মিস্টার ভিলেন পর্ব-১৬+১৭

0
1652

পর্ব ১৬+১৭
#মিস্টার ভিলেন
পর্বঃ১৬
?সামিরা পপি?
_____________________________
_____________________________

সামিরা উঠে চোখ মুছে ওয়াসরুমে গিয়ে বেশ কিছুক্ষন সময় নিয়ে গোসল করে।তারপর বের হয়ে আসে।তখন তার মা রুমে এসে বলে,

–“সামিরা আয় ভাত খেয়ে নে।”

সামিরা আস্তে করে বলে,

–“আম্মু আমি খাব না।”

তার মা একটু রেগে বলে,

–“খাবি না মানে কি হ্যাঁ?ওই জনিকে ভয় করে আবার আগের মত খাওয়া দাওয়া বন্ধ করে দিচ্ছিস?না খেয়ে থাকলে কি জনি তোকে বিরক্ত করা বন্ধ করে দিবে?মোটেও না বুঝেছিস।এখন চুপ চাপ আয় খেয়ে নে।”

–“আম্মু….।”

–“চুপ কোন আম্মু না।এখন খেতে বলেছি খেয়ে যাবি।আর কোন কথা শুনতে চাই না আমি।”

বলেই সামিরার মা চলে যাই।সামিরা তার মায়ের মুখে আর কোন কথা শুনতে চাই না।তাই সেও হতাশ হয়ে খেতে যাই।খেয়ে এসে বেডে শুয়ে চোখ গুলো বন্ধ করতেই দু’চোখের পাশ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ে।আবার উঠে বসে বলে,

–“জনির চিন্তা পরে করা যাবে।আমার আগে নাবিলের ভুল ভাঙাতে হবে।তাকে সব সত্যি বলতে হবে।আমিও তো তাকে ভালবাসি। হ্যাঁ ভালবাসি।যদিও বাজি ধরেই রিলেশনে জড়িয়েছি।কিন্তু এই চ্যালেঞ্জের পেছনেও তো আমার একটা কারন আছে।সেটা আমায় নাবিলকে বলতেই হবে।আগামীকাল নাবিলের সাথে যে করেই হোক আমায় কথা বলতেই হবে।”

বলে এক দীর্ঘশ্বাস ত্যাগ করল।আবার শুয়ে চোখ দু’টো বন্ধ করল।কিছুক্ষনের মধ্যেই ঘুমিয়ে পড়েছে।

জনি আর নাবিল সামনাসামনি বসে আছে।জনির মুখে বাঁকা হাসি।আর নাবিলের চোখে মুখে বিরক্তির ছাপ।মূলত এইখানে আসার কারন হলো জনি নাবিলকে ডেকেছে।নাবিল প্রথমে আসতে রাজী হয়নি কারন সে জনিকে মোটেও পছন্দ করে না।যদিও তারা একি ক্লাসের ছাত্র।কিন্তু জনি কলেজে আসে না।শুধু পরিক্ষা দিতে আসে।তবে তাদের মধ্যে শত্রুতা শুরু হয় রাজনীতিতে জড়ানোর পর থেকে।পাশাপাশি এলাকার দু’জনে কাউন্সিলর পদে দাঁড়িয়েছে।নাবিল তাদের গ্রামের কাউন্সিলরের পক্ষে আর জনি নিজের কাজিনের পক্ষে।যখন থেকে ভোটের পোষ্টার লাগানো শুরু হয় তখন থেকেই শুরু হয় বিবাদ।জনিরা নাবিলদের গ্রামে এসেও তাদের কাউন্সির এর পোষ্টার লাগায়।যখন নাবিলরা জনিদের এলাকায় লাগায় তখন তাদের বাঁধা দেয় জনিরা।ব্যস বেঁধে যাই বিবাদ।যা এখন ঘোর শত্রুতা হয়ে দাঁড়িয়েছে।অনেক্ষন হলো দুজন বসে আছে।জনি নিজেই নাবিলকে ডেকেছে কিন্তু কিছুই বলছে না।তাই নাবিল বলল,

–“সমস্যা কি তোর?সে কখন থেকে বসিয়ে রেখেছিস?কি জন্য ডেকেছিস তা বল নয়তো আমি চলে যাচ্ছি।”

জনি হেসে দিয়ে বলে,

–“আরে এত তাড়া কিসের?কেউ কি ওয়েট করছে না’কি তোর জন্য?আমার জানামতে তো কেউ ওয়েট করছে না?”

নাবিল ভ্রু জোড়া কুঁচকে বিরক্তি নিয়ে বলল,

–“উফফ জনি তোর এই আজাইরা কথা শুনতে ইচ্ছে করছে না আমার।বললে তাড়াতাড়ি বল।তোর সামনে এইভাবে বসে থাকা ছাড়াও আমার অনেক কাজ আছে।”

–“দূর ব্যাটা কি যে বলিস।তোর আবার কিসের কাজ?তাছাড়া এখন তো গার্লফ্রেন্ড ও নেই যে তাকে নিয়ে ঘুরতে যাবি?তাহলে কিসের কাজ বলতো?আমার জানা মতে আজ সকালেই তোর গার্লফ্রেন্ডকে ছেড়ে দিয়েছিস।”

গার্লফ্রেন্ড মানে জনি সামিরার কথা বলছে।জনির মুখে সামিরার কথা শুনে নাবিল চমকে যাই।আর আবাক হয়ে বলল,

–“আমার যে এখন আর গার্লফ্রেন্ড নেই?আর গার্লফ্রেন্ডকে ছেড়ে দিয়েছি এই কথা তুই কি করে জানিস?এইটা তো তেমন কেউ জানেনা?”

জনি চেহেরায় স্পষ্ট রাগ ফুঁটিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বলল,

–“যে এখন তোর এক্স গার্লফ্রেন্ড সে আমার সামু।ওকে আমি পাঁচ পাঁচটা বছর ধরেই ভালবেসে আসছি।এখন জানি তুই ওকে ছেড়ে দিয়েছিস।কিন্তু কেন তা আমি জানিনা।তবে এখন শুনে রাখ ছেড়ে দিয়েছিস তো দিয়েছিস ভবিষৎ এ যেন আর কখনও তোকে সামিরার আশে পাশে না দেখি।দুই বছর ওর থেকে দূরে থেকেছি।দূরে থেকেছি না ও পালিয়ে এইখানেই এসেছে।এইবার যখন পেয়েছি আর ছাড়ছি না।তোকে এইসব বলার জন্যই ডেকেছি।”

সামিরাকে জনি পাঁচ বছর ধরে ভালবাসে কথাটা যেন নাবিল কিছুতেই মানতে পারছে না।যদি সামিরাও জনিকে ভালবাসে তাহলে পালিয়েই বা আসল কেন জনির থেকে?কি এমন করেছে জনি?আর আমার সাথেই বা কেন অভিনয় করেছে?না সব আমার জানতে হবে।যে করেই হোক।নাবিল বলল,

–“পাঁচ বছর ধরে ভালবাসিস তাহলে সামিরা আমার সাথে কেন রিলেশনে জড়িয়েছে?আর তোর কাছ থেকেই বা কেন পালিয়েছে?”

জনির চেহেরায় রাগ যেন আরো বেশিই ফুঁটে উঠেছে।মানে এই কথায় জনি আরো বেশি রেগে গেছে।তাই চিৎকার করে বলল,

–“ওকে আমি ভালবাসি কিন্তু ও আমাকে ভালবাসে না।আমাকে দেখলেই ভয় পায়।”

সামিরা জনিকে ভালবাসেনা কথাটা শুনে নাবিল মনে মনে খুশি হল।কিন্তু প্রকাশ করল না।যাক এইবার সব সত্যি জেনেই নিবে।আর যেখানে জনির সাথে নাবিলের শত্রুতা সেখানে তো নাবিল সামিরাকে আরো ছাড়বে না।সারাদিন ভেবেছিল সামিরাকে আর দেখবেও না ফিরে।কিন্তু না এখন তো সে নিজেই সামিরার সাথে কথা বলবে।সামিরা তো নিজেও বলেছি কি সম্পূর্ন কথা শুনতে কিন্তু আমিই শুনিনি।এইবার সেটাও শুনব।মনে মনে এইসব ভেবে নাবিল হাসল।

জনি আবার বলল,

–“তোকে যেটা বলেছি সেটা যেন মাথায় থাকে।এতদিন আমি জানতাম না সামিরা এই কলেজে পড়ে নয়তো আমি রেগুলার কলেজে আসতাম।বেশ কিছুদিন আগেই জেনেছি।কিন্তু তখন শুনলাম সামিরা তোকে না’কি জ্বালাতো।পরে শুনলাম তোর সাথে রিলেশনে জড়িয়েছে এতদিন এইসব অনেক কষ্টে সহ্য করেছিলাম।শুধু দেখতে চেয়েছিলাম সামিরা কতটুকু যেতে পারে।আর দেখেও নিয়েছি।যাই হোক এখন তুই যেন আর সামিরার আশে পাশেও না থাকিস।সামিরা শুধু জনি।এইবার সামিরাকে দরকার পড়লে পায়ে শিকল পড়িয়ে আমার কাছে নিয়ে আসব।”

–“আচ্ছা বুঝলাম।আমি না হয় ওর কাছে যাব না।কিন্তু ও যদি আসে?”

জনি হেসে বলল,

–“আসবে না আর তোর কাছে।কারন এখন থেকে আমি থাকব সামনে।এখন থেকে ও আমার কাছেই থাকবে।”

–“আচ্ছা দেখা যাক কি হয়।তবে হ্যাঁ একটা শর্ত আমিও তোকে দিচ্ছি?”

–“কি শর্ত?”

–“আগে বল মানবি?”

–“ওকে মানব।”

–“সামিরা যদি আমার কাছে তোর সামনে দিয়েই আসে।তবে তুই আমাদের থেকে চলে যাবি।সামিরাকে আর বিরক্ত করবি না।”

জনি প্রথমে রেগে যাই।পরে আবার হেসে বলে,

–“ওকে আমি রাজী।তবে আমি জানি সামিরা আমার সামনে দিয়ে তোর কাছে কিছুতেই যাবে না।”

নাবিল মুচকি হেসে বলল,

–“ওকে দেখা যাক।”

বলেই নাবিল চলে গেল।

পরেদিন সকালে সামিরা কলেজে যাওয়ার জন্য বের হয়।কারন নাবিলের সাথে তার দেখা করতেই হবে।সামিরা ঘর থেকে তাড়াতাড়ি বের হয়ে একটা রিক্সা নিয়ে কলেজে চলে যাই।গিয়ে দেখে নাবিলও আজকে তাড়াতাড়ি এসেছে।ক্লাস দশটা থেকে এখন বাজে মাত্র ন’টা।সামিরা তো প্রথমে ভয় পেয়েছিল নাবিল আসবে না ভেবে।যাক পেয়ে গেল।সামিরা দৌঁড়ে নাবিলের সামনে গিয়ে দাঁড়াল।এমন দৌঁড়ে এসে সামিরাকে সামনে দাঁড়াতে দেখে নাবিল হকচকিয়ে গেল।তারপর বসা থেকে উঠে দাঁড়াল।নাবিল জানত সামিরা তারাতারি আসবে তাই সেও এসে গেছে।সামিরার চোখ দু’টো পানিতে টলমল করছে।নাবিলকে দাঁড়াতে দেখে সামিরা জোরে ঝাপটে জড়িয়ে ধরে হাওমাও করে কান্না করে দেয়। নাবিল এমন ধরাতে একটু পেছনে সরে যাই।চুপ করে থাকে নাবিল।কিছুই বলে না।জড়িও ধরে না।সামিরা কিছুক্ষন কান্না করার পর মাথা উঠিয়ে নাবিলের দিকে তাকায়।নাবিলের দু’গালে হাত রেখে বলে,

–“আপনি আপনি আমার কোন কথা না শুনে কেন চলে গিয়েছিলেন?আপনি শুধু বাজির কথাটায় বিশ্বাস করে নিলেন?একটা বার আমি এমিন কেন করেছি জানতেও চাননি।প্লিজ আপনি আমাকে ছেড়ে যাবেন না।আমি সত্যি বলছি আমি আপনাকে ভালবাসি।বাজি ধরার আরো অনেক আগে থেকে আমার আপনাকে ভাল লাগত।ভালোও বেসে ছিলাম।কিন্তু ভয়ে বলতে পারিনি।যদি ফিরিয়ে দেন।যদি অপমান করেন তাই।তাই লুকিয়ে লুকিয়েই আপনাকে দেখতাম।

–“ওহ তখন ভয়ে বলোনি।অপমান করব বলে বলোনি।তাহলে বাজি ধরার পর এত সাহস কোথা থেকে আসল?আর বাজিই বা কেন ধরেছিলে?”

–“তানির সাথে প্রথমদিন ক্লাসে আমার জগড়া হয়েছিল।তারপর থেকে ও আমাকে সহ্য করতে পারেনা।আর আমিও পারিনা।একদিন জানতে পারি ও আপনাকে পছন্দ করে।কিন্তু বলতে পারেনা।যাও একদিন বলেছিল তখন আপনি রিজেক্ট করেছে।একদিন আমি ক্লাসে বসে ছিলাম।তানি আমার সামনে এসে দাঁড়ায়।আমি বললাম, ”

–“কি?সামনে এসে দাঁড়িয়েছ কেন?”

তানি হেসে বলল,

–“একটা কথা বলতে এসেছি। ”

–“কি কথা?”

–“তুমি তো সেদিন বলেছিলে যে তুমি চাইলে সব করতে পারো।”

–“হ্যাঁ বলেছিলাম তো।তো এখন?”

–“ওই যে বাইকে বসা নাবিলকে দেখছ তাকে পটিয়ে দেখাও দেখি কেমন সব পারো?”

–“মানে কি? উনি কি আমাকে একসেপ্ট করবে নাকি?তমাকেও তো করেনি?”

–“আমি এত কিছু জানিনা।এইটা তোমাকে চ্যালেঞ্জ দিলাম।যদি নাবিলকে পটিয়ে প্রেমে ফেলতে পারো তখন বুঝব তুমি সব পারো।নয়তো বুঝব তুমি একটা মিথ্যাবাদী।”

–“সেদিন তানির মুখে মিথ্যাবাদী শব্দটা শুনে রাগ হয়েছিল।তাই রাগের বসে আমিও চ্যালেঞ্জ একসেপ্ট করি।তানি যাওয়ার পর অনেক্ষণ চিন্তা করলাম।পরে ভেবে চিনতে করলাম।যে আপনি একবার রাজী হয়ে গেলেই হবে।পরে কোন একদিন আপনাকে সব বলব।আর সেদিন তানির চ্যালেঞ্জের সুযোগে আমি অনেকদিনের ভয়কে জয় করার জন্য আপনার করা সব অপমান সহ্য করেছিলাম।আপনার সব কথা মেনে নিয়েছিলা।আপনাকে ইচ্ছে মত জ্বালিয়েছিলাম।পরে আপনি রাজী হয়েছিলেন।কিন্তু তানি গতকাল নিজেই চ্যালেঞ্জের কথা বলে দেয় আর আপনি আমায় ভূল বুঝেন।”

সব এক সাথে বলেই থামল সামিরা।নাবিল সামিরার দিকে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে।পরে নাবিল নিজেই মুচকি হেসে সামিরাকে জড়িয়ে ধরে।সামিরা হতবাক।নাবিল বলে,,

–“তানির মুখে বাজির কথা শুনে রেগে গিয়েছিলাম।তখন মনে হয়েছিল সত্যিই তুমি আমাকে ধোঁকা দিয়েছ।তাই তোমার কথা না শুনে চলে গেছিলাম।তবে তুমি কি জানো আমিও যে তোমায় অনেক আগে থেকে পছন্দ করি?”

সামিরা নাবিলের বুক থেকে মাথা উঠিয়ে অবাক হয়ে তাকায়।-

–“কিহ্?কখন থেকে?”

নাবিল আবার মুচকি হেসে সামিরাকে জড়িয়ে ধরে বলে,

–“যেদিন তোমাকে প্রথম দেখেছিলাম।আমরা মারামারি করছিলাম।তুমি দাঁড়িয়ে আমার দিকে তাকিয়ে ছিলে।যখন রাজ আমায় টেনে নিয়ে যাচ্ছিল তখন আমি পেছনে ফিরে ছিলাম।তখন তোমাকে দেখতে দেখতেই রাজের সাথে যাচ্ছিলাম।”

–“বদমাশ ছেলে একটা।নিজেকে যখন পছন্দই করতে তাহলে এতদিন অপমান করেছিলেন কেন? রিজেক্ট করেছিলেন কেন?”

–“কারন আমি তোমায় পরিক্ষা করছিলাম।যে তুমি আমায় সত্যি ভালবাস কিনা।যদি অপমান সহ্য না করে চলে যেতে তখন বুঝতাম তুমি আমায় ভালবাসো না।কিন্তু তুমি যাওনি তাই বুঝলাম তুমিই আমায় ভালোবাসো।”

–“হুহ্ তাহলে ওইদিন বললেন কেন যে ভালবাসেন কিনা তা সিউর না?”

–“ওইটা তো একটু ভাব নেওয়ার জন্য বলেছিলাম।”

–“ইউউউউউ…ফাযিল ছেলে একটা।ভিলেন একটা।”

বলতে বলতেই নাবিলকে মারতে লাগল সামিরা।আর নাবিল হাসছে।

এইদিকে জনি সামিরার জন্য তাদের ঘরের সামনে ওয়েট করছে।সামিরাকে নিয়ে একসাথে কলেজে যাবে বলে।কিন্তু সামিরার কোন দেখা নেই।জনি ভাবল সামিরা কলেজে যাবেনা হয়তো।ঘড়ি দেখল তখন প্রায় দশটা বাজে।তারমানে সামিরা কলেজে যাবেনা।তাই জনি আর অপেক্ষা না করে চলে গেল।
কিন্তু সামিরা তো আজকে আরো সকালে চলে গেছে তাহলে তাকে পাবে কেমনে?দেখবে কেমনে?

পর্বঃ১৭
?সামিরা পপি?
_____________________________
_____________________________

দশটা বেজে যাওয়ায় সামিরা ক্লাসে চলে যাই।নাবিলও চলে যাই।জনি কিছুক্ষনের মধ্যে কলেজে আসে এসে দেখে নাবিলরা নেই।তাই সেও ক্লাসে যাই।জনিকে হঠাৎ করে ক্লাসে দেখে সবাই অবাক হয়।কিন্তু কেউ কিছু বলেনা।জনিও বুঝতে পারে তাকে সবাই এইভাবে দেখছে কেন।কিন্তু সে ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে নাবিলের সিটের পাশে অন্য আরেকটা সিটে বসে।দু’জন দু’জনের চোখেচোখি হয়।জনির দিকে তাকিয়ে নাবিল একটা মুচকি হাসি দিল।জনিও প্রতিউত্তরে হেসে দিল।আবার দু’জন ক্লাসে মনোযোগী হলো।

সাড়ে এগারোটার দিকে সামিরার গ্যাপ ক্লাস ছিল।সেই সুযোগে সামিরা, রুপালী ও আরশি গেল ক্যান্টিনে।প্রতিদিনের মত আজও তারা নাস্তা খাচ্ছে আর টুকটাক কথা বলছে।তার মধ্যেই আরশি বলে উঠল,

–“সামু!নাবিল ভাইয়ার সাথে তোর কথা হয়েছে?না মানে তুই যে রাতে বলেছিলি নাবিল ভাইয়া তোকে ভূল বুঝেছে?”

সামিরা চা’য়ে চুমুক দিতে দিতে বলে,

–“হুম বলেছি।”

আরশি উত্তেজিত হয়ে বলল,

–“কখন বলেছিস?ভূল ভেঙেছে?কি বলেছে?”

সামিরা আরশির এমন উত্তেজিত হয়ে প্রশ্ন করা দেখে মুচকি হাসল।

–“আজ সকালে দেখা হয়েছে।”

–“কিহ্ কিভাবে?বল বল কি হয়েছিল?”

তারপর সামিরা নাবিলের সব কথা বলল। সব শুনে আরশি ও রুপালী শকড।শকড শুধু এইজন্য যে নাবিলও সামিরাকে আগে থেকে প্রচন্দ করতো।এও কি সম্ভব যে ছেলে কেউকে পাত্তা দিত না সেও না’কি চুপি চুপি কেউকে পছন্দ করতো!

কলেজ ছুটি হওয়ার পর জনি ও নাবিল একসাথে দাঁড়িয়ে আছে।উদ্দেশ্য সামিরা আসবে।আর দুইজনেই সামিরার জন্য ওয়েট করছে।কিছুক্ষন পর রুপালী,সামিরা ও আরশি কথা বলতে বলতে বের হচ্ছিল।তখনি দেখে মাঠে নাবিল ও জনি একসাথে দাঁড়িয়ে আছে।দু’জনকে একসাথে দেখে সামিরা ঘাবড়ে গেল।কপাল বেয়ে ঘাম পড়তে লাগল।এখন নিশ্চয় জনি সামিরাকে নিয়ে যাবে।তাহলে নাবিলের সাথে কথা হবে না।আচ্ছা নাবিল কি তাকে ভূল বুঝবে?যদি ভূল বুঝে গতকালের মত চলে যাই?আর জনি?জনি যদি নাবিলের কোন ক্ষতি করে?কি করবো আমি?কি করা উচিত এখন আমার?সামিরা ভাবতে লাগল।সে যেন সামনে আর এগুতে পারছে না।ঠাই দাঁড়িয়ে রইল।

সামিরাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে রুপালী ও আরশি তাদের সাথে যেতে বলছে কিন্তু সে কোন কথায় বলছে না।নাবিল দূর থেকে দেখে কিছুটা আন্দাজ করতে পেরেছে।তাই জনিকে বলল,

–“তো চল।এক্ষুনি সময়।সামিরা হয়তো আমাদের দু’জনকে একসাথে দেখে ভয় পাচ্ছে।আমরাই না’হয় যাই।”

জনিও সম্মতি জানিয়ে বলল,

–“হুম চল।”

তারপর জনি ও নাবিল সামিরার সামনে আসল।সামিরা দু’জনকে এগিয়ে আস্তে দেখেই যেন তার দম বন্ধ হয়ে আসতে লাগল।কেমন যেন মাথা ঘুরতে লাগল।আস্তে আস্তে চোখ দু’টো ঝাপসা হয়ে আসতে লাগল।একসময় সেন্সলেস হয়ে পড়ে গেল।নাবিল ও জনি দু’জনে একসাথে দৌঁড়ে এসে সামিরাকে ধরল।

যখন সামিরার জ্ঞান ফিরল তখন দেখল রুপালী ও আরশি দরজার পাশ ধরে দাঁড়িয়ে আছে।একটা খালি ক্লাসরুমে সবাই।সামিরা নাবিলের কাঁধে মাথা রেখে আছে।আর তার সামনেই বসা জনি।জনিকে দেখেই সামিরা আৎকে উঠল।দ্রুত নাবিলের কাঁধ থেকে মাথা সরিয়ে নিল।একবার জনির দিকে তো একবার নাবিলের দিকে তাকাতে লাগল।সামিরা কি বলবে বুঝছে না।সে আগের মত আবার ভয় পাচ্ছে।তখন জনি শান্ত স্বরে বলে উঠল,

–“সামু তোমাকে ভয় পেতে হবে না।আমি জানি তুমি ছোট থেকেই মানে আরো পাঁচ বছর আগে থেকে ভয় পেয়ে আসছ আমায়।কিন্তু কেন ভয় পাও তা আমি জানিনা।শুধু আমার জন্যই গ্রাম থেকে এত দূরে পালিয়ে এসেছ।আচ্ছা সামু?আমাকে একটা কথা বলো তো?আমি কি এতই খারাপ যে আমার থেকে পালাতে হলো?আমি কি এতই খারাপ যে তুমি আমায় ভয় পাও?আমি কি এতই খারাপ যে আমি তোমাকে পাঁচ বছর ধরে ভালবেসেও তুমি আমাকে ভালবাসতে পারলে না?”

কথা গুলো জনি সামিরার দিকে তাকিয়েই বলেছে একদম শান্ত স্বরে।সামিরা জনির দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে গেছে।আজকে জনি তাকে কিছুই বলছে না।নাবিলের সাথে দেখেও কিছু বলছে না।নাবিলকেও কিছুই বলছে না।

সামিরার কোন উত্তর না পেয়ে জনি আবার বলল,

–“বলো সামু।কথা তো বলো।”

সামিরা এইবার মাথা নিচু করে বলল,

–“আপনি খারাপ না ভাইয়া।তবে আমি আপনাকে এইজন্যই ভয় পায় কারন আপনি পাঁচ বছর আগে থেকেই আমার সাথে কোন ছেলেকে মিশতে দিতেন না।যে মিশত তাকেই মারতেন।পরে তারা আমার থেকে দূরে চলে যেত।প্রথম প্রথম না বুঝলেও পরে বুঝতাম যে এদেরকে আমার জন্যই মারতেন।তাই বেশ ভয় পেতাম।যদি অন্য কোন ছেলে আমার জন্য মার খায়?আর ভাইয়া রইল ভালবাসার কথা।আমি আপনাকে কখনও সে নজরে দেখিনি।আর দেখবই বা কি?আমি সেই থেকেই তো আপনাকে ভয় পেয়ে আসছি তাই এমন কোন ফিলিং আসেনি মনে।”

আজ সামিরা মাথা নিচু করে আস্তে আস্তে এইগুলো বলল।বাকিরা চুপ।শুধু জনিই সামিরার দিকে তাকিয়ে আছে।সামিরা তাকে কখনও ভালবাসতে পারেনি।সেজন্য প্রচুর কান্না পাচ্ছে জনির।কিন্তু কাঁদছে না।নিজেকে স্বাভাবিক রেখে নরম স্বরে বলল,

–“তুমি নাবিলকে অনেক ভালবাসো তাই না?”

কথাটা শুনে সামিরা জনির দিকে তাকাল।আবার মাথা নিচু করে বলল, “হ্যাঁ”।সামিরার “হ্যাঁ” শব্দটা শুনে নাবিলের মুখে বিশ্বজয়ের হাসি ফুঁটে উঠল।ইয়েস সে জিতেছে।এইদিকে জনির যেন দম বন্ধ হয়ে আসছে।সে হেরে গেছে।হ্যাঁ আজকে নাবিলের শর্ত তাকে মেনে নিতে হবে।কারন সামিরা তার সামনে তার কাছেই স্বীকার করেছে সে নাবিলকে ভালবাসে।এই মূহুর্তে খুব কষ্ট হচ্ছে জনির।চোখ দু’টো লাল হয়ে গেছে।আস্তে আস্তে উঠে সামিরার সামনে আসে।সামিরা তো ভয় পেয়ে যাই।এইবুঝি কিছু করে ফেলবে জনি।কিন্তু না জনি সামিরার মাথায় হাত রেখে বলল,

–“আ’ম সরি সামু।আমার জন্য গ্রামেও অনেক মানুষের অনেক কথা শুনতে হয়েছে তোমাকে।আমার পাগলামীর কারনে আমার এক তরফা ভালবাসার কারনে অনেক সাফার করেছ তুমি।শেষে গ্রাম পর্যন্ত ছাড়তে হয়েছে।পারলে ক্ষমা করে দিও।আর নাবিলের সাথে ভালো থেকো।কখনও আর বিরক্ত করব না তোমায়।আর নাবিল?তুমি কিন্তু আমার সামুর খেয়াল রাখবি।আমি চাইলেই কেড়ে নিতে পারতাম ওকে।কিন্তু তা করছি না।আমি জানি তুই ওকে ভালো রাখবি।”
নাবিলও হেসে বলল,

–“হ্যাঁ অবশ্যই ভালো রাখব।তুই চিন্তা করিস না।”

নাবিলের কথা শুনে জনি একটা নিশ্বাস ফেলে চলে গেল।

পার্কের মত একটা জায়গা।এখন দুপুর হওয়াতে তেমন মানুষজন নেই।একটা বেঞ্চে মাথা নিচু করে বসে আছে জনি।সে যে কলেজ থেকে এসে এখানে বসেছে এখনও বসে আছে।নিজেকে কেমন একা একা লাগছে তার।বুকের ভেতর শূন্যতা অনুভব করছে।হঠাৎ কপল বেয়ে গড়িয়ে পড়ল নোনা জল।হ্যাঁ জনি আজ কাঁদছে।তার পাঁচ বছরের ভালবাসাকে যে ত্যাগ করতে হয়েছে।জনি নিজেকে আর সামলাতে না পেরে নিচে হাঁটু গেড়ে বসে দিল এক চিৎকার।এই চিৎকারে যেন প্রকৃতি কেঁপে উঠল।জনির চোখের পানি গুলো অঝর ধারায় গড়িয়ে পড়ল।তার সাথে যেন আজকে প্রকৃতিও কান্না করতে চাইছে।

কেঁটে গেছে দশদিন।এই দশদিনে সামিরা ও নাবিলের দুষ্টু মিষ্টি প্রেম যেন আরো বেড়ে গেছে।আর জনি সে যেন হাসতেই ভূলে গেছে।কেমন যেন চোখ মুখ শুকিয়ে গেছে।তবুও নাবিল সামিরাকে দেখলে প্লাস্টির হাসি ঝুলিয়ে কথা বলে।কলেজে প্রতিদিন আসে তার সামুকে দেখার জন্য।মনের তৃপ্তি না মিটলেও চোখের তৃপ্তি মিটে এতে।

তানি আজ ইন্ডিয়া থেকে এসেছে।তার বাবার চিকিৎসার জন্য ইন্ডিয়া গেছিল।সেখান থেকে এসেছে দুই ঘন্টা আগে।এসে গোসল করে একটু সাজুগুজু করল।সাজুগুজু শেষে রুম থেকে বের হওয়ার আগে আয়নায় আগে নিজের চেহেরা একবার দেখে নিল।তারপর একটা হাসি দিয়ে বলল,

–“আমি এসে গেছি।এইবার আমার নাবিল আমার হবে।ইশ কালকে তাকে দেখতে পাবো।ভাবতেই কেমন খুশি লাগছে।”

চলবে….