মিস্টার ভিলেন পর্ব-১০

0
1829

#মিস্টার ভিলেন
পর্বঃ১০
?সামিরা পপি?
____________________________
____________________________

আজকে সামিরা অনেক খুশি।কারন নাবিলের দেখা অবশেষে পেয়েছে সে।তাও আবার কথাও বলতে পেরেছে।উফফ ভাবতেই এক অদ্ভুত ফিলিংস আসছে।আজ কেমন যেন সব কিছু রঙিন রঙিন মনে হচ্ছে।সামিরাকে আজকে এত খুশি দেখে তার মা অনেক অবাক।সামিরা ঘরে আসার পর থেকে কেমন চঞ্চল হয়ে উঠেছে।এতদিন এই চাঞ্চল্যতা যেন কোথাও গুম হয়ে গিয়েছিল।সামিরাকে খুশি দেখে তার মা আর কিছু জিজ্ঞেস করল না।যেমন যেভাবে ইচ্ছে খুশি থাক।খুশি থাকাটায় বড় কথা।রাতের খাবারও সামিরায় রান্না করেছে।সামিরা ঘরের রান্না থেকে শুরু করে প্রায় সব কাজই জানে।আগে যখন গ্রামে ছিল তখন প্রায়ই ঘরের কাজ করত।শহরে আসার পর থেকে তেমন একটা করেনা।সামিরা রাতে খেয়ে আজ একটু জলদিই ঘুমিয়ে পড়েছে।কাল কলেজে নাবিল আসবে তাকে দেখবে সেই খুশিতে সামিরা কি’না কি করবে ভেবেই দিশেহারা প্রায় অবস্থা।নাবিলকে নিয়ে হাজারো রঙিন স্বপ্ন বুঁনতে বুঁনতেই তলিয়ে গেল ঘুমে।

——–

নাবিল সামিরা যে প্রোপোজ একসেপ্ট করেনি সেটা শুনে তখন অনেক খুশি হয়েছিল।কিন্তু সামিরাকে তা বুঝতে দেয়নি।সামিরার জ্বালানো গুলো এতদিন খুব মিস করেছে নাবিল।সামিরার পাগলামীতে কখন যে সামিরাকে আস্তে আস্তে ভাল লাগতে শুরু করেছে তা নিজেও জানেনা।সেটা আগে না বুঝলেও এই এক সপ্তাহে নাবিল ঠিকি বুঝেছে যে সে ধীরে ধীরে সামিরার প্রতি দূর্বল হয়ে পড়েছে।নাবিল এইবার সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছে সামিরা যদি তাকে আবার প্রোপোজ করে তবে আর ফিরিয়ে দিবেনা।এইবার একসেপ্ট করে নিবে।শুয়ে শুয়ে এইসব ভাবছিল আর মুচকি মুচকি হাসছিল তখনি নাবিলের ফোন বেজে উঠল।আর নাবিল ভাবনার জগৎ থেকে বেড়িয়ে এলো।মোবাইল হাতে নিয়ে দেখল আকাশ কল দিয়েছে।তাই তাড়াতাড়ি রিসিভ করল,

–“হ্যালো আকাশ কেমন আছিস?”

ওপাশ থেকে নাবিলের জবাব,

–“শালা আমি কেমন আছি সেটা এতক্ষনে জিজ্ঞেস করছিস?কোথায় নিজে একটু কল দিয়ে জিজ্ঞেস করবি তা না।”

–“আর বলিস না।এইসব রাজনীতির সাথে জড়িয়ে পুরোই পাগল হয়ে যাচ্ছি।তার উপর এতদিন হাতে,পায়ের ব্যাথায় ঘর থেকেও বের হতে পারিনি।”

–“হুম বুঝলাম।তো এখন তোর শরীর কেমন আছে?আগের থেকে ব্যাথা কমেছে?”

–“হ্যাঁ এখন আল্লাহ’র রহমতে সম্পূর্ণ সুস্থ।”

–“ওহ আচ্ছা। যাক ভালই হলো।তো চল কোথাও আড্ডা দেয় অনেকদিন হলো আমরা একসাথে হয়না।”

–“ওহ হ্যাঁ আড্ডা দেওয়ার কথা থেকে মনে পড়ল।বেশি কিছুদিন আগে আম্মু বলেছিল তোকে বলতাম মেঘলাকে নিয়ে আসতে।আম্মুর নাকি মেঘলাকে দেখতে মন চাচ্ছে।”

–“তাহলে ত ভালই হলো। আগামীকাল বিকেলে মেঘলাকে নিয়ে আসি তোদের বাসায়।তখন আড্ডাও দেওয়া হয়ে যাবে।”

–“আচ্ছা ঠিক আছে তাহলে।”

–“আচ্ছা এখন রাখি।”

–“হুম”।

আকাশের সাথে কথা বলে নাবিল ঘুমিয়ে পড়ে।

——–

সকালে সামিরা রেডি হচ্ছে কলেজে যাওয়ার জন্য।আজ একটা লাল রঙের সুতোর থ্রি-পিচ পড়েছে।লাল হিজাব বেধেছে।ঠোঁটে লাল লিপস্টিক। গতকাল রুপালীর দেওয়া ঝুমকো ছুড়ি গুলো।ডান পায়ে গোল্ডেন ও লাল রঙের মিশ্রণের পায়েল।চোখের কাজলের কথা নাই বললাম।কারন কাজল ছাড়া সামিরা একদিনও চলতে পারেনা।আর কিছু ভূলে গেলেও কাজলের কথা কখনও ভূলে না।সম্পূর্ণ রেড়ি হয়ে বেড়িয়ে পড়ল কলেজের উদ্দেশ্য।

রাস্তায় অনেক্ষন ধরে অপেক্ষা করার পড় একটা রিক্সা পেল।সেটা উঠে বসল।বিশ মিনিট পর কলেজে এসে গেছে।বিল মিটিয়ে কলেজে ডুকতে যাবে তখনি দেখল আরশি ও রুপালী দাঁড়িয়ে আছে।সামিরা তাদের সামনে গিয়ে মিষ্টি করে একটা হাসি দিল।আর বলল,

–“কিরে তোরা এইখানে দাঁড়িয়ে আছিস কেন?চল কলেজের ভেতরে।”

সামিরার কথার গুরুত্ব না দিয়ে আরশি বলল,

–“ওয়াও সামু তোকে লাল পরি লাগছে!ইউ লুকিং সো গর্জিয়াস!

রুপালিও বলিল,

–“হ্যাঁ সামি তোকে সত্যিই অসম্ভ সুন্দর লাগছে লাল ড্রেসে।”

সামিরা মুচকি হেসে বলল,

–“হয়েছে হয়েছে এইবার চল ভেতরে। গরমে দাঁড়িয়ে থাকতে পারছিনা।যে গরম পড়ছে মনে হচ্ছে শরীর ঝলসে যাবে।”

রুপালী ও আরশি,

–“হ্যাঁ চল।”

তারা কলেজে প্রবেশ করল। ক্লাসে যাওয়ার আগে একবার দেখে নিল নাবিলদের আড্ডা দেওয়ার জায়গাটাকে।জায়গা দেখার উদ্দেশ্য হলো নাবিল এসেছে কিনা।হ্যাঁ নাবিল এসেছে।নাবিলকে দেখে সামিরার মুখে হাসি ফুঁটে উঠল।আজ নাবিলও লাল শার্ট পড়ে এসেছে।বন্ধুদের সাথে কথা বলছে।নাবিলকে দেখে সামিরা নাবিলের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।পেছন থেকে রুপালী বলল,

–“সামি কোথায় যাচ্ছিস?আরে দাঁড়া আমরাও আসছি তোর সাথে।”

সামিরার সাথে রুপালী ও আরশিও গেল।সামিরা নাবিলের পাশে দাঁড়িয়ে বলল,

–“হেয় মিস্টার ভিলেন।কেমন আছেন?”

সামিরার আওয়াজ শুনে নাবিল সামিরার দিকে তাকাল।নাবিলের সাথে সাথে বাকি সবাইও তাকাল।আর তাকিয়েই সবাই স্তব্ধ হয়ে গেল।সামনে দাঁড়ানো লাল পরীকে দেখে নাবিল যেন কোথাও হারিয়ে গেছে।সামিরা বুঝতে পেরে মুচকি হাসি দিয়ে বলল,

–“কথা বলছেন না কেন?আর এইভাবে তাকিয়ে আছেন কেন?মনে হচ্ছে কখনও দেখেননি।”

নাবিল আনমনেই বলে উঠল,

–“দেখিনি তো।এখন দেখছি একটা পরীকে।”

নাবিলের কথায় সবাই অবাক হয়ে নাবিলের দিকে তাকায়।যখন নাবিল বুঝতে পারে যে সে কি বলছে তখন মাথা চুলকিয়ে আমতাআমতা করে বলল,

–“আব সবাই এইভাবে তাকিয়ে আছিস কেন?আমি কি এমন বলেছি?”

রাজ নাবিলের কপালের হাত দিয়ে বলিল,

–“ভাই তুই ঠিক আছি?জ্বর টর আসেনি তো?”

নাবিল বিরক্ত হয়ে বলল,

–“চুপ তুই।কি আবল তাবুল বলছিস?জ্বর আসবে কেন?”

–“তুই যে সামিরাকে দেখলে বিরক্ত বোধ করিস তাই।তাছাড়া আজকে আবার ওকে দেখে সুন্দর কম্পলিমেন্টও করছিস তাই ভাবলাম জ্বর এসেছে।”

নাবিল বিরক্তিতে ভ্রু কুঁচকে বলল,

–“সুন্দর লাগছে তাই সুন্দর বললাম।এতে এত কাহিনী করার কি আছে বুঝলাম না যত্তসব আজাইরা।”

সামিরা দু’জনকে থামিয়ে বলল,

–“প্লিজ স্টপ।আপনারা জগড়া পরে করেন।আর মিস্টার নাবিল আপনার সাথে আমার কিছু কথা ছিল।একটু অন্যদিকে আসবেন?প্লিজ?”

–“কি কথা? আর অন্যদিকেই বা কেন যাব?এইখানেই বলো।”

সামিরা রাগ দেখিয়ে বলল,

–“উফফ বড্ড বেশি কথা বলেন আপনি।যা বলছি তাই করেন।আসেন আমার সাথে।”

বলেই সামিরা চলে গেল।নাবিল সবার দিকে তাকাল সবাই ইশারা করে বলল যাওয়ার জন্য।নাবিলও গেল।একটা খালি ক্লাসে সামিরা নাবিলকে নিয়ে আসে।নাবিল ভ্রু কুঁচকে বলল,

–“কি ব্যাপার এইখানে নিয়ে এলে কেন?”

সামিরা নাবিলের সামনে এসে বলল,

–“বলছি।আচ্ছা আপনি আমার কয়েকটা কথার উত্তর দিন।”

–“কি কথা?”

–“আমি কি কোন দিক দিয়ে খারাপ?দেখতে কি সুন্দর নয়?নাকি আপনার যোগ্য না?আপনি যেমন চান তেমন হওয়ারও চেষ্টা করছি তাহলে আপনি আমাকে এখনও মেনে নিচ্ছেন না কেন?”

নাবিল আস্তে করে বলিল,

–“তুমি সব দিক দিয়েঠিক আছো।আমার জন্য তুমি নিজেকেও চেঞ্জ করছ এতে আমি খুশি হয়েছি।কিন্তু তমাকে কেন মেনে নিতে পারছিনা তা আমিও জানিনা।”

–“ওকে বুঝতে পেরেছি আমি।এতদিন ঘুরেও এতকিছু করেও আপনার মন পেলাম না।ঠিক আছে আর আপনাকে বিরক্ত করব না।আপনি আপনার মত আর আমি আমার মত।”

বলেই সামিরা চলে যাচ্ছে।সামিরার কথা গুলো শুনে নাবিল অবাক হয়ে তাকায়।সাথে বুকে একটু চিনচিনে ব্যাথাও অনুভব করে।নাবিলের মন বলছে সামিরাকে আঁটকা আর মস্তিষ্ক বলছে যেতে দে।মন এবং মস্তিষ্কর সাথে যুদ্ধ করে মন জিতল।সামিরা যখন বের হয়ে যাবে তখনি নাবিল পিছু ডাকল “সামিরা” বলে।সামিরাও যেন এইটার আশায় ছিল।সাথে সাথে দাঁড়িয়ে গেল।পেছনে ফিরে নাবিলের দিকে তাকাল।
নাবিল মিন মিন করে বলিল,

–“আসলে তমাকে কেন মেনে নিতে পারছিনা তা জানিনা ঠিকি।কিন্তু এই কয়দিন তোমার জ্বলাতন গুলো খুব মিস করেছি।এমন দিন ছিল না তোমাকে ভাবিনি।এইটাও বুঝতে পেরেছি যে আমিও ধীরে ধীরে তোমার প্রতি দূর্বল হয়ে গেছি।কিন্তু জানিনা তোমাকে ভালবাসি কিনা।তবে এইটা জানি তোমাকে আমার চাই।”

ব্যাস নাবিলের এই কথা গুলোই যথেষ্ট ছিল।নাবিলের কথায় সামিরার চোখ দু’টো জ্বল জ্বল করে উঠল।আর দেরি না করে দৌঁড়ে এসে নাবিলকে ঝাপটে ধরল।সামিরার এমন ধরাতে নাবিল কয়েক কদম পিছিয়ে গেল।পরে নাবিলও মুচকি হেসে জড়িয়ে নিল নিজের সাথে সামিরাকে।”

চলবে….