মিস্টার ভিলেন পর্বঃ১৮ এবং শেষ

0
1676

#মিস্টার ভিলেন
পর্বঃ১৮ এবং শেষ
?সামিরা পপি?
__________________________
__________________________

পরেরদিন সকালে সামিরা রুপালী ও আরশি কলেজের সেই গাছের নিচে বসে আছে।যেখানে নাবিল ও সামিরা বসে সময় কাঁটায় সে জায়গায়।প্রায় পনের বিশ মিনিট ধরে বসে আছে তারা তিনজন।এর মধ্যে সামিরা ও আরশি যেন কথার ফুলঝুঁরি নিয়ে বসেছে।তারা খেয়াল করল কয়েকদিন যাবৎ রুপালী কেমন অস্বাভাবিক আচরন করছে।না কথা বলছে না হাসছে।যে মেয়ে কথার শুরুতেই হাসতে হাসতে দম বন্ধ করে ফেলতে সে মেয়ের চুপ থাকা কেমন যেন তার অভ্যাসে পরিনত হয়েছে।আরশি ও সামিরা কয়েকবার একে অপরের মুখ চাওয়া চাওয়ি করে ভ্রু কুঁচকে রুপালীর দিকে তাকাল।কিছুক্ষন বুঝতে চেষ্টা করল যে রুপালীর কি এমন হয়েছে যার কারনে মেয়েটা চুপ চাপ হয়ে গেছে?কিন্তু না তারা কিছুই বুঝতে পারল না।তাই সামিরা রুপালীলে জিজ্ঞেস করল,

–“রুপালী?কি হয়েছে তোর?কয়েকদিন ধরে খেয়াল করছি তুই কেমন চুপচাপ হয়ে গেছিস।ব্যাপার কি?”

সামিরার কথার সাথে তাল মিলিয়ে আরশিও বলল,

–“হ্যাঁ রুপু বল তোর কি হয়েছে?”

রুপালী তাদের দিকে তাকাল আর আস্তে করে বলল,

–“কই কিছুই হয়নি এমনি ভালো লাগছে না।”

আরশি রুপালীর হাত ধরে বলল,

–“দেখ রুপু তুই যদি আমাদেরকে তোর সমস্যার কথা না বলিস তাহলে কাকে বলবি বল?আমরা না তোর কলিজা।তাহলে বলে ফেল। ”

সামিরা বলল,

–“হ্যাঁ রুপু বল।তুই যদি না বলিস তবে আমরা জানব কি করে?আর তোর সমস্যার কথা না বললে তা সমাধান করবো কি করে?সো জলদি বল।”

রুপালী, সামিরা ও আরশির দিকে অসহায় ফেস করে বলল,

–“আমার কথা শোনার পরে তোরা রেগে যাবি না’তো? ”

সামিরা বলল,

–“না রেগে যাব না।এখন তো বল।”

–“আ..আসলে আসলে আমি জ..জনিকে পছন্দ করে ফেলেছি।”

রুপালী চোখ বন্ধ করে কথাটা বলেছিল।যখন আস্তে আস্তে চোখ খুলল তখন দেখল সামিরা ও আরশি তার দিকে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে।রুপালী একটা ঢোক গিলল।এই বুঝি তারা রাগ করবে।কিন্তু না সামিরা তো চিল্লিয়ে উঠে রুপালীকে জড়িয়ে ধরে বলল,

–“সত্যি রুপু?ওহ্ মাই আল্লাহ।আই কান্ট বিলিভ দিস।আমি তো জনি ভাইয়ার জন্য আপসেট ছিলাম কি করে কি করব।কিন্তু তুই তো আমার কাজ সহজ করে দিলি।থ্যাঙ্কিউ রুপু।”

আরশি জিজ্ঞেস করল,

–“কিন্তু এইটা তো বল যে কি করে তুই উনাকে পছন্দ করলি?”

আরশির কথায় রুপালীর গাল দু’টি লজ্জায় লাল হয়ে গেছে।কিন্তু বলছে না।এইদিকে সামিরা ও আরশি একটা একটা বলছে।রুপালী বলল,

–“যেদিন সামিরা অজ্ঞান হয়ে গেছিল সেদিন সামিরার জ্ঞান ফিরার পর যে কথা গুলি বলেছিল তখন সেগুলো শুনে আমারও খারাপ লেগেছিল।আমি শুধু তখন তার দিকেই তাকিয়ে ছিলাম।এর পর থেকে প্রতিদিনই তাকে দেখতাম।আর আস্তে আস্তে বুঝতে পারছি আমি তাকে পছন্দ করে ফেলেছি।এখন সমস্যা হলো আমি তাকে কি করে বলব?সে কি আমাকে মেনে নিবে?আমি বললেও যদি রাগ করে?”

সামিরা কিছুক্ষন চুপ থেকে বলল,

–“রাগ করবে, রিজেক্ট করবে পরের কথা।তুই আগে ভাইয়াকে মনের কথা বলার চেষ্টা কর।”

–“কিন্তু….?”

–“কোন কিন্তু না।যা হওয়ার হবে।আমরা আছি তো।আগে তো বল।”

তাদের কথা মাঝে নাবিল ও জনি এলো।রুপালী তো জনিকে দেখে লজ্জায় লাল হয়ে গেল।সামিরারা বসা থেকে উঠে দাঁড়াল।নাবিলরাও সামিরাদের সাথে কথা বলছে।জনির একটা কল আসায় সে একটু সাইডে চলে গেল।তখনি এলো তানি।তানিকে দেখে সবার চোখে মুখে বিরক্তির ছাপ।আর তানির চোখ মুখে অবাক আর বিস্ময়।কারন সে নাবিলের পাশে সামিরাকে আশা করেনি।সে’তো ভেবেছিল সেদিন নাবিল সামিরা সমপর্ক শেষ।বিস্ময়ের সাথে সাথে রেগেও গেল।সামিরাকে উদ্দেশ্য করে তানি বলল,

–“সামিরা তুমি নাবিলের সাথে কি করছ?”

তানির দিকে তাকিয়ে সামিরা বলল,

–“তো নাবিলের সাথে না থেকে কোথায় যাবো?আর দেখছই তো আমরা সবাই মিলে আড্ডা দিচ্ছি।তাও জিজ্ঞেস করছ?”

তানি রেগে বলল,

–“হ্যাঁ দেখছি আড্ডা দিচ্ছি।কিন্তু নাবিলের সাথেই কেন?আর তোমাদের সম্পর্ক তো আরো আগে শেষ হয়ে গেছিল।এখন আবার কি?ওহ্ বুঝেছি আবারও বেহায়ার মত নাবিলের পিছু নিয়েছ তাই না?”

নাবিল কিছু বলতে যাবে তার আগে সামিরা থামিয়ে দিল।

–“হ্যাঁ আবারও নাবিলের পিছু নিয়েছি।তো এখন কি হয়েছে?”

–“সত্যিই তুমি একটা শেইমলেস মেয়ে।আর কতটা ছ্যাচড়া তা তোমাকে না দেখলে বুঝতাম না।বাই দ্যা ওয়ে।অনেক হয়েছে এইবার আর না।নাবিল শুধু আমার।তাই তুমি ওর থেকে দূরে চলে যাও।”

–“যদি না যাই কি করবে?”

নাবিল বলল,

–“তানি….”

নাবিলকে কিছু বলতে না দিয়ে সামিরা বলল,

–“আহ্ আপনি চুপ করুন তো।মেয়েদের কথার মাঝে ছেলেরা ইন্টারফেয়ার করা আমার পিছন্দ না।সো চুপচাপ থাকেন।আর তানি আমি যদি নাবিল থেকে দূরে না যাই তাহলে কি করবে বললে না’তো?”

–“কি করবো দেখবে?তবে দেখো…”

বলেই সামিরাকে যেই থাপ্পড় মারতে যাবি ওমনি কেউ তানির হাত ধরে ফেলে।তানি ঘাড় ঘুরিয়ে দেখে সেটা জনি।জনি রাগে লাল হয়ে গেছে।তানির হাত ছাড়িয়ে তানিকে জোরে দিল এক থাপ্পড়।তানি গালে হাত দিয়ে জনির দিকে তাকিয়ে আছে।কাঁদো কাঁদো ফেস করে তানি বলল,

–“ভাইয়া তুমি আমাকে মারলে কেন?”

জনি রেগে গিয়ে বলল,

–“চুপ তুই আমাকে ভাইয়া বলবি না।আর তোকে মারছি কেন?তোর সাহস কি করে হয় সামিরাকে মারার?”

–“ভাইয়া তুমি জানো না এই মেয়ে কি করেছে।এই মেয়ে আমার নাবিলকে কেড়ে নিয়েছে।তাহলে কি আমি তাকিয়ে দেখব?”

–“ব্যস অনেক হয়েছে।কি এই মেয়ে এই মেয়ে করছিস?হ্যাঁ?ওর একটা নাম আছে সামিরা।সামিরা বলবি।আর কি বললি নাবিলকে ও কেড়ে নিয়েছে?আমার তো মনে হয় না?ওরা দু’জন দু’জনকে পছন্দ করে।মাঝখানে তুই আসছিস।”

–“ভাইয়া…..”

–“চুপ কোন কথা নয়।আজকেই ঘরে গিয়ে তোকে বিয়ে দিতে বলব।অনেক বেড়েছিস দাঁড়া তুই।আর এখন যা এইখান থেকে।”

জনির কথায় তানি আর দাঁড়াল না।সোজা চলে গেল বাড়ি।আর জনি সবার দিকে তাকিয়ে আবার নিচের দিকে তাকাল।পরে অপরাধীর মত তাকিয়ে বলল,

–“সরি নাবিল।সরি সামু।আমি আর আমার বোন দু’জনেই তোমাদের বিরক্ত করেছি।”

নাবিল সামিরা মুচকি হেসে বলল,

–“কোন ব্যাপার না।আর তানি যে আজ নতুন এমন করছে তাও না।”

আরশি সামিরার কানে কানে কি যেন বলল।বলেই আরশি চলে গেল।আর সামিরা নাবিলকে টেনে নিয়ে যেতে লাগল।যেতে যেতে রুপালীকে এক চোখ টিপ দিল।রুপালীও বুঝে ব্লাশিং হতে লাগল।জনিও যেই যাওয়ার জন্য পা বাড়াবে ওমনি রুপালী বলল,

–“জনি…?”

জনি রুপালীর কথায় পিছু ফিরে তাকাল।জনির তাকানো দেখে রুপালী এদিক ওদিক তাকাচ্ছে।জনি বলল,
।–“কিছু কি বলবে?”

রুপালী আমতাআমতা করে বলল,

–“হ্যাঁ আসলে আমি আপনাকে কিছু বলতে চাই।”

–“হ্যাঁ তো বলো।”

রুপালী চোখ মুখ খিচে এক নিশ্বাসে বলল,

–“আসলে আমি আপনাকে পছন্দ করে ফেলেছি।আই..আই লাভ ইউ।”

রুপালী চোখ খুলে জনির দিকে তাকাল।জনি শান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে।পরে বলল,

–“সরি রুপালী।আমি তোমাকে ভালবাসতে পারব না।”

–“কেন পারবেন না?”

–“তুমি জানো আমি সামিরাকে পছন্দ করি।তাও পাঁচ বছর আগে থেকে।”

–“হ্যাঁ তো?সামিরা তো আপনাকে নয়।নাবিলকে পছন্দ করে তাই না?আর আমি এইটাও বলছি না যে আপনার থেকে আমাকে ভালবাসতে হবে।এও বলছি না যে সামিরার জায়গা আমাকে দিতে হবে।আমি চাই আপনার বুকে সামিরার জায়গার পাশে ছোট্ট একটা নিজের জন্য জায়গা করে নিতে।ব্যস আপনি আমাকে মেনে নিলেই হবে।”

–“তা হয়না রুপালী।তুমি এখন যা বলার বলছ।পরে কিন্তু তুমিই কষ্ট পাবে।আর তা আমি চাই না।”

–“আরে আমি কেন কষ্ট পাবো?আমি তো সমস্ত কিছু জানি।আর জেনেই আপনাকে ভালবেসেছি।আর আমার বিশ্বাস আমার ভালবাসা দিয়ে আমি আপনার মনে আমার জায়গা করে নিব।”

–“রুপালী…”

রুপালী জনির হাত ধরে জনির চোখের দিকে তাকিয়ে বলল,

–“শুসস কোন কথা না আর।আপনি আমাকে মেনে নিবেন ব্যস।আর আজ থেকে আপনার কাছাকাছি থেকে আপনার মনে জায়গা করে নেওয়ার মিশন শুরু।”

জনি একটা মুচকি হাসি দিয়ে বলল,

–“তমার এমন অধিকার বোধ দেখে এই মুহুর্তে তোমাকে ভিলননির মত লাগছে।”

–“হ্যাঁ আমি ত ভিলননি এখন থেকে আর আপনার ক্ষেত্রে।”

আগ্রহায়ণ মাসের শেষের দিকে।এখন অনেকটা শীত পড়ছে।সন্ধ্যা হওয়ার অনেক আগেই চারদিকে কোঁয়াশা ঘিরে ধরে।সামান্য দূরের কিছু তেমন একটা দেখা যাই না কোঁয়াশার কারনে।সেই অনন্যাতে এসেছে নাবিল ও সামিরা।পাশাপাশি হাঁটছে দু’জন।হাঁটতে হাঁটতে সামনের একটা পাতানো চেয়ারে গিয়ে বসল তারা।সামিরা বলল,

–“মিস্টার ভিলেন!পরিবেশটা অনেক সুন্দর লাগছে তাই না?”

নাবিল ভ্রু কুঁচকে বলল,

–“হুম সুন্দর।তার আগে এইটা বলো যে তুমি আমাকে মিস্টার ভিলেন কেন বলো?”

সামিরা নাবিলের দিকে তাকিয়ে হাল্কা হাসল।তারপর বলল,

–“আপনাকে যেদিন ফাস্ট দেখেছি সেদিন মারামারি করছিলেন।তার উপর সাদা শার্ট পড়েছিলেন।চোখ মুখ রাগে লাল হয়েছিল। দেখতে সম্পূর্ণ ভিলেনের মতই লাগছিল।তাইতো সেদিন মনে মনে আপনার নাম দিয়ে ছিলাম “মিস্টার ভিলেন”।

–“বাহ্ ভালো তো।”

–“হুম।”

সামিরার ঠান্ডা লাগছিল।নিজের গায়ের ছাদরটা আরেকটু ভালো করে মুড়িয়ে নিল।তারপর নাবিলের বাম হাতের বাহু জড়িয়ে ধরে নাবিলের কাঁধে মাথা রাখল।আর বলল,

–“আপনি হলেন আমার মিস্টার ভিলেন।আই লাভ ইউ মিস্টার ভিলেন।”

–“আই লাভ ইউ টু মাই ভিলেন কুইন।”

সামিরা হাল্কা হাসল সাথে নাবিলও।
আপনার পছন্দের গল্প পড়তে পেইজটি তে লাইক দিয়ে সাথেই থাকুন এবং গল্পের লিংক পেতে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন। গ্রুপের লিংক কমেন্ট বক্সে দেওয়া আছে
—-সমাপ্ত—-