মাই এক্স পর্ব-২০ এবং শেষ পর্ব

0
871

মাই এক্স (শেষ পর্ব)
রাজিয়া সুলতানা জেনি

২০
গাড়ীতে ফিরে এলাম। সুমন আমাকে শুধরানোর জন্য পুরো প্ল্যানটা করে। ওর জন্য যে ঘৃণা মনে জমে উঠেছিল, এক ঝটকায় সব সরে গেল। এটাই সুমন। ঠান্ডা মাথার খুনী। রাগের মাথায় কিছু করে না। ভেবে চিন্তে প্ল্যান করে। এরপরে সঠিক সময়ে এক্সিকিউট করে।
আমাকে এমন বিপদে না ফেললে সত্যি হয়তো আমি কোনদিন আগের তৃণা হয়ে উঠতাম না। মিসেস শাহেদের খোলস থেকে না বেরোলে, কখনই হয়তো আমার স্বপ্নের কাছে ফিরে যেতাম না। সুমনের প্ল্যানে শাহেদ সবচেয়ে বেশি কষ্ট পেল, এই যা।
— বাসায় ম্যাডাম?
ড্রাইভারের কথায় সম্বিত ফিরল। তাই তো, কোথায় যাব বলা হয়নি ওকে। বললাম
— ঝন্টু রেস্তোরা।
— এটা কোথায়?
তাই তো, ো জানবে কি করে? ওকে বুঝিয়ে বললাম। গাড়ী ছুটে চলল। যদি খুব ভুল না করি, আই অ্যাম ইন রাইট ট্র্যাক নাও। অন্যদিন বেশি সময় লাগলেও আজ লাগল না। রাস্তা বেশ ফাঁকাই ছিল। আধঘণ্টার ভেতরেই ঝন্টু রেস্তোরাঁয় পৌঁছে গেলাম।
গাড়ী থেকে নেমে সোজা দোতলায় গেলাম। আমরা যে কেবিনে বসতাম, সেটা ফাঁকাই আছে। ওখানে গিয়ে বসলাম। বয় আসলে ওকে বললাম
— তোমার স্যারকে বল, তৃণা ম্যাডাম এসেছে।
ছেলেটা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেল। কি উত্তর দেবে বুঝে উঠতে পারছিল না। আমতা আমতা করে বলল
— কোন স্যার ম্যাডাম?
— তোমার সুমন স্যার। উনিই আমাকে আসতে বলেছেন। যাও, উনাকে খবর দাও।
ছেলেটা কেমন সন্দেহ ভরা চোখে আমার দিকে তাকাল। বোঝার চেষ্টা করল, আমি সত্যি বলছি কি না। এরপএর সিঁড়ি বেয়ে নেমে গেল। আমার অস্থিরতা বেড়ে চলছে। সুমনকে যতটা চিনেছি, ওর প্ল্যান কখনও ফেইল করে না। আমাকে ও শুধরে দিয়েছে। মিসেস শাহেদ থেকে তৃণাও বানিয়ে দিয়েছে। বাট সেটা করতে গিয়ে ও নিজে মারা পড়বে? দ্যাটস নট লাইক সুমন। ও মরেনি। আর খোকন ভাই…
সিঁড়ির দিকেই তাকিয়ে ছিলাম। দেখা গেল বয়টা একবাটি স্যুপ নিয়ে উঠে আসছে। বুঝতে বাকী থাকল না, আই অ্যাম স্পট অন।
স্যুপের বাটিটা নামাতে নামাতে বয়টা বলল
— স্যার রওয়ানা দিয়েছেন। বললেন কিছুক্ষণের ভেতরে আসছেন।
মনে হল প্রাণ ফিরে পেলাম। আই অ্যাম রাইট। চোখ ছলছল হয়ে উঠল। ব্যাগ থেকে রুমাল বের করলাম। মিনিট পনেরর মত পার হল। এরমধ্যে স্যুপ খাওয়া শেষ করেছি। কিছুক্ষণ পর পর সিঁড়ির দিকে তাকাচ্ছি। এরপরে ফাঁকা সিঁড়ি থেকে দৃষ্টি ফিরিয়ে ঘড়ির দিকে দেখছি।
হঠাৎ সিঁড়ি দিয়ে কেউ উঠে আসবার আওয়াজ হল। পায়ের আওয়াজ বলছে, সুমন। এখনও কাউকে দেখা যাচ্ছে না। অপেক্ষার প্রহর গুণছি। এবার ওকে দেখা গেল। সুমন।
ধীরে ধীরে এগিয়ে এসে আমার উল্টোদিকের চেয়ারটায় বসল। আমার দিকে সোজাসুজি তাকাল। এরপরে হাসিমুখে জানতে চাইল
— বুঝলে কিভাবে?
সুমনের দিকে তাকিয়ে হাসলাম। এরপরে বললাম
— খোকন ভাই।
সুমন ভ্রু কুচকালো। এরপরে জানতে চাইল
— খোকন?
আমি মাথা ওপর নীচে ঝুঁকিয়ে বললাম
— কলেজের ব্যাপারে তাগাদা দিতে তোমার এই ‘ঝন্টু রেস্তোরাঁ’ কাম পার্সোনাল লিয়াজো অফিসে একদিন তিথি এসেছিল। আনফরচুনেটলি অর ফরচুনেটলি ফর মি, সেদিন তুমি এখানে ছিলে না। বাট খোকন ভাইকে ও এখানে দেখতে পায়।
— শিট।
— ইউনিভার্সিটিতে আমাকে উঠিয়ে নেয়ার ব্যাপারটাও তাহলে প্ল্যান ছিল?
— এসব কথা জানা জরুরী?
স্মিত একটা হাসি দিলাম। মাথা দুদিকে নেড়ে বললাম
— না জরুরী না।
ওয়েটার আরেক দফা স্যুপ দিয়ে গেল। সুমন এবার স্যুপে চুমুক দিল। আমার দিকে ইঙ্গিত করল খাওয়ার জন্য। আমিও শুরু করলাম। এমন সময় সুমন বলল
— এটা আমার রেস্তোরাঁ বুঝলে কি করে?
— গেস করলাম। এটা আমাদের স্মৃতি বিজড়িত জায়গা। এটা তুমি নষ্ট হতে দেবে না।
সুমন বেশ প্রশংসার দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকাল। এরপরে বলল
— বাট আই অ্যাম নট সরি।
সুমনের দিকে তাকালাম। স্মিত একটা হাসি দিয়ে বললাম
— শাহেদের জন্যও না?
— ওটা কোল্যাটারাল ড্যামেজ। উপায় ছিল না।
— ওর পাসপোর্ট, ভিসা?
সুমন বাঁকা একটা হাসি দিয়ে বলল
— এদেশে কি চাও? ক্ষমতা থাকলে ডুপ্লিকেট বানাতে কতক্ষণ লাগে?
— লেডিস হোষ্টেলের কি প্ল্যান ছিল?
— তোমাকে আরো অসহায় অবস্থায় ফেলতে চেয়েছিলাম। বাট যখন দেখলাম কলাপ্স করছ, দেন প্ল্যান চেঞ্জ করতে হল।
— খোকন ভাই আমাকে ফলো করত?
সুমন আমার দিকে তাকিয়ে স্মিত হাসি দিল। এরপরে বলল
— শাহেদ সাহেব কেমন আছেন?
মানে উত্তর দেবে না। আমিও আর জানতে চাইলাম না। ঘাড় নেড়ে বোঝালাম ‘ভালো আছে’। এরপরে জানতে চাইলাম
— প্রমোশানটা কি তোমার জন্য?
সুমন আরেকবার স্যুপে চুমুক দিল। এরপরে বলল
— তুমি কি এখনও বুঝতে পারছ না, আমি কোন কোন প্রশ্নের উত্তর দেব না?
হাসি হাসি মুখে সুমনের দিকে তাকালাম। বললাম
— পারছি। আমার কলেজের চাকরী, ইউনিভার্সিটির চাকরী অ্যান্ড রিনি আপার অসুস্থ হওয়া, এসব নিয়ে প্রশ্ন করে লাভ নেই।
সুমন হাসি হাসি মুখে আমার দিকে তাকাল। এরপরে কিছু একটা মনে পড়ল মনে হল। বলল
— বাট শেলির বিয়েতে তুমি আমাকে দেখে ঘাবড়ালে কেন? কি ভেবেছিলে?
হাসি মুখে বেশ সাবলীলভাবেই বললাম
— ভেবেছিলাম ব্যার্থ প্রেমিক তার প্রাক্তন প্রেমিকাকে সুখী দেখে জেলাস ফিল করবে। আর তার ওপর প্রতিশোধ নেবে।
সুমন কিছুক্ষণ আমার দিকে তাকিয়ে থাকল। এরপরে বলল
— থ্যাঙ্কস ফর দ্যা কনফেশান।
সুমনের দিকে তাকালাম। ও একমনে স্যুপ খাচ্ছে। খেতে খেতেই বলল
— সেজন্যই কিছুটা মেলোড্রামা করতে হল। তোমাকে বোঝাতে হল, আই ডোন্ট ওয়ান্ট ইওর ফ্লেশ।
বড় একটা নিঃশ্বাস ফেললাম। বললাম
— এখন?
— এখন স্যুপ শেষ করে সোজা বাসায় যাবে, আর আজকের পার্টি অ্যারেঞ্জ করবে।
— আমাদের সম্পর্ক?
— এখানেই শেষ।
অবাক হলাম। এটা আশা করিনি। বললাম
— কেন? মাঝে মাঝে গল্প তো করতে পারি।
— না।
—কেন?
সুমন আমার দিকে তাকাল। বলল
— কারণ তোমার মনের এখন যা অবস্থা, আমার সাথে আর কিছুদিন আলাপ করলে… ইউ উইল ফল ইন লাভ উইথ মি। অ্যান্ড দেন ইউর লাইফ উইল বি ইন ট্রাবল। আমি সেটা চাই না।
সুমনের দিকে তাকালাম। মন হল সুমন আমার ভেতরটা স্পস্ট দেখতে পাচ্ছে। ওর সাথে আমিও একমত। আমারও ধারণা, নিজেকে সামলে রাখতে পারব না। ব্যাপারটা তাই মেনে নিলাম। বললাম
— যদি কোন ইমার্জেন্সি হয়?
— ইউ উইল হ্যান্ডল ইট ইউরসেলফ। আই থিঙ্ক ইউ লার্ন্ট ইট।
— মানে ইউ আর ডেড ফর মি ফ্রম নাও অনওয়ার্ড?
— ইয়েস।
এরপরে আর কথা বাড়াইনি। বুঝতে পারছিলাম, সুমন ইজ রাইট। মনের ভেতরে ঝড় উঠতে শুরু করেছে, দ্রুত এখান থেকে ফিরে যাওয়া দরকার। স্যুপ শেষ করে সিড়ি বেয়ে নেমে এলাম। পেছন ফিরে তাকালাম না। জানি তাকালেই পা পিছলাবে।
গাড়ীতে উঠে ড্রাইভারকে শুধু বললাম
— বাসায় চলো।

সমাপ্ত