

সময় দেয়ার সময় টাই যে আমার নাই মা। আমি আর কোনো রিস্ক নিতে চাই না ওকে নিয়ে। ওর ভালো মন্দ যা হবে সবটা আমার সাথে থেকেই হবে। ওর রাজি হওয়ার দরকার নাই, জোর করেই বিয়ে করবো আমি।

এতে কিন্তু ভালোর চেয়ে খারাপ টাই বেশি হবে।

হলে হবে, আমি আমার ভালোবাসা দিয়ে সবটা ঠিক করে দিবো, তবু আর একা ছাড়ছি না। বলেই উঠে তিথীর কাছে যায়।

তিথী এখনো মাকে জড়িয়ে ধরে আছে আর বার বার বলছে,আম্মু আমি ওই কাবির সিং কে বিয়ে করবো না। প্লিজ আম্মু মেরে ফেলো আমায়, তবু বিয়ে দিও না।

তানিয়া বেগম মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন। সোনা মেয়ে আমার, তুই কাব্য কে ভুল বুঝছিস। কাব্য মানুষ টা খুব ভালো, হুম তোর সাথে খুব অন্যায় করেছে।আমি তার শাস্তি ও দিয়েছি ওকে। তোকে অনেক ভালো রাখবে, অনেক ভালোবাসবে মা।

চাই না আমার ওই খারাপ লোক টার ভালোবাসা। আমি বিয়ে করবো না আম্মু।

না মা, কাব্য খারাপ না। তোর ও কিছু ভুল ছিলো আর তার ই বিপরীতে সে অনেক বড় অন্যায় করেছে, তার শাস্তি পেয়েছে।আর এভাবে তোকে বার বার হেনস্তা হতে হবে, যা আমি কিছুতেই হতে দিবো না।

আচ্ছা ঠিক আছে, আমাকে নিয়ে তোমাদের চিন্তা করতে হবে না। মুখ তুলে দুইহাতে চোখের পানি মুছে উঠে দাঁড়িয়ে, মরে যাবো আমি তবু বিয়ে করবো না ওকে। বলেই দৌঁড় লাগায় বাইরের দিকে।

তখনই কাব্য ধরে ফেলে ওকে।কোথায় যাচ্ছো হ্যাঁ?

হাত মোচড়াতে মোচড়াতে, হাত ছাড়ুন আমার। খু*ন করে ফেলবো কিন্তু!

খু* ন হতেই চাইছি আমি। যা খুশী করো, তবে সবটা আমার সাথে থেকেই।

কোনোদিন ও বিয়ে করবো না আপনাকে। মরে যাবো তবুও না।

এক টানে তিথীকে নিজের সাথে মিশিয়ে নিয়ে, চোখে চোখ রেখে, বলেছি না যা খুশী করো, তবে সবটা আমার সাথে থেকে। মরবে বলছো? বেশ, দুজন এক সাথেই মরবো। বলেই কোলে তুলে নেয় তিথীকে।
তানিয়া বেগম কে বলে, আর রেডি হওয়ার দরকার নাই, এভাবেই বিয়ে করবো। চাচাকে বলো সব রেডি করতে। বলে তিথীকে নিয়ে বাইরে আসে।

এদিকে তিথী ছুটার জন্য ছটফট করছে, কাব্যর ঘাড়ে গলায় ওর নখ বসিয়ে দিয়েছে। এতে কাব্যর কোনো হেলদোল নেই।

কাজি এসেছে বিয়ে পড়াতে, তারেক রহমান বলেন আর কিছুটা সময় দিই আমরা তিথীকে।

কাব্য বলে এখন আর সময় দেয়ার সময় নেই। পরিস্থিতি এমনিতেই বিগড়ে গেছে,এর চেয়ে খারাপ হোক তা আমি চাই না।তারপর আর কেউ কোনো কথা বলেনি। তিথীর না টা শুনেনি ওর আব্বু আম্মু। তখন থেকেই তিথী পাথর হয়ে গেছে। আর কোনো ছটফট নাই, কান্না ও করেনি আর। এমনকি চোখ দিয়ে দু ফোটা পানি ও পরেনি।

এভাবেই বিয়েটা হয়ে যায়। মেয়ে বিদায়ের সময় তানিয়া বেগম কয়েকবার সেন্সলেস হয়ে যান, আজ যে উনার ঘর খালি। দুই মেয়ের বিদায় ই এক সাথে হচ্ছে।
তমা মা বাবা কে জড়িয়ে ধরে খুব কাঁদছে। তারেক রহমান এর বুক টা ফেটে যাচ্ছে। মেয়ে দুটো যে উনার কলিজার টুকরা। তমা টা সব সময় লক্ষি মন্ত মেয়ে। মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে দোয়া করে দেন আর সবাইকে আগলে রাখার পরামর্শ দেন।
আবিরের হাত ধরে তার হাতে তমাকে দিয়ে বলে, বাবা তমা আমার বরাবর ই লাজুক মেয়ে, কোনো দিন মুখ ফুটে কিচ্ছুটি চায়নি আমার কাছে, তবু তাদের কোনো অভাব রাখিনি আমি। আমি জানি সে তার সবটা দিয়ে তোমাদের ভালো রাখার চেষ্টা করবে, ওকে বুঝার চেষ্টা করো বাবা। ওর কোনো ব্যবহার এ খারাপ লাগলে বুঝিয়ে বলো, সে শুধরে নেয়ার চেষ্টা করবে।

আপনি কোনো চিন্তা করবেন না বাবা, হয়তো আপনার মতো ভালো রাখতে পারবো না, তবে আমি তাকে আমার ছোট্ট সাম্রাজ্যের রাণী করে রাখবো।

এদিকে তিথী এখনো পাথর হয়েই বসে আছে। তমা ওকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছে, তবু হু হা শব্দ পর্যন্ত করেনি। নড়েনি পর্যন্ত।

তানিয়া বেগম মেয়েকে বুকে জড়িয়ে ধরে রেখেছেন। তিথী ধরেনি পর্যন্ত। তানিয়া বেগম এর কলিজাটা যেনো কেউ ছিড়ে নিয়ে যাচ্ছে। মেয়েকে জড়িয়ে ধরে বিলাপ পেরে কান্না করছে। তোর ভালোর জন্য করেছিরে মা, আজ না বুঝলেও একদিন ঠিক বুঝবি।তবুও তিথী কোনো শব্দ করেনি।

কাব্য দের ও যাওয়ার সময় হয়ে গেছে, শাহানারা বেগম আর হিয়া তিথীকে নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। তিথী যেনো নিজের মাঝেই নেই।তারেক রহমান মেয়েকে বুকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছেন আর বলছেন, আজ যে তোর ও বিদায় হয়ে যাবে তাও এভাবে, ভাবতেও পারিনি।

তিথীর হাত টা কাব্যর হাতে দিয়ে, বাবা আমার এর মেয়েটা খুবই জেদি, কিন্তু মনটা ভিষণ নরম, ও সংসার করা বুঝে না বাবা, হয়তো খুব জ্বালাবে তোমায়, কিন্তু দেখো যদি ভালোবাসতে পারে তোমায় তবে তার সবটা দিয়ে ভালোবাসবে। মেয়েটা আমার ভিষণ আদরের, হুটহাট এটা সেটা আবদার করে বসে, বিরক্ত হয়ো না বাবা। আগলে রেখো ওকে।

আমার আমিটাকে নিয়ে যাচ্ছি চাচা, জীবন দিয়ে আগলে রাখবো। কথা দিচ্ছি ওর সব পাগলামি হবে আমাকে ঘিরে, আপনি কোনো চিন্তা করবেন না।
বলে গাড়িতে উঠে যায় ।

তারেক রহমান শাহানারা বেগম এর হাত ধরে বলে, তিথীকে নিয়ে আমার অনেক চিন্তা ভাবি, ওর ভুল গুলো ক্ষমার চোখে দেখবেন।

আপনি কোনো চিন্তা করবেন না ভাই। কাব্য যেমন আপনাদের ছেলে, তিথী ও তো তেমনি আমার মেয়ে। আমার মেয়েকে আমি আগলে রাখবো।

****************

কাব্য ঘরে আসতেই হিয়া উঠে চলে যায়। তিথী এখনো ওভাবেই আছে, চোখ বুজে। কাব্য এসে ওর পাশে বসে। তখন শাহানারা বেগম খাবার হাতে ভিতরে আসেন।

মেয়েটা বিয়ে বাড়িতেও খায়নি, আসার পর থেকেই বলছি,খাবার নিয়েও এসেছিলাম,খায়নি।দেখ তুই কিছু খাওয়াতে পারিস কিনা। বলে খাবার দিয়ে উনি চলে যান।

কেনো কথা শুনছো না? বলে হাত দুটো ধরতে গেলে ছিটকে দূরে সরে যায় তিথী। প্রায় কয়েক ঘন্টা পর সে নড়লো।

একদম কাছে আসবেন না আমার। কাছে ঘেষার চেষ্টা ভুলেও করবেন না। কোনো দিন ও মেনে নিতে পারবো না আপনাকে আমি। জুতো মেরে গরু দান করতে এসেছেন। নিজেই আমায় অপবাদ দিয়ে আবার ওই অপবাদ ঘুচানোর জন্য আমার এতো টেককেয়ার করলেন এই কতোদিন আর এখন বিয়েও করেনিলেন?

কাব্য তিথীর সামনে হাটু গেড়ে বসে ওর হাত দুটো নিজের হাতে নিয়ে বলে, আমার চোখের দিকে তাকাও।
শুধু কি আমার অপরাধ আর অপরাধ বোধ টাই দেখতে পাচ্ছো? এ চোখে কি সত্যিই কোনোদিন ভালোবাসা দেখতে পাওনি?

কিছুক্ষণ হাত ছাড়ানোর জন্য ছটফট করে,হঠাৎ ই থেমে যায় তিথী। কি জানি আছে এই দুটো চোখে। আগে কখনো সে অমন ভাবে তাকায়নি এই চোখ দুটোতে। খুব বিশ্বাস করতে ইচ্ছে করছে কাব্য কে। কিন্তু নাহ, তা করলে তো হবে।
কিচ্ছু দেখতে পাইনা আমি, আর দেখতে চাই ও না।
ছাড়ুন আমায়। বলেই এক ঝটকায় হাত ছাড়িয়ে নেয়।

আচ্ছা কিচ্ছু দেখতে হবে না। খাওনি কেনো?

খাবো না আমি।

এখন কিন্তু আমি রাগ করবো। বকবো খুব। আর মারতেও পারি,হুম।

আর নিজেকে ধরে রাখতে পারে না তিথী। অনেকক্ষণের আটকে রাখা কান্নাটা ছেড়ে দেয় সে। হুম, তাই তো করবেন। এসব শাস্তি দেয়ার জন্য ই তো বিয়ে করেছেন আমাকে। জানি না আমি এসব। আপনি খুব খারাপ, খুব বাজে লোক।আমি থাকবো না এখানে, চলে যাবো। আব্বু আম্মুর কাছেও যাবো না। অনেক দূরে কোথাও চলে যাবো।

তৎক্ষনাৎ তিথীকে বুকে জড়িয়ে নেয় কাব্য। কোথাও যেতে দেয়ার জন্য ই কি এতো বছর এই বুকে আগলে রেখেছি তোমায়।

অবাক হয়ে তাকায় তিথী। এতো বছর মানে?

সব জানবে, আগে লক্ষি মেয়ের মতো খেয়ে নাও,বলে খাবার এর প্লেট থেকে খাবার নিয়ে তিথীর সামনে ধরে।
প্রথম কয়েকবার না করে বাধ্য হয়েই খাবার মুখে নেয় তিথী। কিন্তু দুই লোকমা খেয়ে আর খেতে পারে না,গলা দিয়ে খাবার নামে না।একদম ই পছন্দ করে না সে কাব্য কে। কিন্তু কাছে এলে কি যেনো হয়ে যায়, দূরে সরাতে পারে না, না চাইতেও কেনো যেনো কাব্যর সব কথা শুনে সে।

তিথীর এঁটো খাবার টা কাব্য খেয়ে নেয় অনায়াসেই। তিথী আরেক দফা অবাক হয় তাতে।
কাব্য সেদিকে পাত্তা না দিয়ে এক মনে খেয়েই যাচ্ছে।খাওয়া শেষ করে হাত ধুয়ে এসে তিথীর সামনে কয়েক টা প্যাকেট ধরে বলে, এগুলোতে তোমার জন্য কিছু জামা কাপড় আছে,ড্রেস চেঞ্জ করে ফ্রেশ হয়ে এসে ঘুমিয়ে যাও।

তিথীর মনে হয় সে কেনো কাব্যর সব কথা শুনছে? মোটেও শুনবে না সে এই বদ লোকটার কথা। তাই সে বলে, ড্রেস চেঞ্জ করবো না আমি। ঘুমাবো এখন। আপনি যান এখান থেকে।

কাব্য অবাক হয়ে তাকায়। কোথায় যাবো আমি?

কেনো? আপনাদের বাসায় কি আর রুম নেই?

থাকবে না কেনো? আছে তো।

তবে ওখানেই যান।

এটা আমার ঘর, আর আমি আমার ঘর ছাড়া অন্য কোথাও ঘুমাতে পারি না।

তবে আমাকেই আরেক টা ঘর দেখিয়ে দিন।

বললেই হলো? আমার বউ,আমার ঘরেই থাকবে আর আমার সাথেই থাকবে। চুপচাপ শুয়ে পরো।

বউ কথাটা শুনে তিথীর সারা শরীর কেমন যেনো করে উঠলো। ভালো লাগা নাকি খারাপ লাগা বুঝতে পারছে না সে। তাই আর কথা না বাড়িয়ে চুপচাপ শুয়ে পরে ।

কিন্তু সমস্যা বাধে যখন কাব্য শুতে আসে। আ আপ আপনি এখানে কেনো?

তো কোথায় থাকবো আমি?

অন্য কোথাও।

হ্যালো ম্যাম, হিন্দি সিরিয়াল এর মতো আমার রুমে কোনো সোফা কিংবা ডিভান নেই, তাই আমার এখানেই ঘুমাতে হবে।বলেই সে শুয়ে পরে।

তিথী খাটের এক কোণে চুপটি মেরে বসে আছে। তা বুঝতে পেরে কাব্য বলে আমাদের বাসায় কিন্তু মাঝরাতে ভুতের আনাগোনা হয়। আর কিছুক্ষণ বসে থাকো, দেখা পেয়ে যাবে তাদের।বলেই কাথা দিয়ে মুখ ঢেকে ঘুমের ভাব ধরে।

তিথী কিছুক্ষণ ওভাবেই বসে থেকে কাব্য অনেকটাই কাছ ঘেঁষে শুয়ে পরে। কাল রাতেও ঘুম হয়নি,তাই কিছুক্ষণের মাঝেই ঘুমের রাজ্যে পারি দেয় সে।

এদিকে কাব্যর চোখে ঘুম নেই, তার প্রেয়সী, তার পুতুল বউ, যাকে এতো গুলো বছর মন গহীনে লুকিয়ে রেখেছিলো, নিজের মতো করে কল্পনার রঙে রাংগিয়েছিলো সে আজ সত্যিই তার বউ, তার ছোট্ট পুতুল বউ।
ড্রিম লাইটের আবছা আলোয় কি অমায়িক লাগছে তিথীকে।কাব্য তার গালে বুড়ো আংগুল বুলাতে থাকে। তুমি আমার কল্পনার থেকেও সুন্দর পুতুল বউ।

তিথীকে দেখতে দেখতেই সেই ১৬/১৭ বছর আগে ফিরে যায় সে।তানিয়া বেগম হস্পিটালে ভর্তি, কাব্য শাহানারা বেগম এর সাথে গেছে উনাকে দেখতে। তখন কাব্য কোলে তুলে দেয় ছোট্ট তিথীকে, যার বয়স মাত্র দুদিন।
কাব্য সানন্দে ছোট্ট তিথীকে কোলে তুলে নেয়। ওর ৮ বছরের ছোট হাত দিয়ে তিথীর ২ দিনের ছোট্ট হাত গুলো দেখতে থাকে। পা টাও যে বেশ ছোট, একদম পুতুল এর মতো।তখনই সে বলে মা মা এটা কি আমার পুতুল?

তখন শাহানারা বেগম হাসতে হাসতে বলে, হ্যাঁ বাবা এটা তোর পুতুল। চাচী তোর জন্য একটা পুতুল এনেছে।
সেদিন থেকেই এই ছোট্ট পুতুল কে নিয়েই কাব্যর খেলা করা। স্কুল ছুটির পর সারাক্ষণ এই তিথী কে নিয়েই পরে থাকতো। সেও কোলে নিতে পারতো না ঠিক মতো, বেশি সময় শুয়িয়েই খেলা করতো।

তিথীর তখন ৭ মাস বয়স, একটু একটু বসতে পারে, তখন একদিন তিথী শাহানারা বেগম এর কাছে। শাহানারা বেগম ছোট্ট তিথীকে ওড়না পেচিয়ে শাড়ী পড়িয়ে দেয়। তখন কাব্য বলে, মা ওকে কি বউ সাজিয়েছো?

শাহানারা বেগম জবাব দেন, হুম ছোট্ট একটা পুতুল বউ সাজিয়েছি। সেই থেকেই কাব্য বলে, এটা আমার পুতুল বউ। আর তখন থেকেই শুরু হয় তার পুতুল বউ নিয়ে পাগলামি।

সময়ের বিবর্তনে সবাই হয়তো ভেবেছে কাব্য সব ভুলে যাবে, কিন্তু তার ছোট্ট মস্তিষ্ক তো এটা মেনে নিয়েছে তার একটা পুতুল বউ আছে, আর তাই সে বুকের মাঝে ধারণ করে নিয়ে বসে আছে। যখন বড় হয়েছে, বুঝতে শিখেছে তখন পুতুল বউ এর প্রতি সেই টান তার ভালোবাসায় রুপ নেয়। আর নিজের কল্পনায় পুতুল বউ কে সাজিয়ে সে স্বপ্ন বুনতে শুরু করে।এসব ভাবতে ভাবতেই তার অধর কোণে হাসির রেখা ফুটে উঠে।

কিন্তু পরক্ষণেই মনে হয় তিথীর সাথে তার প্রথম দেখা হওয়া। কি একটা বাজে পরিস্থিতি তৈরী করে সে। এটার জন্য কি তার পুতুল বউ কখনো তাকে ক্ষমা করতে পারবে? একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে সে।বুকের ভিতর টা চিনচিন করে উঠে। তিথীর গালে দুহাত রেখে, কবে ভালোবাসবে তুমি আমায়? কবে আমার এই তৃষ্ণার্ত হৃদয় শান্ত করবে তুমি? আর কতো পুড়াবে আমায়। বলে তিথীর কপালে চুমু খেয়ে বেলকনিতে চলে যায়।
একটা সিগারেট ধরায় সে। সিগারেট এর ধোঁয়া গুলো আকাশে ছেড়ে ভাবতে থাকে, তোমায় এতোটা কাছে পেয়েও কাছে যেতে পারছি না আমি, সব ভুলে প্লিজ আমায় আপন করে নাও না।

ঘন্টা খানিক বেলকনিতে থেকে আবার এসে শুয়ে পরে তিথীকে জড়িয়ে ধরে। তিথী গভীর ঘুমে আছে, তাই কিচ্ছুটি টের পায়নি।
কখন যেনো কাব্য ও চোখ লেগে যায়। তিথীকে বুকে নিয়ে পরম শান্তি পাচ্ছে সে, তাই ঘুম আসতে খুব একটা বেগ পেতে হয়নি।

কাব্য হঠাৎ ঘুম ভাংগে তিথীর নড়াচড়াতে, কেমন যেনো হাসফাস করছে তিথী। আর বড় বড় করে নিশ্বাস ও নিচ্ছে। কাব্য দ্রুত রুমের লাইট অন করে দেয়। তিথীর কাছে গিয়ে তিথীকে উঠিয়ে বসিয়ে দেয়। শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে তিথীর। কাব্য এসি অফ করে ফ্যান ছেড়ে দিয়ে রুমের সব দরজা জানালা খুলে দেয়।
দৌঁড়ে এক গ্লাস পানি এনে দেয় তিথীকে। পানি খেয়ে তিথী বড়ো বড়ো করে দম নিতে থাকে। এভাবে প্রায় ১০ মিনিট পর তিথী কিছুটা স্বাভাবিক হয়। তখন কাব্য জিজ্ঞেস করে কি হয়েছে তোমার? এমন শ্বাসকষ্ট হচ্ছিল কেনো?

তিথী কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলে, আপনি সিগারেট খেয়েছিলেন?

কাব্য উপর নিচ মাথা নাড়ে।

সিগারেট এর গন্ধে আমার এলার্জি আছে। শ্বাসকষ্ট শুরু হয়ে যায় আমার।

কাব্য নিজের খুব অপরাধী মনে হচ্ছে। আর এই সিগারেট খেয়ে এসেই সে তিথীকে এভাবে জড়িয়ে ধরেছিলো।
শুয়ে পরো তুমি, বলে ওয়াশরুমে ঢুকে যায় সে। এই মধ্য রাতে আবার শাওয়ার নিয়ে এসে দেখে তিথী এখনো বিছানায় বসে আছে।



চলবে…