মেঘবিলাসী পর্ব-১১+১২

0
516

#মেঘবিলাসী
#israt_jahan_arina
#part_11

অপেক্ষার ফল নাকি মিষ্টি হয়। তবে মাঝে মাঝে শকিং হয় সেটা জিসানের জানাছিলো না। এই মেয়েটা কি অনুভূতির উত্তাপে মেরে ফেলতে চায় নাকি?
তিন্নি জিসানের পাশে এসে দাড়ালো।জিসান এখনো ঘোরের মাঝে আছে।তিন্নির ডাকে জিসানের ধ্যান ভাংলো। জিসান ভীষম খেয়ে কয়েক বার কেশে উঠলো।তিন্নির মুখে তখন হালকা মুচকি হাসি।কিন্তু সেই হাসি সে জিসানকে দেখালো না।
তিন্নি একটা টিশার্ট আর লেডিস জিন্স পরে আছে।হালকা গোলাপি টি-শার্ট তার গায়ের রঙের সাথে মিশে আছে।
সত্যি বলতে জিসান আজকে তিন্নিকে শাড়িতেই আশা করেছিলো। সে ভেবেছিল তার দেওয়া শাড়ীটা মনেহয় আজ তিন্নি পড়বে।
জিসান ভাবল আচ্ছা অপ্সরীদের কি সব রুপি অপ্সরী দেখায়? সব রূপে কি তাদের এত মোহনীয় লাগে? তিন্নিকে যেকোনো রূপেই দেখে তার অনুভূতি গুলি বেসামাল হয়ে পড়ে। মেয়েটা সব সময় তার চিন্তার বিপরীতে কাজ করে।আর যাই হোক এই মুহূর্তে তিন্নিকে মোটেও নতুন বউ লাগছে না।
তবে মানতে হবে তার বউটার ফ্যাশন সেন্স অনেক ভালো। এইরূপে ও তাকে মোটেই খারাপ লাগছে না।
তবে তিন্নিকে একবার শাড়িতে দেখার খুব ইচ্ছে।
তারা গাড়ীতে বসলো।তিন্নি ভাবছে “এই ACP র মুখ দেখেই বুঝেছি ভীষণ শকড হয়েছে।এই লোক নিজেকে কি মনে করে।ভেবেছে আমি শাড়ী, চুড়ি পরে বাংলার বউ সেজে যাবো? ইম্পসিবল!!!
অনেকটা সময় পর তারা পৌঁছালো সূচনার বাসায়।খুব সুন্দর ভাবেই সে তাদের ওয়েলকাম জানালো।জিসান সূচনার হাতে আইসক্রিমের বক্স ধরিয়ে দিলো।
জিসানের আরো দুইজন ফ্রেন্ড সেখানে উপস্থিত। জিসান তিন্নির সাথে তার বন্ধু শিশির আর মেহেরাবের সাথে তার পরিচয় করিয়ে দিলো। সূচনা তিন্নিকে সাথে নিয়ে গেলো তার রুমে।
মেহেরাব বললো “ব্যাটা ফাইনালি বিয়ে করে ফেললো।ওই তোর কোনো শালীকা আছে?
– নারে আমার বউ এক পিচ।
শিশির বললো “আমিতো ভাবী HSC তে শুনে একদম বাচ্চা ভাবছিলাম।চেহারাতেও ভাবী বাচ্চা।তবে কথা শুনে অনেক ম্যাচিওর মনে হলো।”
জিসান ভাবছে “আর বাচ্চা।এই মেয়েতো আমারও বাপ।আমাকে জব্দ করতে ব্যস্ত।”
এইদিকে সূচনা তিন্নির সাথে অনেক গল্প করছে।
-“বুজলে তিন্নি এই ACP দের সাথে সংসার করে আরাম নেই। এরা কাজ বলতে পাগল।
– হবে হয়তো।আমার আইডিয়া নেই।
সূচনা হঠাৎ তিন্নির হাত ধরে বললো “আমি অনেক খুশি জিসানের একটা ফ্যামিল হলো। ভার্সিটি লাইফ থেকে ওকে চিনি।জীবনের অনেকটা সময় সে একা কাটিয়েছে। তুমি সবসময় ওর পাশে থেকো। জিসান দেখলে শান্ত মনে হলেও ও আসলে অনেক জেদী আর একরোখা। কাজটাই এমন যে ওদের ইমোশানলেস হয়ে যেতে হয়।বিয়ের পর থেকে ওর মধ্যে অনেক পরিবর্তন দেখেছি।
তিন্নি ভাবছে , “জেদি আর একরোখা?আমার সামনে তো বিড়াল মনে হয়।”
সূচনা আবার বললো “আমি জানি একসময় তুমি জিসানকে গভীর ভাবে ভালোবাসবে। জিসান ছেলেটাই এমন।”
তিন্নি এবার কিছুটা আঁতকে উঠল। আসলেই কি এমনটা সম্ভব। আসলেই কি সে এই লোকটাকে ভালোবেসে ফেলবে। কিন্তু সে কাউকে ভালবাসতে চায় না।
তিন্নি বললো,”সব দাম্পত্য জীবনে কি ভালোবাসার সৃষ্টি হয়?”
সূচনা মুচকি হেসে বললো “সব দাম্পত্য জীবনের ভালোবাসা সৃষ্টি হয় কিনা জানিনা, কিন্তু আমার এই ভাইটা মানুষকে ভালবাসতে জানে।”
সুচনাকে তিন্নির খুব ভালো লাগলো। তার সাথে মনের কথা খুব সহজেই শেয়ার করা যায়।
ডিনারে সবাই একসাথে খেতে বসলো। জিসান বারবার আড়চোখে তিন্নিকে দেখছে।
শিশির হঠাৎ বললো
-তোদের ওই রাইসার কথা মনে আছে?
মেহরাব বললো “মনে থাকবে না আবার। ওই মেয়ে তো জিসান এর জন্য যা পাগলামি করছিলো।
-শুধু কি রাইসা? আরো কত মেয়ে যে এই জিসান বাবাজির পিছে ঘুরতো। কিন্তু আমাদের সাধুবাবা কাউকে পাত্তাই দিতো না।
জিসান ভীষম খেলো।সূচনা সাথে সাথেই তাকে পানি এনে দিলো।জিসান ভয়ে ভয়ে একবার তিন্নির দিকে তাকালো আর ভাবলো
“এই ফাজিল গুলা আমার সংসার শুরু না হতেই ভেঙে ফেলবে।”
শিশির বললো “বুঝলেন ভাবি একবার একটা মেয়ে আমাদের এই বাবাজির পেছনে অনেক দিন ঘুরে প্রপোজ করছিলো। আর এই ব্যাটা কিনা সবার সামনে মেয়েটাকে এমন ধমক দিছে ওই মেয়ে আর ভুলে ওর ধারের কাছে আসে নাই।
তিন্নি মুচকি হেসে বললো, আমার মনে হয় মেয়েটা বুঝে গেছে সে তার সময় ভুল জায়গায় লস করছে।
জিসানের সব বন্ধুরা হেসে উঠলো।
মেহরাব বললো,”আমার এক কাজিন ও এটাকে দেখে ক্রাশ খেয়ে ছিলো।
জিসান তো পারে না এদের মুখে সুপার গ্লু লাগিয়ে দেয়।
_______________
এই ব্যস্ততম শহরে রাতের আধারে নিস্তব্ধতায় ছেয়ে যায়। আজ মনে হয় পূর্ণিমা। চাঁদের এই আলোতে তিন্নিকে দেখতে একটা সাদা পরীর মত লাগছে। গাড়ির সিটে হেলান দিয়ে তুমি ঘুমিয়ে আছে। সূচনার বাসা থেকে বের হতে অনেকটাই লেট হয়ে গেছে।
কোন মেয়ের জন্য তার মনে এতটা উন্মাদনার সৃষ্টি হবে সেটা সে ভাবেনি। এই মেয়েটাই তার অর্ধাঙ্গিনী ভাবতেই জিসানের মনে প্রশান্তি বয়ে যায়। তার চোখে তিন্নি হচ্ছে পবিত্রতম স্নিগ্ধময় নারী।
তিন্নিদের বাসায় পৌছতে পৌছতে প্রায় বারোটা বেজে গেলো। তিন্নি এখনো ঘুমাচ্ছে।জিসানের মন চাইছে না এই ঘুমটা ভাঙতে।সে একবার ভাবলো তিন্নিকে কোলে করে নিয়ে গেলে কমন হয়?
পরক্ষণে ভাবলো না তিন্নি জেগে গেলে অস্বস্তিকর একটা পরিবেশ সৃষ্টি হতে পারে। সে তিন্নিকে কয়েকবার ডাকলো। তেমন কোন কাজ হলোনা। সে তিন্নির কাঁধে হাত রেখে ডাকলো। এবার তিনি ঘুম ভেঙ্গে গেলো। তিন্নি আশেপাশে দেখে বুঝতে পারল তারা বাসায় চলে এসছে।

কলিং বেল বাজাতেই তিন্নির মা দরজা খুলে দিলো। তিন্নির দিকে তাকিয়ে অবনী রহমানের মেজাজ আরো গরম হয়ে গেলো। সন্ধ্যায় বিথী তাকে জানিয়েছে তিন্নি কীভাবে বের হয়েছে। এত জেদি কেন এই মেয়েটা তিনি বুঝতে পারেনা। তিন্নি সোজা নিজের রুমে চলে গেলো।
তিন্নির মা জিসানকে দেখে হালকা হেসে ওকে ফ্রেশ হতে বললো।
জিসান তিন্নির খাটের একপাশে বসে মোবাইল টিপছে। তিন্নি ওয়াশরুম থেকে বের হতেই জিসানের চোখ গেল তিন্নির দিকে। গভীর রাতে স্ত্রীর ভেজা চুল একটা স্বামীর মধ্যে কতটুকু উন্মাদনার সৃষ্টি করতে পারে সেটা কি তিন্নি জানে?
জিসানের অবচেতন মন বলছে একটা মেয়ে কত রূপে একজন প্রেমিক কে বেসামাল করতে পারে। আচ্ছা এখন যদি আমি তিন্নিকে একবার জড়িয়ে ধরি সে কি খুব রাগ করব?
জিসানের এই চাহুনি তার কাছে ভয়ঙ্কর লাগে। আচ্ছা এই লোকটা হঠাৎ তার দিকে এগিয়ে আসছে কেন।জিসান হঠাৎ তিন্নির খুব কাছে চলে আসলো। তিন্নি বুঝে উঠতে পারছে না তার কি করা উচিত। সে মনে হয় কয়েকবার তার হার্টবিট মিস করলো। জিসান তিন্নির চুলে হাত বুলালো আর বললো “এত রাতে গোসল করেছ কেনো? ঠান্ডা লেগে যাবে তো?”
তারপর সে তিনি হাত থেকে তোয়ালেটা নিয়ে তার চুল মুছতে লাগলো। তিন্নি বুঝতে পারল না কি হচ্ছে। সত্যিই কি এই লোকটা তার এত কাছে চলে এসেছে। হঠাৎই তিন্নির হাত কাঁপতে লাগলো। আগে তো কখনো এমন হয়নি তার।

#মেঘবিলাসী
#israt_jahan_arina
#part_12

চাঁদের আলো পুরো ঘর জুড়ে ছেয়ে আছে।আর সেই আলোয় মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে তার অর্ধাঙ্গিনী।জিসান না চেয়েও চলেগেলো তার মিষ্টি বউটার দিকে।তিন্নির হাত থেকে তোয়ালে নিয়ে তার চুল মুছতে লাগলো।আসলে সে একবার তিন্নির চুলে হাত বুলাতে চেয়েছিলো।
তিন্নির পুরো শরীর কেপে উঠছে বার বার।এই অসস্তিকর পরিবেশ থেকে বের হতে তিন্নি কিছুটা সরে দাঁড়ালো।তিন্নি বললো
-“এতো রাতে গোসল করে আমার অভ্যাস আছে।ঠান্ডা লাগবে না।”
জিসান মুচকি হাসলো।তার বউটা যে লজ্জাও পেতে আরে তা তার জানা ছিলোনা।

তিন্নি ভাবছে এইভাবে হাসে কেনো এই লোকটা?মেয়েরা কি দেখে এই লোকের পেছনে ঘোরে?ওই অসভ্য মেয়েরাই এই লোকের ভাব বাড়িয়ে দিয়েছে।আবার নাকি মেয়েদের ধমক দেয়।একবার আমার সাথে এমন করুক,ওই ফর্সা গেলে পাঁচ আঙ্গুলের ছাপ বসিয়ে দিবো।
তিন্নি বারান্দায় গেলো তোয়ালে রাখতে।জিসানও গেলো তার সাথে।জিসানকে দেখে তিন্নি চলে আসতে নিলে জিসান ওর হাত ধরে আটকালো।তিন্নি অনেকটা অবাক হয়ে তাকালো।জিসান মুচকি হেসে বললো

-“আমরা কিছুক্ষন বসতে পারি?”

তিন্নি মাথা নেরে সায় দিলো। তিন্নির বারান্দায় ছোট্ট একটা টেবিল আর দুটো চেয়ার পাতা আছে।পুরো বারান্দা জুড়ে নানা ধরনের ফুলের গাছ।বারান্দাটা জিসানের খুব পছন্দ হলো।
তারা দুজন চেয়ারে বসে রইল কিছুক্ষণ। তিন্নি আড়চোখে একবার জিসানের দিকে তাকালো।লোকটা দেখতে এতটাও খারাপ না। এই লোক তো অনায়াসে মডেলিং করতে পারতো।ACP হওয়ার সাজেশন কে দিলো তাকে? নিশ্চয়ই এই লোকের চেহারা দেখেই পাপা গলে গিয়েছিলো।
হঠাৎ জিসান বলতে শুরু করলো।

-“আজকের আকাশটা মেঘলা মনে হয় বৃষ্টি হতে পারে?”

-“আমারও তাই মনে হচ্ছে।”

-“বৃষ্টির দিনগুলো আমার খুব পছন্দের। আগে বৃষ্টি হলেই মা আমার পছন্দের খিচুড়ি আর গরুর মাংস রান্না করতো।কিন্তু এখন আর তা সম্ভব হয়না।রোজিনা খালা মাঝে মাঝে করে,কিন্তু মায়ের হাতের স্বাদ পাইনা।”

তিন্নি এক ধ্যানে জিসানের দিকে তাকালো।আসলেই পরিবার ছাড়া মানুষ কি ভাবে বাঁচতে পারে।তিন্নিতো একদিনও পাপা আর মামনিকে ছাড়া থাকার কথা চিন্তা করতে পারেনা।আর এই মানুষটা এতো গুলো বছর পরিবারহীন একাকিত্বের জীবন কাটাচ্ছে।তিন্নির এখন খুব খারাপ লাগছে জিসানের জন্য। তিন্নি বললো

-“মামনি খুব টেস্টি খিচুড়ি আর মাংস রান্না করতে পারে।একদিন ট্রাই করে দেখবেন।”

– “ঠিক আছে। তোমার কি খেতে পছন্দ?”

– “আমি হলাম বিরিয়ানী লাভার।”

-“বিরিয়ানী আমারও খুব ভালো লাগে।”

তিন্নি মুচকি হাসলো।আর বললো

-“রোজিনা খালা কি আপনার বাসার সেইফ??

-“হ্যাঁ। আমি নিজেও রান্না জানি।আসলে মা চলে যাবার পর বাধ্য হয়ে শিখতে হয়েছে। পরবর্তীতে জবে ঢোকার পর আর সময় করতে পারিনা।তাই উনি রান্না আর ঘর গোছানোর কাজ করে।ছুটির দিন গুলোতে আমি রান্না করি।”

তিন্নি হেসে উঠলো।আর জিসান মুগ্ধ চোখে সে হাসি দেখছে।আসলে সে প্রথম তিন্নিকে মন খুলে হাসতে দেখছে।এই হাসিতে কতো মায়া ঝরে পরছে।জিসানের মনে হচ্ছে একবার তিন্নিকে জরিয়ে ধরে তার গালে একটা চুমু খেতে।
তিন্নি হাসতে হাসতে বললো

-“পাপা কিন্তু মামনিকে তার হাতের রান্না খাইয়ে ইমপ্রেস করেছিলো।

জিসান মনে মনে বললো” আমিও তোমাকে ইমপ্রেস করতে চাই।কিন্তু তুমি তো কিছুতেই ইমপ্রেস হওনা।

কিছুদিন পরের কথা।
সকাল থেকে তিনি ভীষণ চিন্তিত। আজ তিন্নির মেডিকেল এক্সাম। যে করেই হোক তাকে মেডিকেলে চান্স পেতেই হবে। এটা তার ছোটবেলার স্বপ্ন।

আনিসুর রহমান তিন্নির রুমে প্রবেশ করলেন। মেয়ের চেহারার দিকে চেয়ে তার মনটা মলিন হয়ে উঠলো। তার অতি সুন্দরী মেয়ের চোখের নিচের কালি জমা হয়েছে। মেয়েটা এতো অবুঝ কেনো? মেডিকেলে চান্স পাওয়ার সকল যোগ্যতাই তার মেয়ের মধ্যে আছে। তবু কেন চাপ নিচ্ছে মেয়েটা?

আনিসুর রহমান মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন। তিন্নি মুচকি হেসে বাবার দিকে তাকালো। বাবার ছোঁয়া খুব ভালো ভাবেই চেনে সে। তার মাথায় এত স্নেহময় ছোঁয়া একমাত্র তাঁর পাপাই দিতে পারে।তিন্নি তার পাপকে উদ্দেশ্য করে বললো
-“পাপা তোমার কি মনে হয় আমি মেডিকেলে চান্স পাবো?”

-“অবশ্যই পাবি কেন পাবে না?”

-“আমার খুব ভয় হচ্ছে পাপা।”

-“আমি তো আমার মেয়েকে ভয় পেতে শিখাইনি। জাস্ট রিলাক্স হয়ে পরীক্ষা দেয়।”

-“থ্যাংক ইউ পাপা সব সময় আমার পাশে থাকার জন্য।”

-“হ্যাঁ সব হবে, এখন দ্রুত রেডি হয়ে নে পরীক্ষা কিন্তু শুরু হয়ে যাবে।”

-“ওকে তুমি যাও আমি রেডি হয়ে আসছি”।

জিসানকে একটা গুরুত্বপূর্ণ কাজে ঢাকার বাইরে যেতে হয়েছে। তার খুব ইচ্ছা ছিল তিন্নিকে এক্সাম হলে নিয়ে যাওয়া। তা আর হলো না। সে তিন্নিকে কল করলো।
তিন্নি রেডি হচ্ছিলো। এমন সময় তার ফোনটা বেজে উঠলো। জিসান কল করেছে তাকে। লোকটিকে আজকাল অতটা খারাপ মনে হয় না। তিন্নি দ্রুত কল রিসিভ করলো।

-“হ্যালো! আসসালামু আলাইকুম।

-ওয়ালাইকুম আসসালাম। কেমন আছো তুমি?
তিন্নির মনে কেমন যেন শিহরন বয়ে গেলো। আজ হঠাৎ লোকটার কন্ঠটা এতো মিষ্টি লাগছে কেন? আগেও সে জিসানের সাথে কথা বলেছে। তখন তো এমন মনে হয়নি। আজ মনে হচ্ছে কন্ঠে মধু লাগিয়ে কথা বলছে। “আমাকে ইমপ্রেস করার চেষ্টা করছে নাতো?”

-“জি ভালো আছি।”

-“বাসা থেকে বের হবে কখন তোমার না এক্সাম শুরু হয়ে যাবে?”

-“এইতো এখনই বের হবো।”

-“ঠিক আছে যাও। আর একদম টেনশন নিও না। গুড লাক।”

-“থ্যাঙ্ক ইউ।আচ্ছা আমি রাখছি।”

তিন্নি রেডি হয়ে তার মায়ের কাছ থেকে দোয়া নিয়ে বাবার সাথে বেরিয়ে গেলো।
পরবর্তী দিনগুলো তিন্নির খুব স্বাভাবিক ভাবেই কাটলো। জিসানের ফোন করলেও সে ততটা বিরক্ত হয়না। কিছুটা স্বাভাবিক ভাবেই কথা বলতে পারে তারা।
জিসান বেশ কিছুদিন যাবত চিন্তায় আছে। একজন বড় মাপের ড্রাগ ডিলের কে ধরার প্রচেষ্টায় আছে তারা। তার পুরো টিম সেটা নিয়েই কাজ করছে।

তিন্নি এখন অনেকটা রিলাক্স সময় কাটাচ্ছে। রেজাল্টের আগ পর্যন্ত সে অনেকটা ফ্রি থাকবে। আজ অনেকদিন পর সে বের হলো শপিং করতে। শপিং করতে বের হলে সময়ের একদম খবরই থাকে না তার। এখন প্রায় সন্ধ্যা।
সে পার্কিংয়ে গেল তার গাড়ি নিতে। চারিদিকে কেমন যেন নিস্তব্ধতা ছেয়ে আছে। হঠাৎই কেমন বিকট শব্দ হতে শুরু করলো। শব্দের উৎস খুঁজতে তিন্নিকে সামনে এগিয়ে গেলো। কয়েক কদম বাড়িয়ে সামনে তাকিয়ে সে থমকে দাঁড়ালো। তিনি নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছে না। সামনের মানুষটাকে তার হিংস্র পশু মনে হচ্ছে। আসে পাশে আরো কয়েকটা রক্তাক্ত দেহ পরে আছে। তিন্নির যেন দম বন্ধ হয়ে আসছে। সামনের মানুষটি কি তার দিকেই এগিয়ে আসছে? লোকটার গায়ে রক্ত মেখে আছে। মুখেও কিছুটা রক্ত লেগে আছে। কেমন হিংস্র পশুর মত লাগছে। তিন্নি আর কিছু ভাবতে পারলো না। চারপাশ কেমন ঝাপসা মনে হতে লাগল তার।