মেঘ বলেছে তুমি আমার পর্ব-০৮

0
210

#মেঘ_বলেছে_তুমি_আমার❤️
#লেখিকা:#তানজিল_মীম❤️
— পর্বঃ০৮
_______________

‘ আপনি কেমন যেন বড্ড রহস্যময়ী নীলয় সাহেব আমি আপনাকে ঠিক ভাবে বুঝতে পারি না।’

নীলয় হাসে উচ্চ স্বরে শব্দ করে হাসে। অহনা তাকিয়ে দেখে নীলয় ছেলেটার হাসার পর গালের টোল পড়ার বিষয়টা যেন একটু বেশি দারুণ। অহনা নীলয়ের হাসির মাঝেই আবারো বলে,

‘ আপনি হাসছেন কেন আমি হাসার মতো কিছু বলেছি নাকি।’

নীলয় তার হাসি থামায়। খুব শীতল কণ্ঠে বলে,

‘ আমাকে বুঝতে এসো না রমনী আমি কিন্তু তোমার ধরা ছোঁয়ার বাইরে।’

অহনা চুপ করে রয়। নীলয়ের কথার পিটে কি বলবে সে বুঝতে পারছে না। এটা তো সত্যি নীলয় তার ধরা ছোঁয়ার একদমই বাইরে। অহনার ভাবনার মাঝেই অহনার মুখের সামনে তুড়ি বাজিয়ে বললো নীলয়,

‘ হারিয়ে কোথায় গেলে?’

ধড়ফড়িয়ে উঠলো অহনা। বললো,

‘ না কিছু না চলুন বাড়ি যাই।’

নীলয়ও রাজি হয়। বলে,

‘ ঠিক আছে চলো।’

নীলয় বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো অহনাও দাঁড়ালো। অহনা তার মাথার ঘোমটাটা ঠিক করে হাঁটা শুরু করলো নীলয়ের সাথে সাথে। আচমকাই একটা ধুলো মিশ্রিত ধমকা হাওয়া আসলো অহনা তার ওড়না দিয়ে নিজের চোখ দুটো ঢাকতে পারলেও নীলয় মোবাইল দেখতে থাকায় তার চোখে ধুলো চলে যায়। নীলয় স্তব্ধ হয়ে দাড়িয়ে পড়ে তার চোখে হাত রাখে অহনা বিষয়টা বুঝতে পেরেই বলে,

‘ আপনার চোখে কি বালু ঢুকে গেছে নীলয় সাহেব?’

নীলয় মাথা নাড়ায় যার অর্থ হা গেছে। নীলয়ের চোখ জ্বলছে, নীলয় তার চোখটা হাত দিয়ে ঘষতে নিতেই অহনা তড়িঘড়ি করে বললো,

‘ হাত দিয়ে ডলবেন না প্লিজ এতে চোখ আরো জ্বলবে।’

নীলয় তার হাত চালানো বন্ধ করে চোখ বন্ধ করেই বললো,

‘ এবার তবে কি করবো আমি?’

‘ আপনি এক সেকেন্ড শান্ত হয়ে দাঁড়ান আমি দেখছি।’

নীলয় শান্ত হয়ে দাঁড়িয়ে পড়ে। অহনা নীলয়ের কাছে এগিয়ে যায়। নীলয় তখন সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে ছিল। অহনা উচ্চতায় নীলয়ের চেয়ে খাটো হওয়ায় তার চোখের সামনে মুখটা আনতে না পেরে বললো,

‘ আপনি একটু নিচু হন নীলয় সাহেব?’

নীলয় কোনো প্রশ্ন না করেই শুনলো। নীলয় নিচু হতেই নীলয়ের বাম চোখটা মেলে অহনা ফু দিতে লাগলো। পাঁচ সেকেন্ডের মতো পার হতেই নীলয় তার চোখ খুললো। অহনা মেয়েটা বড্ড বেশি যেন কাছে চলে গেছে নীলয়ের। নীলয় অহনার চোখের দিকে তাকালো খুব চিন্তিত দেখাচ্ছে মেয়েটাকে হয়তো তার চোখের জন্য। নীলয় আপনাআপনি হেঁসে উঠলো। অহনা নীলয়ের দিকে তাকিয়ে খুব উত্তেজিত কণ্ঠে বললো,

‘ আপনি ঠিক আছেন তো? চোখ আর জ্বলছে না তো।’

নীলয় মাথা নাড়ালো যার অর্থ তার চোখ আর জ্বলছে না। অহনা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো। এরই মাঝে নীলয় অহনার কানের কাছে তার মুখটা নিয়ে খুবই স্বল্প স্বরে বলে উঠল,

‘ আপনার কি মনে হচ্ছে না অহনা আপনি একটু বেশিই নীলয়ের কাছে চলে এসেছেন?’ নীলয়ের আবার একটা সমস্যা আছে, কি জানেন সে হুটহাট মেয়ে মানুষদের কাছে আসাটা ঠিক নিতে পারে না।’

অহনা হকচকিয়ে উঠলো ছিঁটকে দু’কদম দূরে চলে গেল। অহনার কাজে নীলয় হাসলো। আর অহনা লজ্জা মাখা মুখশ্রী নিয়ে দৃঢ়তা ভরা কণ্ঠে বললো,

‘ আই এম সরি আমি আসলে,

পুরো কথা শেষ হওয়ার আগেই নীলয় বলে উঠে,

‘ ইট’স ওকে। প্রথমবার তাই মেনে নিলাম কিন্তু পরের বার যেন এমন না হয়। এভাবে হুটহাট কাছে চলে আসলে আমার যদি প্রেম প্রেম পেয়ে যায় তখন।’

নীলয়ের কথা শুনে অহনা এক অদ্ভুত দৃষ্টি নিয়ে তাকালো নীলয়ের মুখ পানে। যা দেখে উচ্চ স্বরে হেঁসে ফেলে নীলয়। বলে,

‘ i Just joking sweet girl.

উত্তরে অহনা কিছু বলে না। সে তো বুঝেছে এই নীলয় তার সাথে মজাই করছে। অতঃপর আর কথা না বাড়িয়ে দুজনেই হাঁটা শুরু করে সামনে। রাস্তার দুইধারে নদীর পানিরা ঢেউয়ের সঙ্গ নিয়ে লাফালাফি করছে, সারি সারি তালগাছের তালগুলো যেন চেয়ে চেয়ে দেখছে,গাছের পাতা হাল্কা নড়ছে, আকাশে মেঘ জমেছে তারা কি কিছু বলতে চাইছে হয়তো চাইছে হয়তো না।’

____
দুপুরের সাওয়ার শেষে নিজের ভেজালো চুলগুলো মুছতে মুছতে নিজের বিছানায় বসলো নীলয়। টুং করে মেসেজ আসলো ফোনে। নীলয় দেখলো তার এক ফ্রেন্ড মেসেজ করেছে নীলয় দেখলো কিন্তু রিপ্লাই করলো না। আচমকাই আকাশটা গর্জে উঠলো, ফর্সা আকাশটায় নেমে আসলো এক আধার কালো অন্ধকার, নীলয় জানালার পানে তাকালো ঠান্ডা বাতাস আসছে সেখান থেকে, গা শিউরে উঠলো তার নীলয় চটজলদি তার গায়ে শার্ট জড়ালো, শার্টের বোতাম আটকে, শার্টের হাতা কনুই পর্যন্ত ভাজ করতে করতে জানালার দিকে তাকালো বৃষ্টি নামবে হয়তো, চারপাশ অন্ধকারে ডুবে গেছে পুরো, নীলয়ের রুমের জানালার পাশ দিয়ে ছিল মোটা একটা গাছ সেই গাছ বেয়ে ছুটে চললো দুটো ছোট ছোট কাঠবিড়ালি নীলয় দেখলো তাদের। আচমকাই এক ধমকা হাওয়া গায়ে লাগতেই নীলয় পাশ ফিরো তাকালো দূর সীমানা বেয়ে গরুর দড়ি ধরে ছুটে আসছে অহনা মাথার ঘোমটা টা হাল্কা সরে গেছে, মেয়েটা যে খুব তাড়াহুড়ো করছে এটা নীলয় অহনাকে দেখেই বুঝতে পেরেছে। অহনা হাত দিয়ে কপালের সামনে থাকা চুলগুলো সরিয়ে ছুটে আসলো বাড়ির ভিতর তার পিছনে আহিরও ছিল দুজনেই গরু নিয়ে এদিকে আসছে হয়তো গোয়ালে ভরার জন্য। নীলয় আসার পর এই গরু গুলোকে খেয়াল করেনি। অহনাদের গোয়াল ভরা গরু আর ছাগল আছে। সেই গরু ছাগলের দুধ বিক্রি করেও বেশ উপার্জন হয় তাদের। পর পর কয়েকবার গরু,ছাগল নিয়ে আসা যাওয়া করলো অহনা আহির, তারপরই নজরে আসলো নীলয়ের তার বাবাও লুঙ্গি আর ফতুয়া পড়ে গরু নিয়ে ছুটছে। নীলয় তার চোখ বড় বড় করে বললো,

‘ ড্যাড তুমিও,

নীলয়ের বাবাকে দেখে এই মুহূর্তে বোঝার উপায় নেই সে আসলে বিদেশে বসবাস করা এক নাগরিক। ধীরে ধীরে প্রকৃতি আরো বদলালো ঝিরিঝিরি শব্দে শুরু হয়ে গেল বর্ষণ। নীলয় শুধু দাঁড়িয়েই দেখলো বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে কি সুন্দর গ্রামের মানুষগুলো ছুটছে। পুরো গ্রামের মানুষরাই ছুটছে দূর সীমানা বেয়ে ছুটে আসছে মানুষ। অহনা প্রায় ভিজে গেছে বৃষ্টিতে। শেষ মুহূর্তে বাড়ির ভিতর ঢুকতে গিয়ে পা পিছলে পড়ে গেল নিচে তার পড়ে যাওয়া দেখে আহির হাসতে হাসতে বললো,

‘ যা অহনা আপু তুমি পড়ে গেলে খুব মজা পেয়েছো নিশ্চয়ই।’

উত্তরে অহনার নিজের হাতটা আহিরের দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো,

‘ আমার হাতটা ধরে উঠা তারপর বলছি।’

আহিরেরও সরল মন সে এগিয়ে দিল অহনার পানে তার হাতটা। আহির হাত বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গেই অহনা আহিরের হাত ধরে দিল টান সঙ্গে সঙ্গে আহির নিজেও পড়ে গেল নিচে। ‘আহ্’ করে শব্দ করলো মুহূর্তেই আহিরের অবস্থা দেখে অহনা হাসতে হাসতে বললো,

‘ এবার বুঝলি তো আমি কতটা মজা পেয়েছি।’

আহির অসহায় দৃষ্টি নিয়ে শুধু তাকায় অহনার মুখের দিকে। তার বোনটা এত খারাপ এটা বুঝতে পারে নি আহির। আহির মুখ ভাড় করে বললো,

‘ কোমড়ে ব্যাথা পেলাম তো।’

‘ তো ব্যাথা পাওয়ার জন্যই ফেললাম এই জন্যই বলে অন্যের পড়া নিয়ে মজা নিতে নেই।’

আহির কিছু বলে না। এমন সময় হাতে ছাতি মাথায় দিয়ে স্কুল ড্রেস আর ব্যাগ কাঁধে বাড়ির ভিতর ঢুকলো জহির আর নীলা। দুজনেরই পায়ের দিক দিয়ে কাঁদায় মাখোঁ মাখোঁ অবস্থা। আহির আস্তে আস্তে উঠে দাঁড়ায় এরই মাঝে জহির তার ভাইকে বৃষ্টিতে ভিজতে দেখে চিল্লিয়ে নিজের মাথার ছাতা সরিয়ে দৌড়ে আসতে আসতে বলে উঠল,

‘ ভাইয়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়া,

সঙ্গে সঙ্গে আহির পিছন ঘুরে তাকালো ভাইকে এত হতভম্ব হয়ে পিছলে যাওয়া মাটির রাস্তা দিয়ে আসতে দেখে চেঁচিয়ে বললো,

‘ জহিরের বাচ্চা ব্রেক মার, দ্রুত ব্রেক মার।

কিন্তু কে শোনে কার কথা অতঃপর যা হওয়ার তাই হলো জহির পিছলে এসে পড়লো সোজা আহিরের ওপর তারপর আর কি আহির আর জহির দুজনেই ধপাস করে পড়লো নিচে। ওদের কান্ডে উপস্থিত সবাই অহনা, নীলা এছাড়া বাড়ির আশপাশের লোকজনও উচ্চস্বরে হেঁসে উঠলো সাথে জানালার ধারে দাঁড়িয়ে থাকা নীলয়ও হেসে উঠলো। মুখে অদ্ভুত শব্দ করে বললো,

‘ এরা যেন সবই পাগল।’

#চলবে….

[ভুল-ত্রুটি ক্ষমার সাপেক্ষ। আর গল্প কেমন লাগলো অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবে।]

#TanjiL_Mim♥️