মাফিয়া ক্রাশ বর পর্ব-৪৫

0
2147

#মাফিয়া_ক্রাশ_বর
#লেখিকা :মার্জিয়া রহমান হিমা
#পর্ব : ৪৫

অভিদ সব কিছু খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখে সাজিয়েছে রুহি, অনিও অনেক হেল্প করেছে। অভিদ, রুহি নিজের বন্ধুদের জন্য কোনো কিছুর কমতি রাখেনি। এখন প্রায় সন্ধ্যা হয়ে এসেছে সবাই যার যার রুমে রেডি হতে চলে গিয়েছে। এতো আনন্দের মাঝে রুহি সেই স্বপ্নের কথাও কিছুক্ষণের জন্য ভুলে গেলো।

অভিদ, রুহি বিছানায় গালে হাত দিয়ে বসে আছে। সামনে বিছানার উপর রুহির সব গাউন, শাড়ি, থ্রী পিছ, পার্টি ড্রেস রয়েছে। সাইডে হ্যাঙগারে ঝুলানো আরো প্রায় ১৫-২০ টার মতো নিউ ড্রেস, লেহেঙ্গা রয়েছে। রুহি বুঝতেই পারছে না কোন ড্রেস পরবে। অভিদ নিজেও বুঝতে পারছে না কোনটা পরতে বলবে রুহিকে। একেকটা থেকে অন্যটা সুন্দর মনে হয়। রুহি বিরক্ত হয়ে বলে
” এই জন্যই কম ড্রেস থাকা ভালো। বেশি ড্রেস থাকলে বোঝায় যায় না কোনটা ছেড়ে কোন ড্রেস পরবো।” অভিদ আড়মোড়া ভেঙে আবার একটা ড্রেস হাতে নিলো। একটু পরে নিজেরও মাথা ধরে গেলো ঠিক করতে না পেরে। অভিদ চেঁচিয়ে অনিকে ডাকা শুরু করলো। কিছুক্ষণ পরে অনি দৌড়ে রুমে আসলো। রুহি অনিকে দেখে ফিকফিক করে হেসে দিলো। অনি রুমে বসে মেকাপ করছিলো। অর্ধেক মেকাপ করে চলে এসেছে। কাধের একপাশে এলোমেলো চুল আর অন্যপাশে সোজা চুল, মেকাপও আধো আধো। অনি হাফানো কন্ঠে বলে
” কি হয়েছে ভাইয়া ডাকলে কেনো ??” অভিদ অনির কথায় অনির দিকে তাকিয়ে বলে
” দেখতো তোর ভাবি কোন ড্রেস টা আজকে পরবে ?? কোনো ড্রেসই সিলেক্ট করতে পারছি না।” অনি হাফ ছেড়ে ধপ করে পাশে বসে পরলো ড্রেস দেখার জন্য। তিনজন মিলে খোঁজার পর তিনজন তিনটা ড্রসে হাতে নিলো। রুহি একটা সুন্দর লেহেঙ্গা হাতে নিয়েছে, অভিদ একটা গরজিয়াছ গাউন হাতে নিয়েছে আর অনি একটা ডিজাইনার শাড়ি হাতে নিয়েছে। তিনজনেরটাই অনেক সুন্দর সুন্দর ডিজাইনের

রুহি লেহেঙ্গা সামনে রেখে দেখিয়ে বলে
” দেখুন তো দুজন এটা ঠিক আছে কি না !!”
অনি ঠোট উলটে বলে
” ভাবি এটা তো অনেক ভারি লাগবে তোমার !!”
অভিদ গাউন এগিয়ে দিয়ে বলে
” বোনু ঠিক কথা বলেছে এটা তোমার ভারি ভারি লাগবে পরে সামলাতে পারবে না।এই যে গাউনটা দেখো এটায় তোমাকে অনেক সুন্দর মানাবে এইটাই পরো।” অনি তার হাতের শাড়িটা এগিয়ে দিয়ে বলে
” ভাবি এই শাড়িটা দেখো !! এটা হালকা আছে আর দেখতেও খুব সুন্দর। এটা পরে কম্পোর্ট ফিল করবে। এটা পরতে পারো।” অভিদ শাড়ি হাতে নিয়ে বলে
” শাড়িটা দেখতে খুব সুন্দর কিন্তু শাড়ি পরলে তো রুহি ভালো করে হাটতে পারবে না ” অনি ঠোট গোল করে বলে
” ওওও হ্যা !! আমি তো ভুলেই গিয়েছিলাম। তাহলে ভাবি গাউন টাই পারো।” রুহি হেসে মাথা নাড়িয়ে হ্যা বলে। অনিও হেস বল
” আচ্ছা আমি গেলাম আমাকে তৈরি হতে হবে।” বলে চলে যায়। রুহি অভিদের দিকে তাকিয়ে বলে
” আমার গাউন কি আপনার ড্রেসের সাথে মেচ করবে ??” অভিদ উঠে তার কোট শার্ট বের করে বলে
” তুমিই দেখে নাও মেচ করেছে কি না !!” রুহি দুইটা একসাথে রেখে দেখে দুইটা মেচ করেছে। রুহি হেসে গাউন নিয়ে ওয়াসরুমে ঢুকে পরলো। অভিদ সার্ভেন্টকে ডেকে বললো ড্রেস গুলো নিয়ে যেতে। সার্ভেন্ট সব ড্রেস নিয়ে গেলো।
রুহি মিররের সামনে বসে আর অভিদ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে পুরোপুরিভাবে তৈরি হয়ে নিলো। একটু আগে সার্ভেন্ট এসে জানিয়ে গিয়েছে গেস্ট রা এসে পরেছে। অভিদের দিকে তাকিয়েই রুহির চোখ জোড়া স্থির হয়ে গেলো। লাল খয়েরি কোট আর নিচে কালো শার্ট, হাতে রিচ ওয়াচ সবসময়ের মতো চুল গুলো কপালে পরে আছে। অভিদকে অসম্ভব হ্যান্ডসাম লাগছে রুহি হা করে তাকিয়ে থাকে।

অভিদ রুহির এমন তাকানো দেখে বাকা হেসে রুহির কোমড় জড়িয়ে রুহিকে কাছে টেনে আনলো। রুহি চমকে উঠলো অভিদের ছোঁয়া পেয়ে। রুহির চমকানো মুখ দেখে অভিদ মনে মনে আরো হাসলো। রুহি ছাড়াতে ছাড়াতে কাপাকাপা গলায় বলে
” কি করছেন কি আপনি ছাড়ুন নিচে যেতে হবে তো !!” অভিদ রুহির ঠোটের উপর আঙুল রেখে
” হুশশশশ ” করে শব্দ করে উঠে। রুহি চুপ হয়ে গেলো। অভিদ রুহিকে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। রুহির লাল লিপস্টিক দেওয়া ঠোট জোড়া আয়ত্তে নিয়ে নিলো। রুহি চোখ বন্ধ করে নিলো। কিছুক্ষণ পরে অভিদ রুহির ঠোট জোড়া ছেড়ে রুহির ঘারে মুখ গুঁজে ছোট ছোট চুমু দিতে লাগলো। রুহি অভিদের শার্ট আকড়ে চোখ বন্ধ করে জোড়ে জোড়ে শ্বাস নিচ্ছে আর কাঁপছে। অভিদ রুহির দুই চোখের পাতায় আর কপালে ঠোট ছুঁয়ে রুহির থেকে সরে এলো। রুহি ধীরে ধীরে চোখ খুলে তাকাতেই অভিদের উপর চোখ পরলো। রুহি লজ্জায় চোখ নামিয়ে নেয়। অভিদ বাকা হেসে রুহির কাছে এসে কানে ফিসফিস করে বলে
” জলদি এসো নিচে ওয়েট করছি।” বলে রুহির দিকে তাকিয়ে ঠোট কামড়ে হেসে রুম থেকে বেড়িয়ে গেলো। রুহি তখনও লজ্জায় দাঁড়িয়ে রইলো। কিছুক্ষণ পরে ঠিক ঠাক হয়ে নিচে চলে গেলো। নিচে আসতেই অভিদকে দেখতে পেলো কয়েকজনের সাথে কথা বলছে। অভিদকে দেখে আবার রুহির মাঝে লজ্জা এসে হানা দিলো। অনি এসে রুহির সামনে দাঁড়াতেই দেখতে পেলো রুহি কেমন মুচকি মুচকি হাসছে। অনি রুহির মুখের সামনে হাত নেড়ে বলে
” কি হয়েছে ভাবি ?? এমন মুচকি মুচকি হাসছো কেনো ?? কি হয়েছে আমাকেও একটু বলো আমিও হাসবো !!” অনির কথায় রুহি হকচকিয়ে গেলো। থতমত খেয়ে বলে
” নাহ এমনি হাসছিলাম। আমি মিশুকে ফোন করে দেখি মিশু, মা, বাবারা কখন আসবে !!” অনি মাথা নেড়ে হ্যা বলে। রুহি একটু সাইডে গিয়ে মিশুর সাথে কথা বলতে থাকে।

রায়হান পার্টির সবার সাথে কথা বলছে কিন্তু এটা কিসের পার্টি হচ্ছে কেউ জিজ্ঞেস করতেই রায়হান অসস্তিতে পরে কারণ কিসের জন্য ইনভাইট করা হয়েছে সেটা সবাইকে জানিয়েছে অভিদ। রায়হান শুধু বলে নরমাল পার্টি হিসেবেই জানে তাই কিছু বলতে পারে না। রায়হান বাদে বাড়ির সবাই জানে আজকে কিসের পার্টি। কিছুক্ষণ পরে রুহির মা, বাবা, রাইমা, নিলা, জিহান, জোতি, মিশুর মা, বাবা, মিশু, চাচা, চাচি, চাচাতো ভাই সবাই আসলো। অভিদ, রুহি, ফুপি, অনি, তুষার, রায়হান সবাই ওদের ভেতরে এনে কথা বলতে লাগলো। রায়হান মিশুর সাথে সবাইকে দেখে অনেক অবাক হয়েছে। রায়হান মিশুকে একটু সাইডে নিয়ে এসে বলে
” তুমি, তোমারা সবাই আসছো আমাকে বলেনি কেনো ?? একটু আগেও তো আমাদের কথা হলো !! আমাকে বলতে পারতে তো নাকি ?? তাহলে আমি আরেকটু বেশি তৈরি হয়ে থাকতাম।” মিশু মুখ টিপে হেসে বলে
” আর কতো সাজবে ?? বেশি সাজলে কি আর তোমাকে ছেলে মনে হবে ?? বেশি সাজাসাজি মেয়েদের কাজ বুঝেছো ?? আর আজকের জন্য তুমি যথেষ্ট সেজেছো আর সাজতে হবে না। শুধু আজকের স্মৃতি গুলো মনের ভেতর গুছিয়ে রেখো।” রায়হান ভ্রু কুচকে বলে
” কেনো আজকে কি কোনো স্পেশাল ডে ??” মিশু মুচকি হেসে রুহির কাছে চলে গেলো। রায়হান মুখ বাকিয়ে মিশুর মা, বাবার সাথে কথা বলতে চলে গেলো।। কিছুক্ষণ পরে অভিদ রুহিদের কাছে এসে বলে
” রেডি তো !! এখন এনাউজমেন্ট করবো।” রুহির বাবা বলে
” রায়হানদের এখনও জানাওনি কেনো তোমরা??”
অভিদ হালকা হেসে বলে
” it’s a surprise for rayjan. আমি এখনি এনাউজমেন্ট…. ” অভিদের কঘার মাঝে অনি এসে অভিসের হাত ধরে অভিদকে থামিয়ে দিলো। অভিদ ইশারায় কি হয়েছে জিজ্ঞেস করতেই অনি বলে
” একটু এদিকে এসো একটা কথা বলবো।” বলে অভিদকে কিছু বলতে না দিয়ে টেনে নিয়ে গেলো।

রুহিও অভিদের পাশে দাঁড়াল।অভিদ চিন্তিত হয়ে বলে
” কি হয়েছে এভাবে টেনে আনলি কেনো ??” অনি গলা ঝেড়ে বলে
” ভাইয়া আমি একটা কথস বলবো ” অভিদ কপাল কুচকে ফেলে অনির কথায় আবার স্বাভাবিক হয়ে বলে
” আখিলের কথা ভাবছিস ?? আখিল একটা কাজে আটকে গিয়েছে তাই দেড়ি হচ্ছে তবে এখনি চলে আসবে চিন্তা করিস না।” অনি মাথা নেড়ে বলে
” আরে না ভাইয়া ওইটা তো জানি আমি। আমজ অন্য একটা কথা বলবো। আমি না কালকে তুষ ভাইয়াকে ফোনে বলতে শুনেছি তুষ ভাইয়া নিলাকে পছন্দ করে মানে ভালোবাসে।” অনির কথা অভিদের কানে গেলেও অভিদ কে স্বাভাবিক দেখা গেলো। রুহি একটু অবাক হয়েছে কারণ নিলার সাথে প্রতিদিন কথা হলেও এই কথা জানতো না। রুহি অবাক হয়ে বলে
” ওরা দুজনও দুজনকে পছন্দ করে ?? আর আমি জানিই না !!” অনি আর রুহি অভিদের দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে গেলো। অভিদ স্বাভাবিক ভাবে দাঁড়িয়ে আছে। রুহি কপাল কুচকে বলে
” আপনি কিছু বলছেন না কেনো ??” অভিদ গম্ভীর গলায় বলে
” কি বলবো !! এখানে দাঁড়িয়ে না থেকে চলো।” বলে অভিদ স্টেজের দিকে চলে গেলো। রুহি অনি অবাক হয়ে একে অপরের দিকে তাকালো। পরে স্টেজের কাছে চলে গেলো। অভিদ হাতে মাইক নিয়ে বলা শুরু করে
” আজকের এই সন্ধ্যায় এটেন্ড করার জন্য সবাইকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আজকে এখানে কিসের পার্টি হচ্ছে সেটা তো অনেকেই জানেন। আবার অনেকেই জানেন না। এখনি সবাই জানতে পারবেন। আজকের এই সন্ধ্যা চারজন মানুষের জন্য একটু স্পেশাল।” ফুপি আর রুহির বাবা বাদে রুহিরা সবাই চারজনের কথা শুনে অবাক হয়ে গেলো। আর রায়হান তো কিছুই জানে না তাই চারজন এর আগা মাথা কিছুই বুঝলো না। অভিদ আবার বলা শুরু করে
” আজকে রায়হান, মিশু, তুষার, নিলার এনগেঞ্জমেন্ট। আজকের এই পার্টিটা এনগেঞ্জমেন্ট উপলক্ষে। একটু পরেই রিং পরানো হবে তারপর পার্টি শুরু হবে। আপনারা এনজয় করুন।” বলে মাইক দিয়ে নেমে গেলো।

সবার কাছে এসে দেখে সবার মাথা আকাশ ভেঙে পরার মতো অবস্থা। একেকজন অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। আর রায়হান, তুষার, নিলা বিস্ময় নিয়ে হা করে তাকিয়ে আছে। ফুপি আর রুহির বাবা মুখ চেপে হাসছে। অভিদ গম্ভীর গলায় সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলে
” কি হয়েছে সবাই এভাবে তাকিয়ে আছো কেনো ??” রুহি অবাক হয়ে বলে
” তুষার ভাইয়া আর নিলার এনগেঞ্জমেন্ট !! রুহির বাবা হেসে বলে
” হ্যা কালকে অভিদ আমার সাথে কথা বলেছে এই নিয়ে পরে আমি আর অভিদ বড় ভাইয়ের সাথে কথা বলে হ্যা বললাম।” অনি দুই হাত বুকে গুজে অভিদের সামনে এসে দাঁড়ায় আর রুহি কোমড়ে এক হাত রেখে চোখ ছোট ছোট করে তাকায়। অভিদ ভ্রু নাচিয়ে বলে
” কি হয়েছে এভাবে দাঁড়িয়ে আছো কেনো ??” অনি আর রুহি মুখ ফুলিয়ে পাশ কাটিয়ে চলে গেলো। এবার অভিদ রায়হান, তুষারের সামনে এসে দাঁড়াল। দুজন এখনও হা করেই তাকিয়ে আছে। অভিদ দুজনের মুখের সামনে চুটকি বাজাতেই দুজনের ধ্যান ভাঙে। রায়হান অবিশ্বাসও গলায় বলে
” আমার এনগেঞ্জমেন্ট !! তাও মিশুর সাথে !!” অভিদ গম্ভীর গলায় বলে
” কেনো তুই কি এখন অন্য কাউকে বিয়ে করতে চাস নাকি ?? দেখ আমার একিটা প্রেস্টিজ আছে। এখন সবাইকে বলা শেষ বিয়েও ঠিক করা হয়ে গিয়েছে। এখন না করলে আমি কিছু করতে পারবো না।” রায়হান হেসে অভিদের পেটে ঘুষি মারলো রায়হান, অভিদ হেসে উঠলো। তুষার অবাক হয়ে বলে
” কিন্তু ভাইয়া আমার এনগেঞ্জমেন্ট !! আমাকেও এসব জানানো হয়নি কেনো ?? আর তুমি হুট করে এসব ঠিক করে ফেললে !! আমাকে বলবে তো নাকি ??” অভিদ চিন্তিত হয়ে বলে
” তাহলে এক কাজ করি তোর আর নিলার এনগেঞ্জমেন্ট হবে না। তুই তো রাজি না।” তুষার হরবরিয়ে বলে
” কে!! কে বলেছে আমি রাজি না ?? আমি তো রাজি তো। আমি শুধু জিজ্ঞেস করলাম আমাকে জানালে না কেনো !!” অভিদ, রায়হান হেসে দিলো তুষারও হেসে দিলো। অভিদ হাসি থামিয়ে বলে
” এতো হাসার কিছু নেই নিলা এখনও ছোট তাই তোমাদের বিয়ে অনির সাথে হবে।” তুষার মাথা নাড়ালো। নিলাও সহমত হলো। এতোকিছু করেছে এতেই যথেষ্ট আর কিছু চায় না। কিছুক্ষণ পরে আখিল আর আশিক এসে উপস্থিত হলো। সবাই ওদের নিয়ে রিং পরিয়ে কাজ শেষ করলো। আর পার্টি শুরু হলো।

চলবে..