মুগ্ধতায় মুগ্ধ পর্ব-০৪

0
537

#মুগ্ধতায়_মুগ্ধ♥️
#Labiba_Islam_Roja
#Part_08
.
🍁
খাবার টেবিলে বসে আছে সবাই।মুগ্ধতা পাশেই দাঁড়িয়ে আছে খাবার সার্ভ করছে।সবাইকে দেওয়া হলে খেতে বসবে।আফিফের বাবা খেতে খেতে বললেন……
.
_____পরশু আফিফের জন্য সমন্ধ দেখতে যাবো।আফিফের মা তুমি যাবে কি…?
.
বাবার কথায় বিস্মিত হলো আফিফ।খাবার মুখে তুলতে গিয়েও আটকে গেলো।তাকে না জানিয়ে মেয়ে দেখার ডেইট ফিক্সড করে ফেললো ভাবতে পারছে না। এতদিন মুখে বললেও আফিফ না করায় কখনও বিয়ে নিয়ে আগান নি উনি কিন্তু আজ ডিরেক্ট মেয়ে দেখার ডেইট ঠিক।আফিফের মা হাসোজ্জল মুখ নিয়ে বললেন……
.
____অবশ্যই যাবো!আমার বড় ছেলের বউ দেখতে আমি যাবো না তাই কি হয়।অন্যান্য আপু এক্সাইটেড হয়ে বললো…..
.
______ওয়াও ভাইয়ার বিয়ে আমিও যাবো।ওদের কথার মাঝেই বললো আফিফ…..
.
______বাবা তুমি আমাকে না জানিয়ে কনে দেখার তারিখ ঠিক করে ফেললে।আমাকে একবারও জানানোর প্রয়োজন মনে করলে না….?
.
ছেলের কথায় বিরক্তি প্রকাশ করলেন উনি।কারণ এই ছ’মাসে হাজার বার বিয়ের কথা বলেছেন।আফিফ এখন না!এখন না বলে এড়িয়ে গেছে।তাই বাধ্য হয়ে এবার ওর মতামত না নিয়েই পাএী দেখার জন্য যাচ্ছেন উনি।ছেলেকে উদ্দেশ্য করে বললেন…….
.
_____না করলাম না!কারণ তুমি এখন বিয়ে করতে চাও না।কিন্তু আমি পুএবধূর মুখ দেখতে চাই।ক’দিন বাঁচব নাতি নাতনির মুখ দেখতে চাই।পরশু কনে দেখতে যাচ্ছি ইচ্ছে হলে যেতে পারো।
.
বাবার এমন সাফ সাফ কথায় অবাক আফিফ।কিন্তু বিয়ে এখন কি করে করবে।সে তো মনে মনে কাউকে চায়।যাকে নিয়ে বাকীটা জীবন কাটাতে চায়।কিন্তু এটা কি করে বাবাকে বলবে ভেবে পাচ্ছে না।হালকা খাবার খেয়ে উঠে দাঁড়ালো আফিফ।পাশ থেকে মুগ্ধতা বললো…..
.
_____ভাইয়া আপনি না খেয়ে চলে যাচ্ছ কেন…?খেয়ে যাও।
.
মুগ্ধতার কথা শোনে ভ্রু কুঁচকে তাকালেন আফিফের বাবা।কড়া কন্ঠে বললেন…..
.
____তেজ দেখানো হচ্ছে আমায়।যতই তেজ দেখাও না কেন এবার তোমার বিয়ে দিয়েই ছাড়বো আমি।বাবার কথার পিঠে কিছু বললো না আফিফ।রাগ দেখিয়ে হনহন করে বাসা থেকে বেড়িয়ে গেলো।
.
.
♥️
সেদিনের পর থেকে মুগ্ধর সাথে কথা বলে না মুগ্ধতা।এই পর্যন্ত অনেকবার কথা বলার চেষ্টা করেছে মুগ্ধ কিন্তু মুগ্ধতা সবসময় এড়িয়ে গেছে।তাঁর ব্যবহার পরিষ্কার বুঝিয়ে দিয়েছে সে কথা বলতে চায় না মুগ্ধর সাথে।মুগ্ধ হতাশ হয়ে বারবার ফিরে গেছে।একটা ভুল অনেকটা দূরে পাঠিয়ে দিলো মুগ্ধ কে।
.
মুগ্ধতার সামনে কান ধরে মুখ কাচুমাচু করে দাঁড়িয়ে আছে স্নেহা,হৃদয় আর রিদি।রিদিকে কান ধরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে চরম অবাক মুগ্ধতা।ম্যাম এভাবে কান ধরে আছে কেন বুঝতে পারছে না মুগ্ধতা।তাও আবার মুগ্ধর ফ্রেন্ডদের সাথে।চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে মুগ্ধতা।অন্যদিকে এদের এই অবস্থা দেখে মুখ চেপে হাসছে তিথি।রিদিকে উদ্দেশ্য করে বললো মুগ্ধতা……
.
______ম্যাম আপনি এখানে কান ধরে দাঁড়িয়ে আছেন কেন…?
.
মুগ্ধতার কথা শুনে চোখ বড় বড় করে তাকালো তিথি।ম্যাম সম্বোধন টা মাথায় ঢুকছে না তাঁর।তাই মুগ্ধতা কে উদ্দেশ্য বললো…..
.
_____এই তুই ম্যাম কাকে বলছিস….?
.
তিথির কথায় বিরক্তি প্রকশ করলো মুগ্ধতা।বিরক্তি নিয়ে বললো…..
.
______আরে চিনিস না উনি আমাদের নিউ ম্যাম।ওই যে আদিবা ম্যাম উনি।
.
মুগ্ধতার কথায় চোখ দুটো রসগোল্লার মতো হয়ে গেলো তিথির।মুহূর্তে অট্রহাসিতে ফেটে পড়লো সে।নিজেকে সামলে হেসে বললো…..
.
___তোর মাথায় নিজ্ঞাত প্রবলেম আছে।ইনি আদিবা ম্যাম বলে আবারও হাসতে লাগলো তিথি।
.
তিথির কথায় চোখ ছোট ছোট করে তাকালো মুগ্ধতা।আদিবা ম্যামকে নিয়ে এভাবে হাসছে কেন আর আমাকেই বা পাগল বলছে কেন…?সন্দেহ নিয়ে প্রশ্ন ছুড়লো মুগ্ধতা…..
.
______হুম!ইনিই আদিবা ম্যাম।কেন এতে তোর কোনো সন্দেহ আছে….?
.
হাসি থামিয়ে বললো তিথি….
.
______অবশ্যই আছে।ও হলো মুগ্ধ ভাইয়ার ফ্রেন্ড রিদি আপু।এখন তুই বল ভাইয়ার ফ্রেন্ড কি করে ম্যাম হয়।
.
তিথির কথায় অবাক মুগ্ধতা।উনি ম্যাম নন।তাহলে সেদিন যে উনি আমাকে বললেন মুগ্ধ আমার নামে কমপ্লেন করেছে।আমার ভাবনার মাঝেই পেছন থেকে বলে উঠলো মুগ্ধ….মুগ্ধর গলা পেয়ে পেছন ফিরে তাকালাম আমি।বিস্মিত চোখে তাকিয়ে আছি তার দিকে……
.
______কি মুগ্ধতা এটাই ভাবছো তো…?ও যদি ম্যাম না হয় তাহলে সেদিন তোমাকে আমার কাছে ক্ষমা চাইতে বললো কেন…?আর শাস্তির ভয়ই বা দেখালো কেন…?
.
মুগ্ধর কথায় বেশ কিছুটা চমকে উঠলাম আমি।মুগ্ধ কি করে বুঝলো এই কথাগুলো ঘোরপাক খাচ্ছে আমার মাথায়।এসব কি হচ্ছে তার কিছুই মাথায় ঢুকছে না আমার।হতবিহ্বল চোখে মুগ্ধর দিকে তাকিয়ে আছি আমি।তখনই বলে উঠলো তিথি…..
.
______তার মানে রিদি আপু আদিবা ম্যাম সেজে তোকে মুগ্ধ ভাইয়ার কাছে ক্ষমা চাইতে বলেছিলো।মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানালো মুগ্ধতা।এতক্ষণে বুঝতে পারলো তিথি এসবের কিছুতেই মুগ্ধর দোষ নেই।ওরা মুগ্ধতার দুর্বলতা জানতে পেরে ওকে বাকি সবার মতো মুরগী বানিয়েছে।তখন মুগ্ধ বললো……
.
______ মুগ্ধতা তুমি যা জানো তার কিছুই আমি করিনি।ওরা সবাই আমার ফ্রেন্ড।আমি কারো কাছে কোনো কমপ্লেনও করিনি।ওরা জাস্ট তোমাকে মজা করে এসব বলেছে।আর তুমিও ভেবেছো এই সবকিছু আমি করেছি।যদিও আমার কোনো দোষ নেই তবুও ওরা আমার ফ্রেন্ড।সেদিন সবকিছু আমার চোখের সামনে ঘটেছিলো তবুও চুপ ছিলাম আমি।তখন চুপ থাকা উচিৎ হয়নি আমার। ওদের থামানো উচিৎ ছিলো।এটা না করে অন্যায় করেছি আমি আর তার জন্য ক্ষমা প্রার্থী।এই ক’দিন তোমাকে সবকিছু খুলে বলার চেষ্টা করেছি কিন্তু তুমি আমার কোনো কথাই শোন নি।তাই যা হয়েছে সব ভুলে যাও।আমি ওদের হয়ে তোমার কাছে ক্ষমা চাইছি।সরি মুগ্ধতা।
.
মুগ্ধর সাথে সাথে বাকি সবাই বলে উঠলো সরি মুগ্ধতা।আমরা না বুঝে মজার ছলে অন্যায় করে ফেলেছি।প্লিজ আমাদের ক্ষমা করে দাও।
.
সকলের এমন বিহেভে অবাক মুগ্ধতা।কি বলবে বুঝতে পারছে না।শুধু শুধু মুগ্ধ কে ভুল বুঝে যা তা বলেছে।সকলের উদ্দেশ্যে বলে উঠলো…..
.
______ইটস’ ওকে!আপনাদের এভাবে ক্ষমা চাইতে হবে না।তবে এটাই বলবো এভাবে কাউকে অপদস্ত করা ঠিক নয়।এরকম আর কারো সাথে করবেন না।আর মুগ্ধ এতে আপনার কোনো দোষ নেই তাই ক্ষমা চাওয়ারও প্রশ্ন উঠে না।
.
মুগ্ধতার কথা শোনে হাফ ছেড়ে বাঁচলো সবাই।কান ছেড়ে স্বস্তির নিশ্বাস ফেললো।এখানে সবার জড়ো হওয়ার একটাই কারণ মুগ্ধ কে খুশি করা।মুগ্ধর গোমড়া মুখ বন্ধুদের মধ্যে কেউ দেখতে পারছিলো না।তাই বন্ধুর মুখে হাসি ফুটানোর জন্য মুগ্ধতার কাছে সরি চাইছে।বন্ধুর জন্য যেমন মুগ্ধতা কে শাস্তি দিয়েছিলে আজ আবার সেই বন্ধুর জন্য মুগ্ধতার কাছে ক্ষমা চাইতেও পিছ পা হয় নি।
.
মুগ্ধতার কাছে ক্ষমা চেয়ে নিজেকে হালকা লাগছে খুব।মনে হচ্ছে বুকের উপর থেকে ভারী বোঝা সরে গেছে।এই ক’দিন ঠিক মতো ঘুমাতে পারেনি,খেতে পারে নি মুগ্ধ।শুধুই চোখের সামনে মুগ্ধতার মায়াবী মুখ ভেসে উঠতো।এখন সব ঠিক হয়ে গেছে।মুগ্ধতা সত্যি টা জানতে পেরেছে।একে একে সকলে চলে গেলো।মুগ্ধ এখনও ওখানে দাঁড়িয়ে মুগ্ধতা কে দেখে চলেছে।লাল খয়েরী ড্রেসে খুব মানিয়েছে মেয়েটাকে।মুগ্ধ, মুগ্ধ হয়ে দেখে চলেছে মুগ্ধতা কে।পাশ থেকে রাতুল বললো…..
.
______দোস্ত আর কত দেখবি!এবার একটু চোখ সরা।এভাবে হ্যাবলার মতো তাকাতে থাকলে ও তোকে পাগল ভাববে।
.
রাতুলের কথায় মুচকি হাসলো মুগ্ধ।চোখ সরিয়ে নিয়ে বললো…..
.
______কই দেখছি না তো!আমি এমনি তাকিয়ে আছি।ওদের কথার মাঝেই তিথি বললো…..
.
মুগ্ধতা চল আমাদের ক্লাস শুরু হয়ে যাবে।তিথির কথায় মুগ্ধতা মাথা নাড়ালো।মুগ্ধর কাছ থেকে বিদায় নিয়ে দুজনে ক্লাসের উদ্দেশ্যে চলে গেলো।মুগ্ধতা আর তিথির যাওয়ার দিকে মুগ্ধ আর রাতুল দুজনে চেয়ে রইলো।
.
.
আফিফের জন্য পাএী দেখার জন্য রেডি হচ্ছে সবাই।অন্যন্যা ও যাবে।এদিকে গাল ফুলিয়ে নিজের রুমে পায়চারি করছে আফিফ।সে মিতুলকে ভালোবাসে সেটা কি করে সবাইকে বলবে সেই চিন্তায় বিভোর ।তাছাড়া সেই বা কি এখন বিয়ে করতে রাজি হবে।মিতুল যেই মেয়েটাকে প্রথম দেখাতেই ভালোবেসে ফেলেছে আফিফ।এখন তাঁকে ছাড়া কাউকে জীবনে জড়ানো একেবারে ইম্পসিবল তার জন্য।এদিকে তাঁর জন্য পাএীও দেখছে কি করবে আফিফ ভেবে পাচ্ছে না।তাছাড়া এখন যদি বাসায় বলে কাউকে ভালবাসে পরে যদি দেখা যায় সেই মেয়েটির জীবনে অন্য কেউ আছে তাহলে।এভাবে মেয়েটির সাথে কথা না বলে বাসায় তার কথা জানাতে পারে না।মিতুলের সাথে কথা বলা এখন খুব জরুরি।কিন্তু বিয়ে আটকাতে কিছু একটা করতে হবে তাকে।তাই সিদ্ধান্ত নিলো বাবার সাথে পাএী দেখতে যাবে…..!!
.
.
#চলবে……