মিশে আছি তোমাতে পর্ব-১৪

0
3788

#মিশে_আছি_তোমাতে ❤
#Writer_Nusrat_Jahan_Bristy
#Part_14
.
.
.
.
তিশা চোখ মেলে তাকিয়ে দেখে আবির রক্তাক্ত অবস্থায় দাড়িয়ে আছে আর নিচেই ইকবাল ইসলাম পড়ে আছে….. আবিরের বুকে গিয়ে গুলিটা লাগে আবিরের সারা শরীর রক্তে লাল হয়ে যাচ্ছে আবারও একটা গুলি লাগে আবিরের গায়ে…. আবির হাটু ঘেড়ে মাটিতে বসে পড়ে…. নিরব দৌড়ে গিয়ে আবিরকে ধরে….. রেস্টুরেটে সব মানুষরা আবাক হয়ে তাকিয়ে আছে….. আবিরের সবকিছু ঝাপসা দেখছে তিশা আবিরের এমন অবস্থা দেখে দৌড়ে আবিরের কাছে যায়….. যেটা আবির দেখতে পায় আবির তিশাকে এমন ভাবে ছুটে আসতে দেখে একটা হাসি দেয়…..

তিশা আবিরের কাছে গিয়ে আবিরের মাথাটা নিজের কোলে রাখে….

তিশা : আবির প্লিজ কথা বলুন আবির প্লিজ বিশ্বাস করুন আমি এমনটা চাই যে আপনি এভাবে আমাকে ছেড়ে চলে যাবে প্লিজ আবির কথা বলুন…..

নিরব : ভাবি প্লিজ তুমি শান্ত হও ভাইয়াকে তাড়াতাড়ি হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে…..

আবিরকে ধরাধরি করে সবাই গাড়িতে তুলে‌…. আবিরের মাথাটা তিশা নিজের কোলে রাখে….. তিশা আবিরের এমন অবস্থা দেখে বুকের ভেতরটা ধুমরেমুছড়ে শেষ হয়ে যাচ্ছে চোখ দিয়ে অজান্তেই পানি পড়ছে তিশার …. গার্ডরা সবাই মিলে যে এই কাজটা করেছে তাকে গিয়ে ধরে….

আর অন্য দিকে ইকবাল ইসলাম স্তব্ধ হয়ে দাড়িয়ে আছে…. কি থেকে কি হয়ে গেল ইকবাল ইসলামের সব মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে…. আজ যদি আবির ইকবাল ইসলামকে ধাক্কা না দিয়ে সরিয়ে দিতো তাহলে হয়তো আবিরের জায়গাতে ইকবাল ইসলামের এই অবস্থা হতো…. ইকবাল ইসলাম তাড়াতাড়ি করে হাসপাতালে যাওয়ার উদ্দেশ্য রওয়ানা হয়….

আর এদিকে সারা জায়গাতে এই‌ খবর ছড়িয়ে পড়েছে নামকরা বিশিষ্ট শিল্পপতি আবির রহমানের গায়ে গুলি লেগেছে তাও আবার একবার নয় দু দুবার ….. আবির রহমান একজন বয়স্ক লোককে বাচানোর জন্য গুলি লাগে ওনার গায়ে…… রেস্টুরেটে সিসি ক্যামেরা থাকাতে সবটা ঘটনা রেকট হয় সেই ঘটনাটা টিভিতে দেখানো হচ্ছে… এই‌ খবরটা বসে বসে নিসা দেখছে নিসা এই দৃশ্যটা দেখার সাথে সাথে মাকে চিৎকার করে ডাকতে শুরু করে…..

নিসা : মা মা…. তাড়াতাড়ি এখানে‌ আসো টিভিতে দেখে যাও কি দেখাচ্ছে??

রেহেনা ইসলাম : উফফ নিসা তুই কেন যে এত চিৎকার করছিস…

রেহেনা ইসলাম টিভিতে তাকিয়ে আবির আর ইকবাল ইসলামকে এমন অবস্থা দেখে সোফাতে ধপ করে বসে…..

রেহেনা ইসলাম : এসব এসব কি দেখাচ্ছে নিসা???

নিসা : মা তুমি তাড়াতাড়ি বাবাকে একটা ফোন করো….

রেহেনা ইসলাম তাড়াতাড়ি ইকবাল ইসলামকে ফোন করে কিন্তু ইকবাল ইসলাম ফোন ধরে না…..

রেহেনা ইসলাম : তর বাবা ফোনটা কেন রিসিভ করছে না???

নিসা : মা ওইখানে তো আপু ছিলো…. কি হবে এখন?? আমার খুব টেনশন হচ্ছে….

রেহেনা ইসলাম : আমার কি কম টেনশন হচ্ছে না জানি ছেলেটা কেমন আছে???

একটু পরেই ইকবাল ইসলাম রেহেনা ইসলামকে ফোন করে…. রেহেনা ইসলাম তাড়াতাড়ি ফোনটা রিসিভ করে……

রেহেনা ইসলাম : কোথায় আছো তুমি?? ফোন ধরছিলে না কেন?? টিভিতে এসব কি দেখাচ্ছে….

ইকবাল ইসলাম : যা দেখাচ্ছে ঠিকেই দেখাচ্ছে ছেলেটা আমাকে বাচাতে গিয়ে এখন নিজেই মৃত্যুর সাথে লড়াই‌ করছে…. ও যদি আমার সামনে না চলে আসতো তাহলে হয়তো আমার এমন অবস্থা হতো….

রেহেনা ইসলাম : তিশা আমার তিশা কোথায়??? ও ঠিক আছে তো…

ইকবাল ইসলাম : ও ঠিক আছে তবে খুব আপসেট হয়ে আছে…. ওর চোখের সামনে সবটা ঘটনা ঘটেছে তো তাই…..

রেহেনা ইসলাম : আজকে যা কিছু হয়েছে সবটা শুধু মাএ তোমার জন্য হয়েছে মেয়েটা একটা ছোট ভুল করেই ফেলেছে মানলাম তার জন্য তুমি ওর সাথে এমন ব্যবহার করবে…. আর দেখো যেই ছেলেটাকে তুমি পছন্দ করো না সে আজকে তোমার প্রান বাচালো…..

ইসলাম ইসলাম : এসব কথা এখন থাক….. ছেলেটা এখন সুস্থ হয়ে উঠুক এটাই দোয়া করি….

রেহেনা ইসলাম : আমি এখনেই হাসপাতালে আসছি…….

রেহেনা ইসলাম ফোন কেটে দেয়…..

নিসা : মা কি হয়েছে? আপু ঠিক আছে তো….

রেহেনা ইসলাম : হাসপাতালে যেতে হবে তাড়াতাড়ি চল…..

রেহেনা ইসলাম আর নিসা হাসপাতালের উদ্দেশে রওয়ানা হয়….

তিশা পাথরের মতো বসে আছে হাসপাতালের কড়িডোরে তিশার এখন বিশ্বাস হচ্ছে এমন একটা ঘটনা হয়েছে তার চোখের সামনে…. সব ডাক্তার নার্সরা দৌড়া দৌড়ি করছে আবিরকে সুস্থ করে তুলার জন্য…..

নিরব : ডক্টর আমার ভাইয়া ঠিক হয়ে যাবে তো প্লিজ আপনাদের যা করার দরকার তাই করুন দেশের বাইরে থেকে ডক্টর আনতে হলে আনুন বিনিময়ে আমি আমার ভাইয়াকে সুস্থ দেখতে চাই বুঝতে পেরেছেন আপনি…

ডাক্তার : আপনি শান্ত হন মিস্টার রহমান আমরা সবটুকু দিয়ে চেষ্টা করবো……

নিরব : কি করে আমি শান্ত হবো??? বলুন আপনি আমার ভাই আমার ভাইয়া আপরাশেন থিয়াটারে রয়েছে আর আপনি আমাকে শান্ত থাকয়ে বলছেন……

ডাক্তার : আমরা আমাদের মতো চেষ্টা করবো বাকিটা ওই ওপরআলার হাতে……

ডাক্তার এই কথাটা বলে চলে যায়……সোহেল নিরবের কাছে আসে

সোহেল : স্যার যে গুলিটা করেছে তাকে আমাদের লোকেরা ধরে ফেলেছে…..এখন শুধু ওর মুখ থেকে এটা বের করতে হবে কে ওকে গুলি করার হুকুম দিয়েছে……

নিরব : তার কোনো দরকার নেই আমি জানি কে এই কাজটা করতে বলেছে???

সোহেল : কে বলছে???

নিরব : রবিন আহমেদ…….

সোহেল : কি??? ওই রবিন আহমেদের এত বড় সাহস যে ও স্যারের উপর গুলি করে…….

নিরব : ভাইয়ার উপর গুলি করতে বলেনি……

সোহেল : তাহলে……

নিরব সোহেলকে সব খুলে বলে যেই কথা গুলো রবিন তিশাকে বলে……

সোহেল : তাহলে ওকে আমরা শেষ করে দিছি না কেন???

নিরব : আগে ভাইয়া সুস্থ হোক তারপর দেখা যাবে……

সোহেল : ঠিক আছে….

তিশা আপরাশেন থিয়াটারে লাল বাতিটার দিকে তাকিয়ে আছে এক নজড়ে……. চোখের পানি শুকিয়ে গেছে তিশার ইকবাল ইসলাম সাহস পাচ্ছে না তিশার কাছে যাওয়ার…. এমন সময় রেহেনা ইসলাম আর নিসা হাসপাতালে আসে রেহেনা ইসলাম সোজা তিশার কাছে যায়….

রেহেনা ইসলাম : তিশা মা আমার…….

তিশা : মা তুমি এসেছো….. ( কান্না করতে করতে)

তিশা রেহেনা ইসলামকে জড়িয়ে ধরে আবার কান্না শুরু করে…… তিশা হয়তো এতক্ষন এটারেই অপেক্ষা করছিলো কাউকে জড়িয়ে ধরে প্রান খুলে কান্নার জন্য……

তিশা : মা আমি এটা চাইনি মা এটা চাইনি…… আমি বাবাকে বাচাতে গিয়েছিলাম কিন্তু এটা বুঝতে পারি নি বাবাকে বাচানোর জন্য ওনি নিজের প্রানে ঝুকিতে ফেলে দিবে…….

রেহেনা ইসলাম : তিশা মা আমার তুই শান্ত হও আবির ঠিক হয়ে যাবে সব কিছু আবার আগের মতো হয়ে যাবে মা তুই এবার শান্ত হ……

নিরব নিসাকে দেখে ভীষন আবাক সাথে নিসাও নিরবকে দেখে আবাক হয় অবশ্য খবরে নিসা দেখেছিলো যে নিরব আবিরের পাশে ছিলো……. নিরব নিসার কাছে যায়

নিরব :আপনি এখানে…..

নিসা : আমারও একই প্রশ্ন আপনি এখানে কি করছেন???

নিরব : আমি আমার ভাইয়ের জন্য এখানে আছি যার বুকে দু দুটো গুলি লেগেছে সেই হতোবাকা ভাই আমি যে কি না নিজের ভাইকে রক্ষা করতে পারে নি…….

নিরব কান্না করতে গিয়েও কান্না করতে পারছে না…. তাকে যে এখন শক্ত থাকতে হবে….

নিসা : ( তার মানে আপুর দেবর হন ওনি) প্লিজ আপনি শান্ত হোন সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে………

ইসলাম ইসলাম নিরবের কাছে হাত জোড় করে বলে……

ইকবাল ইসলাম : বাবা তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও আজকে আমার জন্যই ছেলেটার এই অবস্থা হয়েছে……

নিরব : একি বলছেন আঙ্গেল আপনি প্লিজ এভাবে বলবেন আপনি আমার বয়সে অনেক বড় ( ইকবাল ইসলামের হাত ধরে বলে)

প্রায় তিনঘন্টা পর আপরাশন থিয়াটারের লাল বাতিটা নিবে…… ডাক্তাররা সবাই কেবিন থেকে বেরিয়ে আসে ডাক্তারদেরকে দেখে তিশা ডাক্তারের কাছে ছুটে যায়……

তিশা : ওনি ওনি কেমন আছেন এখন????

ডাক্তার : আপরাশেন সাকসেসফুল কিন্তু আমাদেরকে ২৪ ঘন্টা অপেক্ষা করতে হবে যদি ২৪ ঘন্টা পরেও জ্ঞান না ফিরে তাহলে হয়তো ওনাকে আর আমরা বাচাতে…….

নিরব সাথে সাথে ডাক্তারের কালার চেপে ধরে……..

নিরব : আমার ভাইয়ের যদি কিছু হয় ডক্টর তাহলে আমি সব কিছু ধ্বংস করে দিবো বুঝেছেব আপনি…….

ইকবাল ইসলাম আর সোহেল নিরবকে গিয়ে ধরে…….

ইকবাল ইসলাম : নিরব তুমি শান্ত হয় প্লিজ……..

নিরব আর নিজেকে শক্ত রাখতে পারলো না ফ্লোরে বসে কান্না শুরু করে দিলো……

নিরব : ভাইয়া আমি তোমাকে ছাড়া কি করে থাকবো কি করে??? বাবা মা মরা যাবার পর তোমাকে আগরে ধরে বেচেছিলাম এবার আমি কাকে ধরে বাচবো কাকে????

তিশা : সব আমার দোষ সব আমার দোষ আজকে যদি আমি এমন না করতাম তাহলে হয়তো এমন কিছুই হতো না….. ( কান্না করতে করতে)

নিসা : আপু তুমি শান্ত হও আপু প্লিজ…… আল্লাহর কাছে দোয়া করো তাহলে ওনি আবির ভাইয়াকে বাচাবেন………

সবাই মিলে আল্লাহ তায়লার কাছে পার্থনা করতে থাকে এক মাএ ওনি চাইলেই আবিরকে বাচাতে পারেন……….. এদিকে আবিরের মুখে অক্সিজেন মাস্ক হাতে সালাইনের লাইন আর অন্য দিকে রক্ত দেওয়ার লাইন………

#চলবে

গল্প কেমন লাগছে বলবেন কিন্তু প্লিজ………