মুগ্ধতায় মুগ্ধ পর্ব-০২

0
817

#মুগ্ধতায়_মুগ্ধ♥️
#Labiba_Islam_Roja
#Part_02
.
🍁
অফিস যাওয়ার জন্য বেড়িয়েছে আফিফ!মুগ্ধতার জন্য মনটা বেশ খারাপ তাঁর।ছোট থেকে কষ্ট করে করে এই পর্যন্ত পৌঁছেছে মেয়েটি।যাও একটু সুখের স্বপ্ন দেখেছিলো, আদনান কে আকড়ে বাঁচতে চেয়েছিলো সেটাও খুব বাজেভাবে ভেঙ্গে গেলো।এসব ভাবতে ভাবতে গাড়ি ড্রাইভ করছে আফিফ।হঠাৎ গাড়ির সামনে একটা মেয়ে এসে পড়ে।অন্য মনস্ক হওয়ায় প্রথমে খেয়াল করেনি।যখন খেয়াল করলো তখন অনেক দেরি হয়ে গেছে।তবুও সাথে সাথে হার্ড ব্রেক কষে আফিফ।কিন্তু তাতেও শেষ রক্ষা হয়নি।গাড়ির সাথে ধাক্কা খেয়ে কিছুটা দূরে ছিটকে পড়ে মেয়েটি।গাড়ি দাঁড় করিয়ে দ্রুত গাড়ি থেকে নেমে পড়ে আফিফ।ততক্ষণে পাবলিক ঘিরে ফেলেছে আফিফকে।রাস্তায় পড়ে আছে মেয়েটি সম্ভবত জ্ঞান হারিয়েছে।কপাল ফেঁটে রক্ত ঝরছে।ফর্সা হাত পা ছিলে রক্ত ঝরছে।পাবলিক যা নয় তা বলা শুরু করেছে।আফিফ সেসব কথায় পাওা না দিয়ে মেয়েটার কাছে গেলো।সত্যি মেয়েটা জ্ঞান হারিয়েছে।আফিফ দৌড়ে গাড়ি থেকে পানির বোতল নিয়ে মুখে পানির ঝাপ্টা দিলো,গালে আলতো চাপ দিলো কিন্তু তাতেও জ্ঞান ফিরলো না তাঁর।মেয়েটির সাথেও কেউ নেই।একাই বেড়িয়েছ হয়তো।বাধ্য হয়ে মেয়েটাকে পাঁজাকোলে করে নিজের গাড়িতে বসিয়ে দিয়ে নিজেও উঠে গাড়ি চালানো স্টার্ট করলো আফিফ।গন্তব্য হসপিটাল…!!
.
.
🍁
ছেলেটা নিজের ক্ষতস্থান ধরে চেঁচানো মাএই বাইকে বসে থাকা সেই ছেলেটা দৌড়ে এই ছেলেটাকে উদ্দেশ্য করে বললো……
.
——দোস্ত তুই ঠিক আছিস তো!!
.
কিছুটা সামলে দাঁতে দাঁত চেপে ক্ষতস্থান ছেড়ে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে আমার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো ছেলেটি।সাথের ছেলেটিকে জানালো সে ঠিক আছে।ছেলেটার তাকানো দেখে ভয়ে চুপসে গেলাম।একটু নড়েচড়ে বসলাম আমি।এখন কি করা উচিৎ আমার পালাবো।কিন্তু কিভাবে পালাবো আমি।দৌড়ে একটুও যেতে পারবো না তার আগেই লোকটা খপ করে ধরে ফেলবে আমায়।তাহলে আচ্ছা এখন ছেলেটা কি আমাকে তুলে নিয়ে যাবে আর এই আঘাত করার জন্য এক্সট্রা শাস্তি দেবে….?ওরে মুগ্ধতা রে কাজটা করার আগে একবারও ভাবলি না এর ফল কি হবে।এমন হাতি মার্কা বুদ্ধি নিয়ে তুই ঘুরিস।উফ!তুই একটা রাম ছাগল না ছাগলনি হবে।আমার ভাবনার মাঝেই দাঁত কটমট করে বলে উঠলো ছেলেটি…….

_____এই মেয়ে তুমি কি পাগল নাকি…?এভাবে আচমকা আমাকে আঘাত করলে কেন….?এজন্যই কারোর উপকার করতে নেই।
.
ছেলেটার কথায় বেশ রেগে গেলাম আমি।ছেলেটা কতটুকু জানে আমার সম্পর্কে।আর কিছু নয় আমার মতো একটা সুস্থ মস্তিষ্কের মেয়েকে ডিরেক্ট পাগল বললো।এই অপমান কিছুতেই মুখ বুঝে সহ্য করা যায় না।কর্কশ কন্ঠে বললাম……

_____আপনার সাহস তো কম নয়….আপনি আমাকে পাগল বললেন।পাগল আমি নই পাগল আপনি।নইলে কেউ কোনো মেয়ের রাস্তা আটকে দাঁড়ায় নাকি।যান যান গিয়ে পাবনায় মরেন।
.
আমার কথায় বেশ রেগে গেলো ছেলেটি।এখনও হেলমেট পড়নে বিধায় মুখ অস্পষ্ট।তবে এতক্ষণে বুঝে গেছি এই ছেলে দুটো ছিনতাইকারী বা খারাপ কেউ নাও হতে পারে।যদি হতো তাহলে এতক্ষণে আমার কি হাল করতো কে জানে…..আবার হতেও পারে বুঝা যাচ্ছে না কিছুই।রেগে মেগে চেঁচিয়ে বলে উঠলো ছেলেটি……

______এই মেয়ে জাস্ট সাট আপ!!তুমি গিয়ে পাবনায় মরো।বুঝি না এই পাগল ছাগল কে বাবা মা কিভাবে রাস্তায় একা ছাড়ে।সামান্যতম রেসপনসেবলিটি নেই ওদের মাঝে।আমি তোমার রাস্তা এমনি এমনি আটকাই নি।কারণ আছে আর বিবেকের তাড়নায় আটকেছি।নইলে পাগল ছাগলের জন্য টাইম ওয়াস্ট করার কোনো ইচ্ছাই ছিলো না আমার।পাশের ছেলেটি বলে উঠলো….
.
_____আগেই বলেছিলাম প্রয়োজন নেই।যখন হবে তখন বুঝবে ঠ্যালা।শুধু শুধু কতগুলো কথা শুনলি।ডেকে সাবধান করেছিলিস শুনে নি ব্যস নামার প্রয়োজন ছিলো না।
.
সত্যি দোস্ত!!অনেক বড় মাপের ভুল হয়ে গেছে।আচ্ছা নেমেই যখন গেছি তখন রিজনটা বলেই যাই।
.
ছেলেটির গা জ্বালানো কথায় রাগ হলেও শেষের কথায় বেশ অবাক হলাম আমি!!কি বলে বাধ্য হয়ে বিবেকের তাড়নায় নেমেছে।এক্সজেটলি কি মিন করতে চাইলো ছেলেটি।রিজনটা বলবে মানে___কি বলবে।প্রশ্নবিদ্ধ চোখে তাকিয়ে আছি ছেলেটির পানে।ছেলেটি কিছুক্ষণ নীরব থেকে বললো…..
.
_____এই তোমার মতো কিছু মানুষের কারণেই এখন লোকে লোকের উপকার করতে ভয় পায়।হিতে বিপরীত হয়।শাওন আমাকে আগেই বলেছিলো প্রবলেম হবে কিন্তু আমি শুনিনি।তারজন্যই তোমার উপকার করতে তোমার রাস্তা আটকে ছিলাম।আগে যদি জানতাম এমন কিছু ঘটবে তাহলে কখনোই করতাম না।
.
ছেলেটির কথা শুনে আবারও অবাক হলাম আমি।আমার কোন উপকার করবেন উনি….?রিকশাওয়লকে উদ্দেশ্য করে বললাম…..

____শোন মামা আমার নাকি উপকার করার জন্য রাস্তা আটকেছেন উনি হুহ!তা আমার রাস্তা আটকে কি উপকার করবেন আপনি মিথ্যা বলার আর জায়গা পান না।আসলে আপনাদের মতো লোককে চেনা আছে আমার।মেয়েদের রাস্তায় একা পেয়ে অসভ্যতা করাই আপনাদের প্রধান কাজ।
.
আমার কথায় এবার আরো রেগে গেলো ছেলেটি।হাত মুষ্টি বদ্ধ করে দাঁতে দাঁত চেপে বললো…..
.
——তোমার ওই টিপিক্যাল চিন্তা ভাবনা তোমার কাছেই রাখো।ওই যে গলায় ওড়না নামক রশি পেচিয়েছো ওটা কোথায় খেয়াল আছে তোমার।নেই থাকবে কি করে তুমি তো বেহুশ হয়ে চলা ফেরা করো।একবার তাকিয়ে দেখো তারপর সব বুঝতে পারবে।তোমাকে বাঁচাতে এসে এই হাল আমার।ধ্যাৎ আগে যদি জানতাম তাহলে কিছুই হতো না।মরলে মরতে আমার কি…!
.
লোকটার কথার ওড়নার দিকে তাকালাম আমি।আমার ওড়নার এই অবস্থা দেখে হতভম্ব চোখে তাকিয়ে আছি আমি।অর্ধেকেরও বেশি ওড়না রিকশার চাকার সাথে আটকে গেছে।আরেকটু পেঁচালেই এক্সিডেন্ট হতো আমার।নিজের বোকামি গুলো বুঝতে পেরে চুপচাপ বসে আছি আমি।আমাকে চুপ থাকতে দেখে বললো ছেলেটি…..
.
কি হলো এখন মুখে কথা নেই কেন….?এতক্ষণ তো ফটরফটর করছিলে এখন চুপসে গেলে যে।মেয়েরা কেয়ারলেস জানতাম কিন্তু এতটা কেয়ারলেস জানতাম না।কখন থেকে ডেকে যাচ্ছি তোমার ওড়না পেচিঁয়ে মরতে যাচ্ছ না কথাগুলো কানেও গেলো না তাঁর।আর সেজন্যই আমাকে নামতে হলো ডিজগাস্টিং!!আচ্ছা তোমার মাথায় সমস্যা বুঝলাম কানেও কি কম শুনো নাকি……?
.
ছেলেটার কথা শুনে গা পিওি জ্বলে যাচ্ছে আমার।নেহাত উপকার করেছে তাই কিছু বলছি না।নইলে হাজারটা কথা শুনানোর মতো ক্ষমতা এই মুগ্ধতা রাখে।ওড়নাটা ছাড়াতে ছাড়াতে বললাম…..
.
____একচুয়েলি আমি একটু অন্য মনস্ক ছিলাম তাই শুনতে পাই নি।আর উপকার করেছেন তার জন্য থ্যাংকস কিন্তু ফ্রীতে এতগুলো কথা না শুনালেও পারতেন।
.
আপনি ফ্রীতে লোককে আঘাত করতে পারেন আর আমি আহত হয়েও কথা শুনাতে পারবো না স্ট্রেঞ্জ!
.
_____লোকটার কথায় বেশ লজ্জা পেলাম আমি।সত্যি কোনোকিছু না জেনে এভাবে উনাকে আঘাত করা উচিৎ হয়নি আমার।উপকার করতে এসে এভাবে মার খাবেন এটা ভালো দেখায় না।আমতা আমতা করে আআসলে আমি ভেবেছিলাম আপনারা ছিনতাইকারী বা মেয়ে পাচারকারী।তাই নিজেকে বাঁচানোর জন্য এমনটা করেছি।
.
মেয়েটির কথায় অবাকের সপ্তম আকাশে পৌঁছালাম আমি।কি বলে মেয়েটা….শেষে কিনা আমাকে পাচারকারী ভাবলো।আমাকে দেখলে কি পাচারকারী মনে হয় নাকি আজব!নিজেকে ভালোভাবে একবার পর্যবেক্ষণ করে নিলাম আমি কই না তো আমার গেট আপ দেখে তো ছিনতাইকারী বা পাচারকারী মনে হচ্ছে না।মেয়েটির কথায় মুখ চেপে হাসছে শাওন।আমি তাকাতেই মুখ বন্ধ করে নিলো সে।রেগে দাঁত কটমট করে…..
.
____এই মেয়ে তোমার কোন এঙ্গেল থেকে আমাকে ছিনতাইকারী মনে হলো একটু বুঝিয়ে বলবে প্লিজ!
.
আমার কথায় রেগে গেছেন বেশ বুঝতে পারছি আমি।এদিকে কলেজে লেইট হয়ে যাচ্ছে আমার।আর কথা না বাড়িয়ে কেটে পড়াই উওম।তবে যাওয়ার আগে উওরটা দিয়েই যাই….শুনুন
.
____আপনার হাবভাব গেট আপ।গায়ে কালো টি-শার্ট,কালো জ্যাকেট,মাথায় হেলমেট, টি-শার্টের গলায় সানগ্লাস ঝুলানো,পায়ে ব্ল্যাক সুজ সবকিছু মিলিয়ে একটা ছিনতাইকারী ছিনতাইকারী ভাব আছে আপনার মাঝে।তার উপর মাঝ রাস্তায় আচমকা একটা মেয়ার রাস্তা আটকে দাঁড়ানো সবেতেই পাচারকারী কিংবা ছিনতাইকারীর সাথে আপনার মিল পেয়েছি আমি।এবার আপনি আমাকে যাই ভাবেন না কেন এটাই সত্যি।আর হ্যাঁ আপনাকে এভাবে দেখলে আমি নই যে কেউ ছিনতাইকারী উপাধিতে ভূষিত করবে ১০০% সিওর আমি।।মামা চলেন তো!লোকটার উওরের অপেক্ষা না করেই রিকশা চলতে লাগলো আপন গতিতে।পেছনে লোকটা চেঁচিয়ে দাঁড়াতে বলছে কিন্তু মামাকে নিষেধ করায় থামেন নি উনি।স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে উফ জোর বাঁচা বেঁচে গেছি…!!
.
.
#চলবে…….