রঙ বেরঙের অনুভূতি পর্ব-০২

0
266

#রঙ_বেরঙের_অনুভূতি
#লেখনীতেঃতানজিলা_খাতুন_তানু

(২)

সুহানির মনে অনেকগুলো প্রশ্ন জমা হয়েছে, তার এই প্রশ্নগুলোর উত্তর পাবে কিভাবে। নোহানের করা এই অদ্ভুত কাজ সুহানির মন-মস্তিস্ককে নাড়িয়ে দিয়েছে। যে দিয়ার জন্য এতকিছু করলো,আর তার জীবনেই সবথেকে বড়ো শত্রু হয়ে গেলো। দিয়া আর সুহানি আজ থেকে সতিন। সুহানি কথাগুলো ভেবেই তাচ্ছিল্যের হাসি হাসলো।

নোহান সুহানিকে গাড়িতে বসতে বলো,সুহানিও তাই করে। নোহান সুহানির দিকে তাকিয়ে গাড়ি চালাতে শুরু করলো।সুহানি জানালার বাইরে তাকিয়ে আগের কথা গুলো ভাবতে লাগলো।

আজ থেকে ২ বছর আগে। দিনটা ছিলো বুধবার,

সুহানি আর দিয়া তখন ফ্যশান ডিজাইনার কোর্সের ফাইনাল ইয়ারের স্টুডেন্ট। ফ্যাশন ডিজাইনারদের কাছে নোহান শিকদার একজন আইকন, সব ডিজাইননাররা চাই নোহান শিকদারের কোম্পানিতে জব করবে,তার জন্য সবাই আপপ্রান চেষ্টা করছে। ইনস্টিটিউটে একটা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে, যেখানে স্বয়ং নোহান শিকদার ৫ জন ডিজাইনারকে বেছে নেবেন এবং তার মধ্যে ১জন শিকাদার ফ্যাশন গ্রুপ অফ ইন্ডাস্ট্রিতে চাকরি পাবে।

সুহানি নিজের প্রোজেক্ট দেখছে, তখনি হতদন্ত হয়ে দিয়া ওর সামনে এসে দাঁড়ালো।

সুহানিঃ কি হয়েছে?

দিয়াঃ আমি কি করবো বুঝতে পারছি না।

সুহানি ভ্রু কুঁচকে তাকালো,দিয়ার গলার স্বরটা ধরা ধরা লাগছে।

সুহানিঃ কি হয়েছে।

দিয়াঃ মায়ের শরীরের অবস্থা খুব খারাপ, ডাক্তার দেখাতে হবে। একটা চাকরি পেলে ভালো হতো।

সুহানি দিয়ার দিকে তাকালো। দিয়াদের পরিবারের অবস্থা খুব একটা ভালো না, মায়ের শরীর অসুস্থ, বাবা নেয়। জমানো টাকা দিয়ার পড়াশোনার পেছনে শেষ করেছে, এখন সংসার চালানো কস্টকর হয়ে উঠেছে। তার সাথে মায়ের ডাক্তারি।

সুহানি দিয়ার অবস্থাটা ভেবে বললোঃ আচ্ছা তুই আমার প্রোজেক্ট টা নিয়ে নে।আমি অন্য একটা সাধারন প্রোজেক্ট করছি।

দিয়াঃ এটা তোর।

সুহানিঃ তো কি হয়েছে, আমি অন্য একটা কোম্পানিতে ঠিক চাকরি পেয়ে যাবো।তুই এটা নে।

দিয়াঃ সত্যি তূই আমাকে দিবি এটা আমার ধারনা ছিলো না। সত্যি তুই আমার সত্যি কারের বন্ধু।

দিয়া খুশিতে সুহানিকে জড়িয়ে ধরলো। সুহানি দিয়ার অগোচরে নিজের চোখের পানিটা মুছে নিলো।নিজের স্বপ্নটা দিয়ার হাতে তুলে দিলো।

অবশেষে সেই দিন হলো। সকলেই ধরে নিয়েছে সুহানিই চাকরিটা পাবে,তবুও ৫এর মধ্যে হবার চেষ্টা করছে। সুহানি স্টেজে আসলো,সবার মাঝেই একটা উত্তেজনা কাজ করছে, কিন্তু সুহানির প্রোজেক্ট দেখে সবার চোখ কপালে। সুহানি খুব সাধারন একটা প্রোজেক্ট তূলে ধরলো।সবার মাঝে একটা গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে, স্যার,ম্যামরাও অবাক। এরপর দিয়া নিজের প্রোজেক্ট সবার সামনে তুলে ধরলো,সকলেই চমকে উঠলো অসাধারণ একটা প্রোজেক্ট।অনুষ্ঠান শেষে,ফাস্ট হয়েছে দিয়া। সুহানি ৫ এর মধ্যেও হয়নি। সুহানি নিজেকে শান্ত রেখে দিয়াকে জড়িয়ে ধরলো।

দিয়াঃ আজকে তোর জন্য এই সম্ভব হলো,আমি সারাজীবন তোর কাছে কৃতজ্ঞ থাকবো।

সুহানিঃ হুম না। বন্ধুত্বের সম্পর্ক মাঝে এসব এলাও না জানিস না।

কেটে যায় কয়েকটি দিন।

দিয়া শিকদার কোম্পানিতে চাকরি করেছে। আর সুহানি একটা অন্য,কোম্পানিতে চাকরি করছে। সুহানিকে চাকরি পাবার জন্য খুব একটা পরিশ্রম করতে হয়নি।সুহানির ডিজাইন দেখে যেকোনো কোম্পানিই ওকে নিয়ে নেবে।

সময়ের সাথে সাথে দিয়া নোহানের প্রিয় হয়ে উঠতে চালু করলো। দিয়া দেখতে খুব মিষ্টি চেহারার।
দিয়ার মা ও কিছুদিন পরে মারা যায়। দিয়া একা হয়ে যায়,দিয়ার একাকিত্ব সময়ে নোহান আর সুহানিকে নিজের পাশে পাই। এই সময়েই দুজনে দুজনকে ভালোবেসে ফেলে। নোহান আর দিয়ার ৬ মাস আগে বিয়ে হয়। আর এখন এসব ঘটনা ঘটে গেলো।

সুহানি ধ্যান থেকে ফিরলো,নোহানের ডাক শুনে।

নোহানঃ চলো।

সুহানি চুপচাপ নোহানের পেছন পেছন ভেতরে গেলো। এটা নোহান আর দিয়ার ভালোবাসার বাড়ি আর আজ থেকে এই বাড়িতে ওকেও থাকতে হবে। সুহানির নিজের উপরে নিজের ঘৃনা হচ্ছে।

সুহানি বাড়ির ভেতরে গিয়ে চারিদিকে দিয়াকে খুঁজতে লাগলো। কিন্তু কোথাও দিয়াকে দেখতে পেলো না। বাড়িতেও কোনো লোক নেয়,যদিও বাড়ির সদস্য সংখ্যা খুব কম। তবে অনেক মেড ছিলো তারাও কেউ নেয়। সুহানি কিরকম জানো রহস্যের গন্ধ পাচ্ছে।

নোহান সুহানিকে একটা ঘরে নিয়ে আসলো।

নোহানঃ আজ থেকে তুমি এখানেই থাকবে।

সুহানি নোহানের কথাকে পাত্তা না দিয়ে বললোঃ দিয়া কোথায়?

নোহানের মুখে আবারো রাগের আভা দেখা গেলো কিন্তু কারনটা কি?

নোহানঃ সুহানি এটা লাস্ট বারের মতো বলছি তুমি দিয়ার নাম উচ্চারন করবে না।

সুহানি অবাক হয়ে বললোঃ দিয়া আমার বান্ধবী আমি কেন দিয়ার নাম নেবো না।

নোহান রাগে সামনে থাকা চেয়ারটা ধাক্কা মেরে বললোঃ বান্ধবী মাই ফুট। তোমার মুখে আর যাই হোক বান্ধবী কথাটা মানায় না।

সুহানিঃ আমি কি করেছি।

নোহানঃ কি করেছো আর কি করোনি তার কৈয়ফিয়ত আমি তোমাকে দেবো না।তবে এটা জেনে রেখো আমার দিয়ার নাম তূমি উচ্চারণ করবে না।

নোহান রাগে গজগজ করতে করতে চলে যায়। সুহানির সবকিছুই মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে। নোহানের হঠাৎ করে রাগের কারন কিছুই বোধগম্য হচ্ছে না।

সুহানির ফোনটা বেজে উঠলো, ও তাকিয়ে দেখলো কলটা মা করেছে।

সুহানিঃ‌ হ্যা মা বলো।

মাঃ তুই কোথায়।বললি এখনি আসছি ,কোথায় গেলি।

সুহানির মনে পড়লো আজকে সকালের ঘটনা।নোহান হঠাৎ করেই ওকে ফোন করে একটা জায়গায় আসতে বললো, সুহানি আসতে চাইনি কিন্তু নোহান জানায় খুব দরকার তাই একপ্রকার জোর করেই আসে,যদি জানতো এরকম কিছু একটা হবে তাহলে কখনোই আসতো না। নিজের উপর রাগ হচ্ছে কেন আস্তে গেলো।

মাঃ কিরে চুপ করে গেলি কেন?

সুহানিঃ মা আমি কখন বাড়ি ফিরতে পারবো জানি না।

মাঃ কেন?তুই এখন কোথায় আছিস।

সুহানিঃ দিয়ার শশুরবাড়িতে।

মাঃ কিন্তু কেন?

সুহানি কোনোরম ভনিতা ছাড়াই বললোঃ কারন নোহান শিকদার আমার স্বামী।

সুহানির মা চমকে উঠলো।অবাকের শেষ পর্যায়ে গিয়ে বললোঃ কি বলছিস এসব।

সুহানিঃ হ্যা মা ঠিক বলছি।

সুহানির মা কিছুটা উত্তেজিত হয়ে পড়লেন। দিয়াকেও উনি ওনার মেয়ের চোখে দেখতেন।

মাঃ তুই কিভাবে পারলি,নিজের বেস্টফ্রেন্ড এর সাথে এরকম করতে। কিভাবে ঠকালি দিয়াকে।

সুহানি বুঝতে পারলো এর মা উত্তেজিত হয়ে পড়ছে। মাকে শান্ত করতে বললোঃ মা চিন্তা করো না। তোমার মেয়ে কোনো অন্যায় করেনি,তোমাকে আমি সবটা বলতে পারবো না।তবে এটা জেনে রেখো তোমার মেয়ে পরিস্থিতির শিকার।

সুহানি ফোনটা কেটে দেয়। কিভাবে তার মাকে বলবে নোহান ওকে জোর করে বিয়ে করেছে। এই বিয়ে করার পেছনে কারনটা আগে জানতে হবে‌।কিছুতো একটা কারন আছে এসবের পেছনে।

সুহানির মা অসুস্থ বোধ করতে থাকে। সুহানির বাবা ওনাকে তাড়াতাড়ি বসিয়ে বললোঃ কি হয়েছে সুহার মা তুমি এতটা উত্তেজিত হয়ে যাচ্ছো কেন?

মাঃ সুহা বিয়ে করেছে।

বাবাঃ কি? কাকে?

মাঃ দিয়ার বরকে।

সুহানির বাবার পায়ের তলার মাটি সরে গেলো। তার মেয়ে শেষমেশ তারই বান্ধবীর বরকে বিয়ে করলো।

বাবাঃ এসব কি বলছো তুমি

মাঃ হ্যা সত্যি বলছি। সুহা নিজে সবটা বললো।

সুহানির মা ওনার স্বামিকে সবটা বললো।সুহানির বাবা নিজের স্ত্রীকে শান্ত রাখার জন্য বললোঃ আমাদের মেয়ে কোনো অন্যায় করতে পারে না। দেখবে এই বিয়ের পেছনে কোনো না কোনো কারন আছে।

মাঃ কি কারন,ওহ তো একজনের সংসার ভাঙছে।

বাবাঃ বাইরে থেকে কাউকে বিচার করা ঠিক না। সত্যি যদি সুহা কোনো দোষ করে থাকে তাহলে আমি সারাজীবনেও ওর মুখদর্শন করবো না। কিন্তু আমার মেয়ের উপর আমার ভরসা আছে।

সুহানির বাবার কথায় ওর মা একটু শান্ত হলেন। কিন্তু মনের মাঝে খুঁতখুঁতানি ঠিক রয়ে গেলো।

ওদিকে,
ফোনের আওয়াজ শুনতে পেয়ে নোহান আবার সুহানির ঘরে ফিরে আসলো।নোহান সুহানির দিকে তাকিয়ে গম্ভীর স্বরে বললঃ কে ফোন করেছিলো।

সুহানিঃ মা।

নোহান সুহানির হাতে থাকা ফোনটা কেড়ে নিলো।

সুহানিঃ কি হলো ফোনটা নিলেন কেন?

নোহান যেটা বললো,তাতে সুহানি চমকে উঠলো।

সুহানিঃ আপনি কেন করছেন আমার সাথে এরকম আমি কি করেছি।

#চলবে…

বিঃ দ্রঃ- ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।