যদি হঠাৎ ইচ্ছে হয় পর্ব-০৮

0
71

#যদি_হঠাৎ_ইচ্ছে_হয়
#পর্ব_৮
#Saji_Afroz

মা এর কথায় আনতারা ও আনিয়া বাসায় আসলো। আইরার বিয়ে নিয়ে ওরা অনেক বেশি খুশি।
কত ভালো ভালো প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে আইরা। আনতারা মা এর মাথায় ছেলে ঘটিত বিষয়টি ঢুকিয়ে ভালোই করেছে। মেয়েদের যত তাড়াতাড়ি বিয়ে হয়ে যায় ততই ভালো ওর মতে।

বোনদের জোরাজুরিতে তৈরী হয়ে নেয় আইরা। মাথার যন্ত্রণা ক্রমশ বাড়তেই আছে। আনিয়া বোনের দিকে তাকিয়ে দেখলো, একদমই সাদাসিধা লাগছে ওকে। তাই ও জোর করে ঠোঁটে লিপস্টিক লাগাতে যায়। আইরা ওমনি আনিয়ার শরীরের উপরেই বমি করে দেয়। আনিয়া হতভম্ব হয়ে যায়। আনতারা চ্যাচিয়ে বলল, এ কী! বমি করলি কেন! ওর শরীর ভাসানোর কী দরকার ছিল?

আনিয়া স্বভাবে শান্ত। ও আইরার দিকে তাকিয়ে বলল, ওর শরীর খারাপ জানিসই তো আপু। ভুলবশত হয়েছে। যা আইরা তুই ফ্রেশ হয়ে আয়।

আইরা দু:খিত জানিয়ে ওয়াশরুমে আসে। দরজা বন্ধ করে দেয়ালে পিঠ ঠ্যাকিয়ে ওড়না দিয়ে মুখ চেপে কান্না শুরু করে। ওর সাথেই কেন সব খারাপ হচ্ছে!

হাসিনা খানের কথা শুনে চিন্তিত হয়ে পড়লেন রাহাত খান। হাসিনা খান কোনোমতেই দিশাকে পুত্রবধূ হিসেবে মানতে রাজি নন। রাহাত খান বললেন, তোমার কী মনেহয়? ওর প্রস্তাবে আমিও কী রাজি! ওকে এখুনি জানিয়ে দাও যে, দিশার জায়গা এই বাড়িতে হবে না।

রাদিনকে ডাকা হয়। মা বাবার সিদ্ধান্ত শুনে ও বলল, বেশ! তোমাদের কথা শুনে এ বাড়িতে ওকে বউ করে আনব না আমি। কিন্তু আমার বউ ওকে ঠিকই বানাব। প্রয়োজনে দু’জনে রাস্তায় গিয়ে থাকব।

এই বলে হনহনিয়ে বাসা থেকে বেরিয়ে যায় রাদিন। রাহাত খান ওর পথ আটকাতে চাইলেও বাঁধা দেন হাসিনা খান। তিনি বললেন, পকেটে টাকা না থাকলে ওই দিশা মেয়েটা ওকে গ্রহণই করবে না। আর রাদিনও বড়ো কোনো কদম নিতে পারবে না। টাকা ছাড়া সব অচল। আমরা ছাড়া রাদিন অচল। ও তো ভেবো না তো!

ফুয়াদরা রওনা হয় আইরার বাড়ির উদ্দেশ্যে। পথিমধ্যে ওদের গাড়ি থামে একটি মিষ্টির দোকানের সামনে। আইরার বাড়িতে মিষ্টি নেওয়ার জন্য থামানো হয়েছে গাড়ি। ফুয়াদ গাড়ি থেকে নামে। মিষ্টি নিয়ে দোকান থেকে বেরুতেই পাশের গাড়ির দিকে চোখ যায় ওর। একই দোকানের সামনে রাদিনের গাড়ি। গাড়ির ভেতরে দেখা যাচ্ছে দিশা কেও। দু’জনে গাড়িতে বসে পেপসি খাচ্ছে। হয়তো এই দোকান থেকেই নিয়েছে।
ফুয়াদকে ওরা দেখে না। সেও আর দাঁড়ায়নি। চলে যায় নিজের গন্তব্যে।

-তোমার ক্লাস আজ বাদ দিলে হত না? সময়ই দিচ্ছ না জরুরি কথা বলার।

রাদিনের কথা শুনে হেসে দিশা বলল, এতক্ষণে এসব না খাইয়ে কথাটা বললেই পারতে।
-মুখ শুকনো লাগছিল তোমার। তাই আগে খাবার আনলাম।
-আচ্ছা এইবার তো বলো?

একটু থেমে রাদিন বলল, বিয়ে করবে আমায়?

দিশা চমকায়। ও অবাক হয়ে বলল, বিয়ে করব বলেই তো একটা সম্পর্কে জড়িয়েছি তাই না?
-আমি দ্রুত করতে চাই বিয়ে।

দিশা কিছু বুঝতে না পেরে বলল, বাসায় প্রস্তাব দিতে চাইছ?
-না। আপাতত কাউকে না জানিয়ে।

বিস্ময় এর শেষ পর্যায়ে গিয়ে দিশা বলল, কিন্তু কেন!
-আমি তোমাকে হারাতে চাই না তাই।
-আমি হারাচ্ছি কই? আমার বাসায় কোনো ঝামেলা নেই। তবে হঠাৎ এসব বলছ কেন?
-আমার বাসায় আছে।
-মানে?

রাদিন ওর বাসায় ঘটে যাওয়া সব কথা খুলে বলে দিশাকে। ও সব শুনে বলল, বিয়ে করলে কী সমাধান হবে? তাও গোপণে!
-আমি চাই বিয়েটা করে ওদের সামনে তোমাকে নেব। এর আগে হলে অহেতুক দুই পরিবারে ঝামেলা হবে। ওদের জন্য না আবার তোমার পরিবারও নারাজ হয়ে যায়।

এই কথাটি শুনে ঘাবড়ে যায় দিশাও।
ওর ভাজ করা কপাল দেখে রাদিন বলল, তুমি সময় নাও দিশা। আমাদের দু’জনের ভালোবাসা জিততে হবেই!

পাত্র পক্ষের সামনে গুটিসুটি মেরে বসে রয়েছে আইরা। ওর এসব কিছুই ভালো লাগছে না। তবুও সামনে থাকা মানুষটির দিকে চোখ যায় ওর। ফুয়াদের বিষণ্ণতা যেন বুঝতে পারে আইরা। মেঝে থেকে চোখ সরাচ্ছেই না ও। একবারও আইরার দিকে তাকিয়েছে কিনা সন্দেহ। ওর চেয়েও কী বেশি বিষণ্ণ ফুয়াদ! তা কীভাবে হয়! ছেলেরা তো আর মেয়েদের মতন অসহায় হয় না। ওদের জোর করে পাত্রী দেখাতে আনতে হয় না। রোজগার করে খাওয়াতে পারে বলে ওদের কদর বেশি। এমনটাই মনে করে আইরা।

ফুয়াদ দিশা ও রাদিনকে দেখে আবারও বিষণ্ণ হয়ে পড়েছে। কেন দিশাকে নিজের করে পেল না ভাবতেই মনের মাঝে কেমন করে উঠে ওর। নাহ! দিশার ভাবনা আর ভাবতে চায় না ও। ওকে পুরোপুরিভাবে ভুলে যেতে হবে। এই ভেবে আইরার দিকে না তাকিয়েই ও সবার উদ্দেশ্যে বলল, আপনাদের মেয়েকে আমার ভালো লেগেছে। উনার মত থাকলে বিয়ের কথা এগুতে পারেন।

আলেয়া খাতুন বললেন, আলহামদুলিল্লাহ! আইরা তো তোমার ছবি দেখেই পছন্দ করে ফেলেছে। এখন বাকিটা তোমার থেকে শুনে শান্তি পেলাম। তবে ঠিক করে নিই বিয়ের তারিখ?

ফাতেমা বেগম ও ফানজিয়াও বেশ খুশি হয়ে তারিখ ঠিক করতে রাজি হয়ে যায়। মা এর মিথ্যে শুনে আইরা হতাশ হয়ে ফুয়াদের দিকে তাকায়। ফুয়াদ অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে আছে। আইরার দিকে একবার তাকালেই ও বুঝতো, ওর দুচোখ টলমলে। চোখ যে মনের কথা বলছে। বলছে ও এই বিয়েতে রাজি নয়! আর এটি জানানো প্রয়োজন ফুয়াদকে।

ড্রয়িংরুমে বিয়ের আয়োজন নিয়ে সবাই কথা বলছে। আইরাকে নিয়ে ওর রুমে আসে আনতারা। আইরা বলল, ছেলের সঙ্গে আমার একবার আলাদা কথা বলতে দিলে ভালো হয়। চিনিই না একজন আরেক জনকে। এভাবে বিয়ে করা যায় নাকি?
-আমি আর আনিয়া এভাবেই করেছি। মা বাবার পছন্দে। তবে তোর কী সমস্যা!
-তোমাদের তো মত নিয়েই বিয়েতে হ্যাঁ বলেছিল।
-আমাদের হাবভাব তোর মতো ছিল না।

নিশ্চুপ হয়ে যায় আইরা। আনতারা বের হতেই ও ফোন দেয় বান্ধবীকে। সব ওকে জানাতেই অর্না বলল, বিয়েটা করে ফেল। তোর হিসাব অনুযায়ী এখনো প্রেগ্ন্যাসির শুরুর দিক! ফুয়াদও কিছু বুঝবে না। বাচ্চা ওর বলে চালিয়ে দিবি।
-কী বলছিস!
-তুই আমি আর তোর ওই প্রিন্সের বাচ্চা ছাড়া এসব আর কেউ জানে না। তাহলে কিসের রিস্ক বল?
-এই ছেলেটাকে ঠকাব আমি!
-মা বাবাকে ঠকিয়ে এত বড়ো কাণ্ড ঘটালি। আর এ কে চিনিসই না ভালো করে।
-তবুও…
-দেখ! নিজের সুখের জন্য স্বার্থপর হতেই হয়। তুই এবরশন কর নাহয় বাচ্চা নিয়েই বিয়েটা কর কাউকে না জানিয়ে।

অর্নার কথা শুনে গভীর ভাবনায় পড়ে যায় আইরা। বাচ্চাকে হারাতে চায় না ও। বাচ্চার কথা না জানিয়ে বিয়েটা করা কী ঠিক হবে! নাহলে আর কিইবা করবে ও! অর্নার কথা কী মেনে নেবে আইরা?
.
চলবে