মেঘের উল্টোপিঠ পর্ব-২৭

0
612

#মেঘের_উল্টোপিঠ
#লেখনীতে-সাদিয়া মেহরুজ দোলা
#পর্ব__২৭

সায়াহ্নের নির্জন, নিস্তব্ধ প্রহর। কম্পমানশূন্য পাতা গুলো মাঝেমধ্যে অনিলের কারণে হালকা নড়েচড়ে উঠছে। অন্তরীক্ষের মাঝে হটাৎই কালচে রঙ পাল্টে মেঘবর্ণ রূপ ধারণ করেছে। বর্ষণ আসার আগাম বার্তা দিচ্ছে অন্তরীক্ষ হতে মাঝেমধ্যে বিকট শব্দে ভেসে আসা বজ্রপাতের শব্দধ্বনি। গ্রীষ্ম যেনো এবার পণ করেছে সে শুধু ঝড় – বৃষ্টিরই দাপট দেখাবে এবার। তাই সাজবেলার আগমন ঘটতে না ঘটতেই বর্ষণ ধরনীতে নামানোর জন্য প্রস্তুতি নেয় প্রকৃতি।

নিস্তব্ধ’তা ভেঙে একটু পর পর কারো গুমোট ক্রন্দন সুর কর্ণকুহরে ভেসে আসছে। দীর্ঘশ্বাস ফেলে এক বার আঁড়চোখে অরিনের মায়ের দিকে দৃষ্টিপাত ফেলি। মেয়ের বেহাল দশা জানার পর হতে শুধু কেঁদেই যাচ্ছেন তিনি। বারংবার বুঝিয়ে কাজ হয়নি। একাধারে অপারেশন থিয়েটারের সামনে বসে থাকতে থাকতে কোমড় ব্যাথানুভূতিতে টনটন করছে। কিন্তু উঠতে ইচ্ছে করছে না তবুও। মাঝে মাঝে শুষ্ক, স্বাভাবিক আঁখিজোড়া অশ্রুসিক্ত হচ্ছে। অরিনটার সাথেই কেনো এমন হলো?
আমার সম্মুখে এসে হুট করে থামা পা যুগলের দিকে তীক্ষ্ণ চাহনি চলে যায় আমার। চিবুক হতে মাথা তুলতেই দৃশ্যমান হয় অভ্র ভাইয়ার মুখোশ্রী। তিনি অপরাধী কন্ঠে বললেন,

‘ আমায় মাফ কর বোন। সব আমার জন্যই হয়েছে।আমার অনাকাঙ্ক্ষিত কথায় ওর ব্রেনে চাপ পড়েছে। দু’টো বিষয় সামলাতে পারেনি ওর দেহ! ‘

অভ্র ভাইয়ার আখিজোড়া অশ্রুকণায় টইটুম্বুর। যেকোনো সময় গড়িয়ে পড়বে তারা অনুমতি পেলেই। জোড়াল শ্বাস ফেলে নিষ্প্রভ কন্ঠে বলি,

‘ এখানে তো আপনার কোনো দোষ নেই ভাইয়া। অযথা নিজেকে দোষারোপ করছেন। এখানে আপনি নিজেকে বিবাহিত না বললেই পারতেন। আপনার সাথে তো তারা আপুর নাকি বিয়ে হয়নি? মামনি বলল! ‘

‘ হু! বিয়ে হয়নি। জাস্ট এংগেইজমেন্ট হয়েছিলো। কিন্তু সবাইকে বলা হয়েছে আমার এবং তারার বিয়ে হয়েছে। আমরা স্বামী – স্ত্রী। কারণটা নিশ্চয়ই মা তোমায় বলেছে?’

‘ বলেছে। সবটাই জানি আমি। দাড়িয়ে কেনো?বসুন ভাইয়া। আপনার ওপর দিয়ে তো কম ধকল যায়নি।রেস্ট করুন। ‘

অভ্র ভাইয়া ধপ করে বসে পড়লেন আমার পাশে। মাথা চেপে ধরে দেয়ালে মাথা এলিয়ে দিলেন। আমি অন্যদিকে তাকাই। কিছুক্ষণ আগে ঘটে যাওয়া অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা গুলো বারংবার নেত্র সম্মুখে এসে ভাসছে। কষ্ট দিচ্ছে। এমনটা না হলেও পারতো কি?

কিয়ৎক্ষণ আগে! হসপিটাল থেকে যখন ল্যাব ক্লাস শেষে বের হতে নিবো তখনই নেত্র যুগল সম্মুখে দৃশ্যমান হয় অভ্র ভাইয়ার অরিনকে কোলে নিয়ে হন্তদন্ত হয়ে হসপিটালে প্রবেশ করার দৃশ্যটুকু। আমি ভীষণ চমকে যখন পূর্বের পানে তাকাই তখন সেই ব্যাক্তিরও একই অবস্থা দর্শন হয়। অরিনকে ইমার্জেন্সি ওয়ার্ডে ভর্তি করানো হয়। ব্রেন স্ট্রোক করেছে সে। ব্রেন স্ট্রোক’টা মূলত হয়েছে অতিরিক্ত দুশ্চিন্তাতার কারণে। তার ওপর অরিন কম বয়সী হলেও ওর হাই প্রেশার আছে। এমন কিছু অনাকাঙ্ক্ষিত বার্তা শুনেছিলো তাতে অরিনের মস্তিষ্ক ঠিক থাকতে পারেনি। এমনিতে অনেকদিন ধরেই শুধু টেনশন করতো সে।

অরিনকে অপারেশন থিয়েটারে নেয়ার পর আমি, পূর্ব গিয়ে অভ্র ভাইয়ার সামনে দাঁড়াই। অভ্র ভাই আচানক স্বশব্দে কেঁদে দিয়ে পূর্বকে জরীয়ে ধরেন।ক্রন্দনরত কন্ঠে আকুল হয়ে বলেন,

‘ আমি ওকে সেফ রাখতে পারিনি। আজ ওর এই অবস্থা আমার কারণে। আমি ব্যার্থ একজন পুরুষ ভাই। আমি আগলে রাখতে পারিনি ওকে। ‘

পূর্ব নির্বাক ছিলেন। অভ্র ভাইয়ার থেকে পুরো ঘটনা অবগত করেন তৎক্ষনাৎ। সঙ্গে সঙ্গে ছোট ভাই হওয়া সত্বেও অভ্র ভাইয়ার গালে ঠাস করে থাপ্পড় মেরে বসেছিলো পূর্ব। চেঁচিয়ে বলল,

‘ তুমি তো বিবাহিত নও ভাই। মিথ্যা কেনো বললে?অযথা মেয়েটাকে কষ্ট কেনো দিলে? এতোটা দিন অরিন তোমার অপেক্ষায় ধুঁকে ধুঁকে মরে কাটিয়েছে আর আজ হটাৎ এই কথাটা বলা জরুরি ছিলো?ওকে বুঝিয়ে বলা যেতোনা?’

তারা দু’জন নিজেদের মধ্যে তর্কে থাকাকালীন আমি ফোড়ন কেটে বলি,

‘ কিসের কথা বলছেন আপনারা? অভ্র ভাইয়া বিবাহিত হলে অরিনের কি? আর ভাইয়া বিবাহিত নয়?’

অতঃপর পুরো ঘটনা খোলাসা করলো অভ্র ভাইয়া নিজেই। অরিনের সাথে অভ্র ভাইয়ের প্রেমের সম্পর্কের কথা। আমি জানতাম যদিও অরিন রিলেশনে ছিলো। কিন্তু কার সাথে রিলেশন করতো তা জানতাম না। জানার ইচ্ছেটুকু ছিলো না।তারপর ঘটলো মামনির আগমন। তিনি সব খুলে বললেন। তারা আপু ছিলেন মামনির বান্ধবীর মেয়ে। অকস্মাৎ তারা আপুর মা মারা যাওয়ার আগ দিয়ে আপুর মা আপুকে মামনির হাতে তুলে দেন আগলে রাখার খাতিরে।তারা আপুর ফ্যামিলির বিষয়টা এড়িয়ে গেলেন। মামনি সেদিন সিদ্ধান্ত নেয় তার বড় ছেলের সাথে আপুর বিয়ে হবে। অভ্র ভাইয়া রাজি ছিলেন না। কারণটা অরিন। অরিনকে ভালোবাসে সে। কিন্তু মামনির অনাবশ্যক জোরে একদিন হুট করেই অভ্র ভাইয়া এবং তারা আপুর এংগেইজমেন্ট হয়ে যায়।অভ্র ভাইয়া ছিলেন মা ভক্ত মানুষ। মামনির করা সেদিনকার ‘ মন ভোলানো কান্নায় ‘ তিনি দমে যান। মতবাদ’টা পূর্বের নিজের।

এংগেইজমেন্ট এর পরপরই একদিন হুট করে সকাল বেলা অভ্র ভাইয়া পাড়ি জমান কানাডায়। তার বাবার কাছে! সেদিন ভাইয়ের হুট করে অভিমানে সিক্ত হয়ে চলে যাওয়াটা মেনে নিতে পারছিলেন না পূর্ব। পূর্ব বড় ভাই পাগল। ভাইয়ের মনের কষ্ট যেনো সে বুঝতে পেরেছিলো। তাই সেদিনের পর থেকে পূর্ব মামনির সাথে ঠিক মতোন কথা বলতেন না। পূর্বের মতে তার মা বিরাট বড় ভুল করেছেন। কিন্তু পূর্ব! সে কখনো তারা আপুর সাথে খারাপ ব্যবহার করতেন না। নিজের বোনের মতোই স্নেহ করতেন। ভাইয়ের হুট করে চলে যাওয়ার চাপা কষ্টটা তার মনে ছিলো তাই মামনির সাথে তার সম্পর্ক সেদিন থেকে হয়ে যায় অন্যরকম। তিক্তপূর্ণ! এংগেইজমেন্টের পর হতেই সবাইকে তারা আপুকে অভ্র ভাইয়ার বউ হিসেবেই পরিচয় করানো হয়।

অরিনের পরিবার হাজির হওয়ার পর ভীষন বড় ঝগড়া বাঁধে। পরিস্থিতি সামাল দেয় পূর্ব নিজেই যৌক্তিক ব্যাখা পেশ করে।

________

হিমেল অনিল বইছে আশপাশে। এখনো গুঁড়ি গুঁড়ি বর্ষণ হচ্ছে বাহিরে। পুরোপুরি থামেনি বর্ষণের দাপট। ক্ষনের জন্য তৈরি হওয়া অন্তরীক্ষের কমলাটে মেঘবর্ণ রূপকার আস্তে আস্তে কালচে রঙে সজ্জিত হচ্ছে। বর্ষণ যে কিয়দংশের মাঝেই থেমে যাবে এটা তার স্পষ্টত প্রমাণ। নিষ্প্রভ দৃষ্টিপাত প্রকৃতির মাঝে ডুবিয়ে রাখাতেও স্বস্তি মিলছে না। অন্তঃস্থল অশান্ত। অচঞ্চল নেত্রযুগল বারংবার পল্লব ফেলছে। অরিন যদিও এখন অনেকটা সুস্থ তবুও মন গহীনের কোথাও বিন্দু ভয়ের রেশ রয়েই যায়। ব্রেন স্ট্রোক করার পর এতো জলদি সে নিজের স্বাভাবিকতা ফিরে পাবেনা নিশ্চিত।

উতপ্ত নিঃশ্বাস নিঃশব্দে ফেলতেই ধীর পদধ্বনির শব্দ কর্ণকুহরে ভেসে আসে। আমি চমকাই একটু। এই আঁধারে নিমজ্জিত করিডরের দিকে আবার কার আসার ইচ্ছে জাগলো এই লহমায়? ঘাড় পিছন দিকটায় ফিরিয়ে নিতেই দৃশ্যমান হয় পূর্বের মুখোশ্রী। সে ইতিমধ্যে আমার সন্নিকটে এসে পৌঁছেছেন! তার এবং আমার মাঝের দূরত্ব অতী কিঞ্চিৎ পরিমাণ। পূর্বের ত্যাগ করা তপ্তশ্বাস আমার মুখোশ্রীতে আছড়ে পড়ছে।

অকস্মাৎ করিডরে থাকা সোডিয়াম বাল্ব’টা হুট করে জ্বলে উঠে তার কৃত্রিম রশ্মি চারদিকে ছড়ানোর পর, দর্শন হলো পূর্বের আমার মুখোশ্রীর প্রতি নিক্ষিপ্ত করা সেই গহীন, নির্নিমেষ দৃষ্টি। যে দৃষ্টি আমায় সহজে কাবু করে লাজুকলতায় পরিণত করে ফেলে। ধাতস্থ হয়ে অপ্রসন্ন কন্ঠে বলে উঠলাম,

‘ আপনি এখানে যে?’

পূর্ব অন্যদিকে চাহনি নিক্ষেপ করে ভারী কন্ঠে বললেন,

‘ প্রশ্নটা আমার করা উচিত। তুমি এখানে কি করছো? এতক্ষণ অন্ধকারের মাঝে দাঁড়িয়ে ছিলে কেনো?’

‘ এমনিই! আপনি জানলেন কি করে আমি এখানে?’

পূর্ব হেঁটে রেলিঙ ঘেঁসে দাঁড়ালেন। একহাত দিয়ে আমার বাহু ধরে টেনে খোঁপার থেকে ক্লিপটা টান মেরে খুলে ফেললেন। আমি তখনও নিশ্চুপ। দেখতে চাচ্ছি কি করতে চায় সে? চুলগুলো উন্মুক্ত হয়ে স্বাধীনতা পেতেই হাঁটু অব্দি গিয়ে পড়লো। কিছু অবাধ্য ছোট ছোট চুলগুলো কপালের সামনে এসে হামাগুড়ি খাচ্ছে। মৃদু অনিলে দুলছে সে নিজ মনে।পূর্ব একমুঠো চুল হাতে নিয়ে নড়াচড়া করতে করতে বললেন,

‘ আমি অপারেশন থিয়েটারে যাওয়ার আগে এহসান কে বলেছিলাম তোমাকে দেখে রাখতে। তুমি যেই ছটফটে স্বভাবের। কোথা থেকে কোথায় চলে যাও তার কোনো খেয়াল আছে? অপারেশন শেষে বের হবার পর এহসান এসে জানালো তুমি করিডরের অন্ধকারের দিকটায় একা একা দাঁড়িয়ে আছো। ‘

আমি ক্ষুদ্র শ্বাস ফেলে বললাম, ‘ ফুয়াদের পর এখন এহসান? আপনি আমায় একা কেনো ছাড়েননা বলুনতো? ‘

পূর্ব চুলগুলো তার নাসিকারন্ধ্র সম্মুখে এনে লম্বা শ্বাস টানলেন। নেত্র যুগল বন্ধ রেখেই নিচু স্বরে বললেন,

‘ আমার প্রিয় সম্পদে আমি কখনো কারো বাজে দৃষ্টি, কু – নজর অথবা তার কোনো ক্ষতি হোক আমি সেটা কখনোই চাই না স্নিগ্ধময়ী। তোমার কিছু হলে আমি জীবিত অবস্থাতেই মৃত্য ঘোষিত হবো। ‘

‘আপনি আমায় নিয়ে একটু অতিরিক্তই করেন কিন্তু পূর্ব। ‘

‘ এটা অতিরিক্ততা নয় স্নিগ্ধময়ী। এটা আমার পাগলাটে ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ। ‘

মৌন রূপে রইলাম। লোকটাকে বোঝানো বেকার। তবে বলতে হবে! তার এই পাগলাটে প্রনয়ের ধরণ আমায় তার প্রতি ক্ষনে, ক্ষনে দূর্বল করছে। পূর্বের প্রণয়ের ধরন আলাদা। সে আচানক আমার চুল গুলো তার আঙুলে পেঁচিয়ে আমায় তার সঙ্গে নিবিড় ভাবে আঁকড়ে নিলেন। মাথার পিছনে এক হাত দিয়ে কপালে আলত করে ওষ্ঠাধরের স্পর্শ এলিয়ে দিয়ে ফিচেল কন্ঠে বললেন,

‘ আমার এখন আবার আরেকটা অপারেশন আছে দোলপাখি। এখনই যেতে হবে। তুমি আমার চেম্বারে বসো। অপারেশন শেষ হলে আমি তোমায় বাসায় নিয়ে যাবো। তোমার আম্মুর সাথে কথা হয়েছে। সায়ান তো দেশে নেই। নিতে আর কে আসবে?এতো রাতে একা যাওয়ার প্রয়োজন নেই। অপেক্ষা করো।
বেশিক্ষণ লাগবে না আমার।’

আমি ঠোঁট উল্টে বলি, ‘ ডক্টরদের এই ‘ বেশিক্ষণ লাগবেনা’ মানেই কমসে কম দেড়, দুই ঘন্টা হুহ্! ‘

প্রতিত্তুরের আশায় মাথা ওপরে তুলতেই অনুভূত হলো আমার ওষ্ঠাধরের ওপর অতর্কিত হামলা। আঁখি যুগল বড়সড় করে তাকিয়ে প্রতিক্রিয়া দেখানোর পূর্বেই পূর্ব সরে আসলেন। বৃদ্ধা আঙুল দ্বারা অধর মুছে বললেন,

‘ এগেইন আমার সামনে ঠোঁট উল্টাবে না। বুঝেছো? আমি কন্ট্রোল’লেস হয়ে পড়ি পুরোপুরি। ‘

আমি ওষ্ঠাদ্বয়ের ওপর নিজ হস্ত আলত করে রেখে নেত্র যুগল রাঙিয়ে বলি,

‘ আপনি একটা বদমাইশ। চরম মাপের বদমাইশ লোক আপনি পূর্ব! ‘

____________

প্রভাতের আগমন ঘটেছে কিয়দংশ পূর্বেই। পূর্ব অন্তরীক্ষে সবেমাত্র হলদেটে সূর্য উঁকি দিয়েছে। দূর- দূরান্ত হতে ভেসে আসছে মোহনীয় এক ঘ্রাণ। শীতল অনিলে একরাশ স্নিগ্ধতা ঘিরে ধরলো অন্তরালে। জোড়া জোড়া পক্ষিদের উড়ে যাওয়ার মিষ্টি শব্দধ্বনি প্রকৃতিতে ধীরে ধীরে ছড়িয়ে আস্তে ধীরে মিলিয়ে গেলো। অন্তরীক্ষে আজ সাদা মেঘ কুঞ্জের দেখা মিলেছে বহুদিন বাদে। চকচকে রোদে ঝলমল করছে চারিপাশ।গাছের সবুজ, কম্পমান শূন্য পাতায় রোদের হলদেটে আলো প্রতিফলিত হয়ে নিদারুণ সৌন্দর্য প্রদান করছে সূর্য!

ব্যাস্ত ভঙ্গিতে চারপাশে আঁখি জোড়া অল্পস্বল্প পরখ করে কফি মগে থাকা অবশিষ্ট কফিটুকু এক চুমুকে গলাধঃকরণ করি। গলদেশ দ্বারা উত্তপ্ততা উপভোগ হলেও শীতল পানি পান করার অব্দি সময় হলো না।কাল অনেকটা রাত করে বাড়ি ফিরে সব পড়া শেষ করতে করতে রাত হয়ে যায় অনেক।ঘুমিয়েছি প্রভাতের একটু আগে। উঠতে ভীষণ দেরী হয়ে গিয়েছে আজ। কাঁধে ব্যাগ চড়িয়ে চটপট নিজেকে শেষবার আরশিতে দর্শন করা শেষে দরজার নবে হাত দেই। মোচড় দেয়ার আগেই দরজায় কড়াঘাত পড়লো। দরজা পূর্ণরূপে খুলতেই দৃশ্যমান হয় আম্মুর আতঙ্কিত মুখোশ্রী। আমি বিচলিত হয়ে বললাম,

‘ কি হয়েছে আম্মু? তোমাকে এতোটা চিন্তিত দেখাচ্ছে কেনো? কিছু হয়েছে? অরিন ঠিক আছে তো? ‘

আম্মু হটাৎ-ই হু হু করে কেঁদে দিলেন আমার হস্ত চেপে ধরে। আমার অন্তঃস্থল কেঁপে উঠলো। আম্মুর মতো শক্ত মানুষ কাঁদছে? নিশ্চয়ই বিরাট বড় কিছু হয়েছে। আম্মু তো সহজে কাঁদার পাত্রী নয়! আম্মু ক্রন্দনরত কন্ঠে বলল,

‘ দোল, মা.. রে! পূর্বের এক্সিডেন্ট হয়েছে..রে মা। কেও ওকে ইচ্ছে করে এক্সিডেন্ট করিয়েছে। ছেলেটার অবস্থা ভীষণ খারাপ। আই.সি.ইউ তে নিয়েছে একটু আগে। জলদি হসপিটালে চল।সুস্থ ছেলেটার এই হাল কে করলো? মাবুদ! ‘

চলবে,