মিষ্টিমধুর প্রতিশোধ পর্ব-২+৩

0
613

#মিষ্টিমধুর_প্রতিশোধ
#পর্বঃ২
#লেখিকাঃদিশা_মনি

ফারজানা বেগমের কথা শুনে ওনার দিকে বিস্ময়কর ভাবে তাকায় সবাই। ফারহান বিরক্তিতে ভ্রু কুচকে ফেলে। তারিকুল ইসলাম বলেন,
‘এটা আপনি কি বলছেন? আপনার সত্যি আমার মেয়েকে পছন্দ হয়েছে?’

ফারজানা বেগম মুচকি হাসলেন। অতঃপর ইভানাকে ইশারা করে নিজের কাছে ডাকলেন। ইভানা ফারজানা বেগমের পাশে বসতেই তিনি ইভানার মাথায় হাত বুলিয়ে বলেন,
‘এই রকম পুতুলের মতো মাইয়াকে কার না পছন্দ হইবো। দেখতে তো মাশাল্লাহ, আমার ফারহানের পাশে খুব মানাবে।’

ইভানা খুশি হলো প্রচণ্ড। তারিকুল ইসলাম অবাক হলেন শুধু। তিনি তো ভেবেছিলেই পাত্রপক্ষের কেউ ইভানাকে পছন্দই করবে না। কারণ এমন উচ্চশিক্ষিত একজন ছেলে কোন দুঃখে একটা মেট্রিক ফেল মেয়ে বিয়ে করবে। তবে এখন তার ধারণা ভুল প্রমাণিত হলো। তিনিও খুশি হলেন। ইশরাত খাতুন সবথেকে বেশি খুশি হলেন৷ আল্লাহর কাছে লাখো শুকরিয়া আদায় করলেন। নিজের মেয়ের জন্য এত ভালো সম্মন্ধ ঠিক হলে কোন মা খুশি না হয়ে থাকতে পারে।

ফারহান এতক্ষণ চুপ থাকলেও এখন যেন তার ধৈর্য এবং সহ্যের ক্ষমতা পেরিয়ে যাচ্ছে। একজন ম্যাজিস্ট্রেট হয়ে এখন কিনা তাকে একজন ম্যাট্রিক ফেল করা মেয়েকে বিয়ে করতে হবে! এটা তার সম্মানের জন্য হুমকি। লোকে তো হাসি তামাশা করবে তাকে নিয়ে। নিজের মাকে যথেষ্ট সম্মান করলেও নিজের বিয়ে নিয়ে এমন সিদ্ধান্ত মেনে নিতে পারলো না। কিন্তু সবার সামনে নিজের মায়ের উপর অভিরুচি তার নেই। সেই কারণে চুপচাপই রইল। বাড়িতে গিয়ে মাকে বুঝিয়ে বলবে। কিন্তু তার আগে বিয়ে নিয়ে কথা উঠুক চাইছে না ফারহান। তাই সে সবার সামনে বলে উঠল,
‘আমরা তাহলে এখন উঠি। বাড়ি গিয়ে আপনাদের বাকি কথা জানাচ্ছি।’

ফারহান কথাটা বলতে না বলতেই ফারজানা বেগম তার কথা উড়িয়ে দিয়ে বললেন,
‘বাড়িত গিয়া কেন সিদ্ধান্ত নিতে হইবো? যা সিদ্ধান্ত নেওনের আমি নিয়ে নিছি। এই মাইয়ার সাথেই তোর বিয়ে দিমু।’

ফারহান নিজেকে সামলানোর যথেষ্ট চেষ্টা করল। কিন্তু তার মেজাজ দ্রুত খারাপ হতে লাগল। সে উঠে পড়লো সোফা থেকে। অতঃপর দ্রুতবেগে হাটা ধরল। এখানে থাকলে মেজাজ আরো বেশি খারাপ হবে।

ফারহান চলে যেতেই তারিকুল ইসলাম বুঝতে পারলেন সে হয়তো এই বিয়েটা নিয়ে খুশি নয়৷ তাই তিনি ফারজানা বেগমকে বললেন,
‘আপনারা একটু ভেবে চিন্তে সিদ্ধান্ত নিন। বিয়েটা তো আপনার ছেলের সাথেই হবে তাই তার মতেরও প্রয়োজন আছে। আমার মনে হয় আপনার ছেলে এই বিয়েতে রাজি হয়।’

‘আমার পোলা আমার বাধ্য। তাই আমি যা কমু ও সেটাই করবো৷ আমি যখন কইছি এই মাইয়াই আমার ছেলের বউ হইবো তখন তাই হইবো।’

কথাটা বলে চায়ের কাপে শেষ চুমুক বসিয়ে দেন ফারজানা বেগম। অতঃপর নিজের ব্যাগ থেকে একজোড়া বালা বের করে ইভানার হাতে পরিয়ে দেন। মৃদু হেসে বলেন,
‘এইডা আমার শাউরী(শাশুড়ী) আমায় দিয়া ছিল। এহন আমি তোমায় দিলাম। তোমাকে আমার খুব পছন্দ হইছে৷ তোমার সাথে আমার মায়ের চেহারার অনেক মিল জানো। তুমি আমার ছেলের বউ হবা।’

ইভানা লাজুক হাসল। ফারজানা বেগম উঠে দাড়ালেন। তারিকুল ইসলামকে উদ্দ্যেশ করে বললেন,
‘আমি তাইলে আইজ যাই। আমার পোলা বাইরে অপেক্ষা করছে। মাইয়া যেহেতু পছন্দ হইছে তাইলে আরেকদিন আইসা বিয়ার দিন তারিখ ঠিক করমু।’

সকলের থেকে বিদায় নিয়ে বাইরে চলে এলেন ফারজানা বেগম। ফারহান গাড়িতে বসে ছিল। ফারজানা বেগম এসে গাড়িতে উঠতেই ফারহান কোন কথা না বলে গাড়ি চালানো শুরু করল। বাড়ি গিয়ে যা বলার বলবে বলে ভাবল সে।

৩.
আকাশে মৃদুমন্দ বাতাস বইছে। আজকের আবহাওয়া বেশ সুন্দর। গাড়ি থেকে নেমে এই বাতাস বেশ উপভোগ করলেন ফারজানা বেগম। তিনি নিজের জীবনের অধিকাংশ সময় গ্রামেই অতিবাহিত করেছেন। শেষ বয়সে এসে ছেলেরা শহরে সেটেল্ড হওয়ায় তাদের সাথে শহরে চলে এসেছেন তিনি। শহরে সারাদিন এসির বাতাসে থাকতে থাকতে বেশ বিরক্ত তিনি। অনেকদিন পর বাইরের বাতাস তাই ভালোই উপভোগ করছেন।

‘আম্মু ভেতরে চলো। জরুরি কথা আছে।’

ফারহানের কথায় ধ্যান ভাঙল ফারজানা বেগমের। অতঃপর বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করলেন। বাড়িতে এসে তিনি দেখলেন নামাজের সময় হয়ে গেছে। তাই তিনি আর সময় নষ্ট না করে নামাজ আদায় করে নিলেন। নামাজ আদায়ের পরে বসে বসে কোরআন তিলওয়াক্ত করছিলেন।

এমন সময় ফারহান তার কক্ষে প্রবেশ করলো। ফারজানা বেগমের কাছে এসে বলল,
‘তোমার সাথে কিছু জরুরি কথা আছে আম্মু।’

‘আমি জানি তুই কি কইতে চাস। শোন ঐ মাইয়াকে আমার অনেক পছন্দ হইছে। তুই যদি আমাকে মা হিসেবে সম্মান করস তাহলে আমার সিদ্ধান্ত মাইনা নে।’

‘কিন্তু আম্মু ঐ মেয়ের সাথে আমার কিভাবে যায়?’

‘যায় না কেন? ওর বয়স তো ১৮ হইয়া গেছে। আর তোর বয়সও যে খুব বেশি তা তো আর না। মাত্র ২৭ বছর।

‘বয়সের জন্য না ঐ মেয়ে ম্যাট্রিক ফেল।’

‘তাতে কি? আমি তো জীবনে ইস্কুলের গন্ডি দিয়ে যাই নাই। আমাকে যদি মা হিসাবে মানতে পারো তাইলে ঐ মাইয়ারে বউ হিসাবে মানতে কি অসুবিধা?’

‘আম্মু কিছু বুঝতে পারছ না,,’

‘আমার কিছু বোঝোনের নাই। তোমার বাপ তোমরা অনেক ছোট থাকতেই মারা গেছে। তহন থেইকা আমি একা হাতে তোমারে আর তোমার ছোট ভাইরে মানুষ করছি। এহন তুমি যদি আমার সেই কষ্টের মূল্য দিতে চাও তাইলে বিয়েটা কইরা নেও। আমার আর কিছু বলার নাই।’

ফারহান পড়ে গেল মহা সংকটে। এরকম একটা পরিস্থিতিতে এখন সে কি করবে সেটাই বুঝতে পারছে না৷ সব কেমন ফাকা ফাকা লাগছে।

৪.
ইভানা নিজের রুমে বসে দাত দিয়ে হাতের আঙুল কা’টছে। এটা তার একটা বদভ্যাস বলতে গেলে। যখনই কোন কিছু নিয়ে বেশি চিন্তা করে তখনই সে এমন করে।

ইভানার এখন চিন্তার মূল কারণ হচ্ছে তার বিয়েটা নিয়ে। তখন আনহার কথা শুনে ঠিক করলো না ভুল সেটা নিয়ে চিন্তার যথেষ্ট কারণ আছে। তার উপর এখন তার চিন্তা আরো বৃদ্ধি লাভ করেছে। কারণ ফারহানের মা ইতিমধ্যে তাকে পছন্দ করে তার হাতে নিজের বালা পর্যন্ত পড়িয়ে গেছে। এখন তার ভবিতব্য কি হতে চলেছে তা নিয়ে যথেষ্ট বিচলিত সে। এসব নিয়ে চিন্তা ভাবনা একপর্যায়ে তার মাথায় এলো ফারহানের কথা। ফারহানের ব্যবহারেই ইভানা বুঝে গেছে সে হয়তো এই বিয়েটা করতে চাচ্ছে না। ব্যাপারটা মনে হতেই শয়তানী টাইপ হাসি দিয়ে ইভানা বিড়বিড় করে বললো,
‘বিয়ে তো আপনার আমাকেই করতে হবে। আপনার বউ হয়েই আমি মেট্রিক পরীক্ষায় ফেল করার শোধ তুলব।’

‘কিসের শোধ নেওয়ার কথা বলছিস তুই?’

চিরপরিচিত গলার স্বর শুনে দরজার দিকে তাকায় ইভানা। তার বড় বোন তোহা দরজায় হেলান দিয়ে দাড়িয়ে। ইভানা তোহার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বললো,
‘তেমন কিছু না আপাই। তুই কখন এলি?’

‘এই একটু আগে। এসেই তোর এই শোধ নেওয়ার কথা শুনতে পেলাম। বাই দা ওয়ে, তোকে নাকি আজ দেখতে এসেছিল।’

‘হুম। দেখ কি একটা অবস্থা। তুই আমার বড় বোন অথচ তোর আগেই আমার বিয়ে হচ্ছে। হি হি হি।’

‘এটা মোটেই মজার ব্যাপার না ইভানা৷ তুই যদি একটু মনযোগ দিয়ে পড়াশোনা করতি তাহলে এত তাড়াতাড়ি আব্বু তোর বিয়ের কথা ভাবত না। আমি তোকে কত করে পড়াশোনা করতে বলেছি কিন্তু তুই,,,’

ইভানা কানে হেডফোন গুঁজে বলে,
‘আমার দ্বারা এসব পড়াশোনা হবে না আপাই। আমি তোর মতো ওতো মেধাবী নই৷ তার থেকে ভালো বিয়ে করে নেই।’

‘পড়াশোনা করার থেকে সংসার করা মোটেই সহজ কাজ না। বাড়িতে তো এক গ্লাস পানিও নিয়ে খাস না। শ্বশুর বাড়ি গিয়ে যখন বাড়ির সব কাজ করতে হবে তখন বুঝবি৷ আফসোস করবি আর বলবি এর থেকে পড়াশোনাই ভালো ছিল।’

ইভানা হেডফোনের গানের তালে তালে তাল মিলাতে ব্যস্ত। তোহা আর কিছু না বলে বাথরুম চলে গেল ফ্রেশ হয়ে নিতে।

চলবে ইনশাআল্লাহ ✨

#মিষ্টিমধুর_প্রতিশোধ
#পর্বঃ৩
#লেখিকাঃদিশা_মনি

ফারহান হাতে কফি নিয়ে বেলকনিতে দাড়িয়ে আছে। মন মেজাজ যথেষ্ট খারাপ তার। ফারজানা বেগম জেদ ধরে বসে আছেন যে ইভানার সাথেই ফারহানের বিয়ে দেবেন। ফারহান হাজারবার বুঝিয়েও তাকে মানাতে পারছে না। তাই এখন হাল ছেড়ে দিয়েছে।

উদাস মনে আকাশের দিকে তাকিয়ে ছিল ফারহান। এমন সময় আগমন ঘটল তার ছোট ভাই ফাহিমের। ফাহিম এখন বুয়েটে ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়ছে। এই নিয়ে বেশ অহংকারও আছে তার। ফাহিম ফারহানকে ডাক দিয়ে বললো,
‘ভাইয়া, তুই এভাবে উদাস হয়ে দাড়িয়ে আছিস কেন? আমি তোর বিয়ের খবর পেয়ে ছুটে ছুটে চলে এলাম সেলিব্রেট করার জন্য আর তুই এভাবে আছিস।’

‘সেলিব্রেশন! হুহ, নিজের সর্বনাশের সেলিব্রেশন কে করতে চায়?’

ফারহানের থেকে এমন উত্তর আশা করে নি ফাহিম। মুহুর্তেই তার জোড়া ভ্রু কুচকে গেল। কন্ঠভরা বিস্ময় নিয়ে জানতে চাইলো,
‘সর্বনাশ মানে কি ভাইয়া? তুই প্লিজ আমাকে সব স্পষ্ট করে বল।’

‘যেই মেয়েটার সাথে আম্মু আমার বিয়ে ঠিক করেছে সে একজন মেট্রিক ফেইল স্টুডেন্ট।’

ফাহিমের অবাক হওয়ার পরিমাণ বাড়ল। এবার বেশ খানিকটা রাগী স্বরে বলে উঠল,
‘এসব তুই কি বলছিস ভাইয়া? আমি তো জাস্ট বিলিভই করতে পারছি না আম্মু এমন একটা ফালতু ডিশিসন নিতে পারে। মানে তুই একজন মেজিস্ট্রেট হয়ে শেষ পর্যন্ত কিনা ম্যাট্রিক ফেল মেয়েকে বিয়ে করবি! আম্মুর গাইয়া স্বভাব এখনো গেলো না। মানুষের যে প্রেসটিজ বলে কিছু একটা থাকে সেটা আম্মুর মধ্যে নেই। রিডিকিউলাস।’

ফারহান চোখ রাঙানি দিয়ে বলে,
‘আম্মুর ব্যাপারে একদম এরকম কথা বলবি না ফাহিম। আম্মুর ব্যাপারে কি জানিস তুই? তুই তখন সবেমাত্র আড়াই বছরের ছিলি যখন আব্বুর মৃত্যু হয়েছিল। তখন আম্মু একা হাতে কত কষ্ট করে আমাদের মানুষ করেছে সেটা আমি দেখেছি। গা’ধার মতো খেটেছেন আমাদের জন্য। জানিস কোন রাতে আমি আম্মুকে শান্তিতে ঘুমোতে দেখিনি। তার এই অক্লান্ত পরিশ্রম আর আত্মত্যাগের মাধ্যমেই আজ আমরা প্রতিষ্ঠিত হতে পেরেছি। তাই প্লিজ আম্মুর ব্যাপারে কোন অসম্মানজনক কথা বলবি না। বিয়ের ব্যাপার নিয়ে আপত্তি থাকলেও আম্মুকে আমি সম্মান করি।’

‘ভালো তো। তুই সারাজীবন মাম্মাস বয় হয়েই থাক। আম্মুর কথায় একটা ম্যাট্রিক ফেল মেয়েকে বিয়ে করে নে। আমি বাবা তোর মতো এত মাভক্ত ছেলে নই। আমাকে যদি এরকম ভাবে বিয়ে দিতে চাইতো আমি ম’রে গেলেও রাজি হতাম না।’

‘এখানেই তোর আর আমার মধ্যে তফাৎ ফাহিম। তুই আম্মুর বাধ্য না হলেও আমি আম্মুর অবাধ্য হতে পারি না। আম্মুর শরীরের অবস্থা বেশি ভালো না। কিছুদিন আগে ডাক্তার দেখিয়ে ছিলাম, ডাক্তার বলেছে আম্মুকে যেন স্ট্রেস দেওয়া না হয়। তাছাড়া আম্মু সারাজীবন আমাদের জন্য যা করেছেন নিজের জীবন দিয়েও আমরা তার মূল্য দিতে পারব না। তাই আম্মুর সুখের জন্য আমি সব করতে পারি। সেখানে এই বিয়েটা অতি সামান্য। আমার যতোই কষ্ট হোক না কেন, আমি বিয়েটা করবোই।’

এক নিঃশ্বাসে কথাগুলো বলে ব্যালকনি থেকে রুমের দিকে অগ্রসর হলো ফারহান। ফাহিম সেখানেই দাড়িয়ে রইল। তপ্ত শ্বাস ফেলে বললো,
‘এটার জন্য তুই রিগ্রেট(অনুশোচনা) করবি ভাইয়া।’

৫.
ইভানা ইতিমধ্যেই বিয়ের শপিং এর কথা ভাবছে৷ যদিও এখনো বিয়ের কথা বেশিদূর এগোয় নি তবে ইভানা অনেক বেশি উত্তেজিত। তার এই উত্তেজনায় পারদ ঢেলে দিয়ে তোহা বলে উঠল,
‘এত তাড়াতাড়ি শপিং করে কি করবি? আগে বিয়ের দিন তারিখ ফাইনাল হোক। এত তাড়াহুড়োর কোন মানে খুজে পাচ্ছি না।’

ইভানা হাতে নেইল পলিশ দিতে দিতে বললো,
‘তুই জানিস না আপাই শুভ কাজে দেরি করতে নেই? এই প্রথমবারের মতো আমি বিয়ে করতে চলেছি। একটু তো বেশি এইমেন্ট থাকবেই।’

‘এইমেন্ট না শব্দটা এক্সাইমেন্ট। ভালো করে ইংলিশও বলতে পারিস না। আর বিয়ে সবাই প্রথমবারই করে কিন্তু তোর মতো এত বেশি বাড়াবাড়ি কাউকে করতে দেখিনি।’

‘আমার সাথে শপিং করতে চাইলে চল আর নাহলে আমি একাই চলে যাচ্ছি।’

তোহা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছিল। ইভানা ছোটবেলা থেকেই এমন। নিজে যা ভালো মনে করে তাই করে। অনেক বেশি পরিমাণে স্বেচ্ছাচারী সে। তোহা যতটা বুঝদার এবং শান্ত, ইভানা ততোই অবুঝ এবং চঞ্চল। উপরন্তু, নিজের দাদার অত্যাধিক ভালোবাসায় বিগড়ে গেছে সে। মায়ের কাছ থেকেও অনেক আদর পেয়েছে সে। বাবা যদিওবা শাসন করতেন কিন্তু তিনি তো বেশিরভাগ সময় হাসপাতালেই থাকতেন। যার ফলশ্রুতিতে, ইভানাকে খুব বেশি নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন নি।

ইভানা রুম থেকে বের হতে যাবে এমন সময় রুমে প্রবেশ করলেন ইভানার দাদা হাশেম আলী। তিনি এতদিন গ্রামের বাড়িতে ছিলেন। আজকে আবার ফিরে এলেন। ইভানার জন্মের এক মাস আগেই তার দাদীর মৃত্যু হয়। ইভানার দাদী বেচে থাকতে তার সাথে অনেক রূঢ় ব্যবহার করতেন হাশেম আলী। কিন্তু তার মৃত্যুর পর তার অভাবটা বুঝতে পেরেছেন। এমন সময় ইভানার জন্ম হলো। হাশেম আলী মনে করলেন হয়তো ইভানা তার স্ত্রীর প্রতিচ্ছবি হয়ে ফিরে এসেছে। কারণ তার চেহারার সাথে তার দাদীর চেহারার বেশ মিল। তাই তিনি ছোট থেকেই ইভানাকে অনেক ভালোবাসতেন। ইভানার দাদির নাম ছিল তানজিলা। হাশেম আলী নিজের স্ত্রীর নামেই নিজের নাতনির নাম রাখেন। এই নামেই ডাকেন তিনি ইভানাকে।

নিজের দাদাকে দেখামাত্রই তাকে জড়িয়ে ধরে ইভানা। খুশিতে উৎফুল্ল হয়ে বলে,
‘তুমি ফিরে এসেছ দাদাজান? আমি খুব খুব খুব খুশি হয়েছি৷ এত দেরি করলে কেন?’

‘আরো আগে আসতে চেয়েছিলাম তানজিলা কিন্তু কি করবো বল গ্রামে অনেক জরুরি কাজ ছিল। তা তুই কোথায় যাচ্ছিলি নাকি?’

‘হুম আমি শপিং করতে যাচ্ছিলাম।’

‘কিসের শপিং?’

‘বিয়ের শপিং। সামনে আমার বিয়ে হবে জানো না?’

ইভানার বিয়ের কথা শুনে হতবাক হয়ে যান হাশেম আলী। তার নাতনির বিয়ে অথচ তাকে জানানো হয়নি। বেশ রুষ্ট হলেন তিনি।

৬.
দুপুরের খাবার সমাপ্ত করল ফারহান, ফাহিম এবং ফারজানা বেগম। খাবার টেবিলে একটু তর্ক হয়েছিল ফাহিম এবং ফারজানা বেগমের মধ্যে। নিজের ভাইয়ের জন্য এমন পাত্রী নিয়েই মূলত তর্কাতর্কি। তবে ফারহান কোন টু শব্দ করে নি এর মধ্যে। ফাহিমও পেরে ওঠে নি নিজের মায়ের সাথে। ফারজানা বেগম বিয়েটা দেবেনই।

ফারহান খাওয়া শেষ করে উঠে যাওয়ার আগেই বললো,
‘বিয়ে নিয়ে আমার কোন আপত্তি নেই আম্মু। আমি শুধু একটাই রিকোয়েস্ট করব, এই বিয়েটা যেন খুব সাধারণ ভাবে হয়। বড় কোন অনুষ্ঠান নয়। খুব কাছের আত্মীয় ছাড়া কাউকে দাওয়াত দেওয়ারও দরকার নেই। বাকিটা তোমার ইচ্ছা।’

কথাগুলো বলে ফারহান প্রস্থান করল। ফারজানা বেগম ভাবলেন তার ছেলে যখন বিয়েটা করতে রাজি হয়েছে সেটাই অনেক। বিয়েটা নাহয় সাধারণ ভাবেই হবে। এখন শুধু ইভানার পরিবারকে মানাতে পারলেই হলো।

চলবে ইনশাআল্লাহ ✨