মিশেছো আলো ছায়াতে পর্ব-৪+৫

0
269

#মিশেছো_আলো_ছায়াতে
#Writer_Sintiha_Eva
#part : 04

🍁🍁🍁

ভালোবাসা নাকি একটা মিষ্টি অনুভব। সর্বদা নিত্য নতুন অনুভূতির সাথে সাক্ষাৎ হয়। পৃথিবীর সব কিছুই নাকি নতুন লাগে। কিন্তু কোথায় কেউ তো একবার ও বলেনি ভালোবাসার সমার্থক শব্দ মৃত্যুসম যন্ত্রণা। ভালোবাসার মানুষ টা অভিমানে মুখ ফিরিয়ে নিলে বুঝি এতোটা কষ্ট হয়। এটা তো আদির নতুন হচ্ছে । সামান্য একমাসের সিমথির দেওয়া যন্ত্রণা সহ্য করতে পারলো না। তাহলে সিমথি কিভাবে দিনের পর দিন আদির অবহেলা- অপমান সহ্য করে বারংবার “ভালোবাসি ” শব্দটা উচ্চারণ করতো। তাহলে কি সিমথির ও এতোটা কষ্ট হতো আদির অবহেলায়। তারপর ও মেয়েটা সর্বদা হাসি-খুশি থাকতো। সিমথি তো অভিমানে মুখ ফিরিয়ে আছে। কিন্তু আদি ও তো সর্বদা সিমথিকে মনে করাতো আদি কখনো সিমথি কে ভালোবাসতো না। কথাগুলো মনে মনে ভেবে আদি একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে।

আদি : আমি তো তোর দেওয়া একমাসের যন্ত্রণায় সহ্য করতে পারছি না। তুই কিভাবে পারলি আমার এতোবছরে দেওয়া যন্ত্রণা সহ্য করতে?

সেদিনের পর কেটে গেছে একমাস। সময় তার মতো আসছে আবার চলেও যাচ্ছে। সবাই সবার লাইফ নিয়ে ব্যস্ত। এই একমাসে সিমথির সাথে আদির আর কোনো দেখা হয়নি। হয়নি বললে ভুল হবে। আদি খুব ভালো করেই জানে সিমথি ইচ্ছাকৃত ওর থেকে আড়াল হয়ে আছে। কথায় আছে, ” নারীরা যেমন খোঁপার মতো বাঁধতে জানে তেমনি খোলা চুলে মতো ছেড়ে ও দিতে জানে। নারীরা যতই জীবন দিয়ে ভালোবাসুক সবকিছুর উর্ধ্বে হচ্ছে নারীদের আত্মসম্মান বোধ। নারী জাতি মানেই রহস্যময়ী। এদের বোঝার ক্ষমতা সবাই নিয়ে জন্মায় না। নারীদের আত্মসম্মান প্রখর হয়। সেই আত্মসম্মানে আঘাত হানা দিলে সেই নারী পরিণত হয় ভয়ংকরী প্রলয়ী রূপে। ” উপরের সম্পূর্ণ কথাটা যেনো সিমথির সাথে লাইনে লাইনে মিলে গেছে। যেই মেয়ে অন্ধকারে ভয় পেতো, সামান্য ব্যথায় সারা বাড়ি মাথায় তুলতো, বিন্দুমাত্র রক্ত দেখতে পারতো না। সেই মেয়ে আজ দিনরাত অন্ধকার-রক্ত এসব নিয়ে খেলছে। যদিও কোনো নিরপরাধ ব্যক্তি সিমথির সেই রুদ্রাণী রূপের শিকার হয় না। সাধারণ মানুষের কাছে সিমথি জাহান সিয়া হচ্ছে ভালোবাসার একটা নাম। ছোট থেকে বৃদ্ধ সবাই তাকে ভালোবাসা-সম্মান-শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করে। কিন্তু অপরাধী দের কাছে তেমনি এটা একটা আতঙ্কের নাম।

_____________

মেঘা : সিমথি কাম অন কাল থেকে এখনো বাড়ি ফিরিস নি একটার পর একটা ওটি নয়তো রোগী দেখে যাচ্ছিস। ক্লিয়ারলি বলবি একচুয়ালি বাড়ি কেনো যাচ্ছিস না।

সিমথি : _________

রোদেলা : কি আশ্চর্য মুখে তালা লাগিয়ে আছিস কেনো।

সিমথি : যখন বুঝতেই পারছিস মুখে তালা লাগিয়ে আছি তাহলে প্রশ্ন কেনো করছিস

তুহিন : আমাদের সামনে নিজেকে এতোটা কঠোর না দেখালে চলে না।

সিমথি : তুহিন প্লিজ পুরনো কথা তুলবি না। আমি সব ভুলে গেছি।

মেঘা : সিরিয়াসলি! শোন সিমথি তোকে আমরা হয়তো একটু বেশীই চিনি তাই বলছি আদি ভা,,,

বাকি টা বলার আগেই স্ব-জোরে কিছু ভাঙ্গার শব্দে মেঘাসহ রোদেলারা চমকে উঠে। মেঘারা ফ্লোরে খন্ড হয়ে যাওয়া গ্লাসের টুকরো গুলোর দিকে তাকায় আবার সিমথির দিকে তাকায়। চোখ মুখ লাল বর্ণ ধারণ করেছে। রাগান্বিত চোখে ওদের তিনজনের দিকে তাকাতেই মেঘারা ভয় পেয়ে যায়।

সিমথি : আদি আদি আদি জাস্ট স্টপ দিজ ননসেন্স। কি পেয়েছিস এই নাম টার মধ্যে । সহ্য হয় না আমায় উনাকে। উনি আমার অতীত আর আমার অতীতকে আমি সর্বদা ভুলে থাকতে চাই। ফারদার আমি যেনো তোদের মুখে এই নাম টা না শুনি। আই জাস্ট হেইট হিম জাস্ট হেইট দিজ নেমস। ফর গড সেক নেক্সট টাইম এই নাম টা আমার সামনে নিবি না।

কথাটা বলে সিমথি এপ্রোন নিয়ে কেবিন থেকে বেরিয়ে যায় মেঘা আর রোদেলা ঢুকরে কেঁদে ওঠে। ওদের দুজনের কান্নার শব্দে তুহিন নিজের চোখে আসা পানি সন্তপর্ণে মুছে মেঘা আর রোদেলা কে জড়িয়ে ধরে।

তুহিন : কাম অন এভাবে কাঁদিস না রেগে গেছে সিমথি। চিনিস তো ওকে

মেঘা : ওর বিহেভিয়ারের জন্য কাঁদছি না আমরা ( কাঁদতে)

রোদেলা : সিমথি আর কোনোদিন স্বাভাবিক হবে না। কি হাল করেছে নিজের দেখেছিস। সবসময় অন্যের রাগ টা নিজের উপর কেনো দেখায় ও বলতে পারবি। সেই একটা রাত এভাবে সিমথি বদলে দিলো। সত্যি বলতে কি জানিস আমরা আর আগের সেই হাসি-খুশি সিমথি কে ফিরে পাবো না।

মেঘা আর রোদেলার কথায় তুহিন একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে। অতঃপর জোরপূর্বক হেসে দুজনের চোখের পানি মুছে দিয়ে বলে,,,

তুহিন : সিমথি আবার আগের লাইফে বেক করবে আর এটা একজনের দ্বারাই পসিবল।

মেঘা আর রোদেলা প্রশ্নবিদ্ধ চোখে তুহিনের দিকে তাকিয়ে একসাথে বলে উঠে,,,

_ কে

তুহিন কিছু না বলে একটা মুচকি হাসি দেয়।

তন্ময় : কি ব্যাপার স্বয়ং সিমথি ম্যাডাম আজ আমাকে নিজে কল করেছেন আম সারপ্রাইজড।

সিমথি : জাস্ট সাট আপ। আমাকে বলতে দে

তন্ময় : জো হুকুম মেরি জান বেলন আপনার বাক্যদ্বয় শুনিয়া এই অধম তার কর্ণদ্বয়ের তৃপ্তি মিঠাক।

তন্ময়ের কথায় সিমথি হেসে উঠে ফোনের ওপাশে তন্ময় নিজেও হেসে দেয়।

সিমথি : দ্য গ্রেট জার্নালিস্ট তন্ময় এহমাদ কি আমাকে কিছুটা সময় দিতে পারবেন।

তন্ময় : আপনার জন্য তো আমি সারাজীবনই ফ্রি। বলেন কোন সময়টা লাগবে।

সিমথি : সময় আর এড্রেস দুটোই পৌঁছে যাবে।

তন্ময় : আপনার আদেশ চিরধার্য মেরি জান।

তন্ময়ের কথায় সিমথি পুনরায় হেসে দেয়। অতঃপর ফোন কেটে দেয়। কিছুক্ষণ আগে নিজের বিহেভিয়ারের কথা মাথায় আসতেই খারাপ লাগতে শুরু করে। আর যায় হোক ওদের সাথে এমন বিহেভ করাটা উচিত হয়নি সিমথির। পরে সরি বলবে ভেবে ওটি তে ঢুকে পড়ে।

ইশান : কি ব্যাপার ব্রো তোকে এমন সন্ন্যাস লাগছে কেনো। প্রেম করে ছ্যাঁকা খাইলি নাকি ভাই

ইশানের কথায় আদির ধ্যান ভাঙ্গে। ইশান হলো আদির চাচাতো ভাই। আদির বাবারা তিন ভাই। তার মধ্যে আদির বার দ্বিতীয়। ইশানের বাবার আদির বাবার ছোট ভাই। আদির বড় চাচার ঘরে এক মেয়ে এক ছেলে। ছেলের বিয়ে হয়ে গেছে ছয় বছরের একটা মেয়ে ও আছে। বড় চাচার মেয়ের ও বিয়ে হয়ে গেছে। আদিরা হলো একভাই , এক বোন। আদির বোনের নাম আদিবা। আদির ছোট চাচ্চু মানে ইশানের বাবার এক ছেলেই তার নামই ইশান। আদিরা সবাই একসাথেই থাকে এক বাড়িতে। অফিসে কাজ কম থাকায় আদি আজ তাড়াতাড়ি বাড়ি চলে আসে বাকি কাজ আদির বড় চাচার ছেলে রুহানের ঘাড়ে চাপিয়ে। ড্রয়িংরুমে বসে সিমথির কথা ভাবছিলো তখনই ইশান উপরের কথাটা আদিকে উদ্দেশ্য করে বলে।

মেহের : আমি ও কয়েক দিন ধরেই দেখছি ভাইয়া কেমন অন্য মনস্ক হয়ে থাকে সারাদিন। ব্যাপার টা কি বল তো।

মেহেরের কথায় আদি উত্তর না দিয়ে উঠে চলে যেতে নিলে রুহানের বউ মেহের এসে আদিকে আটকায়।

মেহের : কি ব্যাপার দেবর জ্বি প্রেমে টেমে পড়লা নাকি।

মেহেরের কথায় আদি মুচকি হেসে বলে,,,

আদি : প্রেম শুনেছি বাট টেম টা কি ভাইয়া শিখালো নাকি।

আদির কথায় মেহের আদির পিঠে একটা চাপড় মারে।

মেহের : ফাজিল হয়ে যাচ্ছো দিন দিন।

মেহেরের কথায় আদি শব্দ করে হেসে দেয়।

আদি : আদিবা এখনো কোচিং থেকে ফিরে নি

মেহের : নাহ। এবার বলো তোমার কি হয়েছে।

আদি : কি আবার হবে। এমনি ভালো লাগছে না।

ইশান : মন যখন প্রেমে পড়ে তখন কোনো কারণ ছাড়াই হঠাৎ ভালো আবার হঠাৎ খারাপ লাগে।

ইশান ফোন টিপতে টিপতে কথা টা শেষ করে আদির দিকে তাকিয়ে একটা চোখ টিপ দেয়। আদি পাশ থেকে কুশন নিয়ে ইশানের দিকে ছুঁয়ে মারে। মেহের আর ইশান হাসতে হাসতে উঠে দাঁড়ায়। আচমকা মেহের আর ইশান বলে উঠে,,,

_ কাউকে মনে ধরলে বলিস নাম টা বাকি টা আমরা ম্যানেজ করে নেবো।

কথা টা দুজন দু দিকে দৌড় লাগায়। ওদের দৌড়ে যেতে দেখে আদি নিঃশব্দে হেসে দেয়। অতঃপর কিছু একটা ভেবে ফোন লাগায় আয়াশ কে।

_ আরে ভাই দেখ কি দুই টা তাজা গোলাপ যাইতাছে। দেইখা মনে হইতাছে এহনো তরতাজা।

কথাটা বলেই সামনের বখাটে ছেলেগুলো বিশ্রী ভাবে হেসে উঠে। আচমকা এমন বাজে ইঙ্গিতে আদিবা আর তুহা দু’জনেই থেমে যায়। কোচিং এ এক্সট্রা ক্লাস থাকায় আজ বাড়ি ফিরতে একটু লেট হয়ে গেছে আদিবার। যদি ও এতোটা লেট শুধুমাত্র কোচিং এর জন্য হয়নি। রাস্তায় হঠাৎ ই আদিবার ফুফাতো বোন তুহার সাথে দেখা হয় আর ওর সাথে মার্কেটে যায় আর তার জন্যই লেট হয়ে যায় আর এই বাজে পরিস্থিতির শিকার হতে হলো। আদিবা আর তুহা দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে শুকনো ঢোক গিলে। রাস্তার এ সাইড টা অনেক নিরব। আশেপাশে কেউই নেই। ল্যাম্পপোস্টের আবছা আলোয় যতটুকু দেখা যাচ্ছে। এসব ভাবার মাঝেই ছেলেগুলোর মধ্যে একজন বলে উঠে,,,,

_ ওস্তাদ আজকার রাইত টা তাইলে ভালাই কাটাইতে পারুম তোমার আদেশ পাইলে। কও কি তুইলা নিয়া আইতাম দুই ডারে।

ছেলেটার এমন কথায় আদিবা তুহা দুজনেরই ঘৃণায় সাড়া শরীরে কাটা দিয়ে উঠে সেই সাথে ভয় মাথা ছাড়া দিয়ে উঠে।

_ ছোট ভাইদের কথা কি আমি ফেলবার পারি তোরা চাইলে পারোসই যা তুইলা নিয়া।

ওস্তাদের আদেশে বাকি দুইটা ছেলে ওদের দিকে এগিয়ে যায় তুহা আর আদিবা দৌড়ে আসতে গেলে দুজন ছেলে এসে ওদের পথ আটকায়। এবার ভয়ে তুহা আর আদিবা দুজনই কেঁদে দেয়।

তুহা : প্লিজ আমাদের যেতে দেন

তুহার কথায় ছেলেগুলো অট্টহাসি হেসে উঠে। ওদের মধ্যে একজন বলে উঠে,,,,

_ কি কও ছাড়ার লাইগা আইছি নাকি কান্দো কেন কিতা করছি এহনই কানলে পরে কিতা করবা।

আদিবা : দে দেখুন আ বমার বাবা একজন আইনের কর্মকর্তা। আমাদের সাথে আজেবাজে কিছু করার কথা ভুলেও ভাববেন না।

আদিবার কথায় ওরা দুইজন পুনরায় হেসে উঠে।

_ ওলে ওলে খুকি বলে কি হুনছেন নি ওস্তাদ। তাইলে আয় আগে তোরেই নিয়া যায়।

তুহা আদিবার হাত চেপে ধরে। ছেলেটা আদিবার দিকে হাত বাড়ালে তুহা আদিবা দুজনই চোখ বন্ধ করে নেয় আর মনে মনে উপরওয়ালাকে ডাকতে থাকে। বেশ কিছুক্ষণ চলে যাওয়ার পরও যখনই কিছুই অনুভব করতে পারলো না। তখন দুজনই চোখ খুলে সামনে তাকাতেই চমকে যায়। ওদের কভার করে একটা মানুষ দাঁড়িয়ে আছে। পেছন দিকটার হওয়ায় দুজনের কেউই মুখ দেখতে পারছে না। কিন্তু এটা বুঝতে পারছে সামনের মানুষ টা কে দেখে ছেলে দুটো ভয়ে পিছিয়ে যাচ্ছে। আদিবা আর তুহা একে অপরের দিকে তাকায়। আচমকা সামনের ব্যক্তির কথায় চমকে উঠে,,,,

_ সমস্যা কি? মেয়ে গুলো কে ডিস্টার্ব করছিস কেনো?

কারো কন্ঠে বুঝি এতোটা তেজ থাকতে পারে। সামনে একজন ছেলে কাঁপা কাঁপা গলায় বলে উঠে,,,

_ সি সিম সিমথি জাহান স সিয়া

ছেলেটার কথায় সিমথি হাসে ফিচেল হাসি। চোখে অজ্রস রাগ আর ঠোঁটের কোণায় হাসি এই রূপটা সবচেয়ে ভয়ানক কিছুর আভাস মিলায় সিমথির ক্ষেত্রে। আদিবার আর তুহা অবিশ্বাসের চোখে সিমথির দিকে তা। এতোদিন সিমথিকে নিয়ে অনেক লেখালেখি পড়েছে কিন্তু তুহা সিমথিকে কখনো সামনে থেকে দেখেনি। সায়নের বোন হওয়ার সুবাদে আদিবা সিমথিকে আগে থেকেই চিনতো। কিন্তু আগের সিমথি আর এখন তফাৎ টা মস্ত। আদিবা আর তুহা সিমথির পেছন থেকে বেরিয়ে ওর পাশে দাঁড়িয়ে ওর দিকে একনজরে তাকিয়ে থাকে। নিজেকে সম্পূর্ণ কালো আবরণে মুড়িয়ে রেখেছে সিমথি। সিমথি ওদের দিকে হালকা ঘাড় বাঁকিয়ে তাকায়। অতঃপর আবার ছেলে দুটোর দিকে তাকিয়ে শান্ত গলায় বলে,,,,

সিমথি : দুই মিনিটে জায়গা খালি কর। নেক্সট টাইম যদি এই রাস্তায় কোনো মেয়ে কে ইভটিজিং করতে দেখি সোজা,,,

বাকি টা বলার আগেই ছেলেগুলো জীবন নিয়ে পালায় সেই সাথে ওদের ওস্তাদ ও। ছেলেগুলো কে যেতে দেখে আদিবা আর তুহা একটা স্বস্তির শ্বাস ফেলে। সিমথি এবার ওদের দিকে তাকায়। সিমথি এদিক দিয়েই যাচ্ছিলো এতোক্ষণ তন্ময়ের সাথে ওরা পাঁচজন মিলে আড্ডা দিচ্ছিলো। আড্ডা শেষে সিমথি একাই হাঁটতে হাঁটতে এদিকে যাচ্ছিলো তখনই সামনে ওদের দেখে বুঝতে পারে কোনো গন্ডগোল হয়েছে তাই এগিয়ে আসে।

সিমথি : এতো রাতে এ রাস্তা দিয়ে কোথায় যাচ্ছিলে কিউটিপাই।

সিমথির মুখে ” কিউটিপাই ” ডাক টা শুনে আদিবা চমকায়। আবছা আলোয় আদিবার এক্সপ্রেশন দেখে সিমথি পুনরায় হাসে।

সিমথি : এতো চমকানোর কি আছে।

আদিবা : তোমার মনে আছে এই নাম টা সিমথিপু

সিমথি : ভুলে যাওয়ার কি কোনো কারণ আছে নাকি।

আদিবা : উহু।

সিমথি : বাই দ্য ওয়ে কাউকে কল করো তোমাদের এসে নিয়ে যেতে।

আদিবা মাথা নাড়িয়ে সায় দিয়ে কল লাগায় আদিকে। সিমথির কল আসায় ওদের থেকে একটু দূরে গিয়ে কথা বলতে শুরু করে। বেশ কিছুক্ষণ পর আদি আসে। আসতেই আদিবা আর তুহা আদিকে জড়িয়ে ধরে সব কিছু খুলে বলে। সব কিছু শুনে আদি রেগে যায়।

আদিবা : জানিস ভাইয়া আমাদের কে বাঁচিয়েছে।

আদি : কে?

আদিবা : সিমথিপু

আদিবার কথায় আদি একটা ধাক্কা খায়। তবুও নিজেকে সামলে বলে,,,

আদি : সিমথি কোথায়?

সিমথি : আম হেয়ার মিস্টার চৌধুরী।

সিমথির ভয়েজ শুনে আদি তৎক্ষনাত পেছনে ফিরে। আবছা আলোয় সিমথিকে দেখেই বুকে ধুকপুকানি বেড়ে। কতদিন পর কাঙ্ক্ষিত সেই মুখশ্রী দেখতে পেলো আদি। শিরদাঁড়া বেয়ে একটা শীতল হাওয়া বয়ে যায়। আদির দৃষ্টিতে কোনো কিছু ফিরে পাওয়ার আকাঙ্খা আর সিমথির দৃষ্টিতে একরাশ তাচ্ছিল্যে।

সিমথি : কিউটিপাই বাই টেক কেয়ার।

সিমথি পেছন ঘুরে অনেক টা চলে যায়। আচমকা আদির হুশ ফিরতেই আদিবা দের দাঁড় করিয়ে আদি গিয়ে সিমথির সামনে দাঁড়ায়। সিমথি থেমে যায়। ভাবখানা এমন যেন ও আগে থেকেই জানতো আদি আসবে। আদির দৃষ্টির অগোচরে সিমথি একটা বাঁকা হাসি দেয়।

আদি : তাহলে তুমিই আমার বোন কে বাঁচালে।

সিমথি : Unfortunately আমি আপনার মতো কাউকে বিপদে দেখে মুখ ঘুরিয়ে চলে যেতে পারি না।

সিমথির কথায় আদি থমকায়। পুরনো কিছু মনে পড়তেই নিজের মধ্যে অনুশোচনাবোধ জেগে উঠে। কিছু বলতে নিলে।

সিমথি : ডোন্ট সে সরি। সাইড

আদি : সিমথি

সিমথি : সাইড দেন ( জোরালো গলায়)

সিমথির কঠোর স্বরে আদি পথ ছেড়ে দাঁড়ায়। সিমথি একটা তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে আঙ্গুলের মাথায় চাবি ঘুরাতে ঘুরাতে চলে যায়। আদি সিমথির যাওয়ার দিকে আহত দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। কিন্তু সিমথি একবারো ও ফিরে তাকায় না।

সিমথি : আমি জানি আদি আপনি এখনো আমার দিকে তাকিয়ে আছেন। বাট বিলিভ মি আমার মনে আপনার জন্য সেই ফিলিংস টা আর নেই। যা আছে তা শুধুই ঘৃণা। আপনার যেই ভালো লাগা টা কে ভালোবাসা মনে হচ্ছে সেটা ভালোবাসা নয় মোহ। ( মনে মনে)

সত্যিই সিমথির মনে আদির জন্য কোনো ফিলিংস নেই। কি হয়েছিলো ওদের মাঝে? আদির মনে কি শুধুই মোহ। এটাকেই আদির কাছে ভালোবাসা মনে হচ্ছে। কি মনে হয় আপনাদের?

চলবে,,,,,

#মিশেছো_আলো_ছায়াতে
#Writer_Sintiha_Eva
#part : 05

🍁🍁🍁

” ভোরের আলো যখন আকাশ পথে পৃথিবীতে পৌঁছেছে তখন থেকেই শুরু হয়েছে শহর জুড়ে নানান আলোচনা। ঢাকা সদর ঘাটের সামনে পড়ে আছে তিনটে বখাটে যুবকের মৃতদেহ। চোখ ভয়ানক ভাবে কেউ তেতলে দিয়েছে। সেই সাথে বুক এপোর উপোর করে ফেলে বুলেটের কষাঘাতে। এমন নৃশংস হত্যার তদন্তে আছে দায়িত্বশীল পুলিশ প্রশাসন। এই নিয়ে শহরে তৃতীয় বার এমন হামলা। কি হতে পারে এসবের আসল কারণ ? মৃতদেহ দেখেই বুঝা যাচ্ছে কেউ নিজের সমস্ত রাগ ঝেড়েছে, যেনো হাজার বছরের ঘৃণা এদের মতো বখাটে দের উপর। কিন্তু এর আসল কারণ এখনো জানা যায়নি। পুলিশ প্রশাসন জানিয়েছেন তারাই দ্রুত এই সমস্যার অবসান ঘটাবেন। এখন এই পর্যন্তই। বাকিটা জানতে আমাদের সাথেই থাকুন। ” —- আমি তন্ময় এহমাদ আছি আপনাদের সাথে।

আদিরা বসে ব্রেকফাস্ট করছিলো। তখনই ড্রয়িংরুমের টিভি থেকে এই রকম খবর আসায় আদিরা খাবার ছেড়ে ড্রয়িংরুমে যায়। ইশান জুস খেতে খেতে খবরে মন দেয়।

মেহের : আবার তিনটে খুন! কি হচ্ছে এসব।

ইশান : শহরের অবস্থা দিনদিন নাজুক হয়ে যাচ্ছে। কখন কি হচ্ছে বলা মুশকিল৷ কিন্তু কে এই বখাটে গুলো কে মারবে।

আদি : কোন কর্মের ফল পেলো কে জানে।

আদিবা : মুখ তো এতোটা চেনা যাচ্ছে না।

আদিবার কথায় আদি ধমকে বলে,,,,

আদি : তোর চিনে কাজ নেই। যাহহ

শহর জুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে আছে। সকাল থেকেই শহরময় গরম পরিস্থিতির শিকার। সদরঘাটের সামনে তিনটে যুবকের মৃতদের পড়ে আছে। যেই দেখছে সেই আর দ্বিতীয়বার দেখার সাহস জুগার করতে পারছে। নৃশংস ভাবে কেউ ওদের তিনজনেরই চোখ গুলো তেতলে দিয়েছে। সেই সাথে আছে বুক ছিড়ে বেরিয়ে যাওয়া বুলেটের চিহ্ন। সকাল থেকে সদর ঘাটে পুলিশ এসে জড়ো হয়। বেশ কিছুদিন পর আবারো একই ভাবে মৃতদের পেয়ে পুলিশ রা সবাই চমকায়। পুলিশ স্টেশনে এখনো অনেক কেইস ফাইল আছে। কিন্তু কোনো কেইসের খুনি কে এখনো কেউ ধরতে পারে। যার ফলস্বরূপ উপরমহল থেকে চাপ আসছে অত্যাধিক।

সিমথি হসপিটালে আসার সময় শহরের পরিস্থিতি অস্বাভাবিক দেখেই এসেছিলো। কিন্তু হসপিটালে আসতেই আরেক গন্ডগোল এসে ঝেকে বসে। ঢাকার নাজুক অবস্থার রেশ এসে পড়েছে সাধারণ মানুষের উপর। বখাটে দলের অন্য সদস্যরা এসে সাধারণ মানুষের দোকান-পাটে আগুন ধরিয়ে দিচ্ছে। সেই সাথে আহত হয়েছে অনেক মানুষ । হসপিটালের এম্বুলেন্সে একের পর এক আহত ব্যক্তি আসছে৷ সেসব সামাল দিতে দিতে ডাক্তাররা ও হাঁপিয়ে উঠছে।

মেঘা : আমি লাইফে এতো কেইস দেখিনি ভাই হাঁপিয়ে উঠেছি।

রোদেলা : যা বলেছিস।

তখনই এম্বুলেন্সের শব্দ কানে আসতেই নার্সরা দৌড়ে যায়। একটা বাচ্চা মেয়ের রক্তাক্ত দেহ নিয়ে নার্সরা,দৌড়ে আসে৷ ডাক্তাররা দৌড়ে এসে বাচ্চা মেয়েটা কে ওটিতে নিয়ে যায়। পেছন পেছন আসে বাচ্চা মেয়েটার বাড়ির লোকগুলো ।

সিমথি কেবলই একটা প্যাশেন্টের কেবিন থেকে বেরিয়ে কপালের ঘাম টুকু মুছে নেয় । অতঃপর অন্য কেবিনে ঢুকতে নিলে একজন ডক্তরের কথায় পা আটকায়। সামনে এগুতেই ভ্রু কুঁচকে যায়। কপালে জমে আসা ঘামের বিন্দুকণা পুনরায় মুছে সামনের দিকে অগ্রসর হয়। ক্ষানিকটা ক্লান্ত সুরে বলে উঠে,,,

সিমথি : এনি প্রবলেম।

তখনই মেয়েটার বাড়ির লোকসহ ডাক্তার পেছনে ফিরে।

আমান সাহেব : একচুয়ালি ম্যাম ইমার্জেন্সি ব্লাড প্রয়োজন বাট

সিমথি : বাট

আমান সাহেব : বাট এই গ্রুপের রক্ত আমাদের ব্লাড ব্যাংকে নেই৷

সিমথি : রক্তের গ্রুপ কি।

আমান : O নেগেটিভ

সিমথি কিছু ভেবে একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে। হাতে ব্ল্যাক কালার ঘড়িতে সময় টা দেখে নৌরিন কে ডাক দেয়।

নৌরিন : জ্বি মেম

সিমথি : নেক্সট যেই প্যাশেন্ট আছে তার অবস্থা কেমন।

নৌরিন : আপাতত একটু ভালো আছে মেঘা ম্যাম দেখছেন।

সিমথি : ঠিক মেঘাদের বলো ওদিক টা সামলে নিতে।

নৌরিন মাথা নাড়িয়ে সায় জানিয়ে তৎক্ষনাত চলে যায়। সিমথি ওটির বন্ধ দরজার দিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে।

সিমথি : চলুন

সিমথির কথায় আমান সাহেব ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যায়। নিজেকে ধাতস্থ করে থতমত খেয়ে বলে,,,,

আমান : ক কোথায়?

সিমথি : ব্লাড নিতে।

আমান : কে দেবে ম্যাম?

সিমথি : আমি।

সিমথির কথায় আমান সাহেব থতমত খেয়ে যায়। আমতা আমতা করে বলে,,,,

আমান : আ আপনি দেবেন

ডক্টর আমান কে এভাবে তোতলাতে দেখে সিমথি বিরক্তিকর দৃষ্টিপাত করে। হাতের ঘড়িটায় আবারো সময় দেখে হালকা চেঁচিয়ে বলে,,,,

সিমথি : হা করে তাকিয়ে থাকতে বলিনি লেটস গো।

আমান : ক কিন্তু ম্যাম

সিমথি : আবার কিসের কিন্তু দেখুন অনেক প্যাশেন্ট আছে এখনো। তার উপর মেয়েটা একদম বাচ্চা এসব রুমে কতক্ষণ আটকে রাখবেন। সো নো মোর ওয়ার্ডস এন্ড লেটস গো।

সিমথির ঝাঁঝালো কণ্ঠের কথার মর্মার্থ বুঝতে পেরে ডক্টর আমান ও আর কথা না বাড়িয়ে সিমথি কে নিয়ে যায়। বেশ কিছুক্ষণ পর ব্লাড দিয়ে সিমথি বেরিয়ে আসে। সিমথি বের হতেই মেয়েটার বাড়ির লোকজন সিমথিকে ঘিরে ধরে। সিমথি ওদের দিকে ভালো করে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে। একটা বিবাহিত মেয়ে সম্ভবত ওটিতে থাকা মেয়েটার মা বোধ হয়। কাঁদতে কাঁদতে উজ্জ্বল মুখ টা লাল হয়ে গেছে। পড়নে মেরুন রঙের একটা শাড়ী চুলগুলো এলোমেলো হয়ে আছে। মেয়েটার পাশেই দুজন ছেলে দাঁড়ানো। একজনের গায়ে সাদা শার্ট আর পড়নে কালো প্যান্ট উপরে কোট টা খুলে বাহাতে ঝুলিয়ে রেখেছে। তার পাশের ছেলেটা আকাশী শার্ট আর জিন্স প্যান্ট। চোখজোড়া চশমার ভেতরে ঢেকে আছে।

মেহের : তোমাকে সরি ভুলে তুমি ডেকে ফেললাম মাফ করবেন। আপনাকে কি বলে যে ধন্যবাদ দেবো সে ভাষা আমার জানা নেই। আপনি যদি সময় মতো ব্লাড না দিতেন তাহলে হয়তো,,,

মেহেরের কথায় সিমথি মুখটা বাম দিকে করে ছোট্ট একটা শ্বাস ছাড়ে। অতঃপর শান্ত গলায় বলে,,,

সিমথি : এটা আমাদের ডিউটি। এতে ধন্যবাদ দেওয়ার কিছুই নেই। আর বয়সে আপনি আমার থেকে কিছু টা হলেও বড় সো তুমি করে ডাকতে পারেন, নো প্রবলেম।

সিমথির কথায় মেহের হাসে। মেহের কে হাসতে দেখে সিমথি ও হালকা হাসে।

সিমথি : নাউ আমাকে যেতে হবে, বাই।

সিমথি ওদের পাশ কাটিয়ে চলে যায়। সিমথি চলে যেতেই শাওন ( আদির বড় চাচার ছেলে) বলে উঠে,,,

শাওন : মেয়ে টা কে চিনেছো মেহের।

মেহের : না কিন্তু চেনা চেনা মনে হলো।

ইশান : আরে উনি তো সিমথি জাহান সিয়া। আদি ভাইয়ার বন্ধু সায়ন ভাইয়ার বোন। আর উনাকে নিয়ে তো খবরে ও লেখালেখি হয়।

ইশানের কথায় মেহেরের টনক নড়ে। আচমকা সিমথির শান্ত গলায় কথা বলেছে মনে পড়তেই চমকায়। মুচকি হেসে বলে,,,,

মেহের : যায় বলো মেয়েটা কিন্তু দারুন কিউট আর ব্যবহার তো মাশাল্লাহ।

শাওন : হুমমমম।

সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে ঘড়ির কাটা পৌঁছায় রাত এগারো টায় । শহরের অবস্থা এখন অনেক টাই স্বাভাবিক। পুলিশরা অনেকেই গ্রেফতার করেন।তদন্তের মধ্যে জানা যায় এরা আক্রমণকারীরা কোনো বখাটে নয়। বরং দেশে জঙ্গি ঢুকেছে আর আজকের শহরের উত্তেজিত অবস্থা কে কাজে লাগিয়ে আর উত্তেজিত করাটাই ছিলো তাদের মেইন টার্গেট। যদি ও এদের সর্দার কে এখনো ধরা যায়নি। অনেকেই পালিয়েছে আবার অনেকে ধরা ও পড়েছে। তাদের কাছ থেকেই এসব তথ্য বের করা হয়েছে।

______________

সারাদিনের হয়রানি শেষে পরপর কয়েকটা ওটি অপারেশন শেষ হতেই ডাক্তাররা অনেকেই ক্লান্তিতে বাড়ি ফিরে যায়। আবার অনেকে বাড়ি যাওয়ার জন্য রেডি হয়। সিমথির ফোনে একটা কল আসায় সিমথি কলটা রিসিভ করে ওপাশ থেকে কিছু শুনে সায় মিলিয়ে সিমথি ফোন কেটে দেয়।

মেঘা : কিরে বাড়ি ফিরবি তো আজ নাকি।

সিমথি : তোর কি মনে হয় শ্বশুর বাড়ি যাবো।

রোদেলা : তাহলে চল আমরা তোর শ্বশুর বাড়ি ঘুরে আসি।

রোদেলার কথায় সিমথি হাতে থাকা কলমটা রোদেলার দিকে ছুঁড়ে মারে।

সিমথি : ফা’জি’ল চল একজন প্যাশেন্ট কে দেখে একসাথেই ফিরবো।

তুহিন : চল

সিমথি : তরী চলে গেছে।

মেঘারা হাঁটা থামিয়ে সিমথির দিকে তাকায় অতঃপর অসন্তোষ প্রকাশ করে মাথা নাড়িয়ে সায় দিয়ে জানায় তরী চলে গেছে। সিমথি ছোট্ট একটা শ্বাস ছেড়ে দরজা ঠেলে কেবিনে প্রবেশ করে। সঙ্গে সঙ্গে একটা শক্তপোক্ত বুকের সাথে ঠাস করে বারি খেয়ে পড়ে যেতে নিলে দুটো হাত কোমড় আঁকড়ে ধরে। সিমথি বেসামাল টাল সামলাতে সামনের ব্যক্তির কালো শার্টের কলার খামছে ধরে। কেবিনের সবাই হা করে ওদের দিকে তাকায়। সিমথি চোখ মেলে সামনে আদিকে দেখে চমকায়। এই কেবিনে আদি কি করছে। অন্যদিকে আদি একদৃষ্টিতে সিমথির দিকে তাকিয়ে আছে। আদিকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে সিমথি কিছুটা অস্বস্তিতে পড়ে যায়। আদিকে হালকা ধাক্কা দিয়ে নিজের থেকে সরিয়ে দেয়। কেবিনে পিনপিনে নীরবতাকে স্বাভাবিক করতে সিমথি হালকা কেশে উঠে।

সিমথি : সরি আদি ভাইয়া।

‘ সরি আদি ‘ পর্যন্তই তো ঠিক ছিলো সাথে ভাইয়া ডাকটা শুনে আদি চোখ মুখ কুঁচকে কিছু বলতো নিলে সিমথি পাশ কাটিয়ে চলে যায়। বাচ্চা মেয়েটার কাছে গিয়ে টুল টেনে বসে।

সিমথি : লিটেল প্রিন্সেস ওয়াট’স আপ।

সিমথির কথায় মেয়েটা খুশিতে গদগদ হয়ে যায়।

_ আম ফাইন। তুমি?

সিমথি : আমিও তো অন্নেকক ভালো। ওয়াট’স ইউর নেম?

সিমথির কথায় বাচ্চা মেয়েটা পুনরায় খিলখিলিয়ে হেসে দেয়।

_ আমার নাম তিয়াসা চৌধুরী তিন্নি।

সিমথি : তিয়াসা আবার তিন্নি বাহহ নাইস। তা মেডিসিন নিয়েছো।

তিন্নি : হুমম মাম্মাম জোর করে খাইয়ে দিয়েছে এত্তোগুলা ঔষুধ।

সিমথি : ও মা তাই। মেডিসিন না খেলে সুস্থ হবে কিভাবে।

তিন্নি : তাই তো

তিন্নির কথায় সিমথি নিঃশব্দে হেসে দেয়। অতঃপর সিমথি ছোট কুচি হাত টা নিয়ে পালস রেট চেক করতে শুরু করে। তখনই সিমথির ফোন টা বেজে উঠে
সিমথি বিরক্তিতে চোখ মুখ কুঁচকে ফোনের দিকে তাকায়। ততটা আমলে না নিয়ে তিন্নির ছোট হাতটার দিকে নজর দেয়। ফোন টা ও বাজতে বাজতে একসময় থেমে যায়। মেহের উঁকি দিয়ে ফোনের সেইভ করা নাম টার দিকে তাকায়। ফোনের স্কিনে ” ভাইয়া ” নাম টা ঝলঝল করছে। তিন্নির পালস রেট চেক করে উঠে দাঁড়ায়। অতঃপর ঘুরে মেহেরের দিকে তাকায়,,,,

সিমথি : কাল সকালের মেডিসিন গুলো নার্সই এসে দেবে। এখন ও ঠিকই আছে। জাস্ট দুদো দিন অবজারভেশনে রাখলেই পুরোপুরি সুস্থ হয়ে যাবে।

সিমথির কথায় মেহের হাসি মুখে সম্মতি জানায়। সিমথি পুনরায় তিন্নির দিকে ফিরে। তিন্নির চুলগুলো তে হাত বুলিয়ে মুচকি হাসে।

সিমথি : টেক কেয়ার লিটেল প্রিন্সেস।

অতঃপর তিন্নির গালে আলতো একটা চুমু খেয়ে ওদের থেকে বিদায় নিয়ে বেরিয়ে যায়। আচমকা আদি এসে ওদের পথ আটকায়। মেঘাদের দিকে তাকিয়ে ইনোসেন্ট একটা হাসি দেয়।

আদি : ডিয়ার শ্যালক শ্যালিকাগণ আপাতত দুইটা মিনিটের জন্য আপনার বান্ধবী কে আমার হাতে তুলে দিয়ে একটু পিছিয়ে যাবেন প্লিজ।

মেঘা : মানে আমরা কেনো যাবো আর সিমথির সাথে আপনার কি কথায় বা থাকতে পারে।

আদি : এবার আপনারা যদি আমাদের প্রাইভেট কথা শুনতে চান সেটা কিভাবে হবে বলুন। প্লিজ

সিমথি : মেঘা তোরা এগো আমি আসছি

তুহিন : কিন্তু সিমথি

সিমথি : যা তোরা।

মেঘারা নীরবে চলে যায়। সিমথি আদির দিকে কঠিন দৃষ্টি তাক করে। সিমথির চোখের দিকে তাকাতেই আদি এলোমেলো হয়ে যায়। তবুও নিজেকে সামলে সিমথির দিকে কিছুটা ঝুঁকে পড়ে,,,

আদি : শুনলাম তুমি নাকি তিন্নি কে রক্ত দিয়েছো। তুমি যে আমার তিন্নিকে রক্ত দিয়ে বাঁচালে তিন্নি তো তোমার কাছে ঋণী হয়ে গেলো। এখন সেই ঋণের প্রতিদান হিসেবে সে যদি তোমাকে তার কাকাইয়ের বউ বানাতে চাই তাহলে কি তুমি রাজি হবে। অবশ্যই তুমি তো আবার কারো কাছেই ঋণী থাকো না

আদির কথায় সিমথি চরম আশ্চর্য হয়। রক্ত দিলো সিমথি আবার প্রতিদান ও দেবে সিমথি। কি আজব কথা। সিমথি ভাষা হারিয়ে আদির দিকে অনিমেষ তাকিয়ে থাকে। সিমথি কে তাকিয়ে আদি ঠোঁট কামড়ে হেসে উঠে। হাত বাড়িয়ে সিমথির কপালে আসা চুলগুলো আলতো করে সরিয়ে দেয়। আবারো নিজের অজান্তেই হেসে দেয়।

চলবে,,,,,,