পর্ব ১৪+১৫
#মিস্টার ভিলেন
পর্বঃ১৪
?সামিরা পপি?
____________________________
____________________________
নাবিলরা সচরাচর যেখানে মিটিং করে আড্ডা দেয় সেখানে চলে গেল।গিয়ে দেখল রাজ আহানসহ আরো অনেকে আড্ডা দিচ্ছে।নাবিলকে দেখে রাজ ও আহান এগিয়ে এলো।তারা নাবিলের সাথে কথা বলছে কিন্তু নাবিল কারো সাথে কথাও বলছে না।আর না কারো কথার জবাব দিচ্ছে। নাবিল প্রচন্ড রেগে আছে।চোখ মুখ লাল হয়ে আছে।তা দেখে রাজ ও আহান একে অপরের মুখ চাওয়া চাওয়ি করছে।রাজ এগিয়ে এসে বলল,
–“কি হয়েছে নাবিল?তুই এমন রেগে আছিস কেন?”
নাবিল কথা বলছে না।রাগে ফুঁফাতে লাগল।রাজ আবারও বলল,
–“কিরে কথা বলছিস না যে?এইভাবে রেগে আছিস কেন?ঘন্টা খানেক আগে তো ঠিক ছিলি।হঠাৎ এমন কি হলো যে এইভাবে রেগে আছিস?”
নাবিল রেগে দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
–“এই ওই মেয়ে আমাকে ধোকা দিয়েছে।আমার সাথে চিটিং করেছে।”
আহান ও রাজ আবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল,
–“কোন মেয়ে?কার কথা বলছিস তুই?”
নাবিল চোখ মুখ আগের তুলনায় আরো লাল করে বলল,
–“ওই মেয়ে সামিরা।ওই সামিরা আমার সাথে চিটিং করেছে।”
রাজ ও আহান সামিরার নাম শুনে চমকে উঠল।দুইজনে আবার এক সাথে বলল,
–“মানে? কি বলছিস তুই?সামিরা তোকে ধোঁকা দিয়েছে মানে কি?”
নাবিল পাশে থাকা চেয়ারে একটা ঘুষি মেরে বলল,
–“ওই মেয়ে আমাকে ভালবাসে না।সব অভিনয় করেছে এতদিন।”
রাজ অবাক হয়ে বলল,
–“সামিরা অভিনয় করেছে মানে কি?কিছুই তো বুঝছি না।একটু ক্লিয়ারলি বল তো?”
তারপর নাবিল কলেজের সব কথা বলে। তা শুনে রাজ ও আহান শকড হয়ে গেল।কিন্তু তারা মানতে পারছে না যে সামিরা এমন কিছু করেছে।রাজ বলল,
–“দেখ নাবিল তুই তো সামিরার সম্পূর্ণ কথা শুনিস নি।দেখ এমনও তো হতে পারে যে এর পেছনে কোন কারন আছে।”
রাজের কথার সাথে সহমত জানিয়ে আহানও বলল,
–“হ্যাঁ রাজ ঠিকি বলছে।দেখ তোর এইভাবে চলে আসাটা ঠিক হয়নি।তোর উচিত ছিল সামিরার সম্পূর্ণ কথা শুনে আসার।দেখ আমরা যতদিন ধরে সামিরাকে দেখছি। ওর তোর প্রতি পাগলামী,কেয়ারিং দেখে কিন্তু একবারের জন্যও মনে হয়নি যে ও তোকে ভালবাসে না।”
রাজ বলল,
–“হ্যাঁ।তোর ওর সাথে কথা বলে দেখা উচিত ছিল।”
নাবিল বলল,
–“মনে হবে কেন যে ও আমাকে ভালবাসেনা?ও তো এইসব বাজি ধরেই করেছিল।আর বাজি জিতার জন্য কত সুন্দর করে,কত নিখুঁত করেই না অভিনয়টা করল।তাহলে তোরাই বল সেখানে আমরা কি করে বুঝব যে ও অভিনয় করছে?আজ যদি তানি না বলতো তাহলে তো না জানি সামিরা আরো কি কি করে ওর এই ট্রেপে আমাকে ফাঁসাতো?”
তানির নাম শুনে রাজ তাচ্ছিল্য হাসল।বলল,
–“হাহা তুই ওই তানির কথা বিশ্বাস করে নিলি?বাহ্!তুই কি জানিসনা যে তানির সাথে সামিরার সম্পর্ক কেমন?সামিরা আর তানি তো একে অপরকে সহ্যই করতে পারেনা।আমার কি মনে হয় জানিস?আমার মনে হয় এইসব কিছুর পেছনের কালপ্রিট হলো তানি।”
আহানও বলল,
–“হ্যাঁ নাবিল।রাজ ঠিকি বলছে।দেখ এমনও তো হতে পারে যে এইবাজি তানিই সামিরাকে দিয়েছিল?নয়তো তানিই বা কি করে জানল যে সামিরা বাজি ধরেই তোর সাথে রিলেশনে জড়িয়েছে?আর কার সাথে বাজি ধরেছে সেটাও নিশ্চয় তানি জানে।আমার তো মনে হচ্ছে তানিই সামিরাকে ফাঁসিয়েছে।”
রাজ ও আহানের কথা শুনে নাবিল একটু শান্ত হলো।কিন্তু ও কিছুতেই আর সামিরাকে বিশ্বাস করতে পারছে না।কি করে সামিরা ওর সাথে এত বড় একটা গেম খেলতে পারল?সামিরার প্রতি নাবিলের প্রচন্ড রাগ ও ঘৃণা হচ্ছে।
সামিরা আনমনে রাস্তার পাশ দিয়ে হাঁটছে।সে আজকে আবারও হেঁটে হেঁটে বাড়ি যাচ্ছে।বারবার নাবিলের চলে যাওয়াটা মনে পড়ছে।কি করে নাবিল চলে যেতে পারল?অন্তত একটি বার ত তার কথা শুনতে পারতো।কিন্তু না নাবিল কিছুই শুনল না।এখন থেকে হয়তো নাবিল আর সামিরার দিকে ফিরেও তাকাবেনা।আনমনে এইসব ভেবে হেঁটে চলেছে সামিরা।যখন জনমানব পেরিয়ে তাদের বাড়ি যাওয়ার নির্জন পথে এলো।তখন তার মনে হলো কিছুদিন আগের মতো আজকেও কেউ তার পিছু নিচ্ছে।এইভেবে সামিরা ভয়ে ভয়ে পেছনে ফিরল কিন্তু না কেউ নেই।একটা স্বস্থির নিশ্বাস নিয়ে যেই আবার সামনে ফিরল তখনি সামনে দাঁড়ানো মানুষটাকে দেখে সামিরা যেন ভয়ে মরে যেতে চাচ্ছে।যার জন্য পালিয়ে তারা গ্রাম থেকে শহড়ে পাড়ি জমিয়েছিল।আজ সে স্বয়ং সামিরার সামনে এসে দাঁড়িয়েছে।সামিরা যেন কথা বলায় বন্ধ হয়ে গেছে।নিশ্বাস নিতেও যেন ভূলে গেছে।পারছে না পিছু ফিরে দৌঁড় মারতে।এই মূহুর্তে তার পা দু”টোও যেন শত্রুতা শুরু করেছে।কিছুতেই চলতে চাচ্ছে না।ক্রমশ অবশ হয়ে আসতে চাচ্ছে।সামিরা ঘামতে লাগল।সামিরার এমন অবস্থা দেখে সামনে দাঁড়ানো লোকটি বাঁকা হাসি দিল একটা।তারপর সামিরার চারপাশে গোল হয়ে ঘুরতে ঘুরতে বলল,
–“হে সামু বেবি কেমন আছো তুমি?ওপস আমি তো ভূলেই গেছিলাম যে তুমি খুব ভালো আছো।ওপ্স সরি ওইটা ভালো ছিল হবে তাই না?”
বলে সামিরার দিকে তাকিয়ে বাঁকা হাসতে লাগল।সামিরা ঘামতে ঘামতে তুতলিয়ে বলল,
–“জ.জ.জ্জনি ভাইয়া আ.আপনি?”
–“ইয়েস মি মাই লাভ।ইট’মি জনি।আর তুমি আমার নামটা জ্জনি কেন বললে?ওইটা জনি হবে।আর তুমি তুতলিয়ে কথা কেন বলছ?বাই এনি চান্স তুমি কি আমাকে ভয় পাচ্ছো?বেবি তুমি আমাকে এত কেন ভয় পাও বলো ত?দ্যাট’স নট ফেয়ার।ওকে?”
সামিরার এই মুহুর্তে কান্না করতে ইচ্ছে করছে।তাও যেই সেই কান্না না।গলা ফাঁটিয়ে চিৎকার করে কান্না করতে ইচ্ছে করছে।কিন্তু কান্না গুলো আসতে চেয়েও যেন আসতে পারছে না।
–“হেয় সামু তুমি এমন হয়ে আছো কেন?ওহ আমিও ভূলে যাই।তোমার তো আজ দিন খারাপ যাওয়ার কথা তাই না?নাবিল যে তোমাকে ছেড়ে চলে গেল।”
জনির মুখে নাবিলের নাম শুনে সামিরা চমকে উঠল।আর বলল,
–“আ আ আপনি কি ক্কি কিভাবে জানলেন নাবিলের কথা?আপনার তো জানার কথা না।”
জনি বাঁকা হাসি দিয়ে বলল,
–“ওইটা সিক্রেট থাক বেবি।তো বলো দুই বছর ধরে আমাকে ছাড়া কেমনে থাকলে?”
সামিরার ঘাম ধরধর করে পড়ছে।না জানি এখন কি করবে তার?সামিরা জনিকে জমের মত ভয় পায়?তার উপর এখন নাবিলের ব্যাপারও জেনে গেছে।
সামিরা ভয়ে ভয়ে বলল,
–“ভাইয়া চলেন না আমাদের বাড়ি।বেড়াবেন আরকি।”
জনি তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলল,
–“হাহা তোমাদের বাড়ি?হুম যাব অবশ্যই যাব।কিন্তু এখন না।এক্কেবারে সময় মত যাব আরকি।”
–“মা মানে?”
–“তোমার এখন মানে জানতে হবে না।এখন গাড়িতে উঠো।”
গাড়িতে উঠার কথা শুনে যেন সামিরার জান যাই যাই অবস্থা।ভয়ে ভয়ে বলল,
–“গা গাড়িতে কে কেন ভাইয়া?”
–“উফ বড্ড বেশি কথা বলো।চুপচাপ গাড়িতে উঠে বস।ভয় পেতে হবে না।তোমাকে তোমার বাসার সামনে নামিয়েই আমি চলে যাব।”
সামিরা বেশি কথা না বলে গাড়িতে উঠে বসে।জনিও উঠে বসে।গাড়ি স্টার্ট দেয়।
পর্বঃ১৫
?সামিরা পপি?
_____________________________
_____________________________
জনি সামিরাকে বাড়ির সামনে নামিয়ে দিয়ে চলে গেল।সামিরা জনির যাওয়ার দিকে তাকিয়ে এক ঢোক গিলল।তার প্রচন্ড রকমের শরীর কাঁপছে।নিজেকে স্থির রাখতে পারছে না।পা দু’টো অসাড় হয়ে আসছে।মাথা টাও ঘুরছে।একসময় সামিরা গেটের সাথে মাথা ঠেকিয়ে নিচে বসে পড়ে।এই মূহুর্তে তার করার মত কোন শক্তি নেয়।কিছুক্ষন ওইভাবে বসে থেকে আস্তে আস্তে উঠে দাঁড়াল।পা দু’টো চলতে চাইছে না।তবুও ধীরে ধীরে হেঁটে কলিং বেল দিল।কিছুক্ষন পরেই তার মা দরজা খুলে দিল।সামিরার মা সামিরার মুখ দেখে আৎকে উঠলেন।একি হাল মেয়ের?কেমন বিভৎ চেহেরা।চোখ দু’টো লাল।কেমন যেন এলোমেলো অবস্থা।সামিরা তার মায়ের সাথে কোন কথা না বলে ড্রয়িং রুমের দিকে পা বাঁড়াল।সামিরার মাও সামিরার পিছু যেতে যেতে বলিল,
–“সামিরা কি হয়েছে তোর?তোর এই অবস্থা কেন?তুই কি কান্না করেছিস?কেউ কি কিছু বলেছে?”
সামিরার মুখে কোন কথা নেই।গিয়ে ধপ করে সোফায় বসে পড়ল।তার মা উত্তর না পেয়ে আবার জিজ্ঞেস করল,
–“কি হয়েছে তোর সামিরা?মাকে বল না।আমার যে খুব টেনশন হচ্ছে।”
সামিরা মায়ের কান্না মাখা আওয়াজ শুনে চোখ খুলে মাকে দেখলে।তারপর হুট করে জড়িয়ে ধরে হাওমাও করে কেঁদে উঠল।মেয়ের এমন কান্নায় সামিরার মা ভড়কে গেল।সাথে বুকের মধ্যেও মুচড় দিয়ে উঠল।
–“সামু এই সামু মা আমার বল কি হয়েছে তোর?এইভাবে কাঁদছিস কেন?কেউ কিছু বলেছে?বল না।আমার যে শান্তি লাগছে না।”
সামিরা কান্না করতে করতে বলল,
–“মা ওই ওই লোকটা আবার ফিরে এসেছে।এবার হয়তো আর আমাকে ছাড়বে না।মা আমি আর আমার স্বাধীনতা পাবো না।দুই বছর যে একটু শান্তিতে ছিলাম তা আবার চলে গেছে।”
সামিরার মা সামিরার কথায় চিন্তায় পড়ে গেলে।সামিরা মুখে দু’হাত রেখে বলল,
–“তুই কার কথা বলছিস? কে ফিরে এসেছে আবার?”
–“ওই জনি ভাইয়া মা।জনি ভাইয়া।”
জনির নাম শুনে সামিরার মাও যেন চমকে উঠল।কিন্তু মেয়ের সামনে নিজেকে দূর্বল প্রকাশ করা যাবে না।নয়তো আবার মেয়ে দূর্বল হয়ে পড়বে।তাই কিছু না বলে তিনি সামিরাকে বুঝিয়ে সুঝিয়ে রুমে পাঠিয়ে দিলেন।আর নিজে নিজে বললেন,
–“না এইবার আর না।এইবার আর পালিয়ে যাব না।এইবার জনির কিছু একটা করতেই হবে।কিন্তু করবোটা কি?”
সামিরা ঘরে এসে হিজাব খুলে এক পাশে ছুড়ে মারল।হিজাবে মারা পিন গুলোও সারা ঘরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ল।যেকোন সময় পিন গুলো পায়ে গেথে যেতে পারে।কিন্তু এই মুহুর্তে সেই কথা সামিরার মাথায় আসছে না।সে খাটের সাথে মাথা ঠেকিয়ে নিচে বসে পড়ল।আর ভাবতে লাগল পুরোনো কথা।
সামিরা তখন ক্লাস এইটে পড়ে।একদিন স্কুলে যাচ্ছিল সেদিন হোঁচট খেয়ে রাস্তার কিনারায় পিড়ে যাই।পড়ে যাওয়ার মূল কারন হলো সামনে ছোট্ট একটা গর্ত কিন্তু সে গর্তটা সামিরা খেয়াল করেনি।খেয়াল করবেই বা কি করে?সে’তো ছোট থেকেই একটু চঞ্চল ছিল।কোন মতে হাত পা ঝেড়ে উঠে দাঁড়ায়।তখনি পেছন থেকে শুনল কেউ একজন বলছে,
–“ভাইয়া হয়েছে তো?আর কতবার উঠবস করবো?আমার তো পায়ে প্রচুর ব্যাথা করছে।প্লিজ এইবারের জন্য মাফ করে দিন।”
যাকে ভাইয়া ডাকল সে বলল,
–“নো নো মাফ করা যাবে না।এক্ষুনি উঠবস কর নচেৎ শাস্তি আরো বাড়বে।”
ছেলেটাও আর কোন পথ না দেখে উঠবস করতে লাগল।কানে ধরে উঠ বস করতে করতে প্রচুর ক্লান্ত হয়ে যাই কিন্তু তবুও ছেলেটাকে ছাড়ে না।এইসব সামিরা দেখে প্রচন্ড রেগে যাই।সামিরা ওদের সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে বলল,
–“এই যে সমস্যা কি আপনার হ্যাঁ?আপনি আমার বন্ধু রিহানকে এইভাবে উঠবস করাচ্ছেন কেন?ছাড়ুন বলছি ওকে।”
সামিরার ঝাঁঝালো আওয়াজ শুনে সেখানে যে চার পাঁচজন ছিল তারা ঘুরে তাকায়।আর যে ছেলেটা রিহানকে উঠবস করাচ্ছিল সে’তো পিচ্ছি সামিরাকে দেখে হা করে তাকিয়ে থাকে।সামিরা নীল কালারের স্কুল ড্রেস পড়া।দু’পাশে দু’টি বিনুনি গাথা।কাঁধে স্কুল ব্যাগ ঝুলানো।একদম পিচ্ছি একটা মেয়ে।ছেলেটার থাকানো দেখে সামিরা বিরক্ত হয়ে বলল,
–“এই যে আপনাকেই বলছি শুনতে পাচ্ছেন না?রিহানকে ছাড়ুন।স্কুলে যেতে হবে।লেট হচ্ছে।”
সামিরার বিরক্তিকর ফেস দেখে যেন আরো হা হয়ে যাই ছেলেটা।সামিরা এত অল্প বয়সের হয়েও এত পিচ্ছি হয়েও কথা বলার স্টাইলে বুঝা যাচ্ছে যে সে এই বয়সে কতটা ম্যাচিউর।
ছেলেটার এমন হা করে থাকা দেখে পাশ থেকে অন্য আরেকটা ছেলে বলল,
–“কিরে জনি কোথায় হারিয়ে গেলি?আর এই পিচ্ছিটার দিকে এইভাবে তাকিয়ে আছিস কেন?মনে হচ্ছে এক্ষুনি গিলে ফেলবি।”
পাশের ছেলেটার কথায় জনির ধ্যান ভাঙে।সে সামিরার দিকে তাকিয়ে থেকেই রিহানকে বলিল,
–“যা রিহান তোকে আজকে মাফ করে দিলাম।”
কথাটা শুনে রিহান খুশি হয়ে সামিরার হাত ধরে বলল,
–“থ্যাঙ্কিউ সামু।তোর জন্য বেঁচে গেছি।এখন চল স্কুলে যাই।”
রিহানের সামিরার হাত ধরাটা কেন জানি জনির পিছন্দ হলো না।সে রেগে চোখ লাল করে রিহানকে বলিল,
–“রিহান তুই ওর হাত ছাড়।আর কখনও ওর হাত ধরবি না।”
উপস্থিত সবাই অবাক হলো জনির কথায়।সামিরাও অবাক হয়ে বলল,
–“ও কেন আমার হাত ধরবে না?ও আমার ফ্রেন্ড তাই একশবার ধরবে হাজারবার ধরবে।”
সামিরার কথায় জনি যেন আরো তেঁতে উঠল।
–“তমার ফ্রেন্ড হোক।আর যেই হোক।আমি যখন বলেছি তখন ধরবে না। শুধু ও না।কোন ছেলেই যেন না ধরে।বুঝেছ?”
সামিরা রিহানের কথায় কপাল কুঁচকালো।কিন্তু কিছু বলল না।বিরক্ত হয়ে নিজেই রিহানের হাত ধরে চলে গেল স্কুলের দিকে।সামিরা যে রিহানের হাত ধরেছে তা দেখে জনির মাথায় যেন রক্ত উঠে গেল।জনির এমন রাগ দেখে জনির এক বন্ধু অবাক হয়ে বলিল,
–“জনি তুই ঠিক আছিস?তুই ওই পিচ্ছি মেয়েটাকে কি বলছিলিস এইসব?আর ওই মেয়ে কার হাত ধরে বা কে ওই মেয়ের হাত ধরবে এতে তুই কেন বাঁধা দিচ্ছিস?তুই কি ওই মেয়েকে আগে থেকে চিনিস?”
জনি তার বন্ধুর কথায় বুঝতে পারল সে কি করেছে এতক্ষন।সেই সব ভেবে সে নিজেই অবাক হচ্ছে।
–“আরে আমি তো নিজেই বুঝছি না যে আমি এমন কেন করেছি?”
–“বাই এনি চান্স তুই কি ওই পিচ্ছিটাকে পছন্দ করে ফেলেছিস নাকি?”
বলেই জনির বন্ধুরা হাসতে লাগল।জনি নিজে যেন নিজের মধ্যেই নেই।এইভাবে বেশ কিছুদিন চলে গেল।সামিরা ক্লাস নাইনে উঠল।জনিও ইন্টার ফাস্ট ইয়ারের শেষের দিকে ছিল।জনি প্রতিদিন সামিরাকে দেখিত।জনি ছোট থেকেই বেশ দুষ্টু ছিল তাই তার বাবা মা তাকে গ্রামে নানুর বাড়ি পাঠিয়ে দেয়।সেখানেই থেকে পড়া লেখা করে।জনি যে কলেজে পড়ে সেখানে স্কুলও আছে।তাই সামিরাকে দেখার বেশ সুবিধা হয়।সামিরাকে প্রতিদিন দেখতে থাকে।আসতে আসতে ভালবেসে ফেলে।এর মধ্যে জনি বেশ রাগী হয়ে উঠে।তার একটাই কারন তা হলো সামিরা।সামিরার আশে পাশে কোন ছেলেকে সহ্য করতে পারেনা জনি।যাকে দেখবে তাকেই মারবে।এইসব দেখে সামিরা বেশ ভয় পেয়ে যাই।প্রথম প্রথম জনিকে ভয় না পেলেও দিন যত যাচ্ছিল ততই সামিরার ভয় বাড়ছিল।মনের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়ে যাই সামিরার।এইভাবে সামিরা নাইন শেষ করে টেনে উঠে।আর জনি ইন্টার সেকেন্ড ইয়ারের মডেল টেস্ট দেয়।এর ভিতর গ্রামের কম বেশি সবাই জেনে যাই জনি যে সামিরার জন্য ছেলেদের মারে।রিহানও সামিরার থেকে আলাদা হয়ে যাই।সামিরার পরিবারের সবাইর সাথে গ্রামের অনেকে কথা বলে বন্ধ করে দেয়।উহু জনিকে ভয় পেয়ে নয়।তারা নিজেদের সন্তানের কথা চিন্তা করে।জনি তো সামিরাদের ঘরে এসেও সামিরাকে শাসন করে যাই।সামিরার প্রতি জনির অত্যাচার দিন দিন বাড়তে থাকে।সেটা শারীরিক অত্যাচার না হলেও মানষিক ভাবে সামিরা প্রচুর অত্যাচারিত।
কষ্ট করে সামিরা ক্লাস টেনের পরিক্ষা দেয়।তখন জনি অনার্স ফাস্ট ইয়ারে।সামিরার বাবা মা নিজেদের কথা না ভাবলেও মেয়ের সম্মানের কথা প্রচুর ভাবে।জনির কারনে গ্রামে মেয়ের বদনাম ছড়িয়ে পড়ে।লোক মুখে মেয়েকে নিয়ে বাজে কথা শুনতে সামিরার মা ভাই আর বাবার প্রচুর খারাপ লাগে।তাই তারা পরিকল্পনা করে গ্রাম ছেড়ে চলে যাবে।তারা সুযোগের অপেক্ষায় ছিল।একদিন তারা জানতে পারে জনি তাদের বাড়ি গেছে।সেই সুযোগে রাতে সামিরারা শহরে পাড়ি জমায়।এইখানে এসে ইন্টারে ভর্তি হয়।দুইবছর খুব ভাল ভাবে কাঁটে।জনির প্যারা থেকে মুক্ত ছিল।যেদিন ভর্তি হতে যাই সেদিন নাবিলকে মারামারি করতে দেখেছিল।সেদিন তার খুব ভাল লেগেছিল।কিন্তু নাবিলকে লুকিয়ে দেখত কিছুই বলতো না।কেঁটে গেল বেশ কিছুদিন
এখন আবার সেই অতিত জনি তার সামনে আসল আজ।যা আবার তার স্বাধীনতা শেষ করে দিয়েছে।এখন শুধু সামিরার একটাই ভয় সেটা হল নাবিল।জনি না আবার নাবিলের কোন ক্ষতি করে বসে।সেই সব ভেবে সামিরার প্রচুর কান্না পাচ্ছে।নিজেকে বড্ড অসহায় লাগছে আজ।তার মধ্যে নাবিলও তাকে ভুল বুঝল।তার কোন কথায় শুনল না।এখন কি করবে সামিরা?
চলবে…..