মহাপ্রস্থান পর্ব-১৩+১৪

0
180

#মহাপ্রস্থান
#পর্ব_১৩
#মুন্নি_আক্তার_প্রিয়া
_________________
পৃথুলা নিজের বাসায় ফিরে এসেছে। বৃদ্ধ বাড়িওয়ালা দরজা খোলার শব্দ শুনে পাশের রুম থেকে বেরিয়ে এলেন। প্রায় ভূত দেখার মতো অবাক হয়ে বললেন,

“এতদিন কই আছিলা?”

প্রথম দিকটায় পৃথুলা বলার মতো কোনো কথা খুঁজে পেল না। অবশ্য এতকিছু ভাবারও নেই। সবাই তো আর দেশের নিউজ নিয়ে পড়ে থাকে না। এত মাথা-ব্যথাও নেই তাদের। কোথায় খু-ন হচ্ছে আর কোথায় কে কি’ড’ন্যা’প হচ্ছে এসব খোঁজ রাখার সময় অধিকাংশ মানুষেরই নেই। বলা যায়, এই খোঁজ রাখার প্রয়োজনও মনে করে না সকলে। আর তো তাই বাড়িওয়ালাও পৃথুলাকে দেখে কোনোকিছু আন্দাজ করতে পারেনি।

পৃথুলা স্মিত হেসে বলল,

“এক বান্ধবীর বিয়ে ছিল চাচা। সেখানে গেছিলাম।”

“গেছ ভালো কথা। বইলা যাইবা না? ফোনও তো বন্ধ কইরা রাখছ।”

“ফোন নষ্ট হয়ে গেছে চাচা। ব্যস্ত ছিলাম তাই ঠিক করা হয়নি। আজ করব।”

“ওহ। আইচ্ছা যাও হাত-মুখ ধুইয়া বিশ্রাম নাও একটু।”

পৃথুলা রুমে ঢুকে আগে শাওয়ার নিল। তোয়াল চুল থেকে খুলে বিছানায় হাত-পা ছড়িয়ে শুয়ে পড়ল সে। চুলের পানিতে বিছানা ভিজে যাচ্ছে। কিন্তু সেদিকে তার কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। তার কিছুই ভালো লাগছে না। বারংবার আরশানের কথা মনে হচ্ছে।
.
.
আরশান তার নিজের অফিসে বসে আছে। সামনে শিমুল। আরশানকে চিন্তিত দেখে শিমুল জানতে চাইল,

“আপনি কি পৃথুলাকে মিস করছেন?”

আরশান ভ্রুঁ কুঁচকে তাকাল। সে পৃথুলার কথা ভাবছিল না বরং রাফসানকে কী করে ছাড়ানো যায় সেটা নিয়ে ভাবছিল। সে নড়েচড়ে বসে বলল,

“এরকমটা মনে হওয়ার কারণ?”

“কোনো কারণ নেই স্যার। জাস্ট মনে হলো, তাই এমনিই বললাম।”

“আমি ভাবছি, রাফসানের কেসটা নিয়ে। এখনো কোনো কূল-কিনারা খুঁজে পেলাম না। এভাবে আর কতদিন রাফসানকে জেলে রাখব?”

“কিছু তো করার নেই স্যার। আর প্রমাণ ছাড়া তো তার কোনো শাস্তিও আদালত দিতে পারবে না। ভালো কোনো এডভোকেট ধরতে হবে। কোনোভাবে যদি জামিন করানো যায় আরকি!”

“কিছু তো একটা করতেই হবে। এভাবে হাত গুটিয়ে তো আর বসে থাকা যাবে না।”

“আপনি চিন্তা করবেন না স্যার। দেখবেন, সবকিছুই ঠিক হয়ে যাবে।”

আরশান কিছু বলল না। শিমুল বলল,

“পৃথুলা মেয়েটাকে মিস করছি। শেষবার দেখাও হলো না।”

“মায়ায় পড়ে গেছ?”

“মেয়েটাই ওরকম। আপনি নিজেও তো মায়ায় পড়েছেন।”

“কী যা তা বলছ!”

“সত্যি বলছি।”

“অযথা বিষয় নিয়ে তর্ক করছ শিমুল। এখন আমার কথা শোনো, পৃথুকে সন্দেহের বাইরে কিন্তু রাখা যাবে না। যেহেতু শিলার বোন তাই নজরে রাখতে হবে। লোক লাগাও। ওর সব আপডেট আমার চাই।”

“জি স্যার। আমি সব ব্যবস্থা করছি। একটা কথা বলব?”

আরশান চেয়ারে গা এলিয়ে দিয়ে বলল,

“বলো।”

“আপনার মুখে পৃথু ডাকটা অসম্ভব ভালো লাগে। কেন বলুন তো?”

আরশান স্তব্ধ হয়ে যায়। পৃথুলার পাগলামি, বকবকানি এখন খুব মনে পড়ছে। সে আনমনেই বলল,

“জানিনা।”
_______
দোলা শপিং-এ এসেছে কিছু টুকটাক কেনাকাটা করার জন্য। এই একটা কাজ করলেই তার মন অল্পটুকু হলেও ফ্রেশ হয়। তাই নিজেকে এবং মনকে একটু শান্ত করতেই সে শপিং করতে এসেছে। নিজের জন্য সে কিছুই কিনল না। মায়ের জন্য শাড়ি এবং বাবার জন্য শার্ট কিনে সে অর্নামেন্টসের দোকানে ঢোকে। মায়ের জন্য চুড়ি নিতে হবে। চুড়ির কালেকশন দেখতে দেখতে তার নজর যায় একজোড়া দুলের দিকে। সে সেলসম্যানকে ডেকে বলে,

“ভাইয়া, ঐ দুলটা দেখান তো।”

সেলসম্যান দুল নামিয়ে দিল। দোলা একটা দুল পরে আয়নায় নিজেকে দেখছিল। ঠিক তখনই পেছন থেকে পুরুষালী কণ্ঠে ভেসে আসে,

“স্বর্গের পরীর মতো লাগছে।”

দোলা পেছনে ঘুরে দাঁড়াল। হিমেল দাঁড়িয়ে আছে হাসি হাসি মুখ করে। মাকে ছাদে হাই দিতে দিতে এখন মেয়েকেও ফলো করা হচ্ছে। অগ্নিদৃষ্টি নিক্ষেপ করে দোলা বলল,

“আপনি এখানে কেন এসেছেন?”

“এই শপিংমল আসা আমার নিষেধ নাকি?”

“নিষেধ নয়। কিন্তু আপনি আমাকে ফলো করে এসেছেন।”

“না তো! আমি তো এখানে এসেই আপনাকে দেখলাম। ফলো করিনি সত্যি বলছি।”

দোলা কয়েক সেকেন্ড তাকিয়ে থেকে বলল,

“বেশ! এবার তাহলে যান।”

“কোথায় যাব? আমি তো এই দোকানে এসেছি কিছু কেনার জন্যই।”

দোলা আর কথা বাড়াল না। কথা বাড়ালেই কথা বাড়বে। সে নিজের মতো গয়না দেখছে। হিমেল দেখছে পায়েল। সে কেশে দোলার দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলে,

“শুনছেন?”

দোলা চিবিয়ে চিবিয়ে বলে,

“সমস্যা কী? বিরক্ত করছেন কেন? জেলের ভাত খাওয়ার শখ জেগেছে?”

“প্লিজ কুল, কুল! রেগে কেন যাচ্ছেন? পুলিশ হয়েছেন বলে কি কথায় কথায় জেলে ঢোকানোর ভয় দেখাবেন?”

“ভয় দেখাব কেন? ডিরেক্ট জেলে নিয়ে পুরব। ই’ভ’টি’জিং করার শখ মিটিয়ে দেবো।”

“আস্তাগফিরুল্লাহ্! আমি ভালো ছেলে। ই’ভ’টি’জিং করি না। একটু সাহায্য চাওয়ার জন্য ডেকেছিলাম। দেখুন তো, এখানে কোন পায়েলটা সুন্দর।”

“আমি দেখব কেন?”

“আসলে এক বান্ধবীকে গিফ্ট করব। কিন্তু মেয়েদের গয়না সম্পর্কে আইডিয়া নেই আমার।”

দোলা নিজের ব্যাগটা হাতে নিয়ে বলল,

“পারব না।”

এরপর সে কিছু না কিনেই দোকান থেকে বেরিয়ে গেল। হিমেল মুচকি হেসে মনে মনে বলে,

“কতদিন আমায় ইগনোর করতে পারো,আমিও দেখব।”
.
.
গত দু’দিন ধরে পৃথুলা বাড়িতেই রয়েছে। অফিসে এখনো যায়নি। বসের যে কত কথা শুনতে হবে তা কে জানে! মনে শঙ্কা এবং ভয় নিয়েই সে তৈরি হয় আজ অফিসে যাওয়ার জন্য। স্বাধীন জীবনের অভ্যাস যেন হুট করেই বিলীন হয়ে গেছে। কেন যে মানুষটা তাকে কি’ড’ন্যা’প করল এবং কেনই বা এভাবে মায়ায় জড়িয়ে ছেড়ে দিল। আর হয়তো কখনো দেখাও হবে না। আরশানের ঠিকানা, ফোন নাম্বার কোনোটাই সে জানে না। চেনার মধ্যে এক চেনে শুধু আতোয়ার চৌধুরী কোম্পানীটা; যেখানে আরশান তাকে নিয়ে গেছিল। কিন্তু সেখানেও তার একা যেতে সাহসে কুলাবে না। কেমন যেন গা ছমছম করা ভয় সেখানে! আরশানের সঙ্গে করা দুষ্টুমিগুলোর কথা ভাবতেই তার ওষ্ঠে হাসি ফুটে ওঠে।

সময়গুলোর কথা ভাবতে ভাবতেই সে বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়েছে। বাস স্ট্যান্ডে লোকজনের ভিড় নেই। অবশ্য বাসও নেই। বাসের দেখা না পেয়েই একেকজন সিএনজি, রিকশা করে নিজেদের গন্তব্যে চলে যাচ্ছে। পৃথুলা হাত-ঘড়িতে সময় দেখল। এখনো তার হাতে অজস্র সময় রয়েছে। তাই সে আরেকটু অপেক্ষা করতে চায় বাসের জন্য। সে স্ট্যান্ডে হাঁটাহাঁটি করছিল আপনমনে। ঠিক তখনই কেউ তাকে ঝড়ের গতিতে জায়গা থেকে সরিয়ে নেয়। পৃথুলা হকচকিয়ে গেলেও খেয়াল করেছে যে একই সময়ে একটা বাইকও তাকে পাস করে গেছে। সে পিছু ফিরে তাকিয়ে দেখতে গেলে আগন্তুক পৃথুলার গাল চেপে ধরে রেখে বলে,

“রাস্তার কিনারে হাঁটাহাঁটি করা লাগে কেন?”

পৃথুলা বিস্মিত, স্তব্ধ। কিছুক্ষণ আগের কথা ভুলে গেছে আরশানকে দেখে। খুশিতে সে লাফিয়ে উঠে বলে,

“আপনি! হায় আল্লাহ্! আমি তো সারপ্রাইজড হয়ে গেছি।”

“এভাবে রাস্তায় আর হাঁটাহাঁটি করবেন না।”

আরশানের কণ্ঠে তীব্র রাগ। আর একটু হলেই বাইকে থাকা ছেলেটি ছু-রি দ্বারা আঘাত করত পৃথুলাকে। ভাগ্যিস দৃশ্যটা দেখেনি পৃথুলা।

পৃথুলা খুশিতে ডগমগ হয়ে বলে,

“আমি তো ভাবতেই পারিনি আবার আপনার সঙ্গে আমার দেখা হবে।”

আরশান এ কথার উত্তর না দিয়ে বলল,

“আপনাকে না বলেছিলাম, মাস্ক পরে থাকবেন?”

“গরমের মধ্যে মাস্ক পরতে ভালো লাগে না। চলুন কোথাও গিয়ে বসি।”

“আমার সময় নেই। আসছি।”

আরশান চলে যাওয়ার জন্য উদ্যত হতেই পেছন থেকে পৃথুলা বলে,

“সময় নেই তবে এখানে এসেছিলেন কেন? ঐ ছেলেটির হাত থেকে আমায় বাঁচানোর জন্য? আপনি জানলেন কী করে কেউ আমাকে মা-রা-র জন্য আজ এখানে আসবে? বাই এনি চান্স, আপনিই ওদের পাঠাননি তো মিস্টার আরশান চৌধুরী?”

আরশান পৃথুলার মুখপানে অবিশ্বাস্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছে।

চলবে…

#মহাপ্রস্থান
#পর্ব_১৪
#মুন্নি_আক্তার_প্রিয়া
__________
পৃথুলা শব্দ করে হেসে ওঠে। হাসতে হাসতে বলে,

“কেমন হয়েছে আমার অভিনয়? আমি কি শিলার মতো করে কথা বলতে পেরেছি?”

আরশান নিরুত্তর। পৃথুলা নিজেই বলে,

“ইশ! মুখটা কেমন হয়ে গেছে আপনার। খুব ভয় পেয়েছিলেন বুঝি?”

“এগুলো কোন ধরণের ফাইজলামি?”

“তা তো জানি না! তবে আপনি কেন ভয় পেলেন? সত্যি সত্যি আবার আমাকে মারার জন্য লোক পাঠাননি তো?”

“ননসেন্সের মতো কথা বলবেন না। মারতে চাইলে আবার নিজেই বাঁচাব কেন?”

“উম! গুড কোয়েশ্চেন। হতে পারে আমার সামনে হিরোর সাজার জন্য। আমাকে ইম্প্রেস করার জন্য।”

“জীবনটাকে কি আপনি সিনেমা মনে করেন? এটা বাস্তব জীবন। অবশ্য আপনাকে এসব বলেও লাভ নেই। ঘিলু তো এক ফোটাও মাথায় নেই। বুদ্ধিশুদ্ধি সব হাঁটুতে।”

“আপনি বলতে চান আমি বোকা?”

“নিঃসন্দেহে।”

“তাহলে চলুন বিয়ে করে ফেলি।”

“কী!” বিস্ময়ে হতবাক আরশান।

“ওভাবে তাকানোর মতো কী বললাম? চালাক বর, বোকা বউ। পার্ফেক্ট জুটি হবে। তাই না বলেন?”

আরশান আর কথার উত্তর না দিয়ে চলে যাওয়ার জন্য হাঁটা শুরু করে। পৃথুলা দৌঁড়ে গিয়ে পথরোধ করে দাঁড়াল। চোখ-মুখ কুঁচকে আরশান জানতে চাইল,

“সমস্যা কী?”

“আমার কথা শেষ হয়নি।”

“আমার এত সময় নেই।”

“সময় নেই কেন? এমন কোন মহাকার্য উদ্ধার করবেন শুনি?”

আরশান নিশ্চুপ। পৃথুলা বলল,

“আচ্ছা ঠিক আছে, কাজের কথায় আসি। আমার নিজেরও এখন হাতে বেশি সময় নেই। অফিসে যেতে হবে।”

“যান।”

“যাব। আগে আপনার ফোন নাম্বার দিন।”

“কেন?”

“কেন এর উত্তর এখন আমার জানা নেই। পরে ফোনে বলব।”

আরশান এবারও চুপ করে তাকিয়ে আছে। পৃথুলা তাড়া দিয়ে বলল,

“কী হলো? দিন।”

আরশান আর কথা বাড়াল না। পৃথুলার ফোনটা নিয়ে নিজের নাম্বার তুলে দিল। পৃথুলা খুশি হয়ে এক গাল হেসে বলল,

“থ্যাঙ্কিউ সো মাচ। এখন যাই আমি।”

“হু।”

পৃথুলা স্ট্যান্ডে ফিরে আসার সঙ্গে সঙ্গে একটা বাসও এলো। সে চটজলদি বাসে উঠে জানালার পাশের সিটে বসল। হাত নাড়িয়ে বিদায় জানাল আরশানকে। আরশান নির্নিমেষ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল যতদূর বাসটা দেখা যায়।
.
.
দোলা থানায় যাওয়ার জন্য বাড়ি থেকে বেরিয়ে দেখে হিমেল দাঁড়িয়ে আছে। ওর পরনে ফর্মাল পোশাক। সম্ভবত অফিসে যাওয়ার জন্য তৈরি হয়ে এসেছে। দোলা ওকে দেখেও না দেখার ভান ধরে চলে যাচ্ছিল। তবে হিমেল সেটা হতে দিল না। সে দৌঁড়ে এসে পাশাপাশি হাঁটতে লাগল। দোলা আড়চোখে তাকিয়ে বলল,

“মনে কি ভয়-ডর বলতে কিছু নেই?”

হিমেল হাসল। বলল,

“ভয় পাব কেন?”

“জেলের ভাত খেলেই বুঝবে।”

হিমেল এবার শব্দ করে হাসল। দোলা ভ্রুঁ কুঁচকে তাকিয়ে বলে,

“হাসির কী হলো?”

“আপনি আমাকে তুমি করে বললেন। শুনতে কিন্তু বেশ মিষ্টি লাগছে।”

“যখন তুই ডাকব তখন আরও বেশি মিষ্টি লাগবে।”

“তাই? তাহলে ডাকুন একবার।”

দোলা দাঁড়িয়ে পড়ল। দু’হাত বগলদাবা করে বলল,

“এই ছেলে, সমস্যা কী তোমার? কী চাও তুমি?”

“আপনাকে।” হিমেলের স্পষ্ট জবাব।

দোলা কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে। সেই সঙ্গে মনে পড়ে যায় তার পূর্বের অতীত। একদিন ঠিক এভাবেই রাফসান তাকে জিজ্ঞেস করেছিলে,’চাও কী তুমি?’
দোলা ঠিক এভাবেই হিমেলের মতো নির্দ্বিধায় বলেছিল,’তোমাকে।’ সেই সময়গুলো কত সুন্দর ছিল!

দোলাকে হঠাৎ এমন চুপসে যেতে দেখে হিমেল চোখের সামনে তুড়ি বাজিয়ে বলল,

“এইযে ম্যাডাম, কী হলো?”

হুশে এসে দোলা চোখ-মুখ শক্ত করে হিমেলের দিকে তাকাল। কর্কশকণ্ঠে বলল,

“শোনো ছেলে, এখন ভালো ব্যবহার করছি মানে যে সবসময়ই ভালো ব্যবহার করব এমনটা ভেবো না। আমাকে খারাপ হতে বাধ্য করো না বলে দিচ্ছি।”

“তাহলে কী করবেন?”

“সেটা তখনই বুঝতে পারবে। সময় থাকতে নিজেকে শোধরাও। আমার পিছু নেওয়া বন্ধ করো। নয়তো এর ফলাফল মোটেও ভালো হবে না।”

দোলা হাঁটতে শুরু করেছে। সাথে হিমেলও হাঁটছে। দোলার কথা তার গায়ে বিঁধছে না একটুও। সে হেসে বলে,

“ছোটো থেকেই আমি খারাপের সঙ্গে অভ্যস্ত ম্যাডাম। মা যেদিন আমাকে রেখে অন্য লোকের হাত ধরে চলে গেছিল ঠিক তখন থেকেই অন্ধকার বলেন, খারাপ বলেন এসবের সঙ্গে আমি পরিচিত হয়ে যাই। বাবা যখন বিয়ে করে সৎ মাকে ঘরে আনলেন তখন থেকে সৎ মায়ের খারাপ আচরণের সঙ্গে পরিচিত হই। বাবাও তখন থেকে আর বাবা নেই। বাড়িতে টিকতে না পেরে একসময় বেরিয়ে আসি। মানুষের লা’ত্থি-উ’স্টা, চ’ড়-থা’প্প’ড় খেয়ে কত দিন পার করেছি তার কোনো হিসাব নেই। এখন আর আমি কোনো খারাপকেই ভয় পাই না। সেখানে আপনি আমাকে খারাপ হবে বলে ভয় দেখাচ্ছেন ম্যাডাম?”

দোলা অবাক বিস্ময়ে তাকায় হিমেলের দিকে। হিমেল তখনও হাসছিল। যার জীবন এমন দুর্বিষহ, সে এভাবে হাসে কেমন করে?

রাস্তায় চলে আসায় হিমেল একটা রিকশা ডেকে বলে,

“এখন যাচ্ছি ম্যাডাম। কিন্তু আমি আবার আসব। আপনার পিছু আমি ছাড়ব না। চলো মামা।”

শেষ কথাটি হিমেল রিকশাওয়ালাকে উদ্দেশ্য করে বলল।

রিকশা চলতে শুরু করেছে। হিমেলের মেজাজ ফুরফুরে। সে দোলার প্রেমে পুরোদমে ডুবে গেছে।
________
পৃথুলা মন খারাপ করে অফিস থেকে বেরিয়ে এসেছে। এতদিন অনুপস্থিত থাকায় তার চাকরীটা চলে যায়। এজন্য সব রাগ গিয়ে পড়ে তার আরশানের ওপর। ব্যাটা ব’দ, ফা’জি’ল! তার ভুলের জন্য এখন আমাকে মাশুল দিতে হচ্ছে। মনে মনে বাকবিতণ্ডা করতে করতে সে অন্যমনস্ক হয়ে হাঁটছিল। আচমকা সে এক মেয়ের সাথে ধাক্কা খেয়ে পড়ে যায়। ইটের কোণা হাতের ভেতর ঢুকে গিয়ে র’ক্ত বেরিয়ে গেছে। একই তো পড়ে গিয়ে ব্যথা পেয়েছে, তার ওপর আবার ইটের আঘাত! সে অস্ফুট কণ্ঠে আর্তনাদ করে ওঠে। মেয়েটি দ্রুত পৃথুলাকে ধরে উঠিয়ে বলে,

“আ’ম স্যরি! একদম খেয়াল করিনি। তুমি কি বেশি ব্যথা পেয়েছ?”

পৃথুলা ঠিকমতো দাঁড়াতেও পারছিল না। মেয়েটি ওর হাতে র’ক্ত দেখে বলল,

“একি! তোমার হাত তো কেটে গেছে।”

পৃথুলা সৌজন্যতার খাতিরে বলল,

“ও কিছু না। একটু চোট লেগেছে। ঠিক হয়ে যাবে।”

“ব্যথা, চোট দুটোই ভালোই পেয়েছ। ঐযে স্কাই ব্লু কালার বিল্ডিং-টা দেখছ? ওটা আমার বাসা। আমার সঙ্গে এসো। রেস্ট নিয়ে পরে যেও।”

“না, না। ইট’স ওকে।”

“তুমি আসো প্লিজ! আমার এমনিতেই ভীষণ গিল্টি ফিল হচ্ছে।”

পৃথুলা কী ভেবে যেন রাজি হয়ে যায়। বাড়িতে গিয়ে দেখে বিশাল অ্যাপার্টমেন্ট। সবকিছু পরিপাটি, সুন্দর, সাজানো। প্রাণ ভরে শ্বাস নেওয়া যায়। পৃথুলাকে ড্রয়িংরুমে বসিয়ে রেখে মেয়েটি ফার্স্ট এইড বক্স নিয়ে এলো। পৃথুলার পাশে বসে বলল,

“দেখি তোমার হাতটা দাও।”

“এসবের কোনো দরকার ছিল না।”

“অবশ্যই দরকার আছে। তোমার শরীরের এমনিতেই যা অবস্থা। গায়ে তো র’ক্ত-ই নেই। তাও যদি হেলাফেলা করো তাহলে বাঁচবে কী করে?”

পৃথুলা হাসল। চারদিকে চোখ বুলিয়ে বলল,

“আপনি খুব প্রফেশনালভাবে হাতের ড্রেসিং করছেন।”

মেয়েটি মুচকি হেসে বলল,

“কারণ আমি একজন ডক্টর।”

“আই সী!”

“নামটা কী তোমার?”

“পৃথুলা।”

“বাহ্! বেশ সুন্দর নাম তো।”

“থ্যাঙ্কিউ। আপনার নাম কী?”

“দিবা।”

“আপনার নামও সুন্দর।”

“থ্যাঙ্কিউ।”

ওদের কথার মাঝে কাজের মেয়ে এসে কফি আর কিছু হালকা নাস্তা দিয়ে গেল। দিবা একটা কফির মগ পৃথুলার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল,

“কফি নাও।”

“এখানে কে কে থাকেন?” কফির মগে চুমুক দিয়ে জিজ্ঞেস করল পৃথুলা।

“আমি, আর আমার হাজবেন্ড।”

“আপনি ম্যারিড?”

“হ্যাঁ। কেন বোঝা যায় না?”

“একদম না।”

দিবা সুন্দর করে হাসল। কলিংবেলের টুংটাং শব্দ বেজে ওঠে তখন। কাজের মেয়েটি চলে যায় দরজা খুলতে। দিবা মুচকি হেসে বলল,

“মনে হয় তৌসিফ এসে গেছে।”

“তৌসিফ কে?”

“আমার হাজবেন্ড।”

তৌসিফ ড্রয়িংরুমে চলে এসেছে ততক্ষণে। তার পরনে পুলিশের ইউনিফর্ম। দিবা বলল,

“এইযে উনিই আমার স্বামী।”

পৃথুলা সালাম দিল,

“আসসালামু আলাইকুম।”

তৌসিফ দ্বিধান্বিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে বলল,

“ওয়া আলাইকুমুস-সালাম। আপনাকে কেমন যেন চেনা চেনা লাগছে। ওহ, হ্যাঁ! আপনি এডভোকেট শিলা না? যে কিছুদিন আগে রাফসান চৌধুরীর নিউজ নিয়ে বেশ আলোচনায় ছিলেন?”

পৃথুলা কফির মগটি সেন্টার টেবিলের ওপর রেখে দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বলল,

“না। আমি পৃথুলা। শিলা আমার যমজ বোন।”

তৌসিফ এবং দিবা দুজনই চমকে তাকাল। সারাদিন পেশেন্ট নিয়ে ব্যস্ত থাকায় নিউজ দেখার বা পড়ার সময় হয়ে ওঠে না দিবার। তবে সে এডভোকেট শিলা এবং অভিনেতা রাফসান চৌধুরীকে নিয়ে প্রচারিত হওয়া নিউজটি শুনেছিল। রাফসান চৌধুরীকে চিনলেও এডভোকেট শিলাকে সে চিনত না। তাই পৃথুলাকে দেখে তৌসিফের মতো সে শিলা ভাবতে পারেনি।

তৌসিফ অবাক হয়ে বলল,

“উনার যে যমজ বোন আছে এই ব্যাপারে তো কখনও কিছু বলেননি। এমনকি এক সংবাদে তিনি বলেছিলেন, পৃথিবীতে তার আপন বলতে কেউ বেঁচে নেই।”

পৃথুলার দু’চোখ ছলছল করে ওঠে। টলমল চক্ষু মেলে সে স্মিত হেসে বলে,

“এই বিষয়ে একচুয়ালি আমার কিছু বলার নেই। ওর সাথে আমার সম্পর্ক বা যোগাযোগ নেই পাঁচ বছরেরও বেশি।”

তৌসিফ কৌতুহলী হয়ে পাশের সিঙ্গেল সোফায় বসল। বলল,

“আপনি রাখেননি নাকি সে?”

“শিলাই রাখেনি। ওর কত নাম-ডাক, যশ! এখন তো খ্যাতিও অর্জন করেছে। আমার মতো গুড ফর নাথিং কে ওর কী দরকার!”

“বাট তিনি কিন্তু ততটাও বিখ্যাত বা জনপ্রিয় নন পৃথুলা। মূলত রাফসানের জন্যই সে যা একটু পরিচিতি পেয়েছেন। কিন্তু রিসেন্টলি সেটাও তো অন্যান্য নিউজের আড়ালে চাপা পড়ে গেছে। কয়েকদিন আগে তার একটা লাইভ সোশ্যাল মিডিয়ায় বেশ হৈ-চৈ ফেলেছিল।”

পৃথুলা ভ্রুকুটি করে বলল,

“কোন লাইভ?”

“সেকি! আপনি দেখেননি? তিনি লাইভে এসে বলেছেন, তার ব্যক্তিগত লাইফ নিয়ে সে কিছুটা বিপর্যস্ত। তাই রাফসান চৌধুরীর কেসটা নিয়ে সে কোনো কাজ করতে পারবে না এখন। এবং তার মানসিক অবস্থার ডেভেলপমেন্টের জন্য তিনি দেশের বাইরে চলে যাচ্ছেন। তবে কোন দেশে গিয়েছেন সেটা জানাননি। রাফসান হকের ভক্তদের মতে, এটা শিলা চৌধুরীর খামখেয়ালিপনা। তারা এসব মানে না। তারা মনে করে রাফসান চৌধুরী নির্দোষ। কিন্তু তারা মানলেই তো হবে না? প্রায় সব প্রমাণই তার বিরুদ্ধে। আপনার বোনের জন্য কেসটাও এখন ঝুলে আসে।”

“রাফসান চৌধুরী এখনও জেলে?”

“হ্যাঁ।”

“আপনার সাথে কি শিলার কন্টাক্ট আছে?”

“না, না। আমি তো তাকে পার্সোনালি চিনি না। কোর্টে দু’তিনবার দেখা হয়েছিল আর ফর্মাল কথা হয়েছিল এই যা! আমার কি মনে হয় জানেন?”

পৃথুলা ভ্রুকুটি করে তাকায়। তৌসিফ বলল,

“রাফসান চৌধুরীর বাবার কিন্তু বেশ পাওয়ার। বড়ো বড়ো নেতার সাথে তার চলাফেরা। আমার মনে হচ্ছে তিনিই কিছু করেছেন। হতে পারে, হুমকি-ধামকি দিয়েছেন। এজন্য আপাতত শিলা চৌধুরী কোথাও গা ঢাকা দিয়ে আসেন।”

এই পর্যায়ে দিবা বলল,

“তার যদি এতই ক্ষমতা থেকে থাকে, তাহলে তিনি নিজেই তো ছেলেকে ছাড়িয়ে আনতে পারেনন। থ্রে’ড করার কী দরকার?”

তৌসিফ হেসে বলে,

“এটা কি তোমার ডাক্তারি পেশা পেয়েছ? তুমি গাইনী ডাক্তার। কোনো পেশেন্টের হাত কে’টে গেল অথবা মাথা ফে’টে গেল; তুমি গাইনী ডাক্তার হয়েও ড্রেসিং করে স্টিচ করে দিতে পারো। কারণ এগুলো তোমরা ব্যাসিক-ই শিখেছ। আর তোমার কি মনে হয় আতোয়ার চৌধুরী চেষ্টা করেননি তার ছেলেকে ছাড়ানোর? একটা জিনিস ভাবো, রাফসান চৌধুরী হচ্ছে বাংলা ইন্ডাস্ট্রির জনপ্রিয় একজন অভিনেতা। আতোয়ার চৌধুরী রাজনীতির সাথে কানেক্টেড পাওয়ারফুল একজন ব্যক্তি। দেশে এত বড়ো বড়ো এডভোকেট থাকা সত্ত্বেও রাফসানের বিরুদ্ধে আনতি মা-র্ডা-র কেসের সকল চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে গেল সাধারণ একজন এডভোকেটের হাতে। দু’দিন আগে শিলা চৌধুরী নামে যাকে কেউ চিনতই না। তোমার কি মনে হয় সবটাই মামুলি ব্যাপার? বিশাল বড়ো জট পাকিয়ে আছে এখানে দিবা। তোমরা সাধারণ মানুষরা খালি চোখে যেমন ভাবো, আইনের চোখ কিন্তু তেমনভাবে দেখে না। তারা যুক্তি খোঁজে, প্রমাণ চায় আরও কত কী!”

দিবা ফোঁস করে একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বলল,

“এজন্যই আমার রাজনীতি, আইন-ফাইন এসব পছন্দ না।”

তৌসিফ মুচকি হাসল। পৃথুলা ভাবছিল শিলার কথা। তার বুকের ভেতরটা কেমন যেন হুহু করছে। তৌসিফ আড়চোখে পৃথুলার দিকে তাকায়। সূক্ষ্ম দৃষ্টিতে সে পৃথলার পা থেকে মাথা অব্দি স্ক্যান করে নেয়। দিবা গেছে তখন টেবিলে খাবার দিতে। তৌসিফের চোখে চোখ পড়তেই পৃথুলা চোখ ফিরিয়ে নেয়। সে এভাবে তাকিয়ে আছে কেন? তৌসিফের নজর, তাকানো তার ভালো লাগছিল না। দৃষ্টি যেন কেমন! জড়তা পেয়ে বসল তাকে। সে আড়ষ্ট হয়ে বসল। কিছুক্ষণ বাদে দিবা এসে বলল,

“তৌসিফ যাও ফ্রেশ হয়ে আসো। আমি খাবার দিয়েছি টেবিলে। পৃথুলা, তুমিও আসো। খেয়ে নেবে।”

পৃথুলা উঠে দাঁড়াল। বলল,

“না, না আপু। আজ নয়। অন্য একদিন। আজ আমার একটু তাড়া আছে।”

“সময় লাগবে না তো। অল্প কিছু খাও।”

“দুঃখিত আপু। অন্যদিন এসে পেট ভরে খেয়ে যাব।”

“কথা দিচ্ছ?”

“হ্যাঁ।”

“ঠিক আছে। সাবধানে যেও।”

দিবা পৃথুলাকে দরজা অব্দি এগিয়ে দিল। সত্যি বলতে তার পেটেও ক্ষুধা ছিল। তবে তৌসিফের অস্বাভাবিক চাউনির সামনে পৃথুলা ভীষণ অস্বস্তিবোধ করছিল।

বাড়িতে ফিরে পৃথুলা সারাদিন রুমেই কাটিয়ে দেয়। তার একজন রুমমেট আছে। কিন্তু সে অফিস ট্যুরে গেছে পৃথুলা ফিরে আসার আগেরদিন। কবে ফিরবে জানা নেই। এক রুমে থাকলেও দুজনের মাঝে খুব একটা সখ্যতাও নেই। এর অবশ্য কিছু কারণও রয়েছে। সেসব আজ থাক। পৃথুলার মাথায় ঘুরছে নতুন চাকরীর চিন্তা। যে করেই হোক, একটা চাকরীর ব্যবস্থা তাকে করতেই হবে। নয়তো খেয়ে, পড়ে আর বাঁচতে হবে না। সে সারাদিন রুমে মুভি দেখে কাটিয়ে দেয়। রাত আনুমানিক এগারোটার দিকে মনে পড়ে যে তার কাছে আরশানের ফোন নাম্বার রয়েছে। যেহেতু আরশানের জন্যই তার চাকরী গেছে তাই সে তাকেই বলবে একটা চাকরীর ব্যবস্থা করে দিতে। সে ফোন হাত নিয়ে আরশানকে কল করল। দু’বার রিং হতেই ওপাশ থেকে ফোন রিসিভ করল আরশান।

“হ্যালো।”

“আমি পৃথুলা।”

“কী ব্যাপার?”

আরশান এমন ভাবলেশহীন হয়ে কথা বলছিল যে পৃথুলার রাগ বেড়ে যায়। সে কটমট করে বলে,

“ব্যাপার অনেক কিছু।”

“চাকরী চলে গেছে?”

পৃথুলা বিস্মিতকণ্ঠে জানতে চাইল,

“আপনি জানলেন কী করে?”

আরশান এ কথার কোনো উত্তর না দিয়ে বলল,

“শুনুন, আপনাকে কিছু কথা বলার আছে। আপনি ফোন না করলেও আমি নিজে থেকে কন্টাক্ট করতাম।”

“যা বলার দেখে করে তারপর বলেন।”

“এখন সম্ভব নয়।”

“কেন সম্ভব নয়? এইতো আমি বেরিয়ে পড়েছি। আপনিও চলে আসুন।”

“পাগলামি করবেন না। কিছুদিন বাড়ি থেকে বের হওয়ার প্রয়োজন নেই। টাকা-পয়সা, খাবার, প্রয়োজনীয় যা যা লাগে আমি সব পাঠিয়ে দেবো।”

“আরে বাবা! চাকরী চলে গেছে বলে এত দরদ?”

“গাড়ির শব্দ আসছে কোথা থেকে?”

“রাস্তা থেকে।”

“আপনি কোথায়?”

“ওয়েট।”

বলে পৃথুলা কল কেটে হোয়াটসএপে আরশানকে ভিডিয়ো কল দেয়। হাত নাড়িয়ে বলে,

“এইযে আমি রাস্তায় হাঁটছি। যেখান থেকে আমায় কি’ড’ন্যা’প করেছিলেন সেখানে চটজলদি চলে আসুন তো। আপনাকে ভীষণ দেখতে ইচ্ছে করছে।”

পৃথুলা কল কেটে দিয়েছে ইতোমধ্যে। আরশান বিছানা থেকে শার্টটা গায়ে জড়িয়ে বেরিয়ে পড়ে। তাকে তড়িঘড়ি করে বেরোতে দেখে শিমুল জিজ্ঞেস করে,

“কোথায় যাচ্ছেন স্যার?”

আরশান চোয়াল শক্ত করে বলে,

“ননসেন্স মেয়েটা এই রাতে একা বেরিয়েছে। এমনিতেই বিপদের মধ্যে আছে। এখন আরও বিপদে পড়ার জন্য নাচছে।”

শিমুলও সঙ্গে এলো। বলল,

“কার কথা বলছেন? পৃথুলা? ওর আবার কীসের বিপদ?”

“জানিনা কে বা কারা আননোন নাম্বার থেকে আমাকে ম্যাসেজ পাঠিয়েছে। স্পষ্ট হুমকি বার্তা। ওরা পৃথুলার ক্ষতি করতে চাইছে।”

“কিন্তু কেন?”

“বুঝতে পারছি না।”

ড্রাইভ করতে করতে আরশান পৃথুলাকে কল দিল কিন্তু রিসিভ করে না পৃথুলা। তাই সে ভয়েস পাঠায়,

“তুমি কোথায় আছো? যেখানে আছো সেখানেই থাকো। আমি এখনই আসছি।”

মিনিট দুয়েক বাদে আরশানের কাছে পৃথুলার ফোন থেকে ভয়েস আসে। গম্ভীর পুরুষালী কণ্ঠ!

“বি ব্লকে আছে। এসে নিয়া যা।”

আরশান ভয় পেয়ে যায়। যত দ্রুত সম্ভব গাড়ি চালিয়ে বি ব্লকে পৌঁছে দেখে র’ক্তা’ক্ত অবস্থায় পৃথুলা সেখানে পরে আছে। মাথায়, হাতে জ’খ’ম। চা-কু দিয়ে আঘাত করা হয়েছে। পেটের কাছে র’ক্তে ভিজে আছে। কাপড় সরিয়ে দেখে সেখানে অজস্র চা’কু’র আঘাত। শরীর শিউড়ে উঠে আরশানের। সে পৃথুলার নাকের কাছে হাত দিয়ে দেখে, এখনো নিঃশ্বাস নিচ্ছে। রাস্তাঘাট ফাঁকা। নির্জন পথ। অতিসত্বর এখান থেকে সরে যেতে হবে। ঠিক সেই সময়ে ওদের ওপরও অতর্কিত হামলা হয়। আরশান দ্রুত পৃথুলাকে কোলে নিয়ে গাড়িতে ওঠে। এখন ড্রাইভ করছে শিমুল। পেছনের সিটে পৃথুলাকে কোলে নিয়ে বসে আছে আরশান। সে শিমুলকে তাড়া দিয়ে বলছে,

“জলদি এই জায়গা থেকে যেতে হবে শিমুল!”

এরপর সে পৃথুলার র’ক্তা’ক্ত দেহটাকে বুকে জড়িয়ে ধরে বলে,

“প্লিজ নিঃশ্বাস নেওয়া বন্ধ কোরো না পৃথু!”

চলবে…

[কার্টেসী ছাড়া কপি করা নিষেধ।]