#মাফিয়া_ক্রাশ_বর
#লেখিকা :মার্জিয়া রহমান হিমা
#পর্ব : ৪০
এভাবেই এক সাপ্তাহ হয়ে গেলো অভিদ, রায়হান বাড়িতেও আগের ফ্রমে ফিরে এলো। রুহি আবার অভিদকে আগের মতো ভয় পায় যদিও আগের থেকে একটু কম। তবে ভয় পায়। এতো ভয় পাওয়ার মাঝেও রুহির আরেক বায়না শুরু হয়েছে রুহি ভার্সিটিতে যাবে।
অভিদ রেগে মেগে একাকার।কারণ আগেই বলে রেখেছিলো সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত রুহি ভার্সিটিতে যাবে না। এখন বলায় রেগে গিয়েছে। কালকে রাত থেকে রুহি অভিদের পেছনে পরে আছে। অভিদকে রাজি করিয়ে ভার্সিটিতে যাওয়ার জন্য। কিন্তু অভিদ পাত্তা না দিয়ে নিজের মতো রাগি মুড নিয়ে ঘুরছে। সকালে অভিদ ব্রেকফাস্ট করে এসে একটা ফাইল নিয়ে বসলো।
রুহি এসে পাশে বসে বলে
” আমাকে ভার্সিটিতে যাওয়ার পারমিশন দিন না!! প্লিজ ?? ৩ মাসের মতো হয়ে গিয়েছে ভার্সিটিতে যাই না। মিশু বলেছে সামনে পরীক্ষাও চলে এসেছে। এই যে স্যার শুনছেন !!” রুহির একটা কথাও অভিদ কানে নিলো না নিজের মতো করে ফাইল দেখতে থাকে। অভিদকে দেখে মনে হচ্ছে ও ছাড়া এই রুমে আর কেউ নেই। রুহি অসহায় মুখ করে বসে থাকে। একটু পর একটা বুদ্ধি মাথায় আসতেই দুষ্টু হাসি দিয়ে উঠে দাঁড়ায়। অভিদের কাছে গিয়ে অভিদের হাত থেকে ফাইলটা ফাইকটা ছিনিয়ে নিলো। অভিদ ভ্রু কুচকে গম্ভীর মুখে রুহির দিকে তাকালো। রুহি মিষ্টি একটা হাসি দিয়ে অভিদের কোলে বসে পরলো। অভিদ চোখ বড় বড় করে রুহির দিকে তাকালো। রুহি দাত কেলানো হাসি দিয়ে অভিদের গালে চুমু দিয়ে বসে। অভিদ খালি মুখে বিষম খেয়ে কাশতে কাশতে থাকে। রুহি অভিদের গালে স্লাইড করতে করতে ধীর গলায় বলে
” এই যে আমার মাফিয়া ক্রাশ বর খুব ভালোবাসি আপনাকে। আপনিও তো আমাকে অনেক ভালোবাসেন। তাহলে প্লিজ রাজি হয়ে যান !! সারাদিন কি ঘরে বসে থাকতে ভালো লাগে বলুন ?? প্লিজ রাজি হয়ে জান। আমি ভার্সিটিতে যাবো প্লিজ !! এরপর থেকে আপনি যা বলবেন তাই শুনবো। সত্যি বলছি।” বলে উৎসাহ আর অসহায় মুখে অভিদের দিকে তাকিয়ে বসে থাকে। অভিদ রুহির কোমড়ের দুইপাশে হাত দিয়ে আস্তে আস্তে রুহির দিকে মুখটা এগিয়ে নিয়ে আসতে থাকে। রুহি অভিদের চোখে চোখ রেখে বসে আছে। অভিদ এবার ঠাস করে রুহিকে কোল থেকে নামিয়ে পাশে বসিয়ে দিয়ে সামনের থেকে ফাইলটা হাতে উঠিয়ে মুখের সামনে ধরে মনোযোগ দিয়ে কাজ করতে থাকে। রুহি হা করে তাকিয়ে থাকে অভিদের কাজ দেখে। কিছুক্ষণ পরে চেচিয়ে বলে উঠে
” আআআ!! আমি ভার্সিটিতে যাবো। আমাকে যাওয়ার পারমিশন দিন না !!! এই যে দিন না প্লিজ।” অভিদ রুহি নাচুরে শুরের কথা শুনে রেগে ধমক দিয়ে বলে উঠে
” চুপ !! আর একটাও কথা বলবে না চুপ করে বসে থাকো। আমি যখন বলেছি পা ঠিক না হওয়া পর্যন্ত যাবে না তখন যাবে না তুমি।” বলে আবার ফাইলে মনোযোগ দেয়।
রুহি মন খারাপ করে বিছানায় এসে শুয়ে মোবাইল নিয়ে ঘাটাঘাটি করতে থাকে। অভিদ আড়চোখে একবার রুহির দিকে তাকালো।রুহি সেটা খেয়াল করে পাশের টেবিল থেকে মিউজিক বক্সের রিমোট নিয়ে জোড়ে সাউন্ড দিয়ে অভিদের একটা অপছন্দ গান চালিয়ে দেয়। অভিদ ভ্রু কুচকে রুহির দিকে তাকালো। রুহি দেখেও না দেখার ভান করে মোবাইল টিপতে লাগলো। অভিদ চেঁচিয়ে বলে
” রুহি অফ করো গান আর এতো জোরে দিয়ে রেখেছো কেনো ??” রুহি অভিদের কথা শুনে রিমোট দিয়ে আরো জোড়ে সাউন্ড দিয়ে দেয়। অভিদ রেগে হনহন করে রুহির কাছ থেকে রিমোট নিয়ে গান অফ করে বিছানায় ছুড়ে মারে। রুহিকে বিছানায় চেপে ধরে দাঁতে দাঁত চেপে বলে
” সমস্যা কি তোমার ?? কথা কানে যায় না ?? আমি তো দেখছি তোমার পাখনা গজিয়ে গিয়েছে। বেশি করলে পাখনা দুটো কেটে দেবো আর এতো রাগ দেখাতে পারবে না আমাকে। তোমাকে এখন ছাড় দিচ্ছি বলে ভেবো না সবসময় ছাড় দেবো।” বলে অগ্নি চোখে রুহির দিকে তাকিয়ে থাকে। ছেড়ে দিতে নিলেই রুহি মাথাটা উঠিয়ে অভিদের ঠোটে ঠোট মিলিয়ে দিলো। অভিদ অবাক হয়ে গেলেও পরে রুহির উপর উঠে আধশোয়া হয়ে রুহির সাথে তাল মিলাতে থাকে। কিছুক্ষণ পরে রুহি অভিদের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে অভিদের বুকে ধাক্কা দিতে থাকে। অভিদ অবাক হয়ে বলে
” কি হয়েছে তোমার ?? এমন করছো কেনো ??”
রুহি অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে আগের মতো অভিদকে ধাক্কা দিতে থাকে। অভিদ কিছুক্ষণ ভ্রু কুচকে চুপ করে থাকলো পরে গম্ভীর গলায় বলে
” ঠিকাছে তুমি ভার্সিটি যাবে। কালকে আমি রায়হানকে পাঠাবো প্রিন্সিপ্যালের সাথে কথা বলাতে। এখন হয়েছে ?? কোনো দিন আমার দিকটা বুঝলে না সবসময় নিজের দিকটাই দেখছো।” বলে রুহির উপর থেকে উঠে যেতে নিলেই রুহি অভিদের গলায় দুই হাত জড়িয়ে আটকে দেয়। অভিদের গলা জড়িয়ে ধরে
” ছোট ছোট কথায় এতো রাগ করেন কেনো আপনি। আমি তো শুধু ভার্সিটিতেই যাচ্ছি অন্য কোথাও তো আর যাচ্ছি না। রাগ করার মানে হয় না। আর আমার পা ঠিক হতে কতোদিন লাগবে সেটা তো জানি না। এতো দিন কি আর আমি ঘরে বসে থাকবো ??” অভিদ গম্ভীর গলায় বলে
” আমি কারণ ছাড়া কোনো কিছু বলি না। ছোট ছোট কথায়ও কারণ থাকে। আর আমি অনেক কিছু ভেবে বলি। আগে আমি একা ছিলাম তাই চিন্তা ছিলো না কিন্তু এখন তুমি আছো আমার সাথে। শত্রুরা আমার আগে তোমাকে আঘাত করার চেষ্টা করছে। সবার কাছেই তাদের দুর্বল জায়গা হলো তাদের পরিবার।সেখানে সবাই আঘাত করার চেষ্টা করবে।” বলে রুহির ঘাড়ে মুখ গুজে দেয়।
রুহি মুখ বাকিয়ে বলে
” আপনার এতো শত্রু কেনো ?? ভালো কাজ করতে গেলেও কতো শত্রু হুহ। আর আপনি থাকতে আপনার শত্রুরা কিভাবে পরিবারের ক্ষতি করবে ?? এতো বছর তো করেনি আর যে করেছে সেতো এখন আপনার কাছেই বন্দি আছে। আর কেউ ক্ষতি করতে চাইলে আপনি তো আছেনই। আপনি তো আর মাছ মেরে এমনি এমনি মাফিয়া হননি !! আপনি থাকতে আমার কোনো ভয় নেই।” বলে মুচকি হাসে। অভিদ রুহির গলায় নাক ঘষছিলো রুহির কথা শুনে স্থির হয়ে ধীর গলায় থেমে থেমে বলে
” রুহি.. মানে আমরা যেদিন এসেছি.. সেইদিন সিহাব পালিয়ে গিয়েছে। ফোর্স লাগালেও এখনো খুঁজে পাওয়া যায় নি।তবে সব রকমের চেষ্টা করে যাচ্ছি।” অভিদের কথা শুনে অভিদের গলায় জড়িয়ে থাকা রুহির হাত দুটো আলগা হয়ে আসে।অভিদ মাথা উঠিয়ে রুহির দিকে তাকায়। রুহি বিস্ময় আর আতংক নিয়ে তাকিয়ে আছে। রুহি অস্থির হয়ে উঠলো। অভিদ রুহিকে শান্ত করার জন্য আবার রুহির অধর জোড়া আয়ত্তে নিয়ে নেয়। রুহির আস্তে আস্তে অস্থিরতা কাটতে থাকে। রুহি চোখ বন্ধ করে নেয়। অভিদ কিছুক্ষণ পরে রুহিকে ছেড়ে জোড়ে জোড়ে শ্বাস নিয়ে ঠিক হয়ে রুহির গালে হাত রেখে বলে
” ভয় পেয়ো না সিহাবকে খুঁজে বের করার সব রকম চেষ্টা করছি। সিহাব ভয়ে কোথাও ঘাপটি মেরে বসে আছে । তুমি এসব নিয়ে চিন্তা করো না তুমি শুধু নিজের খেয়াল রাখবে। কালকে আমি রায়হানকে ভার্সিটিতে পাঠাবো।” রুহি লজ্জা লজ্জা মুখে অভিদের শার্টের বোতাম খুটতে খুটতে বলে
” কেনো আপনি জাবেন না কেনো ?? রায়হান ভাইয়ার ও তো মিশুকে সময় দেওয়ার দরকার।” অভিদ মুচকি হেসে রুহির গালে নাক দিয়ে স্লাইড করতে করতে বলে
” আমাদের কালকে একটা মিটিং আছে। রায়হানের কাজ আমি সামলে নিবো। রায়হান ভার্সিটিতে যাবে আর সেখানে মিশুর সাথেও সময় কাটাতে পারবে।” রুহি উৎসাহিত হয়ে বলে
” আচ্ছা তাহলে কালকে আপনার জন্য আমি লাঞ্চে রান্না করে খাবার নিয়ে যাবো। ওকে ??” রুহির কথা শুনে অভিদ লাফিয়ে উঠে বসে। বিস্ময় নিয়ে বলে
” তুমি ?? আমার জন্য রান্না করবে ?? পাগল নাকি !! তুমি তো রান্নাই করতে পারো না। রান্না ঘরে গিয়ে আবার হাত পা পুড়িয়ে ফেলবে তখন কি হবে ??” রুহি উঠে বসে বলে
” আরে আমি একা রান্না করবো নাকি। শেইফ আছে, ফুপি আছে ওরা আমাকে হেল্প করবে আর রান্না কিভাবে করতে হয় শিখিয়ে দেবে আর আমি রান্না করবো। আমার কিছু হবে না।” অভিদ আলমারি থেকে অফিসের কাপড় বের করতে করতে রাগি গলা বলে
” নাহ কিছু করতে হবে না তোমাকে। শেইফ আছে সে রান্না করবে তুমি একদম সেখানে পা বারাবে না।” রুহি মুখ ফুলিয়ে বলে।
” এহ বললেই হলো নাকি। আমার তো ইচ্ছে করে আপনাকে কিছু রান্না করে খাওয়াতে কিন্তু রান্না পারিনা দেখে করিনি। তবে কালকে আমি করবোই।” অভিদ কপাল কুচকে বিরক্তি নিয়ে বলে
” you know !! You ar just impossible. যেটা করতে না বলি সেটাই তুমি করতে চাও আর করো। আমার ইচ্ছে থাকলে তো আমিই তোমাকে রান্না কররে বলতাম নাকি !! বাড়িতে এতো রান্নার মানুষ থাকতে তোমরা কেনো রান্না করবে ??”
অভিদ কপাল কুচকানো বিরক্তি হওয়া মুখটা দেখে রুহির কাছে খুবই ভালো লাগছে। প্রিয় মানুষটাকে যেভাবেই দেখো না কেনো সেভাবেই ভালো লাগবে। রুহি অভিদের দিকে তাকিয়ে মিটিমিটি করে হাসছে। অভিদ রুহিকে হাসতে দেখে রেগে ওয়াসরুমে ঢুকে ঠাস করে দরজা লাগিয়ে দিলো। কিছুক্ষণ পরে অভিদ রেডি হয়ে অফিসে চলে গেলো। রুহিও রোজ দিনকার মতো নিচে চলে গেলো অনি ভার্সিটিতে চলে গিয়েছে তাই ফুপি ছাড়া আর কেউ নেই। রুহি স্টিকের সাহায্যে বাগানে হাটাহাটি করতে থাকে।সারাদিনে ৩ বার অভিদের সাথে কথা বলে। বিকেলে অনি ফিরলে অনির সাথে সারাদিন কাটিয়ে দেয়। মিশু,রাইমা, নিলার সাথে কথা বলে এভাবেই দিনটা কাটিয়ে দিলো। পরের দিন…
অভিদ রায়হানকে অফিসে নিয়ে গিয়েছে।রায়হান তার কাজ শেষ করেই ভার্সিটিতে যাবে। আর অভিদ যেতেই রুহি রান্না ঘরে ঢুকে পরলো। পেছনে ফুপি চিৎকার করতে করতে আসছে। রুহি হেটে হেটে সবার কাজ দেখতে থাকে। ফুপি এসে বলে
” রুহি দেখ এখন কিন্তু আমি অভিদকে ফোন করবো !! জানিস তো অভিদ এসে কি করবে !! তোকে রুমে বেধে রাখবে আর কোনোদিন রান্নাঘরের দিকে পা বাড়াতে দেবে না।” রুহি বাচ্চাদের মতো মুখ করে বলে
” মামনি তুমি না আমাকে কতো ভালোবাসো !! তুমি তোমার মেয়েকে কষ্ট দিতে পারবে ?? আমি জাস্ট আজকেই রান্না করবো সত্যি বলছি। তুমি আমাকে হেল্প করো। আমাকে বলে দাও কি করে রান্না করতে হয়।” ফুপি বিরক্তি নিয়ে বলে
” মেয়ে রান্না করতে পারে না আবার এসেছে রান্না করতে!! কিছু যদি হয় তাহলে তোর একদিন কি আমার একদিন আর অভিদ তো আছেই।” বলে রুহির কাছে আসে। শেইফ সব রেডি করে বলে
” ম্যাম আপনি রান্না করবেন কি করে ?? এক হাতে তো সুবিধা ভাবে রান্না করতে পারবেন না।” রুহি নিজের দিকে একবার তাকালো। সত্যি বলতে রুহির এই কথা মাথায়ই আসেনি। রুহি মুখ গোমড়া করে ফেলে ফুপি রুহির গোমড়া মুখ দেখে সার্ভেন্টকে উদ্দেশ্য করে বলে
” গিয়ে দেখো তো একটা চেয়ার আছে। সেটা নিয়ে এসো রুহি চেয়ারে বসে রান্না করবে।” সার্ভেন্ট মাথা মেড়ে চলে গেলাও কিছুক্ষণ পরে একটা চেয়ার নিয়ে আসলো। রুহি চেয়ারে বসে একটা হাসি দিলো।
রুহি ফুপি আর শেইফ এর সাহায্যে অভিদের কিছু পছন্দের খাবার রান্না করে নিলো। রান্না করার সময় গরম একটা ফ্রাইপ্যানে হাত লেগে হাত পুরে গিয়েছে তবে ফুপি দেখলে বকবে তাই রুহি অতি যত্নে সেটা ওরনা দিয়ে ঢেকে লুকিয়ে ফেলে। রান্না শেষে রুমে গিয়ে শাওয়ার নিয়ে রেডি হয়ে খাবার নিয়ে অভিদের অফিসে রওনা দেয়। সাথে কয়েকজন গার্ড আর ড্রাইভার।
অফিসের সামনে গাড়ি থামতেই গার্ডরা রুহিকে নিয়ে ভেতরে গিয়ে লিফটে উঠে পরে। অভিদের ফ্লোরে লিফট থামতেই সবাই রুহিকে নিয়ে অভিদের কেবিনে যেতে থাকে। রুহি আর অভিদের বিয়েতে ছবি মিডিয়া, নিউজ পেপার সব কিছুই ছিলো তাই সবাই রুহিকে চেনে। যারা রুহিকে দেখছে তারা রুহিকে সালাম দিচ্ছে। রুহিকে নিয়ে অভিদের কেবিনের সামনে আসতেই গার্ডরা রুহিকে রেখে একটু দূড়ে গিয়ে দাঁড়ায়। রুহি হাসি মুখে কেবিনের ভেতর পা রাখে। ভেতরে ঢুকতেই একটা মেয়েকে অভিদের সাথে ঘেঁষে বসতে দেখে রুহির রক্ত গরম হয়ে পায়ের রক্ত মাথায় উঠে গেলো। রুহি রেগে ভেতরে যাওয়ার আগেই অভিদ মেয়েটার গালে ঠাস করে খুব জোড়ে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দেয়।
চলেব…wait for next part….