#মাফিয়া_ক্রাশ_বর
#লেখিকা :মার্জিয়া রহমান হিমা
#পর্ব : ৩৮
অভিদ রুহির কোলে মাথা রেখে চোখ বন্ধ করে শুয়ে পরে। রুহি ভয়ে ভয়ে অভিদের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে থাকে। অভিদ রুহির দুই হাত ধরে ঠোট ছোঁয়াতেই রুহির ভয় কেটে গেলো। অভিদ চোখ বন্ধ করে সিহাবের কথা ভাবতে থাকে। বিডি তে ফিরতে না ফিরতেই সিহাব পালিয়ে গিয়েছে। সিহাবকে যতো দ্রুত সম্ভব খুঁজে বের করতে হবে। সবাইকেই সাবধানে থাকতে হবে। কিছু সময় পরে রুহি অভিদের মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বাইরে থেকে কয়েকজনের কথার আওয়াজ শুনতে পেলো। রুহি তার হাত চালানো বন্ধ করে দেয়। দরজার দিকে তাকিয়ে বলে
” বাইরে কি কেউ এসেছে?? মা বাবা আসেনি তো!!” ভেবেই রুহির মুখে এক চিলতি হাসি ফুটলো।
রুহি খু্শি হয়ে অভিদের দিকে তাকিয়ে বলে
” মা, বাবা এসেছে মনে হয় চলুন আমরা বাইরে যাই।” অভিদ চোখ খুলে উপরের দিকে তাকিয়ে আছে। রুহি অভিদকে একধ্যানে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে বুঝতে পারলো অভিদ কোনো কারণে অন্যমানস্ক হয়ে আছে। রুহি অভিদের বাহুতে ধরে হালকা ধাক্কা দিতেই অভিদ শান্ত চোখে রুহির দিকে তাকায়। রুহি চিন্তিত হয়ে বলে
” কি হয়েছে আপনার ?? ঠিকাছেন তো ??” অভিদ উঠে বসে স্বাভাবিক ভাবে বলে
” আমার আবার কি হবে ??” রুহি ভ্রু কুচকে বলে।
” আপনাকে ডাকলাম আপনি তো ডাক শুনলেন না। কোথায় হারিয়ে গিয়েছিলেন।” অভিদ রুহির মুখের সামনে মুখ আনতে আনতে মাতাল কন্ঠে বলে
” আমি তো অনেক জায়গায়ই হারিয়ে যাই। তুমি চাইলে তোমার মাঝেও হারিয়ে যেতে পারি।” বলে মুখটা এগিয়ে নিয়ে যেতে থাকে। রুহি ঢোক গিলে পেছতে থাকে। অভিদ রুহির ঠোঁট ছোঁয়াতে নিলেই রুহি চোখ মুখ বন্ধ করে বলে উঠে
” বাবাইরে কেউ এসেছে মনে হয়।” অভিদ চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে আগের জায়গায় এসে বসে পরে। রুহি মুখের সামনে আগের মতো নিশ্বাস অনুভব না করতেই চোখ খুলে তাকিয়ে দেখে অভিদ ওর দিকে কেমন করে তাকিয়ে আছে।
রুহি ঢোক গিলে অভিদের দিক থেকে চোখ নামিয়ে নেয়। অভিদ রুহির আরো কাছে চলে আসে। রুহি আড়চোখে তাকিয়ে অভিদকে নিজের আরো কাছে আসতে দেখে কাঁপতে শুরু করলো। অভিদ রুহির গা ঘেঁষে বসে রুহিকে নিজের দিকে ঘুড়িয়ে কোমড় জড়িয়ে ধরে। রুহির শরীর গরম হয়ে আছে কিন্তু অভিদ সেদিকে পাত্তা দিলো না। রুহির মাথার পেছনে হাত দিয়ে মাথা সামনে এগিয়ে এনে দুই অধর জোড়া এক করে দিলো। রুহি কিছুক্ষণ কাঁপলেও আস্তে আস্তে ঠিক হয়ে যায়। অভিদের ডাকে নিজেও সারা দেয়।
অভিদের ফুপি রুহির মা, বাবা, রাইমা, নিলা, মিশু, মামা, মামি, জিহান সবাইকে ইম্পরট্যান্ট কাজের কথা বলে একসাথে আসতে বলেছে। সবাই এসে সোফায় বসে আছে। ফুপি এখনও রান্না ঘরে রয়েছে। ওদের বসিয়ে দিয়েই আবার চলে গিয়েছে। রুহিদের আসার কথা এখনও কেউ কাউকে জানায়নি। সবাই আগ্রহ নিয়ে বসে আছে কখন অভিদের ফুপি এসে তার ইম্পরট্যান্ট কথাটা বলবে। তুষার, নিলা বারবার চোখাচোখি করছে। দুজন দুজনের চোখের ভাষায় কথা বলে নিচ্ছে। পাশে অনি বসে বসে দুজনকে দেখছে। একিভার নিলার দিকে তাকাচ্ছে আরেকবার তুষারের দিকে। দুজনের ভাবগতি বুঝার চেষ্টা করছে। আজকে যে দুজনকে এভাবে তাকাতে প্রথম দেখছে তা নয়। প্রায় ১ মাস ধরেই এমন দেখেছে তবে তখন কম ছিলো। রুহিকে পাওয়ার পর দুজনকে এরকম ভাবে বেশিই দেখে তাই অনি সন্দেহ করে। অনির সন্দেহ মাঝেই রান্নাঘর থেকে ফুপি আসে আর পেছনে কয়েকজন সার্ভেন্ট। সার্ভেন্টরা তাদের হাতের খাবার গুলো রেখে টেবিলের সামনে গুছিয়ে রেখে চলে যায়। রুহির বাবা অভিদের ফুপির দিকে তাকিয়ে বলে
” আরে এতো কিছুর কি দরকার !! আমরা তো এখন চলেই যাবো।” ফুপি হাসি হাসি মুখে বলে
” ভাই এখন আমি আপনাদের এমন একটা সারপ্রাইজ দেবো যে আপনাদের আর এখন যেতেই ইচ্ছে করবে না।” রুহির আম্মু ধীর গলায় বলে
” আমার মেয়েটা চলে আসলেই হবে। আর কোনো সারপ্রাইজ লাগবে না। কতোদিন হলো মেয়েটাকে সামনে থেকে দেখতে পাই না।” ফুপি মুচকি হাসি দিলো। রুহির মামা বলে
” কি সারপ্রাইজ এর কথা বলছেন ভাবি।” ফুপি বড় একটা হাসি দিয়ে বলে
” একটু ওয়েট করুন প্লিজ।আপনারা সবাই একটু খাবার মুখে দিন আর অনি তুই সবার কাছে যা।” অনি মিটিমিটি করে হেসে উপরে চলে যায় রায়হানদের ডাকতে। রায়হানদের ডেকে অনি আবার নিজের রুমে আসে। দরজা লাগানো দেখে দরজায় নক করে।
অভিদ, রুহু নিজেদের মাঝে এতোই ডুবে গিয়েছে যে দরজায় কেউ নক করছে সেটা খেয়াল করেনি। অনি আরও দুবার জোড়ে জোড়ে নক করতেই দুজনের হুশ আসে। রুহি তাড়াতাড়ি অভিদের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নেয়। আরেকবার নক করতেই অভিদ উঁচু গলায় বলে
” ওয়েট প্লিজ” রুহি অভিদের দিকে তাকাতেই লজ্জায় গাল দুটো লাল হয়ে আসে। রুহি চোখ নামিয়ে পাশ থেকে স্টিকটা নিয়ে দ্রুত পায়ে ওয়াসরুমে চলে যায়। অভিদ বিছানা থেকে নেমে ঠোট মুছতে মুছতে দরজা খুলে দেয়। অনি ভেতরে ঢুকে বিরক্তি নিয়ে বলে
” এতো দেড়ি কিরছিলে কেনো ভাইয়া ?? কতোক্ষণ ধরে ডেকে যাচ্ছি।” অভিদ গলা ঝেড়ে বলে।
” আসলে ক্লান্ত লাগছিলো তাই ঘুমিয়ে পরেছিলাম। তুই কেনো আসলি??” অনি হেসে বলে।
” আংকেল, আন্টি চলে এসেছে তুমি ভাবিকে নিয়ে এসো তাড়াতাড়ি।” বলে চলে যায়। অভিদ ওয়াসরুমের দরজার সামনে গিয়ে দরজায় টোকা দিয়ে বলে
” লিভিংরুমে এসো। আমি যাচ্ছি।” বলে ফোন নিয়ে রুমে থেকে বেড়িয়ে গেলো। কিছুক্ষণ পরে রুহি ওয়াসরুমের দরজা একটু ফাক করে উকি দিয়ে দেখে নেয় কেউ আছে কিনা। কাউকে না দেখে আস্তে করে বেড়িয়ে আসে। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে ঠিকঠাক হয়ে রুম থেকে বের হয়।
রুহির মা, বাবারা সবাই সারপ্রাইজের জন্য অপেক্ষা করছিলো। উপর থেকে রায়হান, আখিল, জোতি, আশিককে আসতে দেখে সবাই অবাক হয়ে গেলো। রায়হান এসে সবাইকে সালাম দিয়ে বলে
” কেমন আছেন সবাই !!” মিশু চোখ বড়বড় করে রায়হানের দিকে তাকিয়ে আছে। রায়হানরা বিডি তে ফিরছে এটা মিশুকেও জানায়নি। রুহির আব্বু অবাক হয়ে বলে
” তোমরা !! তোমরা কখন এসেছো ?? আর আমাদের জানাওনি কেনো ?? রুহি, অভিদ তোমাদের সাথে এসেছে ??” রুহির আব্বুর প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার আগেই অভিদ চলে আসে। রুহির আম্মু খুশি হয়ে বলে
” রুহি কোথায় ?? ওকে দেখছি না কেনো ??” অভিদ হালকা হেসে বলে।
” রুহি আসছে আপনারা শান্ত হয়ে বসুন।”! মিশু, রাইমা, নিলা, জিহান অভিদ, রায়হান, জোতি সিবার সাথে কথা বলতে থাকে। কিছুক্ষণ পরে সেখানে রুহি উপস্থিত হয়। রুহি সবাইকে এক সাথে দেখে খুশিতে বলে উঠে
” আম্মু, আব্বু তোমরা কখন এসেছো ??” রুহির কথায় সবার দৃষ্টি যায় রুহির দিকে। মিশু, রাইমা, নিলা রুহিকে দেখে একসাথে সবাই রুহির কাছে দৌড়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরে। রুহি টান সামলাতে না পেরে পরে যেতে নিলেই অভিদ এসে ধরে নেয়। রাইমা অভিমানী গলায় বলে
” কোথায় ছিলা আপু। আরো আগে আসলে কি হতো !! আর আমাদের জানাওনি কেনো আজকে আসবে।” মিশুও বলে উঠে
” আমাদের কি ওর আর মনে আছে ?? কবেই তো ভুলে গিয়েছে। আমরা এখন ওর কেউ না তাই আমাদের জানালেও কি না জানালেও কি।” নিলা অভিযোগ স্বরে বলে
” রুহি এটা একদম ঠিক করিসনি। আমাদের জানালে কি হতো !!” রুহি হেসে বলে
” আরে সারপ্রাইজ দেওয়ায় জন্যই তো বলিনি এখন আমাকে ছাড় তোদের সাথে পড়ে কথা বলবো আগে মা-বাবার সাথে কথা বলে নেই।”
তিনজন ওকে বলে রুহিকে ছেড়ে দিতেই রুহি মা বাবার কাছে যায়। রুহি তার ভাবার সাথে কথা বলে মার কাছে যেতেই রুহির আম্মু মুখে আচল দিয়ে কেঁদে দেয়। রুহি মুচকি হেসে মাকে জড়িয়ে ধরে বলে
” মা আমি এসেছি তো আর কান্না করো না।” রুহির আম্মু রুহিকে পাশে নিয়ে বসে পড়ে। রুহি মার পাশে বসেই ফুপি, মামা, মামি, জিহান সিবার সাথে কথা বললো। রুহির বাবা অভিদদের সাথে কথা বলছে। কিছুক্ষণ পরে ফুপি বলে
” আচ্ছা সবার গল্প শেষ হলে চলো লাঞ্চ করবে। আজকে আমি নিজের হাতে রান্না করেছি।” সবাই একসাথে লাঞ্চে বসলো। গল্প করতে করতে লাঞ্চ শেষ করে নেয়।
সন্ধ্যার পরে রুহির মা,বাবারা সবাই চলে যাবে তাই রুহির মন খারাপ হয়ে গেলো। জিহান রুহির মন খারাপ দেখে অভিদকে বলে
” অভিদ রুহিকে নিয়ে বাড়িতে কবে যাবে ??” অভিদ রুহির দিকে তাকিয়ে হালকে হেসে বলে
” ইনশাল্লাহ। কয়েকদিন পরেই যাবো।” রুহি অভিদের কথায় খুশি হয়। রুহির মামা, মামি, জিহানের সাথে জোতি চলে গেলো। মিশু, নিলা, রাইমা সবাই বাড়িতে চলে গেলো।
রাতে রুহি টিভি দেখতে দেখতে বলে
” আচ্ছা আমি ভার্সিটিতে কবে থেকে যাবো ??” অভিদ মাথা ঘুড়িয়ে রুহির দিকে তাকিয়ে গম্ভীর গলায় বলে
” মাত্র এসেছো এখনি সব করে ফেলিবে নাকি ?? আগে পুরোপুরিভাবে সুস্থ হও তার পর তোমাকে ভার্সিটিতে যেতে দেওয়া হবে।”
চলবে…wait for next part….