মেঘপিওনের চুপকথা পর্ব-০৮

0
291

#মেঘপিওনের চুপকথা
#লেখিকা_আলো_ইসলাম

“৮ম পর্ব”

–” আমি ভালোবাসি রাশিকে। আর রাশিও আমাকে ভালোবাসে। তুই মাঝখানে চলে এসেছিস আমাদের তিক্ত কন্ঠে বলে রনি। রনির কথায় সম্রাট দু-কদম পিছিয়ে যায়। উপস্থিত সবাই হতভম্ব হয়ে রনির দিকে তাকায়। রাহাত যেনো রনির কথাটা কোনো ভাবেই মানতে পারছে না। শান সাবলীল ভাবে দাঁড়িয়ে আছে।
– সম্রাট আহত দৃষ্টিতে তাকায় রনির দিকে। রনির কথাটা শুনে সম্রাট যেনো বাকরুদ্ধ হয়ে গেছে। চাইলেও সে মুখ দিয়ে কোনো কথা বের করতে পারছে না। সম্রাটের বুকের মধ্যে চিনচিন ব্যথা শুরু হয়ে যায়। এমন মনে হচ্ছে তার যে, কেউ খুব যত্ন নিয়ে তার হৃদয়টা ক্ষতবিক্ষত করছে।

— তুই কি বলছিস ভেবে বলছিস রনি? সত্যি রাশি তোকে ভালোবাসে? সন্ধিহান দৃষ্টিতে তাকিয়ে থমথমে গলায় বলে রাহাত।
– অবশ্যই আমি যা বলছি একদম ঠিক বলছি। নাহলে তুই বল!সম্রাটের বারণ সত্ত্বেও রাশি আমার সাথে সম্পর্ক কেনো রাখবে? কারণ ও আমাকে ভালোবাসে। শুধু মাত্র এই সমুর ভয়ে কিছু বলতে পারে না। আমার থেকে দূরে দূরে থাকার চেষ্টা করে। রাশি আমাকেই ভালোবাসেই।

– — শাট আপ রনি। এইসব কি ভুলভাল বলছেন আপনি। রাগী কন্ঠে বলে উঠে রাশি। রাশির কথায় সবাই তার দিকে তাকায়। সম্রাট এখনো একই ভাবে দাঁড়িয়ে আছে। রাহাতের মুখে মৃদু হাসি ফুটে রাশিকে দেখে। রাশির সাথে সামিরাও আছে।

–‘ রিনা খান সামিরা কে ফোন করে ডাকে রাশিকে বাইরে নিয়ে যাওয়ার জন্য। রাশি মন খারাপ করে ঘরে বসে থাক এটা রিনা খান চাইনা। তাই সে সামিরাকে বলে রাশিকে বুঝিয়ে যেনো ভার্সিটি নিয়ে যায়। বাইরে গেলে অন্তত রাশির মনটা একটু হলেও হাল্কা হবে। তাই রিনা খানের কথা মতো সামিরা রাশিকে বুঝিয়ে সুঝিয়ে নিয়ে আসে ভার্সিটি। ভার্সিটি আসতেই রাশি রনির কথা গুলো শুনতে পাই।

–‘ রাশিকে দেখা মাত্র রনি ছুটে যায় রাশির কাছে।
– তুমি কেমন আছো রাশি? তোমার কিছু হয়নি তো? সমু তোমার সাথে খারাপ কিছু করেনি তো। এক নাগাড়ে বিরতিহীনভাবে কথাগুলো বলে যাচ্ছে রনি। রনির কথা গুলো এই মুহূর্তে প্রচন্ড বিরক্ত লাগছে রাশির কাছে।
– আমি ঠিক আছি রনি। আমার সাথে কেউ কিছু করেনি। আর না কেউ খারাপ বিহেভ করেছে। কিন্তু আপনি এই গুলা কি বলছিলেন। আপনার সাথে আমার জাস্ট ফ্রেন্ডশীপ। এর বাইরে কিছু নেই৷ আর আপনি সেটাকে প্রেমের পরিনতি দিচ্ছেন সবার সামনে। তার মানে আপনার মনে এমন পরিকল্পনা ছিলো রনি। ঘৃণিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে রাশি কথা গুলো। রাশির কথায় রনি ঘাবড়ে যায়। দৃঢ় কন্ঠে বলে, কেনো তুমি আমাকে ভালোবাসো না রাশি? আমি জানি তুমি আমাকে ভালোবাসো৷ শুধু মাত্র সমুর ভয়ে সেটা প্রকাশ করতে পারো না৷ এখন আর কোনো ভয় নেই রাশি। সমু কিছু করতে পারবে না আমাদের। তুমি সবার সামনে বলে দাও যে, তুমি আমাকে ভালোবাসো।

– জাস্ট শাট আপ! অনেকটা জোরের সাথে বলে উঠে রাশি। রাশির কথায় রনি চমকে উঠে। সম্রাট ক্লান্ত দৃষ্টিতে সবটা দেখছে৷

– আমি আপনাকে ভালোবাসি না রনি। আর না কখনো বাসতাম৷ আপনার ভুল ধারণা এটা যে আমি আপনাকে ভালোবাসি। আমি আপনাকে শুধু বন্ধুত্বের জায়গাটা দিয়েছিলাম। তার প্রতিদান এইভাবে দিলেন আমাকে। আমি যদি কাউকে ভালোবেসে থাকি তবে এই মানুষটা। সম্রাটের দিকে আঙ্গুল তুলে বলে রাশি। রাহাত, সামিরার মুখে চওড়া হাসি। সম্রাট অবিশ্বাস্য চোখে তাকিয়ে আছে রাশির দিকে। রনি থমকে গেছে যেনো রাশির কথাতে। শান চমকে উঠে অবাক হয়ে তাকায় রাশির দিকে।
– প্রথম থেকে এই মানুষটাকে ভালোবাসি আমি। কিন্তু ভয়ে কখনো সেটা বলতে পারিনি। কারণ সম্রাট ভাইয়া অনেক রাগী আর গম্ভীর। তাই আমি ভয়ে কখনো নিজের মনের কথা বলার সাহস পাইনি। তবে আস্তে আস্তে আমি বুঝতে পারি সম্রাট ভাইয়া আমাকে ভালোবাসে। তারপরও আমি দ্বিধায় ছিলাম৷ আমার ভাবনা সত্যি কি-না সেটা জানার অপেক্ষা করছিলাম। যদি সম্রাট ভাইয়া আমাকে ভালোবাসে তাহলে নিশ্চয় একদিন না একদিন সেটা আমাকে বলবে। এই মানুষটার শাসন, বকাবকি কেয়ার সবটা ভালো লাগে আমার। কিন্তু আমি ভুল করেছি উনার কথা না শুনে আপনার দিকে বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দিয়ে। আমি বুঝিনি আপনার জন্য এতটা কষ্ট পাবে উনি। আমি ভেবেছিলাম সময় হলে উনাকে সবটা জানাবো৷ কিন্তু তার আগে এমন একটা পরিস্থিতি হবে আমি সত্যি ভাবিনি৷ কথাটা বলতেই কেঁদে উঠে রাশি মুখে হাত দিয়ে।

– রনির চোখে পানি ছলছল করছে। সম্রাট যেনো স্বর্গের সুখ অনুভব করছে এই মুহূর্তে। তার বিশ্বাসী হচ্ছে না রাশি তাকে ভালোবাসে৷ সবার সামনে এইভাবে নিজের মনের কথা প্রকাশ করেছে। সম্রাট রাশির সামনে এসে দাঁড়ায়। রাশি এখনো দুইহাতে মুখ ঢেকে কান্না করছে। সম্রাট রাশির হাত দুইটা সরিয়ে দেয়। রাশি ছলছল চোখে সম্রাটের দিকে তাকায়।

— সম্রাট নিজেকে সামলে নিয়ে বলে, কি বললে আরেকবার বলবে রাশি। তুমি কি সত্যি আমাকে? সম্রাটের কথা শেষ না হতেই রাশি সম্রাটকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলে, হ্যাঁ ভালোবাসি৷ অনেক ভালোবাসি। যেদিন প্রথম দেখেছিলাম আপনাকে সেদিনই ভালো লাগার জন্ম নিয়েছিলো আমার মনে। তখন বুঝতে পারিনি আসলে এটা ভালো লাগা নাকি ভালোবাসা৷ কিন্তু আস্তে আস্তে বুঝতে পারলাম। আমার ভালো লাগাটা আমার অজান্তেই ভালোবাসায় পরিণত হয়েছে।

– রাশির কথায় সম্রাট রাশিকে আরও শক্ত করে চেপে ধরে। সম্রাটের ইচ্ছে করছে রাশিকে তার মধ্যে নিয়ে নিতে৷ যাতে আর কেউ তাকে ছোঁয়ার সাহস না পাই। রনি আহত চোখে তাকিয়ে সবটা দেখছে। ভেতরে তার তোলপাড় চলছে। শান রনির কাধে হাত রাখলে রনির চোখ দিয়ে একফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়ে। রাহাত,সামিরা, হাসিব হাসি মুখে দাঁড়িয়ে আছে৷ রাহাত সামিরাকে একহাত দিয়ে আগলে নেয়। ভীষণ আনন্দ লাগছে তাদের।

-*’ আমিও ভালোবাসি তোমাকে রাশি। ভীষণ ভালোবাসি। কখন যে এতটা ভালোবেসে ফেলেছি জানি না৷ কিন্তু এটা জানি তুমি ছাড়া আমি বাঁচব না৷ আমি নিঃস্ব হয়ে যাবো। আমাকে ছেড়ে কখনো যেওনা রাশি। আমি সত্যি বাঁচতে পারবো না।
– রনি আর দাঁড়ায় না সেখানে। সম্রাটের সাথে রাশিকে এইভাবে দেখার সাহস তার নেই আর। ভীষণ কষ্ট হচ্ছে তার। সেতো সত্যি রাশিকে ভালোবেসেছিল প্রথম দেখাতেই। ভেবেছিলো রাশির সাথে ফ্রেন্ডশীপ করে সেটা ভালোবাসায় রুপ দেবে। রাশি হয়তো তার প্রেমে পড়বে। কিন্তু রাশি যে আগে থেকেই আরেকজনের মায়ায় আবদ্ধ হয়ে আছে সেটা জানাছিলো না রনির।

–‘ তোরা কি এইভাবেই থাকবি সারাজীবন সমু। মানুষ তো দেখছে ভাই। দাঁতে দাঁত চেপে ফিসফিস করে বলে রাহাত। রাহাতের কথায় রাশি সম্রাটকে ছেড়ে দিয়ে দূরে সরে দাঁড়ায় মাথা নিচু করে। ভীষণ লজ্জা লাগছে তার। আবেগের বসে কথা গুলো বলে দিয়েছে ঠিকই কিন্তু এখন সেগুলো মনে আসতেই ভীষণ লজ্জা করছে রাশির৷ চোখ তুলে তাকানোর সাহস হচ্ছে না কারো দিকে।
– কি রে রাশি! তুই যে লজ্জায় রাঙা হয়ে উঠছিস। তোর গাল দুটো দেখ কেমন ব্লাশিং করছে ঠোঁট চেপে হেসে বলে সামিরা। সামিরার কথায় রাশি ধ্যাৎ বলে মুখ লুকোয় হাত দিয়ে।
– যাক বাবা অবশেষে সবটা মিটলো। বন্ধু তুই যেমন সেন্টি খেয়েছিলি তো! মনে হচ্ছিলো এই যুগের দেবদাস আরেকটা। এই না না! ওইটা দেবদাস নয় সম্রাট শাজাহান। যে তার মমতাজের জন্য কাতর। কথাটা বলে হাসিব হো হো করে হেসে উঠে। সাথে সবাই হাসতে থাকে৷ রাশি আরো লজ্জিত হয় ওদের কথায়। সম্রাট মুচকি হেসে মাথা চুলকায়।

– যা ভাই তোর মমতাজ সরি তোর রাশিকে নিয়ে সুখে থাক আর আমাদেরও ভালো থাকতে দে। চলো সামিরা আমরা আর কাবাব-মে হাড্ডি হতে চাই না। আজ ক্লাস অফ বাড়ি ফিরব। তোমাকে রেখে আসি। হাসিব তুইও চলে যা। আর এই নবদম্পতি থুক্কু প্রেমিক প্রেমিকা নিরালায় প্রেম করুক। রাহাতের কথায় সম্রাট দুম করে একটা কিল মেরে দেয় রাহাতের পিঠে।
– খুব পিঞ্চ করা হচ্ছে না৷ করবোই তো প্রেম! তুই যখন সামিরার সাথে নতুন নতুন প্রেম শুরু করেছিলি তখন কি তোকে কিছু বলেছি আমি৷ তোর প্রেমটাই হয়েছে আমার জন্য ভুলে যাস না৷ ভাব নিয়ে বলে সম্রাট।

– থাক ভাই! এইভাবে আর ছোট করিস না রাশির সামনে। আমরা যায় তোরা থাক। এরপর সামিরাকে নিয়ে রাহাত বেরিয়ে যায়। হাসিবও সম্রাটকে বলে চলে যায়।
– রাশি মাথা নিচু করে আছে৷ সম্রাটের দিকে তাকাতেও কেমন লাগছে তার এই মুহূর্তে।
– এত লজ্জা পেলে হবে৷ ভালোবাসার কথা তো ঠিকই প্রকাশ করে দিয়েছো। তাও এতগুলো মানুষের সামনে
ভাবা যায়। এইটুকু একটা মেয়ে সে নাকি আমাকে ভালোবাসে৷ অবাক হওয়ার ভান করে বলে সম্রাট। রাশি চোখ জোড়ো করে ভ্রু কুচকে তাকায় সম্রাটের দিকে
রাশির এমন লুক দেখে সম্রাট ফিক করে হেসে দিয়ে বলে আচ্ছা চলো আমরাও বাড়ি যায়। মা চিন্তা করছে। আমাদের জন্য মাও ভালো নেই৷ আগে মাকে সবটা জানিয়ে স্বস্তি দিই।
– মানে কি। আপনি আন্টিকে সব বলবেন নাকি এখন? ভয়ার্ত গলায় বলে রাশি।
– কেনো বলব না। আমার মা আমার সবচেয়ে ভালো বন্ধু। আর মা অনেক খুশি হবে দেখো। সাবলীল ভাবে বলে সম্রাট।
– এই না? মৃদু চিৎকার দিয়ে বলে রাশি। সম্রাট কৌতুহলী হয়ে তাকায় এতে।
– আন্টিকে বলবেন না প্লিজ। তাহলে আমি আন্টির সামনে যেতে পারবো না। লজ্জামিশ্রিত কন্ঠে বলে রাশি। রাশির কথায় সম্রাট মুচকি হেসে বলে, আমার মা তার হবু বউমাকে দেখবে না তা কখনো হয়। কিছু হবে না। দেখো মা কতটা খুশি হয়৷ এখন চলো বলে সম্রাট রাশির হাত ধরে নিয়ে যায়।

–‘ রনি বাড়ি এসে রুমবন্দি হয়ে যায়। রাশি যে তার নয় এটা যেনো কোনো ভাবেই মানতে পারছে না। রাশি অন্য কাউকে ভালোবাসে সেটাও সহ্য করতে পারছে না রনি। পাগল পাগল লাগছে নিজেকে তার কাছে৷ সবকিছু উলট পালট হয়ে গেলো তার। রাশিকে তার লাগবেই।

–” রিনা খান সম্রাটের থেকে সবটা শোনার পর খুশিতে আত্মহারা হয়ে যায়। রাশিকে জাপটে ধরে নিজের কাছে নেই৷ রাশি রিনা খানকে নিয়ে ভয়ে ছিলো সাথে ছিলো একরাশ লজ্জা৷ এখন ভয়টা নেই কিন্তু লজ্জার মাত্রাটা আরো বেড়ে গেছে।
– আমি যে কি পরিমাণ খুশি হয়েছি বলে বোঝাতে পারবো না রে মা। আমি প্রথম থেকে চাইতাম সম্রাটের বউ করতে তোকে। বউ শব্দটা শুনে রাশির মনে এক প্রশান্তি ঢেউ খেলে যায়৷ সম্রাট মুচকি হেসে রিনা খান আর রাশির কাহিনি দেখছে। সাজ্জাদ খান বাড়ি নেই এখন।

– এবার সত্যি সত্যি আমার ঘরে পাকাপোক্ত ভাবে নিয়ে আসার অপেক্ষা। আমি তোর বাবার সাথে কথা বলবো এই ব্যাপারে। তোকে আমার ছেলের জন্য চাইবো। আমার বিশ্বাস তোর বাবা আমাকে না করবে না।
– রাশি শুধু লজ্জামিশ্রিত হাসি দেয় রিনা খানের কথায়। মুখে কিছু বলে না।
– মা রাশি সবে ভর্তি হয়েছে৷ ওকে আগে পড়াশোনাটা ঠিক মতো করতে দাও৷ বিয়েশাদি পরে দেখা যাবে। আগে ওর ক্যারিয়ার গড়তে দাও। ওর স্বপ্ন পুরণ করা আগে জরুরি।
– সেতো বিয়ের পরও করা যাবে৷ আমি কি ওকে বিয়ের পর বাড়ি বসিয়ে রাখবো নাকি৷ এখন যেমন থাকে তখনো তেমনি থাকবে আমার মেয়ে হয়ে রাশির থুতনিতে হাত রেখে বলে রিনা।

– না মা। একসাথে দুইকাজ হয়না৷ তুমি বরণ পরে কথা বলো আঙ্কেলের সাথে৷ রাশি পড়াশোনাটা কন্টিনিউ করুক। এবার খেতে দাও জলদি। প্রচুর খুদা লাগছে। সম্রাটের কথায় রিনা খান বলে, হ্যাঁ বস তোরা আমি এখনই খাবার নিয়ে আসছি। রাশিও কিছু খাইনি কাল থেকে। আমি সবার জন্য খাবার নিয়ে আসছি জলদি কথাটা বলতে বলতে রিনা খান রান্নাঘরে ঢুকে যায়।

— কেটে যায় মাসখানেক। সম্রাট আর রাশির প্রেম’টা দিন দিন আরো গভীর হতে থাকে। তাদের দিন গুলো বেশ ভালোই যাচ্ছিলো। সম্রাট রাশির সব সময় কেয়ার করে, পড়াশোনায় একদম ছাড় দেয়না৷ কিন্তু তাদের সুন্দর কাটানো দিনের সমাপ্তি ঘটাতে এলো রাশির বাবা রিয়াদ ইসলাম। যিনি কুষ্টিয়ার বেশ প্রভাবশালী একজন৷ গুরুগম্ভীর আর রগচটা মানুষ। তার সিদ্ধান্ত এলাকায় শেষ সিদ্ধান্ত। তবে অন্যায়কে কখনো প্রশ্রয় দেননি তিনি আর না নিজে করেছেন। যেটা একবার বলেন সেটাই করেন৷ তার কথার কোনো নড়চড় হয়না৷ যাকে একবার কথা দেয় সেটা নিজের জীবন দিয়ে হলেও পুরণ করেন। তার জবানের দাম বহত। তাই সবাই তাকে বিশ্বাস করে শ্রদ্ধা করে এবং মন থেকে মানে।

–” রাশির বাবার হঠাৎ আগমনের কারণ বুঝতে পারেনা রিনা খান। তবে তাকে দেখে অনেক খুশি হয়েছে৷ এই প্রথম তাদের বাড়ি এসেছেন রিয়াদ ইসলাম। এর আগে রাশির মা একাই এসে ঘুরে গেছে কিন্তু তিনি আসেননি। রাশি তার বাবাকে দেখে তো ভীষণ খুশি। সম্রাটের ও একটু খটকা লেগেছিলো উনার হঠাৎ আগমনে। কিন্তু পরোক্ষে স্বাভাবিক ভাবে নেই সবাই।

– রিনা খান দুপুরে সবার খাওয়ার আয়োজন করে। রিয়াদ ইসলামের জন্য অনেক ভালো ভালো খাবার রান্না করেন তিনি। সবাই খেতে বসে একসাথে। সম্রাটের বাবাও আছে। ছুটির দিন থাকায় সবাই বাড়িতেই আছে আজ।
– মেয়েকে খুব দেখতে ইচ্ছে করছিলো বুঝি ভাইজান? খাওয়ার মাঝে রিনা খান বলে উঠেন মুচকি হেসে। রাশির বাবা খাওয়া থামিয়ে বলে, সে তো ইচ্ছে করেই৷ রাশি মা আমার খুব আদরের। আমার দুই মেয়ে আমার প্রাণ৷ পড়াশোনার জন্য রাশিকে দূরে থাকতে হচ্ছে। কারণ আমি চাই ওর ভবিষ্যৎ ভালো হোক৷ তাই কষ্ট হলেও মানতে হচ্ছে৷ তবে আমি আজ রাশিকে শুধু দেখতে আসিনি। সাথে করে নিয়ে যেতে এসেছি। কথাটা বলে তিনি আবার খাওয়া শুরু করেন৷ কিন্তু খাওয়া বন্ধ হয়ে যায় সম্রাট আর রাশির৷ চমকানো চোখে তাকায় দুজন দুজনের দিকে। রিনা খানেরও একই অবস্থা। রাশিকে নিয়ে যাবে এই কথাটা যেনো মানতে একটু কষ্ট হয় তাদের প্রথমে।

– নিয়ে যাবেন মানে? কৌতুহল নিয়ে বলে রিনা খান।
– আসলে আমার বন্ধুও তার পরিবার আসছে লন্ডন থেকে। আর ওরা আসছেই রাশির জন্য। তাই রাশিকে তো থাকায় লাগবে। রিয়াদ খানের এই কথাটা বুঝতে পারে না রিনা খান। তাই ভ্রু কুচকে বলে, উনারা আসবে তে রাশির কি কাজ৷ না মানে রাশির তো পড়াশোনা আছে৷ এখন যদি ক্লাসমিস দেয় পরে সমস্যা হতে পারে৷

। সে কিছুদিন ক্লাস না করলে কিছু হবে না। তাছাড়া ওর যাওয়াটা জরুরি। চিন্তা করবেন না রাশি আবার আসবে৷ তবে আমি সত্যি কৃতঙ্গ আপনাদের কাছে৷ আমার মেয়েকে আপন করে নেওয়ার জন্য। এত ভালোবাসা দেওয়ার জন্য। রাশি যে এখানে বেশ সাচ্ছন্দ্যে আছে সেটা রাশিকে দেখেই বুঝতে পেরেছি।

– এমন করে বলছেন কেনো ভাইজান। রাশি তো আমারও মেয়ে। ওর কোনো সমস্যা যাতে নাহয় সেটা দেখা আমারই দায়িত্ব।
– রাশি আমরা একটু পরই বের হবো৷ ৩টার ট্রেনে ফিরবো আমরা৷ তোমার প্রয়োজনীয় সব কিছু গুছিয়ে নাও তাড়াতাড়ি। গম্ভীর কন্ঠে বলেন তিনি।
– রাশির আর খাওয়া হয়না। নিয়ে যাওয়ার কথা শুনে রাশির খাওয়া বন্ধ হয়ে গেছে অনেক আগে৷ সম্রাটেরও সেম অবস্থা। রাশির চোখের মধ্যে পানি চলে আসে। সম্রাট অসহায় চোখে তাকায় রাশির দিকে। রিনা খান সবটা বুঝতে পারছে। তারপরও কিছু করার নাই তার এই মুহূর্তে।

–‘ রাশি খাওয়া ছেড়ে উঠে যায়। একটু পর সম্রাটও উঠে যায়।

-‘ চলবে…