ম্লান সন্ধ্যায় পর্ব-০৯

0
314

#ম্লান_সন্ধ্যায় (০৯)

নদীটির নাম তুরাগ।বংশী নদী থেকে উৎপত্তি লাভ করে ঢাকার পশ্চিম দিক দিয়ে সর্পিলাকারে এগিয়ে গাজীপুরের দিকে গিয়েছে।নদীটি স্থানীয় ছাড়া কারো কাছে তেমন একটা পরিচিত নয়। হেমন্তের ভরা নদীর স্বচ্ছ জল শেষ বিকেলের আলোয় চিকচিক করছে। ওরা শহর ছেড়ে অনেক দূরে চলে এসেছে। এখানকার আবহাওয়া বোধহয় রৌদ্রজ্জ্বল ছিল। অন্ততঃ তুরাগের ওপর লালচে আলোর খেলা দেখে তাই মনে হচ্ছে।পাড়ের বালির ওপর স্থানে স্থানে কাশগুচ্ছে, এখন ও কিছু কাশফুল রয়েছে।তবে তার রেণু উড়ে যাবার অপেক্ষা মাত্র। নদীতে ডিঙির আনাগোনা বেশি, মাঝেমাঝে শব্দ তুলে দুএকটা ট্রলার চলে যাচ্ছে।

অনিক নদীর কাছাকাছি বালির ওপর গাড়ি থামালো। গ্রীষ্মের তীব্র দাবদাহ কিংবা শ্রাবণের গুমোট, নদীতে সবসময় বাতাস বয়েই চলে।এই জেলো বাতাস মনকে প্রশান্ত করে, কষ্ট,রাগ অভিমান ভুলতে সাহায্য করে। কবিরা খুঁজে পায় ছন্দ আর মানুষ জীবনের আনন্দ।তাইতো যুগ যুগ ধরে অভ্যুক্ত জেলেদের মনের সুখে ভাটিয়ালি কিংবা ভাওয়াইয়া গান গাইতে দেখা গিয়েছে।

তুরাগ নদীর দুই তীরে শিল্পকারখানা গড়ে ওঠায় এর জল খুবই নোংরা হলেও, বর্ষার পরবর্তী কয়েকমাস জল থাকে স্বচ্ছ, পরিবেশ দূর্গন্ধহীন।যদিও ওরা একেবারে একটা গ্রামের পাশে এসেছে।তাই দূষিত জল এবং পরিবেশের প্রশ্নই আসে না।অনিক গাড়িতে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে চাবির রিং ঘোরাচ্ছে।কালো ডেনিমের ওপর ছাইরঙা শার্ট ইন করা।শার্টের হাতাদুটো ভাজ করে গুটানো।কব্জিতে রোলাক্স ঘড়ি,চুলগুলো সুন্দর করে কাটা, গোঁফ দাড়ি কামানো। সবমিলিয়ে ফর্সা মানুষটাকে দেখলে কোয়েলিয়ার মনে প্রশ্ন আসে,অলস লোকটা কিভাবে এতো ফিট থাকে?তবে অনিক নিজের বেশভূষা নিয়ে সচেতন তা বোঝা যায়।কোয়েলিয়া ওর থেকে কিছুটা দূরে গিয়ে বললো,
‘চাইলে সিগারেট ধরাতে পারেন, কিছু মনে করবো না।’
অনিক হাসলো না, তবে বললো,
‘ধন্যবাদ।’
সত্যি হয়তো ওর এখন সিগারেটের প্রয়োজন ছিল। কিছুক্ষণের মধ্যে দেখা গেল ও আকাশের দিকে তাকিয়ে ধোঁয়া ওড়াচ্ছে। কোয়েলিয়ার কাছে সিগারেটের গন্ধ বিশ্রী ঠেকে। ও একটা কাশফুল তুলে নিয়ে তীরের কাছে দাঁড়ায়। তুরাগের মাতাল হাওয়ায় শাড়ির আঁচল উড়ছে।অস্তায়মান সূর্যের লালচে আভায় দৃশ্যটি দেখে চিত্রকরের আঁকা কোন ছবি মনে হবে।অনিকের মনে হলো, মেয়েটার চুলগুলো খোলা থাকলে এই পরিবেশে মানাতো ভালো।

কোয়েলিয়া কিছুক্ষণ পর ওর কাছাকাছি এসে বলে,
‘জায়গাটা সুন্দর। আপনি কি প্রায়ই এখানে আসেন?’
‘এখানে আগে কখনো আসিনি। রাস্তা দিয়ে যাবার সময় এখানটা দেখে নির্জন মনে হতো,তাই আজ এলাম।’
‘আপনি নির্জনতা পছন্দ করেন?’
‘হ্যাঁ।’
‘বরাবরই?’
‘বাবা নিশ্চয়ই আপনাকে সব বলেছে? তাহলে তো আপনার জানার কথা, আমি মানুষের সান্নিধ্য খুব একটা পছন্দ করিনা।’
‘একজনের দেওয়া কষ্টের জন্য, নিজের জীবনকে উপভোগ করবেন না? জীবন খুব ছোট,আর এই ছোট্ট জীবনে এসব ঘটনা অনেক তুচ্ছ।’

কেউ ওকে পরামর্শ বা উপদেশ দিক, বিষয়টা অনিকের পছন্দ নয়, বরঞ্চ মানুষটার এই পরামর্শ ওর রাগের উদ্রেক ঘটায়।তবে নদীর হাওয়া হোক বা অন্য কোন কারণেই হোক,অনিককে রেগে গেলেও রাগ দেখালো না। চুপ করে রইল।জোয়ার আসায় তুরাগ ফুলে ফেঁপে উঠেছে,ডিঙিগুলো জোয়ারের সাথে পাল্লা দিয়ে এগোনোর সময় দুলছে। বাতাসের সাথে তীরে আছড়ে পড়া পানির ছলাৎ ছলাৎ শব্দ শোনা যায়। কোয়েলিয়া হয়তো অনিকের মনের পরিবর্তন বুঝলো।তাই ও তীরের কাছাকাছি গিয়ে দাঁড়ায়। মুখে তেতো স্বাদ লেগে থাকলেও,তুরাগের হাওয়ায় ওর বেশ ভালো লাগলো ।

পুরোটা সময় কেউ কারো সাথে কোন কথা বললো না।এমনকি ফেরার পথেও অনিক কিছু বলেনি। তবে শৈত্য প্রবাহের কারণে গাড়ির জানালা বন্ধ করে দিয়েছিল। কোয়েলিয়া জানালা খোলা রাখতে বললেও অনিক উত্তর দেয়নি, কথা রাখার প্রয়োজন ও মনে করেনি।কি আশ্চর্য মনুষ্যজাতি!এই ভালো তো এই মন্দ। রোমান্টিক নাটকে যেভাবে পুরুষকে তুলে ধরা হয়,এতো তার সম্পূর্ণ বিপরীত।এ মানুষটা হাসতে জানে না,মন জুগিয়ে কথা বলে না, এমনকি কখনো ছুঁয়ে দেখার বিন্দুমাত্র চেষ্টা করে না।স্ত্রী ছেড়ে যাবার পর অনেক পুরুষকে বিপুল আগ্রহে দ্বিতীয়বার সংসার করতে দেখেছে। কিন্তু জলজ্যান্ত একজন নারী ওর সামনে দাঁড়িয়ে থাকলেও ওর ভেতরে কোনো আগ্রহ নেই। কোয়েলিয়া বুঝলো,এই মানুষের মনে জায়গা পাওয়া খুব কঠিন। হয়তো এভাবেই চলতে থাকবে। থাকুক!

রাস্তায় আবার জ্যাম লেগেছে। কোয়েলিয়ার নজর গেল ফুটপাতের দিকে। সেখানে ঝুড়িতে করে একজন ফুল এবং ফুলের মালা বিক্রি করছে‌। পাঞ্জাবি পরিহিত এক যুবক একটা ফুলের তাজ শাড়ি পরিহিত মেয়ের মাথায় আটকে দিল। মেয়েটা খুশিতে স্থানকাল ভুলে পুরুষটার বুকে মাথা রাখলো, চোখমুখে প্রাপ্তির হাসি। ওদের ভেতর কি সম্পর্ক তা ও জানে না, হয়তো প্রেমিক প্রেমিকা। কিন্তু এই সন্ধ্যায় জরাজীর্ণ ফুটপাতে এমন দৃশ্য দেখে কোয়েলিয়া মুগ্ধ।একই স্রষ্টার সৃষ্টিতে কত বৈচিত্র্য!

*
বেশ কিছুদিন কেটে গেল। নাজমা এবং আফসার শিকদার দু’জনেই ফিরে এসেছে। তবে সেদিনের পর অনিক ওর সাথে খুব একটা কথা বলে না।প্রশ্ন করলেও সংক্ষিপ্ত উত্তর পাওয়া যায়। অবশ্য কোয়েলিয়াও আগ বাড়িয়ে কথা বলতে যায়নি।ও উপেক্ষিত হলেও, আত্মসম্মানটা প্রবল।তাইতো ও নিজের মতো নিজেকে গুছিয়ে নেবার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কোয়েলিয়ার কাজ বলতে রান্নাবান্না।বাকিটা সময় বাগানে কিংবা ছাদে নয়তো স্টাডি রুমে কাটায়।একটা বই ওর বেশ ভালো লেগেছে। মারিও পুজোর ‘গডফাদার’। রহস্য আর উৎকণ্ঠা নিয়ে শেষ করতে চাইলেও,নানা কারনে পুরোটা পড়া হয়নি।আজ ও পুরোটা শেষ করার মানসিকতা নিয়ে ওপরে গেলেও, হঠাৎ মন পাল্টে ছাদের দিকে পা বাড়ালো।

ছাদের একপার্শ্বে নানারকম ফুলের গাছ। এগুলো নিতাই মালির পরিচর্যায় গড়ে তোলা।তার পাশে বেঞ্চি রাখা। এখানে বসে ফুলের সৌন্দর্যের সাথে বিকেলটা কাটানোর চমৎকার ব্যবস্থা। কেননা বেঞ্চিটা পশ্চিমমুখী করে রাখা,যার কারণে এখানে বসলে বিকেলের অস্তায়মান সূর্য দেখা যায়।
ছাদের অপর প্রান্তে চেয়ার টেবিল পাতা। সেখানে বসে অনিক বিকেলটা কাটাচ্ছিল।ওর সামনে অ্যালকোহলের বোতল, প্লেটে ভিনেগার মাখানো চিনা বাদাম, বাটিতে বরফ কুচি।হাতের গ্লাসে লালচে তরল।
বিকেলের দিকে ভালোই শীত পড়েছে,কারণ শীতকাল আসতে বেশি দেরি নেই। কোয়েলিয়া অনিককে দেখে চলেই যাচ্ছিল, পেছন থেকে অনিক ওকে ডাকলো। কোয়েলিয়া ওর কাছে যায়।অনিক দুহাত বুকে গুজে চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে আছে। কোয়েলিয়া সামনে যেতেই বললো,
‘বসুন।’
কোয়েলিয়া বসলো।ও জানে অনিক এখন দীর্ঘসময় কোন কথা বলবে না। প্রসঙ্গ তুলতে হবে ওর। পূর্বে এমনটাই হয়েছে।আজ যে ব্যতিক্রম হবে, সেরকম মনে হলো না। কারণ আজ কোন বিশেষ দিন না। তবে কিছু না কিছু বলে অনিক নিশ্চয়ই ওকে চমকে দেবে।
অনিক ওর মন পড়ে ফেললো কিনা জানা নেই , কিন্তু কোয়েলিয়াকে চমকে দিলো।বললো,
‘আপনার মন কি কোনো কারণে খারাপ?’
কোয়েলিয়া অনিকের দিকে ফেরে।এই মানুষটাকে ও কবে ঠিকভাবে বুঝে উঠতে পারবে?অনিক আবার বলে,
‘আপনি কি আজ কথা বলতে বিরক্ত হচ্ছেন?’
‘বিরক্ত হব কেন?’
‘হওয়াটা স্বাভাবিক। বরং মানুষের মন ত্রিশদিন একরকম থাকাটাই অস্বাভাবিক।’
‘রাগ করা বিরক্ত হওয়া আমার ভেতরে নেই।এসব আমার মতো মেয়েরা করেনা।’
‘আপনার কি মায়ের কথা মনে পড়ছে?যেতে চাইলে বলুন, বাবাকে বলবো।’
‘যাকে কখনো দেখিনি, তাকে কিভাবে মনে করবো?’
‘মানে?’
‘আমাকে জন্ম দিতে গিয়ে মা মারা গেছে।’
অনিক থমকে গেল। কিন্তু কিছু বলতে পারলো না। বরঞ্চ নিজেকে স্বাভাবিক রাখতে পুনরায় বিয়ারের গ্লাসে চুমুক দিলো।
কোয়েলিয়া বললো,
‘আপনাকে দেখলে বারবার আশ্চর্য হই। আপনি আমার ব্যাপারে কিছু জানতে আগ্রহী নন। এমনকি আমি মানুষটাই আপনার বিরক্তির কারণ। আপনি কি আমার কালো রং নিয়ে বিরক্ত?’

কোয়েলিয়া কিছু বলতে গিয়েও চুপ করে গেল।ও তো এগুলো বলতে ছাদে আসেনি?তবে এসব বলে নিজেকে ছোট করার কি মানে কি?ও উঠতে চাইলেও কোন এক অদৃশ্য শক্তি ওকে উঠতে দিলো না।অনিক ধীর কন্ঠে বলল,
‘আমি খারাপ, কিন্তু কখনো কারো চামড়ার রং খুঁটিয়ে দেখিনা। জীবন আমাকে যা দিয়েছে,তাতে নতুন কোন নারীতে আসক্ত হয়ে, সংসারে আবদ্ধ হয়ে নতুন করে ভেঙ্গে পড়তে চাই না।একা আছি, একা থাকতে চাই।একাই মরতে চাই। অন্ততঃ কেউ বিশ্বাসঘাতকতা তো করবে না।’
অনিককে উত্তেজনায় বড় বড় শ্বাস ফেলছে। কোয়েলিয়া ওর দিকে গ্লাসটা বাড়িয়ে দিয়ে বললো,
‘আপনি প্লিজ শান্ত হন। আমার এভাবে বলা ঠিক হয়নি।ক্ষমা করবেন।’
অনিক শান্ত হয়,মুখটা পূর্বের ন্যায় স্বাভাবিক দেখায়। কলোনিটা বেশ শান্ত, থেকে থেকে গাড়ির হর্ণ আর রিকশার ক্রিং ক্রিং আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে। গোলাপ আর রজনীগন্ধার মিষ্টি গন্ধ আর মৃদু বাতাসে ছাদের নির্মল পরিবেশ মনে প্রশান্তি আনে। কোয়েলিয়া গায়ে শালটা টেনে আকাশের দিকে তাকায়। দূর থেকে এই দুটো মানুষকে দেখে যেকেউ মুগ্ধ হবে, কিন্তু কেউ জানবে না, দুজনের ভেতর রয়েছে যোজন যোজন দূরত্ব।

*
বহুদিন পর ড্রয়িং রুমে সবাইকে একসাথে বসতে দেখে আফসার শিকদারের মনটা ভালো হয়ে যায়। সরফরাজ বললো,
‘তুমি কি কোন বিশেষ কিছু বলতে চাও?’
‘এজন্যই ডাকা।’
আফসার শিকদার ছেলের দিকে তাকিয়ে রেগে আছে কিনা বোঝার চেষ্টা করলেন, তবে ওর মুখ দেখে কিছু বুঝতে পারলেন না। ভদ্রলোক গলা খাঁকারি দিয়ে বললেন,
‘অনেকদিন হলো তুমি কোথাও যাও না। আমি চাচ্ছি মেয়েটাকে নিয়ে ঘুরে আসো। অবশ্য শুধু তোমরা দুজন না,সারাহ, সরফরাজ, তোমাদের মণিও যাবে।’
অনিক কিছু বলার আগে নাজমা বলে,
‘না, দাদাভাই, ওদের সাথে আমি যাচ্ছি না। ছোটদের সাথে বয়স্করা গেলে ঘুরতে যাওয়ার আনন্দ থাকে না।ওরাই ঘুরে আসুক।অনিক, কোন আপত্তি শুনছি না।’
‘কিন্তু মণি, বাইরে যাওয়া আমার পছন্দ না।’
‘তুমি না গেলে মেয়েটার যাওয়া হবে না। তোমার জন্য ওকে এই আনন্দ থেকে বঞ্চিত করবে! এখানকার মতো সব ব্যবস্থা থাকবে, ইচ্ছে হলে ওকে নিয়ে বের হবে না হলে হবে না। সরফরাজ আর সারাহ তো আছেই।
সারাহ বললো,
‘কিন্তু ওদের ভেতর আমাদের দুই ভাইবোনকে পাঠাচ্ছো কেন?’
‘সারাহ্, তুমি বাইরের লোক নও। সবকিছু জেনেও, এধরনের কথা বলার মানে হয়না।’
‘মা থামো তো।অনিক তুই তোর মতামত আগে জানা।’
সবাই উৎসুক হয়ে অনিকের দিকে তাকালো।অনিক যে বেঁকে বসবে তা সবার জানা।তাই কে কি বলবে, মনে মনে গুছিয়ে নিলো।এ ব্যাপারে তো ওকে রাজী করিয়েই ছাড়বে। কিন্তু সবাইকে অবাক করে দিয়ে অনিক বললো,
‘আমার আপত্তি নেই। তবে লোকেশনটা আমি চুজ করবো।’
সবাই হাফ ছেড়ে বাঁচলো। এখন অনিক যদি বলে পদ্মাতীরে কিংবা বুড়িগঙ্গা তীরে যাবে,তাতেও ওরা হয়তো আপত্তি করবে না। কোয়েলিয়া ঠিক বুঝতে পারলো না, অনিকের হয়েছে টা কি!আজ ও সবাইকে অবাক করার দায়িত্ব নিয়েছে নাকি!

সরফরাজ বললো,
‘তুই ই বল, কোথায় যেতে চাস। তবে শীতকালে সাগরে যাওয়া ঠিক হবে না।’
‘যেখানে বেশিরভাগ মানুষ যায় সেখানে যাবো না।জায়গাটা নির্জন হবে, তোদের আপত্তি আছে?’
‘আমার কোন আপত্তি নেই।সারাহর হয়তো পছন্দ হবে না।’
সারাহ প্রতিবাদ করে।
‘সব আমাকে না নেওয়ায় ধান্দা। ভুতের বাড়ি হলেও আমি যাবো।’
অনিক একপলক কোয়েলিয়ার দিকে তাকালো। মেয়েটা ভাবলেশহীন হয়ে বসে আছে। অনিক বললো,
‘আমরা পাহাড়ে যাবো, তবে বান্দরবান বা সাজেক নয়। আমরা যাবো নেত্রকোনার দুর্গাপুরে।’
সরফরাজ উচ্ছসিত হয়ে বললো,
‘চমৎকার জায়গা। আমি আর অনিক অনেক বছর আগে একবার গিয়েছিলাম।’
দুর্গাপুরের নাম শুনে সারাহ মন খারাপ করে বলে,
‘ওখানে দেখার কি আছে?’
‘অনেক গাছপালা,পাহাড়,ঝর্ণা আর নদী আছে।’
অনিকের জবাব সারাহর মনঃপুত হয়না। কিন্তু তাই বলে ঘুরতে যাওয়ার আনন্দ থেকে বঞ্চিত ও হচ্ছে না।
সব শুনে আফসার শিকদার বললেন,
‘দাড়াও, খোঁজখবর নিয়ে তোমাদের থাকার ব্যবস্থা করছি। যতদূর জানি আমার এক বন্ধুর বাংলো আছে কলমাকান্দায়।সিওর হয়ে বলছি।’
আফসার শিকদার উঠে গেলেন। সরফরাজ অনেকদিন পর অনিকের সাথে কথা বলছে, কিন্তু ওদের কথাবার্তা শুনে তা বোঝার উপায় নেই।ও বললো,
‘তোর ক্যামেরাটা আছে?’
‘ভেঙে ফেলেছি।’
‘তাহলে একটা কিনতে হবে।’
‘আচ্ছা।’

আফসার শিকদার তার ব্যবসায়ী বন্ধুর সাথে কথা বললে, ভদ্রলোক আনন্দের সাথে সম্মতি জানায়। ঠিক হলো ওরা দুদিন পরে অর্থাৎ ২৭শে অগ্রহায়ণ সকাল ৮টায় ওরা দুর্গাপুরের উদ্দেশ্যে রওনা হবে।

চলবে…
®️ সুমি খানম