যদি দেখা না হতো পর্ব-০৫

0
2707

#যদি_দেখা_না_হতো
#পর্ব_০৫
#Tanisha_Esu

এই বলে তিনি চলে গেলেন,,,আমার যেন কলিজা কেউ টেনে বের করছে।বুকের মধ্যে এতো ব্যাথা করছে মনে হচ্ছে কেউ হাতল পিটাচ্ছে।।সেইরাতে আর ঘুম হলো না,,থার্ডক্লাস এটাই কানের মধ্যে বেজে চলেছে

আজ একটু বেলা করেই উঠলাম,, ফ্রেস হয়ে কাব্যের রুমে গেলাম।

আজ কাজের লোকেরা সবাই এসেছেন।শাশুড়ী ফোন দিয়ে কাব্যকে জানিয়ে দিয়েছেন এক সপ্তাহের আগে আর আসতে পারবেনা।

আমি কাব্যের রুমে গিয়ে টোকা দিলাম তিনি আমার দিকে তাকালেন।বাট কোন গ্রাহ্য করছেন না তাই আমিই বলা শুরু করলাম,,

তানিশাঃ আজ আমি বাবার বাড়িতে যাব

কাব্যঃ সেটা তুমি যেতে পারবে না

তানিশাঃ মানে

কাব্যঃ রেজিট্রি পেপারে সাইন করার সাথে তুমি কিছু কন্ট্রাক্ট পেপারোও সাইন করেছো,,যেখানে লেখা আছে বিয়ের পর তোমার পরিবার তোমার সাথে কোন রকম যোগাযোগ করতে পারবে না বা তুমিও কোন রকম যোগাযোগ করতে পারবে না

তানিশাঃ এসবের মানে কি??তারা এসব জানতো

কাব্যঃ তারা স্ব- ইচ্ছাই সব কিছু জেনে তোমার সাথে আমার বিয়ে দিয়েছে বুঝলে।

আমার যেন পায়ের তলা থেকে মাটি সরে গেলো,,কোন রকম কষ্টকে চাপ দিয়ে বললাম,,

তানিশাঃ আমার কিছু জিনিস কেনার আছে,,আপনি কি আমার সাথে যাবেন

কাব্যঃ প্রশ্নও উঠেনা,,তোমার যেখানে যাওয়ার যাও সন্ধ্যা হওয়ার আগে বাড়িতে দেখতে চায় নাহলে দেখবে আমি কি করি।

আমি কোন রকম নিজের রুমে চলে এসে রেডি হয়ে বেড়িয়ে পরলাম মার্কেটের উদ্দেশ্যে। শপিং করার পথে ফিরতে ছিলাম হঠাৎ কারোর সাথে ধাক্কা লাগলো,,

নাতাশাঃ উফফ সরি,,,ওওওওও তানিশা Congratulations!!! তো কেমন আছো

আমি খেয়াল করলাম নাতাশা আপু তারও হাতে অনেক শপিং,,,আগের থেকে আরও সুন্দর হয়ে গেছে।

তানিশাঃ আলহামদুলিল্লাহ তুমি

নাতাশাঃ খুব ভালো,,তো কেমন চলছে ওই কাব্যের সাথে সংসার।

তানিশাঃ আমার কথা বাদ দাও তোমার কথা বলো।।

নাতাশাঃ আমি তো দিব্যি ভালো আছি।সেদিন তুমি ওই ঘটনা না ঘটালে আমি তো কাব্যর থেকে দূরে থাকতেই পারতাম না

তানিশাঃ মানে??

নাতাশাঃ আসলে কলেজ লাইফ থেকেই আমি কাব্যকে একদম পছন্দ করতাম না যতোই সে সুন্দর হোক না কেন।আমি চেয়েছিলাম আমার হাবি আমার উপর কথা বলবে না বাট কাব্য তার বিপরীত।

তানিশাঃ তাহলে কেন ওর সাথে রিলেশনশিপ এ গেছিলে

নাতাশাঃ আর বলো না,,আমাকে যখন প্রথম প্রোপজ করে আমি ওকে রিজেক্ট করে দিয়েছিলাম তারপরও বান্ধবীর মধ্যে হাত চেপে ধরাই ওকে থাপ্পড় মারছিলাম।ও তো অনেক বড়লোক,,ওর বন্ধু আবির আমাকে হুমকি দিয়েছিলো ওর সাথে রিলেশন না করলে আমার ফ্যামিলির ক্ষতি করবে।।এরপর তুমিই বলো আমি এটা করতে বাধ্য ছিলাম।আমি আরও আগে ওকে বলে ক্ষমা চেয়ে নিতাম বাট আবিরের জন্য করতে পারিনি,,আমি মধ্যবিও ফ্যামিলির মেয়ে ছিলাম।।অলরেডি আমার বিয়ে ঠিক করা ছিলো আকাশের সাথে আমার ছোট বেলার বন্ধু

আমি এবার সব ক্লিয়ার হয়ে গেলাম নাতাশা আপুর কথা শুনে,,আসলেই তো জোর করে আর সব পাওয়া গেলেও ভালোবাসা পাওয়া যায় না।

পেছন থেকে একটা ছেলে এসে নাতাশা আপুকে ডাক দিলো।নাতাশা আপু ওনার হাত ধরে বললো,,

নাতাশাঃ এই হলো আমার হাসবেন্ড আকাশ আহম্মেদ,,, আর ও হলো তানিশা যার কথা এর আগে তোমাকে বলেছিলাম।।

খুব জোর করেই আমাকে নিয়ে একটা রেস্টুরেন্টে বসলো তারা।আমার আর কাব্যের সম্পর্ক কেমন আস্ক করাতে আমার মুখটা কেমন জানি ফেকাশে হয়ে গেলো তারা বুঝতে পারলো ভালো না।।

নাতাশাঃ তোমার মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে কাব্য তোমাকে এখনো মেনে নেইনি।বলো আমি যখন তোমার জীবন নষ্ট করেছি আমিই গড়বো তোমাদের সংসার।বল তানিশা চুপ করে থেকো না বল?

আমিও বাধ্য হয়ে সেইদিন থেকে আজকের সব ঘটনা খুলে বললেন।নাতাশা আর আকাশ ভাইয়া সবটা শোনার পর খুব কষ্ট পেলো।

নাতাশাঃ আমি ভাবতেও পারিনি এতো কিছু করবে তোমার সাথে কাব্য,,,আমি তো শুধু একটা ভুল খুঁজছিলাম সম্পর্ক শেষ করার জন্য ওটাই ছিলো বেস্ট বাট ওইটাকে মুক্ষম সুযোগ করতে গিয়ে তোমার জীবন নষ্ট করে দিলাম,,, মাফ করে দিও আমাকে প্লিজ।

আকাশঃ আচ্ছা একটা আইডিয়া বলি

নাতাশাঃ হুম বলো

আকাশঃ তানিশা তুমি বরং রেকর্ড করো আর নাতাশা তুমি পূনরায় কাব্যকে ভালো না লাগার কারণ গুলো বলো,,যেগুলো আর পর্যন্ত বলতে পারোনি।

নাতাশাঃ গুড আইডিয়া,,আমিও আর কাব্যের সামনে যেতে চায়না।তানিশা রেডি হও।।

আমি কিছুটা অবাক হলাম নাতাশা আপুকে যতোটা খারাপ ভেবেছিলাম ততোটা নয় সে। তিনি তো তার পরিবারকে বাঁচানোর জন্য এগুলো করেছে।

রেকর্ড করা শেষ হলো,,,

জোর করেই খাইয়ে বের হলাম আমরা।।।।।।।

নাতাশাঃ আশা করি এবার সব ভুল বোঝাবুঝি শেষ হবে তোমাদের মধ্যে,,,আজ আসি বোন

তানিশাঃ জানিনা কি বলে তোমাকে ধন্যবাদ দিবো

নাতাশাঃ ধন্যবাদ তোমাকে দেওয়া উচিত,,,আর পুণরায় মাফ চাইছি,,মাফ করে দিও,,আল্লাহ হাফেজ

তানিশাঃ আল্লাহ হাফেজ

আপুরা চলে গেলো,,কতোটা সম্মান করে আকাশ ভাইয়া নাতাশা আপুকে। এখন খারাপ লাগছিলো কাব্য ভাইয়ার জন্য বেচারার তো কোন দোষ ছিলো না,, আবির ভাইয়ার এটা করা উচিত হয়নি,, যতোই সে বন্ধুত্বের জন্য করেছেন কিন্তু তারপরও এটা একদমই ঠিক হয়নি।

আমার ও খেয়াল নেই যে সন্ধ্যার আগে বাড়ি যেতে হবে।আমার যেতে যেতে আযান পরে গেলো।দরজা খুলে দেখলাম অন্ধকার লাইট অন করলাম বাড়িতে তো কেউ নেই।

আমি নিজের রুমে এসে শপিংয়ের সব ব্যাগ বিছানায় রাখলাম।পেছন থেকে গেট আটকানোর শব্দ আসলো।আমি চমকে উঠলাম দেখলাম কাব্য।

কাব্যঃ সন্ধ্যার আগে বাড়ি আসতে বলেছি,,, এতো দেরি হলো কেন(রেগে চোখ লাল করে)

তানিশাঃ আসলে আমি,, আসলে ঠাসসসসস

থাপ্পড়ের গতি এতোই জোর ছিলো আমি ছিটকে বিছানায় পরে গেলাম।।।ঠোটের পাশ দিয়ে রক্ত বের হতে লাগলো।

কাব্যঃ ভালো কথা শুনতে ভালো লাগেনা তাইনা(রেগে)

তানিশাঃ আজ দেরি হওয়ার কারণ নাতাশা আপু(এক নিঃশ্বাসে)

কাব্যঃ কি হয়ছে নাতাশার,, ও কোথায়,,ওর বর ওকে কিছু করেছে,,আজই মেরে ফেলবো( যেতে থাকে)

আমি কাব্যকে পিছ থেকে হাত টেনে ধরলাম।।।

তানিশাঃ উনি ভালো আছে তার বরের সাথে।।আর আপু ককক্ষনো আপনাকে ভালোইবাসিনি

কাব্যঃ কি বলতে চাও তুমি(আমার বাহু শক্ত করে চেপে ধরে)

তানিশাঃ আমি বলছি প্লিজ একটা শান্ত হন সময় দেন প্লিজ।।

তিনি বেডের উপর গিয়ে বসলেন।কেমন জানি পাগলের মতো বিহেব করছেন তিনি,,তার জন্য আমার খুব কষ্ট হচ্ছে।এরপর যেটা শুনবে কিভাবে সামলাবেন নিজেকে।

আমি তার পাশে বসে সব বললাম এবং রেকর্ড ও শুনালাম।।।রেকর্ড শোনার সাথে সাথেই তার চোখ লাল হয়ে গেলো,,, আজই হয়তো আবিরকে মেরে দিবে এতোটা ভয়ঙ্কর হলো তার চেহারা।

তানিশাঃ প্লিজ আপনি একটু শান্ত হন,,প্লিজ আপনার পায়ে ধরে।

সেদিন রাতে কোন রকম শান্ত করলাম তাকে,,আমার কাছেই শুয়েছিলেন,,,একদম আমাকে জড়িয়ে ধরে বাচ্চাদের মতো।আর ঘুমের ঘোরে কেমন জানি ফুপিয়ে উঠতে ছিলেন হয়তো এইসব নিয়েই স্বপ্ন দেখছেন তিনি।

সকালে,,,

তিনি নরমার হলেও তার মুখটা আর সহ্য করতে পারছি না আমি কেমন ফ্যাকাশে হয়ে গেছে তার চেহারা একরাতে।

তানিশাঃ খেয়ে নিবেন চলেন

কাব্যঃ তানিশা আমি অনেক কষ্ট দিছি তোমাকে,,আমাকে ক্ষমা করা যায় না(আমার হাত দুটি ধরে)

তানিশাঃ এসব কি বলছেন আপনি,,আমি কিছু মনে করিনি,, আপনার জায়গায় আমি হলেও একই কাজ করতাম,,আপনি শান্ত হন প্লিজ

কাব্যঃ আমাকে ক্ষমা করো প্লিজ

তানিশাঃ কিছু সর্ত পালন করলে আমি মাফ করবো।

কাব্যঃ আমি রাজি বলো কি সর্ত

তানিশাঃ এখন আপনি খাবেন,,পরে বাকি গুলো বলবো

এই বলে তার হাত ধরে ডাইনিং টেবিলে আনলাম তারপর তাকে নিজ হাতে খাইয়ে দিলাম,,আজ তিনি আমার দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে ছিলো,,কেমন জানি টান অনুভূতি হতে ছিলো আমার ভিতর।

তিনি আর আজ অফিসে গেলেন না।একটু একা থাকতে চায় আমিও বাধা দিলাম না।








চলবে…