রঙ বেরঙের অনুভূতি পর্ব-০১

0
360

#গল্পঃরঙ_বেরঙের_অনুভূতি
#লেখনীতেঃতানজিলা_খাতুন_তানু

– আই উইল ম্যারি ইউ।

নিজের বেস্টফ্রেন্ডের স্বামীর মুখে এই কথা শুনে চমকে উঠলো সুহানি। ওর মাথা ঘুরছে,নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছে না কি শুনছে।

সুহানি অবাকের শেষ পর্যায়ে গিয়ে বললোঃ আপনি এসব কি বলছেন?

নোহানঃ আমি সত্যি বলছি বলো আমাকে কি বিয়ে করবে?

সুহানিঃ আপনার কি মাথাটা খারাপ হয়ে গেছে,আপনি এসব কি বলছেন,আপনি বিবাহিত।

নোহানঃ কেন আমি বিবাহিত বলে কি আমাকে বিয়ে করা যাবে না?

সুহানিঃ পাগলের মতো কথা বলবেন না। আপনি দিয়ার হাসবেন্ড। আপনি আর দিয়া একেঅপরকে ভালোবেসে বিয়ে করেছিলেন। কেন মাঝ পথে ওর হাতটা ছেড়ে দিচ্ছেন?

নোহানঃ কেন, কিসের জন্য সেসব তোমাকে জানতে হবে না। আজকেই তোমার সাথে আমার বিয়ে হবে আর এই মুহূর্তেই।

সুহানি একপা পিছিয়ে গেলো। নোহান কি পাগল হয়ে গেছে নাকি এসব কথা বলছে। নাকি মজা করছে।

সুহানিঃ দেখুন আমার দেরি হয়ে যাচ্ছে আমি বাড়ি যাবো।

সুহানি চলে যেতে গেলে নোহান সুহানিকে জোড় করে ধরে গাড়িতে বসায়।

নোহানঃ দ্যাখো সুহানি তুমি খুব ভালো করেই আমাকে চেনো।আমি যেটা বলি সেটাই করি,আমার কথা চুপচাপ শুনলে তোমার জন্যই ভালো হবে।

সুহানি্ঃ না শুনলে কি করবেন মেরে ফেলবেন, মেরে ফেলুন?

নোহান বাঁকা হেসে বললঃ আমি তোমাকে কিছুই বলবো না কিন্তু তোমার পরিবারকে শেষ করে দেবো।

সুহানি চমকে উঠলো। নোহান সম্পর্কে ওর খুব ভালো করেই ধারনা আছে। নোহান প্রচন্ড জেদি একটা ছেলে,যা বলে তাই করে।

সুহানিঃ কেন করছেন এমন আমার সাথে?

নোহান সুহানির দিকে তাকিয়ে বললোঃ ভালোবাসি তাই?

সুহানি চমকে উঠে নোহানের দিকে তাকালো। নিজের প্রিয় বান্ধবীর বরের মুখে এমন কথা শুনবে সেটা কখনোই কল্পনা করে নি সুহানি।

✨সুহানি হালদার,বাবা-মায়ের আদরের বড়ো মেয়ে। সুহানি পেশায় একজন ফ্যাশান ডিজাইনার। দেখতে মাশাল্লাহ সুন্দরী। বয়স ২৪। বাবা একজন চাকুরীজীবি,মা হাউস ওয়াইফ। ছোট ভাই ক্লাস ১১ এ পড়ে। সুহানির দূর্বলতা ওর পরিবার।

অপরদিকে নোহান শিকদার সোহানির প্রানপ্রিয় বান্ধবী দিয়ার স্বামী। নোহানের পরিবার বলতে ওর দিদি আর সোনিয়া। বাবা মা কেউ জীবিত নেয়।‌ নোহান একজন বিখ্যাত বিজনেস ম্যান, বয়স ২৯ বছর। নোহানের জন্য মেয়েরা পাগল কেউ রূপের জন্য আর কেউ টাকার জন্য।✨

সুহানি বিরক্ত স্বরে বললোঃ দেখুন আপনার এসব আজগুবি কথা আমার ভালো লাগছে না।

সুহানি আরো কিছু বলতে যাবে কিন্তু নোহান ওকে আটকে দিয়ে বললোঃ চুপচাপ গাড়ি থেকে নামো।

সুহানি গাড়ি থেকে নেমে আরেক দফা শক খেলো‌। কারন তার চোখের সামনে বড়ো বড়ো অক্ষরে লেখা আছে “কাজি অফিস”।

নোহানঃ কি হলো যাবে না কোলে করে নিয়ে যেতে হবে।

সুহানি ঘোরের মধ্যে থেকে বললো হ্যা,তারপরে তার খেয়াল আসলো,আসলে কিসের জায়গায় কি বলেছে। তখন নোহানের দিকে রেগে কটমট করে তাকালো।

নোহান সুহানি কে পাত্তা না দিয়ে বাঁকা হেসে বললঃ চলো।

সুহানি রাগে গজগজ করতে লাগলো। নোহান সুহানিকে একজায়গায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে সুহানিকে কোলে তুলে নিলো।আচমকা আক্রমনে সুহানি চমকে উঠলো। নোহানের কোল থেকে নামার জন্য লাফালাফি করতে থাকে।

সুহানিঃ আমাকে নামান বলছি।

নোহানঃ আর একটা কথা বললে নীচে ফেলে দেবো।

কথাটা বলেই নোহান নিজের হাতের বাঁধন হালকা করলো। সুহানি একবার নিজের দিকে তাকিয়ে নোহানের গলাটা শক্ত করে জড়িয়ে ধরে,চোখটা বন্ধ করে বললোঃ না আমাকে ফেলবেন না। আমি চুপ করে থাকবো।

নোহান সুহানির দিকে বাঁকা হেসে। অফিসের ভেতরে নিয়ে গেলো।সুহানি এখনো নোহানের গলাটা ধরে চোখ বন্ধ করে আছে।

নোহান সুহানির দিকে তাকিয়ে ফিসফিস করে কানের কাছে বললোঃ কি ম্যাডাম সারাদিন কি আমার কোলেই থাকার ইচ্ছা আছে।

নোহানের এমন কথা শুনে সুহানি তাড়াতাড়ি নিজের চোখ খুলে ফেললো।নোহান ওর দিকে তাকিয়ে একটা ডেভিল স্মাইল দিয়ে ওকে নামিয়ে দিয়ে,কাজির উদ্দেশ্যে বললোঃ সবকিছু রেডি তো।

কাজি নোহানের কথার বিপরীতে মাথা নাড়লো।

নোহানঃ ওকে বিয়ে পড়াতে চালু করুন।

সুহানিঃ না,দেখুন আপনি ভুল করছেন। আমি এখনি দিয়াকে কল করছি।

সুহানি কল লাগাতে যাবে,নোহান হাত থেকে ফোনটা কেড়ে নিয়ে বললোঃ দিয়ার সাথে কোনো যোগাযোগ করতে পারবে না তুমি।

সুহানিঃ কেন? দিয়া আমার বেস্ট ফ্রেন্ড আপনার কোনো অধিকার নেয় আমাদের আলাদা করার।

নোহানের মুখটা রাগে লাল হয়ে গেলো। হাতটা মুষ্টি বদ্ধ করে নিজের রাগকে কন্ট্রোল করতে লাগলো। সুহানি সবটা দেখে একটা শুকনো ঢোক গিললো। নোহানের রাগকে ওহ জমের মতো ভয় পাই। মনে মনে আয়তুল কুরসী পাঠ করতে লাগলো।

কাজিঃ বাবা বিয়েটা পড়ানো শুরু করি।

কাজির কথায় নোহান একটু স্বাভাবিক হলো। সুহানির দিকে তাকিয়ে কড়া গলায় বললঃ তুমি যদি এই বিয়েটা না করো নাহলে আর কখনোই নিজের পরিবারকে দেখতে পাবে না,কথাটা মাথায় রেখো।

সুহানিঃ আপনি আমাকে জোড় করতে পারেন না।

নোহানঃ আমি কি পারি আর কি পারি না তার প্রমান তোমার চোখের সামনেই।

নোহান নিজের ফোনে সুহানিকে একটা ভিডিও দেখালো, সুহানির ভাই সুহান রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছে আর এর দিকে একটা ট্রাক এগিয়ে আসছে।

নোহানঃ তোমার একটা কথাতে তোমার ভাই চিরজীবনের জন্যে উপরে চলে যাবে।

সুহানির চোখ দিয়ে এক ফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়লো। নিজের চোখের পানিটা মুছে কাঁপা কাঁপা গলায় বললঃ আমি এই বিয়ে করবো।দয়া করে আমার পরিবারের কোনো ক্ষতি করবেন না।

নোহান বাঁকা হেসে কাজিকে বিয়ে পড়াতে বললো। সুহানি কাঁপা গলাতেই কবুল বললো। কাজি বললোঃ আজ থেকে তোমার স্বামী-স্ত্রী।

নোহান সুহানির দিকে তাকিয়ে মনে মনে কিছু একটা ভেবে বাঁকা হাসলো। নোহানের বাঁকা হাসিটা সুহানির চোখ এড়ায়নি।সুহানি নোহানের হাসির দিকে তাকিয়ে মনে মনে বললোঃ আমি আপনাকে খুব ভালো করেই চিনি মিস্টার নোহান। আর এটাও বুঝতে পারছি আপনি আমাকে কোনো কারনে বিয়ে করছেন,কখনোই ভালোবাসেন বলে নয়। আপনি তো শুধু মাত্র একজনকেই ভালোবাসেন আর সেটা হলো দিয়া। হঠাৎ জোড় করে বিয়ে করার কারনটা আমাকে জানতেই হবে। আমি কিছুতেই আমার নিজের হাতে তৈরি দিয়ার গোছালো জীবনটা নষ্ট করতে দেবো না আপনাকে, কিছুতেই দেবো না।

#চলবে…

বিঃ দ্রঃ-ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।