মাফিয়া ক্রাশ বর পর্ব-২৩

0
2372

#মাফিয়া_ক্রাশ_বর
#লেখিকা :মার্জিয়া রহমান হিমা
#পর্ব : ২৩

দের মাসে বাংলাদেশ, নিউজিল্যান্ড, দুবাই সহ অনেক গুলো ড্রাগস কারখানা পুরিয়েছে। তবে এখনও আসল মালিককে খুঁজে পায়নি। আখিলও সেই ছেলেটার কোনো ছবি পায়নি। এদিকে রায়হান অফিসের কাজ সাথে আরও কিছু কালো ব্যবসার কারখানা নষ্ট করার জন্য অভিদকে নিউজিল্যান্ড যাওয়ার জন্য তাগিদ দিচ্ছে। অভিদ যেতে চাইছে না।

রায়হান অভিদের রুমে এসেছে। রুমের লাইট অফ। পুরো রুম অন্ধকারে ঢুবে আছে। দেড় মাসে অভিদ নিজেকে এই অন্ধকার রুমের মাঝেই ডুবিয়ে রেখেছে।! রায়হান নিঃশব্দে দরজা খুলে রুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দেয়। রুমের লাইট জ্বালিয়ে বিছানায় বসে অভিদের দিকে তাকায়।
অভিদ তার বড় চেয়ারে বসে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে। কোনো দিকেই খেয়াল নেই। বুঝতে পেরেছে রায়হান এসেছে। কিন্তু অভিদ কোনো কথাই বলে না। রায়হান অভিদকে চুপ দেখে একটু গলা ঝেড়ে বলে
” তুই কি ডিসিশন নিয়েছিস ?? নিউজিল্যান্ড যাবি তো !! আমি সব রেডি করবো ??” অভিদ বাইরের থেকে দৃষ্টি সরিয়ে বিরক্ত আর রাগ নিয়ে বলে
” তোকে বলেছিনা আমি কোথাও যাবো না। এতো দরকার হলে তুই চলে যা না।”
রায়হান বড় একটা শ্বাস নিয়ে মুখ দিয়ে নিশ্বাস ছাড়ল। শান্তভাবে বলে
” তোর গেলে সমস্যাটা কোথায় ?? এতোদিন ঘর বন্ধি রেখেছিস ঠিকাছে কিন্তু এখনতো নিজেকে সামলাবি নাকি ?? তোর মতো এতোটাও কেউ ভেঙে পরে না। সেখানে তুই একজন মাফিয়া হয়ে এতো ভেঙে পরেছিস কেনো বলবি প্লিজ ??”

অভিদ চেয়ারে হেলান দিয়ে বলে
” রুহিকে কবে খুজে পাবো ?? দেড় মাস হয়ে গেলো এখনও খুঁজে পাইনি। কোথায় হারিয়ে গিয়েছে রুহি ?? রুহি কে কি আমি আর খুঁজে পাবো না ?? পুলিশ দেরও আমার ভরসা হচ্ছে না।”

আখিল রুমে ঢুকতে ঢুকতে বলে
” খুঁজে পাবে কি করে ?? নিজেকে ঘরের মধ্যে আটকে রেখে তুমি এমনি রুহিকে খুঁজে পেয়ে যাবে নাকি যে রুহিকে নিয়ে গিয়েছে সে নিজেই তোমার কাছে রুহিকে দিয়ে যাবে ?? যদি সেরকম কিছু ভেবে থাকো তাহলে ভুল ভাবছো বুঝেছো ?? রুহিকে যদি দিয়ে যাওয়ার হতো না !! তাহলে দেড় মাস অপেক্ষা করতে হতো না সেদিনই দিয়ে যেতো। আর তোমাকে কি বলবো তুমি একজন মাফিয়া হয়েও নিজের হাত পা গুটিয়ে বসে আছো। আমি তোমার জায়গায় থাকলে রুহিকে খুঁজে বের করার জন্য পুরো পৃথিবী ঘুরে দেখতাম। এখনও দেখছিও। তোমার সাথে বিয়ে না হয়ে আমার সাথে বিয়ে হলেই পারতো। তুমি তো হার মেনে বসে আছো। হারই বা কোথায় মানলে সবাইকে দেখানোর জন্য সারা দেশে পুলিশ লাগিয়ে রেখেছো আর নিজে ঘরে বসে আছো। ”

অভিদ চেয়ার ছেড়ে উঠে আখিলের কলার চেপে ধরে অগ্নিচোখে তাকিয়ে চোয়াল শক্ত করে বলে
” অভিদ রায়জাদা কখনও হার মানে না। অভিদ রায়জাদা সব করতে পারে। আমি আমার রুহিকে খুঁজে বের করবোই। রুহি শুধু আমার। তোর সাহস কি করে রুহিকে নিয়ে এসব বলার ??”

রায়হান আখিলকে অভিদের থেকে ছাড়িয়ে অভিদের কাধে দুই হাত রেখে বলে
” তুই দুদিনের ভেতরে নিউজিল্যান্ড যাবি”
অভিদ বিরক্ত হয়ে রায়হানের হাত সরিয়ে বলে
” উফফ নিউজিল্যান্ড যাওয়ার সাথে এসবের কি সম্পর্ক ??”

রায়হান নিশ্বাস ফেলে বলে
” আমাদের কোম্পানির নতুন ডিল নিউজিল্যান্ডে হচ্ছে। সাথে আরও কিছু কাজ আছে অফিসের। আর কিছু কালো ব্যাবসা সেগুলোর ও তো কিছু করতে হবে নাকি। সেটা তোকে আগেই তো বলেছি। তুই সেইসব ভাবছিস না কেনো বলতো।
এদিকে পুলিশরা রুহিকে খুঁজে পাচ্ছে না। আর তুই তো পুলিশের উপর ভরসা করতে পারছিস না তাহলে তুই নিউজিল্যান্ড গেলে অফিসও দেখতে পারবি আর রুহিকেও খুঁজে দেখতে পারবি । একবার তো চেষ্টা করতেই পারিস তাই না।”

অভিদ বাইরের দিকে তাকিয়ে বলে
“আমি তো আমার রুহিকে খুঁজে পেতে চাই। আবার আমরা একসাথে থাকতে চাই কিন্তু যদি রুহিকে খুঁজে না পাই তাহলে !!” রায়হান রেগে গেলো অভিদের কথায়। প্রতিমুহূর্তেই এক কথা বলে অভিদ ‘চাই তবে যদি না পাই ‘ এই একটা কথাই অভিদকে এমন করে করে দিয়েছে। রায়হান রেগে টেবিলের উপর থেকে কাচের গ্লাসটা হাত দিয়ে ফ্লোরে ফেলে দিয়ে চেচিয়ে বলতে থাকে
” এই জন্যই তোর উপর আমার বিরক্ত লাগছে। এই কথাটা কেনো বার বার মনে করিস বলতে পারবি ?? দেড় মাস ধরে একই কথা বলছিস। আরে মনের মধ্যে সেই ভাবনা, বিশ্বাসটা রাখতে হয় যে আমি রুহিকে পাবো !! কিন্তু তুই তো মনে মনে ভেবেই নিয়েছিস যে রুহির আসবে না। আরে বি পজেটিভ ইয়ার। তুই শুধু শুধু সবাইকে দেখাচ্ছিস কেনো যে তুই কতোটা ভালোবাসিস ?? এতই যখন ভালোবাসিস তাহলে রুহিকে খুঁজে বের করে দেখা তাহলেই বুঝতে পারবো তুই রুহিকে কতোটা ভালোবাসিস। যদি মনে ভালোবাসা থাকে তাহলে সবই সম্ভব। যদি খুঁজে পাওয়ার হয় না তাহলে তোর ভালোবাসার টানেই রুহিকে খুঁজে বের করতে পারবি।”

অভিদ মাথা নিচু করে রেখেছে। সত্যি বলতে সেদিনের পর থেকে রুহিকে খুঁজে পাবে না কথাটা সত্যি সত্যি মাথায় চেপে বসে। সত্যিই ধরে নেয় রুহিকে অভিদ খুঁজে পাবে না। তখন খুব কষ্ট হয়েছিলো। রুহিকে ছাড়া সত্যি অসহায় লাগে। রায়হানের কথা শুনে অভিদের সত্যি নিজেকে বোকা মনে হচ্ছে। কেনো সে নেগেটিভ কথা ভাবছে ?? পজেটিভ ভাবেনি কেনো ??! রায়হানের কথা শুনে এখন সত্যি সত্যি মনে পজেটিভ ভাবনা আসছে। মনে হচ্ছে অভিদ আবার তার রুহিকে পাবে।

অভিদ মাথা নিচু করে গম্ভীর গলায় বলে
” ঠিকাছে আম নিউজিল্যান্ড যাবো। কালকেই যাবো। কালকের ফ্লাইটের টিকিট বুক কর। আর তুইও যাবি।” বলে রুম থেকে বেড়িয়ে যায়।
অভিদ যেতেই রায়হান আর আখিলের মুখে বাকা হাসি ফোটে। দুজন প্লেন করেই এসেছিলো আজকে অভিদকে রাজি করিয়েই ছাড়বে। রায়হান জানতো আখিল রুহির ব্যাপারে কথা বললেই অভিদ রিয়েক্ট করবে। তাই আখিলকে বলেছিলো রুহিকে নিয়ে কিছু বলতে। প্লেন সাকসেসফুল হয়েছে তাই দুজনই খুশি। রায়হান হালকা হেসে বলে
” তুমি চাইলেই যেতে পারতে ”
আখিল মাথা নেড়ে বলে
” না, আমার গেলে হবে না। অফিসে একটু কাজের চাপ আছে। ” রায়হান আর কিছু বলল না এই নিয়ে। রায়হান নিজেও জানে আখিলের এখন একটু বেশি কাজের চাপ চলছে। রায়হান, আখিল কথা বলতে বলতে বের হয়।

এয়ারপোর্টে বড়সড় ঝড় বইছে। মানুষ অভিদ আর আখিল, রায়হান, আশিককে যেন চোখ দিয়ে গিলে খাচ্ছে। তার থেকেও বড় কথা বিজনেসরাজ্যের দুই শত্রু এক সাথে দারিয়ে আছে তাও শান্তভাবে। আবার রায়হান, আখিল, আশিক গল্পও করছে এটা দেখে সবাই অনেক বড় ঝটকা খেয়েছে। অনেক ছেলে, মেয়ে সেলফি, অটোগ্রাফ নেওয়ার জন্য অভিদ দের চেপটা বানিয়ে ফেলেছিলো। তবে গার্ডদের হাতের গানের কারণে অভিদের বাচিয়ে নিয়েছে। যদিও অভিদ রেগে গিয়েছিলো তবে আজকে মন ভালো থাকায় কাউকে কিছু বলেনি।
মন ভালো থাকার কারণ হচ্ছে অভিদের আজকে সকাল থেকেই মনে হচ্ছে অভিদ তার রুহিকে খুঁজে পাবে।

অভিদ, রায়হান, আখিল, গার্ডরা এখন এয়ারপোর্টের স্পেস একটা জায়গায় বসে আছে।
সবাইকে সরিয়ে অনেক কষ্টে এখানে এসেছে। রুহির বাড়ি আর বাড়ির সবার থেকে বিদায় নিয়ে এসেছে । নিউজিল্যান্ডে অভিদ, রায়হান আর তাদের গার্ডরা যাচ্ছে। ফ্লাইটের এখনও ১৫ মিনিট আছে।
আখিল অভিদরা ফ্লাইটে উঠার অপেক্ষায় আছে।
এদিক ওদিক তাকাচ্ছে আর রায়হানের সাথে কথা বলছে। কিছুক্ষণ পর অভিদদের নাম ডাকা হয়। আখিল এসে অভিদের সামনে দাঁড়িয়ে বলে
” তুমি রুহিকে ভালোবাসো। রুহিকে নিয়ে পজেটিভ ভাবনা ভাববে। পুলিশ খুঁজেছে এখন তুমি খুঁজবে। আর তোমার কাজ গুলোও ভালোভাবে করো। ” অভিদ কিছু না বলে গম্ভীর মুখ করে একবার আড়চোখে আখিলের দিকে তাকিয়ে গটগট পায়ে চলে যায়।

আখিল দীর্ঘনিশ্বাস ফেললো। অভিদ এখনও রেগে আছে আখিলের উপর। রায়হান আখিলের কাধে হাত রেখে চোখের পলক ফেলে শান্তনা দিলো। আখিল মেকি হেসে বলে
” হ্যাপি জার্নি। আর রুহির কোনো খোজ পেলে আমাকে জানিও ” রায়হান হুম বলে হ্যান্ডসেক করে বিদায় নিয়ে চলে যায়।

রায়হান অভিদের পাশে বসতেই। অভিদ রাগি গলায় বলে উঠে
” আচ্ছা তোর সমস্যা কোথায় বলতো। তুই ওই আখিলের সাথে এতো ঘেঁষাঘেঁষি করিস কেনো। ওর জন্যই আজকে আমার রুহি আমার কাছে নেই। তারপরও তুই ওকে সাপোর্ট করিস। সত্যি করে বলতো তুই আমার বন্ধু তো নাকি এখন ওই আখিল তোকেও আমার থেকে কেড়ে নিয়েছে ??” রায়হান চেঁচিয়ে বলে উঠে
” অভিদ !!!” অভিদ এখনও রাগি চেহারায় তাকিয়ে আছে। রায়হান মুখ ঘুড়িয়ে নিজেকে শান্ত করে আবার অভিদের দিকে তাকিয়ে ধীর কন্ঠে বলে
” তুই এখনও রেগে আছিস ঠিকাছে। তুই এরকম ভাবে কথা বলছিস কেনো বলতো ?? আমার তো তোকে মাফিয়া না হিংসুটে মনে হচ্ছে। আর আখিল তো নিজের ভুলের জন্য অনেক ক্ষমা চেয়েছে। এখনও নিজেকে দোষী ভাবে। অপরাধবোধ করে। নিজের ভুল বুঝতে পেরেছে। তাহলে তুই এখনও কেনো রেগে আছিস ??”
অভিদ মুখ ঘুরিয়ে নেয়। রায়হান আর কিছু বলে না।

——————

অভিদ নিউজিল্যান্ড এসেছে ৩ দিন হয়ে এসেছে। অফিসের কাজে তিনদিন অভিদ বেশিই ব্যস্ত ছিলো। রায়হান এখানকার পুলিশ অফিসারের সাথেও কথা বলেছে। তারা বলেছে এখনও রুহির কোনো ক্লু পায়নি। অভিদ রেগে কথাই বলেনি। আজকে রাতের দিকে অভিদের কোথাও যাওয়ার কথা রয়েছে। রায়হান জানিয়েছে সেখানে কারখানা একটা আছে। রায়হান আর অভিদ তাদের নিউজিল্যান্ডের বাড়িতে আছে। রায়হান অভিদ কে বুঝে গিয়েছে যে তিনদিনে অভিদ নিজেকে আবার আগের মতো করে নিয়েছে তবে আগের থেকে রাগটা অনেক বেশি।

রায়হান আর অভিদ ড্রইংরুমে এসে টেবিলে বসে পরে। সার্ভেন্টরা টেবিলে সব সার্ভ করে রেখেছে। অভিদ খেতে খেতে বলে
” এতো গুলো কারখানার মালিককে খুঁজতে পেরেছিস এখনও ?? বাংলাদেশ সহ এতো গুলো কারখানা পোরানো হয়েছে তবু এই আসল মাথাকে খুজে পাইনি আমরা। ”
রায়হান বাকা হেসে বলে
” আজকের অপারেশনটা একটু অন্যরকম এমন ব্যবস্থা করেছি যে আজকে বলতে বাধ্য হবে ওদের বসের নাম।”

অভিদ কঠোর গলায় বলে
” আবার এমন ব্যবস্থা করিস না যে নিজেই নিজের মাথা গুলি করে মরে যায়।” রায়হানের মুখে হাসি চলে গেলো। চোখ ছোট ছোট করে তাকায়। অভিদের দিকে।

চলবে… wait for next part….