মিশেছো আলো ছায়াতে পর্ব-৬+৭

0
237

#মিশেছো_আলো_ছায়াতে
#Writer_Sintiha_Eva
#part : 06

🍁🍁🍁

সারাদিনের ব্যস্ততার অবসান ঘটিয়ে সিমথি বাড়ি ফিরে। ঘর্মাক্ত ও ক্লান্তিতে ভরপুর চোখ দুটো সোফার দিকে যেতেই থমকে যায়৷ অপ্রত্যাশিত কারণেই হোক আর প্রত্যাশিত কারণেই হোক সিমথির ঠোঁটের কোণায় ভালো লাগার হাসি ফুটে উঠে। সকল ক্লান্তি নিমিষেই কর্পূরের ন্যায় উধাও হয়ে যায়। আচমকা মেয়েলি চিৎকার কানে আসতেই সিমথি থতমত খেয়ে যায়।

রোজ : সিমথিপু ওখানে কি করছো । ভেতরে আসো।

রোজের কথায় সবাই ঘাড় ঘুরিয়ে সিমথির দিকে তাকায়। রহিমা বেগম তৎক্ষনাত মুখ ভেংচি কেটে অন্যদিকে ফিরে যায়। তরী বিরক্তিকর দৃষ্টি নিক্ষেপ করে উঠে দাঁড়ায়। তারপর গটগট করে উপরে চলে যায়। একজন বয়স্ক মহিলা উঠে সিমথির কাছে যায়। ঘর্মাক্ত মুখশ্রী টা তে হাত বুলাতে শুরু করে। উষ্ণ আদরের স্পর্শে সিমথি চোখ বুঁজে নেয়। বহুদিন পর সেই মা মা গন্ধ টা ফেলো৷ নাসারন্ধ্র দিয়ে সেই ঘ্রাণ টা অনুভব করলো৷ মহিলা টা আলতো হেসে জিজ্ঞেস করে,,,

_ কেমন আছিস মা?

সিমথি প্রত্যুত্তরে কিছু না বলে মহিলা কে ঝাপটে ধরে। মহিলা ও পরম আবেশে সিমথি কে নিজের বাহুডোরে আবদ্ধ করে। সিমথি অস্পষ্ট সুরে বলে ওঠে,,,,

সিমথি : ভালো মা!

আচমকা সায়ন ইফাজ আর রোজ চেঁচিয়ে উঠলো। তিনজনই এক সাথে বিদ্রোহী সুরে বলে উঠে,,,,

_ সব আদর কেবল ওর জন্যই আর আমরা তো কেউ না তাই না ভালো মা ।

ওদের চেঁচানোতে ” সুখের নীড় ” বাড়ি টা সম্পূর্ণ কেঁপে ওঠে। সিমথি ওর ভালো মাকে ছেড়ে ওদের তিনজনের দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকায়। সীমা ( ভালো মা) বেগম মুখে হাসি টেনে ওদের দিকে তাকায়।

সীমা বেগম : দিনদিন হিংসুটে হয়ে যাচ্ছিস তোরা। মেয়েটা কে কতবছর পর দেখলাম। আর একটু আদর করছি বলে এমন করবি।

সীমা বেগমের কথায় ইফাজ আক্ষেপের সুরে বলে ওঠে,,,

ইফাজ : বুঝলি ব্রো আদর পাওয়ার জন্য হলেও দূরে দূরে থাকতে হবে৷

ইফাজের কথায় সায়ন আর রোজ তাল মিলায়। ওদের অবস্থা দেখে সিমথি হেসে উঠে।

মিম : অনেক হয়েছে সিমথি যা ফ্রেশ হয়ে আয়।

মিমের কথায় সিমথি সায় জানিয়ে উপরে চলে যায়।

________________

রাত তিনটা ” সুখের নীড় ” বাড়িটা একদম নিস্তব্ধ। সবাই যে যার রুমে বেঘোরে ঘুমাচ্ছে। আচমকায় সিমথির ফোন টা বেজে উঠে। নিস্তব্ধতায় ঘেরা পরিবেশ টা আচমকায় ভুতুড়ে আওয়াজের মতো ফোন বাজতে থাকে। সিমথি বিরক্তি নিয়ে ফোন রিসিভ করে কানে নেয়। অতঃপর ঘুম জড়ানো কন্ঠে ” হ্যালো ” বলতেই ওপাশের ব্যক্তি ভাষা হারিয়ে ফেলে। কারো ঘুম জড়ানো কন্ঠ এতোটা মিষ্টি হতে পারে। বুকের ভেতরের হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বেসামাল হয়ে যাচ্ছে। আদি একটা বড়সড় ঢোক গিলে । কপাল বেয়ে ঘাম ছুটতে শুরু করেছে। সব কিছুই তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছে।

আদি : সিয়াজান

ওপাশ থেকে কোনো প্রতিক্রিয়া না পেয়ে আদি অবাক হয়৷। সিমথি তো চুপ থাকার মেয়ে না। ভালো করে কান পাততেই ভারী নিঃশ্বাসের শব্দ কর্ণকুহরে প্রবেশ করে। আদি আবেশে চোখ বুঁজে নেয়। সিমথির ঘুমন্ত মুখশ্রী দেখার জন্য আদির মন টা ব্যাকুল হয়ে যাচ্ছে। খুব ইচ্ছে করে ওই বড় পাপড়ি বিশিষ্ট বন্ধ চোখজোড়ায় নরম ওষ্ঠের চাপ বসাতে। কিন্তু এই মুহুর্তে সেটা আদোও সম্ভব নয়। সিমথিকে জ্বালানোর উদ্দেশ্য ফোন করেছিলো। কিন্তু সেই দহনে এখন আদি সারারাত দগ্ধ হবে এটা আদির বুঝা হয়ে গেছে।

_________________

সময় আর স্রোত চিরবহমান। কোনোটাই চিরস্থায়ী নয়। সবার জীবন কাটছে ব্যস্ততার মনে দিয়ে। সিমথি এপ্রোন টা খুলে সোফার উপর রেখে কেবিনের অন্যপাশে চলে যায়। বড় জানালা টা দিয়ে দক্ষিণা বাতাস হুরহুর করে ঢুকছে। সূর্যের প্রখরতার সাথে সাধারণ মানুষ যেনো হাপিয়ে উঠেছে। রাস্তা দিয়ে হাজারো দিনমজুর যাচ্ছে। আবার অনেকের স্কুল কলেজ ছুটি হওয়ায় তারাও বাড়ি ফিরছে । সিমথি একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে রোদ্রে ঝলমলে আকাশের দিকে তাকায়। বিড়বিড়িয়ে বলে,,,,

সিমথি : জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান সময় ছিলো ছোটবেলা। ছোট থাকতে ভাবতাম কবে বড় হবো, শাসন নামক বেড়াজাল থেকে মুক্তি পাবো, নিজের মতো স্বাধীন ভাবে বাঁচবো। আর আজ মনে হচ্ছে ছোট ছিলাম সেটাই ভালো ছিলো। মায়ের শাসন, বাবাইয়ের আদর ভাইয়ার ভালোবাসা সবকিছুর মাঝে শান্তিতে ছিলাম। জীবনের সব হাসি-আনন্দ কেঁড়ে নিয়েছে এই বড়বেলা।

আচমকা দরজায় শব্দ হতেই সিমথি ঘুরে দাঁড়ায়। আসার জন্য পারমিশন দিতেই একজন যুবক প্রবেশ করে। গায়ে নর্মাল ড্রেসআপ। যুবককে দেখে সিমথি আড়ালে একটা হাসি দেয়। সামনের যুবক নিজের আইডি কার্ড বের করে সিমথিকে দেখায়। সিমথি কিছুটা গাম্ভীর্যের সাথে বসার জন্য ইশারা করে। লোকটা ইশারা বুঝতে পেরে বসে যায়। সিমথি ও সামনের সিটে বসে পড়ে। অতঃপর স্বাভাবিক গলায় যুবকের উদ্দেশ্য প্রশ্ন ছুঁড়ে মারে,,,,,

সিমথি : কি বলার জন্য এসেছেন মিস্টার শুভ্র

সিমথির কথায় সামনের শুভ্র নড়ে চড়ে বসে। অতঃপর নিজের মধ্যে গম্ভীরতা এঁটে সিমথির দিকে পাল্টা প্রশ্ন ছুঁড়ে মারে,,,,

শুভ্র : পরপর এতোগুলো মা/ডা/র আবার বেঁচে বেঁচে সেই লোকগুলোকেই যারা মেয়েদের টিজ করে। প্রত্যেকটা মা/র্ডা/রের ধরণ একই। প্রত্যেক মৃতদেহের পাশে একটা সতর্ক বার্তা পাওয়া যায়। প্রতিটা মা/র্ডা/র খুবই বিচক্ষণ বুদ্ধির সাথে ঘটানো হয়েছে। কোনো প্রুভ নেই। এর পেছনের কারণ কি মিস সিমথি জাহান সিয়া?

শুভ্রর কথায় সিমথির কোনো ভাবাবেগ বুঝা গেলো না। সিমথি ঘাড় টা হালকা বাঁকিয়ে শুভ্রর দিকে তাকায়। এতে শুভ্রর চোখের তাকানোর মধ্যে ও কোনো ভাবাবেগ হলো। সেই চোখজোড়া এখনো সিমথির দিকে স্থির চাহনী দিয়ে আছে। শুভ্র কে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে সিমথি বাঁকা হাসে। কিন্তু পুনরায় মুখে গম্ভীরতা এটে শুভ্রর দিকে তাকায়।

সিমথি : যা বলার স্পষ্ট করে বলুন। ভণিতা আমার পছন্দ নয়।

শুভ্রর মাথার রাগ চেপে বসে। তবুও নিজেকে যথাসম্ভব শান্ত রাখে। একজন সিআইডির বিচক্ষণ কর্মকর্তা হিসেবে হুটহাট রেগে যাওয়া টা যুক্তিসঙ্গত নয়। শুভ্রর অবস্থা দেখে সিমথির হাসি পাচ্ছে। একজন বিচক্ষণ কর্মকর্তার এই অবস্থা তাহলে বাকিদের কি হাল।

শুভ্র : আপনি কি সত্যিই কিছু বুঝতে পারছেন না।

সিমথি : নাহ।

শুভ্র : যেদিন যেদিন রাতে মার্ডার গুলো হয়েছে। সেদিন রাতে আপনি কোথায় ছিলেন ?

সিমথি : শ্বশুর বাড়ি ছিলাম।

সিমথির কথায় শুভ্র ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যায়। পরক্ষণেই নিজেকে সামলে কিছুটা উঁচু গলায় বলে উঠে,,,,

শুভ্র : আমার সাথে ফাজলামি করছেন।

শুভ্রকে চেঁচাতে দেখে সিমথি তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে শুভ্রর দিকে তাকায়। অত্যন্ত ভদ্র ভাষায় বলে ওঠে,,,

সিমথি : আস্তে কথা বলুন এটা আপনার অফিস নয় কিংবা Integrative room নয় যে চেঁচাবেন। কোনো রকম প্রমাণ ব্যতিত আপনি কিভাবে আমাকে জার্জ করেন। আপনাদের এসিপি স্যার জানেন আমাকে জার্জ করতে এসেছেন।

শুভ্র এবার কিছুটা দমে যায়। হাতে থাকা ফাইল টা সিমথির দিকে বাড়িয়ে দেয়। অতঃপর নম্র গলায় বলে উঠে,,,,

শুভ্র : কেস ঘটিত সকল ইনফরমেশন এখানে আছে। দেখে নেবেন আসি এবার।

শুভ্রর কথায় সিমথি ভ্রুক্ষেপ না করে ফাইল টা হাতে নেয়। ফাইল টা খুলে সম্পূর্ণ টা তে চোখ বুলায়। আচমকায় একটা লেখায় চোখ আটকে যায়। প্রত্যেক স্মাগলিং, কিডন্যাপিং থেকে শুরু করে প্রত্যেক জায়গার পাশে একটা নাম কমন ” এন.কে.”।

সিমথি ফাইল টা জোরে ফেলে দেয়। জোরে একটা শ্বাস নিয়ে ডায়াল করে।

_____

সিমথি : এই এন.কে. সংবলিত সকল ইনফরমেশন আমার চাই।

_______

সিমথি : যেখান থেকে খুশি বের করুন আই ডোন্ট কেয়ার। বাট ইনফরমেশন গুলো খুব তাড়াতাড়ি প্রয়োজন।

________

সিমথি : গুড ভেরি গুড।

সিমথি কল কেটে দেয়। অতঃপর আবারো ব্যস্ত হয়ে পড়ে নিজের কাজে।

আকাশের অবস্থা ক্রমশ খারাপের দিকে যাচ্ছে। কালো মেঘগুলো সমস্ত আকাশ জুড়ে ছুটাছুটি করে ব্যস্ত। কেবল মাত্র বাড়িতে পা রাখলো সিমথি। আচমকা গায়ের উপর একগাদা নোংরা পানি পড়তেই মাথা নষ্ট হয়ে যায়। চোখ গরম করে সামনে তাকাতেই তরীকে দেখে মাথায় আগুন ধরে যায়। অন্যদিকে তরী সিমথির এউ অবস্থা দেখে একটা বাঁকা হাসি দেয়। গুনগুন করে গান গাইতে গাইতে সেখান থেকে চলে যায়। সিমথি জোরগলায় কিছু বলতে গিয়ে ও থেমে যায়। মা-বাবা মরা মেয়েকে কিছু বলতে ও সিমথির বিবেকে নাড়া দেয়। কারণ মা-বাবা না থাকার কষ্ট টা সিমথি হাড়ে হাড়ে টের পায়।

সীমা বেগম ড্রয়িংরুমে এসে সিমথির এমন অবস্থা দেখে চিল্লিয়ে উঠে। উনার বুঝতে বাকি নেয় কার দ্বারা এই কাজ হতে পারে। চিৎকার দিয়ে তরীকে ডাক দেয়। সীমা বেগমের চেঁচানো তে ড্রয়িংরুমে সবাই এসে জোরো হয়।

মিম : একি সিমথি তোর এই অবস্থা কেনো?

মিমের কথায় সিমথি কিছু বলার আগেই রহিমা বেগম মুখ বাকিয়ে বলে,,,

রহিমা বেগম : কি ঢঙ শুরু কইরা দিলি কবি আমারে। গায়ের উপরে এতো নোংরা পানি আইলো কইত্তে। বাইরে আবার কোন অঘটন ঘটাইয়া আইলি।

রহিমা বেগমের কথায় সিমথি চোখ গরম করে উনার দিকে তাকায়। শক্ত গলায় কিছু বলতে নিলে সীমা বেগম বলে উঠে,,,,

সীমা বেগম : তোমার আস্কারা পেয়ে পেয়ে তরী টা এমন হয়েছে। ছোটবেলা পাঁচ ভাইবোনের মধ্যে কতো মিল ছিলো। আর এখন সিমথি কে দেখলেই তরীর মাথায় এসব ঝেকে বসে।

রহিমা বেগম চোখ গরম করে বলে,,,

রহিমা বেগম : তুই চুপ থাক। এই মাইয়া ডা আমার নাতনীর কাছ থেইকা সব কাইড়া নিছে। জন্মের কয়েক বছরে বাপ-মারে ও খাইলো। আর পরে আমার রূপা আর তার জামাই ডা

বাকি টা না বলেই আঁচলে চোখ মুছতে শুরু করে। সিমথি কোনোভাবে কান্না আঁটকে একটা তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে উপরে চলে যায়। সিমথিকে এভাবে চলে যেতে দেখে সায়ন ধৈর্য হারা হয়ে চেঁচিয়ে উঠে।

সায়ন : দাদি মা তোমাকে আমি যথেষ্ট সম্মান দেয় কথাটা আবার স্মরণ করিয়ে দিলাম। কিন্তু তুমি যদি এটাকে আমার দুর্বলতা ভাবো তাহলে সেটা তোমার অনেক বড় ভুল। আমার পৃথিবী মানেই আমার বোন। তুমি যদি ওকে কষ্ট দেওয়ার কথা কল্পনা ও করো আই সয়ার সেদিন আমি ভুলে যাবো তোমার আর আমার মধ্যে কোনো রক্তের সম্পর্ক আছে।

সায়ন এতোটুকু বলে সিমথির রুমে দিকে ছুটে যায়। সায়নের পেছন পেছন মিম ও চলে যায়। ইফাজ রাগান্বিত সুরে তরীকে উদ্দেশ্য করে বলে,,,

ইফাজ : সিমথির জায়গায় আমি হলে তোর গালে ঠাস করে একটা থাপ্পড় লাগাতাম। আদরে আদরে বিগড়ে গেছিস তুই। আজ যদি সিমথির চোখ থেকে একফোঁটা পানিও পড়ে খোদার কসম লাগে আমি আব্বুকে সব বলে দেবো। আর এটা ও বলবো যত তাড়াতাড়ি সম্ভব দেশের মাটিতে পা রাখতে। গট ইট। রোজ চলে আয়।

______________________

বাইরে ঝুমঝুম বৃষ্টি পড়ছে। সেই সাথে একটু পর পর আকাশের বুক ছিড়ে বজ্রপাত হচ্ছে। অন্ধকার গুটগুটে রুমে মেঝেতে সিমথি হাঁটুতে মাথা ঠেকিয়ে বসে আছে। চোখের কার্ণিশে অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে। ঘড়ির কাটা তখনই রাত তিনটার টিকটিক বেজে ওঠে। সায়নরা এসেছিলো অনেক ডেকেওছিলো কিন্তু সিমথি দরজা খুলেনি। হাতে থাকা ফ্যামিলি ফটো টার দিকে তাকায়। ভেজা গলায় বলে ওঠে,,,,,,

সিমথি : জন্ম মৃত্যু নাকি উপরওয়ালার হাতে। ছোট থেকে এটাই জানতাম। তোমরা ও তো এটাই বলেছিলো মাম্মাম-বাবাই। তাহলে এতো বছর ধরে কেনো চার চারটে লোকের মৃত্যুর ভার বইতে হচ্ছে আমাকে। সত্যিই কি সেদিন আমার কোনো দোষ ছিলো। আমি কি করতাম বলো। আমি বুঝতে পারিনি ওভাবে ট্ ট্র

আর কিছু না বলেই সিমথি শব্দ করে কেঁদে নেই। কাঁদতে কাঁদতে অভিযোগের সুরে বলে,,,,

সিমথি : আমি ও মানুষ বাবাই। ওরা সবাই আমাকে ভুল বুঝছে। বাইরে থেকে আমাকে যতোটা কঠোর দেখাক না কেনো। আমি তো জানি আমার ভেতরে কি চলে। বিশ্বাস করো দাদিমা যখন তোমাদের মৃত্যুর জন্য আমাকে দোষারোপ করে তখন মনে হয় আমি তোমাদের কাছে অভিশাপ স্বরূপ এসেছি। সেদিন আমার কিছু একটা যদি হয়ে যেতো তাহলে বোধহয় আমি এসব কিছু থেকে মুক্তি পেতাম। আমি যাকে আঁকড়ে ধরতে চাই সেই আমাকে ছেড়ে চলে যায়। আমার ভাগ্যটাই খারাপ।

কথাগুলো বলে সিমথি পুনরায় কেঁদে দেয় হাতে সামনে তথাকা কাঁচের গ্লাস স্বজোরে ফেলে দেয়। সেখান থেকে একটা কাচ নিয়ে হাতের মধ্যে সমানে পুচ লাগায়।অন্যদিকে বিছানায় থাকা ফোন টা লাগাতার বাজতে থাকে। কিন্তু ভারী বৃষ্টি পাতের শব্দে কিছুই শোনা যাচ্ছিলো না বিধায় ফোনের আওয়াজ টা ও সিমথি শুনতে পারেনি।

____________

সূর্যের আলো চোখে মুখে পড়তেই সিমথির ঘুম ভেঙে যায়। চোখের পাতা ভার লাগায় পুনরায় চোখ বুঝে নেয়। বাম হাতটা ব্যথায় টনটন করছে। সিমথি চোখ মেলে হাতের দিকে তাকায় রক্ত শুকিয়ে গেছে। হাত টা ফুলে উঠেছে। কাঁটা জায়গায় চারপাশ টা লাল হয়ে গেছে। সিমথি একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে উঠে দাঁড়ায়। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে ওয়াশরুমে চলে যায়। সেখান থেকে ফ্রেশ হয়ে রেডি হয়ে নিচে নেমে যায়। কারো মুখোমুখি হবার ইচ্ছে টা আজ আর নেই। যাওয়ার আগে তরীর রুমের দিকে একপলক তাকায়। তরী বেঘোরে ঘুমাচ্ছে। কিছু একটা ভেবে তরীর রুমে পা বাড়ায়। তরীকে বাচ্চাদের মতো ঘুমাতে দেখে সিমথি নিজের অজান্তেই হেঁসে দেয়। পা বাড়িয়ে তরীর মাথার কাছে গিয়ে বসে। কিছুক্ষণ মাথায় হাত বুলিয়ে কপালের একটা স্নেহের পরশ এঁটে দেয়। তরীর কপাল থেকে ঠোঁট সরিয়ে সরে আসতে নিলে কিছু একটা শোনামাত্র থেমে যায়। তরী ঘুমের ঘোরে কিছু বলছে। সিমথি কান টা বাড়াতেই তরীর কথাগুলো সিমথির কানে পৌঁছায়,,,,

তরী : সিমথিপু দেখ ইফাজ ভাইয়া চিটিং করছে। ওর ছক্কা উঠেনি তবুও ছক্কা পাল্টে ছক্কা তুলে রেখেছে। তুই কিছু বল দেখ দেখ সায়ন ভাইয়া ও মুচকি মুচকি হাসছে।

এতোটুকু শুনতে সিমথি চমকে উঠে। চোখের সামনে ছোটবেলার কিছু পুরানো স্মৃতি ভেসে ওঠে। তখন সিমথির বয়স হবে এগারো বছর আর সায়নের বয়স ষোলো। তরীর বয়স দশ বছর। ইফাজের বয়স তেরো ষোলো। সায়ন আর ইফাজ সমবয়সী। রোজা তখন ও ছোট। একদিন বিকালে সিমথি,সায়ন,ইফাজ আর তরী বসে লুডু খেলছিলো। আর রোজা পাশে বসে ঠোঁট উল্টে ওদের খেলা দেখছিলো। খেলার একপর্যায়ে ইফাজ আর সায়ন চিটিং শুরু করে। তখনই তরী সিমথির কাছে অভিযোগের সুরে এই কথাগুলো বলেছিলো। আচমকা তরী নড়ে উঠতেই সিমথি অতীত থেকে বাস্তবে ফিরে। নিজেকে সামলে উঠে দাঁড়ায় অতঃপর দ্রুত পায়ে রুম থেকে বেরিয়ে আসে। সিমথি বের হতেই তরী উঠে বসে। উন্মাদের মতো রুমে চারদিকে চোখ বুলায়। কেনো যেনো মনে হচ্ছে কেউ ছিলো রুমে। কিন্তু কে?

চলবে,,,,,,

#মিশেছো_আলো_ছায়াতে
#Writer_Sintiha_Eva
#part : 07

🍁🍁🍁

সায়ন : এভাবে কোথায় যাচ্ছিস। খেয়ে যাহ।

সায়নের কথায় সিমথি ঘাড় ঘুরিয়ে খাবার টেবিলের দিকে তাকায়। রহিমা বেগম কে বসে থাকতে দেখে ঘাড় ফিরিয়ে নেয়। শান্ত গলায় বলে,,,,

সিমথি : খিদে নেয়।

সিমথি চলে যেতে নিলে সায়ন এডে হাত টেনে ধরে। কাটা জায়গায় জোরে চাপ পড়তেই সব্যথায় সিমথি চোখ-মুখ কুঁচকে ফেলে। তবুও নিজেকে স্বাভাবিক রেখে সায়নের দিকে তাকায়। ইফাজ আর রোজ ও এসে সায়নের পাশে দাঁড়ায়।

সিমথি : ভাইয়া প্লিজ ফোর্স করবি না। আমি খাবো না।

সিমথির কথায় সায়ন পাত্তা না দিয়ে মিমের দিকে তাকায়। মিম খাবার আনতে চলে যায়। সায়ন সিমথিকে টেনে সোফায় নিয়ে বসিয়ে দেয়। ব্যান্ডেজ ছাড়া কাটা জায়গায় চাপ পড়তেই গলগলিয়ে র/ক্তপাত শুরু হয়। মিম খাবার টেবিলে রাখতেই সায়ন খাবার হাতে নেয়। প্লেট থেকে রুটি ছিড়তে নিলেই হাতের দিকে তাকিয়ে চমকে যায়।

সায়ন : আমার হাতে র/ক্ত আসলো কোথা থেকে

সায়নের কথায় মিম ব্যস্ত গলায় বলে,,,

মিম : কোনো আক্কেল জ্ঞান নেয়। হাত কিভাবে কাটলে।

মিমের কথায় সায়ন বোকার মতো উত্তর দেয় ,,,,

সায়ন : আমি জানি না। আমার হাত তো কাটেনি।

আচমকা সায়নের কিছু মনে পড়তেই সায়ন সিমথির হাতের দিকে তাকায়। সঙ্গে সঙ্গে সায়নের বুক টা মোচড় মেরে উঠে। সিমথির হাত টেনে ব্যতিব্যস্ত গলায় চেঁচিয়ে উঠে,,,,,

সায়ন : মিম তাড়াতাড়ি ফাস্ট এইড বক্স নিয়ে আসো।

সায়নের কথায় সবাই সিমথির হাতের দিকে তাকায়। মিম দৌড়ে ফাস্ট এইড বক্স আনতে চলে যায়। রোজ সিমথির সামনে হাঁটু গেড়ে বসে পড়ে। ইফাজ সিমথির বা পাশে সোফায় বসে।

ইফাজ : তোর হাত কিভাবে কাটলো সিমথি।

ইফাজের কথায় সিমথি স্বাভাবিক দৃষ্টিতে সায়নের দিকে তাকায়। অতঃপর শান্ত গলায় বলে উঠে,,,,

সিমথি : হয়তো কোথাও লেগেছে। জানি না সঠিক।

সিমথির এমন কথায় সায়ন রেগে যায়।

সায়ন : একটা থা/প্প/ড় লাগাবো বোকা ভাবিস আমাদের। আমি বুঝিনি কার রাগ কার উপর ঝেড়েছিস।

ইফাজ : আহ সায়ন চুপ কর। সিমথি এদিকে তাকা।

ইফাজের কথায় কোনোরকম ভ্রুক্ষেপ না করে উঠে দাঁড়ায়।

সিমথি : আমার লেট হচ্ছে। বাই

সিমথি চলে যেতে নিলে সায়ন সিমথির কনুইয়ের কাছে টান দিয়ে পুনরায় বসিয়ে দেয়। অতঃপর চেঁচিয়ে উঠে,,,,

সায়ন : মিম তোমার আসতে এতোক্ষণ লাগে।

সায়নের চেঁচানো তে মিম দৌড়ে আসতে আসতে থমকে যায়। এই প্রথম সায়ন মিমের সামনে উঁচু গলায় কথা বললো। মিম কে এভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে সায়ন উঠে মিমের হাত থেকে বক্স টা নিয়ে ঝাঁঝালো কণ্ঠে বলে,,,

সায়ন : বেক্কলের মতো দাঁড়িয়ে আছো কেনো।

মিম কান্না আটকে সায়নের দিকে তাকায়। সায়ন দ্রুত সিমথির পাশে বসে হাত টেনে নিজের কোলে রাখে। অতঃপর যত্নসহকারে হাত টা ব্যান্ডেজ করে দেয়। রাগান্বিত সুরে সিমথির দিকে তাকিয়ে বলে,,,,

সায়ন : আর কোনোদিন অন্যের রাগ নিজের উপর ঝাড়লে তোকে আমি জাস্ট মে/রে দেবো।

সায়নের দিকে তাকিয়ে সিমথি অদ্ভুত একটা হাসি দেয়।

সিমথি : ভাবীপুর সাথে নেক্সট আরেকদিন এমন বিহেভ করলে তোকে আমি মে/রে দেবো গট ইট।

সিমথির কথায় সায়ন ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যায়। কই সায়ন রেগে আছে বোন হয়ে রাগ ভাঙ্গাবে তা না মায়ের মতো উল্টো ওকেই শাসন করছে। সিমথি উঠে মিমের কাছে চলে যায়।

সিমথি : ও ভাবীপু

সিমথির এই ডাক টা শুনলেই মিমের মন ভালো হয়ে। মিম হাসি মুখে সিমথির দিকে তাকায়। মেয়েটার মাঝে অদ্ভুত কিছু আছে। একপলক তাকালে নিমিষেই মন ভালো হয়ে যায়। সিমথি মিমের চোখের দিকে তাকিয়ে বেখেয়ালি স্বরে বলে উঠে,,,,

সিমথি : কান্না করো না। ভাইয়া এমনই। একটু শাসন করে ঠিক করে নাও।

সিমথির কথায় মিম হাসে।

সিমথি : বাই।

সায়ন সিমথিকে পেছন থেকে খেয়ে যাওয়ার জন্য অনেকবার ডাকে। কিন্তু সিমথি সায়নের ডাক কানে না তুলে বেরিয়ে যায়।

______________

গ্রীষ্মের প্রখর রোদে জনসাধারণের মন যখন এক পশলা বর্ষণের জন্য অপেক্ষা মান। তখনই অম্বর জুড়ে কালচে মেঘের আনাগোনা। ঝড়ো হাওয়ায় রাস্তায় অবহেলায় পড়ে থাকা ধুলোগুলো স্বাধীনভাবে উড়তে শুরু করে। এরই মাঝে হঠাৎ হঠাৎ বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে। সময়ের পালাক্রমে আকাশের বুক ছিড়ে বেরিয়ে আসা শীতল পানির কণা উত্তপ্ত শহরকে মুহুর্তের মধ্যে শীতল করে দেয়। ঘড়ির কাটায় তখন দুপুর একটা বাজে। মেঘা ঘড়ির দিকে তাকিয়ে উপরের ঠোঁট দিয়ে নিচের ঠোঁট চেপে ধরে টেনশনে। ভয়াবহ বৃষ্টিপাতের জন্য রাস্তায় কোনো রিকশা বা কিছুই নেই। আবার নেটওয়ার্কের ও বড় সমস্যা হচ্ছে। আজ যদি নিজের গাড়িটা নিয়ে আসতো তাহলেই এমন পরিস্থিতিতে পড়তে হতো না। কথাগুলো মনে মনে ভেবে মেঘা নিজেই নিজেকে গালিগালাজ করতে থাকে। আচমকা পাশে কারো উপস্থিতি অনুভব করতেই মেঘা চমকে পাশে তাকায়। পাশের লোকটা কে দেখে মেঘা দুপা পিছিয়ে যায়। ভয়ে দুটো ঢোক গিলে।

মেঘা : আজ তুই শেষ মেঘা। ( মনে মনে)

মেঘাকে এভাবে পিছিয়ে যেতে দেখে সামনে ব্যক্তিটা বাঁকা হাসে। মেঘার দিকে দুপা এগিয়ে যায়। মেঘা ভয়ে ভয়ে লোকটা কে উদ্দেশ্য করে প্রশ্ন ছুঁড়ে মারে,,,,

মেঘা : আপনি এখানে কি করছেন?

মেঘার কথায় লোকটা শব্দ করে হেসে দেয়। যেনো মেঘা কোনো জোকস বলেছে আর সামনে লোকটা তা শুনে মজা পেয়েছে। মেঘা বোকার মতো লোকটার হাসির দিকে তাকিয়ে থাকে আর মনে মনে ভাবতে থাকে হাসার মতো কি বললো।

মেঘা : উফফস আয়াশ প্লিজ হাসবেন না!

আয়াশ এবার চোয়াল শক্ত করে মেঘার দিকে এগিয়ে যায়।

আয়াশ : চড়িয়ে গাল লাল করে দেবো। কি তখন থেকে আপনি আপনি করছো।

আয়াশের কথায় মেঘা একটা শুকনো ঢোক গিলে। ভয়কে ভেতরে চাপা দিয়ে রাগ মিশ্রিত স্বরে বলে,,,

মেঘা : আপনি কও আমার বর লাগেন যে তুমি তুমি করবো হাহ।

মেঘার কথায় আয়াশ এবার দারুন চটে যায়। মেঘার খোলা চুলগুলো মুঠোয় পুরে নিজের দিকে টান দেয়। মেঘা আশ্চর্য হয়ে ব্যথায় চোখ মুখ খিঁচে নেয়।

আয়াশ: বড্ড বাড় বেড়েছিস। রাত থেকে ফোন দিচ্ছি ধরিস না কেনো। ঢং করিস আমার সাথে।

মেঘা : চুল ছাড়ুন ব্যথা পাচ্ছি। নিমোকারাম একটা তিনমাস ধরে ফোন দেন না। আমি নিজে থেকে দিলে ইগনোর করেন। এখন আসছে ভালোবাসা দেখাতে।

মেঘার কথায় আয়াশ চুলে আরো জোরে চাপ দেয়। দাঁতে দাঁত চেপে মেঘার মুখের কাছে মুখ নিয়ে বলে,,,,

আয়াশ : এটা হলো কথায় কথায় ভাইয়া ডাকার শাস্তি। মনে আছে ওইদিন সবার সামনে ভাইয়া ডেকেছিলে।

মেঘা : তো কি আদি ভাইয়া দের সামনে ওগো শুনছো বলে ডাকতাম। নিষ্ঠুর লোক চুল ছাড়ুননননন।

আয়াশ মেঘাকে ধাক্কা দিয়ে ছেড়ে দেয়। মেঘা পড়তে পড়তে নিজেকে কন্ট্রোল করে। রাগান্বিত দৃষ্টিতে আয়াশের দিকে তাকায়। ইচ্ছে করছে লোকটা মাথা ফা/টি/য়ে দিতে। অ/স/ভ্য একটা ।

আয়াশ : আমাকে মনে মনে বকা অফ কর।

মেঘা : এই চুপ থাকুন তো। সহ্য হচ্ছে আপনাকে আমার। কোন পা/গ/লে ধরেছিলো আপনাকে ভালোবাসলাম।

আয়াশ : সো স্যাড । কি আর করবে বলো। সবই তোর ব্যাড লাক।

মেঘা : হুমম জানি জানি।

মেঘা গাল ফুলিয়ে অন্যদিকে তাকায়। আয়াশ মুচকি হেসে দেয়। এক পা এক পা করে মেঘার,দিকে এগিয়ে যায়। আচমকা পেছন থেকে মেঘাকে ঝাপটে ধরে। মেঘা পড়তে পড়তে নিজেকে সামলে নেয়। রাগান্বিত দৃষ্টিতে আয়াশের দিকে তাকালে আয়াশ একটা ইনোসেন্ট লুক দেয়।

আয়াশ : সরি মেঘপরী।

আয়াশের কথায় মেঘা ভ্রুক্ষেপহীন দৃষ্টিতে আকাশের দিকে তাকায়। বৃষ্টি অনেকটাই কমে এসেছে। এবার হসপিটালের পৌঁছাতে হবে নয়তো সিমথির কাছে ঝাড়ি খেতে হবে। মেঘা আয়াশকে ছাড়াতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। কিছুতেই আয়াশের সাথে কথা বলবে না। কি পেয়েছে ওকে। যখন তখন ওর উপর রাগ ফলাবে। আর এমন হবে না। মানবে না এই জুলুমবাজী মেঘা। সামান্য ভাইয়া ডাকার জন্য তিনমাস কথা অফ। কতবড় পাষাণ লোক টা।

আয়াশ : ও মেঘপরী কথা বলবে না।

মেঘা : ছাড়ুন ওটি আছে আমার। এমনি লেট হয়েছে। সিমথি আজ আমাকে সেই ঝাড় দেবে।

আয়াশ : উহু শ্যালিকা জানে তার বান্ধবী এখন বান্ধবীর জামাইয়ের সাথে আছে।

মেঘা : কে কার জামাই?

আয়াশ : কেনো আমি তোমার জামাই।

মেঘা : ফেসবুকের স্ট্যাটাস বলেছে বয়ফ্রেন্ড কে জামাই ভাবিস না বইন ব্রেকআপ হলে বিধবা হয়ে যাবি।

মেঘার মুখে এমন কথা শুনে আয়াশ হাসবে না কাঁদবে এটাই ভুলে যায়। আয়াশ হতভম্বের মতো মেঘার দিকে তাকিয়ে থাকে। এই সুযোগে মেঘা আয়াশের হাতে চিমটি মারে। ব্যথায় আয়াশ মেঘাকে ছেড়ে দিতেই মেঘা হেসে ছাউনির নিচ থেকে বেরিয়ে পড়ে। আয়াশের দিকে তাকিয়ে চোখ টিপে বলে উঠে,,,,

মেঘা : আমার রাগ ভাঙ্গানো এতোটা সহজ নহে বালক। অপেক্ষা করতে হবে আপনাকে ও।

কথাটা বলে মেঘা এগিয়ে যায় উদ্দেশ্য কোনো রিকশা পেলে উঠে পড়বে। এদিকে মেঘার কথা গুলো আয়াশের কানে আসতেই আয়াশ শব্দ করে হেসে দেয়। হাসির একপর্যায়ে বলে উঠে,,,,

” “প্রহর শেষে আলোর রাঙায়
সেদিন চৈত্র মাস
তোমার চোখে দেখেছিলাম
আমার সর্বনাশ!! ” ”

( ~~রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর~~~)

_______________

সিমথি : কি ম্যাডাম প্রেমালাপ এতো তাড়াতাড়ি শেষ।

কেবিনে প্রবেশ করতেই সিমথির কথায় মেঘার পা অটোমেটিক অফ হয়ে যায়। ঢোক গিলে সিমথির দিকে তাকায়। মেঘাকে তাকাতে দেখে তুহিন মেঘার মাথায় গাট্টা মারে। অতঃপর টেবিলের উপর বসে আফসোসের সুরে বলে উঠে,,,,

তুহিন : দুধের বাচ্চা ও প্রেম কইরা বেড়ায় আর আমি এতো বড় হইয়া কি করলাম।

তুহিনের কথায় রোদেলা সায় মিলিয়ে তুহিনের কাঁধে হাত রেখে বলে উঠে,,,,

রোদেলা : তুহিন ভাই বাঁইচা থাইকা কি লাভ ম/ই/রা যা।

রোদেলায় এহেন কথায় তুহিন নিজের কাঁধ থেকে রোদেলার হাত এক ঝটকায় ছেড়ে দেয়। বেচারি এটার জন্য প্রস্তুত না থাকায় হাত গিয়ে ঠাস করে টেবিলে বারি খায়। রোদেলা মুহুর্তেই রণচণ্ডী রূপ ধারণ করে তুহিনের দিকে তাকায়। তুহিন ঘাবড়ে গিয়ে কিছুটা দূরে সরে যায়।

তুহিন : আজ তুই শেষ ব্রো ( বিড়বিড়িয়ে)

রোদেলা : তুহিনের বাচ্চা ( হালকা চেঁচিয়ে)

সিমথি ওদের কান্ড বিরক্ত হয়ে হাতের কলম টা তুহিনের মাথা বরাবর ছুঁড়ে মারে। তুহিন ব্যথায় সিমথির দিকে তাকায়।

সিমথি : ব/ল/দের তিন নাম্বার বাচ্চার দল চুপ যা।

মেঘা : একি সিমথি গোর হাতে ব্যান্ডেজ কেনো। কি হয়েছে।

সিমথি : নাথিং

মেঘা : চড়িয়ে গাল লাল করে দেবো।

সিমথি : আয়াশ ভাইয়ার ডায়লগ আমাকে মারিস

সিমথির কথায় মেঘা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যায়। সিমথি মেঘাকে ক্রস করে নিজের কেবিনে যায়।

তুহিন : আসলে কাল দাদি আম্মা সিমথির আবারো কথা শুনিয়েছে। আর সিমথিকে তো তুই জানিসই।

তুহিনের কথা শুনে মেঘা একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে।

___________

সিমথি : একি আপনি এখানে কি করছেন?

সিমথির কথায় আদি দরজার দিকে তাকায়। সিমথিকে দেখে আদি একটা হাসি দেয়। ইশশ কত্তোগুলো ক্ষণ পর সেই মুখটা দেখার সুযোগ হলো। ভাগ্যিস আজ তিন্নীর ডিসচার্জ করা হবে। তার জন্যই তো আ্বারো হসপিটালে আসা। আজ অবশ্য আদি আর মেহেরই আছে। ইশান আর তিন্নীর বাবা চলে গেছে।

সিমথি : কি আজব কথা বলছেন না কেনো? এখানে কেনো এসেছেন?

আদি : তোমার জন্য।

আদির কাটকাট উত্তরে সিমথি প্রচন্ড বিরক্ত হয়। এই লোকটাকে দেখলেই মাথা অসহ্য যন্ত্রণা হয়। কেনো হয় সেটা কেবল সিমথিই জানে। সিমথি রাগান্বিত সুরে বলে,,,

সিমথি : একদম তামাশা করবেন না। বের হোন বলছি।

সিমথির কথায় ভ্রুক্ষেপ না করে আদি সিমথির দিকে এগিয়ে যায়। আদিকে এগুতে দেখে সিমথি সটান দাঁড়িয়ে থাকে। চোখেমুখে রাগ ঝরে পড়ছে।

সিমথির কাছে এসে আদি সিমথিকে একটানে ভেতরে এনে দরজা লাগিয়ে দরজার সাথে চেপে ধরে । অজ্ঞাত বশত আদিও সিমথির কাটা জায়গায় চাপ দিয়ে ধরে। সিমথি ব্যথায় চোখ বুঁজে নেয়। আদি সিমথির মুখের দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। কেমন একটা ঘোর কাজ করছে নিজের মধ্যে। আদি ডানে বামে মাথা নাড়িয়ে নিজেকে সামলায়।

আদি : ও সিয়াজান

আদির ডাকে সিমথি চট করে চোখ খুলে ফেলে। চোখের সামনে ভেসে ওঠে একটা সাদা কালো স্মৃতি। কানে ভেসে আসে একটা মেয়েলি কন্ঠস্বর। যার কম্পিত ধ্বনি টা ছিলো ” ও আদি “। সিমথি জোরে একটা শ্বাস নেয়। আদিকে সরাতে নিলে আদি পুনরায় ব্যথার জায়গায় চাপ দিয়ে ধরে। সিমথি এবার নিজেকে সামলাতে না পেরে অন্যহাতে আদির শার্টের কলার চেপে ধরে। চোখে অশ্রুকণা এসে হানা দেয়। সিমথি যথাসম্ভব নিজেকে সামলে রাখে। অস্পষ্টসুরে আদির কলার টেনে বলে উঠে,,,

সিমথি : আদি ভাইয়া প্লিজ ছাড়ুন।

সিমথির মুখে পুনরায় ভাইয়া শুনে আদি রেগে যায়। রাগে হাসে জোরে চাপ দিয়ে সিমথিকে নিজের একদম কাছে নিয়ে আসে। হাত টা পেছনের দিকে পেচিয়ে ধরে হালকা চেঁচিয়ে বলে,,,

আদি : আর একবার ভাইয়া ডাকবি তোকে আমি জাস্ট মে/রে দেবো। তোকে মে/রে আমি নিজেও ম/রে যাবো খুশি হবি তুই তাই না। এতোবার যে সরি বললাম তার কোনো দামই দিচ্ছিস না। কেনো এমন করছিস। আমাকে কেনো দূরে দূরে রাখছিস। কষ্ট হচ্ছে আমার। বুুকের ভেতরে অদৃশ্য শূন্যতা অনুভব করছি। প্লিজ সিয়াজান। আমাকে একটু দয়া কর। ভুলগুলো শুধরে নেওয়ার একটা সুযোগ দে। প্লিজ।

আচমকা সিমথি খোলা হাতে আদিকে একটা ধাক্কা মারে। চেচিয়ে বলে উঠে,,,,

সিমথি : আপনি একটুও বদলান নি আদি। এখনো আগের মতোই আছেন। আমাকে কষ্ট দিয়ে ব্যথা দিয়ে অপমান করে আপনি অদ্ভুত রকমের তৃপ্তি পান সেটা আমি জানি। এককাজ করুন এভাবে ব্যথা না দিয়ে একটু আগে যে বললেন মে/রে ফেলবেন এটাই করুন। কি হলো মা/রু/ন।

সিমথি চোখের অশ্রুকণা মুছে কেবিন থেকে রক্তাক্ত হাত নিয়েই বেরিয়ে যায়। পেছনে আদি এখনো স্তব্ধ হয়ে আছে। আচমকা নিজের হাতের দিকে তাকাতেই বুকটা মোচড় দিয়ে উঠে। হাতে এতো র/ক্ত কিভাবে এলো। তাহলে কি সিমথির হাত কাটা ছিলো। কথাটা মাথায় আসতেই আদি পাশে থাকা চেয়ারে একটা স্বজোরে লাথি দেয়। নিজের প্রতি ঘৃণা হচ্ছে। নিয়তি যেনো আদির বিমুখ হয়ে আছে। পণ করে রেখেছে সিমথির কাছে যতবারই আসবে ততবারই এমন অঘটন ঘটাবে। এটা কি আদির পাপের শাস্তি নাকি ভাগ্যের লেখন।

কেবিনের ভেতরে ঘটে যাওয়া দৃশ্য আদি আর সিমথি ব্যতিত আড়াল থেকেও অন্য একজন দেখে। কোনো কারণে সেই অজ্ঞাত ব্যক্তির ঠোঁটের কোণায় হাসি ফুটে উঠে। তবে সেই হাসির উদ্দেশ্য অভাবনীয়।

চলবে,,,