মুখোশের_আড়ালে পর্ব-১১

0
2463

#মুখোশের_আড়ালে
#Writerঃতাসনিম_রাইসা(আরিয়ানা)
#Partঃ11

রাই,আরিয়ান আর আরিয়ানের মা বাবা হসপিটালে পৌঁছে যায়…আরিয়ান ডক্টরের সাথে কথা বলছে।।ডক্টরের সাথে কথা বলে আরিয়ান রাজের কেবিনে যায়…রাজ চোখ বন্ধ করে ছিল,কেবিনে কারো আসার শব্দে চোখ খুলেই আরিয়ানকে দেখলো…উঠে বসতে গিয়েও পারলো না…আরিয়ান রাজের উদ্দেশ্যে বললো…
.
আরিয়ানঃতোকে কষ্ট করে উঠতে হবে না…এখন কি অবস্থা বল??
.
রাজঃএই তো ভালো…নীরব কোথায়??(জিজ্ঞাসার দৃষ্টিতে)
.
আরিয়ানঃতোর পাশের কেবিনেই আছে।।ওর এখনো সেন্সলেস ডক্টর বলেছে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সেন্স না ফিরলে উনারা কিছুই করতে পারবে না…২৪ ঘণ্টা পূরণ হতে আর মাত্র ৩ ঘণ্টা বাকি আছে(হাতের ঘড়ির দিকে তাকিয়ে)
.
রাজঃআমার জন্যই আজ ও এই অবস্থা।।আমি থেকেও ওকে আর মিমিকে রক্ষা করতে পারলাম না…মিমিকে লাশ হয়ে ঝুলতে হলো
.
আরিয়ানঃতুই জানলি কি করে মিমিকে ঝুলনতো অবস্থায় পাওয়া গেছে তুই তো সেন্সলেস ছিলি(সন্দেহের দৃষ্টিতে)
.
রাজঃএটা কেমন কথা বলছিস আরিয়ান??(বেশ রাগ দেখিয়ে)
.
আরিয়াঃসরি তুই তো সেখানেই ছিলি
.
রাজঃহুম আচ্ছা রাই কোথায়??আর ফুফা ফুঁপির কি অবস্থা??
.
আরিয়ানঃএই আছে কোনো রকম,এরকম পরিস্থিতিতে কেউই ভালো থাকতে পারে না রাজ
.
রাজঃহুম
.
আরিয়ানঃআচ্ছা তুই থাক আমার কিছু দরকারি কাজ আছে যেতে হবে…কিছু লাগলে নার্সকে ডাক দিস
.
রাজঃওকে

আরিয়ান রাজের কেবিন থেকে বেড়িয়ে নীরবের কেবিনে ঢুকে ওর পাশে গিয়ে বসলো…রাই সেখানে এককোনে দাঁড়িয়ে নীরবে চোখের পানি ফেলছে।।এই মুহূর্তে ওর নিজেকে বড্ড অসহায় মনে হচ্ছে…হঠাৎ ওর একটা ভিডিওর কথা মনে পড়লো রাজ ওদের দেখিয়েছিলো…

রাই আর কিছু না ভেবেই কেবিন থেকে বেড়িয়ে গেলো…আরিয়ান রাইয়ের এরকম বিহেভে কিছুটা অবাক হলো।।আরিয়ান রাইয়ের পেছনে ছুটছে…রাই রাজের কেবিনে যায়…রাজ রাইকে দেখে কিছুটা অবাক আর ভয় পেলেও নিজেকে সামলে নিয়ে রাইয়ের দিকে তাকায়…

রাজঃরাই তোর কি হয়েছে??এভাবে তাকিয়ে আছিস কেনো??কিছু কি বলবি??
.
রাইঃনিশ্চুপ……..

আরিয়ান রাজের কেবিনে ঢুকতেই দেখলো রাই রাগে ফুঁসছে আর রাজের দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে…আরিয়ান কিছু বলতে যাবে তার আগেই রাই কেবিন থেকে বেড়িয়ে পড়লো।।এই মুহূর্তে ওর রাগলে চলবে না,এই মুহূর্তে রেগে কিছু বললে সব থেকে বোকামির কাজ হবে…আরিয়ান রাইয়ের কাছে যায়,রাইয়ের দিকে জিজ্ঞাসার দৃষ্টিতে তাকায়…

আরিয়ানঃরাই তোমার হঠাৎ কি হলো??এভাবে চলে আসলে কেনো??
.
রাইঃআরিয়ান ভাইয়া আমাদের এই মুহূর্তে থানায় যেতে হবে
.
আরিয়ানঃহুম তা তো যাবো বাট তোমার হঠাৎ কি হলো??
.
রাইঃসেগুলো সব পরেই জানতে পারবে

আরিয়ান আর কোনো কথা বাড়ালো না…রাইকে নিয়ে থানার উদ্দেশ্যে রওনা হলো…থানায় পৌঁছে আরিয়ান ওসির সাথে কথা বলে মিমির কেশটা ওর দায়িত্বে নেয়…রাই অফিসারের উদ্দেশ্যে বলে উঠলো…

রাইঃআচ্ছা স্যার সেদিন রাজ ভাইয়া আর নীরব ভাইয়া থানায় এসে আপনাকে কোনো ভিডিও দেখিয়েছিলো কি??
.
অফিসারঃহুম রাতের করা একটা ভিডিও দেখিয়েছিলো যা আপনার ঘরের ভিডিও ছিলো,কেউ একজন আপনায় ধর্ষণ করেছিলো

ধর্ষণের কথা শুনতেই রাইয়ের বুকটা কেপে উঠে…আজ ওর সাথে এমন কিছু না হলে মিমিকে আজ এভাবে মরতে হতো না…চোখের কোনে পানি এসে পরে নিজেকে সামলে আবার জিজ্ঞাসা করে…

রাইঃআচ্ছা যে আমায় ধর্ষণ করেছে সে কি ছেলে ছিলো??

রাইয়ের এরকম প্রশ্নে আরিয়ান আর অফিসার দুজনই থতমত খেয়ে যায়…অফিসার রীতিমতো রেগে যায় রাইয়ের এরকম অদ্ভুত প্রশ্নে!!অনেকটা রাগ নিয়েই বলে উঠলেন…

অফিসারঃএটা কিরকম প্রশ্ন রাই??ধর্ষণকারীটা ছেলেই ছিল আর সে তোমাদের পাশের বাড়ির ছেলে সিয়াম…
.
রাইঃআপনি সিউর তো
.
অফিসারঃআশ্চর্য ভিডিওতে সাফসাফ ছেলেটাকে দেখা যাচ্ছিলো আর রাজ তো তাই বললো

রাই আর কিছু বললো না কারণ সে জানে অফিসার এই কথাগুলোই তাকে বলবে তাই সে আর কথা বাড়ালো না…আরিয়ান ঠাই সেখানে থ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে…এই মুহূর্তে তাকে বোকারাম মনে হচ্ছে আর রাইকে সদ্য জয়েন করা পুলিশ অফিসার মনে হচ্ছে,যেখানে পুলিশ ওকে জিজ্ঞাসা বাদ করবে সেখানে ও উল্টো পুলিশকেই অদ্ভুত অদ্ভুত প্রশ্ন করছে…রাই আরিয়ানের হাত ধরে টেনে থানা থেকে বেড়িয়ে আসে…

আরিয়ানঃআচ্ছা রাই তুমি তো আমায় কোনো ভিডিওর কথা বলো নি
.
রাইঃবাসায় চলো সবটা বলবো আর এই পুলিশব্যাটার চাকরি খাওয়ার ব্যবস্থা তোমাকে করতে হবে
.
আরিয়ানঃআচ্ছা তা না হয় করবো বাট অফিসার করেছে টা কি বলবা তো!!
.
রাইঃআচ্ছা তোমায় পুলিশ বানিয়েছে কে বলো তো আমায়??
.
আরিয়ানঃকেনো কেনো??(ভ্রু কুচকে)
.
রাইঃযে ব্যক্তি তোমায় পুলিশ বানিয়েছে তাকে আর তোমাকে আমি কতক্ষণ রাম ধলাই দিতাম
.
আরিয়ানঃএইবার কিন্তু আমায় অপমান করা হচ্ছে(মুখ ফুলিয়ে)

আরিয়ানের কথা শুনে রাই ফিক করে হেসে দিলো…আরিয়ান মুগ্ধ নয়নে রাইকে দেখে যাচ্ছে…রাই তা খেয়াল করতেই কিছুটা লজ্জা পেলো…আরিয়ান রাইয়ের দিকে তাকিয়েই বলে উঠলো…

আরিয়ানঃএই হাসিটাই তো এতক্ষণ দেখতে চেয়েছিলাম…রাই যা হবার ছিল তাতো হয়ে গেছে উপরওয়ালার ইচ্ছেতেই এটা হয়েছে…সবটা ভুলে যেতে বলবো না কিন্তু সবটা মনে রেখে নিজেকে গড়তে তো পারো…
.
রাইঃনিশ্চুপ………
.
আরিয়ানঃজানি তোমরা মেয়েরা নরম তুলোর মতো আর তোমাদের মনটা কাচের আয়নার মতো হয়…তোমাদের মনটা নরম থাকে আর তাই অতি সহজেই তোমরা ভেঙ্গে পরো…রাই জীবন একটা যুদ্ধক্ষেত্র যুদ্ধ করেই আমাদের বাচতে হয়…নিজেকে শক্ত করো নতুন করে গড়ে তুলো…আল্লাহ্‌ তায়ালা তোমায় একটা সুযোগ দিয়েছে নিজেকে prepared করতে আর পাপীদের শাস্তি দেয়ার জন্য তোমায় stronge থাকতে হবে
.
রাইঃনিশ্চুপ……(চোখের পানি পরছে)
.
আরিয়ানঃরাই চোখের পানি মুছে ফেলো…জীবনে আর কাউকে না পেলেও আমায় তুমি তোমার পাশে পাবে

রাই আরিয়ানের কথাগুলো শুনে কিছুটা ভরসা পেলো…ওর কাছে সব থেকেও যেন নেই,মিমি সবটা সময় ওর সাথে ছিলো…কেনো মিমির সাথেই এমনটা হতে হলো…নাহ ও আর কাঁদবে না আল্লাহ্‌ ওকে একটা বড় সুযোগ দিয়েছে অপরাধীদের শাস্তি দেয়ার ও সেটাই করবে…

আরিয়ান রাইকে চুপ থাকতে দেখে বলে উঠলো…

আরিয়ানঃকাঁদলে তো তোমায় পুরো পেত্নীর মতো লাগে
.
রাইঃকিহ পেত্নী??(নাক ফুলিয়ে)
.
আরিয়ানঃহুম সত্যি আয়নায় একবার নিজের মুখটা দেখো
.
রাইঃআমি পেত্নী না আপনার বউ পেত্নী হুহ
.
আরিয়ানঃআমি কোথায় তোমায় পেত্নী বললাম…বললাম পেত্নীর মতো দেখতে
.
রাইঃঐ একি কথা
.
আরিয়ানঃআচ্ছা চলো মিমির মা বাবাকে দেখে সোজা বাসায় যাবো আর খুব শীঘ্রই এই পুলিশ অফিসারের টাক মাথাটা ফাটানোর ব্যবস্থা করতে হবে

আরিয়ানের কোথায় রাই হু হা করে হেসে দিলো…আরিয়ান আর রাই থানা থেকে বেড়িয়ে মিমির মা বাবাকে দেখে বাসায় চলে যায়…

চলবে………