#মহাপ্রস্থান
#পর্ব_১৬
#মুন্নি_আক্তার_প্রিয়া
_____________
হিমেল দু’বার কলিংবেল বাজিয়ে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে। মিনিট দুয়েক বাদে দরজা খুলে দিলেন শান্তি বেগম। তিনি হিমেলকে কখনো কাছ থেকে দেখেননি বলে চিনতে পারলেন না। যদি জানতেন এই ছেলেই তাকে ছাদ থেকে হাই, হ্যালো করত তাহলে নিঃসন্দেহে এখনই পে-টা-নো শুরু করতেন।
হিমেল মিষ্টি করে হেসে বলল,
“আসসালামু আলাইকুম আন্টি। কেমন আছেন?”
“ওয়া আলাইকুমুস-সালাম। কে তুমি?”
“আন্টি, আমি হিমেল। দোলা ম্যাডাম আছে?”
“আছে। ঘুমাচ্ছে। বন্ধ তো আজ। তুমি ভেতরে আসো।”
হিমেল শান্তি বেগমের সঙ্গে ড্রয়িংরুমে গিয়ে বসল।
“তুমি বসো। আমি দোলাকে ডেকে দিচ্ছি।” বললেন শান্তি বেগম।
হিমেল তড়িঘড়ি করে বলল,
“না, না ডাকতে হবে না। ঘুমাক সে।”
“সেকি! তুমি দোলার কাছে আসোনি?”
“হ্যাঁ। তবে ইনটেনশন আপনার সঙ্গেই কথা বলা। তার সঙ্গে পরে কথা হলেও হবে।”
শান্তি বেগম বেশ অবাক হলেন। বললেন,
“আমার কাছে?”
“জি। যদি আপনার সময় হয় আরকি!”
“বসো। আমি চা নিয়ে আসি।”
শান্তি বেগম চা এনে হিমেলের মুখোমুখি বসলেন। এক কাপ চা এগিয়ে দিয়ে বললেন,
“বলো কী বলবে।”
হিমেল আশেপাশে তাকিয়ে বলল,
“আশেপাশে ঝাড়ু বা জুতো নেই তো?”
শান্তি বেগম হেসে ফেললেন।
“কেন?”
“না মানে যে কথা বলতে এসেছি সেই কথা শোনার পর যদি আবার মারেন।”
“এমন কী কথা?”
“আসলে আন্টি! কীভাবে যে বলি। প্লিজ তার আগে বলি, আপনি রাগ করবেন না প্লিজ, প্লিজ!”
“আরে বলো তো কী বলবে।”
হিমেল রুদ্ধশ্বাসে বলল,
“আপনাকে ছাদ থেকে যেই ছেলে হাই দিত, সেই ছেলেটা আমি।”
মুখ থেকে চা বের হতে গিয়েও নিজেকে সামলে নিলেন শান্তি বেগম। বিস্মিতকণ্ঠে বললেন,
“কী!”
“আগেই রাগ করবেন না প্লিজ! আমার সম্পূর্ণ কথাটা আগে শুনুন। আমি আসলে দোলা ভেবে আপনাকে হাই দিতাম। আপনি এখনো এত ইয়ং যে আমি দুজনকে গুলিয়ে ফেলতাম।”
“তুমি জানো আমার মেয়ে কে?”
“জানি। সে পুলিশ।”
“এরপরও তুমি হাই দিতে?”
“ভালোবাসা কি এতসব কিছু ভয় পায়?”
“তুমি আমার মেয়েকে ভালোবাসো? আবার আমার সামনে এসেই বলছ?” বেশ অবাক হলেন তিনি।
“বিয়ের প্রস্তাব তো আপনাকেই দেবো তাই না?”
“বিয়ে! এতদূর অব্দি ভেবে ফেলেছ। তুমি তো দেখছি ভীষণ সাহসী।”
হবু শাশুড়ির মুখে প্রসংশা শুনে একটু লজ্জা পেল হিমেল। শান্তি বেগম বললেন,
“আমার মেয়ে কিন্তু ভীষণ বদরাগী জানো?”
“একটু একটু বুঝেছি কথা বলে। তবে মনটা তো ভালো, নরম। এটাই যথেষ্ট। তার আগে আপনি আমাকে মাফ করেছেন বলুন?”
তিনি হেসে বললেন,
“সমস্যা নেই। তুমি তো আর ইচ্ছে করে আমাকে হাই দিতে না। ভুল করে দিতে।”
হিমেল প্রাণ খুলে হেসে বলল,
“আমাকে কি আপনার পছন্দ হয়েছে?”
“কী!”
“না মানে আন্টি, আমি বলতে চাইছি আপনার মেয়ের জন্য আমাকে পছন্দ হয়েছে কিনা! সত্যি বলছি, আমি এটাই মিন করেছি।”
হিমেলের কাণ্ড দেখে তিনি হেসে বললেন,
“হয়েছে।”
.
.
শিমুলকে বাংলোতে রেখে আরশান শপিংমলে এসেছে। উদ্দেশ্য পৃথুলার জন্য কিছু জামা-কাপড় কেনা। কতদিন ওখানে থাকতে হবে তার তো ঠিক নেই। আগে যেগুলো কিনে দিয়েছিল ওগুলো সে পৃথুলার সঙ্গে পাঠিয়ে দিয়েছিল। কখনো ভাবেনি ভাগ্য তাদেরকে আবার এভাবে এক করবে।
আরশান ঘুরে-ফিরে বেশ কয়েকটা জামা কিনল পৃথুলার জন্য। তারমধ্যে সবচেয়ে বেশি ভালো লেগেছে নীল কালারের গাউনটি। এই জামাতে পৃথুলাকে বেশ মানাবে মনে হচ্ছে। কেনাকাটা করে বের হওয়ার সময় একটা নীল কালারের শার্টের দিকে তার চোখ পড়ে যায়। সেই সাথে পৃথুলার বলা আগের কিছু কথাও তার মনে পড়ে যায়। সে সবসময় সাদা-কালো এই দুটো রঙ-ই পরে। অভ্যেস হয়ে গেছে। পৃথুলা বলেছিল, অন্য কালার পোশাকেও নাকি আরশানকে বেশ মানাবে। তাই সে নীল কালার শার্টটি কিনে নেয়।
কিছু খাবার-দাবার নিয়ে একেবারে বাংলোতে ফেরে আরশান। দরজা খোলার পর শিমুলকে জিজ্ঞেস করে,
“পৃথুলা কোথায়?”
“তার ঘরেই আছে।”
“এগুলো ওকে দিয়ে আসো।”
জামার প্যাকেটগুলো এগিয়ে দিয়ে বলল আরশান। গতকাল ওভাবে জড়িয়ে ধরার পর থেকে তার ভীষণ লজ্জা করে পৃথুলার সামনে যেতে। লজ্জা পাওয়া স্বভাব ইতোপূর্বে কখনোই তার ছিল না। কিন্তু এখন যে কী হয়ে গেল! সে নিজের রুমে গিয়ে শাওয়ার নিল। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নীল শার্ট গায়ে দিয়ে নিজেকে দেখল কিছুক্ষণ। তার এখনও ভীষণ লজ্জা করছে। কীভাবে সে শিমুল আর পৃথুলার সামনে যাবে? মনে হচ্ছিল সে লজ্জায় লাল হয়ে যাচ্ছে। নিজের এমন আচরণে মনে মনে ধিক্কার জানায় সে। এর মাঝে তাকে ডাকতে ভেতরে আসে শিমুল। রুমে ঢুকে আরশানকে দেখেই ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে বলে,
“কোথায় এলাম!”
আরশান ভড়কে গিয়েছে। শিমুল কি এখন তাকে লজ্জাজনক কোনো কথা শোনাবে? তার সংশয়কে দূরে ঠেলে দিয়ে শিমুল বলল,
“স্যার,কী দারুণ লাগছে আপনাকে!”
আরশান ভ্রুঁ কুঁচকে বলল,
“সত্যিই?”
“তিন সত্যি।”
“হাস্যকর লাগছে না?”
“কী যা তা বলছেন! আপনাকে যে কতটা সুন্দর আর হ্যান্ডসাম লাগছে আপনি নিজেও জানেন না। আমি যদি মেয়ে হতাম নির্ঘাত আপনার প্রেমে পড়ে এতক্ষণে হাবুডুবু খেতাম।”
“দয়া করে এই কথাটা ভুলেও পৃথুলার সামনে বোলো না। আবার কী থেকে কী বুঝবে আর কী বলে ফেলবে আল্লাহ্ মালুম।”
শিমুল দুই গালে স্পর্শ করে বলল,
“তওবা, তওবা! আমি এখন তার সামনে খুবই সতর্ক হয়ে কথা বলি।”
“আচ্ছা এখন শোনো আমার কথা। আমি কি শার্টটা পালটে ফেলব?”
“ওমা! কেন?”
“কেমন যেন আনইজি ফিল হচ্ছে। মানে এভাবে কীভাবে যাব পৃথুলার সামনে? ও যদি মজা নেয়?”
“ব্যাপার কী বলুন তো স্যার? সে কেন মজা নেবে?”
“ও তো আর আমাকে অন্য কালার পোশাকে দেখেনি। একদিন বলেছিল অন্য কালার পোশাক পরলে নাকি মানাবে। কোন ভূতে যে ধরেছিল কে জানে, ঐ কথা ভেবে আজ এই শার্ট কিনে ফেলেছি।”
“খুবই ভালো কাজ করেছেন। নিশ্চিন্তে থাকুন,আপনাকে আজ অসম্ভব সুন্দর লাগছে। এখন পৃথুলার রুমে যান। আপনার জন্য অপেক্ষা করছে।”
“আমার জন্য অপেক্ষা করছে কেন?”
“লাঞ্চ করবেন না? সে তো ডাইনিং রুমে আসতে পারবে না।”
“তুমিও আসো।”
আরশানের অস্বস্তি দেখে শিমুল হেসে ফেলল। বলল,
“আমি খাবারগুলো নিয়ে আসছি।আপনি যান। নয়তো আবার চেঁচামেচি করবে।”
আরশান পৃথুলার রুমের সামনে গিয়ে পায়চারি করছে। ভেতরে ঢুকতে আনইজি লাগছে। পায়ের শব্দ শুনে পৃথুলা ভেতর থেকে বলে,
“বাইরে কে? ভেতরে আসছেন না কেন?”
আরশান লম্বা শ্বাস নিয়ে ভেতরে গিয়ে পৃথুলার সামনে দাঁড়াল। যেন কোনো কিছুরই পরিবর্তন হয়নি এমন একটা ভাব ধরে টি-টেবিলের ওপর থেকে ওষুধের পাতা নিয়ে বলল,
“খাওয়ার আগে যেই ওষুধগুলো খেতে হয় সেগুলো খেয়েছেন?”
পৃথুলা জবাব দিতে পারল না। তার আগেই সে নিচে পড়ে যাওয়া ধরে। সঙ্গে সঙ্গে আরশান তাকে ধরে ফেলে। রাগীস্বরে বলে,
“শরীরে শক্তি নেই নাকি?”
পৃথুলা রাগকে তোয়াক্কা না করে মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,
“হায়ে! এ কাকে দেখছি আমি?”
আরশান আবার অপ্রস্তুত হয়ে যায়।ছেড়ে দেয় পৃথুলাকে। ব্যস্ততা দেখিয়ে বলে,
“আমার একটা কাজ আছে। আমি পরে খাব। শিমুল খাবার নিয়ে আসছে। আপনি খেয়ে নিয়েন।”
পৃথুলা হাত ধরে ফেলল। বলল,
“মিথ্যে অভিনয় করে লাভ নেই। আপনি আমার সামনে বসুন তো। আপনাকে একটু মন ভরে দেখি।”
“আরে আমার কাজ আছে।”
“আপনি কি লজ্জা পাচ্ছেন?”
আরশান অপ্রস্তুত ভঙ্গিতে বলে,
“বাজে কথা! লজ্জা কেন পাব?”
“তাহলে বসুন।”
আরশান বসল। তবে সরাসরি তাকাল না পৃথুলার দিকে। পৃথুলা মুচকি হেসে বলল,
“আচ্ছা বেশ! আর লজ্জা পেতে হবে না। আমার চুলগুলো বেঁধে দিন তো।”
“আমি পারি না।”
“ইউটিউব দেখে ট্রাই করুন। হাত ব্যথার জন্য ঠিকমতো হাত নাড়াতেও পারছি না। না হলে নিজেই বেঁধে নিতাম।”
আরশান কয়েক মুহূর্ত চুপ করে থেকে বলল,
“কী লিখে সার্চ করব?”
“বিনুনি করে দিন।”
“আমি কি পারব?”
“ট্রাই করুন। হবে।”
আরশান ইউটিউব দেখে বেশ কয়েকবার ট্রাই করল। পাঁচবারের বেলায় সুন্দরমতো বিনুনি করে দিতে সক্ষম হলো সে। বিশ্ব জয় করে ফেলেছে এমন একটা ভঙ্গিতে বলল,
“ডান!”
পৃথুলা হেসে বলল,
“আমাকে কেমন লাগছে বললেন না তো?”
আরশান ভালোমতো দেখল পৃথুলাকে। নীল কালারের গাউনটা পরেছে। ফরসা মুখটা হাসি হাসি। যদিও ক্ষ’তের দাগ রয়েছে। তবুও তার চোখে পৃথুলার সীমাহীন সৌন্দর্য ধরা দিচ্ছে। সে আবেশিত কণ্ঠে বলে,
“কোনো রাজ্যের নীল পরীর মতো লাগছে।”
“তাই?”
“হ্যাঁ।”
“আর আপনি সেই রাজ্যের সুদর্শন রাজকুমার।”
আরশান কথাটিকে এড়িয়ে গিয়ে বলল,
“শিমুল এখনো আসছে না কেন দেখে আসি।”
“আপনার পারফিউমের ঘ্রাণটা অনেক সুন্দর। একবার জড়িয়ে ধরি আপনাকে?”
আরশান ভ্রুঁ কুঁচকে তাকাল। পৃথুলা ম্রিয়মাণ কণ্ঠে বলল,
“ওভাবে কেন তাকান? আপনাকে জড়িয়ে ধরলে আমি অদ্ভুত রকম শান্তি পাই।”
চলবে…
#মহাপ্রস্থান
#পর্ব_১৭
#মুন্নি_আক্তার_প্রিয়া
____________
“আমার থেকে দূরে থাকো পৃথু, নিজেকে সরিয়ে রাখো আমার থেকে। বিশ্বাস করো, ভালো থাকবে তুমি।”
পৃথুলার হাতের মুঠোয় এখনো আরশানের হাত। সে নিষ্পাপ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছে আরশানের মুখপানে। কী স্নিগ্ধ মায়া মুখটিতে! সে মিষ্টি করে হেসে বলল,
“কী করে নিজেকে আপনার থেকে দূরে সরিয়ে রাখব বলুন তো? এইযে আপনি আমায় তুমি বলে সম্বোধন করলেন, আবেগ দিয়ে ডাকলেন পৃথু! আমি তো এখানেই ফেঁসে গেছি আরশান চৌধুরী। আমার যে আপনি ছাড়া এখন আর দ্বিতীয় কোনো পথ নেই।”
“কেন নিজেকে ধ্বংস করতে চাইছ?”
“ভালোবেসে জিততে না পারি, আফসোস নেই। আপনাকে ভালোবেসেই যে ধ্বংস হতে পারব এখানেই আমার পরম সুখ, শান্তি।”
“পাগলামো করছ তুমি।”
“আপনাকে ভালোবাসা, নিজের করে চাওয়া-পাওয়াটা যদি পাগলামো হয় তাহলে এরকম পাগলামো আমি লক্ষ, কোটিবার করতে চাই।”
“এটা সম্ভব নয়।”
“ভালোবাসায় অসম্ভব বলতে কিছু নেই।”
“আমি ভালোবাসি না।”
“মিথ্যে বলছেন।”
“কী করলে বিশ্বাস করবে?”
“আমায় অবহেলা করুন।”
আরশান কয়েক সেকেন্ড চুপ করে থেকে বলল,
“বেশ! তাই হবে।”
এরপর সে নিজের হাত ছাড়িয়ে নিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে যায়। পেছন থেকে পৃথুলা চিৎকার করে বলে,
“আমিও দেখব আপনি আমাকে অবহেলা করতে পারেন নাকি আমার ভালোবাসাকে উপেক্ষা করতে পারেন।”
তার কথা শেষ হওয়ার পূর্বেই খাবার নিয়ে রুমে এলো শিমুল। সে পৃথুলার বলা কথাটি শুনেছে। তবে কিছু বলেনি।
“খাবার নিয়ে যান। আমি খাব না।” চিৎকার করে বলল পৃথুলা।
“খাবারের সাথে রাগ করে কি লাভ হবে?”
“লাভ-লসের হিসাব তো আমি চাইনি। আমি যা বলেছি তাই করুন। ভালো লাগছে না আমার।”
পৃথুলার জেদের কাছে হার মেনে শিমুল চলে গেল। কারও-ই আর খাওয়া হলো না। বাইরে যাওয়ার জন্য আরশান রুম থেকে বেরিয়ে দেখে শিমুল খাবার নিয়ে ড্রয়িংরুমে বসে আছে। আরশান জিজ্ঞেস করল,
“কী ব্যাপার? এখনো খাওনি তুমি?”
“আমি একা কী করে খাব? আপনি খাননি। পৃথুলা খায়নি।”
“পৃথুলাও খায়নি?”
“না। রাগারাগি করে খাবার নিয়ে যেতে বলেছে। জানেনই তো কেমন জেদি!”
আরশান আর এই ব্যাপারে কিছু বলল না। শুধু জরুরী কাজ আছে বলে বাইরে চলে গেল। বাড়িতে ফিরলও বেশ রাত করে। শিমুল তখনও খাবার নিয়ে বসে আছে। আরশান গম্ভীরসুরে জানতে চাইল,
“পৃথুলা কি রাতেও খায়নি?”
“না। মেডিসিনও কিন্তু নেয়নি। এমন করলে সুস্থ হবে কীভাবে?”
আরশান রাগে ফেটে পড়ছে। দুমদাম পা ফেলে সে পৃথুলার রুমে গিয়ে উপস্থিত হয়। চিৎকার করে বলে,
“এই মেয়ে সমস্যা কী তোমার?”
পৃথুলা ঘুমিয়ে পড়েছিল। আরশানের হঠাৎ আগমন এবং চিৎকারে সে ধড়ফড় করে উঠে বসে। নিজেকে ধাতস্থ করে বলে,
“কী হয়েছে? কী করেছি আমি?”
“এখনো খাওনি কেন?”
“এমনি। ক্ষুধা লাগেনি।”
“একদম এসব নাটক আমার সাথে করবে না। খাবারের সাথে কীসের রাগ তোমার?”
“আশ্চর্য! আমি খাই বা না খাই তা নিয়ে আপনার এত মাথা ব্যথা কেন? আমার যা ইচ্ছে আমি তাই করব। আপনার আমাকে নিয়ে এত ভাবতে হবে না।”
আরশান রাগ সামলানোর চেষ্টা করছে। পৃথুলার হাত ধরে বলে,
“ওঠো। খাবে চলো।”
মুখ ফিরিয়ে নেয় পৃথুলা। অভিমানীস্বরে বলে,
“ক্ষুধা নেই।”
“আমাকে খারাপ হতে বাধ্য কোরো না।”
“ভালোবাসতেই তো বাধ্য করতে পারলাম না। যাই হোক,আপনি খেয়ে নিন। আমি এখন ঘুমাব।”
পৃথুলা যেন এক প্রকার এড়িয়ে যেতে চাইছে আরশানকে। যেটা বুঝতে বেগ পেতে হয় না বুদ্ধিমান আরশানেরও। সে জেদি কণ্ঠে বলে,
“তুমি তাহলে খাবে না?”
“খাব। শিমুল তুলাকে বলবেন আমার খাবারটা যেন ঘরে দিয়ে যায়।”
আরশান অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। পৃথুলার হাভভাব সে কিছুই বুঝতে পারছে না। শিমুল খাবার নিয়ে আসার পর সত্যি সত্যিই খাবার আর মেডিসিন খেয়েছে পৃথুলা। তবে আরশান খায়নি। তার মাথায় অন্য চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছে। পৃথুলাকে সে কীভাবে এড়িয়ে চলবে? সে তো নিজেই পৃথুলার ভাবলেশহীন আচরণ মানতে পারছে না। রাতে দু’চোখের পাতা এক করতে পারেনি সে। এপাশ, ওপাশ করেও ঘুম আসছে না। ঘড়ির কাটায় তখন রাত তিনটা বাজে। অবাধ্য মনকে আর সে আটকে রাখতে পারছে না। পৃথুলার আলিঙ্গন এখন তার ভীষণ প্রয়োজন। সে উঠে পৃথুলার রুমে যায়। দরজা চাপানো। ডিম লাইট জ্বালানো। সে গিয়ে ঘুমন্ত পৃথুলার পাশে বসল। হ্যাঁচকা টানে বুকে এনে জড়িয়ে ধরে বলল,
“তুই কি আমাকে একা শান্তিতে থাকতে দিবি না?”
পৃথুলার ঘুম ভেঙে যায়। সে ভীষণ ঘাবড়ে গেছে। থতমত খেয়ে বলে,
“মানে কী? আপনি এখানে কী করছেন?”
আরশান পৃথুলার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। কয়েক সেকেন্ড মৌন থেকে আচমকা সে পৃথুলার ঠোঁটে চুমু খেয়ে বসে। ভীষণ আবেগমাখা কণ্ঠে বলে,
“আমি তোমায় ভালো না বেসে থাকতে পারছি না কেন? কেন আমায় এত জ্বালাচ্ছ তুমি পৃথু?”
চলবে…
[কার্টেসী ছাড়া কপি করা নিষেধ।