যে গল্পের নাম ছিলনা পর্ব-১৮+১৯+২০

0
392

#যে_গল্পের_নাম_ছিলনা
-Farhina Jannat

১৮.

জঙ্গল শেষ হয়নি, কিন্তু আর সামনে এগোনোর উপায় নেই। বিশাল একটা কাঁটাতারের বেড়া সিদ্রার সকল আশায় জল ঢেলে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে। চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছে করছে ওর, কিন্তু সেই শক্তিটুকুও অবশিষ্ট নেই। এখন কি করব আমি! কিচ্ছু বুঝতে পারছেনা সিদ্রা, কোন আশার আলো দেখতে পাচ্ছেনা। ঠিক এইসময় কেউ একজন ওর কাঁধে হাত রাখলো, চমকে উঠে পেছনে তাকাল সিদ্রা।

খালা দাঁড়িয়ে আছে শক্তমুখে। ভয় পেয়ে গেল সিদ্রা, আবার বন্দী ঘরে ফিরে যাওয়ার কথা ভাবতেই ইচ্ছাশক্তির শেষ বিন্দুটাও ফুরিয়ে গেল, মাথাটা ঘুরে উঠল ওর। তাড়াতাড়ি করে ধরে ফেলল খালা। আতঙ্কিত দৃষ্টিতে তাকাল সিদ্রা। খালা ওকে আলতো করে জড়িয়ে ধরল। ভয় কেটে গিয়ে যেন খালার মধ্যেই আশ্রয় খুঁজে পেল সিদ্রা। কেঁদে উঠল ও, ব্যর্থতার গ্লানিগুলো বেরিয়ে এল চোখের জল হয়ে। সিদ্রার পিঠে হাত বুলাতে থাকল খালা, যেন অভয় দিচ্ছে ওকে।

কান্নার দমক কমলে চোখ মুছিয়ে ওকে শান্ত করল। তারপর একটা প্লাস্টিকের টিফিন বাটির মুখ খুলে ওর হাতে দিল খালা। ভেতরে বিস্কিট ছিল। কয়েকটা বিস্কিট আর পানি খেয়ে শান্ত হয়ে খালার দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকাল সিদ্রা।

খালা ওকে ইশারায় বলতে শুরু করল, আমি বলেছিলাম না, এখান থেকে পালানো সম্ভব না। কয়েকদিন ধরে তোমার আচরণ দেখে আমি বুঝেছি যে তুমি পালাতে চাও। সেজন্যই তোমাকে বুঝানোর জন্য আজকে পালানোর সুযোগ করে দিয়েছি। হা হয়ে গেল সিদ্রা। আর তারপর তোমাকে অনুসরণ করেছি, বলে চলল খালা। তোমার নিজে থেকে থেমে যাওয়ার জন্য অপেক্ষা করছিলাম।

“ক-ক্কিন্তু আপনাকে তো ঘরে আটকে রেখে এসেছিলাম, আপনি কিভাবে বের হলেন?”

খালা ইশারায় বুঝিয়ে দিল, উনি আগে থেকে বাইরেই ছিল, কাঁথার নিচে বালিশ আর কাপড় দিয়ে রেখেছিল ওকে ভুল বুঝানোর জন্য। তারপর ওকে জিজ্ঞেস করল খালা, এখন কি তুমি বুঝেছো যে আমি ঠিক বলেছি?

কোন উত্তর দিলনা সিদ্রা। একদিক দিয়ে হয়তো হয়নি, অন্যদিক দিয়ে হবে, মনে মনে ভাবল ও।

ঠিক আছে, তুমি এখনো বিশ্বাস করছোনাতো আমার কথা, এসো আমার সাথে। এই বলে খালা ওকে ধরে উঠাল। তারপর ওকে নিয়ে কাঁটাতারের বেড়া বরাবর হাঁটতে লাগল সামনের দিকে। একটু আরাম করার পর আর পেটে খাবার পড়ার কারণে এখন হাঁটতে আগের মত আর কষ্ট হচ্ছেনা সিদ্রার। কিন্তু বুঝতে পারছেনা খালা কোথায় নিয়ে যাচ্ছে ওকে। কাঁটাতারের বেড়ার গায়ে কিছুক্ষণ পর পর সাইনবোর্ড ঝুলানো, “জনসাধারণের প্রবেশ নিষেধ, আদেশক্রমে বন বিভাগ”। বেশ খানিকক্ষণ হাঁটার পর জঙ্গল থেকে হঠাৎ বেরিয়ে এল ওরা।

সামনের অপার সৌন্দর্যের দিকে তাকিয়ে বিস্ময়ে হা হয়ে গেল সিদ্রা। চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে রইল ও আর অবশেষে বুঝতে পারল, ও কোথায় আছে।

সিলেট! আমি সিলেটে! লোকটা আমাকে ঢাকা থেকে সিলেটে এনে রেখেছে? ভেবেই মাথা চক্কর দিচ্ছে সিদ্রার। সামনে যতদূর চোখ যাচ্ছে, উঁচুনিচু পাহাড় আর তার গায়ে আঁকাবাঁকা চা গাছের সারি, অপূর্ব দৃশ্য। এরকম জায়গা বাংলাদেশে একমাত্র সিলেট ছাড়া আর কোথাও নেই, ভাল করেই জানে সিদ্রা।

কাঁটাতারের বেড়া এখানে বাম দিকে বেঁকে গিয়েছে। আর ওরা দাঁড়িয়ে আছে একদম পাহাড়ের কিনারে। খালা ওকে নিচের দিকে তাকাতে ইশারা করল। দেখল সিদ্রা, শুধু গাছ আর ঝোপে ঢাকা পাহাড়ের খাড়া দেয়াল। নিচে নামার মত কোন উপায় নেই। খালার দিকে তাকাল ও। খালা ওকে বুঝিয়ে বলল, এখানে সবদিকেই এই একই অবস্থা। যেখান দিয়েই নামতে যাক, পা হড়কে পড়ে গিয়ে মৃত্যু ঘটবে ওর। হতাশ হয়ে বসে পড়ল সিদ্রা।

“তাহলে কি করব আমি? এই জঙ্গলের ভেতরেই কাটাব বাকি জীবন?”

নীরব সম্মতি জানাল খালা।

“কিন্তু কেন? যে অপরাধ আমি করিইনি তার জন্য আমাকে কেন শাস্তি পেতে হবে? কেন কেন কেন?” আরও একবার চিৎকার করে কেঁদে উঠল সিদ্রা। খালা ওকে কাঁদতে দিল।

“এই যে আপনি, আপনি আমাকে বলেন, আমার অপরাধ কি? আমি এসব করিনি। আমি ওই ছেলেটার নাম পর্যন্ত জানিনা, প্রেম করে ধোঁকা দেওয়া তো অনেক দূরের কথা!”

খালা মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে, কোন উত্তর নেই তার কাছে। চুপ করে থাকতে দেখে উঠে দাঁড়িয়ে দুই হাতে খালার কাঁধ ধরে ঝাঁকি দিল সিদ্রা, চিৎকার করে বলল, “কথা বলছেননা কেন?”

খালা ইশারায় বোঝাল যে, উনি কিছু বলতে পারবেননা। যা জানার, বোঝার, সব ওই লোকের হাতে। উনার কিছুই করার নেই। হাত দুটো খসে পড়ল সিদ্রার। ব্যালেন্স হারিয়ে পড়ে যাচ্ছিল ও, খালা সামলালো ওকে। সিদ্রাকে জড়িয়ে ধরে বসে রইল খালা, ওকে স্বাভাবিক হওয়ার সময় দিচ্ছে যেন। সিদ্রা শূন্য দৃষ্টিতে চেয়ে রইল সামনের দিকে, সামনের এই অনাবিল সৌন্দর্য এখন আর ওকে মুগ্ধ করতে পারছেনা।

***
সন্ধ্যার আগ দিয়ে ওরা আবার চালাঘরে ফিরে আসল। প্রথমে ওরা ফিরে গিয়েছিল ওই কাঁটাতারের বেড়ার কাছে, যেখানে সিদ্রা আটকে গেছিল। সেখানে থেকে ওদের জিনিষপত্রগুলো নিয়ে ফিরে এসেছে এখানে। আশ্চর্যের বিষয় হল, ওখান থেকে ফিরে আসতে বেশি সময় লাগেনি ওদের। সিদ্রার মনে হয়েছে এক ঘণ্টা হবে কি হবেনা। তার মানে জঙ্গলের মধ্যে ঘুরে ঘুরে আমি মাত্র ওইটুকু পথ গিয়েছি অর্ধেক দিন পার করে! এক জায়গাতেই ঘুরেছি বারবার!! অথচ মনে করেছি কতদূর চলে এসেছি আমি!! পণ্ডশ্রম হয়তো একেই বলে, ভাবল সিদ্রা।

খালা ওকে ঘরে ঢুকিয়ে দিলে মেঝেতেই গুটিসুটি মেরে পড়ে রইল সিদ্রা। আজকের ব্যর্থতা ওর সকল প্রাণশক্তি যেন শুষে নিয়েছে। এমনকি নামাজের কথাও মনে পড়লনা ওর। চোখের পানিও যেন ফুরিয়ে গেছে। ঘরের অন্ধকারের সাথে হতাশার অন্ধকার আজ মিলেমিশে একাকার। ঘুম আসার কথা ছিলনা, কিন্তু শূন্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতে থাকতে আর ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক শুনতে শুনতে কখন যেন দুচোখ বুজে এল সিদ্রার।

কে যেন খুব সুন্দর করে কুরআন তেলাওয়াত করছে। কান পাতলো সিদ্রা, বোঝার চেষ্টা করল কোন সূরা পাঠ করছে। শুনলো লোকটা তেলাওয়াত করছে, “লা তাক্বনাতু মির রহমাতিল্লাহ” একই আয়াত সুর করে বারবার পড়ছে লোকটা। এত সুন্দর সে তেলাওয়াত যে অন্তর শীতল হয়ে যাচ্ছে, খালি শুনতেই ইচ্ছে করছে। শুনেই যাচ্ছে ও, শুনেই যাচ্ছে। হঠাৎ চোখ খুলে গেল সিদ্রার।

স্বপ্ন দেখছিলাম আমি! কিন্তু কানে এখনো ভাসছে সেই তেলাওয়াত।

“তোমরা আল্লাহ্‌র রহমত হতে নিরাশ হয়োনা”!!

সুবহানআল্লাহ! আল্লাহ আমাকে এতবড় সান্ত্বনা দিয়েছেন। অপরিসীম আনন্দে সেজদায় পড়ে গেল সিদ্রা। আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতায় দুচোখ পানিতে ভরে গেল ওর। সেই সাথে মনে পড়ে গেল, আজ সারাদিনের এসব ঘটনার চক্করে সব নামাজ কাযা হয়ে গেছে। আল্লাহ্‌র সামনে লজ্জায় মাটিতে মিশে যেতে ইচ্ছে করছে সিদ্রার। ছি ছি ছি! কিভাবে পারলাম আমি সারাদিন নামাজ না পড়ে থাকতে, আবার এখন কাজা আদায় না করে ঘুমিয়ে গেছি। তড়িঘড়ি করে উঠে যথারীতি জগের পানি দিয়ে অজু করে অশ্রুধোয়া নয়নে আল্লাহর সামনে দাঁড়িয়ে গেল সিদ্রা।

#যে_গল্পের_নাম_ছিলনা
-Farhina Jannat

১৯.
চোখটা খুলেই সিদ্রা বুঝলো, সামনের কটা দিন খারাপ যাবে। সামনেই আলমারিতে ঠেস দিয়ে লোকটা দাঁড়িয়ে আছে। কিন্তু, লোকটার ডাক শুনে ঘুম ভেঙেছে এমন তো মনে হচ্ছেনা। কতক্ষণ হল এসেছে লোকটা! খালার মত ধড়মড় করে উঠে বসল সিদ্রা, মাথায় হাত দিল ওড়না ঠিকঠাক আছে কিনা দেখার জন্য। খালা যদি কালকের ঘটনা বলে দিয়ে থাকে, আমার কপালে দুঃখ আছে, ভাবল সিদ্রা।

“বাইরে আয়” বলে ঘর থেকে বের হয়ে গেল লোকটা।

তাড়াহুড়ো করে নামতে গিয়ে মনে হল, ধুর! এত বাধ্যতা দেখানোর কি আছে, বলে দিলে দিবে। এমনিতেই তো এত টর্চার করছে, এর বেশি আর কি করবে?

“কথা কানে গেলনা? দেরী হচ্ছে কেন?”

লোকটার হুঙ্কার শুনেও ধীরেসুস্থে নেমে দরজার কাছে গিয়ে হালকা ঠেস দিয়ে দাঁড়াল সিদ্রা।
লোকটা বাইরে পায়চারি করতে করতে খালাকে বলল, “তুমি তো ওকে আরাম দিয়ে দিয়ে অলস বানিয়ে দিয়েছো, খালা! আমার কথা মেনে চলছোনা কিন্তু তুমি। তুমি কি চাচ্ছো আমি তোমার জায়গায় অন্য কাউকে এপয়েন্ট করি?”

সজোরে মাথা নাড়লো খালা, কিন্তু সিদ্রার চেহারা ভাবলেশহীন, খেয়াল করলো লোকটা।
আর সিদ্রা ভাবছে, লোকটাকে দেখে এক্সট্রা রাগ করে আছে বলে মনে হচ্ছেনা। খালা মনে হয় কিছু বলেনি। থ্যাংকইউ খালা, মনে মনে বলল ও।

“আমি বরং তোমার জায়গায় হাসানকে এপয়েন্ট করি, ছেলেটা খুবই ভাল, আমার আদেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করে, কোন চিন্তা করতে হবেনা আমার”

মুখ ফ্যাকাশে হয়ে গেল সিদ্রার।

“ক-ক্কি বলছেন কি আপনি? এই জঙ্গলের মধ্যে আমাকে একটা ছেলের কাছে রাখবেন?” মুখ দিয়ে কথাগুলো বের হয়ে যেতেই আফসোস হল ওর, ইশ! নিজের দুর্বলতা নিজেই প্রকাশ করে দিলাম!

“কেন? সমস্যা কি? তোর বাকি কিউরিওসিটিগুলোও নাহয় ওকে দিয়ে মিটিয়ে নিবি!”

লোকটার নোংরা ইঙ্গিত বুঝতে একটুও কষ্ট হলনা সিদ্রার। রাগী চোখে তাকাল ও লোকটার দিকে। জবাব দিতে গিয়েও থেমে গেল, বেশি কথা বলতে গেলে হিতে বিপরীত হতে পারে।

লক্ষ্য করছিল লোকটা ওর প্রতিক্রিয়া, বলল, “আর তুই যদি সেটা না চাস, তাহলে খালার ভালমানুষীর সুযোগ নেয়া বন্ধ কর। তুই কি করিস না করিস, আমি কিন্তু সবই জানি। বেশি বাড়াবাড়ি করলে…… হঠাৎ করে একদিন দেখবি, খালার জায়গায় হাসান বসে আছে”
সিদ্রা ভয়ঙ্কর বিষয়টা কল্পনাতেও আনতে চাইলোনা। আল্লাহ্‌ আমাকে নিরাশ হতে নিষেধ করেছেন। বেশ, আমি এখন লোকটার কথামতই চলবো। তারপর সুযোগ বুঝে আবার পালানোর চেষ্টা করব, সিদ্ধান্ত নিল সিদ্রা।

খালা ওর হাতে এসে কিছু একটা ধরিয়ে দিতেই চিন্তার জ্বাল ছিন্ন হল সিদ্রার। তাকিয়ে দেখল, একটা লন্ড্রি বাস্কেট ভরা কাপোড়চোপড়। জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে খালার দিকে তাকাতেই জবাব আসল লোকটার কাছ থেকে, “আমার জামা কাপড় গুলো ভাল করে ধুয়ে দে”

সিদ্রার ইচ্ছে করল, বাস্কেটটা ছুঁড়ে মারে লোকটার মাথায়। কিন্তু বেচারি সিদ্রা! শুধু একটা অগ্নিদৃষ্টি নিক্ষেপ করেই ক্ষান্ত হতে হল ওকে। ডিটারজেন্ট দিয়ে কাপড়গুলো ভিজিয়ে পানির ড্রামের দিকে এগোতেই লোকটা এসে ড্রামটা উলটে দিল। এমনভাবে ফেলল যে পানি তো পড়ে গেলই, ছলকে গিয়ে সিদ্রার নিচের দিকটাও অনেকটা ভিজে গেল।

“এটা কি করলেন আপনি?” রাগী স্বরে বলল সিদ্রা।

“আমি চাইনা বাসি পানিতে আমার পোষাক ধোয়া হোক” বলে আগের মত করে টেবিলের উপর পা তুলে চেয়ারে বসে পড়ল লোকটা।

রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে পানি আনার বালতিটা নিয়ে সিদ্রা ঝর্ণার দিকে রওনা হল। লোকটার ইশারায় খালাও পিছু নিল ওর।

তিন বালতি পানি এনে এতগুলা পোষাক ধুয়ে নেড়ে দেয়ার পর সিদ্রার শরীরে আর কোন শক্তি অবশিষ্ট নেই। ধপ করে বারান্দায় বসে পড়ল ও। এদিকে পানিতে আর ঘামে ভিজে নিজের অবস্থা তো পুরো খারাপ, কিন্তু গোসল করার জন্যে পানি আনতে যেতে হবে ভাবতেই গোসলের ইচ্ছা উবে যাচ্ছে। লোকটার উপরে ওর রাগ চরমে পৌঁছে গেছে, সারাক্ষণ সামনে বসে থেকেছে বদমাশটা। না পেরেছে মাথার কাপড় নামাতে, না পেরেছে জামার হাতাটা একটু উপরে তুলতে। সুখের ব্যাপার এটুকুই যে খালা রান্না বসিয়েছে, ওকে অন্তত আর ওই কাজটা করতে হচ্ছেনা।

চেয়ার ছেড়ে উঠে দুহাত উপরে তুলে আড়মোড়া ভাঙল লোকটা। বলল,
“খাওয়ার আগে গোসলটা সেরে ফেলি” সিদ্রার দিকে তাকিয়ে বলল, “যা, আমার গোসলের জন্য পানি নিয়ে আয়”

জ্বলন্ত আগুনে যেন ঘি পড়ল সিদ্রার, “পারবোনা আমি। ড্রামের পানিটা উলটে দেবার আগে এটা ভাবা উচিত ছিল। নিজের গোসলের পানি আনার শক্তি নাই, আর উনার জন্য পানি এনে দিচ্ছি, হুহ!”

লোকটা হা হয়ে গেল, এমন জবাব মনে হয় আশা করেনি। কিন্তু পরক্ষণেই সামলে নিয়ে বলল, “বেশি কথা বলে আমার মাথা গরম করিসনা বলছি। চুপচাপ বালতি নিয়ে হাঁটা শুরু কর”

সিদ্রা তাও উঠছেনা দেখে সত্যি সত্যি রেগে গেল লোকটা। চোখ পাকিয়ে বলল, “উঠবি, নাকি শিকল দিয়ে টেনে নিয়ে যাবো?”

রাগের সাথে উঠে বালতি নিল সিদ্রা। এবার লোকটা নিজেই ওর সাথে চলল পানি আনতে।

*****
বালতি ভরে উপরে উঠতেই দেখল লোকটা শার্ট এর বোতাম খুলছে।

“কি করছেন কি আপনি?” আঁতকে উঠে বলল সিদ্রা।

“আমি ঝর্ণাতে গোসল করব। তুই পানি নিয়ে যা। খালার রান্না শেষ হলে আমার জন্য তোয়ালে আর শুকনা কাপড় নিয়ে আসবি”

লোকটা ততক্ষণে শার্ট প্রায় খুলে ফেলেছে, তাড়াতাড়ি করে উল্টো দিকে ঘুরে গেল সিদ্রা। যা ইচ্ছা তাই করুক, আমার কি, বিড়বিড় করে ফিরতি পথ ধরল ও। আহ! এখন এই পানি দিয়ে আমি গোসল করতে পারবো, ভাবতেই মনটা খুশি হয়ে গেল সিদ্রার।

দিনের পর দিন যে মাত্র এক বালতি পানি দিয়ে গোসল করা যায়, সিদ্রা এটা স্বপ্নেও ভাবতে পারতোনা। কিন্তু এখন এটুকুই অনেক মনে হয়। চুলে চিরুনি পড়েনি কতদিন, তেল শ্যাম্পু তো দূরের কথা, ভয়ে চুলে হাতই দেয়না সিদ্রা, সবসময় খোপা করে রাখে। আর কয়দিন পরে মনে হয় সন্ন্যাসীদের মত জটা লেগে যাবে, কথাটা মনে হতেই হাসি পায় সিদ্রার। যেখানে জীবনের ঠিক নেই, সেখানে চুলের চিন্তা করছি আমি!

একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে উঠে পড়ল লোকটার হুকুম তামিল করতে। সদ্য শুকানো একটা গেঞ্জি-প্যান্ট, তোয়ালে আর আবার পানি আনার জন্য বালতি নিয়ে ঝর্ণার কাছে আসল সিদ্রা। কিন্তু লোকটাকে কোথাও দেখতে পেলনা।

#যে_গল্পের_নাম_ছিলনা
-Farhina Jannat

২০.
ধুর! আমাকে কাপড় আনতে বলে উনি আবার কোথায় গেলেন। তখনি কবরটার কথা মনে পড়ল সিদ্রার। নিঃশব্দে এগিয়ে টিলার পাশ দিয়ে উঁকি দিল ও। যা ভেবেছিল তাই, লোকটা বসে আছে কবরের পাশে। চোখে শূন্য দৃষ্টি, মুখটা বিষণ্ণতায় ভরা। কান্নার চিহ্ন ফুটে আছে চোখেমুখে।

প্রথমবারের মত লোকটাকে ভালমতো খেয়াল করার সুযোগ পেল সিদ্রা। মাথায় ঈষৎ কোঁকড়ানো অবিন্যস্ত চুল, মায়াবী দুটো চোখ, খাড়া নাক, ঠোঁট দুটো না পাতলা না পুরু। কয়েকদিনের শেভ না করা খোঁচা খোঁচা দাঁড়ি-গোঁফ মুখটাকে আরো বিষণ্ণ করে তুলেছে। এত মায়াকাড়া একটা চেহারা, এখন দেখলে কে বলবে, এই লোকই ওর সাথে এত খারাপ আচরণ করে? চুল-টুল কিছুই তো ভিজে নেই, তার মানে গোসল করেনি লোকটা। ইশ! এতক্ষণ ধরে এখানে বসে আছে, নিশ্চয় ভাইকে অনেক মিস করছে।

লোকটার কষ্ট যেন সিদ্রাকেও স্পর্শ করল। নিজের অজান্তেই বসে গেল ওখানেই, চেয়ে রইল লোকটার দিকে। ভাবতে লাগল সিদ্রা, লোকটা ওকে যতই কষ্ট দেক, তার পেছনে তো একটা কারণ আছে। নিজের ভাইয়ের এমন অবাঞ্ছিত মৃত্যু, আসলেই কি মেনে নেয়া যায়, না সহ্য করা যায়! আর সেটা যদি কোন মেয়ের জন্য হয় তাহলে তার প্রতি যে এরকম রাগ হবে, সেটাই তো স্বাভাবিক। আমারওতো বোন আছে, আল্লাহ না করুক ওর যদি এমন কিছু হত, আমি কি পাগল হয়ে যেতামনা? যে এর জন্য দায়ী, আমার কি তাকে খুন করতে ইচ্ছে করতোনা?

ব্যাপারটা অনুভব করে লোকটার জন্য অসম্ভব মায়ায় ভরে গেল সিদ্রার মন। সারাদিনের সব রাগ যেন হাওয়ায় মিলিয়ে গেল। মনে মনে বলল ও, শুধু যদি জানতে পারতাম, সেই মেয়ের জায়গায় আমি কিভাবে ঢুকে গেলাম!

“তুই এখানে বসে বসে কি করছিস?” চমকে তাকাল সিদ্রা, ঢোক গিলল। লোকটা কখন ওর সামনে এসে দাঁড়িয়েছে বুঝতেও পারেনি।

“আ-আমি…. আমি আপনার জামাকাপড় নিয়ে এসেছিলাম” হাত দিয়ে পোষাকগুলো তুলে ধরল উপরে।

“তো, সেগুলো নিয়ে এখানে বসে আছিস কেন?” কাপড়গুলো নিয়ে ভ্রু নাচাল লোকটা।

“আপনি চুপ করে বসে ছিলেন, ডাকব কিনা বুঝতে পারছিলাম না” একটু থেমে আবার বলল, “আর মনে হচ্ছে আপনি গোসলও করেননি, তাই…….”

লোকটা ওর থেকে চোখ ফিরিয়ে ঝর্ণার দিকে তাকাল, বিষণ্ণ কন্ঠে বলল, “পারলামনা রে…. ওর এত পছন্দ ছিল জায়গাটা…….ওকে ছাড়া কোনদিন একা নামিনি আমি…….. কত সাঁতার কেটেছি দুজনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা…… অথচ আজ…….” গলা কেঁপে গেল লোকটার।

“তুই চলে যা এখান থেকে” স্বর বদলে গেল লোকটার, “আজকের এই দিনটা আমাকে তোর জন্য দেখতে হচ্ছে, এটা মনে হলেই মাথা গরম হয়ে যাচ্ছে আমার। কিন্তু তোকে টর্চার করার মুড নাই আমার এখন। সো, নিজের উপর কন্ট্রোল হারানোর আগেই দূর হয়ে যা আমার চোখের সামনে থেকে” ওর দিকে না তাকিয়েই শক্ত কন্ঠে বলল লোকটা।

“কিন্তু আমি তো…….” থামিয়ে দিল ওকে লোকটা।

“কিছু করিনি, তাইতো!” বাঁকা একটা হাসি ফুটে উঠলো লোকটার ঠোঁটের কোণে, কিন্তু হাসির থেকে বেশি কান্নার মত দেখাল চেহারাটা, “অন্তত এই মুহূর্তে তোর মিথ্যে কথাগুলো শোনার বিন্দুমাত্র ইচ্ছা বা ধৈর্য কোনটাই নাই আমার, নিজের ভালো চাইলে প্লিজ চলে যা”

নীরবে সরে এল সিদ্রা, ধীরপদে ঝর্ণা থেকে বালতি ভরে রাস্তার দিকে এগোল। জানেনা কেন, বুকটা বড্ড ভারী লাগছে ওর। চোখ থেকে গড়িয়ে পড়া দুফোটা পানি মুছে ফেলল হাতের চেটো দিয়ে।

*****
পরের দিনগুলো কাটতে লাগল দ্রুত, প্রায় একই নিয়মে।

ঝর্ণা থেকে পানি আনতেই অর্ধেক দিন চলে যায় সিদ্রার। কিন্তু ওই জায়গাটা সিদ্রার এত পছন্দের যে এই একটা কাজ করতে ওর খারাপ লাগেনা। সাধারণ কাজের পানি জলাশয় থেকে, আর খাওয়ার আর রান্নার পানি সরাসরি ঝর্ণা থেকে নিতে হয়। পিছল পাথরের উপর দিয়ে পা টিপে টিপে হেঁটে গিয়ে ঝর্ণার ধারা থেকে পানি ধরে আনা যে এত মজার একটা কাজ, যে না করেছে সে বুঝবেনা।

একদিন তো পিছলে পড়েই গিয়েছিল সিদ্রা। খালা সেদিন বাঁচিয়েছিল ওকে। সাঁতার জানেনা শুনে খালা ওকে প্রতিদিন সাঁতার কাটা শেখাচ্ছে, এখন মোটামুটি পারে। ঝর্ণার পানিতে পা ডুবিয়ে চুপচাপ বসে থাকা, আর মাঝেমাঝে টিলার উপর দাঁড়িয়ে সূর্যোদয় উপভোগ করাও সিদ্রার কাছে হয়ে দাঁড়িয়েছে নেশার মত। ও মাঝে মাঝে ভাবে, এ ঝর্ণাটা ওর কাছে সঞ্জীবনী ধারার মত, এটা এখানে না থাকলে কিভাবে বাঁচত ও!

তারপর আবার রান্না করা, বাসন মাজা, গোসল-নামাজ, দম ফেলার ফুরসৎ পায়না সিদ্রা। এর সাথে আবার প্রতিদিন কোথেকে এক গাট্টি করে কাপড় নিয়ে আসে খালা, সেগুলো ধুতে হয় ওকে, লোকটার হুকুম।

তবে খালা ওকে সাহায্য করে সব কাজে, পারলে সবটাই করে দেয়, হয়তো তাকে সেবা করে সুস্থ করার কৃতজ্ঞতা! কিন্তু বুড়ো মানুষটার জন্য মায়া লাগে সিদ্রার, তাই উনাকে সবটা করতে দিতে খারাপ লাগে ওর। হাজার হোক, উনিও তো ওর জ্বরের সময় ওর মায়ের মত সেবা করেছেন। আর তার সাথে খালার জায়গায় হাসান নামক উপদ্রব চলে আসার ভয় তো আছেই। আর আছে স্বপ্নে শোনা সেই আশ্বাসবাণী, যার কারণেই এত কিছু সহ্য করার মনোবল পাচ্ছে সিদ্রা।

সারাদিন এসব করে এত ক্লান্ত হয়ে থাকে, বিছানায় পিঠ লাগানো মাত্র ঘুমের জগতে হারিয়ে যায় সিদ্রা। সবকিছুই ঠিক থাকে, শুধু মাঝে মাঝে লোকটা এসে অশান্তি বাধায়। কোনদিন হয়তো ধোয়া কাপড় মাটিতে ফেলে দিয়ে আবার ধোয়ানো, কিংবা ভরে আনা পানি ফেলে দিয়ে আবার আনানো। কখনো ওর রান্না করা খাবার কুকুরেও খায়না বলে ফেলে দেয়া, কখনো আবার ওর রান্না করা ভাত তরকারি বেলার পর বেলা ওকেই খাওয়ানো, বাসি গন্ধ হয়ে গেলেও। মোটকথা লোকটা যেন ওকে কষ্ট দেওয়ার নিত্যনতুন উপায় খুঁজে।

এর মধ্যেই সিদ্রা মনে মনে পালানোর নতুন প্ল্যান কষছিল। লোকটা কোনদিক দিয়ে আসে আর যায় এটা খেয়াল করে ও। যদিও এক জায়গা দিয়ে কখনওই ঢুকতে বা বেরোতে দেখেনি, তবুও একটা আন্দাজ ও পেয়েছে। আর এতবার যখন আসা যাওয়া করে, হালকা হলেও রাস্তা একটা থাকবেই। আমাকে শুধু সেটা খুঁজে পেতে হবে, তাহলেই কেল্লাফতে, ভেবেছে সিদ্রা। এখন শুধু সুযোগের অপেক্ষা।

কিন্তু সুযোগ পাওয়াই হয়ে দাঁড়িয়েছে দুষ্কর। খালা ওকে এক মুহূর্ত চোখের আড়াল হতে দেয়না। ঘরে থাকলে তালা দেয়া, আর বাইরে থাকলে তো কথাই নেই। কখনো কখনো খালা অন্য কাজে ব্যস্ত থাকলে আর সিদ্রা ঘরের বাইরে থাকলে শিকল পরিয়ে রাখে ওকে। এতে একটু মন খারাপ হলেও একবার পালাতে গিয়ে খালার বিশ্বাস হারিয়ে ফেলেছে, তাই আর কিছু বলার মুখ নেই ওর।

একদিন বিকেলে ঘরের বাইরে গাছের ছায়ায় খালা ওর মাথায় তেল দিতে বসেছে। খালা ওকে এখন এতই ভালবাসে, চুলে তেল দিয়ে দেয়, শ্যাম্পুর প্যাকেট এনে দেয় সপ্তাহে একবার। প্রথমদিন যখন তেল দিতে বসেছিল, চুল তো ময়লায় পুরা আঠা হয়ে ছিল, তার মধ্যে যে উনি কিভাবে তেল দিয়েছে, সেটা উনিই জানে।

তেল দিতে দিতেই সিদ্রার মনে হল, যথেষ্ট হয়েছে, এবার খালাকে সরাসরি জিজ্ঞেস করব আমি। ঘুরে খালার মুখোমুখি বসে বলল, “খালা, অনেকদিন তো হল। আমি আপনাকে আজ একটা কথা জিজ্ঞেস করব। প্লিজ, আপনি আমাকে সত্যি সত্যি উত্তর দিবেন, কিন্তু তার আগে আপনাকে কিছু কথা বলা দরকার। মনযোগ দিয়ে শুনবেন প্লিজ” একটু থামল সিদ্রা।

“আমি আর আমার বোন সম্পূর্ণ ইসলামিক গন্ডির মাঝে বড় হয়েছি। আম্মু আমাদেরকে ক খ শেখানোর আগে আলিফ বা শিখিয়েছে। আমরা এত ছোটতে কায়দা পড়েছি, যে সেটা পড়ার কথা আমার মনে নেই। সাড়ে তিন বছর বয়সেই মাদ্রাসায় সারাদিন রেখে আসত আম্মু আমাদের। আমরা হাফেযা হয়েছি, মাদ্রাসায় পড়েছি এতগুলো বছর ধরে। ছেলেদের সাথে যে বিনা প্রয়োজনে কথাও বলতে নেই, সেটা আমরা ছোটবেলা থেকেই জানি এবং মানি। আমরা এত ছোট থেকে পর্দা করি যে, এমনকি আমাদের কাজিনরাও আমাদের দেখতে কেমন সেটা বলতে পারবেনা। সেখানে কোন ছেলের সাথে প্রেম করা তো অনেক দূরের কথা। এমনকি আমার আব্বু-আম্মুর এত ইচ্ছে ছিল আমি ডাক্তারি পড়ি, কিন্তু সহশিক্ষার গুনাহর ভয়ে আমি মাদ্রাসায়ই ভর্তি হয়েছি” একটানে এতগুলো কথা বলে দম নিল সিদ্রা।

“এখন আপনিই বলুন খালা, আমার পক্ষে কি এসব করা সম্ভব? আর আমি যদি শয়তানের ফাঁদে পড়ে এমন কিছু করেও থাকতাম, আমি সেটা কেন অস্বীকার করতে যাবো বলেন। আমার কারণে একটা ছেলের প্রাণ চলে গেছে জেনেও আমি অনুতপ্ত না হয়ে অস্বীকার করে যাবো, আমাকে কি আপনার এতটা অমানুষ বলে মনে হয় খালা? দয়া করে কি বলবেন, কিসের ভিত্তিতে আমাকে একিউজ করে আপনারা বন্দি করে রেখেছেন?”

হাততালি দেয়ার শব্দে চমকে উঠলো সিদ্রা, মাথায় ওড়না তুলল তাড়াতাড়ি করে।

“এক্সিলেন্ট! মাইন্ড ব্লোয়িং! খালার ব্রেইনওয়াশ করার প্রচেষ্টাটা দারুণ ছিল” জংগলের ভেতর থেকে কথাগুলো বলতে বলতে বেরিয়ে আসল লোকটা। “কিন্তু স্যরি মিস নটঙ্কি বেগম, আপনার সেন্টিমেন্টাল লেকচার কোন কাজেই আসবেনা”

“আমি কাউকে ব্রেইনওয়াশ করিনি আর লেকচারও দেইনি, যেটা সত্যি সেটাই বলেছি। যেখানে অপরাধীরাও আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ পায় সেখানে আমি তো নিরাপরাধ” শক্ত কন্ঠে বলল সিদ্রা। খালার দিকে তাকাল ও, “আপনাকে আমি যেটা জিজ্ঞেস করেছি, সেটার উত্তর দেন খালা, প্লিজ। আর কেউ কি ভাবল আমার কিচ্ছু যায় আসেনা, আপনি শুধু আপনার কথা বলেন। চুপ করে থাকবেননা, প্লিজ খালা”

খালাকে দেখে মনে হল সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছে, কি বলবে বুঝতে পারছেনা। একবার সিদ্রার দিকে আবার একবার লোকটার দিকে তাকাচ্ছে।

হা হা করে হেসে উঠল লোকটা। “পেয়েছিস উত্তর? তুই কি ভেবেছিলি, একমাসের মধ্যে বিশ বছরের ভালবাসাকে মিথ্যে করে দিবি? নিজের সন্তানের মত ভালবাসে খালা আমাদের। সেই সন্তানের খুনিকে খালা বিশ্বাস করবে, তুই ভাবলি কি করে?” কয়েক কদম হেঁটে সিদ্রার কাছে আসল লোকটা। পেছাল সিদ্রা, গাছের সাথে ধাক্কা খেল।

হঠাৎ কি যেন মনে পড়ল লোকটার, “আর কি যেন বলছিলি, হাফেজা, মাদ্রাসায় পড়া, ব্লা ব্লা ব্লা! তোর ওপর আমার এত রাগের এটাও একটা কারণ। বাবা মার পয়সাগুলো জাস্ট নষ্ট করেছিস। একটা গিরগিটি তৈরি হয়েছিস তুই। সবাই তোকে জানে দুধে ধোয়া তুলসী পাতা বলে আসলে তুই একটা মাকাল ফল। খারাপ মেয়েদের তো চেনা যায় রে, রাস্তায় দাঁড়ায় বলে কিন্তু তোর মত মুখোশধারীদের মানুষ কি করে চিনবে, তোরা তো ওদের থেকেও খারাপ”

সিদ্রা আর কন্ট্রোল করতে পারলো না নিজেকে, ঠাস করে একটা চড় মারল লোকটার গালে। রাগে চোখ দিয়ে যেন আগুন বেরোচ্ছে ওর।

“শয়তান্নি!” বলে চিৎকার দিয়ে সিদ্রার ঘাড় ধরে মাথাটা গাছের সাথে ঠুকে দিল লোকটা। দুচোখে অন্ধকার দেখল সিদ্রা, জ্ঞান হারাল ও। কিন্তু চোখ মেলল সম্পূর্ণ নতুন জায়গায়।

চলবে।