মেঘপিওনের চুপকথা পর্ব-০৬

0
293

#মেঘপিওনের চুপকথা
#লেখিকা_আলো_ইসলাম

“৬ষ্ঠ পর্ব”

–” রাশির আর রনির ইশারায় কথা বলা দেখে সম্রাট রেগে বোম হয়ে যায়। এই মুহূর্তে ভীষণ জেদ, রাগ দুইটাই আসে রাশির প্রতি। সম্রাট রাগী লুকে এগিয়ে আসতে যাবে তখনই রাহাত সম্রাটকে থামিয়ে দেয়।

–‘ একদম নয় সমু। তুই রাগের বশে কিছু করবি না এখন। অনেক কষ্টে একবার রাশিকে ম্যানেজ করেছিস তুই। আবারও যদি সেম ভুল করিস তাহলে কিন্তু রাশি আর ক্ষমা করতে পারবে না। তুই রাশির সাথে ঠান্ডা মাথায় আলাদা করে কথা বলিস৷ ও কেনো এমনটা করেছে জানতে চাস। আমার মনে হয়না তখন রাশি কিছু লুকাবে তোর থেকে। কিন্তু ভুলেও এখন মানুষের সামনে সিনক্রিয়েট করতে যাবি না। তাহলে কিন্তু হীতে বিপরীতে হবে।
– রাহাতের কথায় সম্রাট স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টা করে। রাহাত কথা গুলো ভুল কিছু বলেনি৷ রাগের মাথায় কিছু করা যাবে না। তাহলে রাশি আবার ভুল বুঝবে তাকে। কিন্তু এই দৃশ্য দেখার পর সম্রাটের মাথায় যেনো কাজ করছে না। বারবার অন্য চিন্তা আসছে সম্রাটের মাথায়। রাশি কে নিয়ে তার ভয় হচ্ছে। রনি আর রাশির অন্য কোনো সম্পর্ক আছে ভেবে সম্রাট ঘেমে যায়। রাশিকে অন্য কারো সাথে একদম মানতে পারবে না সম্রাট আর না সহ্য করতে পারবে। ভীষণ অস্থির লাগছে তার মধ্যে। সম্রাট দুই হাতে মাথার চুল ঠেলে ধরে পেছনে। রাহাত বুঝতে পারছে সম্রাটের মধ্যে কি চলছ এখন। সম্রাট একবার রেগে গেলে নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারে না৷ সেখানে তার কথা শুনে যে নিজেকে সামলাতে পেরেছে এটাই অনেক।

–” সামিরা এখনো আসেনি কলেজে৷ রাশি ক্লাসের দিকে যায় একা একা। আর একটু পর ক্লাস শুরু হবে। এর মধ্যে নিশ্চয় সামিরা চলে আসবে। এইসব ভেবে রাশি ক্লাসে যাওয়ার জন্য উদ্যোগী হয়।

– রাশির ক্লাস দুইতলায়। আপন মনে হেঁটে যাচ্ছে রাশি। মুখে মুচকি হাসি। রাশি এখনো পর্যন্ত সম্রাটকে দেখেনি। তাছাড়া সম্রাটের কথা তার মাথাতেও ছিলো না এতখন। কিন্তু হঠাৎ সম্রাটের কথা মাথায় আসতে রাশি এদিক ওদিক তাকায়৷ সম্রাটকে খোঁজার চেষ্টা করে। কিন্তু রাশির চক্ষুগোচর হয়না সম্রাট। হবে বা কি করে সম্রাট তো অনেক আগে মাঠের দিক থেকে চলে এসেছে। রাশি আবারও ক্লাসে যাওয়ার জন্য হাঁটা দেবে তখনই পেছন থেকে হাত টেনে নিয়ে একটা ফাঁকা ক্লাসে প্রবেশ করে রনি। হঠাৎ এমন হওয়ায় রাশি অনেক ভয় পেয়ে যায়৷ চমকানো চোখে সামনে তাকাতেই রনিকে দেখতে পাই। রাশির ভয়ার্ত চেহারা দেখে রনি ফিক করে হেসে উঠে। এইদিকে রাশির বুকের মধ্যে যেনো ঢোল পিটাচ্ছে ভয়ের কারণে।

– এইভাবে কেউ ভয় দেখায়৷ আজব আপনি। আর হঠাৎ এইভাবে রুমের মধ্যে নিয়ে আসলেন কেনো? সমু ভাইয়া হয়তো আশেপাশে আছে। আমাদের একসাথে দেখলে আর রক্ষা নেই। প্লিজ চলে যান আপনি ভয়ার্ত কন্ঠে বলে রাশি।
– এত ভয় কেনো পাও সমুকে তুমি? তাছাড়া তোমার লাইফ তুমি যেভাবে খুশি কাটাবে৷ যার সাথে ইচ্ছে তার সাথে চলাফেরা করবে। এটা সমু কেনো ঠিক করে দেবে? কিছুটা রাগ দেখিয়ে বলে রনি।

– হ্যাঁ আমি মানছি জীবনটা আমার৷ আমি আমার ইচ্ছে মতো সব কিছু করতে পারি৷ তবে রেস্পেক্ট বলে একটা কথা আছে রনি৷ তাছাড়া আমি যে মানুষটার আশ্রয়ে আছি, যারা আমাকে এতটা ভালোবাসে, আগলে রাখে তার প্রতি শ্রদ্ধা সম্মান আলাদা থাকবে স্বাভাবিক। কে কি করে জানি না৷ তবে আমি ওই মানুষ গুলোকে মন থেকে সম্মান করি৷ হ্যাঁ মানছি আপনাদের মধ্যে ঝামেলা আছে। একে অপরের থেকে দূরে থাকেন। আর হয়তো এই জন্যই সমু ভাইয়া আমাকে আপনার থেকে দূরে থাকতে বলে। তবে আমি চাইনা আমার জন্য আপনাদের মধ্যে নতুন করে কোনো ঝামেলা হোক। তাই আমি চাই আমাদের বন্ধুত্ব টা তার থেকে আড়ালে থাক। বেশ ইমোশনাল হয়ে বলে কথা গুলো রাশি। কথা গুলো বলতে রাশির মুখটা থমথমে হয়ে আসে।

— রনি বুঝতে পারে রাশির মন খারাপ হয়েছে। তাই পরিস্থিতি টা সামাল দিতে মুচকি হেসে বলে তোমাকে যত দেখি তত মুগ্ধ হয় জানো। আমি না সত্যি অনেক লাকী তোমার মতো একটা ফ্রেন্ড পেয়ে। সমস্যা নেই। তুমি যেমন ভাবে চাও তেমনই হবে। তোমার অসুবিধা হোক এমন কাজ আমিও করতে চাই না৷ আমি চাই আমার এই বন্ধুটা ভালো থাক রাশির নাক টিপে দিয়ে বলে রনি৷ রাশি এতে মৃদু হাসে।

–‘ জানি না শুধু সম্মান শ্রদ্ধা থেকে নাকি। কিন্তু কেনো জানি না ওই মানুষটার কথা ফেলতে পারি না। খুব ইচ্ছে করে তার কথা শুনতে মানতে৷ তার করা রাগ শাসন কেনো জানি না খুব ভালো লাগে বড্ড আপন লাগে সব কিছু। জানি না তার অগোচরে ঠিক করছি নাকি ভুল তবে আমি ওই মানুষটাকে একদম কষ্ট দিতে চাইনা মনে মনে বলে রাশি। এর মধ্যে কারো হাততালি দেওয়ার শব্দ শুনতে পাই রাশি। রনি আর রাশি দুজনেই চমকে উঠে দরজার দিকে তাকাতেই সম্রাট কে দেখে ছিটকে সরে যায় রাশি৷ চোখ মুখে ভীষণ ভয়ের ছাপ তার। বারবার শুকনো ঢোক গিলতে থাকে সে। রনিও ঘাবড়ানো চোখে তাকায় সম্রাটের দিকে।

– বাহ! বেশ রঙ্গলীলা চলছে দেখছি এখানে। রাশি এই তোমার ভার্সিটি করা, এই তোমার ক্লাস? তা কতদিন ধরে চলছে এইসব? বেশ সাবলীল ভাবে বলে সম্রাট।
– রাশির মুখ দিয়ে কথা বের হয়না৷ সম্রাট কে এইভাবে সামনে দেখবে সে কল্পনা করেনি৷ রাশির গলা শুকিয়ে আসে ভয়ের চোটে।
– কি বাজে বকছিস সমু। শক্ত গলায় বলে রনি।
– এই একদম কথা বলবি না। একটাও কথা শুনতে চাইনা তোর থেকে। আমি যাকে প্রশ্ন করেছি জবাবটা সেই দেবে আমাকে। আর তোকে তো আমি পরে দেখছি একটা আঙ্গুল তুলে রাগী গলায় বলে সম্রাট। ভীষণ রেগে গেছে সম্রাট। চোখ মুখ লাল হয়ে আসে রাগের কারণে। হাতের রগ গুলো ফুলেফেঁপে উঠেছে যেনো।

–‘ আপনি ভুল ভাবছেন ভাইয়া। আসলে.. রাশি কি বলবে বুঝতে পারছে৷ কথা বলতে গেলেও তার কন্ঠ কাঁপছে।
– হুম আসলে কি বলো? তোমাদের প্রাইভেসি চাই তাই তো? এই জন্য এই ফাঁকা রুমে এসেছো আলাদা করে সময় কাটাতে চিৎকার করে বলে সম্রাট কথাটা। সম্রাটের চিৎকারে রাশি কেঁপে উঠে চোখ বন্ধ করে ফেলে ভয়ে৷

– সমু তুই এবার অনেক বাড়াবাড়ি করছিস কিন্তু। তুই রীতিমতো রাশির চরিত্র নিয়ে কথা বলছিস। ওর কোনো দোষ.. শাট আপ জোরের সাথে বলে উঠে সম্রাট। রনি থমকে যায় সম্রাটের কথায়। রাশি চোখ খুলে ফেলে বড় বড় চোখে তাকায়। রাশির চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়ছে।

– তোরর হিসাব তোলা রইলো। সেটা আমি পরে কষে নেবো৷ আগে এর সাথে বোঝাপড়া সেরে আসি কথাটা বলে সম্রাট রাশির হাত ধরে হিড়হিড় করে টেনে নিয়ে যায়। রাশি কোনো রিয়াকশন দেখায় না৷ সম্রাটের সাথে চলে আসে।
– সমু তুই কি করছিস এইসব! ছাড় রাশিকে। ওর লেগে যাবে। ওকে কষ্ট দিলে আমি কিন্তু তোকে ছেড়ে কথা বলব না। পেছন পেছন কথাটা বলতে বলতে আসে রনি৷ সম্রাট রনির কথায় কোনো পাত্তা দেয় না।

— রাহাত, সামিরা, হাসিব অসহায় চোখে তাকায় রাশির দিকে। সম্রাট যেমন ভাবে রেগে আছে আজ রাশির কপালে কি আছে একমাত্র উপর আল্লাহ জানে।
– রনি আহত চোখে তাকিয়ে থাকে রাশির চলে যাওয়ার দিকে। রাশিকে নিয়ে ভীষণ ভয় হচ্ছে তার৷ রনি তো সম্রাট কে চেনে। যদি রাগের মাথায় রাশির কোনো ক্ষতি করে দেয় তাহলে। কথাটা ভাবতেই আঁতকে উঠে রনি।
– কি হলো ব্যাপারটা। রাশিকে এইভাবে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে গেলো কেনো সমু? শান বলে কৌতুহলী হয়ে।
– অনেক বড় ঝামেলা হয়ে গেছে শান। জানি না রাশির সাথে আজ কি করবে সমু। তবে ও যদি রাশিকে কষ্ট দেয় আমি ওকে ছাড়বো না এই বলে দিলাম। এরপর রনি গটগটে পায়ে বেরিয়ে যায় কলেজ থেকে।

–‘ রাশি এইভাবে ঠকাতে পারলো সমুকে। ওকে বারণ করার পরও রনির সাথে যোগাযোগ রেখেছে। তাও শুধু যোগাযোগ! গোপন সম্পর্ক ভাবা যায়। কটুক্তি করে বলে হাসিব। হাসিবের কথায় রাহাত রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে, একদম বাজে বকবি না। রাশি এমন ধরনের মেয়েই নয়। এখানে অন্য কিছু আছে৷ তবে হ্যাঁ এটা ঠিক! রাশি একদম ঠিক করেনি সম্রাটের কথা না শুনে। সম্রাট আজ অনেক কষ্ট পেয়েছে৷ ওর মধ্যে কি চলছে একমাত্র ও জানে।
– আমি তো রাশির সাথে রনি ভাইয়াকে কখনো দেখিনি। তাছাড়া রাশি তো তেমন কিছু বলেনি রনি ভাইয়ার ব্যাপারে। ওদের মধ্যে স্পেশাল কোনো সম্পর্ক আছে বলে আমার মনে হয় না। ঠোঁট উল্টিয়ে বলে সামিরা।

–” সম্রাট রাশির হাত শক্ত করে ধরে টেনে নিয়ে আসে বাড়ির মধ্যে। রাশি মাথা নিচু করে আছে। আজ দরজা ভেজানো ছিলো ভেতর থেকে তাই সম্রাটের আর কলিং বেল চাপানোর দরকার পড়ে না।
–” রিনা খান রান্নাঘরে ছিলো৷ দুপুরের খাবারের আয়োজন চলছিলো। হঠাৎ কারো আসার আভাস পেয়ে বেরিয়ে আসে রান্নাঘর থেকে। সম্রাট রাশিকে টানতে টানতে নিয়ে যাচ্ছে সিঁড়ি দিয়ে। রিনা খান এটার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলো না।

– একি সমু। তুই রাশিকে এইভাবে নিয়ে যাচ্ছিস কেনো? আর তোরা এই সময় বাড়িতে কেনো? কি হয়েছে আমাকে বল। ওর লেগে যাবে সমু এমন ভাবে নিয়ে যাচ্ছিস কেনো ওকে? ঘাবড়ানো চেহারা নিয়ে বলে রিনা খান। সম্রাট তার মায়ের কোনো প্রশ্নের জবাবই দেয়না। রাশিকে নিয়ে রাশির ঘরের মধ্যে ঢুকে জোরের সাথে দরজা বন্ধ করে দেয়। রিনা খান সম্রাটের পিছু পিছু ছুটে এসেও নাগাল পাইনা ওদের। রিনা খান দরজা ধাক্কায় খোলার জন্য কিন্তু ভেতরে থেকে আর কোনো সাড়াশব্দ পায়না।

–” সম্রাট রাশিকে ঘরের মধ্যে নিয়ে এসে বিসানার উপর ছিটকে ফেলে দেয়। রাশি এখনো চুপ করে আছে। চোখ দিয়ে এখন আর পানিও পড়ছে না।
.– কেনো করলে এমন? কেনো আমাকে মিথ্যা বলেছো। কি সম্পর্ক তোমার সাথে রনির? জবাব দাও রাশি রাগী কন্ঠে বলে সম্রাট। রাশি এখনো একই ভাবে বিসানায় পড়ে আছে। সম্রাটের রাগের মাত্রাটা আরো বৃদ্ধি পাই। রাশির হাত ধরে টেনে সোজা করে দাঁড় করায়। রাশির সাহস হয়না সম্রাটের দিকে তাকানোর।

–‘ চুপ করে থাকবে না রাশি৷ বলো রনির সাথে তোমার কি এমন সম্পর্ক যার জন্য তোমাদের ফাঁকা ক্লাস রুমে যেতো হলো। রনি তোমার কোথায় টাস করেছে যেনো ভাবান্তর হয়ে বলে সম্রাট। রাশি আহত চোখে তাকায় সম্রাটের দিকে। সম্রাটকে এই মুহূর্তে উন্মাদের মতো লাগছে।

–‘ তোমার এই হাত ধরেছিলো না কথাটা বলে সম্রাট রাশির ডান হাত শক্ত করে ধরে। রাশি ব্যথা পাই এতে। দাঁতে দাঁত চেপে ব্যথা সহ্য করার চেষ্টা করছে।
– আর কি কি ধরেছিলো বলো শুনি। আমাকে বলতে সমস্যা কোথায়? নাকি তোমাদের স্পেশাল সম্পর্কে স্পেশাল মুহুর্তের কথা গুলো আমার জানার অধিকার নেই। সম্রাটের এই কথায় রাশি অবাক হয়ে তাকায় সম্রাটের দিকে। ঘৃণাতে ভরে আসে তার দৃষ্টি। সম্রাট তাকে নিয়ে বাজে মন্তব্য করছে এটা রাশি মানতে পারছে না।

– খুব ভালো লাগে না ওর ছোঁয়া গুলো। নিশ্চয় খুব সুখ অনুভব করো। আমাকে বলতে পারতে আমি দিতাম এমন সুখ তোমাকে। এইভাবে গোপনে সম্পর্ক করার তো কোনো দরকারই ছিলো না তোমাদের। নাকি আমাকে দিয়ে তোমার হবে না৷ এটাই মনে করেছো তুমি। এই জন্য কি রনির কাছে গেছো? আন্সার মি ড্যামিট আবার চিৎকার করে বলে সম্রাট। নিজেকে সামলানো দায় হয়ে যাচ্ছে তার৷ রনির সাথে রাশির সেই মুহূর্ত টা মনে আসলে সম্রাটের মধ্যে যেনো হিংস্র পশু জেগে উঠছে। কিন্তু রাশির মধ্যে এখন সম্রাটের জন্য ঘৃণা ছাড়া আর কিছুই আসছে না। সম্রাটের থেকে এমন বাজে কথা রাশি কখনো আশা করেনি। হ্যাঁ মানছে সে সম্রাটের কথা শুনেনি৷ তার আড়ালে রনির সাথে ফ্রেন্ডশিপ করেছে। তাই বলে তাদের বন্ধুত্বকে এমন নোংরা একটা সম্পর্কে স্থাপন করবে ভাবিনি রাশি।

–‘ রাশি আর চুপ থাকতে পারে না। চোখের পানি মুছে দৃঢ় কন্ঠে বলে, আমার সাথে এইভাবে কথা বলার কোনো অধিকার নেই আপনার মিস্টার সম্রাট। আমার লাইফ আমি যা ইচ্ছে করবো। তার জন্য নিশ্চয় আপনার পারমিশন লাগবে না। কে হোন আপনি যে আপনার কথা মতো আমাকে চলা লাগবে। আমি কার সাথে সম্পর্ক রাখবো নাকি রাখবো না সেটা একান্ত আমার ব্যক্তিগত ব্যাপার। সেটা ঠিক করে দেওয়ার আপনি কেউ নন। আমার রনির সাথে যে সম্পর্ক থাকনা কেনো তাতে আপনার কি? আমার যার সাথে ইচ্ছে সম্পর্ক জড়াবো… আর কিছু বলার আগেই রাশির গালে সজোড়ে একটা থাপ্পড় মেরে দেয় সম্রাট। নিজেকে আর কন্ট্রোল করতে পারে না। তাই রাগের মাথায় রাশির গায়ে হাত তুলে ফেলে সে। রাশি অবাকিত চোখে তাকায় সম্রাটের দিকে গালে হাত রেখে। চোখ দিয়ে অঝোরে পানি পড়ছে।

– সম্রাট এবার রাশির দুই গাল ধরে দেয়ালের সাথে চেপে ধরে। গালে ভীষণ ব্যথা করছে রাশির। সম্রাট অনেক শক্ত করে চেপে ধরে আছে একহাত দিয়ে রাশির গাল।
– এই মুখ দিয়ে আমি ছাড়া অন্য ছেলের নাম ভুলেও উচ্চারণ করার সাহস দেখাবে না। তোমার লাইফে শুধু একজনই থাকবে আর সেটা আমি। তোমার জীবনে তোমার সব কিছুতে শুধু আমার অধিকার। তাই আমি যা বলব সেটাই করতে হবে তোমাকে। সেটা তুমি মানো আর না মানো তাতে আমার কিছু আসে যায় না৷ কিন্তু আমি ছাড়া তোমার জীবনে কোনো পুরুষ থাকবে না। ভীষণ রেগে বলে কথা গুলো সম্রাট। রাগের বশে কি বলছে না বলছে সেটাই ভুলে গেছে সে। রাশির সামনে এইভাবে তার অনুভূতি গুলো প্রকাশ করতে হবে কখনো ভাবেনি।

– সম্রাটের কথায় রাশি চমকে উঠে। বাকরুদ্ধ হয়ে বিমুঢ় দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। রাশির দৃষ্টি যেনো সম্রাটে আঁটকে গেছে। সম্রাটের কথা গুলো রাশির বোধগম্য হয়না এই মুহূর্তে। ভীষণ রকম কৌতুহলী হয়ে যায় সে।

–‘ এইসব কি বলছেন আপনি? কিসের এত অধিকার আপনার আমার উপর। কেনো করছেন এমনটা? কৌতুহল দমিয়ে বলে রাশি৷ সম্রাট যেনো বাস্তবে ফিরে আসে। রাগের মাথায় কি বলে ফেলেছে রাশির সামনে সেটা এখন বুঝতে পারে। সম্রাট রাশিকে ছেড়ে দিয়ে দূরে সরে আসে।

— কি হলো বলুন। আপনি এতখন কি বললেন এইগুলো। আপনি ছাড়া কোনো পুরুষ কেনো আসবে না আমার লাইফে বলুন? সম্রাট অসহায় চোখে একবার তাকায় রাশির দিকে। রাশির মধ্যে ভীষণ উত্তেজনা৷ উত্তর গুলো জানার তীব্র আকাঙ্খা।
– সম্রাট আর কিছু না বলে বড় বড় ধাপ ফেলে বেরিয়ে যায় রাশির ঘর থেকে। রিনা খান এতখন রাশির ঘরের
সামনে ছিলো। সম্রাট বেরিয়ে যেতে তিনি ঘরের মধ্যে আসেন ছুটে। রাশি মেঝেতে বসে কান্নায় ভেঙে পড়ে সম্রাট বেরিয়ে যাওয়ার পরে। রিনা খান এসে রাশিকে জড়িয়ে ধরে। রিনা খানের সংস্পর্শ পেয়ে রাশি শব্দ করে কেঁদে উঠে।

–” সম্রাট রাশির ঘর থেকে তার ঘরে এসে দরজা লাগিয়ে দিয়ে ভাংচুর শুরু করে দেয়। কোনো ভাবেই তার রাগটাকে কন্ট্রোল পারছে না সে। সব থেকে বেশি খারাপ লাগছে এখন রাশির গায়ে হাত তোলার পরে। রাগের মাথায় এমন একটা ভুল করে ফেলেছে যে তার নিজেরই অনুশোচনা হচ্ছে তার জন্য। সম্রাটের ঘর থেকে ভাংচুরের আওয়াজ পেয়ে রিনা খান রাশির ঘর থেকে ছুটে আসে। রাশিও চমকে উঠে তাতে।

–” চলবে…