মিথ্যা_অপবাদ পর্ব-১৩

0
1547

#মিথ্যা_অপবাদ
#ফারজানা_আফরোজ
#পর্ব_১৩

আরিয়ান সাথে সাথেই অফলাইন……..

—” আনরোমান্টিক কোথাকার।”

সোনালী ফোন অফ করে শুয়ে পড়লো।

পরেরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে নামাজ পড়ে মায়ের কাজে সাহায্য করছে ইতি।

—” বাহ বাহ আজ সূর্য কোন দিক উঠেছে?”

—” কেনো ? এমন ভাবে বলছো কেনো?”

—” কোনোদিন তো রান্না ঘরে পা ফেলিস না তাই বললাম আর কি!”

—” কিছুদিন পর বিয়ে হলে তো রান্না ঘরেই যেতেই হবে তাই আগে থেকেই সব শিখে যাচ্ছি।”

—” বাবাহ এখন থেকেই সব ভেবে রেখেছিস গুড।”

—” আমি জানি আমি গুড গার্ল এইভাবে বলতে হবে না হিহিহিহি।”

—” ফাজিল মেয়ে একটা হাহাহা।”

ইতির ফোনে একটার পর একটা ম্যাসেজ আসছে। ইতি কে ওর মা রান্না ঘর থেকে বের করে দিয়েছে। কিছুদিন পর বিয়ে এখন রান্না ঘরে রান্না করবে। আদরের মেয়ে কে না রাঁধতে দিয়ে রান্না ঘর থেকে পাঠিয়ে দিলো।

ইতি হাত পরিষ্কার করে ফোন হাতে নিয়ে দেখে অনেক বড় একটা ম্যাসেজ এসেছে নাম্বার অচেনা……

“কেমন আছো প্রিয়তম। আগেই ক্ষমা চাচ্ছি তোমাকে অনেক খারাপ কথা বলার জন্য। জানি তুমি আমার উপর রেগে আছো। রাগ করাটা স্বাভাবিক আমি জানি তবুও বলবো ক্ষমা করে দাও। জানো ‘রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের’ একটি উক্তি হলো ‘ভালোবাসা অর্থে আত্মসমর্পণ করা নহে , ভালোবাসা অর্থে ভাল বাসা , অর্থাৎ অন্যকে ভালো বাসস্থান দেওয়া, অন্যকে মনের সর্ব্বাপেক্ষা ভালো জায়গায় স্থাপন করা ।’ তাই তো আমিও মনের মাঝে না লুকিয়ে বলে দিলাম তোমায় ভালোবাসি খুব খুব খুব। যেমন একদিন পানি না খেলে তুমি কিছুটা অসুস্থ্য বোধ করো আমি ঠিক তোমার কথা এক মিনিট না ভাবতে পেরে অসুস্থ্য হয়ে পড়ি। আমি জানি তুমি বিরিয়ানি খেতে খুব ভালোবাসো। একদিন তোমার সামনে বিরিয়ানি রান্না করা হলো পরিবেশন করা হলো কিন্তু তোমায় দেওয়া হলো না তখন তোমার মন যেভাবে ভেঙ্গে যাবে ঠিক তেমন ভাবেই আমার সাথে রাগ করে থাকলে আমার মনটা ভেঙ্গে চুরমার হয়ে যাবে। জানি তুমি আমার ম্যাসেজ পড়ে মিটমিট করে হাসছো আর ভাবছো এই কি সব লেখছে। আমি আগেই বলছি আমি রোমান্টিক কথা বার্তা বলতে পারি না। শুধু এই টুকুই বলবো খুব খুব খুব ভালোবাসি তোমায়। হৃদয়ের ক্যানভাসে তোমারি রং দিয়ে আঁকা এক ছবি,সেই ছবিটি বলে শুধু তোমায় ভালোবাসি। ”

ইতি ম্যাসেজ পড়ে কিছুক্ষণ বিছানার এইদিক সেইদিক হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খেতে লাগলো। তখন আবারো ম্যাসেজ আসলো……

—” হলুদ শাড়ি, ছাড়া চুলে দেখতে চাই তোমাকে।যদি কষ্ট করে একটু আসতে ****** এই ঠিকানায় সন্ধ্যা সাতটায় তাহলে এই অধম খুব খুব খুশি হতো।”

ইতি মনে করেছে তাকে এইসব নাহিদ বলছে। তাই ও রাজি হয়ে গেলো……..

।।

।।

।।

।।

আরিয়ান গান শুনছে। ও কোনোদিন রোমান্টিক গান শুনতো না “মেরি হাত মে তেরা হাত হো সারি জান্নাতে ম্যারা সাথ হো” এই গানটা খুব ভালো লাগছে আজ আরিয়ানের কাছে। হৃদয় আরিয়ানকে ডাক দিলো কিন্তু আরিয়ান ভাবনায় মুগ্ধ। হৃদয় আরিয়ানের কাধে হাত রেখে বললো……

—” আনরোমান্টিক বয় এখন রোমান্টিক গান শুনে ব্যাপার কি ব্রো?”

—” আসলে রোমান্টিক একটা উপন্যাস লিখবো তাই রোমান্টিক গান শুনছি।”

—” আমার কাছে মিথ্যা বলবি না ওকে। তুই যে ভাবির প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছিস সেইটা আমি বুঝতে পারছি।”

—” কচু বুঝো তুমি। এখন বল কিসের জন্য এসেছিস?”

—“তানিয়া আপু ফোন দিচ্ছে তোমায় রিসিভ করছো না কেনো তাইতো আমায় ফোন দিয়ে বললো , ‘ দেখ তো তোর ভাই খুনের গল্প লেখতে লেখতে নিজেই খুন হলো কি না ?’ তাই এসেছিলাম। কিন্তু এখন তো দেখি জল অন্য দিকে যাচ্ছে।”

আরিয়ানকে চোখ টিপ দিলো হৃদয়। তানিয়া হলো আরিয়ানের বেস্ট ফ্রেন্ড । তানিয়াও বই লিখে।

—” তুই যা আমি ফোন দিচ্ছি তানুকে।”

—” ওকে। ব্রো আজ আমার বাসায় ফিরতে রাত হবে।”

—” প্রেমিকার সাথে দেখা করতে যাচ্ছিস বুঝি?”

—” হুম।”

লজ্জা পেয়ে বললো হৃদয়। আরিয়ান হৃদয়ের দিকে তাকিয়ে বললো…..

—” কবে পরলি প্রেমে? নাম কি মেয়ের ? কোথায় দেখা কিভাবে কি বললি না তো কিছু?”

—” ভাবির বেস্ট ফ্রেন্ড ইতি।”

—” হোয়াট? ওর না বিয়ে ঠিক।”

—” বিয়ে ঠিক কিন্তু হয়নি। ব্রো আমি ওকে ছাড়া বাঁচব না। কিভাবে যেনো ভালোবেসে ফেলেছি প্লিজ ব্রো বকিস না।”

—” ও যদি রাজি থাকে তাহলে সমস্যা নেই।”

—” ওকে রাজি করাতে হবে।”

—-” কিভাবে রাজি করাবি?”

—” আজ থেকে ওকে বিরক্ত করা শুরু করবো দেখবি এক সময় ভালোবেসে ফেলবে ।”

—-” হাহাহা। এইটা মুভি না রে ভাই বাস্তব। তুই বিরক্ত করবি আর ও তোকে ছেড়ে দিবে? আমি যত দুর ইতিকে চিনেছি তোকে মারতে মারতে শেষ করে ফেলবে। দুনিয়াতে কি মেয়ের অভাব পড়ছে তোর যে ওই মিথ্যাবাদীদের মধ্যে পছন্দ করিস?”

—” আবার শুরু হয়ে গেলো তাই না? তুই যখন ভাবি কে জোর করে বিয়ে করেছিস আমি কি কিছু বলছি তোরে আরো সাহায্য করেছি আর তুই কি না আমাকে বারণ করছিস?”

—” ওকে যা তোর যা ইচ্ছে কর কিন্তু মনে রাখবি বেশি উড়তে দিবি না। উড়াড় আগেই পাকা ভেঙ্গে দিবি।”

—” আবারো তোর ওই রোমান্সের মধ্য ছুরি চালিয়ে দেওয়া শুরু হয়ে গেলো।”

—” হাহাহা যা বেস্ট অফ লাক।”

।।

।।

।।

।।

সোনালী আজ অর্ডার করে আরিয়ানের লেখা সব বই কিনে আনলো । সারাদিনে দুইটা বই পড়ে শেষ করলো।

—” এত ভয়ংকর গল্প কেউ লিখে। গল্প পড়ে মনে হলো গল্পের হিরো না লেখক নিজেই খুন করতে এক নাম্বার। আল্লাহ এই লোকের গল্প পড়ে আমার হাত পা কাপছে বিয়ের পর তো এই লোকের সাথেই আমার থাকতে হবে তখন যদি আমার ঘাড় ত্যারামির জন্য আমার পেটেও চাকু ঢুকিয়ে দেয় তাহলে তো আমি শেষ। আম্মু কে গিয়ে বলি আমি বিয়ে করবো না এই লোককে। আরেহ কি বলছি তখন বাঁচার চান্স থাকতে পারে কিন্তু এখন বিয়ে ক্যান্সেল করলে বাঁচার আর চান্স থাকবে না। কি যে করি এখন আমি?”

সোনালী গালে হাত দিয়ে চিন্তা করছে…….

।।

।।

।।

।।

—-” ওই আরু বেঁচে আছিস নাকি মইরা ভুত হইছিস?”

—” ওই ফাটা বাঁশ চিল্লা চিল্লি কম কর এখন বল কিসের জন্য ফোন দিছস?”

—” আরেহ চুল তোর সাথে বলতো কতদিন পর কথা হচ্ছে আমার?”

—” চার পাঁচদিন পর মনে হয়।”

—” হালার নাতি হালা তিনমাস পর কথা হইতাছে।”

—” মাঝে মাঝে মনে হয় তুই মেয়ে না ছেলে। শালী তুই আসবি কবে?”

—” আসতে রে ভাই মন চায় না।”

দুঃখ প্রকাশ করলো তানিয়া। আরিয়ান তখন জোরে জোরে হাসতে লাগলো……

—-” আংকেল বিয়ের কথা বলে তাই আসতে মন চায় না তাই না?”

—” ওই বিয়ে বিয়ে শুনতে শুনতে মাথা খারাপ হয়ে গেছে তাই তো ছয় মাস ধরে ইন্ডিয়া পরে আছি।”

—” বিয়ে করে নে। বয়স তো আর কম হলো না। তোর ছোট ছোট মেয়েদের বিয়ে হয়ে গেছে তাদের আন্ডা বাচ্চা হয়ে নানী দাদীও হয়ে গেছে আর তুই এখনও বুড়ি অবিবাহিত রয়ে গেলি।”

—” ওই রাখ তো তোর বিয়ে বিয়ে এখন শুন যার জন্য ফোন দিলাম।”

—” আমি শুনতে না চাইলেও যে আপনি বলবেন তা আমি জানি সো বলে ফেলুন।”

—” আজ মানহার সাথে দেখা হয়েছিল।”

—” তোকে বলেছিনা না ওই বেইমানির নাম আমার কাছে বলবি না। সকাল সকাল মুড নষ্ট করে দিলি। রাখি বায়।”

আরিয়ানের রাগে ফোন কেটে দিলো। তানিয়া মুখে হাসির রেখা টেনে বললো……

—” আমিও তো এইটাই চাই আরু। কলেজ লাইফ থেকে তোকে পছন্দ করি । শুধু মাত্র তোর জন্য এখনো বিয়ে করে নি। ২৬ বছর বয়স হওয়া সত্বেও তোর অপেক্ষা করে আছি আমি। কিন্তু কি তুই ভার্সিটি লাইফে আমার ভালোবাসা না বুঝে ওই মানহা কে পছন্দ করে ফেলেছিস সেইটা তো এই তানিয়া মেনে নিতে পারে না। তাই তো তোদের মাঝে ভাঙন ধরানোর জন্য কত কষ্টই না করেছি আর আমি সফল হয়েও গেছি। আমি ছাড়া তোর মাঝে আর কেউ থাকবে না আরু হাহাহা।”

ক্লাস এইট থেকে আরিয়ানের সাথে তানিয়ার পরিচয়। আরিয়ানের মেয়ে ফ্রেন্ড বলতে এক মাত্র তানিয়া। ওদের ফ্রেন্ডশিপ দেখে সবাই বলতো ওরা রিলেশন করে। যখন আরিয়ান আর তানিয়া কলেজ ভর্তি হয় তখন সবাই বলতো ওদের রোমিও জুলিয়েট। তানিয়া আরিয়ান এইসব শুনে হাঁসতো। ধীরে ধীরে তানিয়াও পছন্দ করতে শুরু করে আরিয়ানকে। যখন ভার্সিটি ভর্তি হয় দুইজন এক সাথেই। ভাগ্য ক্রমে ওদের সাবজেক্ট একটাই আসে। অনার্স তৃতীয় বর্ষে যখন ওরা তখন অন্য ডিপার্টমেন্টের একটি মেয়ে নাম মানহা ওর সাথে পরিচয় হয় আরিয়ানের। পরিচয়ের মাধ্যম ছিলো তানিয়া। ধীরে ধীরে আরিয়ান মানহা কে পছন্দ করতো আর সব কথা তানিয়া কে বলতো । তানিয়ার ষড়যন্ত্রে এখন ওরা আলাদা। এই জন্য আরিয়ান ভালোবাসা নামক শব্দটাকে ঘৃনা করতে শুরু করেছে।

।।

।।

।।

।।

ইতিকে ম্যাসেজ হৃদয় দিয়েছিলো। ইতি নাহিদ ভেবে হলুদ শাড়ি, চুল ছাড়া, হালকা সাজে, হাত ভর্তি চুড়ি পরে হৃদয়ের দেওয়া ঠিকানায় চলে গেলো……

ক্যান্ডের লাইট ডিনারে মোমবাতির আলো-আধারি পরিবেশ, সেই সাথে রোমান্টিক মিউজিক। আহা কি মনোরম পরিবেশে সুন্দর এক কেক নিয়ে বসে আছে হৃদয় তার প্রাণ প্রিয় প্রিয়তমার জন্য। গোলাপের তোড়া দিয়ে সাজিয়েছে। রাস্তা জুড়ে ফুলের পাপড়ি। ইতি দুর থেকে দেখলো কেউ বসে আছে মুখ বুঝা যাচ্ছে না। ইতি ফুলের পাপড়িতে পা দিয়ে খুশি মনে হেঁটে যাচ্ছে। হৃদয়কে না দেখেই বললো……

—” আপনি যে এত রোমান্টিক আমার জানা ছিলো না। এত কিছু না করলেও পারতেন। আর উত্তর হলো লাভ ইউ টু।”

ইতি লজ্জায় লাল হয়ে আছে। হৃদয় ইতিকে দেখে চোখের তৃষ্ণা মিটাতে লাগলো। হৃদয়ের মুখ থেকে বের হয়ে আসলো…..

—” হলুদিয়া পাখি।”

চলবে……

বানান ভুল হলে ক্ষমা করবেন।