মুগ্ধতায় মুগ্ধ পর্ব-০৩

0
671

#মুগ্ধতায়_মুগ্ধ♥️
#Labiba_Islam_Roja
#Part_03
.
🍁
হসপিটালের করিডোরে দাঁড়িয়ে আছে আফিফ।মেয়েটাকে ডক্টর কেবিনে নিয়ে গেছে।এখনও সেন্স ফিরেনি।ইনজুরি তেমন বেশি নয়।মেয়েটার ফোন আফিফের কাছে আছে কিন্তু পাসওয়ার্ড লাগানো বিধায় খুলতে পারছে না।আফিফের কাছে এই একটা জিনিস বড্ড বিরক্তিকর।এই যুগের ছেলে মেয়েরা পাসওয়ার্ড ছাড়া চলতেই পারে না।সেখানে আফিফ কখনই ফোনে পাসওয়ার্ড লাগায় না।সবসময় নরমাল লকই থাকে।ফোন আছে বলেই পাসওয়ার্ড লাগাতে হবে এটা কেমন কথা।এই জিনিসটা একদম পছন্দ করে না আফিফ।ফোন সাথে থাকার অর্থ হলো যদি কোনো বিপদে পড়ে তাহলে যাতে পরিবারের মানুষ জানতে পারে কিন্তু এভাবে থাকলে তো কাউকে কিচ্ছু জানানোই সম্ভব নয়।এখন মেয়েটার এই অবস্থা কিন্তু আফিফ কাউকে কিচ্ছুটি জানাতে পারছে না।এদিকে এক্সিডেন্টের চক্করে পড়ে আজ অফিসে ইম্পরট্যান্ট একটা মিটিং মিস হয়ে গেলো।হঠাৎ কেবিন থেকে বেড়িয়ে এলো ডক্টর।ডক্টর কে দেখে এগিয়ে গেলো আফিফ।ডক্টর কে উদ্দেশ্য করে বললো…..
.
____ডক্টর পেসেন্টের অবস্থা কেমন এখন…?উনার সেন্স ফিরেছে…?আঘাত কি খুব বেশি…?
.
হুম!!সেন্স ফিরেছে।তেমন কিছু হয়নি।কপাল ফেঁটেছে,হাত পা ছিঁলে গেছে আর তেমন কোনো সমস্যা নেই উনার।আপনি একটু পরই উনাকে নিয়ে যেতে পারেন।
.
ডক্টরকে থ্যাংকস জানিয়ে মেয়েটার কেবিনের দিকে পা বাড়ালো আফিফ।বেডে চোখ যেতেই চোখ আটকে গেলো তার।এতক্ষণ মেয়েটিকে খেয়াল করেনি সে।এখন ভালোভাবে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছে।বেডে চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে মেয়েটি। চুলগুলো অগোছালো ।মাথায় সাদা ব্যান্ডেজ পেঁচানো।গায়ের রং ধবধবে ফর্সা।ফর্সা গায়ে মাথায় সাদা ব্যান্ডেজ এতে যেন মেয়েটার সৌন্দর্য আরো বাড়িয়ে দিয়েছে।গোলাপের পাপড়ির মতো ঠোঁট দুটো।উপরের ঠোঁট দিয়ে নিচের ঠোঁট চেপে ধরে আছে এতে মেয়েটিকে আরো মোহনীয় লাগছে আফিফের কাছে।এক দৃষ্টিতে মেয়েটির দিকে তাকিয়ে আছে আফিফ।ধীর পায়ে মেয়েটির সামনে দাঁড়িয়ে অপলকভাবে দেখে চলেছে।সামনে কারো উপস্থিতি টের পয়ে চোখ পিটপিট করে তাকালো মেয়েটি।সামনে অপরিচিত কাউকে দেখে অস্বস্তিবোধ করলো।আফিফ মেয়েটির অস্বস্তি বুঝতে পেরে চোখ সরিয়ে স্বাভাবিক হয়ে বললো…..
.
____একচুয়েলি আমিই সেই হতভাগা যে আপনার এই দশা করেছে।বেখেয়ালে অন্য মনস্ক হয়ে গাড়ি ড্রাইভ করছিলাম তাই এমনটা হয়েছে।আই এম সরি।তা এখন আপনি ভালো আছেন তো…?
.
আমার কথায় আলতো হাসলো মেয়েটি।অতি ভদ্রতার সহিত জবাব দিলো…..
.
____এভাবে নিজেকে দোষী ভাববেন না।আমারও যথেষ্ট দোষ ছিলো।ওভাবে আশপাশ না দেখে রাস্তা ক্রস করে উচিৎ হয় নি আমার।
.
মেয়েটার চেহারা যতটা মিষ্টি তার চেয়েও বেশি মিষ্টি তার কন্ঠ।আহা!কি মধুর কন্ঠ তাঁর।ধ্যানমগ্ন হয়ে তার দিকে তাকিয়ে আছি।হঠাৎ তুড়ির আওয়াজে হুশ ফিরলো আমার।……
.
____কি হলো কোথায় হারিয়ে গেলেন আপনি…?এবার আমাকে যেতে হবে।সেই কখন বাসা থেকে বেড়িয়েছি।বাসায় নিশ্চয় সবাই টেনশন করছে।
.
—–হুম!!চলুন আপনাকে আমি ড্রপ করে দিচ্ছি।আর হ্যাঁ মেডিসিনের প্যাকেট দেখিয়ে এখানে মেডিসিন আছে এগুলো ঠিকমতো খাবেন আর রেস্ট নিবেন দেখবেন খুব তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে উঠবেন আপনি।আবারও আমি সরি।সত্যি আমার করা কাজের জন্য খুব দুঃখিত আমি।
.
আমার কথায় আবারো হাসলো মেয়েটি।এই হাসিটা যেন আরো পাগল করে দিচ্ছে আমায়।হাসলে গালে টোল পরে।ইচ্ছে করে ওই টোল পরা গালে ডুবে যাই আমি।বেড থেকে নামতে নামতে বললো মেয়েটি……
.
____এতবার সরি বলতে হবে না।আপনি আমি দুজনেই সমান দোষী।আমি দেখে চললে এটা হতো না।তাই এরজন্য আক্ষেপ করবেন না।এটা হওয়ার ছিলো তাই হয়েছে।আচ্ছা আপনাকে যেতে হবে না আমি একাই যেতে পারবো আসছি আসসালামু আলাইকুম….!!
.
আমাকে ক্রস করে চলে যেতে লাগলো।কেমন অজানা অনুভূতি কাজ করছে আমার মাঝে।তাঁর চলে যাওয়ার কথা শোনে মন খারাপ হলো আমার।মেয়েটা আমার সামনে থেকে চলে যাক কিছুতেই চাইছিনা আমি।মেয়েটার রাস্তা আটকে বললাম……
.
____প্লিজ প্লিজ একা একা যাবেন না।আমার একটা দায়িত্ব আছে।এই অবস্থায় আপনাকে একা ছাড়তে পারি না আমি।তাই আপনাকে আমার সাথেই যেতে হবে।
.
আমার কথায় কিছু বললো না মেয়েটি।মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে আমার কথার সাথে সম্মতি আছে তাঁর।হসপিটালের বিল পে করে বেড়িয়ে গেলাম।আমি বিল পে করায় বেশ বিরক্ত মেয়েটি।সে বিল পে করতে চেয়েছিলো করতে দেই নি বলে গাল ফুলিয়ে আছে।গাড়িতে উঠেছে থেকে কোনোকথা নেই জানালা দিয়ে বাহিরে তাকিয়ে আছে।মেয়েটার মুখটা দেখে হাসছি আমি।রাগলে আরো মিষ্টি দেখায় ওকে।ওকে আড়চোখে দেখে হালকা হেসে গাড়ি স্টার্ট দিলাম আমি।
.
.
🍁
কলেজে ঢুকেই তিথি কে খুঁজে চলেছি আমি।তিথি আমার বেস্ট ফ্রেন্ড।আনলিমিটেড কথা বলাই ওর কাজ ।কথা বলতে বলতে মাথার মগজ ফেনা করে ফেলে।একটু দূরে দাঁড়িয়ে আছে তিথি।আমাকে দেখে ভূত দেখার মতো চমকে উঠলো সে।উঠবেই তো যার মাএ গতকাল বিয়ে হলো সে আজ কলেজে।আমার দিকে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে তিথি।বিস্মিত কন্ঠে বললো…..
.
_____মুগ্ধতা তুই…!!বিয়ে বাড়ির এত সব রিচুয়ালস রেখে তুই আজ কলেজে…?
.
তিথির কথা শোনে আপনাআপনি একটা দীর্ঘশ্বাস বেড়িয়ে এলো ভিতর থেকে।নিজেকে সামলে মুখে হালকা হাসির রেখা টেনে…..
.
____ওসব কথা বাদ দে তো!এখনও ক্লাসে যাস নি কেন…?ক্লাস থেকে প্রায় শেষের দিকে।
.
আরেহ!রাখ তো তোর ক্লাস।আগে বল তুই আজ কলেজে কেন…?আজ তো তেমন ইমপর্ট্যান্ট কোনো ক্লাস নেই তাহলে….?আর আমি কাল যেতে পারিনি তার জন্য সরি।
.
মেয়েটাকে না বলে রেহাই নেই।তাই সবটা খুলে বললাম ওকে।সবটা শোনে স্তব্ধ হয়ে গেছে তিথি।আর বকে চলেছে আদনানকে। এরকম একটা শয়তান জল্লাদ কে বিয়ে না করে ভালোই করেছি বলে শান্তনা জানাচ্ছে আমায়।আমাদের কথার মধ্যেই ছেলের কন্ঠ শোনে থেমে গেলো তিথি।পেছন ফিরে তাঁকে দেখে কিছুটা বিস্মিত হলো।ছেলেটা ওকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলো…..
.
____এই তিথি ক্লাস ফাঁকি দিয়ে এখানে কি করছিস…?কলেজে কি ক্লাস ফাঁকি দেওয়ার জন্য আসিস নাকি…?দাঁড়া আজকেই খালা মণি কে ব্যাপারটা বলছি আমি।
.
ছেলেটার কথা শোনে ভয়ে চুপসে গেলো তিথি।হালকা কয়েক ঢুক নিয়ে বললো….
.
______না ভাইয়া আমি ইচ্ছে করে ক্লাস ফাঁকি দেই নি।আসলে আজকে আসতে লেইট হয়ে গেছে আমার তাই ফার্স্ট ক্লাস মিস হয়ে গেছে।
.
তাই!!
.
হুম ভাইয়া সত্যি!!
.
ছেলেটার কন্ঠ টা কেমন পরিচিত লাগছে আমার।কোথাও একটা শুনেছি হয়তো।যাগগে হয়তো নাও শুনতে পারি আবার শুনতেও পারি।এত ভেবে কাজ নেই।হঠাৎ আমাকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলো ছেলেটি……
.
_____এই তিথি তোর সাথের ওই খাম্বাটা কে রে…?এতক্ষণ ধরে পেছন ফিরে চোরের মতো দাঁড়িয়ে আছে।নড়াচড়া নেই, মুখেও কোনো কথা নেই কেন…?
.
তিথিঃভাইয়া ও হচ্ছে আমার বেস্ট ফ্রেন্ড মুগ্ধতা!!আর মুগ্ধতা ইনি হলেন আমার কাজিন মুগ্ধ ভাইয়া।
.
লোকটার কথায় হতবাক আমি।কি বলে আমি খাম্বা,আমি চোর।ছেলেটার দিকে অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে পেছন ফিরে তাকালাম আমি।আমি কিছু বলতে যাবো তার আগেই ছেলেটা বলে উঠলো…..
.
____তিথি তোর বেস্ট ফ্রেন্ড এমন চোর মার্কা কেউ ভাবতেই কষ্টে ভেতর টা ফেঁটে যাচ্ছে আমার।দেখিস আবার এই চোর থুক্কু চুন্নির কাছ থেকে চুরি বিদ্যাটা আবার শিখিস না যেন…!!
.
মুগ্ধ না টুগ্ধের কথা শোনে আর চুপ থাকতে পারলাম না আমি।ছেলেটার কথা শোনে চোখ বেড়িয়ে আসার উপক্রম আমার।আমার সমন্ধে কি বলে এই ছেলে।এভাবে মন্তব্য করছে কতটুকু জানে আমার সম্পর্কে সে রুক্ষ কন্ঠে বলে উঠলাম আমি…..
.
____দেখুন মিস্টার মুগ্ধ!আপনি তিথির কাজিন সেই হিসাবে আমার শ্রদ্ধাভাজন।কিন্তু আপনি আমার সম্পর্কে যেই কথাগুলো বলছেন তারপর কি আর আপনাকে শ্রদ্ধা সম্মান দিতে পারবো….না পারবো না আমি!!তাই এমন কিছু বলবেন না যার জন্য সম্মানিত নয় অপমানিত হতে হয়…!!আর কারোর সম্পর্কে কিছু না জেনে এভাবে আচমকা মন্তব্য করা ঠিক নয় সেটা নিশ্চয় জানেন আপনি।
.
আমার কথায় চরম বিরক্ত ছেলেটি!!কিন্তু কেন সেটাই বুঝলাম না আমি।নিজের চুলগুলো ঠিক করে কানে আঙ্গুল ঢুকাতে ঢুকাতে…..
.
_____উফ!!কানের পোকা নাড়িয়ে দিলো।এত লেকচার দিও না তো।এইসব লেকচার আর যাই হোক তোমার মুখে মানায় না।এতগুলো কথা বললে….আচ্ছা তুমি কি মানুষ সম্পর্কে মন্তব্য করার আগে সব কিছু জেনে তবেই মন্তব্য করো….করো না তো!!তাহলে যা নিজে করো না তা অন্যের কাছ থেকে এক্সপেক্ট করো কেন…?
.
তিথিঃভাইয়া তুমি ওর সাথে এভাবে কথা বলছো কেন…?ও চোর টোর কিছু না।আচ্ছা এখানেই থামো তোমরা।মুগ্ধতা ভাইয়া তোর সাথে হয়তো মজা করেছে কিছু মনে করিস না।
.
_____আরেহ তিথি! এসব বলিস না।আমি মজা নয় ওকে সিরিয়াসলি কথাগুলো বলেছি।আর আমি জানি আমি যা বলেছি ঠিক বলেছি।ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে ও যদি কাউকে যাচাই না করে আচমকা লোককে উল্টাপাল্টা বলতে পারে তাহলে আমি কেন পারি না।হুয়াই নট!!
.
ছেলেটার কথায় বিস্মিত আমি!পাগল নাকি আমি কখন কাউকে এমনি এমনি কথা শোনালাম।লোকটাকে আজকেই ফার্স্ট দেখলাম তাহলে। আমার সম্পর্কে যেভাবে কথা বলছে যেন আমি কতকালের পরিচিত উনার।নিজের রাগকে নিয়ন্ত্রণ করে বললাম….
.
______কি বলতে চাইছেন আপনি…?একটু খোলসা করে বলবেন প্লিজ!আর আমি কাকে কখন কারণ ছাড়া এভাবে অপমান করেছি সেটা বলবেন কি….?
.
আমার কথায় হাসলো ছেলেটি।হেসে বললো….
.
____আরে মিস কেয়ারলেস!!তুমি এত তাড়াতাড়ি সব ভুলে যাও নাকি।আজকে সকালে আমাকে কি কি বলেছিলে মনে নেই তোমার।তখন তুমি কতটুকু জানতে আমার সম্পর্কে যে আমাকে ছিনতাইকারী আরো কি যেন মনে বলেছিলে পড়ছে না।
.
ছেলেটার কথায় ভাবনায় ডুব দিলাম আমি।ভালোভাবে একবার ছেলেটাকে পরখ করে নিলাম।আরে হ্যাঁ এটা তো রাস্তার সেই ছেলেটা যাকে আঘাত করে ছিলাম আমি।ছিনতাইকারী,পাচারকারীর উপাধি দিয়েছি।হেলমেট থাকায় মুখটা দেখিনি শুধু গেটআপই মনে আছে।এজন্যই কন্ঠ পরিচিত লাগছিলো আমার।উফ ছেলেটাকে এই কলেজেই থাকতে হলো ধুর….!!আমতা আমতা করে বললাম…..
.
_____দদেখুন তখনকার সাথে এখনকার অনেক তফাৎ।তখন ঘটনাটা সন্দেহ করার মতো ছিলো তাই বলেছি কিন্তু এখন আপনি ইচ্ছে করে আমাকে বলছেন যা একদমই অনুচিত।
.
উচিৎ-অনুচিত,ঠিকবেঠিক কিছুই বুঝি না আমি।আমি শুধু জানি তুমি অকারণে আমায় আঘাত করেছো +উল্টা পাল্টা বলেছো এখন আমিও বলেছি শোধবোধ।আরেকটা কথা এখন আমাদের কলেজেই রোজ আসতে হবে।বাকি টা পরে দেখে নেবো।তখন রাস্তা থেকে পালিয়ে এসেছিলে ভ্রু নাচিয়ে)এবার যাবে কোথায় হুম….?বলেই সানগ্লাস চোখে লাগিয়ে হনহন করে চলে গেলো মুগ্ধ।
.
.
#চলবে…….