#মিথ্যা_অপবাদ
#ফারজানা_আফরোজ
#পর্ব_১৪
ইতি লজ্জায় লাল হয়ে আছে। হৃদয় ইতিকে দেখে চোখের তৃষ্ণা মিটাতে লাগলো। হৃদয়ের মুখ থেকে বের হয়ে আসলো…..
—” হলুদিয়া পাখি।”
“একটা প্রেমের গান লিখেছি
আর তাতে তোর নাম লিখেছি
মাঝরাতে বদনাম হয়েছে মন।
এত ভেবে
কি হবে? ভেবে কি করেছে কে
কবে? ভাবছি না আর, যা হবে
হবার। এত দিন বলিনি, তুমি
জানতো আমি এমনি……
ভালবাসি !!”
তোমাকে আমার খুব পছন্দ হয়েছে।
এখন তুমি আমাকে পছন্দ না করলেও
আমি পাঁচতলা থেকে লাফ দিবো
না, বিষ খেয়েও মরবো না। একদম জোর করে বিয়ে করে ফেলবো। তুমি আমার কথা শুনে রেগে বোম হচ্ছো তাতে আমার কিছুই যায় আসে না। তোমার বিয়ে ঠিক জানি আমি কিন্তু এখনও তো বিয়ে হয়ে যায়নি তোমার। আর আমি ছাড়া অন্য কারো সাথেও হবে না। বাসায় গিয়ে বলবে তুমি ওই ছেলেকে বিয়ে করতে ইচ্ছুক না তুমি আমায় ভালোবাসো ওকে।”
ইতি অবাক হয়ে শুনছে হৃদয়ের কথা। ইতির কাছে মনে হচ্ছে ও হলো ভিন্ন গ্রহের কোনো প্রাণী। কথা বলার শক্তি নেই এখন তার। চুপ করে হৃদয়ের কথা শুনছে ও। হৃদয় একটু থেমে আবারো বলতে শুরু করলো…….
” গতকাল থেকে প্রপোজ করার বই দশটা পড়েছি। বন্ধুদের কাছ থেকে কিছু শিখেছি। গুগল থেকে অনেক নিয়ম শিখেছি। রোমান্টিক অনেক মুভি দেখেছি তবুও কেনো যেনো মনের মাঝে এক রাশ ভয় জন্ম নিয়েছে কিভাবে তোমাকে মনের কথা বলবো আমি। আচ্ছা প্রপোজ করার জন্য কি হাঁটু গেড়ে বসতে হয়? হাঁটু ভাঁজ করে বসার মধ্যে প্রপোজ করার কি সম্পর্ক? আচ্ছা এইসব বাদ আমি তোমাকে সোজাসুজি ভাবেই বলছি, যদি জোনাকি হতাম উড়ে যেতাম তোমার কাছে,
মিট মিট করে জোলতাম তোমার চারপাশে।
নীরবে বসতাম তোমার পাশে,
আর বলতাম আই লাভ ইউ। লাভ ইউ সো মাচ।”
হৃদয় ইতির অনুমতি ছাড়াই ইতির হাত ধরে ফেললো। এমনিতেই ইতি খুব রেগে আছে আর ওর হাত ধরার জন্য ঠাস করে থাপ্পড় বসিয়ে দেয় হৃদয়ের গালে……
—” আপনার সাহস কি করে হয় আমাকে এইখানে ডেকে আনার আর এইসব কথা বলার? আপনি তো জানেন আমি এখন অন্যজনের বাগতত্তা তাহলে কোন সাহসে আমাকে এইসব কথা বলছেন। আমি আগেই বুঝেছি আপনার নজর খারাপ।আমার দিকে খারাপ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকেন সব সময়। আপনাকে তো এখন আমার পুলিশে দেওয়ার ইচ্ছা করছে।”
হৃদয় থাপ্পড় খেয়ে দুই হাত মুষ্টি বদ্ধ করে রেখেছে। এখন আবার খারাপ লোক বলছে তাকে। ইতির হাত ধরে জোরে টান দিয়ে ঘুরিয়ে ইতির কানের কাছে মুখ এনে বলে…….
—” ভালোবাসি বলেছি আর তুমি তা খারাপ ভাবছো। আমাকে এতটা খারাপ ভাবো তুমি? কিন্তু আমি খুশি হয়েছি যে, তোমার মনে আমার জন্য একটু হলেও ফিলিংস আসে হোক তা খারাপ। আছে তো?”
হৃদয় ইতির হাত জোরে চেপে ধরায় ইতির চুড়ি ভেঙ্গে যায়।
—” আমি হাতে ব্যাথা পাচ্ছি ছাড়েন আমায়।”
—” তোমাকে ছাড়ার কোনো প্রশ্নই আসে না জান।”
হৃদয়ের হটাৎ খেয়াল হলো ইতির হাত থেকে তরল কিছু বের হচ্ছে তাই হাত সামনে আনলো আর দেখলো কাচের চুড়ি ভেঙ্গে হাতে বিধে গেছে আর রক্ত বের হচ্ছে। হৃদয় ইতির দিকে তাকিয়ে দেখলো ও কান্না করছে….
—” আমার সাথে আসো।”
ইতি দাঁড়িয়ে আছে চুপচাপ। হৃদয় অনেকবার ডাকা সত্বেও এক ইঞ্চি নড়লো না। তাই হৃদয় ইতিকে কোলে তুলে নিলো ইতি তবুও কিছু বললো না……
—” তোমাকে দেখে মনে হয় না এত ওজন তুমি। ”
ইতি চুপ করে রইলো। হৃদয় গাড়িতে উঠিয়ে ড্রাইভ করে হসপিটালে চলে গেলো…….
।।
।।
।।।
।।।
সেই কখন থেকে সোনালী কান্না করছে। ওর আম্মু আব্বু কত কিছু বলছে কিন্তু ও শুনছে না এমনকি কান্নার কারণও বলছে না। হটাৎ মেয়ের এমন কান্না দেখে ভয় পেয়ে যায় তারা।
—” কি গো সোনালীর আব্বু মেয়ে এইভাবে কান্না করছে কেনো?”
ফিসফিসিয়ে বললো সোনালী আম্মু…..
—” ও কি এই বিয়েতে রাজি না?”
—” তোমার মেয়ের মনের খবর আমি কিভাবে জানবো হুহহ?”
—” নাকি আরিয়ান বাবার সাথে ঝগড়া হয়েছে?”
—” হতে পারে। তোমার মেয়ে যে ঝগড়ুতে।”
সোনালী আব্বু তার বউয়ের দিকে রাগী চোখে তাকালো। সোনালীর আম্মু হেসে দিয়ে বললো……
—” আরিয়ানকে ফোন দেও আর জিজ্ঞাসা করো কিছু কি হয়েছে নাকি?”
—” এতদিন পর মনের মতো একটা কথা বলেছো।”
আরিয়ানের কাছে ফোন দিলো সোনালীর আব্বু। আরিয়ান তখন ডায়রি পড়ছিল ওর আর মানহার ভালো মুহূর্তের । ফোনের শব্দে চোখটা সরিয়ে নিলো ডাইরি থেকে। চোখের পানি মুছে ফোন হাতে নিয়ে সোনালীর আব্বুর নাম্বার দেখে কিছুটা ভয় পেলো…..
—-” আসসালামু আলাইকুম আংকেল।”
—” অলাইকুম আসসালাম বাবা। কেমন আছো তুমি?”
—” জ্বি আংকেল আপনাদের দোয়ায় আলহামদুলিল্লাহ ভালো। আপনারা?”
—” আছি বাবা কোনো রকম।”
—” কেনো আংকেল কি হয়েছে?”
—” সোনালী সেই কখন থেকে কান্না করছে।কিন্তু কেনো কান্না করছে বলছে না। তোমাদের মাঝে কি কিছু হয়েছে বাবা?”
—-” কই না আংকেল কিছু তো হয়নি।”
—” তাহলে কি হলো মেয়েটার?”
সোনালীর আব্বু এখন আরো চিন্তায় পড়ে গেলো। আরিয়ান তখন বললো…..
—” আংকেল আসছি আমি।”
—” আচ্ছা বাবা।”
।।
।।
।।
।।
।।
ইতির চিকিৎসা করার পর ইতিকে কোলে নিয়ে আবারো গাড়িতে বসিয়ে দেয় হৃদয়…..
—” এখন থেকে তোমাকে কোলে নিয়েই ব্যায়াম করবো ভাবছি।”
—” আমি বাসায় যাবো।”
—” বাহ এখনো বিয়ে হলো না আর তুমি বাসায় যেতে চাচ্ছো কি ফাস্ট গো তুমি।”
—” বাজে কথা বলা বন্ধ করুন।”
—-” আগামীকাল দেখা হচ্ছে তো।”
—” নাহ।”
—” কেনো?”
—” আপনার কথা নাহিদকে বলবো আমি । পরে দেখবেন আপনার কি করে।”
—” হাহাহা হাসালে জানেমন। তোমার ওই নাহিদের মত কত নাহিদ যে আমাদের পিছনে ঘুরে আর তুমি ওই নাহিদকে দিয়ে আমায় শায়েস্তা করবে ওয়েট দাঁড়াও কিছুক্ষণ হেসে নেই হাহাহাহা।”
—” আমার ওজন কত বলতে পারবেন?”
—” ৫৬ কেজি।”
—” আপনি জানলেন কিভাবে?”
—” তোমাকে ভাবতে হবে না। তোমার হবু স্বামীর এই বডি এমনি এমনি হয়ে যায় নাই ।”
হৃদয় ঝুঁকে বললো কথাটা। ইতি কিছুটা সরে গিয়ে বললো……
—” ঝুঁকে কাজ করবেন না সরে যান বলছি।”
—” ওয়েট দাঁড়াও।”
হৃদয় গাড়ি থেকে একটি পাথরের রিং বের করলো। ইতির হাত ধরে নাহিদের দেওয়া রিং অন্য আঙ্গুলে পড়িয়ে দিয়ে ওর রিং ইতির আঙ্গুলে পড়িয়ে কিস করলো আঙ্গুলে…….
—-” ছিঃ ছিঃ কি করছেন কি আপনি?”
ইতি রিং খুলতে নিলে হৃদয় বললো…..
—” যদি আঙুল হারাতে না চাও তাহলে রিং খুলবে না।”
ইতি ভয়ে রিং আর না খুলে গাড়িতে হেলান দিয়ে বসে রইলো……..
।।
।।
।।
।।
আরিয়ান সোনালীর বাসায় আসলো। সোনালীকে বার বার জিজ্ঞাসা করছে কিন্তু সোনালী কেঁদেই যাচ্ছে। সোনালীর আব্বু আম্মু সোনালীর কাছেই বসে আছে। আরিয়ানের এখন খুব রাগ হচ্ছে এতবার বলছে কি হয়েছে কিন্তু সোনালী কান্নার জন্য বলতে পারছে না। এখন সোনালীর আব্বু আম্মু না থাকলে থাপ্পড় মেরে জিজ্ঞেস করতো কি হয়েছে কিন্তু পারছে না। কিছুক্ষণ রাগ ধমে রেখে পানি খাওয়ার নাম করে গ্লাস হাতে নিয়ে ফেলে দিলো…..
—-” সরি আন্টি । সোনালীর কান্নার জন্য হাত থেকে গ্লাসটা পরে গেলো। ”
—-” আরেহ বাবা সমস্যা নাই তোমার যত ইচ্ছা ভাঙতে পারো।”
—” ধন্যবাদ আন্টি। জানো সোনালী আমার কারো কান্না দেখতে একদম ভালো লাগে না খুব রাগ উঠে তখন মন চায় সব ভেঙ্গে ফেলি।”
সোনালীর আব্বু আম্মু না বুঝলেও সোনালী বুঝে ফেললো আরিয়ানের কথা তখন বললো…..
—-” আমি আমি ওনার ‘ভয়ানক সেই রাত’ আর ‘তোমার চোখের জল’ এই দুইটা গল্প পড়ে কাঁদছি ।”
সোনালীর কান্নার এই রহস্যর কথা কেউ কানকে বিশ্বাস করাতে পারছে না। বই পড়ে কেউ এত কাঁদতে পারে হয়তো কারো জানা ছিল না…….
আরিয়ান বললো…..
—” বই পড়ে তুমি এই মরা কান্না করছিলে। আমরা তো ভাবছি ছ্যাঁকা খেয়ে বেঁকা হয়ে কান্না করছো।”
আরিয়ানের কথা শুনে সোনালীর আব্বু আম্মু হাসলো। ওনারা ওদের আলাদা কথা বলতে দিয়ে চলে গেলো……
—” আপনি এত খারাপ গল্প কিভাবে লিখেন আপনার কি মন নেই। এত ভয়ানক মন কেনো আপনার?”
সোনালীর কান্না থামছেই না। আরিয়ান তখন বললো…..
—” মন থাকলে হয়তো বলতে পারতাম মন খারাপ নাকি ভালো এখন তো মন নাই আমার।”
—” কেনো মন কি কুকুরে নিয়ে পালিয়ে গেছে?”
—” একজন পাষাণী নিয়ে গেছে।”
সোনালী আরিয়ানের দিকে তাকালো। আরিয়ান অন্যদিকে ফিরে বললো…..
—” খেয়ে দেয়ে ঘুমিয়ে পরো। পরে মাথা ব্যাথা করবে।”
আরিয়ান রুম থেকে বের হয়ে যায়। সোনালীর কাছে আজ আরিয়ানকে অন্য রকম লাগলো। কেমন যেনো মনমরা। আরিয়ান সোনালীর আব্বু আম্মুর কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চলে গেলো………
।।
।।
।।
।।
ইতি বাসায় আসলো। ফ্রেশ হয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দিলো। আজ সারাদিন নাহিদ তাকে ফোন দেয় নি। তাই ও নিজেই নাহিদকে ফোন দিলো……
—“আমি ব্যাস্ত আছি পরে কথা বলবো।”
কিছু বলার আগেই নাহিদ ফোন কেটে দিলো। দীর্ঘশ্বাস ফেলে ইতি শুয়ে পড়লো…….
পরের দিন ইতি আর সোনালী কেউ কলেজ যেতে পারলো না। ইতির জ্বর আর সোনালীর মামাতো বোনের এক মাত্র মেয়ের প্রথম জন্ম বার্ষিকী।
চলবে…..
বানান ভুল হলে ক্ষমা করবেন।