#মাফিয়া_ক্রাশ_বর
#লেখিকা :মার্জিয়া রহমান হিমা
#পর্ব : ২৯
রায়হান খুশি হয়ে অভিদকে বলে
” অভিদ রুহির কাছে চল।” অভিদ হালকা হেসে রুহির কেবিনে দ্রুত ঢুকে পরে। পেছনে রায়হানও আসে। অভিদ রুহির বেডের কাছে গিয়ে দাঁড়ায়। রুহির চোখ বন্ধ অক্সিজেন মাস্কের ভেতরে তার শুষ্ক ঠোট জোড়া নাড়িয়ে বলছে
” অভিদ কোথায় আপনি ?? অভিদ , অভিদ। আমাকে নিয়ে যান এখান থেকে। অভিদ।” আস্তে আস্তে বলছে। অভিদ এক হাত রুহির হাতের উপর হাত রেখে অন্য হাত রুহির মাথায় রেখে আস্তে করে বলে
” রুহি দেখো আমি এখানেই আছি। একটু চোখ খুলে তাকাও !! রুহি!!” কিছুক্ষণ ডাকার পর অভিদ দেখলো রুহি আস্তে আস্তে চোখ খুলছে। অভিদ অধির আগ্রহ নিয়ে বসে আছে। কখন রুহি পুরোপুরি ভাবে চোখ খুলবে সেটা ভাবছে
রুহি তার শরীরে অসহ্য যন্ত্রণা নিয়ে আস্তে আস্তে চোখ খুলে। চোখ বারবার বন্ধ হয়ে আসতে চাইছে কিন্তু রুহি জোড় খাটিয়ে চোখ খুলে রাখার চেষ্টা করছে। রুহি অনুভব করে কেউ তার মাথায় আর হাতে হাত রেখেছে। রুহি দম নিয়ে আস্তে করে ঘাড় ঘুরিয়ে পাশে তাকাতেই অভিদের চেহারা দেখতে পায়।
অভিদ রুহিকে তার দিকে তাকাতে দেখে মুখে একটা হাসি ফুটলো।রুহি অভিদকে দেখে একটা শুকনো ঢোক গিলে মুখে হাসি নিয়ে কাতর কন্ঠে বলে
” আমাকে কবে নিয়ে যাবেন এখান থেকে ?? আপনি আমাকে এখনও এখান থেকে নিয়ে যাচ্ছেন না কেনো?? আমাকে ওরা খুব মারে। আমার খুব কষ্ট হয়। আপনি কবে আমার কাছে আসবেন ?? আমার মাফিয়া ক্রাশ বর আমাকে বাঁচাতে আসবেন না ?? আমাকে নিয়ে জান প্লিজ।” বলতে বলতে চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পরলো। ” অভিদের চোখেও পানি ছলছল করছে। আবার অবাক হয়েছে রুহির কথা শুনে।
অভিদ নার্সের দিকে তাকাতেই নার্স এসে বলে
” উনি ভেবেছেন আপনি ওনার imagination এ এসেছেন। তাই এসব বলছে। আপনি ওনার সাথে কথা বলুন। আমি ডক্টরকে বলে আসছি।” বলে কেবিন থেকে বেরিয়ে যায়।
রায়হান রুহির অন্য পাশে দাঁড়িয়ে আছে। অভিদ রুহির পাশে বসে রুহির হাতটা উঁচু করে উঠিয়ে ঠোট ছুঁয়ে রুহির দিকে তাকিয়ে কান্না গলায় বলে
” রুহিপাখি !! আমি সত্যি এসেছি তোমার কাছে। তুমি এখন আমার কাছে। তোমার আর কোনো বিপদ নেই। তোমাকে আমি আর কখনো আমার কাছ থেকে দূড়ে যেতে দেবো না।” রুহি বিশ্বাসই করতে পারলো না অভিদের কথা। রুহি ব্যথা নিয়েই কষ্ট করে হাত উঠিয়ে মুখের অক্সিজেন মাস্কটা সরায়। অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে অভিদের দিকে। অভিদের গলা শুনেছে কতো দিন পর। রুহি অবিশ্বাসও হয়ে কাপাকাপা হাতটা অভিদের মুখে রাখে। অভিদের চোখে, মুখে, ঠোঁটের উপর নরম ভাবে হাত বুলিয়ে নেয়। রুহির কান্না গুলো দলা পাকিয়ে আসে। গলায় কথা আটকে আছে, চোখ দিয়ে পানি পরছে। রুহি পাশে তাকিয়ে দেখে রায়হান দাড়িয়ে আছে। রায়হানের চোখও ছলছল করছে। রুহু কান্না গলায় বলে
” আপনি এতো দেড়ি করে এসেছেন কেনো ?? আমি কতো দিন ধরে আপনার জন্য অপেক্ষা করছিলাম !! আর আপনি এখন এসেছেন ?? জানেন ওরা আমাকে কতো মেরেছে।” বাচ্চাদের মতো করে বলে ফুঁপিয়ে কেঁদে দেয়। অভিদ ঝুকে রুহির চোখের পানি মুছে দিয়ে বলে
” কান্না করবে না আর। তুমি এখন আমার কাছে।
আর কেউ তোমাকে কষ্ট দেবে না। আমি এতোই অপদার্থ ছিলাম যে তোমাকে এতোদিন খুঁজেই বের করতে পারিনি।”
রুহি আস্তে আস্তে কান্না থামিয়ে একটা বড় শ্বাস নিয়ে অভিদের হাতটা শক্ত করে চেপে ধরে। অভিদের দিকে অসহায় ভাবে তাকিয়ে কান্না গলায় বলে
” আমাকে একটু বসিয়ে দিন। আমি বসবো।” অভিদ রুহির হাতের উপর আলতো করে হাত রেখে বলে
” বসতে হবে না শুয়ে থাকো। শুয়েই কথা বলো।” রুহি আবার অভিদের দিকে অসহায় আর কান্না কান্না ভাবে নিয়ে তাকায়। অভিদ এবার রুহির অনুরোধ উপেক্ষা করতে না পেরে রুহির কাছে গিয়ে রুহির দুইপাশে কাধে হাত রেখে রুহিকে উঠাতে নেয়। রুহির হাতের ব্যাথায় অভিদের হাত লাগতেই রুহি ব্যাথায় কুকড়ে উঠে অভিদের হাত খামছে ধরে আবার বেডে শুয়ে পরে। অভিদ অস্থির হয়ে বলে
” কি হয়েছে, কোথায় ব্যাথা পেয়েছো ?? বেশি ব্যাথা করছে ?? দাড়াও ডক্টর কে ডাকছি। ” রুহিকে ছেড়ে যেতে নিলেই রুহি অভিদের হাত ধরে ধীর কন্ঠে বলে
” ডক্টর ডাকতে হবে না। ঠিকাছি আমি।শুধু একটু ব্যাথা করছে আর কিছু না। আপনি এখানে বসুন ”
অভিদ ভয় নিয়ে আবার বসে বলে
” তোমাকে উঠতে হবে না শুয়ে থাকো।” রুহি হালকা হাসলো। ঘাড় ঘুড়িয়ে রায়হানের দিকে তাকিয়ে বলে
” ভাইয়া কেমন আছেন ?? কথা বলবেন না আমার সাথে ??”
রায়হান মুচকি হেসে রুহির মাথায় হাত বুলায়। নরম কন্ঠে বলে।
” বলবো না কেনো ?? কতোদিন পর তোমাকে পেলাম। তোমাদের দুজনকে আবার একসাথে দেখতে পেরে খুব খুশি লাগছে। তোমাকে এখানে খুঁজে পাবো আন্দাজ করতে পারলে আমরা দেড় মাস আগেই এখানে আসতাম আমাদের কারণে তোমাকে এতো কষ্ট সহ্য করতে হয়েছে। অভিদকে আরও আগে এখানে নিয়ে আসলে আর এমন হতো না। আমাদের ক্ষমা করে দিও।”
” কি সব বলছেন ভাইয়া ?? আপনাদের জন্য কেনো এমন হবে ?? আমার আর সেখানে থাকা অনেক মেয়ের ভাগ্যে এমন হওয়ার কথা ছিলো তাই হয়েছে। আপনারা নিজেদের দোষী ভাববেন না ” রায়হান চেয়ারে বসে অভিদের দিকে তাকিয়ে রহস্যময় হাসি দিয়ে বলে
” তাহলে !! তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে যাও। অনেক কিছু দেখতে হবে তোমাকে। যারা তোমার এই অবস্থা করেছে তাদের পরিণতিও তো তোমাকে দেখতে হবে নাকি !!” রায়হানের কথা শুনে রুহির সিহাবের কথা মনে পরলো।
মারের দৃশ্য গুলো চোখের সামনে ভেসে উঠছে। রুহি অস্থির হয়ে উঠলো। চোখ দিয়ে আবার পানি পরতে থাকে রুহি চোখ বন্ধ করে বেড খামছে ধরে চিৎকার করে উঠলো আর বলতে থাকে
” মারবেন না আমাকে। আহ, মারবেন না।”অভিদ, রায়হানভয় পেয়ে গেলো রুহিকে এমন করতে দেখে। অভিদ রুহির কাছে এসে রুহির গালে হাত রেখে অস্থির হয়ে বলতে থাকে
” রুহি, রুহি দেখো এখানে কেউ নেই। কেউ মারবে না তোমাকে। রুহি !! রুহি দেখো আমি অভিদ। রুহি ??” অভিদের কোনো কথা রুহির কানে পৌছলো না।রুহি আগের মতো করতে থাকে। রায়হান দরজার সামনে গিয়ে হাক ছেড়ে বলে উঠে
“Doctor !! Come hear please. Quickly.” কিছুক্ষণের মধ্যে সেই ডক্টর আর নার্স ছুটে আসে। ডক্টর রুহিকে দেখে বলে
” প্যানিক এটাক শুরু হয়েছে।” ডক্টর গিয়ে রুহিকে একটা ইনজেকশন দিলো। আস্তে আস্তে রুহি স্বাভাবিক হয়ে ঘুমে তলিয়ে যেতে থাকে।
অভিদ ডক্টরের কাছে গিয়ে বলে
” কি হয়েছে ওর ডক্টর ??”
ডক্টর অভিদের দিকে ঘুরে বলে
” আসলে ওনাকে যে মারা হতো সেইরকম কোনো দৃশ্য চোখের সামনে ভেসে উঠেছে আর তাই মিসেস রুহির প্যানিক এটাক শুরু হয়েছে। চিন্তা করবেন না ঘুমের ইনজেকশন দিয়ে দিয়েছি ঠিক হয়ে যাবে। আর আগেও বলেছি এখনও বলছি ওনাকে একা রাখবেন না তাহলে এমিন হবে।” বলে বেড়িয়ে যায়। অভিদ নিশ্বাস নিয়ে চেয়ারে বসে পরে। রায়হানও চেয়ারে বসে মাথা নিচু করে অপরাধীর মতো বলে
” উফফ আমার জন্যই এমন হলো। কেনো যে সিহাবের নাম উঠালাম ??” অভিদ বেডে হাত রেখে বলে
” নিজেকে দোষ দিচ্ছিস কেনো। সব তো ওদের জন্য হয়েছে। এখন বল ওদের কি অবস্থা ??”
রায়হান মুখ শুখনো করে বলে
” ওদের শেষ করতে গেলে তোকেও লাগবে আমি একা পারলেও করবো না। ”
অভিদ বিরক্ত হয়ে বলে
” তুই করবি টা কি?? শুধু ওই আখিলের সাথে কথা বলবি ??” রায়হান ছোট ছোট চোখ করে অভিদের দিকে তাকিয়ে রুদ্ধ কন্ঠে বলে
” তুই কথায় কথায় ওর কথা তুলিস কেনো ?? আজকেই আসছে তুই আবার ওকে উল্টাপাল্টা কিছু বলিস না। ওকে দেখলেই তোর শরীরে আগুন ধরে তাই না ??” অভিদ কথা ঘুরিয়ে গম্ভীর গলায় বলে
” জোতির খবর কি ?? ওকে কোথায় রেখেছিস ?? ওকে কিন্তু আমি ছারবো না। জোতি কম দোষী ন আজকে রুহির এই অবস্থার জন্য ।”
রায়হান চেয়ার ছেড়ে উঠে দাড়িয়ে বলে
” ওকে তুই ছারবি কি ?? কালকে থেকে শুনলাম এখনও বিছানায় পরে আছে। গার্ড ডক্টর ডেকেছিলো। ডক্টর নাকি বলেছে জোতিকে মারা হয়েছে তাই দুর্বল হয়ে আছে।” অভিদ দাতে দাত চেপে বলে
” ভালো হয়েছে। অসভ্য মেয়ে ছিলো একটা এখন নিজের কর্মফল ভোগ করুক।” রায়হান ঠোট চেপে হাসলো। হাসির কারণটা অজানা। এক অজানা কারণেই হেসেছে।
রাতের দিকে রুহির ঘুম ভাঙলো। রুহি ঘুম থেকে উঠে দেখে কেবিনে কেউ নেই। খালি কেবিন দেখে রুহির মনে আবার ভয় জেগে উঠলো। রুহি শুকনো গলায় হালকা চেঁচিয়ে বলে
” রায়হানি ভাইয়া !!” রুহির ডাক শুনে অভিদ কেবিনে আসে। রুহিকে জাগানো দেখে অভিদ রুহির কাছে গিয়ে রুহির মাথায় হাত রেখে বলে
” কি হয়েছে ভয় লাগছে ?? সবাই এখানেই আছে তুমি নিশ্চিন্ত থাকো। তুমি ভয় পেয়ো না এখানে কেউ আসবে না আমরা ছাড়া।” রুহি মাথা নাড়ালো। রুহি অভিদের দিকে তাকিয়ে দেখে অভিদের মুখটা শুকিয়ে গিয়েছে। রুহি ভ্রু কুচকে অভিদের মুখে হাত রেখে বলে
” আপনার চোখ, মুখ শুকিয়ে গিয়েছে কেনো ?? আপনি খাওয়া, দাওয়া করেন না??” অভিদ রুহির হাতের উপর হাত রেখে বলে
” আমি তো দুদিন হলো খাইনি কিন্তু তুমি !! তুমি তো দিনের পর দিন খাওনি। আয়নায় নিজেকে দেখে তুমি কাঁদবে। কি অবস্থা হয়েছে শরীরের। একদন দুর্বল হয়ে আছো।”
রুহি ভাঙা গলায় বলে
” কি করবো !! আমার ওখানে একদম ভালো লাগতো না। ওদের দেওয়া খাবার দেখলে মনে হতো বিশ মিশিয়ে রেখেছে। আপনার কথা মনে পারতো তাই খেতে পারতাম না। কিন্তু জোতি জোর করিয়ে কিছু খাওয়া তো তাই হয়তো বেচে আছি।” অভিদ রুহির দিকে ঝুকে রুহিকে জড়িয়ে ধরে। রুহি চোখ বন্ধ করে রেখে অভিদকে এভাবেই অনুভব করতে থাকে। কিছুক্ষণ পরে অভিদ সোজা হয়ে বসে। রুহির হঠাৎ বাড়ির সবার কথা মনে পরে। রুহি অভিদের দিকে একটু উৎফুল্ল হয়ে তাকিয়ে বলে
” আচ্ছা বাড়ির সবার কি অবস্থা ?? ওরা সবাই কেমন আছে ?? ওদের সাথে আমাকে কথা বলিয়ে দেবেন না ?? বাবা, মা, রাইমা, অনি, মিশু তুষ ভাইয়া সবার সাথে কথা বলবো আমি।” অভিদ কিছুক্ষণ রুহির হাসি মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে চুপ করে। নিশ্চুপ থেকে হঠাৎ বলে উঠে
” ওদের সাথে কিথা বলবে না তুমি।”
রুহি অবাক হয়ে বলে
” মানে ??” অভিদ মুচকি হেসে বলে
” ওদের সাথে কথা বললে ওরা সবাই এখন তোমাকে দেখে কাঁদবে। তুমি একটু সুস্থ হও উঠে বসো তাহলেই আমি ওদের সাথে তোমার কথা বলিয়ে দেবো। তোমাকে এভাবে শুয়ে থাকতে দেখে সবাই আরও কষ্ট পাবে। বুঝেছো ??” রুহি ভেবে দেখলো অভিদ ঠিকই বলছে। তাই মাথা মাড়িয়ে হ্যা বলে। অভিদ হেসে নার্স কে ডেকে বলে রুহির খাবার দিয়ে যেতে। নার্স কিছুক্ষণ পরে এসে রুহি আর অভিদের খাবার দিয়ে যায়। আর রুহির বেডের মাথার দিকে উঁচু করে দেয়। রুহি নড়তে পারছে না তাই এভাবে খাওয়াতে হবে। অভিদ রুহির পাশে বসে একটু একটু করে সুপ খাইয়ে দিতে থাকে। রুহির স্যালাইন চলছে তবে ডক্টর কিছুক্ষণের জন্য অফ রেখেছে তাই অভিদ ডক্টরের সাথে কথা বলে রুহির খাওয়ার ব্যবস্থা করেছে।
রুহির খাওয়া শেষের দিকে আসতেই রুহির কেবিনে রায়হান ঢোকে। রুহি রায়হানকে দেখে কিছু বলতে নিলেই রায়হানের পরে আখিলকে ঢুকতে দেখে ভয় পেয়ে যায়। রুহি ভয় পেয়ে তার ব্যাথার শরীর নিয়ে অভিদকে জড়িয়ে ধরে। কিছুক্ষণের জন্য ব্যাথার কথা ভুলেই গেলো।
চলবে…wait for next part….