মুগ্ধতায় মুগ্ধ পর্ব-০৯

0
562

#মুগ্ধতায়_মুগ্ধ♥️
#Labiba_Islam_Roja
#Part_09
.
🍁
ভার্সিটি যাওয়ার জন্য রাস্তায় দাঁড়িয়ে রিকশার জন্য অপেক্ষারত মুগ্ধতা।আফিফের জন্য পাএী দেখতে গেছে অধরা আর মুগ্ধতা বাদে সবাই।যদিও মুগ্ধতার যাওয়ার ইচ্ছে ছিলো আঙ্কেলও বলেছিলো কিন্তু আন্টি বারণ করায় যায় নি মুগ্ধতা।আজ রিকশা কোথাও দেখা যাচ্ছে না।এই গরমে দাঁড়িয়ে থাকতেও আর ইচ্ছে করছে না মুগ্ধতার।দাঁড়াতে দাঁড়াতে বিরক্ত হয়ে হাত ঘড়ির দিকে তাকালো ক্লাস শুরু হতে আর বিশ মিনিট বাকি।ফার্স্ট ক্লাস আবিদ স্যারের যার ক্লাসে লেইট হলে কান ধরিয়ে রাখেন উনি।বিরক্তি নিয়ে রিকশার আশায় তাকিয়ে আছে মুগ্ধতা।হঠাৎ সামনে এসে একটা বাইক থামলো।বাইকের ছেলেটার হেলমেট পরিহিত।এভাবে ছেলেটাকে দাঁড়াতে দেখে ভ্রু জোড়া কুঁচকে গেলো মুগ্ধতার।বিস্ময় চোখে তাকিয়ে আছে ছেলেটার দিকে।তড়িঘড়ি করে হেলমেট খুলে মুগ্ধতার সামনে দাঁড়ালো ছেলেটা….!!
.
______ছেলেটাকে দেখে অবাক মুগ্ধতা।কারণ সামনে থাকা ছেলেটা আর কেউ নয় মুগ্ধ…..
.
______প্লিজ প্লিজ!আমি মুগ্ধ!তুমি তো আবার ডেঞ্জারাস মেয়ে কখন আক্রমন করো বলা যায় না।এখন ছিনতাইকারী ভেবে আবার আঘাত করা শুরু করো না।
.
মুগ্ধর কথায় বেশ লজ্জা পেলো মুগ্ধতা।সত্যি সেদিন সাত পাঁচ না ভেবে অকারণে আঘাত করেছিলো।এটা নিছক বোকামি ছাড়া আর কিছুই নয়।সেদিনের কথা মনে হলে লজ্জায় মরে যেতে ইচ্ছে করে তাঁর।মুগ্ধতা কে লজ্জা পেতে দেখে মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে আছে মুগ্ধ।লজ্জা পেলে মেয়েটাকে ভারী মিষ্টি দেখায় তো।গাল দুটোয় হালকা লাল আভা দেখা যাচ্ছে।লজ্জা মিশ্রিত কন্ঠে বললো…..
.
______দেখুন সেদিনের ব্যাপার আর আজকের ব্যাপার একেবারে আলাদা।আর এটা বার বার বলে লজ্জায় ফেলার কি আছে বুঝি না আমি।
.
মুগ্ধতার কথায় স্মিথ হাসলো মুগ্ধ!প্রসঙ্গ পাল্টে বললো…..
.
______এখানে এভাবে দাঁড়িয়ে রিকশার অপেক্ষা করছো বুঝি…?
.
মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানালো মুগ্ধতা।হ্যাঁ সে রিকশার জন্যই অপেক্ষা করছে।মুগ্ধতাকে উদ্দেশ্য করে বললো…..
.
______এই রাস্তায় এখন রিকশা পাবে বলে মনে হয় না আমার। চলো আমিও ভার্সিটি যাচ্ছি তোমাকেও নামিয়ে দেবো।
.
না ভাইয়া লাগবে না আমি যেতে পারবো।
.
আরে এত হেজিটেইট করছো কেন…?এই কাক ফাঁটা রোদে সারাদিন দাঁড়িয়ে থাকলেও রিকশা পাবে না।তার চেয়ে আমার সাথে চলো।মুচকি হেসে আর হ্যাঁ আমি তোমাকে কিডন্যাপ করবো না বিশ্বাস রাখতে পারো।
.
উনার সাথে যেতে একটুও ইচ্ছে ছিলো না আমার।কিন্তু ক্লাসের লেইট হয়ে যাচ্ছে তার উপর এত রোদে দাঁড়িয়ে থাকতে বিরক্ত লাগছে।কিন্তু উনার সাথে যাওয়াটাও উচিৎ হবে বলে মনে হচ্ছে না আমার।আবার না গিয়েও উপায় নেই এতক্ষণে মাথা ব্যাথা শুরু হয়ে গেছে তাই বাধ্য হয়ে উনার জোরাজোরিতে উনার সাথে যেতে হলো আমায়।বাইক চলছে উনার আর ওর মাঝে কিছুটা ফাঁক রেখেছে মুগ্ধতা।যাতে মুগ্ধর সাথে ওর শরীর না লাগে।এদিকে মুগ্ধতাকে এভাবে বসতে দেখে মুচকি মুচকি হাসছে মুগ্ধ।মুগ্ধতার মুখটা বাংলার পাঁচের মতো করে রেখেছে।যা দেখে আরো বেশি হাসি পাচ্ছে তাঁর।হঠাৎ কিছুটা শব্দ করেই হেসে উঠলো মুগ্ধ।মুগ্ধ কে আচমকা হাসতে দেখে ভ্রু কুঁচকে এলো মুগ্ধতার।কপাল ভাঁজ করে বলে উঠলো….
.
_____এভাবে আচমকা অকারণে পাগলের মতো হাসছেন কেন আপনি…?
.
মুগ্ধতার কথায় আরো বেশি হুংকার দিয়ে শব্দ করে হেসে উঠলো মুগ্ধ।বাইক চালাতে চালাতে বললো…..
.
______কিডন্যাপার,ছিনতাইকারী এখন পাগল!ওয়াও নামগুলো যশ।যদিও একটা নামও আমার সাথে যায় না তবুও নামগুলো দারুণ।
.
মুগ্ধর শীতল কন্ঠ শোনে বেশ অবাক হলো মুগ্ধতা।যেখানে এই উপাধি গুলো পেয়ে মন খারাপ করার কথা সেখানে মুগ্ধ হাসছে স্ট্রেঞ্জ!কোনো কথা না বলে চুপ করে রইলো।হঠাৎ খুব জোরে হোটচ খেলো মুগ্ধতা।হোচটের তাল সামলাতে না পেরে মুগ্ধকে দুহাতে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরলো।মাঝের ফাঁকা জায়গা গুলো পূরণ করে মুগ্ধর ঘা ঘেঁষে বসেছে।ওর এই অবস্থা দেখে মুখ চেপে হাসছে মুগ্ধ।এতটা দূরে বসাটা মানতে পারছিলো না মুগ্ধ।তাই খুব স্পিডে বাইক চালাচ্ছিলো আর রাস্তায় কিছু একটার উপর দিয়ে খুব স্পিডে যাওয়ায় হোচট খায়।কিছুক্ষণ পর নিজেকে সামলে মুগ্ধ কে ছেড়ে বলে উঠলো…..
.
____সরি! আমি নিজের ব্যালেন্স রাখতে পারিনি।আবার নিজের জায়গায় যাবে তখনই মুগ্ধ বললো…..
.
_____এভাবে আধ মাইল ফাঁকা রেখে বসলে এক্সিডেন্ট হতে পারে।যেখানে আছো সেখানেই থাকো এতে তোমারই ভালো।দেখলে না এক্ষুনি পরে যাচ্ছিলো।মুগ্ধর ভুল বলে নি।কথাটা ঠিকই তাই সরতে যেয়েও সরলো না মুগ্ধতা।বাধ্য মেয়ের মতো মুগ্ধতা কথা শুনেছে দেখে হাসলো মুগ্ধ।
.
.
♥️
পাএীর বাসা থেকে বাসায় এসে সেই লেভেলের রাগ নিয়ে বসে আছেন আফিফের বাবা।এত সুন্দর একটা মেয়েকে রিজেক্ট করে এলো ভাবতে পারছেন না উনি। উনার হিসাব মতে এই মেয়ের উপযুক্ত উনার ছেলে নয়।সেখানে উনার ছেলে মেয়েটা কে অপছন্দ করলো।অথচ রূপে গুণে কোনো অংশে কম নয়।আচার ব্যবহারও বেশ মার্জিত।এখন নিজের ছেলেকে বলদ ছাড়া কিছুই মনে হচ্ছে না উনার।বলদই তো! বলদ না হলে আজকালকার দিনে কেউ এমন মেয়ে হাত ছাড়া করে নাকি।মেয়েটা উনার পুএবধূ হচ্ছে না ভাবলেই মন খারাপ হয়ে গেলো উনার।বাবার এমন অবস্থা দেখে বেশ হাসি পাচ্ছে অধরা আর অন্যন্যার।আফিফ গম্ভীর মুখে বসে আছে।তার একটাই কারণ তার বাবা।এখন যদি আফিফ কিছু বলে তাহলে ক্ষেপে যা তা বলবেন উনি তাই চুপ থাকাই শ্রেয়।বিয়ে আটকানোটা জরুরি ছিলো এটা করতে পেরেছে এতেই খুশী আফিফ।আফিফের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে উনি বললেন……
.
____তুমি মেয়েটাকে রিজেক্ট করলে কেন…?আমার জানা মতে ওর মতো লক্ষ্মী হতেই পারে না।তাহলে তুমি ওকে অপছন্দ করলে কেন….?
.
বাবার কথার জবাবে কি বলবে আফিফ ভেবে পাচ্ছে না।এই পর্যন্ত অনেকবার একই প্রশ্ন করেছেন উনি কিন্তু তার জবাব দিতে পারে নি।আমতা আমতা করে বললো…..
.
_____দেখ বাবা মেয়েটার নাক বোঁচা।আর অতিরিক্ত ফর্সা হওয়ায় কেমন যেন সাদা ভূত লাগছিলো।এত সুন্দর ভূত বিয়ে করতে নারাজ আমি তাই একে অপছন্দ আমার।
.
ছেলের কথায় দীর্ঘশ্বাস ফেললেন উনি।যেখানে সবাই সাদা চামড়ার পেছনে দৌড়ায় সেখানে উনার ছেলে মেয়েটাকে সাদা ভূত বললো।তাছাড়া সবাই এই সাদা চামড়ায় মায়ায় পড়ে সেখানে উনার ছেলে দৌড়ে পালালো।উনার ছেলে আর দশটা ছেলের মতো সাদা চামড়ার পেছনে দৌড়াচ্ছে না দেখে গর্ব অনুভব করলেন উনি আর বললেন…….
.
____এই প্রথম তোমার কোনো ডিসিশনে গর্ব অনুভব করছি আমি।তুৃমি প্রমাণ করেছো শুধু সাদা দেখে জীবন সঙ্গী নির্বাচন করা বোকামি।বাইরের চাকচিক্য দেখে আকৃষ্ট হওয়ার চেয়ে ভিতরের সৌন্দর্যের প্রতি মুগ্ধ হওয়া শতগুণ ভালো।এবার তোমার জন্য দেখতে অতটা সুন্দর না হলেও সুন্দর মনের মানুষ খোঁজে বার করবো আমি।
.
বাবার কথায় কিছুটা হেসে রুমে চলে গেলো আফিফ।পরের বার মেয়ে দেখার আগে মিতুলের ডিসিশন জেনে নেওয়া যাবে।ও রাজি হলে বাবাকে বলে ওর বাসায় প্রস্তাব পাঠাবে।
.
.
মুগ্ধতাকে মুগ্ধর সাথে দেখে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে সবাই।বিশেষ করে অবাক তিথি।বাইকে করে মুগ্ধতা কে নিয়ে একেবারে ভার্সিটির ভিতরে ঢুকলো মুগ্ধ।সিনিয়র বিধায় ভার্সিটির কম বেশি সবাই চিনে মুগ্ধ কে।অনেকে ক্রাশড ওর উপর।মুগ্ধতার সাথে ওকে দেখে অনেকের মন ভেঙ্গে গেছে ইতিমধ্যে।সবাই ধারণা করে নিয়েছে এটা মুগ্ধর গার্লফ্রেন্ড।মুগ্ধর ফ্রেন্ড সার্কেল অবশ্য ওর হাবভাবে ধরে নিয়েছে ও মুগ্ধতা কে ভালোবাসে।সেজন্যই মুগ্ধতা যখন কথা বলছিলো না তখন উদাস উদাস লাগতো ওকে।মন খারাপ করে বসে থাকতো।বাইক থেকে নামতেই স্নেহা আর রিদি ঘিরে ধরলো ওদের।রিদি বললো…..
.
তোরা দুজন একসাথে…?আমি ভুল দেখছি না তো বলে চোখ ডলে আবারও তাকালো রিদি।স্নেহা কে উদ্দেশ্য করে বললো…..
.
____এই স্নেহা আমি স্বপ্ন দেখছি না তো.!! আমাকে একটা চিমটি কাট তো…?
.
____আরে নাহ! এটা সত্যি।মুগ্ধ কে উদ্দেশ্য করে বললো স্নেহা……
.
______তোরা একসাথে….?মুগ্ধতা কে কোথায় পাইলি তুই…?
.
মুগ্ধর ফ্রেন্ডদের কথায় চরম বিরক্ত মুগ্ধতা।এতগুলো কথা ফেইস করতে হবে জানলে কিছুতেই মুগ্ধর সাথে আসতে না সে।এখন সবাইকে হাজার খানেক প্রশ্নের জবাব দিতে হবে!উফ অসহ্য।পাশ থেকে দৌড়ে এলো তিথি।প্রশ্নবিদ্ধ চোখে তাকিয়ে আছে।ওদের উদ্দেশ্য বললো মুগ্ধ….
.
____মুগ্ধতা রোদের মধ্যে দাঁড়িয়ে ছিলো কোথাও রিকশা পাচ্ছিলো না তাই আমি ওকে ড্রপ দেওয়ার কথা বলি।কিন্তু উনি আসতে চান নি পরে আমি জোর করেই নিয়ে এসেছি এই যা আর কিছু নয় বলেই হন হন করে চলে গেলো মুগ্ধ…!!
.
.
#চলবে…..