মিষ্টিমধুর প্রতিশোধ পর্ব-৬+৭

0
515

#মিষ্টিমধুর_প্রতিশোধ
#পর্বঃ৬
#লেখিকাঃদিশা_মনি

পুরো বাড়িতে বিয়ের প্রস্তুতি চলছে। বিয়ের আলোকসজ্জায় আলোকিত চারিদিক। আর মাত্র কিছু সময় তারপরই বিবাহ নামক সম্পর্কে গেথে যাবে দুটি জীবন।

ইভানা সকলের মধ্যমনি হয়ে বসে আছে। নিজের বিয়ে উপলক্ষে সে খুব সুন্দর কারুকাজ করা একটি লাল লেহেঙ্গা পড়েছে। লেহেঙ্গাটিতে খুব সুন্দর মানিয়ছে তাকে। যে কেউ দেখলে মুগ্ধ হয়ে যাবে।

আশেপাশের কিছু আত্মীয় নিজেদের মধ্যে গল্পগুজব করছিল। তাদের মধ্যে একজন হঠাৎ করে ফিসফিস করে বলে,
‘এই মেয়ে মনে হয় এমন রূপ দেখিয়েই ম্যাজিস্ট্রেটকে পটিয়েছে। নাহলে এমন মেয়েকে তো আর কোন ম্যাজিস্ট্রেট এমনি এমনি বিয়ে করতো না। শোনোনি মেট্রিক ফেল করেছিল এবার পরীক্ষা দিয়ে টেনেটুনে পাশ করেছে।’

মুহুর্তেই স্থানটিতে সবার জটলা লেগে গেল৷ সবাই নানা আলোচনা, সমালোচনায় ব্যস্ত হয়ে গেল৷ বিয়ে বাড়িতে অবশ্য এমন পরিস্থিতি খুব একটা আশ্চর্যজনক নয়। কারণ সব বিয়ে বাড়িতেই পাত্র-পাত্রীকে এমন সমালোচনা কমবেশি হয়েই থাকে। কখনো বা রূপ নিয়ে আবার কখনো বা যোগ্যতা, খাবারের স্বাদ নিয়ে। তবে এক্ষেত্রে ইভানাকে নিয়ে বেশ ভালোই সমালোচনায় জমেছে সবাই।

রিয়া এদিক দিয়ে যাবার সময় কয়েকজনকে এভাবে জটলা পাকিয়ে কথা বলতে দেখে থমকে গেল। তার মনে হলো এখানে কি কথা হচ্ছে সেটা একটু শুনে দেখলে ভালো হয়। যেই ভাবনা সেই কাজ। রিয়া সকলের কথার মাঝে ঢুকে পড়ল। যখন বুঝতে পারল সবাই ইভানাকে নিয়েই কথা বলছে তখন রিয়ার মাথায় খুবই দুষ্টু একটা বুদ্ধি এলো৷ রিয়া হঠাৎ করেই সকলের মাঝে বলে উঠলো,
‘আমারো মনে হয় আপনারা ঠিকই বলছেন। ইভানার মতো একটা মেয়ে, যে কিনা মেট্রিক ফেল করেছে তাকে একজন ম্যাজিস্ট্রেট কোন দুঃখে বিয়ে করতে যাবে? আমার মনে হয়, এর পেছনে কোন কারসাজি আছে। হয়তো কোথাও কোন আকাম কুকাম করতে গিয়ে ধরা পড়েছে বা এমন কিছুই। জানেনই তো আজকালকার জমানা কেমন। তাই হয়তো বাধ্য হয়ে বিয়েটা করছে।’

মুখ থেকে নিঃসৃত কথাকে অনেক সাধারণ মনে করা হয়েও এই কথাই কখনো অনেক বেশি অসাধারণ হয়ে ওঠে। কখনো এই কথাই নষ্ট করে দিতে পারে কারো সাজানো গোছানো জীবন৷

এক কথা, দুই কথা মিলিয়ে পুরো জগাখিচুরি যখন তৈরি হয় তখন তা বেশ জটিল রূপ ধারণ করে। এই যেমন এখন রিয়ার বলা কথাটা নিয়ে সবাই নিজেদের মতো করে আলোচনা করছে। সবাই নিজেদের মতো করে বিষয়টা সাজিয়ে নিচ্ছে। সকলের মাঝে একজন যেমন বলেই দিলো,
‘হুম এমন তো হতেই পারে। হয়তো বিয়ের আগেই কোথাও কোন অকাজ করতে গিয়ে ধরা পড়েছে। তাই এখন বিয়েটা হচ্ছে।’

এরকম ভাবে সবাই নানা কথা সাজাচ্ছে নিজেদের মতো৷ রিয়া এসব কথা শুনে কুটিল হাসল। মনে মনে বললো,
‘যেমনটা আমি চেয়েছিলাম ঠিক তেমনটাই হলো। ছোটবেলা থেকে তোকে সুখে থাকতে দেখেছি ইভানা। আমি তোর থেকে বেশি যোগ্যতাসম্পন্ন হয়েও সুখ পাইনি আর তুই,, খুব সখ ছিল না ম্যাজিস্ট্রেটকে বিয়ে করার। দেখ এখন কি হয়।’

১১.
ইভানা নিজের রুমেই বসে ছিল। তাকে ঘিরে রেখেছিল তার সমস্ত কাজিন, বন্ধুরা। তোহা, আনহা এবং রিয়াও ছিল সেখানে। হঠাৎ করে সবার মাঝে রোল ওঠে। ইভানার এক কাজিন এসে বলে,
‘তোমরা সবাই চলো বর এসে গেছে।’

ব্যস কথাটা শোনা বাকি আর সবাই দৌড়ে চলে গেল বরকে দেখতে। সবাই যাওয়ার পর তোহা ও রিয়া ছিল। তোহা ইভানাকে উদ্দ্যেশ্য করে বলে,
‘তুই এখানেই চুপটি করে বসে থাক। একদম কোথাও যাবি না কেমন? আমি আসছি।’

‘আচ্ছা আপাই।’

তোহা চলে যাওয়ার পর কিছু সময় রিয়া চুপচাপ দাড়িয়ে থাকে। রিয়ার উপস্থিতি ইভানাকে অস্বস্তির মধ্যে রেখেছিল। কারণ ইভানা খুব ভালো করেই জানে রিয়া কি ধরণের মেয়ে। সে খুবই হিংসুটে আর কুটিল।

রিয়া আচমকা ইভানার সামনে এসে বলে,
‘সবকিছু কত পার্ফেক্ট তাইনা? তুই কত সুন্দর বউ সেজে বসে আছিস। আবার তোর ম্যাজিস্ট্রেট বরও এসে গেছে। এখন শুধু বিয়েটা ভালোয় ভালোয় হলেই হয়। আচ্ছা বিয়েটা হবে তো?’

‘এটা তুমি কি বলছ রিয়া আপু? বিয়ে হবে না কেন?’

‘না মানে, অনেক সময়ই তো এমন হয় যে বিয়ের আসরে বিয়ে ভেঙে যায়।’

‘এমন কিছুই হবে না। তুমি এরকম অশুভ কথা বলো না। যা হবে ভালোই হবে ইনশাআল্লাহ।’

রিয়া তখন মনে মনে বলে,
‘কিচ্ছু ভালো হবে না ইভানা। সবকিছু খারাপ করার ব্যবস্থা যে আমি অলরেডি করেই রেখেছি। এবার তুই শুধু দেখ কি হয়। আজ সেইরকম একটা সিনক্রিয়েট হবে। তোর অপমান দাড়িয়ে উপভোগ করার জন্য আমি প্রস্তুত।’

১২.
ফারহান ও তার পরিবারের সদস্যরা সবাই এসে গেছে৷ তাদের সবার বসার ব্যবস্থাও করা হয়েছে। ফারহানের পড়নে নীল কালারের শেরওয়ানি। যেটাতে অনেক সুন্দর লাগছে তাকে। ফারহান একটি রুমাল দিয়ে তার মুখ ঢেকে রেখেছে। ফারহানকে ঘিরে রেখেছে তার খুব কাছের কিছু বন্ধু-বান্ধব এবং ফাহিম।

ফারহান এই বিয়েতে নিজের কিছু নিকটাত্মীয় ও বন্ধু ছাড়া কাউকেও দাওয়াত দেয় নি। কারণ এতে তার মান সম্মানের উপর প্রভাব পড়তে পারে।

তবুও ফারহানের এক বন্ধু রিফাত আচমকা বলে ওঠে,
‘শুনলাম তোর বউয়ের শিক্ষাগত যোগ্যতা নাকি খুব কম। এটা কেমন হলো দোস্ত? তুই একটা ম্যাজিস্ট্রেট মানুষ। আমরা কত আশায় ছিলাম তোর সাথে যার বিয়ে হবে সে উচ্চশিক্ষিত হবে কিন্তু এটা কি হলো? তুই একটু ভালো মেয়ে খুজে পেলি না? মেয়ের বয়সও তো খুব কম মনে হচ্ছে।’

ফারহান কিছু বলতে যাবে তার আগেই ফাহিম বলে ওঠে,
‘থাক না এসব কথা। বিয়েবাড়িতে এসেছেন যখন দেখুন কোন ভালো মেয়ে নজরে পড়ে নাকি। আশেপাশে তো অনেক সুন্দরী মেয়ে আছে। বন্ধুর বিয়েতে এসে কাউকে পটাতে না পারলে কেমন হয়।’

‘হ্যা, এটা তো একদম ঠিক বলেছ। আমিও এমনটাই ভাবছিলাম।’

ফারহান মনে মনে ফাহিমকে অনেক ধন্যবাদ জানায়। কারণ সে সুকৌশলে ব্যাপারটা অন্যদিকে ঘুরিয়ে নিলো। ফাহিম এমনি যেমনই হোক, সে নিজের ভাই বা পরিবারের অসম্মান কখনো হতে দিবে না।

সবকিছু তখনো অব্দি ঠিকঠাক ছিল। কিন্তু রিয়া যেই আগুন লাগিয়েছিল তা খুব শীঘ্রই দাবানলে পরিণত হওয়ার অপেক্ষা করছিল। ছেলেপক্ষ এবং মেয়েপক্ষের অনেক আত্মীয় স্বজন একে অপরের সাথে খোশগল্পে মেতে ওঠে। এর মাঝেই ইভানার যোগ্যতা নিয়ে প্রসঙ্গ আসতেই সবার মধ্যে এ নিয়ে বিস্তর আলোচনা হয়।

যার ফলস্বরূপ সবার মাঝে এই কথা রটিয়ে যায় যে, হয়তো ইভানা ও ফারহান কোন আ’কাম-কু’কাম করতে গিয়ে ধরা পড়েছে। তাই এই অবস্থা। কথাটা ঝড়ের বেগে সবার মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। সবাই নানারকম সমালোচনায় ব্যস্ত হয়ে পড়ে। নিজের মনের মাধুরি মিশিয়ে কাহিনি তৈরি করতে থাকে।

এসবের মধ্যে ইভানাকে বিয়ের আসরে নিয়ে আসা হয়। ইভানা ফারহানের দিকে একপলক তাকিয়েই লজ্জায় নুইয়ে যায়।

ফারহানের বন্ধুদের কানেও ইতিমধ্যে কথাগুলো এসেছে। রিফাত একটু ঠোটকাটা স্বভাবের। তাই সে কোন চিন্তা না করেই ফারহানের কাছে এসে তার কানে কানে বলে,
‘এসব কি শুনছি দোস্ত? তুই নাকি এই মেয়েটার সাথে বিয়ের আগে আ’কাম কু’কাম করতে গিয়ে ধরা পড়ে বাধ্য হয়ে বিয়েটা করছিস?’

ফারহান রাগান্বিত স্বরে বললো,
‘এসব কে বলেছে তোকে?’

‘বিয়েবাড়ির সবাই তো এটা নিয়েই কথা বলছে।’

ফারহানের রাগ হলো খুব। এই ভয়টাই সে পাচ্ছিল তাই চাচ্ছিল না এভাবে বড় অনুষ্ঠান করে বিয়ে করতে। এখন যে বিতর্ক তৈরি হয়েছে সেটা ফারহানের মান সম্মান ধুলোয় মিশিয়ে দিলো। ফারহান আর স্থির থাকতে পারল না।

বিয়ের আসরে এসে সবাইকে উদ্দ্যেশ্য করে বললো,
‘আমি এই বিয়ে করতে পারবো না।’

কথাটা চাওড় হতেই রীতিমতো ছোটখাটো ভূমিকম্প হয়ে গেল!

চলবে ইনশাআল্লাহ ✨

#মিষ্টিমধুর_প্রতিশোধ
#পর্বঃ৭
#লেখিকাঃদিশা_মনি

ফারহান বিয়ে করবে না এই কথাটা শুনে ইভানার বাবা তারিকুল ইসলাম বলে উঠলেন,
‘এটা তুমি কি বলছ? সবকিছু ঠিক হয়ে আছে। আমাদের কত আত্মীয় স্বজন এসেছে, এমন অবস্থায় তুমি বিয়েটা না করলে কেমন হয়!’

ফারজানা বেগমও উপস্থিত ছিলেন সেখানে। তিনি ফারহানের কথা শুনে বাকরুদ্ধ হয়ে গেছেন। তিনি ফারহানের কাছে এসে শক্ত গলায় বললেন,
‘এটা তুই কি বলতাছিস ফারহান? বিয়া করবি না মানে?’

‘আম্মু এই নিয়ে আমি আর কোন কথা শুনব না।’

হাশেম আলী প্রচণ্ড রেগে গেছেন। একেই এই বিয়ে থেকে শুরু থেকেই তার অমত ছিল। এখন বিয়ের আসরে যেসব কাহিনি ঘটে যাচ্ছে তাতে তার ধৈর্যের বাধ ভেঙে যাচ্ছে। হাশেম আলী আর থাকতে না পেরে বলে উঠলেন,
‘আমার নাতনীর এত বড় অপমান আমি সহ্য করবো না৷ এই ছেলের সাথে কোনভাবেই আর আমার নাতনীর বিয়ে দেবো না।’

পরিস্থিতি ভীষণ ঘোলাটে হয়ে যাচ্ছিল। ইভানাও বুঝতে পারছিল না ঠিক কি হতে চলেছে। সে উঠে সামনের দিকে পা বাড়াতেই তোহা তাকে আটকে বললো,
‘তুই এখানেই থাক ইভানা। বড়রা ওখানে আছে তারা সবকিছু সামলে নেবে।’

‘কিন্তু আপাই উনি কি বলছেন এসব? আমায় বিয়ে করবেন না মানে?’

রিয়া তাচ্ছিল্য করে বলে,
‘এমন ন্যাকার মতো কথা বলছিস কেন ইভানা? বুঝতে পারছিস না কি হয়েছে? তোর বিয়েটা বানচাল হয়ে যাচ্ছে। অবশ্য এটা হওয়ারই ছিল৷ তোর মতো মেট্রিক ফেল মেয়েকে তো আর একটা ম্যাজিস্ট্রেট বিয়ে করবে না কখনো।’

তোহা রিয়ায় কথার জবাবে বলে,
‘তুই এসব নিয়ে কথা বলিস না রিয়া। তোর স্বভাব কি আমি খুব ভালো করেই জানি। তুই তো আমাদেরকে হিংসা করিস।’

রিয়া নাকিসুরে বলে,
‘এখন তো আমি খারাপ হবোই। তোমরা এত বড়লোক, আমি তো তোমাদের মতো নই। তাই তোমরা সবসময় আমাকে অপমান করো।’

কথাটা বলে সে দূরে সরে আসে। ইভানাও আর দাড়িয়ে থাকতে পারে না। সে দৌড়ে চলে আসে সামনে। তোহা তাকে আটকানোর বৃথা চেষ্টা করে। তোহা মাথায় হাত দিয়ে বলে,
‘না জানি এই সমস্যার সমাধান আদৌ হবে নাকি সবকিছু আরো ঘোলাটে হয়ে যাবে।’

১৩.
ইভানা ফারহানের সামনে এসে উপস্থিত হয়। অতঃপর তার সামনে মিনতির স্বরে বলে,
‘প্লিজ আপনি বিয়েটা করে নিন। আপনি তো অনেক শিক্ষিত, তাই এটা খুব ভালো করেই জানেন যে এই সমাজ ব্যবস্থা মেয়েদের জন্য কতো কঠিন। আজ যদি আপনি বিয়ে না করে এখান থেকে চলে যান তাহলে হয়তো আপনার কিছু হবে না। কিন্তু একজন মেয়ে হিসেবে আমাকে অনেক কথাই শুনতে হবে। লোকে আমার দিকে আঙুল তুলবে। একেই মেট্রিক পরীক্ষায় খারাপ রেজাল্টের জন্য অনেক তিরস্কার আর অপমান সহ্য করেছি। এখন আর নতুন করে এত অপমান মানতে পারবো না।’

ফারহান ভাবলেশহীন ভাবে বলে,
‘সেটা আমার দেখার বিষয় না। তোমার কথা ভেবে আমি নিজের সম্মান নষ্ট করতে পারবো না। সবাই কি বলছে জানো? আমি নাকি তোমার সাথে কোন আ’কাম করতে গিয়ে ধরা পড়েছি জন্য বাধ্য হয়ে তোমায় বিয়ে করছি। ভাবতে পারছো এতে আমার মান-মর্যাদার কি পরিমাণ ক্ষতি হচ্ছে।’

ইভানার চোখে জল চলে আসে। সে নিজের স্বপক্ষে কিছু বলতে যাবে কিন্তু তাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে ফারহান হনহন করে চলে যেতে থাকে। তারিকুল ইসলাম, ফারজানা বেগম সহ আরো অনেকে তাকে আটকানোর অনেক চেষ্টা করে কিন্তু ফারহান কারো কথায় কর্ণপাত করে না।

ফাহিমের মতো কঠিন প্রকৃতির একটা ছেলেও এই মুহুর্তে দোটানায় ভুগছিল। একবার তার মনে হচ্ছে তার ভাই যা করছে সেটা ঠিক, কারণ সম্মানটাই সবার আগে। আজ বিয়েটা করলে তার ভাইকে আরো অনেক কথা শুনতে হবে।

আবার তার এটাও মনে হচ্ছে মেয়েটাকেও তো অনেক ভুগতে হবে। কারণ এই সমাজে মেয়েদের অবস্থান কেমন সেটা ফাহিম অনেক ভালো করেই জানে। সমাজ সবসময় মেয়েদের দিকেই আঙুল তোলে। এসব ভেবে ফাহিম ভাবলো তার ভাইকে আটকানো উচিৎ। তাই সে ফারহানের পিছু পিছু গিয়ে বললো,
‘ভাইয়া শোন আমার কথা। যাসনা প্লিজ। বিয়েটা করে নে।’

‘তুই এই কথা বলছিস? ফাহিম তুই তো আমায় বলেছিলি যে এই বিয়েটা যেন আমি না করি। আমার বিয়ে নিতে তো সবথেকে বেশি আপত্তি তোর ছিল। আর এখন তুই আমাকে বিয়ের কথা বলছিস।’

‘হ্যা ভাইয়া বলছি। কারণ যখন আমি বিয়েটা করতে মানা করেছিলাম তখন শুধু বিয়ের কথাবার্তা চলছিল৷ সেই সময় বিয়েটা বাতিল হয়ে গেলে কোন সমস্যা হতো না। কিন্তু তখন তো তুই মায়ের বাধ্য সন্তানের মতো বিয়েতে রাজি হয়ে গিয়েছিলি। তাহলে এখন কেন এমন করছিস?’

‘আমি তো কারণটা খুব স্পষ্ট করেই বলেছি। এত অপমান আমি সহ্য করতে পারবো না।’

‘ভাইয়া আমি তোকে আগেই এই ব্যাপারে সতর্ক করেছিলাম। সেইসময় তো তুই আমার কথা শুনলি না। আম্মুকেও কতো বোঝালাম। কিন্তু তুই বা আম্মু কেউ আমার কথা শুনলি না।আমি আগে থেকেই জানতাম এমন কিছুই ঘটবে৷ তাই বিয়ের কথাবার্তা ফাইনাল হওয়ার আগেই আমি বলেছিলাম বিয়েটা না করতে। বাট, এখন যদি তুই বিয়েটা না করিস তাই ঐ মেয়েটাকে কত কথা শুনতে হবে জানিস? আজ মেয়েটার যদি ভালোমন্দ কিছু হয়ে যায় তার দায়ভার কিন্তু তোর এবং আম্মুর হবে।’

‘আমি এত কথা শুনতে চাই না। আমার পথ থেকে সরে দাড়া। ‘

বলেই ফাহিমকে ধাক্কা দিয়ে চলে গেলো ফারহান।

১৪.
ফারহান বাইরে চলে আসতেই তার পেছন পেছন রিয়াও চলে আসে। রিয়া ফারহানকে পেছন থেকে ডাক দিয়ে বলে,
‘একটু দাড়ান আপনার সাথে আমার কথা আছে।’

ফারহান পিছনে তাকিয়ে বিরক্তির সাথে বলে ওঠে,
‘কি বলবেন আপনি? বিয়ে করার জন্য জোর করতে এসেছেন নিশ্চয়ই?’

‘আপনি ভুল ভাবছেন। আমি ঐ ইভানার কাজিন হতে পারি, কিন্তু শুভাকাঙ্ক্ষী নই। কারণ ওর স্বভাব চরিত্র সম্পর্কে আমার খুব ভালোই জানা আছে। ও খুবই স্বার্থপর আর খারাপ একটা মেয়ে। দাড়ান আপনাকে একটা ভিডিও দেখাচ্ছি।’

বলেই রিয়া সেদিন রেকর্ড করা ভিডিওটি দেখায় ফারহানকে। যেখানে ইভানা বলেছিল, সে প্রতিশোধ নিতে চায় ফারহানের থেকে। ভিডিওটি দেখে ফারহানের রাগ আরো বেড়ে যায়। রিয়া ফারহানের মুখের দিকে তাকিয়ে তার অন্তরের কথা উপলব্ধি করতে পেরে বলে,
‘দেখলেন তো ইভানা কিরকম মেয়ে। আমার তো মনে হয় বিয়েবাড়িতে এই সমস্ত কথা ইভানাই ছড়িয়ে দিয়েছে যাতে আপনার মান-সম্মান নষ্ট করে আপনার উপর প্রতিশোধ নিতে পারে।’

ফারহান হাতের মুঠো শক্ত করে নেয়৷ অতঃপর রিয়ার উদ্দ্যেশ্যে বলে,
‘আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আপনার জন্যই আমি বুঝতে পারলাম ইভানা মেয়েটা কেমন। এখন তো কোন মতেই আমি বিয়েটা করবো না।’

বলেই ফারহান হনহন করে চলে যায়।ফারহান চলে যাওয়ার পর রিয়া কুটিল হেসে বলে,
‘ব্যস, যদিওবা কোনরকমে তোর হবু বরকে মানিয়ে নিয়ে আসার রাস্তা ছিল কিন্তু সেই রাস্তাও আমি বন্ধ করে দিলাম ইভানা।’

ইতিমধ্যেই অনেকে ফারহানকে আটকানোর জন্য ছুটে আসে। কিন্তু রিয়ার ভিডিওটা দেখার পর ফারহান আরো বেশি রেগে গেছে তাই তাকে মানানোর আর কোন উপায় নেই।

চলবে ইনশাআল্লাহ ✨