মেঘে ঢাকা আকাশ পর্ব-১৩

0
284

#মেঘে_ঢাকা_আকাশ
#পর্ব-১৩
#আমিনুর রহমান

বখাটে ছেলেগুলো আমার আর স্পৃহার দিকে চেয়ে আমাদের অনুভূতিটা বোঝার চেষ্টা করছিল। বুঝতে চাইছিল আসলেই কি আমরা হাসবেন্ড ওয়াইফ নাকি। ওদের মধ্যে কেউ বিশ্বাস করতে পারছিল না যে আসলেই আমরা স্বামী স্ত্রী। কারণ আমার আর স্পৃহার দূরত্বটা তখনও কমেনি। এক ছেলে বলে উঠল।

“এরা দুজন স্বামী স্ত্রীও না প্রেমিক প্রেমিকাও না। দেখেন না একজন আরকজন থেকে কতদূরে দাঁড়িয়ে আছে। স্বামী স্ত্রী হলে তো একজন আরেকজনের পাশে খুব কাছাকাছি হাত ধরে দাঁড়িয়ে থাকত।”

ওই ছেলের কথাগুলো শুনে মুহূর্তের মধ্যেই স্পৃহা আমার খুব খুব কাছে চলে আসল। আমার এই ছোট্ট জীবনে এতটা কাছে কেউ কখনো আসেনি,কোনদিন না। কতটা কাছে এসেছিল সেটা হয়তো আমি পাঠকদেরকে বুঝাতে পারব না৷ তবে জেনে রাখুন এতটা কাছে এর আগে কেউ কারো কাছে আসেনি। আমি জানি অনেকেই বিশ্বাস করবে না কিন্তু তাতে আমার কিছু যায় আসে না। স্পৃহা যখন আমার খুব কাছে এসে আমার শরীরের সাথে তাঁর নরম শরীরের স্পর্শ দিয়ে আমার হাত ধরে বলল।

“কে বলেছে আমরা স্বামী স্ত্রী না। ওর সাথে আমার অভিমান হয়েছে তাই এমন করেছি।”

তখন বখাটে ছেলেদের দলপতি আমাদের দিকে তাকিয়ে বলল।

“যেহেতু আপনারা স্বামী স্ত্রী তাহলে আমরা যেটা বলছি ওটা করে ফেলুন। না হলে আমরা ভিন্ন কিছু করতে বাঁধ্য হব। আর সেই ভিন্ন কিছুটা আপনাদের জন্য কখনোই ভালো হবে না৷”

বখাটে ছেলেদের দলপতির কথার জবাবে আমি চুপ করে থাকলেও স্পৃহা চুপ থাকল না। সে যে সাহসী একটা মেয়ে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধে জয় লাভ করার ক্ষমতা রাখে সেটা প্রমাণ করার জন্যই হয়তো সে বুক উঁচু করে লোকটার দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে বলল।

“এটা কি পাবলিক প্লেসে করার মত কোন জিনিস নাকি৷ এটা হল পারসোনাল জিনিস এটা কেন সবার সামনে করতে হবে?

তখন ছেলেটা বলল।

“এছাড়া আপনাদের উপায়ও নেই। যা করতে বলেছি সেটা করেন তাড়াতাড়ি।”

স্পৃহা যখন বুঝতে পারল এটা করা ছাড়া এখান থেকে বেঁচে ফেরা সম্ভব না তখন সে দেরি না করে আমার অপবিত্র ঠোঁটে তাঁর নরম ঠোঁটটা আলগোছে ছুঁইয়ে দিল। তখন আমার খুব রাগ হল। মনে হল কোনকিছু চেকে দেখার পর যখন সেটা খেতে ইচ্ছে করে তখন যদি সেটা খেতে না পারি তখন যতটা খারাপ লাগে আমারও ঠিক ততটাই খারাপ লাগল। স্পৃহার এক সেকেন্ডের ছোট্ট একটা চুমুতে আমার ভিতর বাহিরে প্রকান্ড এক ভূমিকম্পের সৃষ্টি হলেও সেটা থামানোর জন্য স্পৃহার এক সেকেন্ডের চুমু যথেষ্ট ছিল না। এমন চুমু খাওয়া দেখে বখাটে ছেলেদের দলপতি হাসতে হাসতে বলল।

“হ্যাল হ্যাল ম্যাডাম। এটা কেমন চুমু? এটা যে কেউ যে কাউকে খেতে পারবে। না আছে কোন ফিলিংস,না আছে কোন কেমিস্ট্রি। এটা কোন আদর্শ স্বামী স্ত্রীর চুম্বন হতে পারে না। এক জোড়া আদর্শ স্বামী স্ত্রীর চুম্বন হবে লোহা আর চুম্বকের মতো। লোহা আর চুম্বক যেমন একসাথে করলে কেউ কাউকে ছাড়তে চায় না,জোর করে টেনে টুনে ছাড়াতে হয়। স্বামী স্ত্রীর চুম্বনও ঠিক সেরকম হবে৷ তারা চুমু খেতেই থাকবে খেতেই থাকবে খেতেই থাকবে। কিন্তু আপনারা তো এক সেকেন্ডও দুজনের ঠোঁট একত্রে রাখেন নাই। কিভাবে নিজেদেরকে স্বামী স্ত্রী দাবি করেন?”

তখন স্পৃহা বলল।

“ভাই আসলে আমাদের নতুন বিয়ে হয়েছে তো তাই এমন। আর বিয়েটা দুই পরিবারের সম্মতিতে হয়েছে। প্রেম ট্রেম করার সুযোগ পাইনি। তাই চুমু টুমু খেয়ে প্র্যাকটিস করারও সুযোগ হয়নি আমাদের। তাই ধরতে গেলে এই কিস করাতে আমরা অনেকটা ব্যাকডেটেড। দুজনের একজনও এখনো ঠিকমতো চুমু খেতে পারি না। বাসর ঘরে পর্যন্ত আমরা চুমু খাইনি। বিশ্বাস করেন ভাই,বিশ্বাস না হলে আমার স্বামীকে জিজ্ঞেস করে দেখেন। আমি তো একটু চালাক,ওতো আরও বোকা। কত ভিডিও দেখল চুমু খাওয়া নিয়ে কিন্তু আফসোসের বিষয় হলো আমার বোকা স্বামীটা এখনও চুমু খাওয়া শিখল না। নাটক সিনেমায় যেভাবে একজন আরেকজনের ঠোঁটে চুমু খায় বাস্তবে আসলে তেমনটা হয় না। বাস্তবতা ভিন্ন। নাটক সিনেমায় চুমু খেতে গেলে অমৃতের স্বাদ পাওয়া যায়,কিন্তু বাস্তবতা বড় নিষ্ঠুর। বাস্তবে সিগারেটের গন্ধ ছাড়া কিছু পাওয়া যায় না।”

স্পৃহার কথাশুনে আমার হাসি আটকে রাখতে বড় কষ্ট হচ্ছিল। তবুও আটকালাম। এই মেয়ে যে কি দিয়ে তৈরি আজ বুঝতে পারলাম। কিন্তু আমি তো জীবনে কোনদিন সিগারেট মুখে দেইনি। তাহলে স্পৃহা আমার ঠোঁটে সিগারেটের গন্ধ পেল কিভাবে? এটা নিশ্চয়ই বিরোধী দলের চক্রান্ত। কিন্তু আমার তো কোন বিরোধী দলই নাই। কে এই জঘন্য কাজটা করবে? নিশ্চয়ই স্পৃহার চালাকি এটা। আমি যখন এসব উদ্ভট চিন্তাভাবনা করছিলাম ঠিক তখন বখাটে ছেলেদের দলপতি স্পৃহাকে ধমক দিয়ে বলল।

“ফাজলামো করেন আমাদের সাথে? আপনারা দুজন এখন দুজন দুজনকে চুমু খাবেন। ঘড়ি ধরে দু’মিনিট চুম্বন করবেন। না হলে আপনার স্বামীর বদলে অন্য কারো সাথে আপনাকে এই কাজটা করতে হবে।”

পরিস্থিতি ভয়াবহ দেখে স্পৃহা বুঝতে পারল এখন যদি এটা আমরা না করি তাহলে হয়তো সত্যি সত্যিই আমার বদলে অন্য কাউকে তাঁর চুমু খেতে হবে। আমি স্পৃহার দিকেই তাকিয়ে ছিলাম। আমার চোখের পলক ফেলতেই স্পৃহা আমার কাছে এসে আমার ঠোঁটে তাঁর নরম ঠোঁটটা ডুবিয়ে দেয়। আমার তখন মনে হলো আমি কোন অমৃতের স্বাদ নিচ্ছি। এর থেকে মিষ্টি হয়তো জগতে আর কোনকিছু নেই,থাকতে পারে না। স্পৃহার চুম্বনে আমি আর নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারলাম না। আমিও সব লজ্জা অপমান ভয় সংকোচকে পেছনে ফেলে স্পৃহাকে শক্ত করে দুহাত দিয়ে নিজের কাছে টেনে নিয়ে আসি। আমিও তাঁর ঠোঁটের ছোঁয়ায় হারিয়ে যায় এক স্বর্গ রাজ্যে৷ পুরো দুই মিনিট পর আমাদের চুম্বন পর্ব শেষ হল। আমার পারফর্মটা ভালো না হলেও স্পৃহার পারফর্মটা বখাটে ছেলেদেরকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে৷ কেউ কেউ মাটিতে পড়ে সেন্সলেস হয়ে গিয়েছে। কেউ কেউ বেঁচে থেকেও মরে গিয়েছে। তারা মেনে নিয়েছে এই মেয়ে কোন সাধারণ মেয়ে না। আমি ভেবেছিলাম পরিচিত কাউকে ফোন করব। কিন্তু যখন দেখলাম স্পৃহাকে কাছে পাওয়ার একটা সুযোগ আছে তাই সেটা হাতছাড়া করতে চাইনি। পরে ওই ছেলেগুলো কাউকে ফোন করা ছাড়াই আমাদেরকে ছেড়ে দেয়।

আমি আর স্পৃহা ঘোরের মধ্যে বাসায় চলে আসলাম। দুইদিন হয়ে যায় আমি গোসল করি না। আমার ঠোঁট ভিজাই না। ঠিকমতো পানিও খাই না। কারণ স্পৃহার চুম্বনের ছোঁয়াটা আমি এত তাড়াতাড়ি ভুলতে চাই না। সেই যে ওইদিন বাসায় আসার পর কাথা গায়ে দিয়ে বিছানায় শুইছি আর উঠার নাম নাই। যতবার অনুভব করি ততবারই স্পৃহার ওই মারাত্মক চুম্বন করার দৃশ্যটা আমার চোখের সামনে ভেসে উঠে। বাসায় আসার পর যখন স্পৃহাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম।

“আপনি এত সুন্দর করে চুমু খেতে পারেন জানতাম না৷ জানলে হয়তো নিজের জীবনের বিনিময়ে হলেও আপনার কাছ থেকে একটা চুমু খেতাম।”

আমার এমন মজা করাটা স্পৃহা মেনে নিতে পারল না। রাগে কাঁপতে কাঁপতে বলল।

“আপনি এমন কেন? আপনি ওই ছেলেদেরকে কিছু বললেন না কেন? নিজের পরিচিত কাউকে ফোন করলেই তো পারতেন। তাহলে তো আমাদের এমন অবস্থায় পড়তে হত না।”

আমি তখন স্পৃহার দিকে তাকিয়ে খুশি মনে বললাম।

“দেখুন আল্লাহ যা করে ভালোর জন্যই করে। ভাগ্য ভালো ছিল আমাদের শুধু চুমু খেতে বলছে। অনেক সময় এমন অবস্থায় দেখা যায় যে দুজনকে ফিজিক্যাল রিলেশনও করতে বলে। সে ক্ষেত্রে আমরা অনেক বড় বাঁচা বেঁচে গেছি। আর ওরা ছিল দশ জন আর আমি একা। দুএকজন না হলে হয় রিস্ক একটা নিতাম। আপনিই বলুন ওত গুলো মানুষের সাথে একা আর কি করতে পারতাম আমি? কিছুই করতে পারতাম না। তাই নীরব দর্শক হয়ে সবকিছু দেখেছি।”

তখন স্পৃহা একা একা কি যেন বলতে বলতে আমার সামনে থেকে চলে গেল।

স্পৃহা বসে বসে কাঁদছিল নাকি হাসছিল বুঝতে পারছিলাম না। কাছে গিয়ে দেখলাম আসলেই সে কাঁদছে। তবে তাঁর কান্নাটা আমার কাছে রিয়াল মনে হলো না,কেমন যেন ন্যাকা কান্না মনে হল। জোর করে কান্না করছে সে,চোখ দিয়ে পানিও পড়ছে না৷ আমি তাঁর মিথ্যা ফ্যাত কাঁদাকে সান্ত্বনা দেওয়ার জন্য বললাম।

“কি হয়েছে আপনার? কাঁদছেন কেন?”

তখন স্পৃহা তাঁর ন্যাকা কান্না করতে করতে বলল।

“আমি হাসানকে কথা দিয়েছিলাম আমি তাকে আমার বিশুদ্ধ আমিটা উপহার দিব। আমার ঠোঁট শুধু তাঁর ঠোঁটেরই স্পর্শ নিবে। কিন্তু আমি তাঁর কথা রাখত পারিনি।”

আমি তখন মনে মনে বললাম।

“বাল তোমার থেকে হাসান আরও অনেক বেশি বিশুদ্ধ। তোমরা সবাই বিশুদ্ধ খালি আমরাই অশুদ্ধ। ”

আমি স্পৃহার কাছে গিয়ে বললাম।

“আমার কাছে একটা বুদ্ধি আছে। এটা করলে আপনি আগের মত বিশুদ্ধ হয়ে যাবেন।”

তখন স্পৃহা বলল।

“কি বুদ্ধি? ”

তখন আমি তাঁর আরও কাছে এগিয়ে গিয়ে বললাম।

“ছোটবেলায় যখন ফুটবল খেলে ব্যথা পেতাম। তখন ওই ব্যথার মধ্যেই আবার ব্যথা দিতাম। মানে ফুটবল দিয়ে শর্ট মারতাম ওই ব্যথার ওখানে। ব্যথা অটোমেটিক্যালি ভালো হয়ে যেত৷ ঠিক তেমনি আপনি যেই ঠোঁটে চুমু খেয়েছেন সেই ঠোঁটে আরেকবার চুমু খাবেন। আমি নিশ্চিত আপনি আগের মতোই পিউর বিশুদ্ধ হয়ে যাবেন।”

আমার কথা শুনে স্পৃহা আমার দিকে আগুন চোখে তাকালো। মনে হলো ওই চোখের আগুনে আমাকে পুড়িয়ে মারবে। অথচ অনেক আগেই আমি তাঁর ওই মায়াবী চোখের ভিতরে নিজেকে হারিয়ে ফেলেছি। বের হওয়ার লোকেশন খুঁজে পাচ্ছি না বলে বের হতে পারছি না। পাঠকরা কেউ লোকেশন খুঁজে পেলে জানাবেন।

সত্যি বলতে আজকাল মানুষকে ভালো বুদ্ধি দিতে নেই। আমাকেই দেখুন না। স্পৃহাকে বিশুদ্ধ হওয়ার এত সুন্দর একটা বুদ্ধি দিলাম আর সে আমার ওপর রাগ করল। এজন্যই আমি কাউকে কখনো ভালো পরামর্শ দেই না।

চলবে……..