মিষ্টিমধুর প্রতিশোধ পর্ব-৮+৯

0
518

#মিষ্টিমধুর_প্রতিশোধ
#পর্বঃ৮
#লেখিকাঃদিশা_মনি

ইভানার চোখ দিয়ে ফোটায় ফোটায় জল পড়তেই আছে। আজ তার খুব কষ্ট হচ্ছে। এতটা অপমানিত সে জীবনে কখনোই হয়নি।

আশেপাশের সবাই এখন ইভানাকে নিয়ে নানারকম আলোচনা সমালোচনার আসর সাজিয়েছে। কেউ বা ইভানার জন্য হা হুতাশ করছে আর কেউ বা আড়ালে আবার সম্মুখে এসেও ঠেস মে’রে কথা বলছে। যা ইভানার মনকে অনেক বেশি পরিমাণে বিষিয়ে তুলছে। ইভানা আর এসব কথা সহ্য করতে পারছিল না। তাই সে দৌড়ে নিজের রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দেয়।

ইভানার পেছন পেছন তার না ইশরাত খাতুন, তোহা, তারিকুল ইসলাম, হাশেম আলী, ফারজানা বেগম সবাই ছুটে যান। ইশরাত খাতুন দরজায় মৃ’দু ধা’ক্কা দিয়ে বলেন,
‘দরজাটা খোল ইভানা। দেখ, কিছু হয়নি।’

তোহাও বলে,
‘হ্যা বোন তুই বের হয়ে আয়। আমরা সবাই তোর পাশে আছি।’

তারিকুল ইসলাম নীরব ছিলেন। তার মাথা একদম কাজ করছে না। কারণ আজ এই ঘটনায় তাকেও অনেক অপদস্ত হতে হয়েছে। সেই কারণে তিনি নিজেও অনেক ভেঙে পড়েছেন। এখন নিজের মেয়ের এই অবস্থা দেখে তিনি সম্পূর্ণভাবে বাকরুদ্ধ হয়ে গেছেন। তারিকুল ইসলাম চুপ থাকলেও হাশেম আলী চুপ থাকেন না। তিনি কন্ঠে তেজী স্বরে বলেন,
‘তুই বের হয়ে আয় তানজিলা। ঐ ছেলে তোর মতো হিরার মূল্য বোঝে নি। ও তোর যোগ্যই না। আমি আরো ভালো ছেলের সাথে তোর বিয়ে দেব। তুই চিন্তা করিস না তোর দাদা এখনো বেচে আছে।’

সবার মধ্যে ফারজানা বেগম অপরাধীর মতো মাথা নিচু করে আছেন। আজ তার নিজেকে বড্ড ছোট মনে হচ্ছে। শুধুমাত্র তার জন্যই একটা নিষ্পাপ মেয়ের আজ এই পরিণতি। নিজের প্রতি বিতৃষ্ণা জাগছে তার মনে। বারংবার মনে হচ্ছে তিনি তার ছেলেকে এভাবে জোর করে ভুল করেছেন। তা নাহলে আজ এত কিছু হতো না।

ফারজানা বেগম কিছু একটা ভেবে এগিয়ে এলেন। দরজার সামনে এসে মনে সাহস জুগিয়ে বললেন,
‘তুমি বারাইয়া আসো ইভানা মা। আজকেই তোমার বিয়া হবে। আমার বড় পোলা পালাইয়া গেছে তো কি হয়েছে, তোমারে আমার ছোট পোলার বউ করে ঘরে তুলমু।’

ফারজানা বেগমের কথায় উপস্থিত সবাই বিস্মিত হয়ে গেল। হাশেম আলী ক্ষেপে গিয়ে বললেন,
‘এসব কি নাটক হচ্ছে? আমার নাতনি কি ফেলনা নাকি? এসব আমি একদম বরদাস্ত করবো না। আপনি আপনার পুরো পরিবার নিয়ে এই বাড়ি থেকে বের হয়ে যান। আমরা আপনার পরিবারে আমাদের নাতনির বিয়ে দেবো না।’

তারিকুল ইসলামও নিজের বাবার সাথে সহমত প্রকাশ করে বললেন,
‘আব্বু একদম ঠিক বলেছেন। আপনারা এখন আসতে পারেন। এমনিতেই অনেক কাহিনি হয়ে গেছে। আমি আর নতুন করে কোন ঝামেলা চাইছি না। ভুলটা আমারই ছিল। আমার মেয়ে ফে’ল করেছিল ম’রে তো যায়নি, আমার উচিৎ ছিল ওর দিকে নজর রাখা। তাহলে ও জীবনে এগিয়ে যেতে পারতো। কিন্তু আমি রাগ করে ওর বিয়ের ব্যবস্থা নিলাম। আর যার কারণে এতকিছু ঘটে গেলো। আমি এখন শুধু এটুকুই চাই আমার মেয়েটা যেন একটু ভালো থাকে। ওর বিয়ে দেওয়ার দরকার নেই সেইজন্য।’

১৫.
ফারজানা বেগম বুঝতে পারেন এখানে উপস্থিত সবাই যা বলছে তা যুক্তিযুক্ত। তাই তিনি সকলের উদ্দ্যেশ্যে বললেন,
‘আমি চলে যাইতাছি। আমার পোলার জইন্যে আপনাগো যেই অপমান হইছে তা শোধাবারার নয়। তাও আমি করজোড়ে মাফ চাইছি আপনাগো সক্কলের কাছে। পারলে মাফ করিয়েন।’

কথাটা বলেই তিনি ফিরে যেতে নিলেন। তোহা এবং ইশরাত খাতুন তখনো দরজায় ধা’ক্কা দিয়ে ইভানাকে দরজা খুলতে বলছিল। আচমকাই ইভানা দরজা খুলে বেরিয়ে আসে।

ইভানাকে দেখে তোহা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে বলে,
‘থ্যাংকস গড তুই ঠিক আছিস। আমি তো ভাবছিলাম তুই ভুল কিছু না করে ফেলিস।’

‘আমি এতটা দূর্বল নই আপাই, যে এত সামান্য কারণে নিজের ক্ষতি করব। যারা আমাকে জ্বা’লাতে আসবে, তাদের জ্বা’লিয়ে দিতে জানি আমি।’

ইভানার কথার মানে কেউ বুঝতে পারে না। ইভানা বোঝানোর চেষ্টাও করে না। সে দ্রুত পায়ে হেটে ফারজানা বেগমের সামনে গিয়ে দাড়িয়ে বলে,
‘আপনার প্রস্তাবে আমি রাজি আছি। আপনার ছোট ছেলেকে আমি বিয়ে করতে চাই।’

ইভানার কথা শুনে সবাই বিস্মিত হয়ে গেল৷ তোহা বলে উঠল,
‘এটা কি বলছিস তুই? এতকিছুর পরেও তুই ঐ বাড়ির ছেলেকে বিয়ে করবি তোর কি মিনিমাম সেল্ফ রেস্পেক্ট নাই?’

তারিকুল ইসলামও বলে ওঠেন,
‘তোমাকে এই বিয়ে করতে হবে না ইভানা। আমি তোমাকে পড়াবো। তোমাকে যোগ্য করে তুলব।’

ইভানা অকপটে বলে দেয়,
‘আমি বিয়ে করবো মানে করবো। এটাই আমার ফাইনাল ডিশিসন।’

হাশেম আলী খুব রেগে যান ইভানার কথা শুনে। ছোট থেকেই তিনি ইভানাকে অনেক ভালোবাসেন। কখনো তাকে একটা কড়া কথা পর্যন্ত বলেন নি, তার সব আবদার পূরণ করেছেন। কিন্তু আজ আর নিজেকে ঠিক রাখতে পারলেন না। ইভানার সামনে এগিয়ে এসে তাকে কড়া ভাষায় বললেন,
‘তোর বিয়ে করার এতোই শখ? এত কিছুর পরেও বিয়ে করবি? তাহলে যা কর। কিন্তু আমি এই বিয়ে মানবো না। আরে তুই আমার নাতনি, তোর জন্য ভালো ছেলের লাইন লাগিয়ে দেবো। সেখানে তুই কেন এত অপমানের পর যার সাথে তোর বিয়ে ঠিক হয়েছিল তার ছোট ভাইকে বিয়ে করবি?’

‘আমি এ ব্যাপারে আর কিছু বলতে চাই না দাদা। তুমি আমার জন্য দোয়া করিও, আর কিছু চাই না আমি।’

‘আমার দোয়া তোর উপর সবসময় থাকবে। কিন্তু এই বিয়েটা আমি কখনো মানব না। যা ইচ্ছা কর তুই।’

বলেই তিনি হনহন করে হেটে চলে যান।

১৬.
ফাহিম প্রচণ্ড রেগে যায় তার মায়ের কথা শুনে। কারণ ফারজানা বেগম তাকে ইভানাকে বিয়েটা করে নিতে বলেছে। ফাহিম রাগী গলায় বলে,
‘তুমি কেন আমায় গিনিপিগ বানাচ্ছো আম্মু? আমি কিন্তু ভাইয়া না যে তোমার কথা চুপ করে মেনে নেবো। বিশেষ করে বিয়ের মতো একটা একটা সিদ্ধান্ত।’

‘আমি তোর মা হইয়া তোর সামনে হাতজোড় করছি। দয়া কইরা বিয়াটা কইরা নে। নাইলে যে আমি অনু’শোচনার আগু’নে পু’ড়ে ম’রব চিরকাল। আমার জইন্যে একটা মাইয়া কিরকম অপমানিত হইল। এই বিয়েটা কইরা আমার মাতৃঋণ শোধ কর।’

ফাহিম যতোই মায়ের অবাধ্য হোক আজ সে শক্ত থাকতে পারল না। জন্মের পর থেকে সে দেখেছে তার মা কত কষ্ট করে তাদের দুই ভাইকে মানুষ করেছে। কিন্তু কখনো তাকে এতটা অসহায় দেখে নি৷ আজকে ফারজানা বেগম কেদেই দিয়েছেন। নিজের মায়ের এমন অবস্থা দেখে ফাহিমের মতো শক্ত চিত্তের ছেলেটাও দূর্বল হয়ে পড়লো। এদিকে ফারহানকে তখন থেকে ফোন করে চলেছে সে কিন্তু ফারহান ফোন রিসিভ করছে না। তাই ফাহিম বলে,
‘ঠিক আছে আম্মু। আমি তোমার কথা মেনে নেবো৷ তবে বিয়েটা করার আগে আমি ইভানার সাথে কিছু কথা বলতে চাই।’

ফারজানা বেগম সম্মতি জানান।


মুখোমুখি বসে আছে ফাহিম ও ইভানা। কিছু সময়ের নীরবতা ভেদ করে ফাহিম বলে ওঠে,
‘আমি জানি না তুমি কেন এই বিয়েটা করতে চাইছ। তবে আজ আমি নিজের মায়ের এই অসহায় অবস্থা দেখে না করতে পারিনি।’

ইভানা নিশ্চুপ। ফাহিম একটু থেকে পুনরায় বলে,
‘আমি এই বিয়েটা তো করে নেবো তবে আমি জানি না কতটুকু তোমায় মন থেকে মনে নিতে পারবো৷ তবে একটা কথা, আমি কিন্তু এখনকার তুমিকে মেনে নেবো না। আমি একজন বুয়েটের স্টুডেন্ট। নিজের স্ত্রী হিসেবে আমি তোমাকে ঠিক সেভাবেই গড়ে তুলব যাতে তুমি আমার যোগ্য হও। যাতে আমি বুক ফুলিয়ে গর্ব করে সবাইকে বলতে পারি তুমি আমার স্ত্রী। আমি সর্বাত্মক চেষ্টা করব এমনটা করার। বাকিটুকু তোমার হাতে।’

চলবে ইনশাআল্লাহ ✨

#মিষ্টিমধুর_প্রতিশোধ
#পর্বঃ৯
#লেখিকাঃদিশা_মনি

ইভানা ও ফাহিম বসে আছে কাজির সামনে। কাজি বিয়ে পড়ানো শুরু করল। অতঃপর ইভানাকে কবুল বলতে জোর দিতেই ইভানা সময় নষ্ট না করে বলে দিল,
‘কবুল।’

অতঃপর ফাহিমও কবুল বলে বিয়েটা করে নিলো। বিয়ে সম্পন্ন হতেই আশেপাশে আবার নতুন বিতর্ক সৃষ্টি হলো। কথা ছিল বড় ভাইয়ের সাথে বিয়ের, কিন্তু হলো ছোট ভাইয়ের সাথে। এ নিয়ে সবাই বেশ আলোচনা করছে। অনেকে বলছে, ছেলেটাকে ব’লির পা’ঠা বানানো হলো আবার অনেকের মতে মেয়েটার ভাগ্য ভালো। এমন নানা বিতর্কের মধ্যেই বিয়েটা মিটে গেল।

রিয়া ক্ষোভে ফুসছে। এত চেষ্টা করেও সে ইভানার বিয়েটা আটকাতে পারল না। বড় ভাইয়ের সাথে না হলেও ছোট ভাইয়ের সাথে তো বিয়েটা হলো। এটা নিয়ে তার খুব রাগ হচ্ছে।

এদিকে বিয়ে সম্পন্ন হওয়ার পর ইভানা ও ফাহিম উঠে দাড়ালো। কারণ এখন তাদের বিদায়ের প্রস্তুতি নিতে হবে।

বিয়েটা হয়ে যাওয়ায় ফারজানা বেগমের বুকের বোঝা হালকা হলো৷ এতক্ষণ মনে যেই অপরাধবোধ কাজ করছিল তা সম্পূর্ণভাবে না হলেও অনেকটাই দূর হলো। তিনি আল্লাহর কাছে শোকর আদায় করে বললেন,
‘ইয়া মাবুদ আজ তুমি আমারে অনেক বড় একটা আফ’সোস থেকে বাচাইয়া দিলা। এহন সবকিছু ঠিক থাকলেই আমি খুশি।’

তারিকুল ইসলাম, ইশরাত খাতুন, তোহা সবাই বিয়েটায় মত না দিলেও, এখন যেহেতু বিয়ে হয়ে গেছে তাই মেনে নিয়েছেন। কিন্তু হাশেম আলী নিজের জেদে অটল। তিনি ম’রে যাবেন তবুও এই বিয়েটা মানবেন না।

ইভানা একটু সামনে এগিয়ে আসতেই তোহা তাকে গভীরভাবে আলিঙ্গন করে বললো,
‘জানি না ইভানা তোর মনে কি চলছে, কিন্তু বড় বোন হয়ে এটা বলতে পারি তুই ভালো নেই। তবে চিন্তা করিস না। কোন সমস্যা হলে আমাকে বলবি। আমি সবসময় তোর পাশে থাকবো।’

ইভানা কিছু বলে না। শুধু চুপটি করে থাকে। তোহাও আর কিছু বলে না। ইশরাত খাতুন নিজের মেয়ের কাছে এগিয়ে এসে বললেন,
‘তুই যাই সিদ্ধান্ত নিয়েছিস আশা করি ভেবে চিন্তেই নিয়েছিস। এখন বাকিটা আমি আল্লাহর উপর ছেড়ে দিলাম। আমার বিশ্বাস আছে আল্লাহর উপর। আমি জানি, তিনি যা করবেন মঙ্গলের জন্যই করবেন। তুই আল্লাহর উপর ভরসা রাখিস। নিয়মিত পাচ ওয়াক্ত সালাত আদায় করিস। আশা রাখি আল্লাহ তোকে নিরাশ করবে না।’

তারিকুল ইসলামের মতো গম্ভীর মানুষটাও চুপ থাকলেন না। ইভানার কাছে এসে তার মাথায় হাত রেখে বললেন,
‘তোমার বাবাও তোমার সাথে আছে ইভানা। আমি চেষ্টা করে দেখব যাতে কোন ভালো কলেজে তোমাকে ভর্তি করতে পারি। তুমি পড়াশোনা করে নিজেকে প্রমাণ করে দিও৷ একটাই কথা শুধু মাথায় রেখো আগেরবারের মতো গাফিলতি করবে না। মন দিয়ে পড়বে। তাহলে আশা রাখছি তুমি ইন্টারে ভালো রেজাল্ট করবে।’

১৭.
ইভানা তার পরিবারের সবার থেকে বিদায় নেয়। ইশরাত খাতুন শক্ত রাখেন নিজেকে। কিন্তু তোহা নিজের বোনকে জড়িয়ে কাদতে থাকে। ইভানাও ছোট বাচ্চাদের মতো কাদতে থাকে। তারিকুল ইসলাম গোপনে চোখের জল ফেলেন। হাশেম আলী নিজের ঘর থেকে বের হননি। ইভানার প্রতি ভীষণ রাগ জমেছে তার। তার বারংবার মনে হচ্ছে ইভানার এই বিয়ের সিদ্ধান্তটা সঠিক নয়।

তাই নিজে বুকে পাথর চেপে ঘরে বসে আছেন। তার মন আজ ভেঙ্গে গেছে। মানুষ যাকে সবথেকে বেশি ভালোবাসে অভিমানও তার উপর বেশি হয়।

এদিকে ইভানা বিদায়ের সময় নিজের দাদাকে না দেখে কষ্ট পায় খুব। কান্নারত গলায় তোহাকে বলে,
‘দাদাজান কোথায় আপাই? তিনি কি এখনো আমার উপর রাগ করে আছেন? আমার বিদায়ের সময়ও আসবে না?’

তোহা কিছু বলার আগেই তারিকুল ইসলাম বলেন,
‘তুমি তো চেনো আব্বুকে। তিনি তোমাকে যতোই ভালোবাসুক, তার একরোখা স্বভাবের বাইরে তুমিও নও। আপাতত ওনাকে বিরক্ত করার দরকার নেই। ক’টা দিন যাক ওনার রাগ কমলে দেখবে সব ঠিক হয়ে যাবে।’

ইভানা তবুও মানতে চায়না। সবাইকে ছাড়িয়ে ছুটে যায় নিজের দাদার রুমের দিকে। দরজায় গিয়ে কড়া নে’ড়ে বলে,
‘দাদাজান আমি চলে যাচ্ছি। তুমি কি এখনো রাগ করে থাকবে? প্লিজ একবার বাইরে এসো না।’

তারিকুল ইসলাম আর নিজেকে শক্ত রাখতে পারলেন না। ঘর থেকে বেরিয়ে এলেন। ইভানাকে জড়িয়ে ধরে বললেন,
‘তোর উপর কি আমি রাগ করে থাকতে পারি তানজিলা? তুই যে আমার নয়নের মনি৷ আমি শুধু তোর এই বিয়েটাই মানতে পারছি না। কিন্তু তোর উপর আমার দোয়া সবসময় থাকবে। সুখী হ তুই।’

এক আবেগঘন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। ইভানা তার দাদার হাত ধরে বেরিয়ে আসে। অতঃপর গাড়িতে উঠে সকলের থেকে বিদায় নেয়। প্রত্যেক মেয়ের জীবনেই একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা এটি। যখন তাকে তার চেনা পরিজন সবাইকে ছেড়ে যেতে হয়। এই মুহুর্তে নিজেকে সামলানো সহজ নয়।

ফাহিম ইভানার অবস্থা বুঝতে পেরে একটা রুমাল তার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে,
‘নিজের চোখের জল মুছে নাও। এভাবে কাদলে শরীর খারাপ হবে।’

ইভানা ফাহিমের দিকে তাকায়। ফাহিমের দৃষ্টি তার দিকেই নিবদ্ধ। ইভানাকে ইশারা করে রুমালটা নিতে। ইভানা রুমালটা দিয়ে নিজের চোখের জল মুছে নেয়।

১৮.
বিদায়ের পরপরই তোহা বিয়েবাড়িতে উপস্থিত সব আত্মীয় স্বজনদের এক হাত নেয়। সকলকে উদ্দ্যেশ্য করে বলে,
‘আপনারা বিয়ে খেতে এসেছেন ভালো কথা। খেয়ে দেয়ে বিয়ে দেখে চলে যাবেন। তা না করে আপনারা এখানে আসেন সমালোচনা করতে। আপনাদের জন্য আমার বোনের বিয়েটা ভেঙে গেল।’

বিয়েবাড়িতে উপস্থিত কেউ কিছু বলে না। তোহা রাগ দেখিয়ে চলে যায় সেখান থেকে। হঠাৎ করেই তার নজর পড়ে ক্যামেরার দিকে। আজকে বিয়ে উপলক্ষে ক্যামেরা ম্যান ছিল অনেক। তাদের মধ্যেই একজন ক্যামেরাম্যান কিছু একটা রেকর্ড করেছে। সেটা নিয়ে কথা বলছে।

তোহা ক্যামেরাম্যানের কাছে গিয়ে বলে,
‘ছবিটা দেখতে পারি?’

ক্যামেরাম্যান দেখতে দেয়৷ তোহা ছবিটা হাতে নিয়ে দেখতে পায় রিয়া ফারহানের সাথে কি নিয়ে যেন কথা বলছে। তোহার মনে পড়ে ঐদিকে সিসিটিভি লাগানো ছিল৷ তাই সে সিসিটিভি চেক করতে যায়।

সিসিটিভি চেক করেই তোহা দেখতে পায় ফারহানকে রিয়া নিজের ফোনে কি যেন দেখালো তারপর ফারহান রেগেমেগে চলে গেল। এই ভিডিওটা দেখে তোহা অনেক কিছুই আন্দাজ করতে পারল। কারণ রিয়া কেমন মেয়ে সেটা সে খুব ভালো করেই জানে।

তোহা আর একমুহূর্ত সময় নষ্ট না করে রিয়াকে খুজতে লাগল। রিয়া তখন খাবার খেতে বসেছে। তোহা এসে রিয়াকে টেনে তুলল। তাকে টানতে টানতে নিয়ে এলো নিজের মা-বাবার সামনে। রিয়ার সাথে রিয়ার মা-বাবাও ছিল। তারাও পেছন পেছন এলো।

তারিকুল ইসলাম বললেন,
‘তুমি রিয়াকে কেন এভাবে টেনে টেনে নিয়ে এলে তোহা?’

রিয়া নাটক করে বলে,
‘আমরা আপনাদের মতো এত বড়লোক নই চাচা। তাই এভাবে অপমান করছে আপনার মেয়ে আমাকে।’

রিয়ার মা-বাবাও তাকে সমর্থন করে। তোহা নিজের রাগ সামলাতে পারে না। রিয়াকে ঠা’স করে একটা থা’প্পর মা’রে। এভাবে পরপর ৪-৫ টা থা’প্পর মা’রে আবার মা’রতে গেলে তারিকুল ইসলাম তার হাত আটকে বলে,
‘এসব হচ্ছেটা কি? তোমাকে আমি এই শিক্ষা দিয়েছি?’

তোহা এবার সব ঘটনা খুলে বলে। অতঃপর রিয়াকে বলে,
‘তোর ফোনের লক খুলে দে। ‘

রিয়া ভয়ে ভয়ে লক খুলে বলে,
‘এখানে কিছু নেই।’

তোহা রিয়ার প্রোফাইলে ঢুকতেই ইভানার বলা কথার ভিডিও দেখতে পায়৷ যেটা রিয়া ফারহানকে দেখিয়েছিল।

রিয়া মাথা নিচু করে নেয়। তোহা বলে,
‘দেখলে তো আব্বু, এই মেয়ে কত বদ।’

তারিকুল ইসলাম শক্ত গলায় বলেন,
‘রিয়া তুমি আমার মেয়ের ক্ষতির চেষ্টা করেছ। তোমাকে তো আমি ছাড়ব না।’

রিয়ার মা-বাবাও তাকে অনেক বকাবকি করে। অতঃপর তারিকুল ইসলামের কাছে ক্ষমা চায় যেন রিয়ার কোন ক্ষতি না করে। তখন তারিকুল ইসলাম রিয়ার বাবাকে বলে,
‘তুমি আমার কাছ থেকে যে ১০ লাখ টাকা নিয়েছিলে তা এক সপ্তাহের মধ্যে শোধ করবে। নাহলে তোমাদের বাড়িঘর সব হারিয়ে পথে বসতে হবে।’

রিয়ার বাবার মাথায় হাত উঠে যায়। আজ নিজের মেয়ের ভুলের জন্য তাকে এই সমস্যা দেখতে হচ্ছে!

চলবে ইনশাআল্লাহ ✨