মিস্টার ভিলেন পর্ব-১১

0
1582

#মিস্টার ভিলেন
পর্বঃ১১
?সামিরা পপি?
______________________________
______________________________

সামিরারা নিজের ক্লাসে চলে আসল আর নাবিলরাও নিজেদের ক্লাসে চলে গেল।সামিরা ক্লাসে গিয়ে দেখল তানি বসে আছে।তানিকে দেখে সামিরার এক পৈশাচিক আনন্দ হতে লাগল।মুখের মধ্যে দুষ্টু হাসি ফুঁটিয়ে তানির কাছে গিয়ে দাঁড়াল।তানি সামিরাকে দেখে ভ্রু কুঁচকে তাকাল।তারপর বিরক্তি মাখা কন্ঠে বলল,

–“কি চাই?আর এইভাবে দাঁড়িয়ে আছো কেন?”

সামিরা তানির সামনের বেঞ্চে বসে তানির দিকে তাকিয়ে একটা হাসি দিল।তারপর বলল,

–“তুমি তো বলেছিলে যে বাজিতে জিতবে সে নাবিলের।মানে নাবিল তার।”

তানি ভ্রু কুঁচকে বলল,

–“হ্যাঁ বলেছি তো।তো এখন কি হয়েছে?”

–“তোমার বাজির শর্তমত নাবিল এখন থেকে আমার।”

সামিরার কথায় তানি কিছুক্ষন চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে থেকে তারপর হু হা করে হেসে উঠল।নিজেকে কোন ভাবে থামিয়ে সামিরার দিকে তাকিয়ে বলিল,

–“সিরিয়াসলি? ইউ মিন লাইক সিরিয়াসলি? নাবিল তোমাকে এই গাইয়্যা লুকে পছন্দ করে ফেলেছে?হাউ ফানি।আর আজ থেকে নাবিল কিভাবে তোমার হলো?নাবিল কি তোমাকে একসেপ্ট করেছে নাকি?করবে বলে তো মনে হয়না।”

সামিরা তানির দিকে তাকিয়ে বাঁকা হাসি দিল।তানি সামিরার এই হাসি দেখে ভ্রু কুঁচকে সামিরার দিকে তাকিয়ে আছে।সামিরা দাঁড়িয়ে বলল,

–“তোমাকে বলেছিলাম না যে নাবিল এই গাইয়্যা লুকের মেয়ের প্রেমেই পড়বে?সে কিন্তু সত্যিই পড়েছে।আর আমাকে মেনেও নিয়েছে।”

বলেই সামিরা তার সিটে চলে গেল।আর তানি “হোয়াট” বলে দাঁড়িয়ে পড়ল।তানির এত জোরে “হোয়াট” বলা শব্দটা শুনে ক্লাসের সবাই তানির দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে আছে।তানি তা খেয়াল করল।সবাই যেভাবে তাকিয়ে আছে তা দেখে তানি কিছুটা লজ্জা পেল।তাই আস্তে করে আবার বসে পড়ল।আর দাঁতে দাঁত চেপে মনে মনে বলল,

–“না এইটা কিছুতেই হতে পারেনা।নাবিল শুধু আমার।আমার নাবিলকে ওই মেয়ের হতে দিব না আমি।কিছুতেই না।”

সামিরা নিজের সিটে গিয়ে আরশি ও রুপালীকে সব বলল।সবাই সামিরার কথা শুনে হাসিতে মেতে উঠল।সাথে আফসসও করল।রুপালী আফসোসের সুরে বলল,

–“আহারে বেচারী।কোথায় ভেবেছিল কায়দা করে নাবিলকে তার করে নিবে।সে জন্য সামিরাকেও ইউজ করল।কিন্তু শেষে দেখা গেল নাবিল সামিরার ই।এই মুহুর্তে বেচারীর রিয়েকশন কেমন তা ভাবে আমার খুব দুঃখ লাগছে।আচ্ছা আরু বলতো তানি পেত্নীর ফেস রিয়েকশন কেমন হবে?উম পেত্নীদের মত দুই দাঁত বের করে,কপাল কুঁচকে রাগী ফেসের রিয়েকশন?না’কি এই মুহুর্তে কচু গাছের সাথে ঝুলের যাওয়ার প্রবল ইচ্ছার রিয়েকশন?”

রুপালী বলার ভঙ্গি ও কথার ধরন দেখে সামিরা আর রুপালী হেসে দিল।আরশি হাসি থামিয়ে দিয়ে বলল,

–“উহু আমার কি মনে হয় জানিস?”

রুপালী ও সামিরা ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলিল,

–“কি?”

আরশি বলল,

–“হে মোর হতে হতে হয়ে যাওয়া প্রেমিক নাবিল।তুমি এমন কাজ কিছুতেই করতে পারো না।কোন কালেই না।আমি তোমাকে যতটুকু জেনেছি চিনেছি তুমি আমার সেই চিনা জানাকে ভূল প্রমাণিত করতে পারো না।যদি তুমি এমনটা করো আমি গিয়ে নিজের প্রাণ বিসর্জন দিয়ে দিব।”

আরশির কথা শুনে রুপালী ও সামিরা আট্টহাসিতে ফেটে পড়ল।সাথে আরশিও যোগ দিল।

নাবিলও হাসি খুশিতে আছে।মাঝে মাঝে সামিরার কথা ভেবে ব্লাশিং হচ্ছে।এতে তার হলুদ মুখ খানায় গোলাপী আভার সৃষ্টি হলো।হলুদ ও গোলাপীর সংমিশ্রনে নাবিলের মুখ অদ্ভুদ সুন্দর দেখাচ্ছে।তা রাজ খেয়াল করে বলল,

–“আয় হায় নাবিল।তুই শেষ।শেষে কিনা আমাদের ভিলেন নাবিলও প্রেমে পড়ল।যেকিনা মেয়েদের দিকে তাকায়নি কখনও সেও কিনা আজ কারো প্রেমে হাবুডুবু খেতে লাগল।ভাবা যাই এগুলো?আবার কিনা ব্লাশ ও হচ্ছে।”

রাজের কথা আহানসহ আশে পাশের কয়েকজন হেসে দিল।তাদের হাসিতে নাবিল কিছুটা লজ্জা পেল।কিন্তু কিছু বলিল না।পাশ থেকে আহান বলে উঠল,

–“রাজ এখন আর এইসব বলিস না।দেখছিস না বেচারা লজ্জা পাচ্ছে?আচ্ছা যাই হোক।এখন কথা হলো আমাদের ভিলেন নাবিল যখন প্রেমে পড়েছে তখন তো ট্রিট দিতেই হবে।তাই না?

রাজও সম্মতি জানিয়ে বলল,

–“হ্যাঁ তুই ঠিকি বলেছিস।তো নাবিল ট্রিট কবে দিচ্ছিস।”

নাবিল মিনমিন করে বলিল,

–“আরে তোরা তো এমন ভাবে বলছিস আমি প্রেমে পড়ে ডুবে ডুবে জল খাচ্ছি না।জলের মধ্যে নিজেও ডুবে গেছি।ট্রিট দিব তোদের তবে এখন না।আগে আমি নিজে সিউর হয় যে আমি ওকে ভালবাসি কি’না।”

সবার হাসি মুখ নিমিষেই চুপসে গেল নাবিলের কথায়।সবাই একসাথে বলে উঠল,

–“মানে?”

নাবিল বলল,

–“মানে হলো আমি ওর প্রতি দুর্বল হয়েছি ঠিক আছে।কিন্তু আমি এখনও সিউর না যে আমি ওকে ভালবাসি কিনা।”

কলেজ ছুটির পর সামিরা নাবিলের জন্য দাঁড়িয়ে আছে নাবিলদের আড্ডা দেওয়ার জায়গায়।সামিরা আগে আগে আরশি ও রুপালীকে পাঠিয়ে দিয়েছে।কারন সে প্ল্যান কিরেছে নাবিলকে নিয়ে ঘুরতে যাবে।আর এও জানে তানি এইখানে আসবে।তখন তানিকে দেখিয়ে দেখিয়ে নাবিলের সাথে আরো বেশিই চিপকে থাকবে।তখন তানি দেখবে আর জ্বলবে লুচির মত ফুলতে।সেই মুহুর্তটা চরম শান্তির হবে সামিরার জন্য।ভাবতেই একরাশ শান্তি বয়ে গেল সামিরার কাছ দিয়ে।আহ

কিছুক্ষনের মধ্যেই নাবিলরা এসে পৌঁছাল।নাবিল সামিরাকে দেখে একটা অমায়িক হাসি দিল।প্রতিউওরে সামিরাও একটা হাসি দিল।রাজ আহানকে বলল,

–“দোস্ত চল আমরা কেঁটে পড়ি।নাবিল সামিরার সাথে কথা বলুক।”

আহান ভ্রু কুঁচকে বলল,

–“কেন আমরা যাব কেন?প্রতিদিনের মত আজও এক সাথেই যাব।”

রাজ নাক ফুঁলিয়ে আহানের দিকে তাকিয়ে বলল,

–“শালার বলদ।নাবিল নাকি এখনও বুঝতে পারছেনা সে সামিরাকে ভালবাসে কি’না।নাবিল বুঝার জন্য ওদের স্পেস দেওয়া উচিত তাই না?”

আহান মাথা চুলকিয়ে বলল,

–“ওহ হ্যাঁ তাইতো?আমি ত এত কিছু ভাবিনি।”

–“তা ভাববি কেন?ভাবিস ত ফালতু কথা।চল এইখান থেকে।”

রাজ আহানকে টেনে নিয়ে চলে গেল।

নাবিল সামিরার কাছে গিয়ে বলল,

–“তুমি এইখানে?”

–“হ্যাঁ আসলে আমি চাচ্ছি যে আমরা একটু ঘুরতে যাব।”

সামিরা কথাটা কাচুমাছু হয়ে বলল।সামিরার এমন ফেস দেখে নাবিল হাল্কা হাসল।আর বলল,

–“ঘুরতে যাবে ঠিক আছে।কিন্তু এখন তো দুপুর।এখন কেউ ঘুরতে যাই?আমরা বরং আগামীকাল যাব।বিকেলে।”

সামিরা কিউট ফেস করে বলল,

–“কিন্তু আমার তো আজকে যেতে ইচ্ছে করছে।”

সামিরা কিউট ফেস দেখে নাবিল আবারও দূর্বল হলো।সাথে আবারও হাসল।আর বলল,

–“আচ্ছা ঠিক আছে তবে চলো।”

নাবিলের কথায় সামিরার যেন খুশির আর ধরছে না।যেই বাইকে উঠতে যাবে তখনি পেছন থেকে ভেসে এলো তানির আওয়াজ।সামিরা খেয়াল করল তানির মুখ রাগে লাল হয়ে আছে।এ দেখে সামিরার যেন ভিষণ আনন্দ লাগল।তানিকে দেখে নাবিলের চেহেরায় ও বিরক্তির আভা দেখা দিল।সামিরা নাবিলকেও খেয়াল করল।আর একটা বিজয়ের হাসি দিল।

চলবে….