যদি আমার হতে🌹
পর্ব – ৪২
লেখিকা : সৈয়দা প্রীতি নাহার
মুগ্ধ মাথা চুলকালো। তুহিন বললো, “ভাইয়া না থাকলে আজ প্রপোজ করার সাহসটুকুও পেতাম না।”
নীলা মুচকি হেসে বললো, “আর এদিকে আদু, রুহি আর স্নিগ্ধ ভাইয়া না থাকলে তোমার মুখ থেকে পুরো কথাটাও বেরুতো না!”
রুহি বাকা হেসে বললো, “তা তো বটেই। দেখলি তো, আমাদের কথায় এক্টিং করলি বলেই দুজনেই মনের কথা প্রকাশ করতে পারলি।”
তুহিন মাথা নেড়ে বললো, “কোথায় দুজনে মনের কথা প্রকাশ করলাম!? আমি নাহয় যেমন তেমন বললাম ও তো মাথা নাড়লো শুধু।”
আদ্রিশা নীলার কাধে হাত রেখে বললো, “সেটা কি যথেষ্ট নয়?”
তুহিন নীলাকে টেনে নিজের পাশে দাঁড় করালো। নীলার ডান হাতের আঙুলের ফাকে নিজের হাতের আঙুল বাধিয়ে বললো, “না যথেষ্ট নয়। এখন আমাকে বলতে হবে, ভালোবাসি! আর তারপর সারাদিন একসাথে কাটাবো। বুঝলি ডাফার?”
আদ্রিশা মুখ ভেঙালো। স্নিগ্ধ চোখ টিপে বললো, “তা ঠিক। যাও তুহিন। কোনো নিরিবিলি জায়গা যেখানে প্রেমের বাধা নেই সেখানে যাও। আমিও রুহিকে নিয়ে ঘুরে আসি।”
মুগ্ধ স্নিগ্ধর দিকে ভ্রু উচিয়ে তাকিয়ে বললো, “বাহ! বড় ভাই ভাবির সামনে অন্যকে প্রেম করার পরামর্শ দিস আবার নিজেও প্রেম করতে যাস! ফুপিকে বলতে হবে!”
স্নিগ্ধ চোখ গোল গোল করে আদ্রিশার দিকে তাকাতেই আদ্রিশা চোখ বুঝে তাকে আশ্বস্ত করলো। তুহিনের দিকে দৃষ্টি দিয়ে বললো, “দোস্ত ওরে নিয়ে যা। লজ্জায় তো মাটিতে মিশে যাবে মনে হচ্ছে। রুহি তোরাও যা। আমরা এখানে যখন এসেই পরেছি তখন লান্চ করেই যাই! কি বলেন?” মুগ্ধর দিকে ফিরে কথাটা বললো আদ্রিশা। স্নিগ্ধ হালকা কাশলো। তুহিন হেসে নীলার হাত ধরে বেরিয়ে গেলো। রুহি তুহিনের আনা জিনিসগুলো তুলে তাদের পিছু ছুটলো। স্নিগ্ধ মুগ্ধর কাধে হালকা ধাক্কা দিয়ে চলে গেলো। সবার প্রস্থান হতেই আদ্রিশা চেয়ারে বসে বললো, “কি হলো বসুন। খিদে পেয়েছে।” মুগ্ধ সম্মতি জানিয়ে বসে পরলো চেয়ারে।
_______________
সময় নিজ গতিতেই এগুতে থাকে। কোনো এক জায়গায় স্থগিত হওয়ার ক্ষমতা নেই তার। আর না কোথাও থামতে চায় সে। তেমনি দেখতেই দেখতে কেটে গেছে চার মাস। মুগ্ধ আদ্রিশার সম্পর্কের তেমন উন্নতি না হলেও নীলা তুহিনের পরিবার তাদের বিয়ের আয়োজনে মত্ত হয়েছে। আজ আদ্রিশার শেষ পরীক্ষা ছিলো। রোজকার মতোই হলের বাইরে এসে সচেতন চোখে মুগ্ধকে খুঁজছিলো সে। গেটের বাইরে মুগ্ধ এবং তার গাড়ি নেই। কিন্তু গতকাল রাতেই মুগ্ধ আদ্রিশাকে ফুচকা খাওয়ার লোভ দেখিয়েছিলো। তার ভাষ্য মতে, ‘শেষ এক্সামে সেলিব্রেট তো করাই উচিত!’ মিনিমাম আধঘন্টা মুগ্ধর অপেক্ষা করেও তার দেখা পেলো না আদ্রিশা। তাই একাই বাড়ির পথে এগিয়ে গেলো। মাঝরাস্তা থেকে কি ভেবে মুগ্ধর অফিসের দিকে রিক্সা ঘুরালো সে।
অফিসে ঢুকতেই যার সাথে প্রথম দেখা তিনি মুগ্ধর ম্যানেজার। আদ্রিশাকে গুটি গুটি পায়ে অফিসে আসতে দেখে মুখে প্রশস্ত হাসি ঝুলিয়ে আমন্ত্রণ জানালেন মঈন উদ্দীন।
—“আরে ম্যাডাম আপনি! অফিসে কি মনে করে?”
আদ্রিশা জোর পূর্বক হেসে বললো,
—“মুগ্ধ অফিসে আছেন?”
মঈন উদ্দীন আদ্রিশার থেকে চোখ ফিরিয়ে নিলেন। পেছন ফিরে তাকিয়ে ইতস্তত করে বললেন,
—“খুব বেশি দরকার?”
আদ্রিশা ঠোঁটের উপরের বিন্দু বিন্দু ঘাম হাতের উল্টো পিঠে মুছে নিয়ে বললো,
—“তেমন কিছু না তবে একটু কথা ছিলো। উনি কি ব্যাস্ত?”
মঈন উদ্দীন কিছুক্ষন চুপ থেকে বললেন,
—“আসলে, একজন স্যারের সাথে দেখা করতে এসেছেন। তাই স্যার ডেকে বললেন, যেনো কেউ স্যারকে বিরক্ত না করে।”
আদ্রিশার মুখটা ছোট হয়ে গেলো। কাধের ব্যাগটা ঠিক করে ছোট্ট করে বললো, “ওহহ!” মঈন উদ্দীনকে বিদায় জানিয়ে চলে যেতে নিলে তিনি আদ্রিশাকে থামিয়ে দেন। বলেন,
—“স্যার তো আমাদের ডিস্টার্ব করতে মানা করেছেন। আপনাকে তো না! আপনি ওনার স্ত্রী সো আপনি ভেতরে গেলে কোনো সমস্যা হবে বলে মনে হচ্ছে না। আসুন আমার সাথে।”
আদ্রিশা হালকা মাথা দুলিয়ে মঈন উদ্দীনের সাথে গেলো। লম্বা করিডোর পেরিয়ে মুগ্ধর কেবিন । ম্যানেজার দূর থেকে আঙুলের ইশারায় আদ্রিশাকে কেবিনে যেতে বলে অন্য কর্মচারির সাথে কথা বলতে চলে যান। আদ্রিশা স্বাভাবিক পদচারণ করেই কেবিনে ঢুকে পরলো। দরজা ভেজানো থাকায় টোকা দিতে গিয়ে খুলে যায়। দরজার ওপারে মুগ্ধর সাথে একজন মেয়েকে দেখে আদ্রিশা ওখানেই থ মেরে দাঁড়িয়ে থাকে। মুগ্ধ যে ঐ মেয়েটার সাথে অন্তরঙ্গ অবস্থায় ছিলো এমন নয়। বরং অনেকটা দূরেই দাঁড়িয়েছিলো সে। কিন্তু মুগ্ধর এক হাত মেয়েটির চোখের পানি মুছায় ছিলো আর অন্য হাত মেয়েটি তার দুহাতে আকড়ে ধরে আছে। আদ্রিশাকে কেবিনে দেখে এক দফা চমকে যায় মুগ্ধ। হাত সরিয়ে পকেটে ঢুকিয়ে বললো,
—“আদ্রিশা! তুমি এখানে?”
মুগ্ধর কথায় মেয়েটি চোখ মুছে মৃদু হেসে আদ্রিশার দিকে তাকিয়ে বললো,
—“ওহহ তুমিই আদ্রিশা! কেমন আছো?”
আদ্রিশা মেয়েটির পা থেকে মাথা পর্যন্ত পর্যবেক্ষন করছে। কমলা রঙের লং ড্রেসে ফর্সা গায়ের রঙটা অদ্ভুত ভাবে ফুটে উঠেছে তার। চুল ঝুটি করে বাধা, কানে ছোট্ট দুল, হাতে ঘড়ি, কাধে একটা ব্যাগ ঝুলানো। বেশ লম্বাও সে। মুগ্ধর কাধের সাথে কাধ ঠেকছে প্রায়। মেয়েটি এবার কঠিন গলায় বললো,
—“আদ্রিশা? আর ইউ লিসেনিং মি?”
আদ্রিশা খানিক কাঁপলো। মুখ গম্ভীর করে বললো,
—“আমি কি আপনাকে চিনি?”
মেয়েটি এবার হাসলো। রহস্যময়ী হাসি তার! ছোট্ট শ্বাস টেনে বললো,
—“একে অপরের সাথে কথা বললেও অচেনা রয়ে গেলাম আমরা!”
আদ্রিশার ভ্রু কুঁচকে গেলো। মেয়েটি এগিয়ে এসে বললো,
—“তিথি। চিনেছো?”
আদ্রিশার চোখ জ্বলজ্বল করে উঠলো। মুগ্ধর দিকে কড়া নজরে তাকালো। তিথি আবারও বললো,
—“আদ্রিশা! ওখানে দাঁড়িয়ে যে! ভেতরে এসো।”
আদ্রিশা মৃদু হেসে তিথির সামনে দাঁড়ালো। তিথি মুগ্ধর এক হাত মুঠো করে ধরে বললো,
—“মুগ্ধকে বলছিলাম, কি করে পরিবারকে মানাবো। সবাইকি আর আমাদের সম্পর্কটা মানবে? এমনকি, তুমি এতো সহজে ব্যাপারটা মেনে নেবে সেটাও ভাবি নি আমি। মুগ্ধর থেকেই শুনলাম তুমি ডিভোর্স পেপারে সাইন করে দিয়েছো। তোমার এই ঋণ কি করে শোধ করবো বলতো?”
আদ্রিশা তাদের হাতের দিকে তাকালো এক পলক। চোখ ঘুরিয়ে তিথির দিকে তাকিয়ে বললো,
—“এসব বলে আপনি আমায় লজ্জা দিচ্ছেন আপু। আমি তো কিছুই করি নি শুধু আমার করণীয় কাজটুকুই করেছি। এটা তো আমার দায়িত্ব ছিলো! যে আমার নয় তাকে কি ধরে রাখতে পারি!? অবশ্য আমি ধরতেও চাই নি! মুগ্ধ আপনার ছিলো আপনারই থাকবে। আমিই মাঝখানে ঢুকে পরেছিলাম। অযাচিত ঝামেলা! সে যাই হোক এখন সব ঠিক হবে আশা করি!”
তিথির মুগ্ধকে ধরা হাত হালকা হয়ে আসলো। মেকি হাসি দিয়ে বললো,
—“অদ্ভুত ভাবেই আমরা দুজন মুগ্ধর জীবনের সাথে জড়িয়ে গেছি। যেখানে তুমি মুগ্ধর স্ত্রী হয়েও তার উপর কোনো অধিকার নেই তোমার। সেখানে আমি মুগ্ধর উপর অধিকার খাটাচ্ছি প্রতিনিয়ত তবুও সমাজের চোখে আমি ওর কেউ না!”
আদ্রিশা স্বাভাবিক হয়ে বললো
—“দুজন কেনো বলছেন আপু? মুগ্ধর জীবনের সাথে আমরা দুজন জড়িয়ে গেলে মুগ্ধও তো জড়িয়ে আছে তাতে। আমরা দুজন যতোটা সাফার করছি মুগ্ধ তার থেকে কোনো অংশে কম সাফার করছেন না। কোনো কোনো ক্ষেত্রে বেশিই সাফার করেছেন। তাই বলা উচিত এক সুতোয় তিনটে জীবন গেঁথে গেছে। সুতো ছিড়তে হবে শুধু। তারপর আবারও সুতোয় গিট্টু লাগিয়ে দিবেন।”
আদ্রিশার কথায় কি বলা উচিত তা খুঁজে পেলো না তিথি। মুগ্ধও কিছুক্ষন নিরবতা পালন করে বললো,
—“বললে না তো এখানে আসার কারন!”
আদ্রিশা মৃদু হেসে বললো,
—“যে কারনে এসেছিলাম সেটা আর দরকার নেই। আমার কথা ছাড়ুন । আপু এতোদিন পর এলেন ওনাকে সময় দিন। আমি বরং আসি। (তিথির দিকে তাকিয়ে বললো)পড়ে না হয় দেখা হবে আপু। আল্লাহ হাফেজ!”
কথাগুলো বলে আর এক মুহুর্ত দাঁড়ালো না আদ্রিশা। মুগ্ধ শুধু তার যাওয়ার পানে চেয়ে রইলো। আদ্রিশার হাসিটা প্রাণহীন ছিলো। কোনো উচ্ছাস ভালোলাগা ছিলো না তাতে। সেই হাসিতে ছিলো তীব্র কষ্ট, অভিমান। মুগ্ধ বুঝেও বুঝলো না সে হাসির পেছনে লুকানো দুঃখ গুলো!
চলবে,,,,,,,,,,,
যদি আমার হতে🌹
পর্ব – ৪৩
লেখিকা : সৈয়দা প্রীতি নাহার
“তিথি আজই দেশে ফিরেছিলো। আমি জানতাম না ও আজ আসছে।”
আদ্রিশা বিছানার চাদর পরিবর্তন করছিলো। মুগ্ধর কথা শুনে হাত থামিয়ে দেয় সে। কিছুক্ষন পর আবারও চাদর ঠিক করতে লেগে পরে। মুগ্ধ যে ওকে কিছু বলেছে সেটা না শুনার ভান করেই রইলো সে। মুগ্ধ ইতস্তত করে বললো,
“ও না কি আমায় সারপ্রাইজ দিতে চেয়েছিলো তাই এয়ারপোর্ট থেকে সোজা আমার অফিসেই চলে এসেছে। অনেকদিন পর দেখা তাই ইমোশনাল হয়ে পাড়েছিলো একটু। আর পরিস্থিতিও এমন ছিলো
যে,,,,”
আদ্রিশা মুগ্ধকে থামিয়ে দিয়ে বলে,
“আমাকে কেনো এক্সপ্লেইন করছেন? আমি তো কিছু জানতে চাই নি মুগ্ধ!”
মুগ্ধ হাত কচলাতে কচলাতে বললো,
“না আসলে! তুমি হঠাৎ অফিসে গেলে কিছু বললেও না তাই!”
আদ্রিশা বালিশের কভার বদলে বললো,
“আচ্ছা, তো সেটাই সমস্যা!”
মুগ্ধ আদ্রিশার কথা না বুঝে বললো,
“কি সমস্যা?”
আদ্রিশা বালিশ একপাশে সাজিয়ে মুগ্ধর দিকে ফিরে তাকালো। স্বাভাবিক কন্ঠে বললো,
“এই যে আমি আপনার অফিসে গেলাম! সেটাই তো সমস্যা তাই না? না কি, আপনাদের প্রাইভেট টাইমে বিরক্ত করেছি সেটা সমস্যা? বলতে পারেন। আসলে আমি কনফিউজ্ড! এ দুটো কাজের মাঝে আপনি বা আপনারা কোন কাজে আঘাত পেয়েছেন সেটা বুঝে উঠতে পারছি না।”
মুগ্ধ প্রতিবাদ করে বললো,
“এসব কি বলছো আদ্রিশা! তোমার আমার অফিসে গেলে সমস্যা কেনো হবে? তাছাড়া আমরা কোনো প্রাইভেট টাইম স্পেন্ড করছিলাম না! দেশে ফিরে আমার সাথে দেখা করতে এসেছে, ইমোশনাল হয়ে পরেছিলো তাই কাঁদছিলো! আমি যাস্ট তার চোখের পানিই মুছে দিয়েছি! এখানে তোমায় নিয়ে কেনো সমস্যা হবে?”
“মুগ্ধ! আমি তো বললাম এক্সপ্লেইন করতে হবে না! তাহলে কেনো বলছেন বলুন তো! আপনাদের এতো দিনের সম্পর্ক।আপনার গার্লফ্রেন্ড স্যরি হবু বউ কথা বলতে বলতে ইমোশনাল হতেই পারে। আর হবু স্বামী হিসেবে ওনার চোখের পানি মুছা আপনার কর্তব্য। আপনি সে কর্তব্য পালন করেছেন। ব্যাস। সিম্পল। বিষয়টাকে এতো জটিল কেনো করছেন?”
মুগ্ধ কপালে হাত ঠেকিয়ে ছোট্ট শ্বাস ফেলে বললো,
“তুমি আমায় ভুল বুঝছো। আমি যা বুঝাতে চাইছি তা বুঝাতে পারছি না আর না তুমি বুঝছো।”
আদ্রিশা কাঁথা ঠিক করে চাদরটা টেনে দিলো আরো একবার। শান্ত কন্ঠে বললো,
“তাহলে বুঝান। চেষ্টা করবো বুঝার। না ছাড়ুন বাদ দিন। আমার দ্বারা সবকিছু বুঝা সম্ভব নয়। শুয়ে পড়ুন। রাত হয়েছে অনেক।”
“পরীক্ষা কেমন হলো?”
আদ্রিশা শব্দ করে হাসলো। মুগ্ধ ভ্রু কুঁচকালো খানিক। আদ্রিশা সোফায় বসে বললো,
“আপনার মনে আছে আজ আমার পরীক্ষা ছিলো?”
মুগ্ধর উত্তরের অপেক্ষা না করেই আবার বললো,
“আচ্ছা ছাড়ুন। ঘুরে ফিরে ঐ একই কথায় চলে যাবো ফের!”
আদ্রিশাকে সোফায় শুতে দেখে মুগ্ধ গর্জে উঠে বললো,
“এসবের মানে কি? বিছানা থাকতে সোফায় কেনো শুয়েছো?”
আদ্রিশা সোফায় নিজের দেহটাকে মিলিয়ে বললো,
“সব কিছুর মানে হয় না মুগ্ধ। শুয়ে পড়ুন , শুয়ে পড়ুন!”
মুগ্ধ বাকা হেসে বললো,
“এখন বুঝি আমার সাথে এক বিছানায় ঘুমানো যায় না? এতো রাগ!”
“রাগ! কে বললো? তিথি আপু দেশে ফিরেছেন! এতোদিন এক সাথে থাকলেও এখন একসাথে থাকাটা মানায় না। আর তাছাড়া আপনি আমায় ভরসা করলেও যে তিনি আমায় ভরসা করবেন তেমনটাও না। যতই হোক, হবু বরকে তো আর অন্য কারো সাথে এক সাথে, এক ঘরে,এক খাটে পাশাপাশি সহ্য করা যায় না!”
পাশ ফিরে চোখের কোনা দিয়ে বড় বভ ফুটায় অশ্রু বিষর্যন করছে আদ্রিশা। মাঝে মাঝে বড় বড় শ্বাস ফেলছে সে। মুখ চেপে কান্না আটকানোর চেষ্টাও করছে খুব। তিথি যেমন মুগ্ধকে তার সাথে সহ্য করতে পারে না তেমনি সেও তো মুগ্ধকে তিথির পাশে মানতে পারে না। কষ্ট হয় তার। বুক ফেটে কান্না আসে। হাত পা ছড়িয়ে কাঁদতে ইচ্ছে করে তখন। অথচ আর কদিন পরেই তাদের এক করে দিয়ে অন্য পথে একা চলতে হবে তাকে! ভাবতেই কেঁপে উঠে শরীর। চোখের পাতা ভিজে উঠে আবারও।
_____________
রুহি ফোন করে আদ্রিশাকে দেখা করতে ডাকলো। কিন্তু বাড়িতে না ডেকে ফাইভ স্টারে লান্চের অফার করলো তাকে। এর কারন জানতে চাইলো বললো,স্নিগ্ধ রুহির তরফ থেকে ট্রিট! যদিও আদ্রিশার যেতে ইচ্ছে করছিলো না তবুও বান্ধবীর মন রক্ষা করতে যেতে হলো। মুগ্ধ যাচ্ছে না তার সাথে। যদিও রুহি বলেছিলো মুগ্ধকে আসতে কিন্তু কাজের অজুহাতে মানা করেদিলো সে। রেস্তোরায় পৌঁছোতেই আদ্রিশা দেখলো বড় একটা টেবিল বুক করে তাতে বসে আছে রুহি, স্নিগ্ধ, তুহিন, নীলা। দুটো চেয়ার খালি। আদ্রিশা নীলার পাশের চেয়ারটায় বসলো। তুহিন আর নীলাকে উদ্দেশ্য করে বললো,
“কি ব্যাপার? বিয়ের বর কনে শপিং ছেড়ে এখানে!”
রুহি হেসে বললো,
“ট্রিট কি খালি তোরেই দেবো? ওদেরও তো দিতে হবে!”
স্নিগ্ধ ওয়েটার ডেকে খাবারের ওর্ডার দিয়ে বললো,
“ভাই আসে নি?”
আদ্রিশা মাথা দুলিয়ে বললো,
“নাহ ওনার কাজ ছিলো তাই আসতে পারেন নি।”
তুহিন টেবিলের দিকে তাকিয়ে বললো,
“ভাইয়ার আজকাল খুব কাজ না রে!”
আদ্রিশা জবাবে কিছু বললো না। তুহিন আবারও বললো,
“আদু! ভাইয়া এখন কোথায়?”
আদ্রিশার কপালে চিন্তার রেখা ফুটে উঠলো। সচরাচর বন্ধুমহলে এমন প্রশ্ন উঠে না। তুহিনের এমন প্রশ্নের পেছনের কারন বুঝতে পারলো না সে। হালকা হেসে বললো,
“অফিসে। মিটিংএ ব্যাস্ত।”
তুহিন হাত দিয়ে চুল পেছনে ঠেললো। কঠিন গলায় বললো,
“তুই শিওর? না মানে, তুই এখানে উনি কার সাথে কোথায় কি করছেন জানতে নাও পারিস!”
স্নিগ্ধ রেগে গেলো তৎক্ষনাৎ। কটমট করে বললো,
“হোয়াট দ্যা হেল তুহিন!? কিসব আবোল তাবোল বলছো! ভুলে যেও না যার সম্পর্কে কথা বলছো সে আমার ভাই আর তোমাদের আদুর স্বামী!”
তুহিন নিঃশব্দে হাসলো। বললো,
“জানি স্নিগ্ধ। সব জানি। এমন অনেক কিছুই জানি যা তোমরা জানো না! আদু তুই জানিস কিছু?”
তুহিন কি বিষয় নিয়ে কথা বলতে তা বুঝতে বেশ হিমশিম খেতে হচ্ছে আদ্রিশাকে। কৌতুহলী হয়ে প্রশ্ন করলো,
“কি জানার কথা বলছিস তুই?”
রুহি তুহিনকে বললো,
“দেখ, যা বলার স্পষ্ট বলবি। কথা প্যাচাবি না একদম! স্নিগ্ধ শান্ত হও তুমি। আগে শুনো কি বলতে চায় সে। কি রে বল!”
নীলা তুহিনের হাত খাঁমচে ধরলো। চোখে পানি টলমল করছে তার। তুহিন তাতে পাত্তা না দিয়ে বললো,
“কাল আমি আর নীলা মুগ্ধ ভাইয়াকে একটা মেয়ের সাথে দেখেছি। শপিং মলে হাত ধরাধরি করে চলছিলেন তারা। ”
স্নিগ্ধ এবার অনেকটাই হাইপার হয়ে যায়। আঙুল তুলে বলতে শুরু করে,
“বেশি বাড়াবাড়ি করছো তুমি! আমার ভাইয়ের নামে কোনো বাজে কথা শুনতে আমি রাজি নই!”
রুহি হাত টেনে ধরে স্নিগ্ধকে শান্ত করছে। এদিকে আদ্রিশার শ্বাস প্রশ্বাস তুমুল গতিতে বেড়ে গেছে। পায়ের নিচ থেকে জমিন সরে গেছে মনে হচ্ছে তার। কি জবাব দেবে এদের ভাবতেই কান্না পাচ্ছে।
তুহিন মেকি হাসি দিয়ে বললো,
“আমি কোনো বাজে কথা বলছি না। ফুড জোনে দেখেছিলাম তাদের। প্রথমে ভেবেছিলাম ভুল দেখছি। কিন্তু পরে বিশ্বাস করতেই হলো! ওদের অবশ্য আশেপাশের হুশ ছিলো না। থাকলে হয়তো আমাদের দিকেও চোখ যেতো! কিন্তু ভাগ্য! আমাদের খেয়াল না করেই সেই রমণীকে জড়িয়ে বসে ছিলেন তোমার ভাই। দোষ তোমার না স্নিগ্ধ! আসলে আমরাও ভাবিনি ভাইয়া এমন একটা কাজ করবেন!”
স্নিগ্ধ আদ্রিশার দিকে তাকিয়ে বললো,
“ভাবি? ভাবি, ডোন্ট ট্রাস্ট দ্যাম! আই নো হিম! আর তুমিও তো ভাইকে চেনো বলো! ওটা ভাই ছিলো না। আই এম শিওর ওরা ভুল দেখেছে। নিশ্চয় ভাইয়ের মতোই কাওকে দেখেছে তাই মনে হচ্ছে ভাইকে দেখেছে। বাট প্লিজ ট্রাই টু আন্ডার্স্টেন্ড!”
আদ্রিশা নিশ্চুপ হয়ে বসে রইলো। রুহি আদ্রিশার হাতে হাত রাখতেই আদ্রিশা বলে উঠলো,
“তুহিন ঠিক বলছে। ওটা মুগ্ধই ছিলেন! ওই মেয়েটা মুগ্ধর গার্লফ্রেন্ড স্নিগ্ধ।”
রুহি সাথে সাথে হাতটা সরিয়ে নিলো। নীলা গোল গোল চোখে আদ্রিশার দিকে তাকিয়ে আছে। স্নিগ্ধ বিস্ময় ভরা চোখে আদ্রিশাকে দেখছে। তুহিনও বেশ হকচকিয়ে গেছে এতে। কেননা সে ভেবেছিলো আদ্রিশা এসবের কিছুই জানে না! কিন্তু ও তো নিজ থেকেই সব স্বীকার করছে। কেনো? সব জেনে থাকলে কেনো মুগ্ধকে আটকায় নি সে? কেনোই বা এখনও তার সাথে সম্পর্কে জড়িয়ে আছে? হাজারও প্রশ্ন ভীড় জমাচ্ছে তার মাথায়!
চলবে,,,,,,,,