#মিষ্টি_রোদের_হাতছানি
#israt_jahan_arina
#part_26
দিনের প্রথম প্রহরে শুভ বেরিয়েছে ফুলের দোকানের উদ্দেশ্য।সকালের মিষ্টি ঘুমের বিসর্জন দিয়ে হৃদমোহিনীর জন্য বেলি ফুল কিনতে এসেছে।ফুলের দোকানে দাড়িয়ে সবচাইতে তাজা ফুলের মালা গুলো নিলো।নাকের কাছে নিয়ে বুক ভরে নিঃশ্বাস নিলো।এই মাতাল করা গ্রান তার আরজুর খোঁপায় লেপটে থাকবে।শুভ মুচকি হাসলো।আরজুকে নিজ হাতে পরিয়ে দিতে পারলে ভালো হতো।শুভ মালা কিনে নিলো।তবে একটা না।চারটা নিলো।একটা নিলে লেডিস গাং তার ভর্তা বানিয়ে ফেলবে।
আজ তাদের ভার্সিটিতে নবীনবরণ অনুষ্ঠান।আরজু আজ ডান্স পারফর্ম করবে।মেয়েটা বেশ ভালো ক্লাসিক ডান্স করতে জানে। ছোটবেলায় বেশ কয়েক বছর শিখেছিল।স্কুল ,কলেজে প্রতিটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে আরজু পারফরমেন্স করতো।ছোট্ট আরজু যখন নাচ শিখতে যেতো তখন শুভ সচ্ছ কাচের দেয়ালের বাইরে থেকে আরজুকে এক নজরে দেখতো।ফোলা ফোলা গালের মিষ্টি আরজুকে নাচতে দেখে শুভ অন্য কোথাও হারিয়ে যেত।সেই স্কুল লাইফ থেকেই শুভ নিজের অনুভূতিকে অনুধাবন করতে পেরেছিল।ফোলা গালের মিষ্টি পরীটা যে তার হৃদয় হরণ করে বসে আছে।এই মেয়েটার চোখের এক ফোঁটা জল শুভর বুকে ঝড় তোলে।
যখন আরজুর বাবা মা মারা গেলো তখন মেয়েটা তার কোলে শুয়ে অঝোরে কেঁদেছিল।সেদিন নিজেকে শুভর ভীষণ অসহায় মনে হয়েছে।এই আদুরে মেয়েটা পৃথিবীর সর্বোচ্চ সুখ ডিজার্ভ করে।আরজু বড্ডো সহজ সরল।মেয়েটাকে বাবা মা হারানোর পর থেকে তার খালামণি আর খালুজান পুতুলের মতো বড়ো করেছেন।আরজু যেনো নিজেকে একা অনুভব না করে তার সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছেন।তবে আরজুর সকল আবদার ছিলো শুভর কাছে।দিন নেই রাত নেই মেয়েটা কল করেই নানান আবদার করে বসত। এখনো শুভর মনে আছে একদিন রাতে রাইরে যেয়ে ফুচকা খেতে যাওয়ার আবদার করেছিলো আরজু।শুভ মানা করায় ভ্যা ভ্যা করে কেঁদে কেঁটে বুক ভাসিয়েছিল।তখন আরজুর বাবা মা বেচেঁ ছিলেন।পড়ে আরজুর মা তাকে কল করে আরজুর পাগলামির কথা জানায়।শুভ সেদিন রাতে আরজুর বাসায় পৌঁছে দেখে আরজু কেঁদে নাক মুখ লাল করে ফেলেছে।সেদিন শুভ বুঝেছিল এই মেয়েটার চোখের জল তাকে বেসামাল করে তুলে।শুভকে দেখে কিশোরী আরজু অভিমানে মুখ ফিরিয়ে রেখেছিল।সেদিনের পর থেকে শুভ আরজুর সব আবদার চোখ বন্ধ করে পূরণের চেষ্টা করে। যাই হোক মেয়েটাকে কাদতে দেওয়া যাবে না।
**********
তারা এক দৃষ্টিতে আরজুর দিকে তাকিয়ে আছে।সাদা জামদানি শাড়িতে আরজুকে চোখ ধাঁধানো সুন্দর লাগছে।তার চোখে দেখা সবচাইতে সুন্দরী নারী আরজু।তারা যত আর আরজুকে দেখে তার মনটা প্রশান্তিতে ভরে যায়।সুন্দরী ,রূপবতী মেয়েরা নাকি অহংকারী,ধাম্ভিক হয়ে থাকে।কই তার সামনে দাড়ানো নারীটি মোটেও অহংকারী না।বরং এই মেয়েটার অন্তরে এক আকাশ মায়া লুকোনো।কি অমায়িক ব্যাবহার।
আরজু চোখে কাজল দিয়ে ঠোঁটে লাল লিপস্টিক দিলো।চুলের খোঁপা ঠিক করতে করতে বললো
-“আমাকে কেমন লাগছে তারা?”
তারা মিষ্টি হেসে বললো
-“একদম নায়কা মাধুরীর মতন।”
-“ধ্যাত!! আমার তো শ্রীদেবী পছন্দ।”
-“আপনাকে নায়কদের চাইতেও বেশি সুন্দর লাগতেছে।দেখলেই পোলাগো চোখে আগুন ধইরা যাইবো।”
আরজু দর্পণে তাকিয়ে মুচকি হেসে বিড়বিড় করে বললো
-“আমি তো শুধু একজনের বুকেই আগুন ধরাতে চাই। ব্যাটাকে একদম ছারখার করে দিতে চাই।সুন্দরী বউ রেখে ওই লোকটা গায়ে হাওয়া লাগিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে?কঠিন শাস্তি হাওয়া দরকার।”
____________
ভার্সিটি আজ নতুন রূপে সেজেছে।রংবেরংয়ের ফুলের সমাহার চারিদিকে।আরজু শুভর বাইকে করে ভার্সিটির ভেতরে প্রবেশ করলো।গাঢ় নীল রঙের পাঞ্জাবিতে শুভকে দারুন লাগছে।আজ কত মেয়ে যে ক্রাশ খাবে তার ঠিক নেই।শুভকে আরজু কখনোই অন্য নজরে দেখেনি।শুভ তার বেস্ট বেস্ট বেস্ট ফ্রেন্ড।এতটাই বেস্ট যে, কোনো বিপদে চোখ বন্ধ করে সে শুভকে সবার আগে মনে করে।শুভ তার জীবনের প্রথম বন্ধু।তাদের বন্ধুত্ব সেই ছোট্টবেলা থেকে।শুভ সেই ছোট থেকেই তাকে সব কিছু থেকে প্রোটেক্ট করে আসছে।কোনোদিন কোনো ছেলে তাকে ইফটিজিং করার সাহস পায়নি মূলত শুভর কারণে।শুভ তাকে ছায়ার মতো আগলে রেখেছে সবসময়।ছেলেটা তার জীবনে না থাকলে হয়তো জীবন এতটা উচ্ছ্বাসিত আনন্দপুর্ণ হতো না।
ভার্সিটিতে ঢুকতেই আরজু আর শুভ দেখা পেলো ফুয়াদের।ফুয়াদকে ঘিরে রেখেছে একদল মেয়েরা।ফুয়াদ বেশ ফুরফুরে মেজাজে তাদের সাথে সেলফি তুলছে। গারো নীল পাঞ্জাবিতে ভীষণ হ্যান্ডসাম লাগছে ফুয়াদকে।ফুয়াদের চার্মিং নেচারের জন্যই মেয়েরা তার প্রতি আকৃষ্ট হয়।
তাদের দেখে ফুয়াদ এগিয়ে এসে মিষ্টি হাসলো।শুভ বললো
-“বাহ….!একদম মেয়েদের লাইন লাগিয়ে দিয়েছিস।”
ফুয়াদ পাঞ্জাবীর কলার নাড়তে নাড়তে বললো
-“উফফ..!!!কিযে গরম লাগছে!চারিদিকে সুন্দরী রমণীদের বিচরণে ওয়েদার একদম হট হয়ে পড়েছে।ইয়া আল্লাহ!আরজু তোকেও দেখি হট লাগতেছে।শুভ তোর পিঠ পুড়ে যায়নি তো?আগুন সুন্দরীকে পেছনে বসিয়ে নিয়ে এসেছিস।দেখি দেখি।”
শুভ মুচকি হেসে বিড়বিড় করে বললো
-“দোস্ত আমার পিঠ পুড়েনি।পুড়েছে অন্তর।এই রমণী আমার কোমল হৃদয়কে কয়লা করে দিয়েছে তার রূপের আগুনে।”
কিন্তু মুখে বললো
-“এই বেকুবকে কোন দিক দিয়ে হট লাগলো তোর?আমি ছোটবেলা থেকেই দেখছি।এমন বেকুবই তো লাগে।”
আরজু চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে ক্ষিপ্ত হয়ে হাতের ছোট ব্যাগটা দিয়ে শুভর মাথায় মারলো।আর চিবিয়ে চিবিয়ে বললো
-“আমি বেকুব?তোর আমার সাহস সম্পর্কে কোনো আইডিয়া আছে?কয়দিন আগেও আমি কি কান্ড ঘটিয়েছি জানিস?”
আরো কিছু বলতে যেয়েও নিজেকে সামলে নিলো আরজু।শুভ মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে চোখ মুখ কুচকে বললো
-“তোর আর সাহস?যখনই সাহস দেখিয়েছিস তখনই কোনো না কোনো অঘটন বা ঝামেলা পাকিয়েছিস।”
আরজু মনে মনে ভাবলো “শুভ সত্যি বলেছে।ঝামেলা তো একটা পাকিয়েছেই।আল্লাহ জানে কি হবে!”
ফুয়াদ বললো
-“আজকের দিনে অন্তত ঝগড়া করিস না।আমরা এখন সিনিওর।বাচ্চারা দেখলে কি ভাববে?”
তখনই রিমি আসলো।রিমিকে দেখেই ফুয়াদ দুষ্ট হেসে বললো
-“ও মা!সব সাদা পরী গুলো কি আকাশ থেকে সোজা আমাদের ভার্সিটিতেই নেমেছে নাকি?”
রিমি লাজুক হাসলো।শুভ তাকালো রিমির দিকে।সাদা শাড়িতে ভীষণ অন্যরকম লাগছে রিমিকে।অন্যরকম লাগার কারণ বুঝতে পারলো।রিমি আজ চশমা পড়েনি।সম্ভবত লেন্স ইউজ করেছে।শুভকে পর্যবেক্ষণ করে বললো
-“তোকে সাদা শাড়িতে ভীষণ মিষ্টি লাগছে।তবে চশমা পড়লে তোকে বেশি কিউট লাগে।একদম কিউটি পাই লাগে।”
রিমি ভীষণ লজ্জা পেলো।শুভ দেখলো রিমির শাড়ির আঁচলের নিচের অংশ মাটিতে পড়ে আছে।সে আঁচল ধরে রিমির হাতে গুজে দিলো।রিমির শিরদাঁড়া বেয়ে অনুভূতির জোয়ার বয়ে গেলো।শুভর সামান্য কেয়ার রিমির হৃদয়ে আবারও তুমুল ভালোবাসার দোলা দিলো।
ফুয়াদ রিমিকে পর্যবেক্ষণ করছিলো।মেয়েটার চোখে মুখে লজ্জার আভা ফুটে উঠেছে।রিমির মনের অবস্থা বুঝতে পারলো ফুয়াদ।মেয়েটা শুভকে মন দিয়ে বসে আছে।অথচ এতদিনে ফুয়াদ এটা আচ্ করতে পারেনি।সেদিন ড্রাংক অবস্থায় না বললে হয়তো সে জানতেই পারতো না।রিমি আসলেই ইন্ট্রোভার্ট টাইপের মেয়ে।তাদের সাথে মিশে অনেকটা বদলেছে।কিন্তু মেয়েটার মনে কি চলে সেটা আজও কাউকেই বুঝতে দেয়না।
ফুয়াদ দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো।সত্যিটা জানলে মেয়েটা ভীষণ কষ্ট পাবে।নিজেকে সামলাতে পারবে তো?হাজারো চিন্তা তার মাথায় ঘুরতে লাগলো।
*********
ভার্সিটির গেটে জারার গাড়ি থামলো।অনেকটা লেট হয়ে গেছে।আরজু কল করে অলরেডি তাকে বেশ কয়েকটা গালি দিয়েছে।জারা দ্রুত গাড়ি থেকে নামলো।ফলে তার শাড়ির কুচি গুলো এলোমেলো হয়ে গেলো।জারা বেশ বিরক্ত হলো।দিনটাই খারাপ।সব গরমিল হচ্ছে।জারা নিচু হয়ে ঠিক করার চেষ্টা করলো কিন্তু পারলো না।বরং আরো লন্ডভন্ড করে ফেলেছে।মেজাজ খারাপ হলো তার।বিরক্তিতে মুখ দিয়ে চ জাতীয় শব্দ বেরিয়ে এলো।হঠাৎ কারো উপস্থিতি টের পেয়ে জারা সামনে তাকিয়ে দেখলো কেউ তার কুচি সযত্নে গুছিয়ে দিচ্ছে।জারা অবাক হলো।মানুষটি আর কেউ না জাহিদ।কালো পাঞ্জাবিতে জাহিদকে দেখে কয়েক মুহুর্তের জন্য জারার নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসলো।জারা নিজেকে ধাতস্থ করে কয়েক কদম পিছিয়ে গেলো।অবাক হয়ে বললো
-“এই ছেলে কি করছো তুমি?”
-“আপনার শাড়ির কুচি ঠিক করে দিচ্ছি।এদিকে আসুন।”
জাহিদের কথায় জারা কোথাও অধিকারবোধ দেখতে পেলো।কিন্তু সে তাকে কোনো অধিকার দেয়নি?তবে এই ছেলে এতটা সাবলীল ভাবে কি করে এই কথা বলছে?জাহিদ আবার বললো
-“কি হলো আসুন।”
-“অসভ্য।আমি বলেছি ঠিক করে দিতে? অনধিকার চর্চ আমার ভীষণ অপছন্দ।”
-“তাহলে অধিকার দিলেই পারেন?”
-“তোমার মাথা ঠিক আছে?”
জাহিদ সাবলীল ভাবেই বললো
-“একটু আগেও ঠিক ছিলো।কিন্তু একটা সাদা পরীকে দেখার পর থেকে আউলা ঝাউলা হয়ে গেছে।”
জারা হতবম্ব হয়ে তাকিয়ে রইল।জাহিদ এবার বিরক্ত হয়ে শক্ত গলায় বললো
-“আপনি সামনে আসবেন নাকি এক টানে কুচি খুলে ফেলবো?”
জারা আঁতকে উঠল।কি সাংঘাতিক কথা বার্তা।জারা কিছুটা ভয় পেয়ে গেলো।এই পাগল ছেলের দ্বারা সব সম্ভব।জারা গুটি গুটি পায়ে সামনে আসলো।জাহিদ সযত্নে কুচি ঠিক করে দিলো।আর বললো
-“বিয়ের পর আপনি সব সময় শাড়ি পড়বেন। শাড়িতে আপনাকে মারাত্মক লাগে।”
জারা স্তব্ধ হয়ে গেলো।আর কিছুই বলার সাহস পেলো না। দ্রুত ভার্সিটির ভেতরে চলে গেল।জাহিদ জারার দিকে তাকিয়ে মিষ্টি হাসলো।এই মেয়েটা লজ্জাও পায় তার জানা ছিল না।
********
অডিটোরিয়ামের পাশের রুমে বসে আরজু নিজেকে গুছিয়ে নিলো।একটু পরই অনুষ্ঠান শুরু হবে।প্রধান অতিথির অপেক্ষা মাত্র।সাবিহা পাশে মন খারাপ করে বসে আছে।মিষ্টি মুখটায় এই ঘন কালো মেঘ মোটেও ভালো লাগছে না আরজুর।তাই দুষ্টুমি করে বললো
-“আজ তোর গাধা তার গাধিকে দেখলে তব্দা খেয়ে যাবে।”
সাবিহা কিছুটা লজ্জা পেলো।আরজু বললো
-“কল করেছিলাম তোর গাধাকে।রাস্তায় আছে।সো মুখটা বাংলার পাঁচ করে রাখিস না।”
সেই সময়েই জারা রুমে প্রবেশ করলো। জোরে নিঃশ্বাস ফেললো।আরজু জারাকে দেখে বললো
-“এতক্ষনে আসার সময় হলো তোর? কীরে ঠিক আছিস?”
-“দোস্ত আমি ঠিক নাই।ওই বাচ্চা ছেলে সাংঘাতিক কথাবার্তা বলে আমার মাথা খারাপ করে ফেলছে।”
আরজু মুচকি হেসে বললো
-“ওই ছেলেটাকে ভালই লাগে।তোর সাথে হেব্বি মানাবে।বাচ্চা ছেলেকে দুলাভাই ডাকবো ভাবতেই ভালো লাগছে।”
আরজুর কথায় সাবিহা মুচকি হাসলো।জারা রেগে বললো
-“মজা নিচ্ছিস?যা তোর সাথে কথা নেই।”
আরজু হেসে বললো
-“আরে রাগ করিসনা।তোকে ভীষণ কিউট লাগছে।আমাদের সাদা জামদানি পড়ার ডিসিশন একদম জোস ছিলো।”
জারা মুচকি হাসলো।আরজুর জন্য একটা দারুন সারপ্রাইজ আছে।আজ মেয়েটা ভীষণ খুশি হয়ে যাবে।
একটু পর স্যার এসে আরজু,জারা সহ আরো কয়জনকে স্টেজে দার করালো।অতিথিদের অভ্যর্থনা জানানোর জন্য।সাবিহা আর রিমি এসবে মোটেও আগ্রহী না।তাই তারা গ্যালারিতে ফুয়াদের পাশে বসলো।হঠাৎ স্যারের মুখে প্রধান অতিথির নাম শুনে আরজু স্তব্ধ হয়ে গেলো।তার হাত পা অসম্ভব ভাবে কাপতে লাগলো।দূরে কেউ একজন স্টেজের দিকে এগিয়ে আসছে। শুভ্র রঙের পাঞ্জাবি পরা মানুষটি দৃষ্টির সামনে আসতেই আরজুর বুক ধক ধক করতে লাগলো।
জারা আরজুর দিকে তাকিয়ে মুচকি মুচকি হাসছে।আরজুর রিয়াকশন দেখার মত ছিলো।ফর্সা মুখ স্ট্রবেরির মতো লালচে হয়ে পড়েছে।জারা আরজুর কাধে হাত রেখে ফিসফিসিয়ে বললো
-“মুখ বন্ধ কর মাছি ঢুকে যাবে।”
আরজু সামনের দিকে তাকিয়েই বললো
-“দোস্ত তুই আগে থেকেই জানতি?”
-“না সকালে জেনেছি।ভাবলাম তোকে সারপ্রাইজ দেই।তবে তোর অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে সারপ্রাইজ না শকে চলে গেছিস।”
আরজু আর কিছুই বললো না।হঠাৎ নাহিদের সাথে দৃষ্টি মিলিত হলেই সবসময়ের মতো নাহিদ দৃষ্টি সরিয়ে নিলো।আরজুর কোমল মনে তীব্র অভিমান জমা হলো।তার দিকে কি ফিরেও তাকানো যায়না?এতটাই বিদঘুটে লাগছে তাকে?মোটেও না।আরজু জানে তাকে সুন্দর লাগছে।তবে এই সৌন্দর্য ওই মানুষটিকে আকৃষ্ট কেনো করতে পড়ছে না?নাকি নেতা সাহেবের চোখের পাওয়ারে সমস্যা আছে।তার বর তো ভিড়ের মাঝে বউকে চিনবেই না।না তাকে ইমারজেন্সি ডক্টর দেখানো প্রয়োজন।নাহলে এতদিন পর বউকে দেখে কোন লোক নজর সরিয়ে নেয়?
নাহিদ স্টেজে উঠতেই এক এক করে সকলে ফুল দিয়ে অভ্যর্থনা জানায়।আরজুর সামনে আসতেই নাহিদ আরজুর চোখের দিকে তাকাল।আরজু যেনো সেই দৃষ্টিতেই ধ্বংস হয়ে গেলো।সে ফ্যাল ফ্যাল করে নাহিদের দিকে তাকিয়ে রইল।জারা আরজুর কনুইতে চিমটি কাটতেই আরজুর হুস ফিরলো।হাতে থাকা ফুলের তোরা এগিয়ে দিলো।নাহিদ ওষ্ঠ জোড়া কিঞ্চিৎ প্রসারিত করে আরজুর হাত থেকে ফুল নিতে যেয়ে আরজুর হাত ছুঁয়ে দিলো।আরজু আঁতকে উঠলো। শিরধারা বেয়ে শীতল রক্তধারা বয়ে যেতে লাগলো।নাহিদ ফুল নিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে গেলো।আরজু তখনও হতবম্ব হয়ে সেখানেই দাড়িয়ে রইলো। সামান্য স্পর্শ আরজুর কাছে বিদ্যুতের শক মনে হলো।না এই লোক তাকে ধ্বংস করেই দম নিবে।
_____________
রামিম ভার্সিটিতে পৌঁছাতে পৌঁছাতে অনুষ্ঠান শুরু হয়ে গেছে।অডিটোরিয়াম পৌঁছে দেখলো মানুষের ভিড়। দ্রুত গতিতে স্টেজ এর কাছে আসতেই তার পা ধীরে ধীরে স্থির হতে চললো।সাবিহা কিছু মেয়েকে ব্যাক স্টেজে সোজা লাইন করে দার করাচ্ছে। রামিমের চোখ থমকে গেলো সাবিহার দিকে। শুভ্র রঙের শাড়িতে খোপা করে বেলি ফুলের মালা জড়িয়ে রেখেছে।ঠোটে রক্ত জবার মতো রং একেছে।
রামিমের একটা হাত বুকের বা পাশে চলে গেলো।ধীরে ধীরে বুকে ঘষতে লাগলো।আজ এমন মারাত্মক কিছু দেখবে জানলে ভার্সিটিতেই আসতো না।অন্তর জ্বালিয়ে দিচ্ছে।হঠাৎ রামিমের অক্ষিপ্ললব স্থির হলো সাবিহার কোমল, মেদহীন উদরের দিকে।মেয়েটার কোনো কমনসেন্স নেই। শাড়ি সামলাতে না জানলে পড়ে কেনো? রামিমের মেজাজ খারাপ হলো।দ্রুত সাবিহার পেছনে দাড়িয়ে বললো
-“সাবিহা !”
সাবিহা চমকে পিছন ফিরে তাকালো।পেছনে রামিমকে দেখে তার মুখে প্রশান্তির হাসি ফুটে উঠল।রামিম সেই হাসিতে অস্থির হলো।মারাত্মক হাসি।রামিম শক্ত গলায় ধমকে বললো
-“ঐদিকে চল।”
সাবিহা ব্রু যুগল কুচকে ফেললো।তাকে কোনো রকম কমপ্লিমেন্ট না দিয়ে ধমক দিলো?ওই দিকে কেনো যেতে বলছে?সাবিহা অভিমানী সুরে বললো
-“ওই দিকে কেনো যাবো?”
রামিম আশেপাশে তাকালো।কেউ তার প্রিয়তমাকে দেখছে কিনা পরখ করে নিলো।রামিম চিবিয়ে চিবিয়ে বললো
-“কাজ আছে চল।”
-“যাবনা না।”
-“মেজাজ খারাপ করিস না।”
-“তুই আর তোর মেজাজ দুইটাই ফালতু।”
-“একটা থাপ্পর খাবি।”
-“ওই দিকে গেলে কি চুমু খাবি নাকি?”
রামিম দাতে দাঁত চেপে নিজের রাগ কন্ট্রোল করতে চাইলো।কিন্তু পারলো কই?সাবিহার উদরের উনুক্ত অংশে খামচে ধরলো।সাবিহা ব্যাথায় কুকিয়ে উঠলো।রামিম ক্ষিপ্ত হয়ে বললো
-“এই ব্যাথা মনে থাকলে আর কোনোদিন এই জায়গাটুকু ঢেকে রাখার কথা ভুলবি না।”
রামিম সেখান থেকে চলে গেলো।সাবিহা পেটে হাত দিয়ে দাড়িয়ে রইলো।ভীষণ জ্বলছে।সাবিহার হৃদয়ে একরাশ লজ্জা আর ভালোলাগা ঘিরে ধরেছে।
************
কিছুক্ষণ হলো অনুষ্ঠান শুরু হয়েছে।আরজু স্টেজের নিচে দাঁড়িয়ে গেলারিতে বসা নাহিদের দিকে এক নজরে তাকিয়ে রইলো।নাহিদ তখন স্টেজে চলা প্রোগ্রামের দিকে মনোযোগ সহকারে তাকিয়ে রয়েছে।আরজু মুচকি হাসলো।আর দুর থেকে ফ্লাইং কিস ছুড়ে বিরবির করে বললো
-“ইসস..!আমার বরটা কি হট!আজ একদম ফিরোজ খানের মতো লাগছে।না তার চাইতেও বেশি হট লাগছে।”
জারা পেছন থেকে আরজুর কান্ড দেখছিলো।আরজু নাহিদের দিকে ফ্লাইং কিস ছুড়ে দিচ্ছে দেখে হেসে দিলো।আরজুর কানের কাছে এসে বললো
-“ব্যাটাকে আর নজর লাগাস না। এমনিতেই তোর বদ নজরে আটকে পড়েছে। তোর যন্ত্রণায় না জানি আবার এ ব্যাটা বউ হারা হয়।”
আরজু নিচের ঠোঁট কামড়ে মনে মনে ভাবলো
-“আমিই তো বউ।আর এই দুর্লভ মানুষটিকে হারানোর প্রশ্নই উঠেনা।একে আমি আমার শাড়ীর আঁচলে বেধে রাখবো।কিন্তু যেই গুমড় মুখো।মানুষটার সামনে গেলেই আমার দম বন্ধ হয়ে আসে।”
অনুষ্ঠানে কিছু সময়ের জন্য বিরতি দেওয়া হলো।বিরতির পর আরজুর পারফরমেন্স।আরজু কিছুটা নার্ভাস।নাহিদের সামনে তার সব গুলিয়ে যায়।নাচের স্টেপ অলরেডি সে ভুলে বসে আছে।বরের সামনে না জানি নাক কাটা যায়।শুভ একটু আগে এক বোতল পানি দিয়ে গেলো।আরজুকে টেনশন করতে মানা করলো।নাচ একদম ফাটাফাটি হবে বলে আশ্বাস দিলো।তবুও আরজু নার্ভাস।
কিছু সময় পর জারা আসলো।আরজুর হাত ধরে রেস্ট রুমের দিকে নিয়ে গেল।আরজু বিরক্ত হয়ে বললো
-“এখানে টেনে এনেছিস কেনো?”
জারা পাশের রুমের দিকে ইশারা করে বললো
-“ওই রুমে তোর নেতা সাহেব আছে।”
আরজুর চোখ চকচক করে উঠলো।জারা গাল চুলকে বললো
-“তবে সমস্যা হচ্ছে ওই গার্ড গুলো।কাউকে রুমে এলাউ করছেনা।ঝাঁকে ঝাঁকে মেয়েরা এসে ফিরে গেছে।ওই গার্ডদের টপকাতে পারলে নেতা সাহেবের দেখা পাবি।”
আরজু কিছুক্ষণ সেই রুমের দিকে তাকালো।ওই ভন্ড নেতার মুখোমুখী তো হতেই হবে।চুমু খেয়ে পালায়,বিয়ে করে পালায়?এতো পালাই পালাই করে কেনো?একে তো ছাই দিয়ে ধরবে আরজু।পালানোর কোনো স্কোপ দিবে না।
#মিষ্টি_রোদের_হাতছানি
#israt_jahan_arina
#part_27
সূর্যের উত্তাপ ছড়িয়ে পড়েছে চারিদিকে। আশপাশ কোলাহলপূর্ণ।এই সব থেকে নিজেকে বচিয়ে বেশ কিছুক্ষন যাবত ওয়াশরুমের বেসিনের সামনে দাড়িয়ে আছে শুভ।মুখে কয়েক ঝাপটা পানি দিলো। না!! কিছুতেই শান্তি মিলছে না।নাহিদের দিকে আরজুর সেই মোহনীয় দৃষ্টি শুভর হৃদয়ের ক্ষত সৃষ্টি করেছে।এই দৃষ্টি তো সেই দৃষ্টি,যেই দৃষ্টিতে সে আরজুর দিকে তাকায়।এতদিন আরজুর মনের খবর না বলতেই সে বুঝে ফেলতো।কিন্তু আজকাল আরজুর মনে কি চলছে কিছুই বুঝতে পড়ছে না।আরজুকে কোনোদিন কোনো ছেলের প্রতি এতটা আকৃষ্ট হতে দেখেনি।কিন্তু এই নেতাকে দেখে আরজুর মধ্যে পরিবর্তন এসেছে।আরজু কিছুই তার কাছে লুকাতো না।কিন্তু শুভর মনে হচ্ছে আরজু অনেক কিছুই তার কাছ থেকে লুকাচ্ছে।আরজু কি কোনো ভাবে নাহিদকে ভালোবাসে?না…. !!এমন হলে সে নিশ্চই জানতো।সে জানে আরজু নাহিদের ব্যাক্তিত্বের আকৃষ্ট হয়েছে।তবে ভালো লাগা আর ভালোবাসার মাঝে বিস্তর ফারাক।আরজু কি তবে ভালোলাগার পথ পাড়ি দিয়ে ভালোবাসায় পৌঁছে গেছে?শুভর গলা শুকিয়ে আসলো।প্রচন্ড রকম ভয় তার মনে ঝেঁকে বসলো।আরজুকে হারিয়ে ফেলার ভয়।
ফুয়াদ দরজায় হেলান দিয়ে দাড়িয়ে শুভকে দেখছে।শুভর মনে কি চলছে সেটা বুঝতে পারছে।আজ ভার্সিটিতে নাহিদকে দেখে সে নিজেও অবাক হয়েছে।মেয়রের আসার বিষয়টি সবার জন্যই সারপ্রাইজ ছিলো।তবে নাহিদ নামক মানুষটি শুভর কাছে আতঙ্ক।নিজের ভালোবাসে মানুষটি অন্য কারো উপর ক্রাশ খেয়ে বসে থাকলে এমন আতঙ্ক সৃষ্টি হওয়াই স্বাভাবিক।
ফুয়াদ স্থির হয়ে শুভকে বললো
-“তুই শালা এখানে দাড়িয়ে রূপচর্চা করছিস?ওই দিকে তোকে খুঁজে হয়রান আমি।”
শুভ পেছন ফিরে ফুয়াদের দিকে তাকিয়ে মলিন হাসির রেখা মুখে টেনে বললো
-“এইতো আসছি।”
-“তোর পাগলীর পারফরমেন্স শুরু হবে একটু পর।জলদি চল।”
-“আসছি।”
-“আরজুকে নিয়ে চিন্তা করছিস?নাহিদ স্যারকে নিয়ে ইনসিকিউর ফিল করার দরকার নেই।আমরা জানি আরজু নাহিদ স্যারকে পছন্দ করে।তবে আমার মনে হয়না সেটা ভালোবাসা।তাছাড়া নাহিদ স্যারের অ্যাটিটিউড দেখেছিস?আলবাত মানতে হবে আরজু আগুন সুন্দরী।কিন্তু আরজুর দিকে তিনি ফিরেও তাকায়নি।যতই হোক এই ধরনের মানুষ গুলো স্ট্যাটাস মেইনটেন করে।তাই হয়তো আরজুর প্রতি তার আগ্রহ নেই।আর উনার এই বিষয় গুলো আরজুর মনে আবেগ সৃষ্টি করেছে।জানিস তো সুন্দরী মেয়েরা অ্যাটেনশন সিকার।সবার কাছে অ্যাটেনশন পাওয়া মেয়েটি হঠাৎ করেই তার কাছ থেকে অ্যাটেনশন না পাওয়ায় মনে দাগ কেটেছে।তাই ক্রাশ খেয়ে বসে আছে।”
শুভ প্যান্টের পকেটে এক হাত রেখে অন্য হাতে সামনের লেপটে যাওয়া চুল পেছনে ঠেলে বললো
-“আরজু মোটেও অ্যাটেনশন সিকার না।ওকে খুব ভালো করেই চিনি।কিছু তো একটা ওর ভেতরে চলছে।কিন্তু আমাকে বলছে না।আরজু কি আমার কাছ থেকে দূরে সরে যাচ্ছে?”
-“মোটেও না।আমরা সবাই জানি আরজুর তোর প্রতি কেমন টান।সেবার বাইক এক্সিডেন্ট করেছিস শুনে মেয়েটা উন্মাদের মতো হসপিটালে ছুটে এসেছে।সে কি কান্না তার।তোকে কিছুটা সুস্থ দেখে তবেই কান্না থামিয়েছে।”
শুভ মুচকি হাসলো।বললো
-“আরজু সব সময় ইমোশনাল।কাছের মানুষগুলো সামান্য কিছু হলেই সে অস্থির হয়ে পড়ে।আংকেল আন্টিকে হারানোর পর থেকেই মেয়েটা বাকি সবাইকে হারানোর ভয় পায়।”
ফুয়াদ দেখলো আরজুর কথা আসলেই শুভর মুখে আলাদা চমক চলে আসে।ভালোবাসার অনুভূতি গুলো বুঝি এমন মিষ্টি হয়?
************
আরজু দরজার সামনে এসে দাড়ালো।তিনজন গার্ড সেখাণে দাড়িয়ে আছে।আরজু মুচকি হেসে বললো
-“আমি মেয়র সাহেবের সাথে দেখা করতে চাই।”
শক্তপোক্ত দেহের ছেলেটি হাতের আর্ম টি আরো শক্ত করে ধরে রোবটের নেয় বললো
-“এখন দেখা করা সম্ভব না। স্যার রেস্ট নিচ্ছেন।”
আরজু বিরক্ত হলো।বললো
-“আপনার স্যারকে বলুন আরজু এসেছে।”
-“আপনি বুঝতে পারছেন না কি বলেছি? এখন দেখা করা সম্ভব না।”
-“আপনি তাকে আমার নাম বলুন।”
ছেলেটি বেশ বিরক্ত হয়ে বললো
-“আপনার মত এমন অনেক মেয়েরাই এসেছে।নিজের নাম না শুধু বাপ দাদাদের নামও বলেছে।কিন্তু কাজ হয়নি।আপনি আসতে পারেন।”
আরজুর মেজাজ খারাপ হচ্ছে।নিজের বরের সাথে দেখা করতে এতো কৈফিয়ত দিতে হবে?মন চাইছে সামনের লোকটির হাতের বন্দুক দিয়ে নেতা সাহেবের বুক ঝাঁঝরা করে দিতে।আরজু ক্ষিপ্ত গলায় বললো
-“আপনি জানেন আমি কে?নাহিদ বেবিকে বলে আপনার চাকরি আমি নট করে দিবো।সরুন?”
-“আরে আপনি তো বেশি কথা বলেন।সুন্দরী মেয়েদের এক সমস্যা।তারা ভাবে তাদের রূপে সবাই মজে যাবে।আমাদের স্যার এমন মানুষ না। আপনার মত এমন কত সুন্দরী এলো গেলো কিন্তু পাত্তা পেলো না।”
রাগে আরজুর গায় আগুন ধরে গেল।সে কি আর পাঁচটা মেয়ের মত নাকি? নেহাৎ তার জামাই বিয়ের কথা বলতে মানা করেছে।নাহলে সে মাইক দিয়ে চেঁচিয়ে সব মেয়েদের সাবধান করে দিত।তার জামাইয়ের ত্রিসীমানায় মেয়েদের যাওয়া নিষিদ্ধ।আরজু আর লোকটি যখন তর্কে লিপ্ত তখন ভেতরের দরজা খুলে কেউ বেরিয়ে আসলো।লোকটিকে আরজু চেনে।নাহিদের অ্যাসিস্টেন্ট সিফাত।বেরিয়েই গার্ডকে উদ্দেশ্য করে বললো
-“কি সমস্যা?”
-“এই মেয়ে স্যারের সাথে দেখা করতে চায়।আমি মানা করায় তর্ক জুড়ে দিয়েছে।”
সিফাত আরজুর দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বললো
-“আপনি ভেতরে যান ম্যাম।”
আরজু বেশ অবাক হলো।ম্যাম!এই ছাগল এতো সম্মান দেখাচ্ছে কেনো?নাকি তাকে নেতা সাহেব পাঠিয়েছে?কাউকে ভেতরে প্রবেশ করতে দিচ্ছে না।কিন্তু তাকে দিলো কেনো।এই সিফাত কি জানে সে তার স্যারের বউ?আরজু ভাবনা বাত দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করলো।ভেতরে যাবার আগে সেই গার্ডটির দিকে তার রাগী দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো।যার মানে তোর খবর আছে।
আরজু ভেতরে প্রবেশ করতেই দৃষ্টি পড়লো কাঙ্ক্ষিত মানুষটির দিকে।চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে নিকোটিনের ধোঁয়া উড়াচ্ছে আর বাইরের সৌন্দর্য উপভোগ করছে।সবচাইতে সুন্দর জিনিস এই জায়গায় রেখে এই লোক বাইরে কি দেখে?তবে আরজুর বুক কাপতে লাগলো।এতক্ষণের জমানো সাহস ফুস করে সব বেরিয়ে গেলো।অথচ তার জামাই কি নির্বিকার ভাবে ধোঁয়া উড়াচ্ছে।আরজুকে দেখে নাহিদ আরেকটা টান দিয়ে হাতের সিগারেট নিচে ফেলে দিল।আরজু দেখলো ধোঁয়া উড়ানো নাহিদকে ও তার ভালো লাগছে।ভীষণ ভালোলাগছে।
নাহিদ চেয়ার ছেড়ে উঠে আরজুর দিকে আসতে লাগলো।আরজুর হৃদস্পন্দন চলছে ঊর্ধ্ব গতিতে।বুকের ডিপ ডিপ শব্দ এই নিস্তব পরিবেশে আরো তীব্র শোনাচ্ছে।নাহিদ আরজুর সম্মুখে দাড়িয়ে বললো
-“কেমন আছো?”
শব্দটিতে কি ছিল আরজুর জানা নেই।তবে তার সারা শরীর শিউরে উঠলো।বাহ!! বিয়ে করতেই তুমি করে ডাকা শুরু করেছে?কিন্তু বউয়ের খোঁজ খবর নেওয়া জরুরি মনে করেনি।আরজুর মনে চাপা অভিমান জমা হলো।এতদিন পর লোকটি জিজ্ঞেস করছে কেমন আছে?
আরজুর অভিমান নাহিদ বুঝতে পারলো কিনা বুঝা গেলো না।আরজু অভিমানী সুরে বললো
-“ভালো।খুব ভালো আছি।”
-“কিছু বলতে এসেছো?বলার থাকলে জলদি বলো।সময় জাস্ট দুই মিনিট।”
বলেই নাহিদ হাত ঘড়িতে সময় দেখে নিল।আরজু অবাক হলো। এ কেমন লোক?এতদিন পর বউকে দেখেছে, কোথায় জড়িয়ে ধরে চুমু খাবে তা না করে ব্যাস্ততা দেখাচ্ছে।রাগে আরজুর গা জ্বলে যাচ্ছে।আর এক মিনিটও সে এই জায়গায় দারাবে না।তার ভালোবাসা , জামাই সব গোল্লায় যাক।আরজু মাথা নিচুকরে দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বললো
-“না কিছু বলতে চাই না।আমার কিছুই বলার নেই।”
বলেই আরজু চলে যেতে চাইলে নাহিদ আরজুর হাত ধরে দার করালো।নাহিদের স্পর্শের আরজুর সারা শরীরে কম্পনের সৃষ্টি হলো।আরজু অবাক হয়ে নাহিদের দিকে ফিরে তাকালো।নাহিদের স্নিগ্ধ মুখখানা দেখে নিজেকে বেসামাল লাগছে। নাহিদ ওষ্ঠ জোড়া প্রসারিত করে সামান্য হাসলো।আরজুর দিকে ঝুঁকে বললো
-“আমার বলার আছে।এইযে চারিদিকে যে শুভ্রতা ছড়িয়ে বেড়াচ্ছো তাতে কত পুরুষ আহত হচ্ছে জানো?”
আরজু বিস্মিত হলো।নাহিদ এই কথা বলছে।আরজু কাপা কাপা গলায় বললো
-“যেই পুরুষের আহত হবার কথা সে তো হচ্ছে না।”
নাহিদ মুচকি হাসলো।ফিচেল সরে বললো
-“এই আঘাত হৃদয়ের গভীরে লাগে।বাইরে থেকে দেখা সম্ভব না। তবে আমাকে আঘাত করা এতো সহজ হবে না।”
আরজু এবার বেশ লজ্জা পেলো।তবে লজ্জা পেলে চলবে না।এই লোক চরম ঘাড় তেড়া। এর সামনে অভিমান করে লাভ নেই। আরজু আমতা আমতা করে বললো
-“আপনার ফোন নম্বর দিন।”
নাহিদ ব্রু জোড়া কুচকে বললো
-“কেনো?”
আরজুর রাগ হলো।যেখানে নিজে থেকে নম্বর দেওয়ার কথা সেখানে আবার প্রশ্ন করছে।আরজু রাগ দমন করে বললো
-“নাহলে আপনার সাথে যোগাযোগ করবো কি করে?”
-“যোগাযোগের প্রয়োজন আছে?”
আরজু দাতে দাঁত চেপে বললো
-“নেই বলছেন?আমি আপনার কি হই ভুলে গেছেন?”
নাহিদ কপালের সামনে আসা চুল গুলো পেছনে ঠেলে বললো
-“তোমাকে ভোলা অসম্ভব।ব্লাকমেইল করা বউ তুমি আমার।জীবনে প্রথম এমন ব্ল্যাকমেইলিং এর শিকার হয়েছি।”
আরজু মাথা নিচু করে নিলো।এই ভাবে বিয়ে করার কোনো প্ল্যান তার ছিলো না।কিন্তু সেই মুহূর্তটা মাথাই কাজ করছিলো না।তবে সব কথার শেষ কথা এই বদমাশ লোকটা তার স্বামী।আরজু গলা পরিষ্কার করে বললো
-“নম্বর দিন নাহলে আপনার কার্যালয়ে যেয়ে নম্বর নিবো।”
-“বাহ!! তুমি তো ভালই থ্রেট করতে পারো। আই লাইক ইট। তবে নম্বর দিয়ে কি করবে?আগে যেই ভাবে যোগাযোগ করতে সেই ভাবেই করবে?”
আরজু চমকালো।সে কবে নাহিদের সাথে যোগাযোগ করেছে?আরজু প্রশ্ন করলো
-“আগে কি ভাবে করতাম?”
নাহিদ এবার আরজুর অনেকটা কাছে চলে আসলো।আরজুর নিঃশ্বাসের গতি বাড়তে লাগলো।নাহিদ আরজুর এতটাই কাছে যে নাহিদের নিঃশ্বাস আরজুর কপালে আঁচড়ে পড়ছে।আরজুর গায়ের লোমকূপ সংকুচিত হতে লাগলো।আরজুর ইচ্ছে করছে নাহিদকে ঝাপটে ধরে তার বুকে মুখ লুকাতে।কিন্তু আরজু নিজেকে সংযত করল।নাহিদ আরজুর কানের কাছে এসে ফিচেল সরে বললো
-“আমার অফিসের রাস্তার অপজিটে চায়ের দোকানে একটা সিসিটিভি ক্যামেরা লাগানো আছে।”
আরজু চোখ বন্ধ করে জিব কাটলো।ইসস!!তার মানে নাহিদ জানে আরজু তাকে চিঠি পাঠাতো?চায়ের দোকানের বাচ্চা ছেলেটির মাধ্যেমে সে চিঠি পাঠাতো।কারণ নাহিদের অফিসের ডাকবাক্স এর সামনে সিসি ক্যামেরা আছে।আরজু নিজেকে রিভিল করতে চায়নি।তাই রাস্তার ওপারের দোকানের ছেলেটিকে দিয়ে পাঠাতো।কিন্তু সেখানেও ক্যামেরা সেট করা সেটা কে জানতো?
আরজুর লজ্জায় মাটির সাথে মিশে যেতে ইচ্ছে করছে।হঠাৎ আরজুর সারা শরীর শিউরে উঠলো।মানুষটি তার কানের কাছে ঠোঁট ছুঁয়ে দিচ্ছে।আরজু আবেশে চোখ বন্ধ করে নিলো। ভালোবাসার মানুষটি এতো কাছে তার।আরজুর সারা শরীর থর থর করে কাঁপতে লাগলো।নাহিদ ফিসফিসিয়ে বললো
-“এমন সাজে আমার সামনে আর কখনো আসবে না। আই ডোন্ট লাইক ইট।”
******************
কিছুক্ষণ বিরতির পর আবার প্রোগ্রাম শুরু হলো।যেহেতু শুভ ওরা সিনিওর তাই ম্যানেজমেন্টের কাজটা তারাই করছে।কে কখন স্টেজে উঠবে সেটাও তারাই দেখছে।রিমি আর জারা স্টেজের পাশে দাড়িয়ে আছে।রিমির হাতে লিস্ট।কে কোন সময় পারফর্ম করবে সেটা লেখা আছে।জারা দাড়িয়ে দাড়িয়ে দাত দিয়ে নখ কামড়াচ্ছে।আরজু নাহিদ স্যারের সাথে এতক্ষণ কি করছে আল্লাহ জানে।যেই পাগল মেয়ে,দেখা গেলো এক্সাইটমেন্টে চুমু চুমু খেয়ে বসে আছে।
জারার কানের কাছে দমকা হাওয়া বয়ে যাওয়ায় সে চমকে উঠে।পাশে ফিরতেই দেখতে পায় জাহিদ তার দিকে তাকিয়ে বত্রিশ দাত বের করে হাসছে।জারা বিরক্ত হয়ে বললো
-“এই ছেলে সমস্যা কি তোমার? আমার পেছনে কেনো পড়ে আছো?”
জাহিদ হেসে ইশারায় কাধের গিটার দেখিয়ে বলে
-“নেক্সট আমার পারফরমেন্স।”
-“তোমার মতো ফালতু ছেলে গান গাইলে অডিটোরিয়ামে একজন লোক ও বসে থাকতে পারবে তো?”
-“আর কেউ না থাকলেও সমস্যা নেই।আপনি থাকলেই চলবে।কারণ গানটা আপনাকে ডেডিকেট করবো।আচ্ছা!!! আপনার কোন বন্ধুবির প্ল্যান ছিল সাদা জামদানি পড়ার?সিনিওর জুনিয়র সব ছেলেদের মাথা খাচ্ছেন আপনারা।দিস ইজ নট ফেয়ার!!”
জারা বিরক্ত হয়ে রিমির দিকে তাকাতেই দেখলো লিস্টের দিকে তাকিয়ে মিটিমিটি হাসছে।শেষে কিনা এই রিমি ফাজিল টাও মজা নিচ্ছে।
জাহিদ হেসে স্টেজের দিকে উঠে পড়ল।না চাইতেও জারার সকল মনোযোগ জাহিদের দিকে।জাহিদ স্টেজে একটা চেয়ারে বসে মাইক সেট করছে।জারা একটা জিনিষ খেয়াল করলো।এতক্ষণ প্রাণোচ্ছল ছেলেটা সামনের দিকে তাকিয়ে চুপসে গেলো।এমন কি হলো?জাহিদের দৃষ্টি অনুসরণ করে সামনে তাকিয়ে দেখলো সামনের সারিতে মেয়র সাহেব বসে আছেন।হয়তো মাত্রই এসে বসেছেন।আর জাহিদ সেদিকে তাকিয়েই মুখ মলিন করে মাথা নত করে নিল।নাহিদ স্যারও গম্ভীর মুখে জাহিদের দিকে কয়েক পলক তাকিয়ে ফোনে মনোযোগ দিলো।জারা বেশ অবাক হলো?
জাহিদ হঠাৎ পাস ফিরে জারার দিকে তাকালো।মুহূর্তেই সেই মলিন মুখে একরাশ আনন্দ ছেয়ে গেলো।জারা কে ছোট করে চোখ মেরে দিলো।জারা তো পুরোই থতমত খেয়ে গেলো।গিরগিটি ও এতো রং বদলায় না যতো জলদি এই ছেলের মুড বদলায়।
জাহিদ গিটারে টুংটাং শব্দ করে সুর তুললো।আর গাইতে লাগলো
তাকে অল্প কাছে ডাকছি
আর আগলে আগলে রাখছি,
তবু অল্পেই হারাচ্ছি আবার।
তাকে ছোঁবো ছোঁবো ভাবছি
আর ছুঁয়েই পালাচ্ছি,
ফের তাকেই ছুঁতে যাচ্ছি আবার।
অভিমান পিছু নাম
তাকে পিছু ফেরাও,
তার কানে না যায় পিছু ডাক আমার
মুখ বুজেই তাকে ডাকছি আবার।
তাকে অল্প কাছে ডাকছি
আর আগলে আগলে রাখছি,
তবু অল্পে হারাচ্ছি আবার।।
জারা যেনো গানের মাঝে হারিয়ে গেলো।এই অসভ্য ছেলে এতো ভালো গান গায় জানা ছিল না।সবার করতালিতে মুখরিত হলো অডিটোরিয়াম।
নাহিদ খেয়াল করেছে জাহিদ গান গাওয়ার সময় বার বার পাশে তাকাচ্ছে।নাহিদ আড়চোখে সে দিকে তাকালো।দেখলো সাদা জামদানি শাড়ি পরা মেয়েটার দিকে তাকিয়ে আছে।নাহিদের কপালে সূক্ষ্ম ও চিন্তার ভাঁজ পড়লো।জাহিদকে অনুসরণ করে আবার পাশের মেয়েটার দিকে তাকাতেই দেখলো আরজু মেয়েটার সাথে কথা বলছে।নাহিদ আরজুর দিক থেকে চোখ সরিয়ে নিলো।চোখ ঝলসে দিচ্ছে মেয়েটা।নাহিদ নিজের মনোযোগ ফোনে রাখার চেষ্টা করছে।
হঠাৎ আরজুর নাম শুনে সামনে তাকালো।আরজু স্টেজের উঠে আসছে। নাহিদের দিকে তাকিয়ে লাজুক হাসলো আরজু।তারপর আসে পাশে শুভকে খুঁজতে লাগলো।স্টেজের পাশে দাড়িয়ে ছিলো শুভ।আরজুকে হাত নাড়িয়ে নিজের উপস্থিতি জানান দিলো।আরজু সস্তির নিঃশ্বাস ফেললো।শুভ ডান হাতের বৃদ্ধঙ্গুল তুলে আরজুকে অল দ্যা বেস্ট জানালো।আরজু মিষ্টি হেসে নাচ শুরু করলো।
মায়াবন বিহারিণী হরিনী,
গহন-স্বপন-সঞ্চারিণী।
কেন তারে ধরিবারে করি পণ অকারণ
মায়াবন বিহারিণী।
থাক্ থাক্ নিজমনে দূরেতে,
আমি শুধু বাঁশরীর সুরেতে ।
থাক্ থাক্ নিজমনে দূরেতে,
আমি শুধু বাঁশরীর সুরেতে
পরশ করিব ওর প্রাণমন অকারণ।
মায়াবন বিহারিণী।
নাহিদ মুগ্ধ চোখে আরজুকে দেখছে।অন্য মেয়েরা নিজেদের সংস্কৃতি ভুলে অনুষ্ঠানে হিন্দি গানে তাল মিলিয়ে নাচে।কিন্তু আরজু অপুরুপ ভাবে রবীন্দ্র সংগীতের তালে নাচলো।আসলেই মনোমুগ্ধকর নাচ।ক্লাসিক ডান্স এতটা ভালো লাগবে নাহিদ ভাবতেই পারেনি।
নাচ শেষ করেই আরজু হাপাতে হাপাতে শুভর দিকে তাকালো।শুভ উজ্জ্বল হেসে ফ্লাইং কিস ছুড়ে মারলো।আরজু মুচকি হেসে আড়চোখে নাহিদের দিকে তাকালো।গম্ভীর লোকটি শান্ত চোখে তার দিকে তাকিয়ে আছে।দুজনের দৃষ্টি মিলিত হতেই নাহিদ বাঁকা হাসলো।আরজু বেশ লজ্জা পেলো।দ্রুত স্টেজ থেকে নেমে গেলো। অডিটোরিয়াম জুড়ে করতালি আর সিটির আওয়াজ আসছে।রূপবতী নারীর মায়াবী নাচ অনেককেই ঘায়েল করলো।জুনিয়র ছেলেরাও হা করে আরজুর দিকে তাকিয়ে ছিল।নাহিদ এবার বিরক্ত হলো।এই মেয়ে ছেলেদের মাথা খারাপ করে রেখেছে।কি দরকার ছিল এতো ভালো নাচার?নাহিদ প্রিন্সিপালের সাথে কথা বলে দ্রুতই বেরিয়ে পড়লো।এই জায়গায় আর কিছুক্ষণ থাকলে অসুস্থ হয়ে যাবার সম্ভবনা আছে।তাছাড়া ঘণ্টা খানেক পরই পার্টি অফিসে মিটিং আছে।নাহিদ ফিরে গেলো আবার তার ব্যাস্ততার জগতে।
#মিষ্টি_রোদের_হাতছানি
#israt_jahan_arina
#part_28
বিকেলের কোচিং শেষ করে অবনি বাসায় ফিরছে।কাধে ব্যাগ ঝুলিয়ে তিড়িং বিড়িং করে হাঁটছে আর গুন গুন করে গান গাইছে।হঠাৎ তার চোখ পড়ে সামনের জামার শোরুমে পরিচিত একটা মুখ।অবনি দাত দিয়ে নখ কাটতে কাটতে কিছু চিন্তা করলো।মুখে দুষ্টুমি হাসি একে দ্রুত শোরুমের ভেতরে ঢুকলো।
নিশান শোরুমে রিমির জন্য কিছু জামা দেখছিলো।সামনেই একমাত্র বোনের জন্মদিন।তাই তাকে কিছু গিফট করতে চায়।অনেকক্ষণ ঘুরেও কোনো জামা পছন্দ করতে পারছে না।নিশান বুঝতে পারলো মেয়েলী বিষয়ে সে ভীষণ কাচা।অনেক খুজে দুইটা ড্রেস তার কোনো রকমে পছন্দ হয়েছে।কাউন্টারে জমা দিতেই বিলের কাগজ দিলো।নিশান বিল দেখে কপাল কুঁচকে বললো
-“এক্সকিউজ মি? আমি দুটি ড্রেস নিয়েছি।আপনি ভুল করে চারটি জামার বিল দিয়েছেন।”
ক্যাশিয়ার মেয়েটি হেসে বললো
-“নো স্যার।আমরা ঠিক করেছি।আপনি দুইটা আনলেন আর আপনার ওয়াইফ দুইটা আগেই সিলেক্ট করে রেখেছেন।”
নিশান অবাক হয়ে বললো
-“আমার ওয়াইফ!!? কি বলছেন আপনি?”
-“জি স্যার ঐতো আপনার ওয়াইফ।”
নিশান পেছনে তাকিয়ে দেখলো অবনি চুইংগাম চিবুতে চিবুতে জামা দেখছে।নিশান অবাক হলো অবনীকে দেখে।বুকের ভেতর কেমন ধুক ধুক করছে।নিশান দীর্ঘশ্বাস ফেলে সামনের মেয়েটিকে বললো
-“এই বাচ্চাকে আমার ওয়াইফ মনে হয়?”
মেয়েটা দ্বিধা দ্বন্দ্বে পড়ে গেলো।আমতা আমতা করে বললো
-“কিন্তু উনি যেই ভাবে কথা বললো তাতে মনে হলো আপনার ওয়াইফ।”
নিশান সেখানে দাড়িয়েই অবনীকে ডাকলো
-“এই পিচ্ছি এইদিকে আসো।”
অবনি চোখ মুখ কুচকে ফেললো।যেনো ভীষণ বিরক্ত সে।প্যান্টের পকেটে এক হাত রেখে চুইংগামে বাবল ফুলিয়ে ধীরে ধীরে নিশানের কাছে আসলো।তার সামনে আসতেই ফুট করে সেই বাবল ফুটে গেলো।নিশান চোখ বন্ধ করে নিজের মেজাজ শান্ত করলো।এই মেয়ে অতি মাত্রায় বেয়াদব।মিনিমাম ম্যানার্স টুকু নেই। তার বোন এমন করলে ঠাপ্রিয়ে দাত ভেঙে ফেলত।নিশান ক্ষিপ্ত গলায় বললো
-“তুমি উনাকে কি বলেছ?”
অবনি ভাবলেশহীন ভাবে চুইংগাম চিবিয়ে বললো
-“বলেছি এই জামা গুলো প্যাক করে দিতে।আপনি আসলে বিল দিবেন।”
-“আমি কেনো দিবো?তুমি কি আমার বউ?”
অবনি বাঁকা চোখে নিশানের দিকে তাকালো। মুচকি হেসে বললো
-“হলে সমস্যা কি?”
নিশান ভরকে গেল।এই মেয়ে সব তালগোল পাকিয়ে দিচ্ছে।মেজাজ ভীষণ খারাপ হচ্ছে।এমন বিচ্ছু মেয়ে সে জীবনে দেখেনি।চিবিয়ে চিবিয়ে বললো
-“তোমার মতো বাচ্চা আমার বউ হবে?ইম্পসিবল!!!!”
অবনি নিশানের দিকে এগিয়ে আসলো।নিশানের মনে হলো তার শক্ত পোক্ত শরীর মাটিতে লুটিয়ে পড়বে।তবুও শক্ত হয়ে দাড়িয়ে রইলো।অবনি কানের কাছে নিচু সরে বললো
-“আবারও আমাকে বাচ্চা বলছেন?সেদিনের কথা ভুলে গেছেন?নাকি আবারও আমার মিষ্টি লিপের স্বাদ নিতে চাইছেন?আপনি চাইলে এই জায়গায় ও দিতে পারি।কিন্তু সমস্যা হলো সিসি ক্যামেরার রেকর্ড হয়ে যাবে।পড়ে দেখা যাবে ইন্টারনেটে ভাইরাল হয়ে গেছে।আমরা দুজন কিন্তু ভালই ফেমাস হয়ে যাবো।”
নিশানের গলা শুকিয়ে আসছে।এই মেয়ে তো ডেঞ্জারাস।দ্রুত অবনির কাছথেকে দূরে সরে দাঁড়ালো।এই মেয়ের এক চুমুতেই তার রাতের ঘুম হারাম।আরেক চুমুতে তার মৃত্যু নিশ্চিত।নিশান কোনো কথা না বলে অবনির নেওয়া ড্রেসের দাম দিয়ে দিলো।ব্যাগ অবনির হাতে দিতেই অবনি বললো
-“ড্রেসগুলো তো আমি আমার জন্য চুস করিনি। দেখছিলাম আপনি কোন ড্রেস চুস করতে পারছিলেন না।এইযে অরেঞ্জ আর ভায়োলেট কালারের ড্রেস এনেছেন এইগুলো জঘন্য।আপনার কালার সেন্স খুবই বাজে।আমার আপুও আপনার মতো একজনকে কমলা রং সাজেস্ট করেছে।ইয়াক!! ছি!!!!! কমলা কোনো কালার হলো?আপনাকে হেল্প করার জন্য এই দুইটা জামা আমি চুজ করে রেখেছি।আসি বায়!! বায়!! টাটা।”
নিশান হতবম্ব হয়ে তাকিয়ে রইল অবনির যাওয়ার দিকে।এই মেয়ে যখনই সামনে আসে টর্নেডো চালিয়ে দেয়।নিশান বুকে হাত দিল।কেমন লাফাচ্ছে।একটা বাচ্চা!!উফ !! সরি বাচ্চা বলা যাবে না।একটা বিচ্ছু মেয়ে তার বুক কাপিয়ে চলে গেলো।
অবনি বাড়ির পথে হাঁটছে আর মিটিমিটি হাসছে।নিশান নামক ব্যাক্তি একদম নিশানা মতো তার হৃদয়ে তীর ছুড়ে মেরেছে।এই রোবট মানবকে তার কবে কখন থেকে ভালো লাগে অবনি জানে না।কিন্তু মানুষটি তার কিশোরী মনে প্রথম প্রেমের বীজ রোপণ করেছে।তবে সমস্যা হলো তাদের মধ্যে বেশ কিছুটা এজ গ্যাপ আছে।তো এ এটা কোনো বিষয় না।এই লোককে সে প্রেমের জালে এমন ফাঁসানো ফাসাবে যে এই লোক কুল কিনারা পাবে না।তারপর আরজু আপুকে বলবে
-“তোমার দ্বারা কিছুই হবেনা আপু।এতো দিনে তুমি এক নেতাকে পটাতে পারলে না।কিন্তু তোমার চার বছরের ছোট হয়ে আমি এক যন্ত্র মানবকে পটিয়ে ফেলেছি।”
তখন আরজু আপুর মুখটা কেমন হবে ভেবেই অবনির হাসি পেলো।সে রাস্তায় খিল খিল করে হাসতে লাগলো।প্রেম জিনিসটা আসলেই অদ্ভুত সুন্দর।
************
অনুষ্ঠানের আয়োজন শেষ করতে করতে প্রায় সন্ধ্যা হয়ে গেছে।বন্ধুমহলের সকলকে আরজু রাতের ডিনার ট্রিট দিচ্ছে।আরজু মূলত নিজের বিয়ের ট্রিট দিচ্ছে।কিন্তু সকলের অগোচরে।জারা বুঝতে পারলো নেতা সাহেবের সাথে দেখা হওয়ার খুশিতে এই পাগলী ট্রিট দিচ্ছে।এই বিষয়টা বাকি সবাইও আন্দাজ করলো।শুভর মনটা ভীষণ রকমের খারাপ।আরজুর মুখের উজ্জ্বলতা তার হৃদয়ে ক্ষত সৃষ্টি করছে।আরজুর মতো মেয়ে কিনা এক নেতাকে দেখে এত প্রাণোচ্ছল হয়ে উঠেছে?লোকটি আরজুকে ঠিক মত চেনে কিনা সন্দেহ।তাহলে আরজুর এতো আগ্রহ কেনো লোকটির প্রতি?অথচ হাজার হাজার ছেলে আরজুকে পাবার সপ্ন দেখে।আরজু তো তাদের জন্য সামান্য আগ্রহ দেখায়নি।তবে এই মেয়রের বেলায় কেনো এমন হচ্ছে?
রামিম আড়চোখে সাবিহার দিকে তাকাচ্ছে।সাবিহা মেনু দেখতে ব্যাস্ত।রামিম চোখ যায় সাবিহার উজ্জ্বল উদরে। অসাবধানতাবশত বেরিয়ে আছে। রামিম খেয়াল করলো সাবিহার উদরে নখের দাগ স্পষ্ট।তখন এই ভাবে রাগ দেখানোটা ঠিক হয়নি।এই ফুলের গায়ে কোনো দাগ মানায়না।মেয়েটা তার সাথে আর একটা কথাও বলেনি।একটু বেশি করে ফেলেছে।
ফুয়াদ হেসে বললো
-“হঠাৎ ট্রিট কেনো দিচ্ছিস?”
আরজু কোল্ড ড্রিংকসে চুমুক দিয়ে বললো
-“খালামণি আমার জন্য ছেলের সন্ধান শুরু করেছে সেই খুশিতে।”
শুভ চমকে তাকালো।বাকি সবাইও বেশ চমকে গেলো।আরজু ভাবলো বিয়ের কথা না বললেও রওশানের সাথে দেখা হওয়ার বিষয়ে বলা যেতেই পারে।কিন্তু সবার রিয়েকশন দেখে মত পাল্টে ফেললো। আরজু শুভর দিকে তাকিয়ে হেসে বললো
-“আরে মজা করছি।এমনি ট্রিট দিচ্ছি।খালামণি লাস্ট কেসে জিতে গেছে।ঐযে রেপ কেসটা ছিলনা ওইটা।ওই অমানুষের সাত বছরের সাজা হয়েছে।যদিও এই অপরাধের জন্য মৃত্যুদণ্ড দেওয়া প্রয়োজন ছিল। যাই হোক।খালামণি সেই খুশিতে আমার পকেট গরম করে দিয়েছে।তাই ভাবলাম তোদের খাইয়ে পকেট হালকা করি।”
শুভ সস্তির নিঃশ্বাস ফেললো।রিমি হেসে বললো
-“খালামণি অতি আদরের তোকে বিগড়ে দিয়েছে।দেখিস তোর জামাই হবে হাড় কিপটে।”
আরজু মনে মনে বির বির করে বললো
-“আমার নেতা সাহেব কিপটে হলেও সমস্যা নেই।তার সাথে আমি কুড়ে ঘরে থাকতেও প্রস্তুত।শুধু ভালোবেসে বুকে জড়িয়ে রাখলেই হবে।”
আরজু মুচকি হেসে বললো
-“সমস্যা নেই।আমি জব করে আমার জামাইকে চালাবো।”
শুভ আরজুর চুলে টান মেরে বলে
-“হয়েছে আর পাকনামি করা লাগবে না। খাবার অর্ডার কর।”
সবাই মিলে আড্ডাবাজি করে যে যার বাসায় ফিরে যায়।আরজু বাসায় পৌঁছে খালুজান কে সোফায় বসে টিভি দেখতে দেখে।আরজুকে দেখেই হেসে বললেন
-” বিউটিফুল লেডি এতক্ষনে আসার সময় হলো? ইউ আর লুকিং সো বিউটিফুল টুডে।”
আরজু জুবায়ের আহমেদের সামনে দাড়িয়ে বললো
-“ঘেমে নেয়ে একাকার অবস্থা আর তুমি বলছো বিউটিফুল লাগছে?”
-“তুই এখনো গ্লো করছিস।একদম সাদা পরী লাগছে।”
আরজু মনে মনে ভাবছে সবাই এতো ভালো কমপ্লিমেন্ট দিচ্ছে।কিন্তু তার জামাই ছাড়া।বলে কিনা সাদা শাড়ি পরে তার সামনে না যেতে।স্টুপিড লোক।
আরজু ফ্রেশ হয়ে রুমে এসে দেখে অবনি তার বিছানায় বসে আছে।আরজুকে দেখেই মিষ্টি হেসে বললো
-“আপু তুমি জোস ডান্স করেছ।একদম ফাটাফাটি।”
-“তুই জানলি কি করে?”
-“আরে শুভ ভাইয়া তোমার নাচের ভিডিও আপলোড করেছে।”
আরজু চোখ কুচকে বললো
-“কুত্তাটা আমার আগে আপলোড করে দিলো। ধ্যাত!!!”
-“তোমার নেতা সাহেব এসেছিলো আগে বলনি তো?”
-“আমি জানতাম নাকি?আমি নিজেই শক খেয়েছি।”
-“ওও!! আম্মুকে বলো না।সে আবার তোমার নেতাকে বেশি একটা পছন্দ করে না।”
-“হুম জানি।খালামণি তাকে অন্য সব নেতাদের মত ভেবে ভুল করছে।আমার জামাইতো তেমন না।”
অবনি হা করে আরজুর দিকে তাকিয়ে রইলো।আরজু বুঝতে পারলো মুখ ফস্কে জামাই বলে ফেলেছে।তাই নিজেকে সংযত করে বললো
-“এই ভাবে তাকিয়ে আছিস কেনো? ফিউচারে তো আমার জামাই হবেই।”
-“তাহলে ওই হাতুড়ি ডক্টর?তাকেও বিয়ে করবে নাকি?”
আরজু মজা করে বললো
-“ওইটা প্রক্সি হিসেবে রেখেছি।কোনো ভাবে ওই নেতাকে না পেলে ডক্টরকে বিয়ে করে ফেলবো।ভালো হবে না?”
অবনি ভাবছে কি সাংঘাতিক কথা।আসলেই কলি যুগ চলে।মেয়েরা বিয়ের জন্য প্রক্সি রাখে।তার বোন নিশ্চই নেতার শোকে পাগল হয়ে গেছে।
************
শুভকে মন খারাপ করে বাসায় ঢুকতে দেখেই তার মা বেশ চিন্তায় পড়ে গেলো।তার প্রাণোচ্ছল ছেলে মনমরা হয়ে আছে কেনো?শুভ ফ্রেস হয়ে বসে আরজুর নাচের ভিডিও আপলোড দিলো।নাচের সময় আরজুর মুখের ভঙ্গিমা দারুন হয়।কেমন মায়া জড়ানো।শুভর মা রুমে ঢুকে বললেন
-“ব্যাস্ত নাকি?”
শুভ উঠে বসে বললো
-“না মা।আসো বসো।”
শুভর মা ছেলের পাশে বসে মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন।শুভ ফোন থেকে মাকে আরজুর নাচের ভিডিও দেখাতে লাগলো।শুভর মা মুগ্ধ হয়ে আরজুকে দেখলেন।ভারী মিষ্টি লাগছে আরজুকে।তিনি হেসে বললেন
-“এই মিষ্টি পরী আর বন্ধুদের সাথে সারাদিন কাটিয়ে এসে ও মন খারাপ কেনো?”
শুভ মায়ের কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়লো।মাকে ঝাপটে ধরে মুখ গুঁজে রইলো অনেকক্ষণ। ছেলের মনের অবস্থা ঠিক আন্দাজ করতে পারছেনা তিনি।শুভ মায়া জড়ানো গলায় বললো
-“আজকাল ভীষণ ভয় হয়।মনে হয় আরজুকে আমি হারিয়ে ফেলেছি।”
-“আরে বোকা এমন কেনো হবে?তুই শুধু শুধু ভয় পাচ্ছিস।বলতো আরজু তোর সাথে যতোটা কমফর্টেবল অন্য কারো সাথে কি এমন?”
শুভ মাথা নেরে না জানায়।শুভর মা হেসে বললেন
-“মেয়েরা যাকে ভালোবাসে যাকে নিরাপদ মনে করে তার সাথেই কমফোর্টেবল থাকে।আরজু নিজেকে তোর কাছে সবচাইতে নিরাপদ মনে করে।”
-“আমি জানিনা কিছুই।তবে এক অদৃশ্য অস্থিরতা বেড়ে চলছে।”
শুভর মা কিছু চিন্তা করলেন।শুভর বাবার সাথে কথা বলে খুব দ্রুতই সাবার কাছে বিয়ের প্রস্তাব দেবেন।তার ছেলে বর্তমানে বেকার বলে ভবিষ্যতে ও বেকার থাকবে এমন তো না?তার বাবার ছোটখাটো ব্যাবসায় আছে।চাইলেই জয়েন করতে পারবে।আরজুকে তার ছেলের চাইতে বেশি সুখে কেউ রাখতে পারবে না।ছোটবেলা থেকেই দুজন দুজনকে চেনে।শুভর ভালো থাকার মেডিসিন আরজু।আরজুর মতো মেয়ে যেই ঘরে বউ হয়ে যাবে সেই ঘর আলোকিত হয়ে উঠবে।চঞ্চল মেয়েটা সারা বাড়ি মাতিয়ে রাখবে।সাবা বুদ্ধিমান নারী।নিশ্চই আরজুর ব্যাপারে সঠিক সিদ্ধান্তই নিবে।
************
সকাল সকাল লামিয়া আজ নাস্তা রেডি করে লাঞ্চের বেবস্থা করে ফেলেছে।ফুয়াদ নাস্তা শেষ করে লামিয়ার উদ্দেশ্য বললো
-“লামিয়া দ্রুত আমার রুমে আসো তো?”
লামিয়া খানিকটা চমকে গেলো।এই বাড়িতে আসার পর থেকে কখনোই সে উপরের রুম গুলিতে যায়নি।তার কাজ শুধু মাত্র রান্না করা।তাই রান্না ঘর আর ডাইনিংয়ে বাইরে কোথাও যাওয়ার প্রয়োজন বোধ করে নি।লামিয়াকে দাড়িয়ে থাকতে দেখে ফুয়াদ আবার বললো
-“এই মেয়ে দাড়িয়ে আছো কেনো?”
লামিয়া হাত মুচড়াতে লাগলো।আর নিচু স্বরে বললো
-“আপনার রুমে কেনো?”
-“কাজ আছে জলদি আসো।”
লামিয়া ভাবছে কি কাজ হতে পারে?তাকে দিয়ে কাপড় ধোয়াবে নাকি ঘর মুছাবে?শেষ পর্যন্ত এই কাজ গুলিও করতে হবে?যদিও কোনো কাজকে লামিয়া ছোট মনে করে না।কিন্তু কোথাও না কোথাও সামান্য খারাপ লাগা কাজ করছে।লামিয়া ধিরো পায়ে ফুয়াদের পিছু পিছু এগিয়ে গেলো।
ফুয়াদের মা নিজের রুম থেকে বেরিয়েছে।আজ তার অফ ডে।তাই চিন্তা করলো ফুয়াদকে কিছুটা সময় দিবে।ছেলেটাকে একদম সময় দেওয়া হয়না।ছেলে যে তার উপর ক্ষিপ্ত সেটা ভালই বুঝতে পারছেন।কিন্তু তার কি করার আছে?অফিসের ব্যাস্ততায় সময় বের করতে পারে না।নাস্তার জন্য নিচে নামতে যেয়ে লক্ষ্য করলেন লামিয়া ফুয়াদের রুমে প্রবেশ করছে।এটা দেখে তার চোখ মুখ কুঁচকে গেলো।ওই মেয়ে ফুয়াদের রুমে কি করছে?
লামিয়া রুমে ঢুকতেই দেখলো বেশ সুন্দর গুছানো রুম।ফুয়াদ তার টেবিল থেকে একটা বড়ো রেপিং করা বক্স লামিয়ার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বললো
-“এইটা তোমার জন্য।”
লামিয়া হতবম্ব হয়ে বললো
-“এটা কি?আমার জন্য মানে?”
-“তোমার গিফট।”
-“গিফট!!!”
-“হুম।তুমি আমাকে প্রতিদিন এতো মজার মজার খাবার রান্না করে টেস্ট করাচ্ছ তাই একটা গিফট তোমার প্রাপ্য।”
-“আমার গিফট লাগবে না।তাছাড়া আমি ফ্রীতে রান্না করি না।মান্থলি সেলারি নেই।”
-“আরে ধুর!!! টাকার বিনিময় তো অনেকেই রান্না করে কিন্তু তুমি যে ভালোবাসা আর যত্ন নিয়ে করো সেটা কিন্তু অন্য কেউ করে না।”
লামিয়ার শরীর জুড়ে অদ্ভুত শিহরণ বয়ে গেলো।ভীষণ অস্থির লাগছে।এই রুম থেকে বেরুতে পারলেই বাঁচে।লামিয়া নিচু সরে বললো
-“স্যার আমার গিফট লাগবে না।”
ফুয়াদ এবার বেশ বিরক্ত হচ্ছে। মেয়েরা নাকি গিফট দেখলেই আনন্দে লাফিয়ে পড়ে।কিন্তু এই মেয়ে কেনো এতো সংকোচ বোধ করছে?
-“লামিয়া এটা আমি ভালোবেসে তোমাকে দিচ্ছি।”
লামিয়া চমকে তাকালো ফুয়াদের দিকে।ফুয়াদ বুজলো হয়তো কথাটা ভুল ভাবে বলে ফেলেছে।তাই সুদ্রিয়ে বললো
-“আরে আমি তোমার উপর খুশি হয়ে দিচ্ছি।আর বড়দের কথা শুনতে হয়। নাও বলছি।”
লামিয়া কি করবে ভেবে পাচ্ছে না।অনেক সংকোচ হচ্ছিল।তবুও ফুয়াদের জোরাজুরিতে নিলো।ফুয়াদ মিষ্টি করে হেসে বললো
-“গুড গার্ল। ওকে যাও।আমি ড্রেস চেঞ্জ করবো।”
লামিয়া বেশ লজ্জা পেলো।দ্রুতই রুম থেকে বেরিয়ে আসলো।
বাসায় ফিরে লামিয়া বক্সটা বিছানায় রেখে ফ্রেস হতে চলে গেলো।ফ্রেস হয়ে বেরিয়ে দেখে তার বোন বক্স অলরেডি খুলে ফেলেছে।লামিয়াকে দেখে লামিসা উচ্ছ্বাসিত হয়ে বললো
-“থ্যাংক ইউ আপু থ্যাঙ্ক ইউ সো মাচ।”
লামিয়া অবাক হয়ে বললো
-“থ্যাংক ইউ কেন দিচ্ছিস?”
-“আমার জন্য নতুন বই আনার জন্য।”
লামিয়া হতবম্ব হয়ে লামিসার দিকে তাকিয়ে রইলো।তারপর দ্রুত বিছানায় রাখা বক্সের দিকে এগিয়ে গেলো।দেখলো লামিসার ক্লাসের সব নতুন বই।সুদু তাই না তার সকল বইও আছে।লামিসা বেশ খুশি হয়ে নতুন বই টেবিলে যত্ন সহকারে সাজাতে লাগলো।বোনের খুশিতে না চাইতেও লামিয়ার দুচোখ ভিজে উঠলো।অনেকদিন পর বোনটাকে এতো খুশি হতে দেখলো।কত অল্পতেই খুশি হয়ে যায় মেয়েটা।বোনের ক্ষুদ্র চাওয়া গুলোও সে ঠিক মতো পূরণ করতে পারে না।আসলেই মাথার উপর অভিবাবকের ছায়া না থাকলে পৃথিবীর স্বার্থপর রূপ দেখা যায়।হাজারো স্বার্থপর লোকের ভিড়ে ওই মানুষটি কেনো তাকে নিঃস্বার্থ ভাবে সাহায্য করলো?